Saturday, 27 April 2024

ভগবান সাধনায় জপ ও দীক্ষা



(******** দীক্ষা********)

'' মানুষ গুরু দীক্ষা দেয় কানে , জগৎ গুরু দীক্ষা দেন প্রাণে ।

আপনারা খুব করে জ্ঞান অর্জন করুন । বিজ্ঞান , দর্শন , ইতিহাস আলোচনা করুন ।

মূর্খ থেকে কি লাভ ?

লোকের কথায় কেবল চালিত  হবেন , কোন কিছুতে নিষ্ঠা সহকারে লেগে থাকতে পারবেন না । তীক্ষ্ণ , তীক্ষ্ণতর বুদ্ধির নিকট ভয় পেয়ে যাবেন ।

একটু জ্ঞান লাভ হলেই বুঝতে পারবেন দেশকাল - ভেদে আপনাদের প্রাণ কি চায় । আপনাদের আকাঙ্ক্ষার স্বরূপ টি কি , আপনার আদর্শই বা কি ।

শুধু হুজুগ করে দীক্ষা দীক্ষা করে মাতলে কি হবে ?

জমি প্রস্তুত হলে ভগবান আপনি ই দীক্ষা দেবেন । সে দীক্ষা লাভের জন্য হৃদয় কপাট খুলে সতত উন্মুখ হয়ে বসে থাকুন । সময় হলে কার মুখ দিয়ে কার হৃদয় থেকে প্রেরণা লাভ করবেন তা কে বলতে পারে ?

কোন পথ দিয়ে প্রভু কাকে তাঁর আঙ্গিনায় নিয়ে যাবেন কে বলতে পারে ?

কিন্তু মনে প্রাণে সত্যি কারের দীক্ষা পেলে তা অমনি বুঝতে পারবেন ।

বাহ্য আনুষ্ঠানিক দীক্ষা র একটা সংক্রামক শক্তি আছে । একজন দীক্ষা র আগ্রহ প্রকাশ করলে তা বহুর মধ্যে সংক্রামিত হয় ; কিন্তু কিছুদিন পরে ঐ আগ্রহ কেটে যায় । তখন সে লোক যে সেই । তাতে বরং অনিষ্ট হয় ।

হুজুক কেটে গেলে জ্ঞান - মার্জিত বিচার - বুদ্ধি নিয়ে গুরুকে পরীক্ষা করে স্থির শান্ত চিত্তে , বজ্র দৃঢ় সংকল্প নিয়ে দীক্ষা গ্রহণ করতে হয় । ''

 দীক্ষা শব্দের বর্ণদুটির প্রথমটি দান-বাচক, কিন্তু দ্বিতীয়টি 'ক্ষয়-বাচক'।

দ-> দান

ক্ষ-> ক্ষয় বা ধ্বংস।

অর্থাৎ দীক্ষা হ'ল সেই প্রক্রিয়া, যার দ্বারা দীক্ষাপ্রাপ্ত ব্যক্তিকে গুরু আধ্যাত্মিক শক্তি ও জ্ঞান *দান* করেন, যা শিষ্যের অজ্ঞান ও বন্ধনকে *ক্ষয়* বা ধ্বংস করে।

আর একটি অর্থে দীক্ষা মূল ক্রিয়াপদ 'দীক্ষ' থেকে উদ্ভূত,  যার অর্থ 'বৃদ্ধি করা', 'উন্নত করা' কিংবা পবিত্র করা। এই অর্থে দীক্ষা হ'ল 'পবিত্রকরণ', যা আমাদের আধ্যাত্মিক উন্নতি ঘটায়।

সুতরাং দীক্ষা একমাত্র তাঁর কাছ থেকেই নেওয়া যেতে পারে যাঁর আধ্যাত্মিক শক্তি দানের যোগ্যতা আছে। 

গুরু এইরূপ যোগ্যতাসম্পন্ন না হ'লে কিন্তু দীক্ষা ব্যর্থ হয়ে যায়। সেক্ষেত্রে মন্ত্রে কোনও কাজ হয় না। 

_দীক্ষাপ্রসঙ্গে_ 🌼🌼🌼

*দীয়তে (দেওয়া) এবং ক্ষীয়তে (ক্ষয় পাওয়া) এই দুটি শব্দ সমন্বয়ে 'দীক্ষা' শব্দটির ব্যুৎপত্তি। আলো দেওয়া এবং অন্ধকার ক্ষয় —এই হল সকল দীক্ষাকর্মের মূল ভাবনা।* 

*কুলার্ণবতন্ত্রে বলা হয়েছে—*

*'দীয়তে বিমলং জ্ঞানং*

*ক্ষীয়তে কর্মবাসনা'*

*—অর্থাৎ দীক্ষা হল তাই যাতে বিমল জ্ঞানের উৎপত্তি ঘটে ও জীবের কর্মবাসনা নিঃশেষে ক্ষয় পায়।*

*দীক্ষা মানে 'দয়াপূর্বক ঈক্ষণ'— পরমেশ্বরের অর্থাৎ সদ্গুরুর সস্নেহ কৃপাদৃষ্টিপাতের নাম দীক্ষা।*

*একটি সুনিদ্দিষ্ট জীবনাদর্শের নিকটে নিজেকে নিঃশেষে নিবেদনের জন্য সঙ্কল্প গ্রহণের নাম দীক্ষা। সেই আদর্শটি কোনও দেবতা, মন্ত্র, মূর্তি, প্রতীক, ভাব, ব্যক্তি বা মতবাদকে অবলম্বন করে প্রকটিত হতে পারে।* 

*যিনি যে মত বা পথেই দীক্ষিত হয়ে থাকুন না কেন, কোন একটা উচ্চ লক্ষ্য বা আদর্শ সামনে না থাকলে তা যথার্থ দীক্ষা হয় না।*

*জন্ম, মৃত্যু, বিবাহের মতনই দীক্ষা মানুষের জীবনের একটি অতীব গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার। অথবা বলা চলে জন্ম, মৃত্যু বিবাহের চেয়েও তা গুরুত্বপূর্ণ কারণ জন্ম-মৃত্যু-বিবাহ জড় জীবজগতকে নিয়েই কারবার করে। দীক্ষার মধ্য দিয়ে জড় ছাড়িয়ে আমি চৈতন্যের অভিসারী হই অথবা জড়ের মধ্যে চৈতন্যকে খুঁজে পাই।...* 

*দীক্ষা শুধু নবজন্ম নয়, জন্ম-জন্মান্তরের মধ্যে এক ভিন্নতর জন্মের নিশানা।*

*দীক্ষাকে বলা হয় আধ্যাত্মিক বিবাহ -জীবের সঙ্গে পরমেশ্বরের মিলন। গুরু হলেন সেই বিবাহের ঘটক। লৌকিক বিবাহে যেমন দুটি দেহ মন ও প্রাণ একত্রে মিলিত হয়, দীক্ষারূপ বিবাহে জীবাত্মা তেমনি পরমাত্মার সঙ্গে মিলিত হবার উদ্যোগ নেয়। দীক্ষার মধ্য দিয়ে ঘটে সেই দিব্য মিলনের সূচনা।* 

*ঋগ্বেদের কাল থেকে বর্তমানের মহাকাশ যুগ পর্যন্ত দীক্ষার উপযোগিতা সমভাবে বিদ্যমান।*

*দীক্ষা হল সাধারণ অর্থে একটি ধর্মীয় অনুষ্ঠান যার মধ্য দিয়ে মানুষ নিজের অন্তরস্থ আত্মিক সাম্রাজ্যে প্রবেশের চেষ্টা করে। সাংসারিক জীবের আত্মিক ব্যাপারে আলোর জন্য তাগিদ অনুভব করাই হল দীক্ষার যথার্থ মূল প্রেরণা।*

><><><><><><><><><><><><><><><><><><><><><><><><><><><><><

○●○●○●○●সাধনা○●○●○●○●

আমরা ভগবানের নাম করব, কত হাজার জপ করব...এটি বড় কথা নয়।

কেউ হয়ত নিরামিষ খায়, কেউ হয়ত এক বস্ত্রে থেকে ভগবানের জন্য তপস্যা করে ।

সেসব কিন্তু কিছুই নয়,যদি না সেগুলিতে আন্তরিকতা থাকে।

আসল কথা হচ্ছে,আমাদের সমস্ত অন্তর দিয়ে ভগবানকে ভালোবাসতে পারছি কি না তা দেখতে হবে...

যে ভালোবাসায় সংসারের অন্য সমস্ত আকর্ষণ তুচ্ছ হয়ে যাবে। এই কথাটি মনে রাখতে হবে।

ভাগবতে বলেছে....

তাঁর প্রতি যে অনুরাগ তা জগতের অন্যসব অনুরাগকে ভুলিয়ে দেয়। সুতরাং তাঁর প্রতি আমাদের ভালোবাসা কতখানি হলো...এই বিচার করে আমাদের সাধন পথে হাঁটতে হবে।

আমরা তাঁর নামে মুহুর্মুহু মূর্ছা গেলেও কিছু হবে না বা আমাদের সমস্ত জীবনটা বসে বসে ধ্যান করলেও হবে না, বছরের পর বছর লক্ষ লক্ষ জপ করলেও হবে না। তীর্থে তীর্থে ঘুরে বেড়ালেও হবে না।

হবে তখন, যখন দেখব তিনি আমাদের অন্তরকে সর্বদা পরিপূর্ন করে রয়েছেন। তিনি ভিন্ন আর কোনো চিন্তা বা বস্তু বা ব্যক্তির সেখানে স্থান নেই।

আমাদের অন্তরের পূর্ন অনুরাগ তাঁকে দিতে হবে। তাঁর চরণে নিজেদের পরিপূর্ন ভাবে সমর্পণ করতে হবে।

....... এটিই সাধনার সার কথা ।

♤♧♤♧♤♧♤♧♤♧♤♧♤♧♤♧♤

*꧁জপ꧂*

পবিত্র ঈশ্বরীয় নাম অথবা শক্তিশালী ইষ্টমন্ত্রের পুনঃ পুনঃ উচ্চারণই 'জপ'।

অরণি কাঠ বারবার ঘর্ষণ করতে করতে যেমন তা থেকে আগুন বার হয়, ঠিক তেমনই গোপন ইষ্টমন্ত্র সঠিক উচ্চারণে জপ করতে করতে তা থেকে শক্তি নির্গত হয়ে সাধককে অতীন্দ্রিয় রাজ্যের দিকে নিয়ে যায়। তখন স্তরে স্তরে মন উপরে উঠতে থাকে।

জপের সময় মুখ বন্ধ এবং জিভ স্তব্ধ থাকা উচিৎ। অর্থাৎ জপ হবে মনে মনে। 

মন অন্যদিকে নিযুক্ত রেখেও মুখে কোনও শব্দ উচ্চারণ করা সহজ। কিন্তু মনকে জপের দিকে নিযুক্ত না রেখে মানসিক জপ প্রায় অসম্ভব, তাই নীরব মানসজপই শ্রেষ্ঠ। 

মনকে অন্য সকল চিন্তা থেকে মুক্ত করে সর্ব প্রকারে ঈশ্বরমুখী করাই সাধনার উদ্দেশ্য। 

মনের চিন্তা দুই প্রকার : শ্রবণধর্মী এবং দর্শনধর্মী।

অর্থাৎ আমরা কোনও শব্দ চিন্তা করতে পারি অথবা দৃশ্য চিন্তা করতে পারি। 

এই দুইপ্রকার চিন্তনকে ঈশ্বরমুখী করতে গেলে অন্তরে ইষ্টের রূপ (দৃশ্য ) চিন্তন এবং তাঁর ভাব-প্রতিপাদক মন্ত্র (শব্দ) চিন্তন করতে হয়। তাহলে মনে আর অন্য চিন্তা আসেনা।

আর তা না হলে মুখে নাম করে যাচ্ছি কিন্তু মন তার অভ্যাসবশতঃ জাগতিক চিন্তা করে যাচ্ছে তাতে কী লাভ?  

মুখে একটি শব্দ উচ্চারণ করা সহজ, কিন্তু দৈহিক কম্পন বন্ধ করে শুধু মানস জপ করতে গিয়ে দেখা যায় সেটা কত কঠিন! আর কঠিন বলেই সেটা অধিকতর ফল প্রদানকারী।

স্বামী বিবেকানন্দ রাজযোগের আলোচনায় বলছেন,

_‘‘...মন্ত্র জপ করিবার তিন প্রকার নিয়ম আছে — 'বাচিক', 'উপাংশ' ও 'মানস'।_

_বাচিক জপ সর্বনিম্নে এবং মানস জপ সর্বাপেক্ষা শ্রেষ্ঠ।...’’_

মন্ত্র জপের সঙ্গে সঙ্গে মন্ত্রের অর্থ অর্থাৎ মন্ত্রের ভাবটি চিন্তা করতে হয়। মহর্ষি পতঞ্জলি শেখাচ্ছেন, _'তজ্জপস্তদর্থ- ভাবনম্';_

— অর্থাৎ জপের সঙ্গে সঙ্গে জপমন্ত্রের অর্থ ভাবার কথা বলা হয়েছে। 

এখানে 'মন্ত্র' বলতে ঈশ্বরীয় নাম এবং তার অর্থ বলতে নামের প্রতিপাদ্য ভাবের কথা বলা হচ্ছে। 

এই ভাব-চিন্তন থেকেই বিক্ষেপহীন ভাবময় স্থিতি বা ধ্যান আসে। এভাবেই জপ থেকে ক্রমে ধ্যানে উন্নীত হতে হয়।

যাঁরা শ্রীরামকৃষ্ণ-নাম জপ করছেন, তাঁরা জপের সাথে সাথে সেই নামের অর্থ বা ভগবান শ্রীরামকৃষ্ণের রূপ চিন্তন করেন। 

কিন্তু ভগবান শ্রীরামকৃষ্ণের প্রকৃত রূপ আমাদের বুদ্ধির অগম্য। তাঁর অনন্ত ভাব আমাদের ধারণার বাইরে। আমরা তাই নিজেদের সীমাবদ্ধ ক্ষমতা অনুযায়ী আমাদের পক্ষে যতটুকু সম্ভব শুধু ততটুকুই তাঁকে চিন্তা করতে পারি। 

স্বয়ং স্বামী বিবেকানন্দ তাঁর সম্পর্কে বলেছেন, 

_‘‘এই অদ্ভুত রামকৃষ্ণ-চরিত্র তোমার ক্ষুদ্র বিদ্যাবুদ্ধি দিয়ে যতদূর সাধ্য আলোচনা  কর, অধ্যয়ন কর। আমি তো তাঁর লক্ষাংশের একাংশও এখনও বুঝতে পারিনি। ও যত বুঝবার চেষ্টা করবে, ততই সুখ পাবে, ততই মজবে।’’

কথামৃতে আছে — শ্রীমতি রাধিকা যত কুঞ্জবনের দিকে এগোচ্ছেন তত কৃষ্ণ-গন্ধ নাকে আসছে।

 — এর আধ্যাত্মিক তাৎপর্য হল : আমরা যত পবিত্র হব, যত তাঁর দিকে এগোতে থাকব, ততই তাঁর স্বরূপ আমাদের কাছে স্পষ্ট থেকে স্পষ্টতর হবে। 

জপের পথে আমরা ভাবময় ইষ্টের কাছাকাছি পৌঁছে যাই।

<><><><><><><><><><><><><><><><><><><><>

(*)(*)(*)(*)(*)(*)(*)(*)(*)(*)(*)(*)(*)(*)(*)(*)(*)


&&&&&&&&&&&প্রনাম &&&&&&&&&&&&


সাধারণত আমরা মন্দিরে প্রবেশ করেই শ্রীরামকৃষ্ণের পট বা বিগ্রহের সম্মুখে ভূমিষ্ঠ বা সাষ্টাঙ্গ হয়ে অল্প সময়ের মধ্যেই প্রনাম পর্ব শেষ করে ফেলি। কিন্তু প্রনামের এক আদর্শ পদ্ধতি আছে । এ প্রসঙ্গে স্বামী ব্রহ্মানন্দজীর সেবক ও সচিব এবং রামকৃষ্ণ মঠ ও মিশনের সপ্তম প্রেসিডেন্ট স্বামী শঙ্করানন্দ একবার বলেছিলেনঃ মন্দিরে ঠাকুরকে কি ভাবে প্রনাম করতে হয় জানো? কখনও মন্দিরে গিয়ে ঢিপ করে প্রনাম করবে না। আগে স্থির হয়ে দাঁড়িয়ে ঠাকুরকে কিছুক্ষণ দেখবে। ভাববে, ঠাকুর জীবন্ত, তোমায় দেখছেন। এইভাবে মন স্থির হলে তখন প্রনাম করবে এবং ভাববে ঠাকুরকে পা জড়িয়ে ধরে প্রনাম করছো।

                                                   

Wednesday, 24 April 2024

চেন্না গ্রামের নিরালম্ব আশ্রম


স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাসে  " নিরালম্ব আশ্রম  "


ইনিই হলেন বিপ্লবী যতীন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায় , যাকে ভুলতে বসেছে আজকের নতুন প্রজন্ম।  নতুন প্রজন্মের অনেকেই ইনার নামও জানে না। ভারতীয় স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাসে বিশেষভাবে উল্লিখিত যে দুজন মহান ভারতীয় জাতীয়তাবাদ ও স্বাধীনতা সংগ্রামীর নাম উল্লেখ আছে , তাঁদের একজন ইনি আর্থাৎ শ্রী যতীন্দ্র নাথ ব্যানার্জ্জী এবং অপর একজন শ্রী অরবিন্দ ঘোষ।  কিন্ত কে এই  বিপ্লবগুরু যতীন্দ্রনাথ বন্দোপাধ্যায়ের যিনি কিনা  " অগ্নিযুগের ব্রহ্মা " বলে পরিচিত ছিলেন।  স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাসে একাধিক যতীন্দ্রনাথের নামের সাথে আমরা পরিচিত।  একজন যতীন্দ্রনাথ মুখোপাধ্যায় , যিনি অবশ্য বাঘা যতীন নামে বিখ্যাত।  দ্বিতীয়জন যতীন্দ্রনাথ দাস, লাহোর ষড়যন্ত্র মামলায় ভগৎ  সিং এর সহযোদ্ধা।  জ্বলন্ত অবস্থায় ৬৩ দিন অনাশনের শেষে শহিদ হয়েছিলেন।  তৃতীয়জন যতীন্দ্রনাথ বন্দোপাধ্যায় , তারই তৈরী চান্না আশ্রম,  যিনি কিনা পরবর্তীকালে " নিরালম্ব স্বামী" নামে পরিচিত হয়েছিলেন। 

" দেশের মধ্যে, দেশবাসীর মধ্যেই তোমার ভগবান আছেন।  দেশকে ভালবেসে দেশবাসীর সেবা করো...." স্বামী বিবেকানন্দের এই বাণীই ছিল যতীন্দ্রনাথের জীবনের মূলমন্ত্র। 


শ্রী যতীন্দ্রনাথ অনুভব করেছিলেন যে স্বাধীনতা অর্জনের জন্য বিপ্লবী পদ্ধতির অবশ্যই প্রয়োজন  এবং তিনিই এই বিপ্লবী পদ্ধতি গ্রহনের কথা প্রচার করেন। আর বিপ্লবী পদ্ধতি ব্যবহার করার জন্য প্রয়োজন ছিল  এক বিশাল সেনাবাহিনীর  এবং সেজন্য দেশবাসীদের সামরিক প্রশিক্ষণ অপরিহার্য ছিল।  তাই তিনি মার্শাল ট্রেনিং এর সন্ধানে পড়াশোনা অর্ধেক করে ছেড়ে দেন। তিনি তারপর নিজেকে ব্রিটিশ সেনাবাহিনীতে তালিকাভুক্ত করার চেষ্টা করেন কিন্ত সফল হতে পারেননি। সেখানে ব্যার্থ হয়ে তিনি চাকরির সন্ধানে চারিদিকে ঘুরে বেড়াতে শুরু করেন। ঘুরতে ঘুরতে বরোদায় উপস্থিত হয়ে শ্রীঅরবিন্দের সাথে দেখা করেন। শ্রীঅরবিন্দ তাঁর দৃঢ় স্বাস্থ্য দেখে অত্যন্ত মুগ্ধ হন এবং বরোদা সেনাবাহিনীতে চাকরি খুজতে সাহায্য করেন। ১৮৯৭ সালে যতীন্দ্রনাথ বরোদার রাজার দেহরক্ষী হিসেবে বরোদার সেনাবাহিনীতে যোগ দেন। পরে তিনি শ্রীঅরবিন্দের এক সুযোগ্য সহযোগী হয়ে উঠেন। পরবর্তী কালে         শ্রীঅরবিন্দের পরামর্শে তিনি কলকাতায় ফিরে এসে অনুশীলন সমিতিতে যোগ দেন ।




১৮৭৭ সনে ১৯ শে নভেম্বর (৫ই অগ্ৰহায়ণ, ১২৮৪ বঙ্গাব্দ) ব্রিটিশ ভারতে বর্ধমান জেলার চান্না গ্ৰামে (গলসি থানার অন্তর্গত, বর্তমান পূর্ব বর্ধমান জেলার একটি ছোট্ট গ্ৰাম) এক মধ্যবিত্ত পরিবারে জন্মগ্ৰহণ করেন বিপ্লবী যতীন্দ্রনাথ বন্দোপাধ্যায়। পরবর্তীকালে তিনি স্বামী নিরালম্ব রূপে খ্যাতি লাভ করেন। পিতা কালিদাস বন্দোপাধ্যায় এবং মাতা হলেন অসম্ভাবিনী দেবী। গ্ৰামের পাঠশালাতেই তিনি প্রাথমিক শিক্ষা লাভ করেন। উচ্চশিক্ষার উদ্দেশ্যে বর্ধমান রাজ স্কুল থেকে এন্ট্রান্স পাশ করেন এবং পরবর্তীতে বর্ধমান রাজ কলেজ থেকে এফ. এ. (First Arts) পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। এন্ট্রান্স পরীক্ষায় পাশ করার পরেই বঙ্কিমচন্দ্রের ‘আনন্দমঠ’ পড়ে দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হয়ে তিনি দেশ-মাতৃকার মুক্তি সংগ্ৰামের উদ্দেশ্যে নিজেকে উৎসর্গ করার সঙ্কল্প নেন। 






এই সময় বিপ্লবীদের সামরিক শিক্ষার সাথে সাথে চলতে থাকে হিন্দু ধর্মশাস্ত্র পাঠ এবং আধ্যাত্মিক চেতনা জাগ্রত করার কাজ। ১৯০৪ খ্রিস্টাব্দে অর্থ সংগ্ৰহের জন্য কয়েকজন স্বদেশীর তারকেশ্বরে ডাকাতি করার কথা শুনে যতীন্দ্রনাথ ক্ষুব্ধ হন। এই সময়ে তাঁর আদর্শ, নীতি, শৃঙ্খলা নিয়ে সমিতির প্রমুখ নেতৃবৃন্দের সাথে মতবিরোধ গড়ে উঠেছিল।   যতীন্দ্রনাথ অনুভব করলেন যে আধ্যাত্মিক জ্ঞান অর্জনের জন্য তার একজন গুরুর সাহায্য প্রয়োজন এবং তাই তিনি একজনের সন্ধান করতে লাগলেন।  সোহম স্বামী যতীন্দ্র নাথ বন্দ্যোপাধ্যায়ের আধ্যাত্মিক সাফল্যে খুব খুশি হয়েছিলেন এবং তাই তাকে শ্রীমৎ নিরালাম্বা স্বামী নামে পুনঃনামকরণ করলেন । কিন্তু তিনি পরবর্তীকালে নিরালাম্বা স্বামী নামেই জনপ্রিয় হয়ে ওঠেন । 




সিপাহী বিদ্রোহ,  আদিবাসীদের বিদ্রোহের স্বপ্ন দেখাতেন যতীন্দ্রনাথ।  তাই বনেজঙ্গেলে ঘেরা এই আশ্রম সংলগ্ন জমিতে আদিবাসীদের এনে বসতি স্থাপন করান। উদ্দেশ্য ছিল,  ব্রিটিশ ভারতের এই অঞ্চলটুকু মুক্তাঞ্চলরূপে গড়ে তোলা। ব্রিটিশ সরকারের অত্যাচারে রোষানলে দগ্ধ হয় সাঁওতালরা। বিদ্রোহের আগুন ধিকি ধিকি জ্বলেছিল তাদের মনে। তাই সাঁওতালদের এনে যতীন্দ্রনাথ সাজিয়েছিলেন নিজ দুর্ভেদ্য দুর্গ। অস্ত্র লুকিয়ে রাখা, ফেরার বিপ্লবীদের আশ্রয়দান, বিভিন্ন বিপ্লবী অভ্যুত্থান পরিকল্পনা করতে দু দশকের বেশি সময় ধরে ব্যস্ত ছিল এই চেন্না আশ্রম।  এছাড়া এই সময় রাজনৈতিক ডাকাতি, ব্রিটিশ গুপ্তেচর হত্যা....... এমন নানা ঘটনার ঘনঘটায় আলোরিত এক নবযুগের সূচনা হয়েছিল এই বাংলায়। এ অগ্নিনির্ঝর সময়ের রণশিঙা যিনি বাজিয়েছিলেন, ধর্মপ্রচারের আছিলায় দেশীয় রাজাদের বিদেশী শাসনের বিরুদ্ধে বিদ্রোহের আগুন যিনি প্রজ্বলিত রেখেছিলেন,  সেই সন্ন্যাসীর বিপ্লব প্রচেষ্টা সম্পর্কে দেশবাসী কি কখনও জানবে?? তিনি কি কেবলই এক হিন্দু সন্ন্যাসী হয়ে থেকে যাবেন ইতিহাসে ??



গলসির চান্না গ্রামে আশ্রম তৈরি করে বিপ্লবী কর্মকাণ্ড চালাতে থাকেন যতীন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায় । সংযম, ধৈর্য্য, সাহস, সহিষ্ণুতা, ক্ষমতা, ক্ষমা, ভক্তি বা নিষ্ঠা, সহমর্মিতা এই নীতিগুলিকে ভিত্তি করেই গড়ে উঠেছিল এই আশ্রম । মূলত সেই সময় রেলপথে ভালো যোগাযোগের জন্যই খানা জংশনের অদূরে আশ্রম করার কথা চিন্তাভাবনা করেন তিনি । এছাড়া পাশেই খড়ি নদী থাকায় সহজে নদী টপকে বিপ্লবীরা আত্মগোপন করতে পারতেন । আর হাঁটা পথে সেই আশ্রমে যাওয়ার সেভাবে সুযোগ না থাকায় সহজে ব্রিটিশ পুলিশ আশ্রমে পৌঁছতে পারত না । সেই সুযোগে বিপ্লবীরা সেখানে বৈঠক করতে পারতেন।




নিরিবিলি একটা আশ্রম । কোথাও কেউ নেই । আশ্রমের মধ্যে থাকা দুটো মাটির বাড়িরও অবস্থা খারাপ । বাড়ির দরজা ভাঙা । আশ্রমের পাশ দিয়ে বয়ে গিয়েছে খড়ি নদী । ঠিক যেন ভুতুড়ে পরিবেশ । অথচ এই আশ্রমই একদিন হয়ে উঠেছিল বিপ্লবীদের গোপন ডেরা ।    লোকমুখে জানা যায়, এই চান্না আশ্রমে এসেছিলেন ভগত সিং, ভগত সিংয়ের বাবা কিষেণ সিং, বটুকেশ্বর দত্ত, লালা লাজপত রায়, নেতাজী সুভাষচন্দ্র বসু, বারীন্দ্রনাথ ঘোষ, অরবিন্দ ঘোষ, দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন, ভূপেন্দ্রনাথ দত্ত, বিপিনবিহারী গাঙ্গুলি, রাসবিহারী বসু, জীবনতারা হালদার, যদুগোপাল মুখোপাধ্যয়, সোহং স্বামী, তিব্বতি বাবা, প্রজ্ঞান পাদজী (যোগেশ্বর চট্টোপাধ্যায়), ফকির রায়ের মতো বহু স্বাধীনতা সংগ্রামী। দিনের পর দিন রাতের পর রাত জেগে তাঁরা দেশকে স্বাধীন করার পরিকল্পনা করেছেন চান্না আশ্রমে বসে। আজ সেই আশ্রম ধ্বংসের মুখে।  





কলকাতার কাছে মুরারিপুকুরে ছিল অরবিন্দের বাবা ডা: কৃষ্ণধন ঘোষের বাগানবাড়ি। ১৯০২ সালে সেখানে বসেই এক গুপ্ত সমিতি গড়ে তোলার সিদ্ধান্ত হয়। বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের " আনন্দমঠ " কে  বাস্তবে প্রতিষ্ঠার চেষ্টায় মনোনিবেশ করেন অরবিন্দের সহযোদ্ধা যতীন্দ্রনাথ।  কিন্ত অরবিন্দের ভাই বারীনের সাথে তাঁর মতান্তর হয়। তাই সঙ্গ ত্যাগ করে বর্ধমানে চলে আসে। তারপর গলসিতে অরন্যে ঘেরা এলাকায় তাঁর শক্তিকেন্দ্র স্থাপন করেন।  যতীন্দ্রনাথ জীবিত থাকাকালীনই এই গুপ্ত সমিতি সম্পর্কে ত্রাস সৃষ্টি হয়েছিল  স্থানীয় স্তরে। সেই অগ্নিনির্ঝর দিন আর নেই।  তবে চান্নার সেই আশ্রম আজও আছে এক বিরাট দন্যদশায়। 


ইতিহাস ঘাটলে দেখা যায় যে ১৯০৭ থেকে ১৯০৮ খ্রীষ্টাব্দ নাগাদ বিপ্লবী যতীন্দ্রনাথ ওরফে স্বামী নিরালম্ব এই আশ্রম তৈরি করেছিলেন।  ১৯০২ সালে সহকর্মী বিপ্লবীদের সাথে মতান্তর হলে যতীন্দ্রনাথ উত্তরভারতের এলাহাবাদের সোহেল স্বামীর সান্নিধ্য লাভের পর শ্যামাকান্ত বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে দীক্ষা নিয়ে নিজের মায়ের সাথে দেখা করতে চান্না গ্ৰামে ফিরে আসেন ও আশ্রম প্রতিষ্ঠা করেন। তবে চান্না আশ্রমকে আমরা আশ্রম হিসেবে জানলেও আদতে ওটা ছিল বিপ্লবীদের আখড়া। সারারাত চলত বিপ্লবীদের প্রশিক্ষণ ও বিপ্লবীদের আলোচনা। ওখান থেকেই বিপ্লবের সুত্রপাত।   বহু বিপ্লবী এসে আঁখড়ায় ওঁর শিষ্যত্ব গ্রহন করেছিলেন। 




রীতিমত একসময় প্রবাদ হয়ে উঠেছিল একটি বাক্য  ----- " যে যাবে চান্না, ঘরে উঠবে কান্না "। ফলে ব্রিটিশ পুলিশের চরিত্রের জন্য নূন্যতম সাহস কেউ করত না। কিন্ত কিভাবে গড়ে উঠল যতীন্দ্রনাথের এমন ব্রিটিশ বিরোধী মনস্তত্ত্ব। এর উত্তরটা এইরকম  ....... " যতীন্দ্রনাথের দূরন্তপনার নানা ঘটনা গ্রামবাসীদের মধ্যে এখনও জনশ্রুতির মত চালু রয়েছে। একবার তাঁর বাবা কালিদাস বন্দোপাধ্যায় স্থির করলেন ,  যতীনের মন শান্ত করতে মহানগর শ্মশানে আসা এক কালীসাধকের কাছে তিনি নিয়ে যান। সব শুনে সাধুবাবা একটি রক্তাক্ত দিলেন। যতীন তখন পাথরের মত শান্ত।  সাধুকে বললেন,  " শুনেছি আপনি এত মহান, বুলেটও আপনাকে স্পর্শ করে না। সত্যি কি? " রাশভারি সাধুর জবাব  "হ্যা" । তখনই যতীন্দ্রনাথ লুকানো একটা পিস্তল বার করে বলে উঠলেন " বেশ, তবে একটু পরখ করে দেখবো।" আঁতকে উঠে দোড় লাগিলেন সাধু। আশপাশে সবাই চমকে উঠলেন। কালিদাস বাবু টেরই পাননি বাড়ি থেকে কখন তার লাইসেন্স অস্ত্রের নিজের জিম্বায় নিয়েছিলেন দুরন্ত যতীন।এই রকম আরও অনেক সাহসিকতার ঘটনার জন্য যতীন্দ্রনাথকে আজও ঘরের ছেলে বলে মনে রেখেছে চান্না গ্ৰাম। 



ভারতবর্ষের বিশেষ করে বাংলার যে সব স্বাধীনতা সংগ্ৰামীর জীবনের অধিকাংশ অধ্যায় নানা কারণে অনাদরে অবহেলায় ক্ষিতির অতল তলে তলিয়ে গেছে তাদেরই  একজন  হলেন বিপ্লবী যতীন্দ্রনাথ বন্দোপাধ্যায়। এই মহামানবকে অনেকেই    “অগ্নিযুগের ব্রহ্মা” নামে আখ্যায়িত করেন। ভূপেন্দ্রনাথ দত্ত (স্বামী বিবেকানন্দের ভাই) বর্ধমানে এক ছাত্র সম্মেলনে ভাষন দিতে গিয়ে বলেছিলেন, “তোমরা নেতা খুঁজে বেড়াচ্ছো কোথায়? বিপ্লবের বড়দা বসে আছেন চান্নায়। যাও তাঁর কাছে।“


গ্ৰামের মানুষের কাছে সরকারের কিছু সুযোগ সুবিধা পৌঁছালেও এই আশ্রমটিকে নিয়ে বিশেষ কেউই চিন্তিত নন।  স্বাধীনতার পর থেকে কোনো  সরকার কেউই এই বিষয়ে বিশেষ উদ্যোগ নেয় নি, বরং প্রতিবছরই যতীন্দ্রনাথ বন্দোপাধ্যায়ের জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে যে ছোট অনুষ্ঠান আয়োজিত হয়, সেখানে স্থানীয় এবং রাজ্যস্তরের নেতৃবৃন্দ এসে প্রতিশ্রুতি দিয়ে চলে যান। তাই ভারতের স্বাধীনতা সংগ্ৰামের স্মৃতিচিহ্ন স্বরূপ “আশ্রম চান্না” আজ বিপন্ন এবং ধ্বংসের মুখে। তবে স্থানীয় বাসিন্দারা বলে থাকেন "এই গ্রামের মাটিতে নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু থেকে অনেক স্বাধীনতা সংগ্রামীর পদধূলি পড়েছে।এটাই আমাদের গর্ব"। তাদের অভিযোগও আবার রকম......প্রতিবছরই স্বাধীনতা দিবস  পালন করা হয়। ।কিন্তু যাদের জন্য স্বাধীনতা এই ইতিহাসকে ছোঁয়া সেই 'ভিটেই'ই রক্ষার কোনো উদ্যোগই নেওয়া হয়না।




দেশবাসীর প্রতি তাঁর আহ্বান ছিল  :::
সকলে জেগে উঠুক এবং আত্ম-চেতনা উপলব্ধি করুন।নিজেকে চিনতে হবে। নিজেকে চিনতে না পারলে দেশকে চিনবে কি করে ??  দেশের দুর্ভোগ থেকে মুক্তি পেতে হলে শক্তিশালী হতে হবে।  আর নিজেকে শক্তিশালী করতে হলে আত্ম-ঞ্জান অর্জন করতে হবে। আত্মশক্তিই মানুষকে কঠিন মরুভূমি বা পাহাড়ের অতিক্রম করতে বাধ্য করে। আত্মশক্তির অধিকারী একটি জাতির পক্ষে কিছুই অসম্ভব নয়।







কেবলমাত্র বিপ্লবী বললে তার পরিচয় দেওয়া হয় না। বিংশ শতকের শুরুতেই বাংলার বুকে যে বিপ্লবের আগুন জ্বলেছিল,  তা নিজের কর্মে ধর্মে ধারন করেছিলেন যতীন্দ্রনাথ। অরবিন্দ ঘোষকে তিনিই নিয়ে এসেছিলেন ব্রিটিশ বিরোধী রাজনীতির মঞ্চে। বিপ্লবীদের আশ্রয়, অস্ত্র দিয়ে যথাসাধ্য সাহায্য করেছেন।  অথচ অগ্নিযুগের স্থপতি হিসাবে নিজে চিরকাল রয়ে গেছেন অন্তরালে।

কলকাতার বরানগরের গৌরিশঙ্কর লেনে রয়েছে যতীন্দ্রনাথের এক ফলক। শোনা যায়, ১৪২৮ সালের কংগ্রেস অধিবেশনে এসেছিলেন স্বয়ং ভগত সিং। সেখানেই তাঁর সাথে পরিচয় হয়েছিল যতীন্দ্রনাথের। শোনা যায় বিপ্লবগুরু এখানেই শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেছিলেন। 

বর্ধমান থেকে খানা জংশন কিংবা  কুলগোড়িয়া বাজার থেকে প্রায় পাঁচ কিমি সোজা রাস্তা এগোলেই পাবেন চান্না গ্ৰাম আর খড়ি নদী। নদীর পারেই রয়েছে চেন্না আশ্রম।  চলুন দেশের এই সব স্বাধীনতা সংগ্ৰামীদের শ্রদ্ধা জানাতে আমরা ঘুরে আসি চেন্না গ্রামের প্রায় ২৫ বিঘে জমির উপর জঙ্গলে ঘেরা স্বাধীনতার আঁতুর ঘর হিসেবে পরিচিত এক গৌরবময় ইতিহাসের সাক্ষী " নিরালম্ব  আশ্রম  "।