Wednesday, 25 October 2023

জিরাটের দ্বিভূজা দুর্গা

 



বলাগড় পাটুলির দ্বিভূজা দুর্গার বৌদ্ধতন্ত্রাচারে পূজো 

দুর্গাপূজা বা দুর্গোৎসব হলো  দেবী দুর্গার পূজাকে কেন্দ্র করে ভারতের প্রধান হিন্দু উৎসব। দুর্গাপূজা মূলত দশ দিনের উৎসব, যার মধ্যে শেষ পাঁচটি দিন সবচেয়ে তাৎপর্যপূর্ণ। আশ্বিনের নবরাত্রির পূজা শারদীয় পূজা এবং বসন্তের নবরাত্রির পূজা বাসন্তিক  বা বসন্তকালীন দূর্গাপূজা নামে পরিচিত।  পশ্চিমবঙ্গে দুর্গোৎসব মূলত: কালিকা পুরাণ বর্নিত পদ্ধতি নির্ভর। হিন্দুশাস্ত্র অনুসারে, শরৎকালে দেবতারা ঘুমিয়ে থাকেন । তাই এই সময়টি তাদের পূজোর যথাযথ সময় নয়। অকালের পূজো বলে এই পূজোর নাম হয় " অকালবোধন "। তবে রামায়ণের প্রকৃত রচয়িতা বাল্মীকি মুনি রামচন্দ্রকৃত দুর্গাপূজার  কোনো উল্লেখ করেননি। কৃত্তিবাস রামায়ণ অনুসারে , রাবণ ছিলেন শিবভক্ত।  মা পার্বতী তাকে রক্ষা করতেন। তাই ব্রহ্মা রামকে পরামর্শ দিলেন পার্বতীকে পূজা করে তাকে তুষ্ট করতে । তাতে রাবণ বধ রামের পক্ষে সহজ হবে। ব্রহ্মার পরামর্শে রাম শরৎকালে পার্বতীর দুর্গতিনাশিনী রূপের বোধন, চণ্ডীপাঠ,  মহাসপ্তমী, মহাষ্টমী, সন্ধিপূজা ও মহানবমীর ও  দশমীর পূজো করেন। দেবী পার্বতী  রামের পূজোয় সন্তুষ্ট হয়ে রামকে কাঙ্ক্ষিত বর দেন।  সেই থেকেই শরৎকালে দুর্গোৎসব হয়ে আসছে।


পারিবারিক স্তরে দুর্গাপূজা প্রধানত ধনী পরিবারগুলোতেই আয়োজিত হয়।  এই ধনী পরিবারগুলোর দুর্গাপূজা " বোনেদি  বাড়ির পূজা " নামে পরিচিত।  এই পূজোগুলিতে শাস্ত্রাচার পালনের উপরেই বেশি জোর দেওয়া হয়। অন্যদিকে আঞ্চলিক স্তরে অঞ্চলের বাসিন্দারা যৌথভাবে যে দুর্গাপূজার আয়োজন করেন তা " বারোয়ারি " পূজা নামে পরিচিত। 


আঞ্চলিক ভেদে প্রাচীন বোনেদি এই সব পূজোগুলিতে দেখাযায় দেবীর রূপবৈচিত্র, ব্যতিক্রমী আচার ও পুজোপদ্ধতি। হুগলি জেলার বলাগড় ব্লকের পাটুলিতে এমনই এক ব্যতিক্রমী দুর্গাপুজো হয়ে আসছে কয়েকশো বছর ধরে। পাটুলির মঠবাড়ির সেই দ্বিভুজা দুর্গার প্রচলিত নাম মঠের মা। 

অতীতে  গ্রামে কংসাবতী নামের এক নদী বয়ে যেত।গ্রামে কুয়ো, পুকুর এমনকী বাড়ির ভিত খুঁড়তে গিয়েও নৌকার ভাঙা অংশ, হাল, পাটাতন পাওয়া গিয়েছে।  বৌদ্ধ যুগে এটি ছিল বৌদ্ধ সংস্কৃতির পীঠস্থান।এখানে ছিল একটি প্রাচীন বৌদ্ধমঠ,যার ধ্বংসাবশেষএলাকার প্রবীণরা দেখেছেন।



পাটুলির মঠবাড়ির পুজো নিয়ে শোনা যায় একাধিক কাহিনি।অতীতে পাটলিপুত্র ছিল বৌদ্ধ সংস্কৃতির অন্যতম পীঠস্থান। বৌদ্ধশিক্ষার কেন্দ্র হিসেবে এই গ্রামে গড়ে উঠেছিল একটি বৌদ্ধমঠ। পরবর্তী কালে বৌদ্ধধর্মের অবক্ষয়ের ফলে বহু বৌদ্ধতান্ত্রিক দেব-দেবী হিন্দু লৌকিক দেব-দেবীতে রূপান্তরিত হয়েছিলেন। খুব সম্ভবত এই মঠবাড়িটি যে বৌদ্ধতান্ত্রিক সম্প্রদায়ের সাধনস্থল ছিল,তাঁদেরআরাধ্য বৌদ্ধ দেবীপরবর্তী কালে দেবী দুর্গার সঙ্গে মিশে যান।তাইদুর্গাপুজোর পদ্ধতির মধ্যে বেশ কিছু তান্ত্রিক প্রভাব রয়ে গিয়েছিল। ঐতিহাসিকদের মতে মঠবাড়ির প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন বৌদ্ধতান্ত্রিক। আজও মঠবাড়ির পুজোয় দেখা যায় বৌদ্ধতন্ত্রাচারের বিবর্তিত রূপ।


জন্মাষ্টমীর  দিন কাঠামো পুজোর মধ্য দিয়েই প্রতিমা তৈরি শুরু হয়। আজও বংশপরম্পরায় মৃৎশিল্পরা মূর্তি নির্মাণ করনে। দেবীর সামনের দুটি হাত শুধু দেখা যায়। বাকি আটটি হাত ,যা আঙুলের মতন , চুলে ঢাকা থাকে। দেবীর গায়ের রং শিউলি ফুলের বোটার মতন। ডাকের সাজে সজ্জিত প্রতিমার চোখ বাঁশপাতার মতো। দেবীর ডান দিকে কার্তিক, আর বাঁ দিকে গণেশ। দেবীর বাহন পৌরাণিক সিংহ। তবে গায়ের রং সাদা। এই পূজোয় সন্ধিপূজো হয় না। হয় অর্ধরাত্রি পূজো। সপ্তম ও অষ্টমী সন্ধিক্ষণে এই পূজো হয়। অতীতে দেবীর উদ্দেশ্যে অর্ধরাত্রি পূজোতে নরবলি দেওয়ার প্রথা ছিল।  বলির মানুষটি নাকি সেচ্ছায় আসতেন। ইংরেজ আমলে এই প্রথা নিষিদ্ধ হয়।  পরে পাঁঠা বলি হত।  বলির পর সেই পাঁঠার ছাল ছাড়িয়ে টুকরো টুকরো মাংসের সাথে মাসকলাই  ও দূর্বা দিয়ে চৌষট্টি যোগিনীর উদ্দেশ্যে নিবেদন করা হত। এখন চালের গুঁড়ো দিয়ে তৈরি নর মূর্তি বলি দেওয়া হয়। বলির পর তা একই উপায়ে নিবেদন করা হয়।অতীতে তালপাতার পুঁথি দেখে পূজো হত। সেটি আংশিক নষ্ট হয়ে যাওয়ায় তা থেকে পুনরুদ্ধার করে এখন পূজো করা হয় এবং আসল তালপাতার পুথিটি সিন্দুকে  রক্ষিত আছে।




সেই সময় এই অঞ্চল জঙ্গলে পরিপূর্ণ ছিল।  আবার এ পরিবার এক  আর্থিক অনটনের মধ্যে দিন কাটাতো। এর মধ্যে দেবীর স্বপ্নাদেশ হল ,  যা কিছু সহজলভ্য তা দিয়েই ভোগ নিবেদন করতে। তখন থেকেই সাদা ভাত,  নানারকম সব্জি ভাজা, মোচা, থোড়,  কচুশাক,  চালতার টক ইত্যাদিসহ ভোগ দেওয়া হয়ে থাকে। প্রতিবছর দশমীর বিকেলে দেবীবরনের পর ২০ থেকে ২৫ জন বেয়ারা প্রতিমাকে নিয়ে ৩ কি মি দূরে গঙ্গার উদ্দেশ্যে যাত্রা করেন।  বেয়ারাও বংশপরম্পরায়  এই কাজ করে আসছেন।  যাত্রা পথে বিভিন্ন যায়গায় প্রতিমাকে নামানো হয় এবং স্থানীয় বৌ -রা সিঁদুর আলতা দেন। প্রথানুযায়ী গঙ্গার ঘাটে মঠের  মা-র বিসর্জন প্রথম হয় এবং পরে অন্য সব ঠাকুর বিসর্জন হয়। আজও নৌকা করে মাঝগঙ্গায় প্রতিমা নিরঞ্জনের সাবেক রীতি বজায় আছে।



এখানে আসতে হলে ব্যান্ডেল  কটোয়া    লাইনের ট্রেনে করে জিরাট ষ্টেশনে নামতে হবে। ব্যান্ডেল স্টেশনের পর  জিরাট  ষষ্ঠ স্টেশন। সেখান থেকে অটো বা টোটোতে করে মঠ বাড়ির কথা বললে যে কেউ নিয়ে আসবে। সড়কপথে এলে ব্যান্ডেল এর পর দিল্লীর রোড হয়ে মগড়া ফ্লাই  ওভার পেড়িয়ে স্টেট হাইওয়ে ৬ ধরে জিরাট স্টেশনের দিকে আসতে হবে। জিরাট বাজারে জিঞ্জাসা করে সহজেই আপনি মঠ বাড়িতে আসতে পারেন।  ব্যান্ডেল থেকে দূরত্ব ২৪ কি মি। গাড়িতে সময় লাগে ৪০ মিনিটের মতন।

বোনেদি  বাড়ির  পুজোর  সঙ্গে  জড়িয়ে  আছে  নানা কিংবদন্তি,  ইতিহাস আর  পরম্পরা।  এখন  হয়তো  আগের  মত  সেই  চোখ-ধাঁধানো জৌলুস  নেই,  ঠিকই।  কিন্তু  এই  সব  বাড়িতে  পুজো  হয় অতীতের  পরম্পরা  মেনে,  নিষ্ঠা  সহকারে।  বাড়ির  বেশির  ভাগ  সভ্য-সভ্যারা  কলকাতার  অন্যত্র,  বাংলার  বাইরে  এমন  কি বিদেশেও  থাকেন।  তাঁরা  পুজো  উপলক্ষ্যে  এক  সঙ্গে  মিলিত হন।  এই  সব  বাড়ির  সাবেকি  পুজোতে  উপস্থিত  হলে  আপনি হয়তো  পৌঁছে  যাবেন  সুদূর  অতীতে।       



Saturday, 14 October 2023

ছিটমহলের পরিচিতি

  


ছিটমহল বা enclave ভৌগলিক সীমানা থেকে বিচ্ছিন্ন কিছু ভূখন্ড  যা অন্য দেশের মধ্যে একটি দেশের বিচ্ছিন্ন অঞ্চল হিসাবে আত্মপ্রকাশ করে। কোনো দেশের ছিটমহল গুলি সাধারণত সীমান্তের উল্টো দিকে থাকে। এগুলি আসলে বিচ্ছিন্ন কিছু জনপদ মাত্র। তাই ছিটমহল গুলি অন্য কোন রাজ্য দ্বারা সম্পূর্ণ বা কখনও কখনও আংশিক ভাবে পরিবেষ্টিত। ভ্যাটিকান সিটি এবং সান মেরিনো উভয়েই ইতালি দ্বারা পরিবেষ্টিত । লেসোথো হলো দক্ষিণ আফ্রিকা দ্বারা পরিবেষ্টিত ছিটমহল রাষ্ট্র। 




ইংরেজ শাসনের অবসানের পর ভারত ভাগের সময় কোচবিহারের রাজা কোচের জমিদারির আটটি থানা পূর্ব পাকিস্তানের মধ্যে চলে যায়। আর কুচবিহার চলে আসে ভারতের মধ্যে। তাই কিছু ভূখন্ড চলে যায় বাংলাদেশের মধ্যে আর কিছু ভূখন্ড চলে আসে আমাদের ভারতে। এই ধরনের ভূমি বা জমিজমাকে ছিটমহল বলে। ভারত বাংলাদেশের এই ধরনের ১৬২টি ভূখন্ড ছিল। এরমধ্যে ১১১ টি ছিটমহল ভারতের যা বাংলাদেশের দিকে অবস্থিত। এর আয়তন ১৭ একরের একটু বেশি। বাকি ৫১টি বাংলাদেশি ছিটমহল হল ভারতের দিকে। এগুলির আয়তন ৭১১০ একর। এই ৫১টি ছিটমহলের মধ্যে পশ্চিমবঙ্গের কোচবিহারে ৪৭টি ও জলপাইগুড়ি জেলায় ৪টি ছিটমহল অবস্থিত। ২০১৫ সালে আগষ্ট মাসে ভারত বাংলাদেশের মধ্যে ছিটমহল বিনিময় চুক্তি দুই দেশের প্রধানমন্ত্রীর দ্বারা স্বাখ্খরিত হয়েছিল।






তিনবিঘা করিডোর হল ভারত বাংলাদেশ সীমান্তে একটি সতন্ত্র ভূমি যা ভারতের মালিকানাধীন তিন বিঘা জায়গার মধ্যে অবস্থিত। ২০১২ সালে বাংলাদেশের দহগ্রাম -আঙ্গারাপোতা ছিটমহল যাতায়াতের সুবিধার্থে এটি বাংলাদেশকে ইজারার মাধ্যমে দেওয়া হয়। এটি পশ্চিমবঙ্গের কোচবিহার জেলার মেখলিগঞ্জ মহকুমা ও বাংলাদেশের লালমনিরহাট জেলার পাটগ্রাম উপজেলার সীমান্তে অবস্থিত।





নাম কেন ‘তিনবিঘা’?

বাংলা আয়তন পরিমাপের একটি একক হলো ‘বিঘা’ এবং এই ভূমিটির মোট আয়তন ১,৫০০ থেকে ৬,৭৭১ বর্গমিটার (১৬,১৫০ থেকে ৭২,৮৮০ বর্গফুট) যা তিন বিঘা পরিমাপের সমান; এ থেকে ‘তিনবিঘা’ নামের উৎপত্তি।





১৬ মে ১৯৭৪-এর ইন্দিরা গান্ধী-শেখ মুজিবুর রহমান চুক্তি অনুসারে ভারত ও বাংলাদেশ তিনবিঘা করিডোর (১৭৮ বাই ৮৫ মিটার (৫৮৪ ফু × ২৭৯ ফু)) ও দক্ষিণ বেরুবাড়ীর (৭.৩৯ বর্গকিলোমিটার (২.৮৫ বর্গমাইল)) সার্বভৌমত্ব পরস্পরের কাছে হস্তান্তর করে। এরফলে উভয়দেশেই তাদের ছিটমহলে যথাক্রমে দহগ্রাম-আঙ্গরপোতা ও দক্ষিণ বেরুবাড়ীর যাতায়াত সুবিধা তৈরি হয়। ১৯৭৪ সালে বাংলাদেশ চুক্তি অনুসারে সাথে সাথেই দক্ষিণ বেরুবাড়ী ভারতের কাছে হস্তান্তর করে। তবে ভারত তিনবিঘা করিডোর বাংলাদেশের কাছে হস্তান্তর করতে ভারতের সাংবিধান সংশোধনের প্রয়োজন ছিল, যা রাজনৈতিক কারণে সম্ভব হয়নি।


১২ নং দক্ষিণ বেরুবাড়ী ইউনিয়নের  ১১.২৯ বর্গকিলোমিটার  বাংলাদেশ পেয়েছিল। এছাড়াও পূর্বের ভাগ অনুসারে কোচবিহারের চারটি ছিটমহল বাংলাদেশে পড়েছিল যার আয়তন ৬.৮৪ বর্গকিলোমিটার । ১৯৬৭ সালের হিসেব অনুযায়ী এই ভূখন্ডগুলোর মোট জনসংখ্যার ৯০%ই ছিল হিন্দু ধর্মাবলম্বী। পক্ষান্তরে বাংলাদেশের ছিটমহল দহগ্রাম-আঙ্গরপোতা ভারতে হস্তান্তরের কথা ছিল। যার মোট আয়তন ১৮.৬৮ বর্গকিলোমিটার । ১৯৬৭ সালের হিসেব অনুযায়ী মোট জনসংখ্যার ৮০% ছিল মুসলমান। যদি এই হস্তান্তর সফল হতো তাহলে এটি জাতিগত দাঙ্গা সৃষ্টির সম্ভাবনা থাকত। ফলে তখন বেরুবাড়ীর জনগণ এই হস্তান্তরের বিরোধিতা করেছিল



১৯৭১ এর পর ভারত বাংলাদেশকে প্রস্তাব দেয় বেরুবাড়ীর অর্ধাংশ ভারতের অধীন থাকবে এবং দহগ্রাম-আঙ্গরপোতা বাংলাদেশেই থাকবে। এই চুক্তি অনুসারে ভারত দহগ্রাম-আঙ্গরপোতাবাসীর বাংলাদেশের মূল ভূখণ্ডের সাথে যোগাযোগ রক্ষার জন্য একটি তিনবিঘা আয়তনের জায়গা ইজারা হিসেবে দিয়েছিল। এটি বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক গৃহীত হয়েছিল এবং তিনবিঘার চারপাশে সতর্কতার সাথে বেষ্টনী দেওয়া হয়েছিল। ১৯৭৪ সালের ১৬ই মে ইন্দিরা গান্ধী ও শেখ মুজিবুর রহমানের মধ্যে একটি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয় এবং শেষ পর্যন্ত বেরুবাড়ী  বিরোধের অবসান ঘটে। চুক্তি অনুসারে: "ভারত দক্ষিণ বেরুবাড়ীর দক্ষিণাংশের অর্ধেক নিয়ন্ত্রণ করবে যার আনুমানিক আয়তন ৬.৮ বর্গকিলোমিটার  এবং বিনিময়ে বাংলাদেশ দহগ্রাম-আঙ্গরপোতা নিয়ন্ত্রণ করবে। ভারত দহগ্রাম-আঙ্গরপোতাবাসীদের বাংলাদেশের মূল ভূখন্ডের সাথে যোগাযোগ স্থাপনের জন্য ১৭৮ বাই ৮৫ মিটার (৫৮৪ ফু × ২৭৯ ফু) আয়তনের একটি ভূমি বাংলাদেশকে ইজারা হিসেবে দেবে।" 





দহগ্রাম ইউনিয়ন বাংলাদেশের লালমনিরহাট জেলার পাটগ্রাম উপজেলার একটি ইউনিয়ন ও বাংলাদেশের অন্যতম বৃহৎ ছিটমহল, যা ভারতের মূল ভূখণ্ডের মধ্যে অবস্থিত। এর তিন দিকে ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের কোচবিহার জেলা, একদিকে তিস্তা নদী, নদীর ওপারেও ভারতীয় ভূখণ্ড। ভৌগোলিক কারণে এটি দহগ্রাম-আঙ্গোরপোতা ছিটমহল নামেই বেশি পরিচিত। এ ইউনিয়নের মোট আয়তন ২২.৬৮ বর্গ কিমি. ও মোট জনসংখ্যা প্রায় ২০,০০০ জন। ১৯৮৫ সালে দহগ্রাম ও আঙ্গরপোতা ছিটমহল একত্রে পাটগ্রাম উপজেলার একটি স্বতন্ত্র ইউনিয়ন (দহগ্রাম ইউনিয়ন) হিসেবে ঘোষণা করা হয়। ১৯৮৯ খ্রিষ্টাব্দের ১৯ আগস্টে এখানে ইউনিয়ন পরিষদের উদ্বোধন করা হয়।




Berubari is a village in Jalpaiguri Block, Jalpaipuri District, West Bengal, India . এটি বাংলাদেশের সীমান্তের কাছে অবস্থিত, জেলা এবং ব্লকের রাজধানী জলপাইগুড়ি থেকে প্রায় 12.7 কিলোমিটার দক্ষিণে। 2011 সালে, এর মোট জনসংখ্যা 41,593 জন।


  • মুজিব-ইন্দিরা চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়: ১৬ মে, ১৯৭৪ সালে।
  • চুক্তি কার্যকর: ১ আগস্ট, ২০১৫ সালে।
  • চুক্তি অনুমোদনে সংশোধনী: বাংলাদেশের ১৯৭৪ সালের ৩য় সংশোধনী আনে সিটমহল সমস্যা সমাধানে।
  • ভারতের ২০১৫ সালের ১০০তম সংশোধনী করা হয়।
  • ভারতে বাংলাদেশের ৫১টি ছিটমহলের মোট আয়তন ছিল-৭,১১০ একর।
  • বাংলাদেশে থাকা ভারতের ১১১টি ছিটমহলের মোট আয়তন ছিল- ১৭,১৫৮.৭৫ একর।
  • ছিটমহল বিনিময়ের ফলফল: বাংলাদেশের সাথে যুক্ত হয়েছে- ১০,০৪১.২৫ একর ।
  • প্রথম বাংলাদেশের পতাকা উত্তোলন করা হয় কুড়িগ্রামের দশিয়ারছড়া ছিটমহলে ।
  • দশিয়ারছড়া ছিটমহলের বর্তমান নাম- মুজিব-ইন্দিরা ইউনিয়ন ।
  • বাংলাদেশ থেকে ভারতে যায়- ৯৭৯ জন ভারত থেকে কেউ আসেনি



কুচলিবাড়ীর একমাত্র স্থল যোগাযোগের মাধ্যম তিন বিঘা করিডোরঃ-বাংলাদেশের মূল ভূ-খন্ড থেকে তিনবিঘা করিডোরে ঢুকে সামান্য কিছুদূর এগুতেই ভারতের মূল ভূ-খন্ড থেকে অপেক্ষাকৃত প্রশস্থ আরেকটা পিচ ঢালা রাস্তা তিনবিঘা করিডোরে ঢুকে বাংলাদেশের রাস্তাটি ক্রস করে কুচলিবাড়ী চলে গেছে। ভারতের মূল ভূ-খন্ডের সাথে কুচলিবাড়ীর লোকজনের স্থল যোগাযোগের একমাত্র মাধ্যম এই রোডটি। অর্থাৎ ভারতের মূল ভূ-খন্ডের সাথে কুচলিবাড়ীর লোকজনের স্থল যোগাযোগের একমাত্র মাধ্যমও তিনবিঘা করিডোর।



তিনবিঘা করিডোরের চার মাথা

কারণ তিস্তা নদী ভারতের চর খড়খড়িয়াতে বাঁধা পেয়ে এর বড় মুখটা চর খড়খড়িয়ার ডান পাশ দিয়ে বাংলাদেশের দহগ্রামে ঢুকে পড়েছে। আর ছোট মুখটা চর খড়খড়িয়ার বাম পাশ দিয়ে সরাসরি বাংলাদেশের মূল ভূ-খন্ডে ঢুকেছে। ওদিকে তিস্তার বড় মুখটা দহগ্রাম থেকে বের হয়ে আবার চর খড়খড়িয়ার ডান পাশ দিয়ে ভারতীয় ভূমির উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়ে সরাসরি বাংলাদেশের মূল ভূ-খন্ডে স্থায়ীভাবে ঢুকে পড়েছে। তিনবিঘা করিডোর ছাড়া কুচলিবাড়ীর লোকজনকে হলদিবাড়ী বা ভারতের মূল ভূ-খন্ডে যেতে হলে জলপথ(দুই বার তিস্তা পার হতে হবে)ছাড়া কোন পথ নেই। সেখানে কুচলিবাড়ীর লোকজনকে একবার তিস্তা নদী পার হয়ে চর খড়খড়িয়াতে যেতে হবে। আবার চর খড়খড়িয়া থেকে মূল তিস্তা পার হয়ে হলদিবাড়ী বা ভারতের মূল ভূ-খন্ডে প্রবেশ করতে হবে।





২০১১ সালের পূর্বে দহগ্রাম-আঙ্গরপোতাতে কোন হাসপাতাল  বা কলেজ ছিল না। ২০১১ সালের ১৯শে অক্টোবর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দহগ্রামে একটি দশ শয্যার হাসপাতাল ও দহগ্রাম ইউনিয়ন পরিষদের উদ্বোধন করেন।




১৯৭৪ সালে ইন্দিরা-মুজিব চুক্তি অনুযায়ী তিনবিঘা দিয়ে যাতায়াতের সুযোগ পেয়েছিলেন বাংলাদেশের নাগরিকরা। তিনবিঘা সংগ্রাম কমিটির সম্পাদক ছিলেন পরেশ অধিকারী। তিনি জানান, ১৯৮১ তে সুধীর রায় জমি জরিপ সংক্রান্ত আন্দোলন চলাকালীন পুলিশের গুলিতে প্রাণ হারান। ১৯৯২ সালে মারা যান ক্ষীতেন অধিকারী ও জীতেন রায়। তিনবিঘার ৯৯৯ বছরের লিজের প্রতিবাদ করতে গিয়ে এঁদের মৃত্যু হয়।