Saturday, 22 May 2021

অক্ষয় তৃতীয়ার পূন্য লগ্ন




অক্ষয় তৃতীয়া হলো চান্দ্র বৈশাখ মাসের শুক্লপক্ষের তৃতীয়া তিথি। বৈদিক পরম্পরায় এটি মানা হয় যে , এই বিশেষ দিনে যে যা শুভকাজ করবেন, তার ফল পাবেন তিনি অনন্তকাল। সেইদিন প্রতিটি মানুষকে খেয়াল রাখতে হবে যে, যাতে কোনোরকম ভূল, ত্রুটি বা কলুষিত কর্ম যেন না করা হয়। কারণ ঐ কর্মটি বা কর্মের ফল অক্ষয় হয়ে ফলতে থাকে। অর্থাৎ সেই ত্রুটিপূর্ণ কর্ম সে আরও কয়েকবার করতে বাধ্য হয়। বলে জীবন নিরানন্দ হয়ে পরে।

 



আসলে হিন্দুশাস্ত্রের বহু উল্লেখযোগ্য ঘটনাই হলো এই অক্ষয় তৃতীয়ায় শুভারম্ভ। এই  ঘটনাগুলির উল্লেখ এ ভাবে করা যায় ::^^^^^^^::

-=- ব্যাসদেব যখন মহাভারত লেখবার জন্য  গণেশ কে আবাহন জানালেন,  গণেশ ব্যাসদেবের কথা শুনতে শুনতে এই বিশেষ তিথিতেই রচনা শুরু করেছিলেন।  মহাভারত এই দিনেই রচিত হয়েছিল। 

-=- কুবের বহুবৎসর ভগবান শিবের আরাধনা করেছিলেন।  কঠোর তপস্যায় তুষ্ট হয় মহাদেব কুবেরকে অতুল সম্পদ দান করেন।  এই সেই  বিশেষ তিথি , কুবের এই মহাসম্পদ লাভ করেছিলেন। 

-=- বিষ্ণু অবতার পরশুরামের জন্ম তিথি হলো এই  অক্ষয় তৃতীয়ায়।

-=- সত্যযুগের সমাপ্তি হয়েছিল এই বিশেষ তিথি তথা ক্ষণে।

-=- ভগীরথ এই তিথিতেই মা গঙ্গাকে স্বর্গ থেকে মর্ত্যে অবতরণ করান।  

-=- কৃষ্ণের চন্দন যাত্রাও শুরু হয় এই দিনে।

-=- দ্রৌপদীর বস্ত্রহরণের তিথিও এই বিশেষ ক্ষণটি।

-=- কুবেরের লক্ষ্মীলাভকে স্মরণে রেখে বহু মানুষ এই দিন লক্ষ্মীপূজো করেন। কুবেরের মতো যেন ধন সম্পত্তির অধিকারি হন। অনেকে আবার দান ধ্যানও করেন, যাতে পুণ্যির ঝুলি বেশ ডরে ওঠে। 

-=- এই দিনে হালখাতা করার প্রথম ও প্রধান উদ্দেশ্য হলো, সেই দিনের অর্থাগমের মতো যেন সারা বছর অর্থাগম হতে থাকে, আবার ক্রেতাও কিছু কিনে গোটা বছরের প্রাপ্তিযোগর উপর শিলমোহর দেবার চেষ্টা করেন। 

-=- ভগবান শ্রীকৃষ্ণ এই বিশেষ তিথিতেই তাঁর বন্ধু তথা সুহৃদ  সুদমার দারিদ্র দূর করেন। 

-=- দেবপ্রতিষ্ঠা, বিবাহ,  মুন্ডন সংস্কার,  সম্পত্তি ক্রয়, গৃহনির্মাণ, পিতৃপুরুষের পারলৌকিক ক্রিয়াকর্ম ও তর্পণ প্রভৃতি নানা শুভকার্যে অক্ষয় তৃতীয়ার বিকল্প নাই। 

-=- কেদারনাথ,  বদ্রীনাথ, গঙ্গোত্রী, যমুনোত্রী------- এই চারধামের যাত্রারও শুরু হয় এই দিনেই। 

-=- জগন্নাথ মহাপ্রভুর চন্দনযাত্রা ও রথ নির্মাণের শুরুও হয় এই বিশেষ তিথিতেই 



এক অহৃকারী ব্রাহ্মণ ক্ষুৎপিপাসায় কাতর এক ব্যক্তি জল চাইলে তৎক্ষণাৎ তার মুখের উপর দরজা বন্ধ করে দেন।  দয়াবতী স্ত্রী এটি সহ্য করতে না পেরে স্বামীর নিষেধ অমান্য করে ঐ ব্যক্তিকে অন্ন ও জলদান করেন।  মৃত্যুর পর ব্রাহ্মণের বিদেহী আত্মার ঠাই হলো যমলোকে। সেখানে অন্ন-জল বিনা নিদারুন কষ্টে দিন কাটে আত্মার। অবশেষে পত্নীর পুন্যকর্মে যমলোক থেকে মুক্তি পায় আত্মা। ব্রাহ্মণ পুনর্জন্মলাভ করে অক্ষয় তৃতীয়ার ব্রত ভক্তিভরে পালন করে যশস্বী হলেন।  বিগত জন্মের পাপক্ষালন হলো তার নবজন্মের অন্ন ও জলদানের মতো পুণ্যকর্মে।



শুধু হিন্দুদের কাছে নয়, অক্ষয় তৃতীয়ার বিশেষ মাহাত্ম্য রয়েছে অন্য এক ধর্মেও

রাজা শ্রেয়াংশ ঋষভদেবকে ইক্ষুরস দান করছেন। 


অক্ষয় তৃতীয়াকে মূলত হিন্দু বা সনাতন ধর্মে বিশ্বাসীদের কাছে পালনীয় এক পবিত্র দিন হিসেবে দেখা হলেও অন্য এক ধর্মে এই দিনটির বিশেষ মাহাত্ম্য রয়েছে। সেটি জৈন ধর্ম। জৈন বিশ্বাস অনুসারে বৈশাখ মাসের শুক্লপক্ষের তৃতীয়া তিথির গুরুত্ব অপরিসীম।

জৈন মতে, ২৪ জন তীর্থঙ্কর মানুষকে সত্যের পথ দেখিয়েছেন। তাঁদের দেখানো পথেই মানুষ জন্ম ও মৃত্যুর অতীত ‘তীর্থে’ পৌঁছতে সক্ষম। এই ২৪ তীর্থঙ্করের প্রথম হলেন ঋষভদেব এবং শেষ ব্যক্তি মহাবীর। জৈন শাস্ত্র থেকে জানা যায়, ঋষভদেব ছিলেন ইক্ষ্বাকু বংশের প্রতিষ্ঠাতা নৃপতি। তাঁর রাজত্বে কোনও দুঃখ ছিল না। পৃথিবী সেই সময়ে ছিল অগণিত কল্পবৃক্ষে পূর্ণ। এই বৃক্ষের কাছে যা চাওয়া যায়, তা-ই লাভ করা যায়। কিন্তু কালের সঙ্গে সঙ্গে ওই সব কল্পতরুর গুণাবলি হ্রাস পেতে থাকে। মানুষও শারীরিক এবং আধ্যাত্মিক সঙ্কটে পড়তে শুরু করে। সেই অবস্থায় তাঁর প্রজাদের ক্লেশ নিবারণের জন্য ঋষভদেব ছ’টি বৃত্তি অবলম্বনের নির্দেশ দেন। এগুলি অবলম্বন করলে মানুষ জাগতিক ক্লেশ থেকে দূরে থাকবে বলে তিনি বর্ণনা করেন। এগুলি হল— অসি (রণজীবী, যাঁরা দুর্বলকে রক্ষা করবেন), মসী (কলমজীবী, অর্থাৎ কবি, দার্শনিক, চিন্তকরা), কৃষি (যাঁরা খাদ্য উৎপাদন করবেন), বিদ্যা (অন্যকে যাঁরা শিক্ষিত করে তুলবেন), বাণিজ্য এবং শিল্প।


অক্ষয় তৃতীয়া, সূর্যদেবের দান আর দ্রৌপদীর হাঁড়ি: এক অনিঃশেষ ভারতকথা

দ্রৌপদীকে কৃষ্ণের অক্ষয় পাত্রের মহিমা বর্ণন। বামাপদ বন্দ্যোপাধ্যায় অঙ্কিত চোরবাগান আর্ট গ্যালারির ছবি। সূত্র: উইকিপিডিয়া

দ্রৌপদীকে কৃষ্ণের অক্ষয় পাত্রের মহিমা বর্ণন। বামাপদ বন্দ্যোপাধ্যায় অঙ্কিত চোরবাগান আর্ট গ্যালারির ছবি।

মহাভারতে বর্ণিত কাহিনি অনুসারে পাশাখেলায় পরাজিত হয়ে পাণ্ডবরা বনগমন করলে অগণিত ব্রাহ্মণ ও মুনি-ঋষি তাঁদের সঙ্গ নেন। এতে যুধিষ্ঠির পড়েন মহা বিপাকে। তাঁরা সব কিছু ত্যাগ করে বনবাসী হয়েছেন। কিন্তু রাজধর্ম অনুসারে ব্রাহ্মণ ও অতিথির সেবা একান্ত কর্তব্য। কী করে তিনি তাঁদের সঙ্গে প্রতিনিয়ত সাক্ষাৎ করতে আসা অতিথিদের সেবা করবেন, এ নিয়ে বিড়ম্বনায় পড়ে পুরোহিত ধৌম্যের শরণাপন্ন হন যুধিষ্ঠির। ধৌম্য তাঁকে সূর্যের আরাধনা করতে বলেন এবং আরাধনার পদ্ধতিও শিখিয়ে দেন।

ধৌম্যের কথা মতো যুধিষ্ঠির সূর্যদেবের পুজা করলেন। সূর্য তুষ্ট হয়ে তাঁকে এক তামার পাত্র দান করলেন এবং বললেন, “বনবাসের দ্বাদশ বৎসর এই তাম্রস্থালীই তোমাদের অন্ন দেবে। সকলের আহার শেষ হলে যতক্ষণ না পর্যন্ত দ্রৌপদী আহার করছেন, ততক্ষণ এই পাত্রের আহার্য ফুরবে না।” সূর্যের কাছ থেকে সেই পাত্র লাভ করে যুধিষ্ঠির নিশ্চিন্ত মনে বনবাসী হয়ে সাধুসঙ্গ ও অতিথি সেবা করতে লাগলেন। সূর্যের দেওয়া পাত্রের কথা কৌরবদেরও কানে পৌঁছল। তাঁরা পাণ্ডবদের পর্যুদস্ত করার নানা উপায় খুঁজছিলেন। এমতাবস্থায় মহাতেজা, মহাক্রোধী তপস্বী দুর্বাসা দুর্যোধনের আতিথ্য স্বীকার করলেন। সঙ্গে ১০ হাজার শিষ্য। দুর্বাসা কখনও কৌরবদের বলতেন যে, তিনি অত্যন্ত ক্ষুধার্ত। স্নান সেরে আসছেন। কৌরবরা যেন তাঁদের আহার প্রস্তুত রাখেন। কিন্তু অনেক সময়েই স্নান করতে গিয়ে প্রচুর দেরি করতেন। ফিরে এসে বলতেন, খিদে নেই। কখনও মধ্যরাত্রে উঠে অন্নপাক করতে বলতেন। ব্যপারটা বুঝে দুর্যোধন ঠিক করলেন, দুর্বাসাকে সশিষ্য বনবাসী পাণ্ডবদের কাছে পাঠালে তাঁরা জব্দ হবেন। কিন্তু সূর্যপ্রদত্ত তাম্রস্থালির গুণে অনন্ত অতিথি সেবা পাণ্ডবদের কাছে কোনও সমস্যার বিষয়ই নয়। তখন শকুনির পরামর্শে তিনি দুর্বাসাকে বললেন, পাঞ্চালীর ভোজন হয়ে যাওয়ার পর অপরাহ্নে তিনি যেন পাণ্ডবদের আতিথ্য গ্রহণ করে আহার্য চান। দুর্বাসা তাতে রাজি হয়ে বনবাসী পাণ্ডবদের কাছে শিষ্যদের নিয়ে উপস্থিত হন। পাণ্ডব ও দ্রৌপদী— সকলেরই তখন মধ্যাহ্নভোজন হয়ে গিয়েছে। সূর্যপ্রদত্ত তাম্রপাত্র শূন্য। দুর্বাসা বললেন, তিনি স্নান সেরে আসছেন। ফিরে ন আহার্য পান।

পাঞ্চালী পড়লেন মহা বিপদে। উগ্রতেজা মুনিকে তুষ্ট করতে না পারলে পাণ্ডবরা ভস্ম হয়ে যেতে পারেন। উপায়ান্তর না দেখে তিনি তাঁর প্রিয় সখা শ্রীকৃষ্ণকে স্মরণ করলেন। কৃষ্ণ তৎক্ষণাৎ সেখানে উপস্থিত হয়ে বললেন, তিনি নিজেই দারুণ ক্ষুধার্ত। কৃষ্ণা যেন তখনই তাঁর আহারের ব্যবস্থা করেন। পাঞ্চালী জানালেন, সব আহার্য নিঃশেষিত। তাম্রপাত্র শূন্য। কৃষ্ণ বললেন পাত্র খুঁটিয়ে দেখতে। কিছু না কিছু তাতে লেগে থাকবেই। দ্রৌপদী পাত্রটি নিয়ে এলে কৃষ্ণ দেখলেন, তার কানায় সামান্য শাকান্ন লেগে রয়েছে। তিনি সেটুকুই খেয়ে বললেন, “বিশ্বাত্মা যজ্ঞভোজী দেব তৃপ্তিলাভ করুন। তুষ্ট হন।” তার পর সহদেবকে বললেন, দুর্বাসাদের ভোজনের জন্য ডেকে আনতে। দুর্বাসাদের আহ্নিক তখনও শেষ হয়নি। কিন্তু তাঁরা টের পেলেন, উদর পরিপূর্ণ। তাঁদের ক্ষুধা নিবৃত্ত হয়েছে। শিষ্যরা দুর্বাসাকে জানালেন, আর আহার করা তাঁদের পক্ষে সম্ভব নয়। দুর্বাসা প্রমাদ গণলেন। তিনি ভাবলেন এখন যদি পাণ্ডবদের কাছে গিয়ে তিনি আহার্য অস্বীকার করেন, তবে তো মহা অকল্যাণ ঘটতে পারে। পাণ্ডবরা হরিচরণে আশ্রিত। তিনি সশিষ্য পলায়ন করলেন। ওদিকে পান্ডবরাও দুর্বসার সশিষ্য পলায়নের বৃত্তান্ত জানতে পেরে নিশ্চিন্ত বোধ করলেন।

সূর্যপ্রদত্ত তাম্রপাত্রকে যে দিন অক্ষয়পাত্রে পরিণত করেছিলেন কৃষ্ণ, পৌরাণিক কাল থেকে মনে করা হয় সেই দিনটিই ছিল অক্ষয় তৃতীয়া।

মনে রাখতে হবে  হিন্দু ধর্মানুভূতির সঙ্গে এই দিনটির গভীর যোগ রয়েছে। ভুল না করার শপথ নেবার এক বিশেষ ক্ষণ হলো এই  অক্ষয় তৃতীয়া।  সেজন্যই এই তিথি বা লগ্নে শুভক্ষণটি নিজের জীবনে অক্ষয় ও চিরসবুজ রাখবার জন্য অপরের প্রীতি সম্পাদনে নিজের  সর্বস্ব নিয়োজিত করতে সকলে উন্মুখ হয়ে থাকে।

Sunday, 16 May 2021

ঠাকুরের মহাসমাধির ইতিবৃত্ত












































শ্রী শ্রী জগন্নাথ কথা


সত্যিই কি ভগবান তাঁর ভক্তের সমস্ত অভাব দূর করেন ????

পুরীতে অর্জুন মিশ্র নামে এক পাণ্ডা ছিলেন।সে প্রতিদিন সম্পূর্ণ গীতা পাঠ করতেন।তাই লোকে তাকে গীতা পাণ্ডা বলেও ডাকতেন।ভিক্ষাবৃত্তি করে জীবন নির্বাহ করত সে।একবার পুরীতে টানা সাতদিন প্রচণ্ড বৃষ্টিপাত হয়।ফলে গীতাপাণ্ডা ভীক্ষার জন্য বাইরে বেরুতে পারলেন না।কিন্তু তিনি মনে মনে খুব খুশি হলেন ,,এই ভেবে যে আজ সারাদিন গীতা পাঠ করতে পারব।এদিকে তার গৃহের খাবার সব শেষ হয়ে গিয়েছে।তখন তারা স্ত্রী এসে বলল ,,তুমি যদি সারাদিন গীতাপাঠ কর আর বাইরে গিয়ে ভিক্ষা না করো তাহলে আমাদের সংসার চলবে কি করে ,,সে খেয়াল কি আছে তোমার !!আমাদের তিনটি সন্তান সবাই অভুক্ত।তখন গীতাপাণ্ডা বললেন ,,ভগবান শ্রীমদ্ভগবত গীতায় বলেছেন তিনিই ভক্তের সমস্ত ভার গ্রহণ করেন।



আমরা যদি সম্পূর্ণভাবে তার উপর নির্ভর করি তাহলে তিনি অবশ্যই দেখবেন।গীতাপাণ্ডা তাঁর স্ত্রীকে গীতার ৯ম অধ্যায়ের ২২ নম্বর শ্লোকটু দেখালেন।তাঁর স্ত্রী আরো ক্রোধান্বিত হয়ে হাত থেকে গীতাটা নিয়ে ঐ শ্লোকের উপড় তিনটি লাইন কেটে দিলেন ,,আর বললেন আমরা যদি কর্ম না করি তাহলে কি ভগবান খাবার ঘরে এনে দিয়ে যাবে !! তারপর ক্ষুধায় কাতর হয়ে গীতা পাণ্ডার সন্তানরা ও তার স্ত্রী নিদ্রা গেল।কিছুক্ষণ পর গীতা পাণ্ডাও ঘুমিয়ে পড়ল।Tushar

গভীর রাতে গীতা পাণ্ডার স্ত্রী ঘরের দরজায় শব্দ শুনতে পেলেন।দরজা খুলে দেখেন দুটি ছেলে একটি কালো বর্ণের আরেকটি দুগ্ধদবল।ছেলে দুটি বলল ,, গীতা পাণ্ডার এক মিত্র এই খাবার সামগ্রি পাঠিয়েছে কৃপা করে আপনি তা গ্রহন করুন।খাবার সামগ্রিতে ঘর ভরে গেল।ছেলে দুটির প্রতি গীতা পাণ্ডার স্ত্রীর খুব মায়া হল।তিনি তাদেরকে বললেন ,, তোমরা আমাদের সাথে প্রসাদ পেয়ে যেয়ো।তখন কালো বর্ণের ছেলেটি বলল ,, হ্যাঁ !!আমাদেরও খুব ইচ্ছা ছিল আপনাদের সাথে প্রসাদ পাবার ,,কিন্তু আমার জিহ্বা কেটে দেওয়া হয়েছে আমি খেতে পারবো না।তারপর এই কথা বলেই ছেলে দুটো চলে গেলো।

গীতা পাণ্ডার স্ত্রী তার স্বামীকে ঘুম থেকে উঠিয়ে সব বললেন।গীতা পাণ্ডা বুঝতে পারলেন ,,ঐ কালো বর্ণের ছেলেটি আর কেহ নয়।স্বয়ং জগন্নাথ'ই ছিলেন !! যিনি অভিন্ন কৃষ্ণ ,,আর সাদা বর্ণের ছেলেটি বলদেব।

গীতা যেহেতু ভগবান শ্রীকৃষ্ণের মুখ নিঃসৃত বানী ,,তাই গীতার ঐ শ্লোক কেটে দেওয়ায় সেই দাগ ভগবানে শ্রী-কৃষ্ণের জিহ্বাতে পরেছে।তারপর গীতাপাণ্ডা ও তার স্ত্রী ভগবানের কাছের ক্ষমা চাইলেন ,, এবং তৎক্ষনাৎ জগন্নাথ মন্দীরে গিয়ে দেখেন জগন্নাথ দেবের অধরে তিনটি দাগ পরে আছে।

#শিক্ষনীয় বিষয় হলঃ যে ব্যক্তি ভগবানের উপর  নির্ভরশীল এবং শুদ্ধ ভক্ত তার দায়িত্ব স্বয়ং ভগবান'ই নেন।

শ্রী শ্রী জগন্নাথদেবের মহাস্নান যাত্রা ::






শ্রী শ্রী জগন্নাথদেবের মহাস্নান







আজকের এই পূণ্য দিনে দক্ষিণেশ্বরে শ্রী শ্রী ভবতারিণী মাতার মন্দির প্রতিষ্ঠিত করা হয়।

আজকের এই পূণ্য তিথিতে বেলুড়মঠে আত্মারামের কৌটাকে মহাস্নান করানো হয়।
স্বামীজী বেলুড়মঠে আত্মারামের কৌটোকে পুজো করে ঠাকুরের কাছে প্রার্থনা করেছিলেন, "যুগ যুগ ধরে বহুজনহিতায় বহুজনসুখায় তুমি এখানেই থাকবে"।
এই প্রসঙ্গে আমরা স্মরণ করতে পারি যে ঠাকুর কাশীপুরে নরেনকে বলেছিলেন, "তুই কাঁধে করে আমায় যেখানেই নিয়ে যাবি, আমি সেখানেই যাব ও থাকব।"

আজ শ্রীমৎ স্বামী বিরজানন্দ জী মহারাজের জন্মদিন। মহারাজ রামকৃষ্ণ সংঘের অধ্যক্ষ ছিলেন।

আর একটি বিশেষ ঘটনা আছে, আজ কালীঘাটের মন্দির প্রতিষ্ঠিত হয়।



🙏🏻🙏🏻🙏🏻  🙏🏻🙏🏻🙏🏻🌸প্রসাদের মাহাত্ম্য🌸🙏🏻🙏🏻🙏🏻🙏🏻

🌼🌼🌼🌼🌼🌼🌼🌼🌼🌼🌼🌼🌼🌼🌼


ঠাকুর বলতেন, ‘কলিতে জগন্নাথের মহাপ্রসাদ সাক্ষাৎ ব্রহ্ম। গঙ্গাজল আর বৃন্দাবনের রজঃকেও বলতেন সাক্ষাৎ ব্রহ্ম। তাঁর কি দৈবদৃষ্টি ছিল আমরা কি করে বুঝব! নিজের বিছানার পাশে পশ্চিমের দেওয়ালে একটি বটুয়াতে মহাপ্রসাদ থাকত। রোজ সকালে প্রণাম করে এক দানা খেতেন। ভক্তদেরও দিতেন। একদিন নরেন্দ্রকেও দিলেন। নরেন্দ্র তা খেতে চায় নি। বলে, “এ শুকনো ভাত, অপরিস্কার জিনিস।“ ঠাকুর তখন তাকে বলেন, “তুই দ্রব্যগুণ মানিস – আফিং খেলে আঁটে আর ত্রিফলায় দাস্ত হয়?” নরেন্দ্র উত্তর করল, “হাঁ,তা মানি।“ তখন ঠাকুর বললেন, “এও তেমনি। এই মহাপ্রসাদ খেলে জ্ঞান ভক্তি বিশ্বাস লাভ হয়।“ তখন নরেন্দ্র নির্বিচারে উহা খেল। ঠাকুরের কথায় তাঁর পূর্ন বিশ্বাস। ঠাকুর সত্যবাদী আর এ বিষয়ে বিশেষজ্ঞ।

অনেকবার বলেছেন আমাদের, “আমিই পুরীর জগন্নাথ।“ আমাদের কয়েকবারই পুরী পাঠিয়েছিলেন । কি করতে হবে এসব বলে দিতেন। একবার বলে দিলেন, “জগন্নাথকে আলিঙ্গন করবে।“ মহা ভাবনায় পড়লাম কি করে হয়। তখন আলিঙ্গনের সময় নয়। শেষে এক বুদ্ধি তিনি মনে জাগ্রত করে দিলেন। অনেকগুলি রেজকি পয়সা, কিছু টাকাও ছিল, পকেটে করে নিয়ে গিয়ে সব ছড়িয়ে ফেললাম গর্ভমন্দিরে। পান্ডারা সব ঐ সব কুড়োচ্ছিল আর আমি এই ফাঁকে রত্নবেদিতে উঠে আলিঙ্গন করলাম। কেউ কেউ দেখতে পেয়ে হৈ হৈ করে উঠল । আমি ফস করে নেমে প্রদক্ষিণ করতে লাগলাম । অন্ধকারে কেউ বুঝতে পারলে না – কে !
যিনি আমায় বলে দিয়েছিলেন তিনিই বুদ্ধি দিলেন আবার তিনিই ভিতরে লোভ দিয়ে ওদের সরিয়ে দিলেন । এখন ভাবলে অবাক হই, কি করে এ অসীম সাহসের কাজ করেছিলাম । ঠাকুর নিজে পুরী যেতেন না । বলতেন, “ওখানে গেলে এ শরীর থাকবে না ।“ ফিরে এলে ঠাকুর আমাকে গাঢ় আলিঙ্গন করেছিলেন। আর বলেছিলেন, “এই আমারও জগন্নাথকে আলিঙ্গন করা হলো ।“

দক্ষিণেশ্বরে এক বৈষ্ণব সাধুকে ঠাকুর প্রসাদ পাঠিয়েছিলেন। সাধু লুচিটুচি ছুঁড়ে ফেলে দিল। মা কালীর প্রসাদ খাবে না। শুনে ঠাকুরের রাগ হলো। বললেন, “শালাকে কেউ পা থেকে মাথা পর্যন্ত মেরে পাঠিয়ে দেয়, তবে আমার আহ্লাদ হয়।“ তিন চার দিন পর মালীর সঙ্গে ঝগড়া করায়, ওরা মেরে তাড়িয়ে দেয়। বলেছিলেন, “শালা মায়ের প্রসাদ ছুঁড়ে ফেলে দিল ! না খাও তো অপরকে দিয়ে দাও, নয় তো ফিরেয়ে দাও। তা না করে ছুঁড়ে ফেলে দিলে?” 


‘শ্রীম’ – শ্রীরামকৃষ্ণকে যেরূপ দেখিয়াছি।




মাহেশের রথ  ও  শ্রী রামকৃষ্ণ ::


১৮৮৫ সাল..ওই বছর ঠাকুর তাঁর পার্ষদদের একটি ছোট দল নিয়ে গেলেন মাহেশের রথ দেখতে..দলে আছেন নরেন্দ্রনাথ,বৈকুণ্ঠনাথ সান্যাল,গোলাপ মা, প্রভৃতি আরও কয়েকজন..প্রত্যক্ষদর্শী হরিপদবাবু জানিয়েছেন, "মাহেশে লোকের ভিড় দেখে তাঁকে(ঠাকুর শ্রীরামকৃষ্ণকে) দোতলায় রাখা হল..বাড়িটি ত্রিতল..দোতলার বারান্দায় দাঁড়িয়ে তিনি রথ দেখছেন..বলরাম,সুভদ্রা,জগন্নাথ তিন ঠাকুর রথে উঠলেন - শাঁখ,কাঁসর,ঘন্টা বাজনা সঙ্গে সঙ্গে বাজতে লাগল -চারদিকে হরিধ্বনি..ঠাকুর একেবারে নিচে নেমে ফটকের দরজার সামনে এসে দাঁড়ালেন..ভিড় আগলাবার জন্য আমরা সম্মুখে দাঁড়িয়েছিলাম..রথ টানবার জন্য গৌড়গয়লারা এসে রথের দড়ি ধরেছে -টান পড়বে -যাত্রীরাও দড়ি ধরেছে এমন সময় ঠাকুর আমাদের ঠেলে ছিটকে তীরের মত রথের দিকে ছুটে গেলেন..আমরা পেছনে ছুটে চললাম..এদিকে ঠাকুর একেবারে ভিতরে রথের চাকার কাছে জোড় হাতে জগন্নাথ দর্শন করে চোখের জলে ভাসছেন..আমরা কাছে গিয়েও ভিড় ঠেলে ভিতরে যেতে পারছি না..প্রায় পঞ্চাশজন গৌড়গয়লারা যারা রথ টানে একেবারে ভিতরে ঠাকুরকে ঘিরে দাঁড়াল..রথটানা স্থগিত হল..আমরা নিকটেই দেখছি - ঠাকুর যুক্তকরে বলছেন, 'তুহু জগন্নাথ জগতে কহায়াসি..জগবাহির নাহি মুঞি ছার..প্রভু তুমি জগন্নাথ - জগতের নাথ,আমি কি জগত ছাড়া..এ অপুর্ব ভাব !"

এই দৃশ্যপটটি আমাদের ক্ষণিকের জন্য নিয়ে চলে জগন্নাথ মন্দিরে চৈতন্য মহাপ্রভুর চরণপ্রান্তে..মনে করিয়ে দেয় গড়ুর স্তম্ভ ধরে জল ভরা নির্নিমেষ নয়নে,বাষ্পরুদ্ধ কণ্ঠে স্থির চিত্রার্পিতের ন্যায় তাঁর জগন্নাথ দর্শনের কথা..মুখে উচ্চারিত মর্মস্পর্শী আর্তি : "নয়নং গলদশ্রুধারয়া বদনং গদগদরুদ্ধয়া গিরা পুলকৈর্নিচিতং বপু: কদা তব নামগ্রহণে ভবিষ্যতি"
- তোমার নাম উচ্চারন করতে করতে কখন আমার নয়ন গলদশ্রুধারায়,বদন বাষ্পরুদ্ধ বাক্যে এবং শরীর রোমাঞ্চে পূর্ণ হবে !

হরিপদবাবুর স্মৃতিচারণ থেকে আরও জানতে পারি : "নিমেষ মধ্যে রটে গেল দক্ষিণেশ্বরে পরমহংস ঠাকুর এসেছেন..তাঁকে দর্শন করতে আবার লোকের ভিড় জমে গেল..ঠাকুর দাঁড়িয়ে সমাধিস্থ - একেবারে বাহ্য সংজ্ঞা নাই..চারদিকে 'জয় জগন্নাথ' - 'হরিবোল হরিবোল' তুমুল ধ্বনি উঠছে..কিন্তু ঠাকুরকে বাহিরে নিয়ে আসা কঠিন..একে মহাভাবে বাহ্যসংজ্ঞাশূন্য - মুখে আনন্দের হাসি,চক্ষুতে অশ্রুর প্রবাহ,কম্প রোমাঞ্চ আবার স্থাণুর মতো স্থির..আবার তাঁকে দেখার জন্য লোকের ভিড়..গোয়ালাদের সাহায্যে কোনওরকমে তাঁকে ধরে বাইরে নিয়ে এলাম..চারিদিকে হরিধ্বনি,লোক জমায়েত হতে লাগল - গৌড়দের সাহায্যে কোনওরকমে বাড়িতে আনা গেল...ঠাকুর দুপা যান টলে টলে চলেন আবার স্থির গম্ভীরভাবে দাঁড়ান..রথ চলতে আরম্ভ হল - চারিদিকে কাঁসর ঘন্টা বাজনা বেজে উঠল - জনতা রথের সঙ্গে চলল,স্থানটি নীরব নিঝুম হল কিন্তু আশ্চর্য ঠাকুরের ভাব ভঙ্গ হয় না..সূর্য অস্তে গেলে প্রায় গোধুলির সময় ঠাকুর ধীরে ধীরে সহজ অবস্থায় এলেন.."সেই দিন তিনতলায় খিচুড়ি খাওয়ার বন্দোবস্ত করা হয়েছিল..গোলাপমা রান্না করেছিলেন..কিন্তু ঠাকুর ভাবমুখে থাকায় সেই দিন তাঁর আর কিছু খাওয়া হল না..
প্রায় ৪০০ বছর পর মহাপ্রভুরই নীলাচল লীলার পুনরাবৃত্তি ঘটে যাওয়ার সাক্ষী থাকল পূণ্যভুমি মাহেশের মাটি..তৎকালীন বৈষ্ণব সমাজের সর্বাধ্যক্ষ ছিলেন বৈষ্ণবচরণ বাবাজী মশাই..তিনি নিজে পন্ডিত সমাজ তথা বৈষ্ণব সমাজের সামনে উচ্চকণ্ঠে ঘোষনা করেছিলেন ঠাকুরের অবতারত্বের কথা..এমনকি তিনি সংস্কৃত ভাষায় স্তব রচনা করে সকলের উপস্থিতিতে ভাবাবিষ্ট ঠাকুরের সামনে কীর্তন করে তাঁর বন্দনা করেছিলেন..তিনি বলেছিলেন,যে প্রধান প্রধান ১৯টি ভাবের সম্মিলনে উদ্ভুত ভাবকে মহাভাব বলা হয় ভক্তিশাস্ত্রে, তার সবকটির প্রকাশ রামকৃষ্ণ তনুতে..এই ভাব শুধু লক্ষণীয় ছিল রাধারাণী ও মহাপ্রভুর তনুতেই..তাঁরা আর নীলাচল প্রভু যদি অভিন্ন তনু হোন তবে ঠাকুর আর জগন্নাথ বিগ্রহ আলাদা সত্ত্বা হবেন কি করে? এ লীলা যেন নিজেকে নিজে দর্শনের লীলা..



আবার_ট্রেন_কবে_আসবে

#আবার_ট্রেন_কবে_আসবে?

- "বাবা, ঐ দেখো ট্রেন যাচ্ছে, ট্রেন!"
মেয়ের উত্তেজনা দেখে জানলা দিয়ে তাকিয়ে দেখলাম, সত্যিই তো! দু কামরা'র একটা ছোট্ট ট্রেন হুশ করে চলে গেল।
আমাদের ফ্ল্যাটের ছাদে উঠে একটা ঢিল ছুঁড়লে রেল লাইনে গিয়ে পড়ে। দিনরাত,এমনকী মধ্যরাতেও ট্রেনের শব্দ এই কয় বছরে সয়ে গেছে। ট্রেন গেলে মিঠি জানলায় দাঁড়িয়ে আগে প্যাসেঞ্জারদের টা টা দিতো। এখন খাঁ খাঁ রেললাইনের দিকে তাকিয়ে থাকে । মেয়ে জিজ্ঞেস করে,"আবার কবে ট্রেন চলবে বাবা?"
ও অবশ্য জেনে গেছে, ওর বাবার কাছে এই উত্তর নেই। মাঝেমধ্যে যে ট্রেনগুলো ছুটে যায়, ওগুলো রেলের নিজস্ব কর্মীদের নিয়ে যাওয়ার জন্য।
আড়াল থেকে কেউ যেন জাদুকাঠি দিয়ে এই সভ্যতাকে স্তব্ধ করে দিয়েছে। ভারতীয় রেলের ইতিহাসে এতোদিন একনাগাড়ে এইভাবে ট্রেন শাটডাউন হয়নি। প্রায় একমাস হতে চললো, কোনো প্যাসেঞ্জার ট্রেন চলতে দেখিনি। ট্রেনেও চড়িনি। কোথায় গেল, সেই লোকাল ট্রেনের ভীড়, কোলাহল! কোথায় গেলো ট্রেনের সেইসব পরিচিত অপরিচিত হকাররা? কিম্বা জমিয়ে তাসখেলার মুখগুলো? শুধু কি ট্রেন? ভীষণ ব্যস্ত প্ল্যাটফর্ম গুলোয় এখন শ্মশানের নীরবতা। এখনো ভেবে চলেছি, চোখের সামনে যা দেখছি, এসব স্বপ্ন নয় তো!
এই ভারতীয় রেল কতকিছুরই তো সাক্ষী! ট্রেন চলাচল শুরু হতেই এদেশের উচ্চবর্ণের বহুমানুষ প্রতিবাদ করে বলেছিল, ট্রেন চালানো ঘোরতর অন্যায়। এতে জাত যাবে। হিঁদু,মোসলমান,মুচি,মেথর সব গা ঘেঁষাঘেঁষি করে যাবে! ভারতীয় রেল সাক্ষী, বড় বড় স্টেশনে একসময় 'হিন্দু পানি' আর 'মুসলমান পানি' আলাদা ভাবে বিক্রি হত। দুই পানি'র স্বাদ কি আলাদা হত?  কী জানি! সেসব অবশ্য ব্রিটিশ আমল। ভারতীয় রেল সাক্ষী আছে, যেদিন প্রথম এদেশে ট্রেন চলেছিল, দেশের মানুষ গলবস্ত্র হয়ে প্রণাম করেছিল। ভক্তিভরে ইঞ্জিনের গায়ে এঁকে দিয়েছিল লাল তিলক। পাদানিতে দেবতার উদ্দেশ্যে ফল,মিষ্টিও অর্পণ করেছিলো। এই ট্রেনে চেপে, ট্রেনচলার শব্দ ও ছন্দ শুনে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর আপন মনে বলে উঠেছিলেন, সেনগুপ্ত, দাশগুপ্ত ;দাশগুপ্ত, সেনগুপ্ত ; সেনগুপ্ত, দাশগুপ্ত ;দাশগুপ্ত, সেনগুপ্ত.....চলন্ত ট্রেন নাকি এই কথাগুলোই বলেচলেছিলো।
কোটি কোটি মানুষের রুজিরোজগারের ট্রেন, সমাজ,সংস্কৃতি, অর্থনীতির সঙ্গে জড়িয়ে থাকা ট্রেন আজ অদ্ভুত এক ভাইরাসের ভয়ে স্তব্ধ। রেলের ইতিহাসে লেখা হল নতুন এক অধ্যায়।
কবে আবার স্বাভাবিক হবে ট্রেন চলাচল?
আমরা জানিনা। হয়তো কেউ-ই জানেনা।
একটা ঘটনার কথা মনে পড়ে গেল। ১৮৬৮ সালের কথা। সস্ত্রীক মথুরবাবু ঠাকুর শ্রীরামকৃষ্ণ ও তাঁর ভাগ্নে হৃদয় কে নিয়ে ট্রেনে চড়ে তীর্থে চলেছেন। ট্রেন ছুটেছে কাশীর উদ্দেশ্যে। একটা স্টেশনে ট্রেন থেমেছে। ঠাকুরের এতোক্ষণ কি আর ট্রেনের মধ্যে ভালো লাগে! তিনি তাই নেমে পড়েছেন স্টেশনে। সঙ্গে হৃদয়ও। ঠাকুর কে বুঝিয়ে সুঝিয়ে ফের ট্রেনে তুলতে। উদ্বিগ্ন মথুর বাবু। জনমানবহীন অপরিচিত স্টেশন। ঠাকুর তো আপন মনে প্ল্যাটফর্মের এক গায়ের নিচে গিয়ে বসেছেন। এদিকে গাড়ির হুইসিল দিয়েছে। ঠাকুর নির্বিকার। ভাগ্নে হৃদয় চিলচিৎকার জুড়ে দিয়েছে। মথুরবাবু কান্নাকাটি শুরু করে দিয়েছেন। ট্রেন ছেড়ে দিলো। সত্যিই ছেড়ে দিলো। ঠাকুর পড়ে রইলেন প্ল্যাটফর্মে। সঙ্গে ঠাকুরের আচরণে প্রচন্ড ভেঙে পড়া ভাগ্নে হৃদয়। এবার কী হবে?
স্টেশন মাস্টারের কাছে ছুটলো হৃদয়। পরের ট্রেন কখন? মাস্টারমশাই জানালেন, আজ আর ট্রেন নেই। পরের ট্রেন আসবে আগামীকাল। মাথায় আকাশ ভেঙে পড়লো হৃদয়ের। এদিকে একথা শুনে তো ঠাকুর নাচতে শুরু করেছেন.... "ওরে হৃদয়, এবারেই তো খেলা জমবে। ওরে দেখ এবার মা কী করে!" হৃদয় তো ঠাকুরের কথা শুনে রেগে আগুন.... " হ্যাঁ, তোমার মা রেল কোম্পানি খুলবে!"
হৃদয় যত রাগে, ঠাকুর ততই আনন্দ পান। তাঁর মধ্যে উদ্বেগ,দুশ্চিন্তা তো দূরের কথা, তিনি আনন্দে টগবগ করে ফুটছেন। বেশ কিছুক্ষণ এভাবে প্ল্যাটফর্মে বসে থাকার পর হঠাৎ সেই স্টেশনের স্টেশন মাস্টার রীতিমতো উত্তেজিত হয়ে এসে বললেন, " আপনাদের ভাগ্য সুপ্রসন্ন। রেলের একজন খুব বড় অফিসার একটি সেলুন কার নিয়ে কাশি চলেছেন। তিনি কিছুক্ষণ এই প্ল্যাটফর্মে থামবেন। আপনাদের নিয়ে যাওয়ার জন্য ওনাকে অনুরোধ করতে পারি। কিছুক্ষণ পর একটা অত্যন্ত সাজানো গোছানো ট্রেন এসে হাজির হল সেখানে। ট্রেন থেকে যিনি নামলেন, তিনি রাজেন্দ্রলাল বন্দ্যোপাধ্যায়। রেলের মস্ত অফিসার।
বাড়ি বাগবাজার। ঠাকুর কে এই অবস্থায় স্টেশনে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে ছুটে এলেন তিনি। ঠাকুর তাঁকে না চিনলেও তিনি চেনেন। রাজেনবাবু বলেন, "এ কী অবস্থা আপনার!  কোথায় যাবেন?"  ঠাকুরও তো কাশিই যাবেন! রাজেনবাবু তো প্রণাম করে ঠাকুর কে তাঁর ট্রেনে তুলেছেন। এ ট্রেন একদম অন্যরকম। পুরু গদিওলা সোফা, সামনে টেবিল, জানলায় পর্দা। যেন বাড়ির বিলাশবহুল বৈঠকখানা। ট্রেন ছেড়ে দিয়েছে। রাজেন্দ্রলাল বাবু অস্ফুটে বলে উঠলেন, দক্ষিণেশ্বরের দেবতাকে নিয়ে চলেছি কাশির দেবতার কাছে। আর এদিকে ঠাকুর তো মিটিমিটি হাসছেন আর ভাগ্নে হৃদয়ের দিকে চেয়ে বলছেন,.... "হ্যাঁ গা, কী বুঝলি...?"
হঠাৎ এই ঘটনাটা মনে পড়ে গেল কেন? কেনই বা উল্লেখ করলাম?
মনে হল, আমরা সবাই, এই সভ্যতা যেন একটা অদৃশ্য প্ল্যাটফর্মে বসে আছি। চারপাশে সব স্তব্ধ। কবে ট্রেন আসবে কেউ জানেনা। কিন্তু হঠাৎ যদি সব সমস্যার সমাধান করে দিয়ে সেই রাজেনবাবুর ট্রেনটার মতন কোনো ট্রেন ছুটে আসে?
আবার যদি সবকিছু স্বাভাবিক হয়ে যায়!
আমরা তো আর ঠাকুর শ্রীরামকৃষ্ণ নই, পাপীতাপি কীটপতঙ্গ। তবু আশায় বুক বেঁধেছি।
ঠাকুর, কবে আসবে 'সেই ট্রেন'?

(সংকলিত)




#ডাকাতের_কবলে_ঠাকুর ?
না 
#ঠাকুরের_কবলে_ডাকাত ?
●●●●●●●●●●●●●●●●●●●●●
        শ্রী রামকৃষ্ণ একবার ডাকাতের কবলে পড়েছিলেন। 
ব্রাহ্মসমাজের উৎসবশেষে দক্ষিণেশ্বরে ফিরছেন শ্রী রামকৃষ্ণ, সঙ্গে হৃদয়। 
রাত বেশ গভীর। চানকের রাস্তায় (বি. টি.রোড) তখন আশপাশে জঙ্গল, ডাকাতদল আটকাল গাড়ি।  
তারা তিনজন -- সঙ্গে বল্লম, লাঠি ইত্যাদি অস্ত্র। 
গাড়ি যখন, তখন যথেষ্ট বিত্তবান সন্দেহ নেই। 
কিন্তু হায়, এরা তো অতি সাধারণ, কিছুই সঙ্গে নেই। তারা হতাশ ও ক্রুদ্ধ। 
শ্রী রামকৃষ্ণ তাদের বুঝিয়ে বললেন, দক্ষিণেশ্বরে এসো, তোমাদের পাওনা মিটিয়ে দেব। কোনও চালাকি নয়তো! তবে মানুষটিকে যেন কেমন বিশ্বাস করতে ইচ্ছা হয়। সর্দার 'তারা কাঁড়ার'  বললে , ঠিক আছে তবে কোনও চালাকি যেন না করা হয়, তাহলে পার পাবে না। তারপর কদিন বাদে 'তারা কাঁড়ার'  দক্ষিণেশ্বরে এসে হাজির। 
শ্রী রামকৃষ্ণ কে বলল, কই আমাদের পাওনা গন্ডা মিটিয়ে দাও।
ঠাকুর বললেন , বসো, মায়ের প্রসাদ পাও, দেব বৈকি।
রাতের কারবারি সে, ঘরে নানা লোকের আনাগোনা -- হৃদয় হাজির -- ভাল ঠেকল না। সে একটু থেকেই চম্পট দিল। কিন্তু ছাড়তে রাজি নয়, কদিন বাদে আবার হাজির। সেদিন রামকৃষ্ণ মায়ের নাম গান করছেন। 
সে গানে সর্দার মুগ্ধ!  
প্রসাদ ধারণ করে, জল খেয়ে নীরবে প্রস্থান। 
কী জানি কোন পাওনায়  আজ তার মন ভরপুর! তারপর একদিন তিনজনেই এসে হাজির। 
শ্রী রামকৃষ্ণ তাদের দেখে মায়ের নাম করছেন আর বলেছেন, লাগ্ ভেলকি, লাগ্ । 
তা ভেলকিই লাগল, তারা সটান পড়ল শ্রী রামকৃষ্ণের চরণে ---- আমাদের কী হবে, আমরা পাপী, খুনি, ডাকাতি করি। 
শ্রী রামকৃষ্ণ তাদের সদ্ ভাবে জীবন যাপন করতে বলে অনেক সান্তনা দিয়ে ফেরত পাঠালেন। এবারে তাদের পাওনা পূর্ণ হল।
 'তারা কাড়ার'  এক কাঠ গোলায় চাকরি পেল, তার এক সাগরেদ হল রানী রাসমণির বাড়ির পাইক, অপরটি হল এক আস্তাবলে ঘোড়ার সহিস। 
'তারা কাড়ার' আসত ঠাকুরের কাছে। একটা পিঁড়ি তৈরি করে ঠাকুরকে উপহার দিয়েছিল সে। 
তিনি অপ্রকট হলে সে দক্ষিণেশ্বরে এসে তাঁর ঘরে বসে থাকত ঘন্টার পর ঘন্টা আর চোখের জলে ভাসত।"

আমার মন তুমি ,নাথ, লবে হ'রে/ আমি আছি বসে সেই আশা ধরে।।"

সূত্র: নিবোধত, মে-জুন ২০১৮

সংগৃহীত।


https://m.facebook.com/groups/333556606679773?view=permalink&id=2841268785908530



" খণ্ডন-ভব-বন্ধন " ভজন- সঙ্গীতে স্বামীজী ঠাকুরের যে জীবন্ত ভাবরূপ আমাদের জন্য ধরে দিয়েছেন, তা চিরকাল প্রাণবন্ত ধ্যানের বস্তু হয়ে থাকবে ৷
রামকৃষ্ণের গোঠ-গোত্রের, জন্মধামের সাধন-আরাধনার এমনকি তাঁর অনবদ্য অবয়বের পর্যন্ত বর্ণনা করলেন না— ভাবমুখের রামকৃষ্ণকে ভাব-মুখেই প্রকাশ করলেন ৷
বললেন ঃ " বন্দি তোমায় ৷" 
কিন্তু কে তিনি ? 
তাঁর কি রূপ ? 
কি আশ্চর্য জবাব— " খণ্ডন-ভব-বন্ধন! " ভব-বন্ধন খণ্ডন করে কে ? 
যিনি অখণ্ড তিনিই খণ্ডন-ভব-বন্ধন ৷
 খণ্ড দিয়ে খণ্ডন হয় না ৷
 সব খণ্ডিত বস্তুই মায়াধীন ৷ 
তবু ব্যক্ত হয়ে ব্যস্ত হয়ে প্রাণের বস্তু হয়ে হৃদয়ে এসেছেন কেন ?
 হৃতস্মৃতি মানুষকে পুনরায় অখণ্ডে ফিরিয়ে নেবেন বলে ৷ 
তিনি অঞ্জনহীন নররূপধর ৷ 
তার সেইরূপ মানুষকে আত্মশ্রদ্ধ করেছে, ভগবানকে আত্মীয় করেছে, ধারণার বস্তু করেছে ৷ নেই তার গুণ, তবু গুণময় ৷ 
ধরাছোঁয়ার বাইরে, তবু তিনি ধরা দিয়েছেন—কৃপায় ৷ 
তাঁকে আঁকড়ে ধরে এই ধরার সকল আসক্তি ছোঁয়ার বাইরে যাওয়া চলে৷
পঙ্কিল এই কলিকালে তিনি হচ্ছেন " মোচন-অঘদূষণ " ৷
অনেক কর্মের গেরো জড়ানো নাড়িতে-অষ্টপাশে বাঁধা ৷ 
তবু ভরসাহীন নই ৷
নিজেই চুম্বক নিজেই কাদা সরিয়ে নেন ছুঁচের উপর চেপে ৷ 
তবেই না ভগবানে একটু আধটু মন ৷ 
কী করুণার ব্যাথামাখা কথা—" কখনো ভগবান চুম্বক, ভক্ত ছুঁচ; কখনো ভক্ত চুম্বক, ভগবান ছুঁচ হন ৷" তা নাহলে ভরসা ছিল কি ? 
কালাতীত বলেই কালের করে কালস্বরূপ তিনি ৷
দেখতে আমাদের মতো, কত আপনজনের মতো কথা ! অথচ ব্রহ্মবস্তু ৷ 
দেহের মাংস-মজ্জা কাশীপুরে দগ্ধ হয়েছিল—তবু রামকৃষ্ণতনু, সেই " চিদঘনকায় ", জ্বল-জ্বল করছে কোটি ভক্তহৃদয়ে ৷ 
একটি তো ছিলেন ৷ এত হলেন কি করে? একটি বলেই ৷
অস্তি-বস্তুর নির্যাসকেই বলা চলে 'ভাব' ৷ 
তারই সমুজ্জ্বল-সাগর শ্রীরামকৃষ্ণ ৷
এ দার্শনিকের নির্বিকার ব্রহ্মসাগর নয় ৷
এ " চির-উন্মাদ প্রেমপাথার " ৷
যিনি জগদীশ্বর, তিনি যোগেশ্বর ৷ 
তিনিই আসেন যুগে যুগে ৷ 
এসেছেন বহু বহু করুণা-ভক্তির টানে—ভক্ত তরাতে ৷ বিযুক্তকে যুক্ত করতে ৷ 
সবাই যে ভুলে আছে সেই নাড়ির সম্বন্ধ ৷  লোকের ভিড়ে, কথা বলতে, পথ চলতে, রহস্য করতে করতে, হাসি- অশ্রুর শান্ত নানা অবস্থায় আচম্বিতে সমাহিত হয়ে হাতে-কলমে দেখালেন ৷ 
           মানুষের সত্য-সনাতন অবস্থা সত্য সুন্দর হয়ে জীবনে এলেন জীবকে আবার শিব করবেন বলে ৷ অজ্ঞানের ঘরে জ্বালালেন প্রজ্ঞানের মণি-দীপ ৷


        ~ স্বামী বুধানন্দ।








💮💮💮💮💮💮  দয়া পরম ধর্ম  💮💮💮💮💮💮


                মানুষের যতরকম সদগুণ আছে, দয়া তার মধ্যে অন্যতম ।  যে সংসারে দয়া, হৃদ্যতা, স্নেহ, শ্রদ্ধা নেই, সেটি তৃণহীন মরুভূমির মতো শুষ্ক, নিষ্প্রাণ ।  দয়া ও হৃদ্যতা সংসারকে করে সরস, সজীব, প্রাণরসে উদ্বেলিত ।  দয়া থেকে জন্ম নেয় ক্ষমা ও ভালবাসা ।  অন্তরে অন্তরে ফুটে ওঠে প্রীতির মুকুল ।
                 ঠাকুর শ্রীরামকৃষ্ণ বললেন, " দেখ, দয়া আর মায়া এ-দুটি আলাদা জিনিস ।  মায়া মানে আত্মীয়ে মমতা ;  যেমন বাপ-মা, ভাই-ভগ্নী, স্ত্রী-পুত্র এদের উপর ভালবাসা ।  দয়া সর্বভূতে ভালবাসা ;  সমদৃষ্টি ।  কারু ভিতর যদি দয়া দেখ যেমন বিদ্যাসাগরের, সে জানবে ঈশ্বরের দয়া ।  দয়া থেকে সর্বভূতের সেবা হয় ।  মায়াও ঈশ্বরের ।  মায়া দ্বারা তিনি আত্মীয়দের সেবা করিয়ে লন ।  তবে একটি কথা আছে ------ মায়াতে অজ্ঞান করে রাখে, আর বদ্ধ করে ।  কিন্তু দয়াতে চিত্তশুদ্ধি হয় ।  ক্রমে বন্ধন মুক্তি হয় । "
                   শ্রীশ্রীমা বলতেন, " আমার দয়া যার উপর নেই সে নেহাত হতভাগ্য ।  আমার দয়া যে কার উপর নেই তা বুঝি না ------ প্রাণীটা পর্যন্ত । "
                    আমেরিকা থেকে এক পত্রে স্বামীজী লিখছেন, " এদেশের তুষার যেমন ধবল তেমনি হাজার হাজার মেয়ে দেখেছি ।  আর এরা কেমন স্বাধীন ।  সকল কাজ এরাই করে ।....... আর এদের কত দয়া !  যতদিন এখানে এসেছি, এদের মেয়েরা বাড়িতে স্থান দিয়েছে, খেতে দিচ্ছে ----- লেকচার দেবার সব বন্দোবস্ত করে, সঙ্গে করে বাজারে নিয়ে যায় ------ কি না করে বলতে পারি না ।  শত শত জন্ম এদের সেবা করলেও এদের ঋণমুক্ত হব না । "
                     সর্বজীবে ভালবাসার নাম প্রেম, দয়া, করুণা ।  তখন কর্ম ফলাকাঙ্ক্ষারহিত হয়ে সর্বজীবের সুখ ও কল্যাণ সাধনে অনুষ্ঠিত হয় ।
             সন্ত তুলসীদাস এজন্যই বলেছেন --------
           " দয়া ধরমকা মূল, নরকমূল অভিমান ।
    তুলসি কহে দয়া না ছোড়িয়ে, যবলগ্ ঘটমে প্রাণ ।। " 

                                             ( উদ্বোধন : ১১৭ / ১২ )


💮💮 জয় ঠাকুর 💮  জয় মা  💮 জয় স্বামীজী 💮💮






ভালো  থেকো সবাই।

বয়েস হয়েছে; ছোট দোকান, কষ্টে দিন গুজরায় কিন্তু গদাধর যখনই দোকানে এসে বসে, মনে হয় কোথাও যেন আর কষ্ট নেই। রাত যতই  অন্ধকার হোক, গদাধর যেন চিরন্তন সুপ্রভাত।যাই একটু বাড়তি রোজগার হয় তাই দিয়ে মিষ্টি কিনে গদাধরকে খাওয়ায়। গদাধর খায় আর চিনু দেখে। ওদিকে খদ্দের এসেছে দোকানে, সেদিকে খেয়াল নেই। গদাধরকে যেন চিনতে পেরেছে চিনু। তার নাম যখন চিনু তখন সেই তো  প্রথমে চিনতে পারবে।

একদিন হলো কি, চিনু ফুল তুলে পরিপাটি করে মালা গাঁথলে। কোঁচড়ে করে লুকিয়ে মিষ্টি কিনে আনলে বাজার থেকে। গদাধরকে বললে, ‘চলো!’

‘কোথায়?’

‘মাঠে । যেখানে কেউ কোথাও নেই। যেখানে কেবল তুমি আর আমি।‘

চিনিবাস গদাধরকে নিয়ে মাঠের মধ্যে এসে দাঁড়াল। দৃষ্টির গোচরে নেই কোথাও জনমানুষ। উপরে আকাশ-ভরা শান্তির নীলিমা। মালা-মিষ্টি পাশে রেখে হাঁটু গেড়ে হাত জোড় করে বসে রইল চিনিবাস। সামনে গদাধর। কৃষ্ণকিশোর।

‘এ কি চিনিবাসদা, এ কি করছ? তার চেয়ে মিষ্টির ঠোঙাটা হাতে দাও।‘

‘দিচ্ছি গো দিচ্ছি-‘

আগে মালা দিলে গলায়। কৃষ্ণের গলায় অতসী ফুলের মালা। পরে হাতে করে খাওয়াতে লাগল গদাধরকে। ব্রজের ননীগোপালকে।

জলে চোখ ভেসে যাচ্ছে চিনিবাসের। মিষ্টিভরা হাত কখনো পড়ছে গিয়ে গদাধরের নাকে, কখনো চোখে, কখনো কপালে। গদাধর হাসছে আর খাচ্ছে।

খাওয়ানোর পর আবার স্তব করতে বসল চিনিবাস। বললে, ‘বুড়ো হয়েছি, বাঁচব না বেশি দিন। মর্ত্যধামে তোমার  কত লীলা –খেলা হবে, কিছুই দেখতে পাব না। তবু আজ যে আমাকে একটু চিনতে দিলে দয়া করে, তাই আমার পারের কড়ি হয়ে রইল।‘

মত্ত অসুরের মত স্বাস্থ্য ছিল চিনিবাসের। দু’হাতে তুলে গদাধরকে কাঁধে বীরবিক্রমে নৃত্য করত। বলত, ‘তুমি আমাকে দাদা বলো- চিনিবাস দাদা। আমি যদি তোমার দাদা হই, তবে আমি তো বলরাম।‘ বলে আবার নৃত্য।

তুমি সমুদ্র আর আমি সামান্য শঙ্খকার।-– পরমপুরুষ শ্রীশ্রীরামকৃষ্ণ –অচিন্ত্যকুমার সেনগুপ্ত।। 

🙏🏻🌼🌺🙏🏻🌼🌺🙏🏻🌼🌺🙏🏻🌼🌺🙏🏻🌼🌺🙏🏻🌼🌺🌼🌺🙏🏻🌼🌺🙏🏻🌼🌺🙏🏻🌼🌺🙏🏻🌼🌺



ঠাকুর তখন কাশীপুরে ক্যান্সারে ভুগছেন। রাম দত্ত বাবু কলকাতার সুপ্রসিদ্ধ ডাক্তার কৈলাস চন্দ্র বসুর কাছে গিয়ে ঠাকুরের  চিকিৎসার জন্য অনুরোধ করেন। কৈলাস বসু রামবাবুর কাছে ঠাকুরের মহত্ত্বের কথা শুনে বললেন: "এদিকে বলছ,'পরমহংসদেব', 'অবতার ', আবার বলছ---তাঁর  গলদেশে বিষাক্ত ক্ষত হয়েছে কিনা পরীক্ষা করতে হবে।পরমহংস অবতারও হবেন, আবার সঙ্গে সঙ্গে ক্যান্সারও হবে। এ কেমন কথা ? আমি হলে ভাই , ওরকম অবতারের কান মুচড়ে দিতুম।"
         শুনে রামবাবু দুঃখিত হয়ে বললেন, "ওরূপ মহাপুরুষদের উদ্দেশে কটূক্তি করতে নাই। তাতে বক্তা ও শ্রোতা উভয়েরই  অকল্যাণ হয়।" যা হোক তাঁরা গাড়ি করে কাশীপুরে  ঠাকুরের কাছে এসে পৌঁছালেন। ঠাকুর  ডাক্তারকে নমস্কার করে জিজ্ঞাসা করেন, "হ্যাঁগো ডাক্তার, তুমি আগে আমার চিকিৎসার করবে, না আমার কান মুচড়ে দেবে?কোনটি আগে করবে?" শোনামাত্র কৈলাস ডাক্তারের অন্তরাত্মা শিউরে উঠল। ইনি কি করে জানলেন? বুঝলেন --এ পরমহংস নিশ্চয়ই অন্তর্যামী ভগবান। হাত জোর করে ঠাকুরের কাছে বললেন: "দীনের অপরাধ মার্জনা করবেন। না বুঝে যে অন্যায় করেছি তার জন্য আমি লজ্জিত।"
        এরপর  তিনি শ্রদ্ধার সঙ্গে ঠাকুরের চিকিৎসা করেন ও পরম ভক্ত হয়ে ওঠেন। পরবর্তী কালে তিনি ঠাকুরের ছবি প্রণাম না করে বাড়ি থেকে বের হতেন না। অন্তর্যামী ঠাকুর এইভাবে কৃপা করে    ভক্তের অহংকার চূর্ণ করে দিতেন।

                    প্রণাম ঠাকুর🙏


শ্রীরামকৃষ্ণের মধুর স্মৃতি~

শ্রীশ্রীঠাকুর বরফ খেতে খুব ভালবাসতেন। একদিন খুব গরম ছিল, আমি কলকাতা থেকে দক্ষিণেশ্বর (ছয় মাইল) হেঁটে কাগজে মোড়া এক টুকরো বরফ নিয়ে গিয়েছিলাম। তখন ঠিক দুপুরবেলা ছিল আর সূর্যের তেজ এত প্রখর ছিল যে আমার গায়ে ফোস্কা পড়ে গিয়েছিল। ঠাকুর আমাকে দেখেই বলে উঠলেন, "উঃ উঃ!" যেন তার খুব কষ্ট হচ্ছিল। আমি তাকে জিজ্ঞেস করলাম কি হয়েছে? তিনি বললেন যে আমার শরীরের দিকে তাকাতেই তার শরীর জ্বলতে আরম্ভ করলো। আশ্চর্যের কথা, বরফ সারা রাস্তা এতটুকু গলেনি।
শ্রীরামকৃষ্ণদেব যখন কাশীপুরে উদ‍্যান বাটীতে এলেন তখন শীতকাল এবং প্রায়ই ঠাণ্ডা পড়ত। একবার ঠাকুরের সেবা করার সময়, মাঝরাতে আমি​ তাড়াতাড়ি বাইরে গেলাম শুধুমাত্র একটি পাতলা কাপড় গায়ে দিয়ে। ফিরে এসে দেখি, অসুস্থ অবস্থায় তিনি খাট থেকে উঠে কোন প্রকারে হামাগুড়ি দিয়ে ঘরের অপর প্রান্তে গিয়ে হুকে ঝুলানো একটা শালের নাগাল পাওয়ার চেষ্টা করছেন। আমি তিরস্কারের কন্ঠে জিজ্ঞেস করলাম, "আপনি কি করছেন? এখন কনকনে ঠাণ্ডা, আপনার বিছানা ছেড়ে ওঠা উচিত হয়নি।" ঠাকুর তার নিজের শালখানি হাতে করে উদ্বেগ ও স্নেহপূর্ণ দুর্বল কন্ঠে বললেন, "আমি চাই না তোর ঠাণ্ডা লাগুক। এটা নে।"
ঠাকুরের ব‍্যবহৃত শাল কাছে রাখার যোগ‍্যতা আমার নেই মনে করে ঐটি পরে স্বামী ব্রহ্মানন্দকে দিয়েছিলাম।

----------স্বামী রামকৃষ্ণানন্দ