Sunday, 16 May 2021

ভৈরব ব্রাহ্মণী -- নারী গুরু -- শ্রীরামকৃষ্ণের

 
















ভৈরবী ব্রাহ্মণীর আগমন

রানী রাসমণির মৃত্যুর স্বল্পকাল পরে ঠাকুরের জীবনে ঐ বৎসর আর একটি বিশেষ ঘটনা সমুপস্থিত হয়। দক্ষিণেশ্বর কালীবাটীর পশ্চিমভাগে গঙ্গাতীরে সুবৃহৎ পোস্তার উপর এই কালে বিচিত্র পুষ্পকানন ছিল। সযত্ন-রক্ষিত ঐ উদ্যানে নানাজাতীয় পুষ্পসম্ভারে ভূষিত হইয়া বৃক্ষলতাদি তখন বিচিত্র শোভা বিস্তার করিত এবং মধুগন্ধে দিক আমোদিত হইত। শ্রীশ্রীজগদম্বার পূজা না করিলেও ঠাকুর এই সময়ে নিত্য ঐ কাননে পুষ্পচয়ন করিতেন এবং মাল্যরচনা করিয়া শ্রীশ্রীজগদম্বাকে স্বহস্তে সাজাইতেন। ঐ কাননের মধ্যভাগে গঙ্গাগর্ভ হইতে মন্দিরে যাইবার চাঁদনি-শোভিত বিস্তৃত সোপানাবলী এবং উত্তরে পোস্তার শেষে স্ত্রীলোকদিগের ব্যবহারের জন্য একটি বাঁধাঘাট ও নহবতখানা অদ্যাপি বর্তমান। বাঁধাঘাটটির উপরে একটি বৃহৎ বকুল বৃক্ষ বিদ্যমান থাকায় লোকে উহাকে বকুলতলার ঘাট বলিয়া নির্দেশ করিত।

ঠাকুর একদিন প্রাতে পুষ্পচয়ন করিতেছেন, এমন সময়ে একখানি নৌকা বকুলতলার ঘাটে আসিয়া লাগিল এবং গৈরিকবস্ত্রপরিহিতা আলুলায়িত-দীর্ঘকেশা ভৈরবীবেশধারিণী এক সুন্দরী রমণী উহা হইতে অবতরণপূর্বক দক্ষিণেশ্বর ঘাটের চাঁদনির দিকে অগ্রসর হইলেন। প্রৌঢ়া হইলেও যৌবনের সৌন্দর্যাভাস তাঁহার শরীরকে তখনো ত্যাগ করে নাই। ঠাকুরের নিকটে শুনিয়াছি, ভৈরবীর বয়স তখন চল্লিশের কাছাকাছি ছিল। নিকট আত্মীয়কে দেখিলে লোকে যেরূপ বিশেষ আকর্ষণ অনুভব করিয়া থাকে, ভৈরবীকে দেখিয়া তিনি ঐরূপ অনুভব করিয়াছিলেন এবং গৃহে ফিরিয়া ভাগিনেয় হৃদয়কে চাঁদনি হইতে তাঁহাকে ডাকিয়া আনিতে বলিয়াছিলেন। হৃদয় তাঁহার ঐরূপ আদেশে ইতস্ততঃ করিয়া বলিয়াছিল, "রমণী অপরিচিতা, ডাকিলেই আসিবে কেন?" ঠাকুর তদুত্তরে বলিয়াছিলেন, "আমার নাম করিয়া বলিলেই আসিবে।" হৃদয় বলিত, অপরিচিতা সন্ন্যাসিনীর সহিত আলাপ করিবার জন্য মাতুলের ঐরূপ আগ্রহাতিশয় দেখিয়া সে অবাক হইয়াছিল। কারণ তাঁহাকে ঐরূপ আচরণ করিতে সে ইতঃপূর্বে কখনো দেখে নাই।

উন্মাদ মাতুলের বাক্য অন্যথা করিবার উপায় নাই বুঝিয়া হৃদয় চাঁদনিতে যাইয়া দেখিল ভৈরবী ঐ স্থানেই উপবিষ্টা রহিয়াছেন। সে তাঁহাকে সম্বোধন করিয়া বলিল, তাহার ঈশ্বরভক্ত মাতুল তাঁহার দর্শনলাভের জন্য প্রার্থনা করিতেছেন। ঐ কথা শুনিয়া ভৈরবী কোনরূপ প্রশ্ন না করিয়া তাহার সহিত আগমনের জন্য উঠিলেন দেখিয়া সে অধিকতর বিস্মিত হইল।










 তিন মহাপুরুষের জন্মস্থান


No comments:

Post a Comment