Thursday, 7 May 2020

বিবেকানন্দের অজানা তথ্য

বিবেকানন্দের অজানা তথ্য:১৭

❣লেখনী: ❣মাতা ঠাকুরাণীর ছেলে



এমা  কালভের নাম শুনেছেন?

------------------------------------------------- বিখ্যাত অপেরা গায়িকা এমা কালভে। যার রূপে গুনে শত শত পুরুষ ছিল পাগল। যার শো দেখার জন্য দর্শক আসন উপচে পড়ত। যার নাম একসময় আমেরিকার খবরের কাগজের পাতার হেড লাইন হত। সেই এমা কালভে।
সেই স্বনামধন্য সুন্দরী এমা কালভের জন্ম হয় 1864 খ্রিস্টাব্দে ফ্রান্সের এই গ্রামে। শৈশব থেকেই এমা জিরো চেতনায় ভরপুর এবং জীবন সংগ্রামে নিপুন সৈনিক ছিলেন । একটু বড় হলে নানা সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান শুনে নিজেকে গায়িকা ও নর্তকী হিসেবে গড়ে তোলার স্বপ্ন দেখেছেন ।পরে ওই সকল বিষয় একাগ্রচিত্তে তালিম নিয়েছেন । হয়ে উঠেছেন বিশ্বের সেরা সুরঞ্জিতের ঊর্বশী।
যেহেতু তিনি সুন্দরী ও শ্রেষ্ঠ অপেরা গায়িকা ছিলেন , কাজেই তাঁর গুন মুগ্ধের অভাব ঘটে নি । বহু ব্যক্তিত্ব তার হৃদয়ের দরজা আঘাত করেছেন এবং ক্ষত গড়ে তুলেছেন।
এভাবে জীবন যখন সাফল্য, যন্ত্রণা, বেদনায় পসার বয়ে নিয়ে চলেছে গর্বিতা কালভে। এমন দিনে হঠাৎ তার সঙ্গে সাক্ষাৎ হলো স্বামী বিবেকানন্দের ।
সময়টা 1898 সাল । কালভে এসেছেন শিকাগো শহরে। এক নৃত্য-গীতের আসর এ। মানসিক আঘাতের তখন তার মন প্রাণ আড়ষ্ট অথচ গানের আসরে হাজির হতেই হবে ।মনের উদ্যম আনার জন্য শিকাগোয় সঙ্গে নিয়ে এসেছেন তার একমাত্র কন্যাকে। সে তখন শিশু । তিনি তাকে রেখেছিলেন এক বন্ধুর নিকট।
অবসাদগ্রস্ত শরীর নিয়ে এমা সেখানে পরপর কয়েকটি অনুষ্ঠান করেছেন। শেষ দিন শেষ অঙ্কের নৃত্যগীত সেরে যখন তিনি গ্রীন রুমে ঢুকলেন তখন তার কাছে খবর এলো, তার একমাত্র কন্যা আগুনে পুড়ে মারা গেছে। অর্থাৎ তিনি যখন মঞ্চে নৃত্য পরিবেশন করছিলেন তখন তার একমাত্র কন্যা অগ্নিদগ্ধ হচ্ছিল । হায় জীবন !
রূপে গুনে শ্রেষ্ঠ অপেরা সুন্দরী এমার দম্ভ যেন অলংকার। স্টেজে উঠলেই লক্ষ করতালিতে অভিনন্দন জানান হাজারো দর্শক। তা শুনে ভাল লাগে তার । তার গুনপনায় অমিত প্রশংসায় পত্রপত্রিকা মুখর ।
এহেন গায়িকার বুকে জমে থাকে পাহাড়প্রমাণ বিষাদ। আত্মহত্যা করতে গিয়েছেন কিন্তু পারেননি। হয়ত মা কালী তা চান নি।
অবসাদ গ্রস্থ কালভে হোটেলে ফিরলেন ।হঠাৎ তার বন্ধু মিসেস এডমাস তাঁর সঙ্গে দেখা করতে এসেছেন।এডামস বললেন “এক ভারতীয় সন্ন্যাসী এসেছে শিকাগো তে।যেন জ্যোতিরময় ঈশ্বর তিনি। তুমি যদি তাঁর সঙ্গে সাক্ষাৎ কর তাহলে তুমি নিশ্চিন্ত শান্তি লাভ করতে সমর্থ হবে । “
কালভের চোখের চাহনি হল বিদ্রূপ। এডামস পুনরায় তাকে অনুরোধ করলেন ।কারণ তিনিও চান যে এই বিশ্ব বিখ্যাত গায়িকা এই যন্ত্রণাময় অবসাদগ্রস্থ জীবন থেকে মুক্ত হন। অবশেষে কালভে রাজি হলেন।
অবশেষে একদিন, সেটি তাঁর এমত প্রয়াসের চতুর্থ বা পঞ্চম দিন, তিনি নিজেকে আবিষ্কার করলেন তাঁর সেই বন্ধুর বাড়ির দরজায় – যেখানে স্বামীজী ছিলেন। সেই গৃহের বাট্‌লার বা খানসামা দরজা খুলে দিলেন এবং এমা বসার ঘরের একটি আরামদায়ক চেয়ারে গিয়ে বসলেন।
এইভাবে ঘোরলাগা অবস্থায় সেখানে বেশ কিছুক্ষণ বসে থাকার পর তাঁর কানে এল কে যেন পাশের ঘর থেকে অতি মৃদু স্বরে তাঁকে ডাকছেন, ‘এস বাছা! ভয় পেয়ো না!’ প্রায় মন্ত্রমুগ্ধের মত তিনি উঠে দাঁড়ালেন এবং ধীরে ধীরে সেই ঘরটিতে গিয়ে পৌঁছলেন যেখানে একটি টেবিলের অপরদিকে স্বামীজী বসে রয়েছেন।
যেহেতু বাড়িটিতে ঢোকার সময়েই এমাকে সতর্ক করে দেওয়া হয়েছিল যে বিবেকানন্দ কথা না বললে কোন কথা না বলতে, তাই তিনি সেই ঘরে গিয়ে স্বামীজীর সামনে চুপ করে দাঁড়িয়ে রইলেন। স্বামীজী ধ্যানরত স্তব্ধতায় অপরূপ ভঙ্গিতে বসেছিলেন, তাঁর গেরুয়া আলখাল্লার নিম্নাংশ লুটিয়ে ছিল মেঝেতে, উষ্ণীষবদ্ধ মাথাটি সামনে ঝুঁকে– দৃষ্টি ভূমিনিবদ্ধ। সামান্যক্ষণ পরেই চোখ না তুলেই তিনি বলে উঠলেন , “কন্যা মোর! তোমার চতুর্দিকে কি না যন্ত্রণা ও সংকটের আবর্ত। শান্ত হও ।তোমার প্রয়োজন শান্তি।”
অপার বিস্ময় তিনি ভাবলেন ,” যে ব্যক্তি আমার নাম পর্যন্ত জানেন না । তিনি আমার মনের গভীরতম বেদনাকে জানলেন কেমন করে ??? “
অভিভূত হয়ে কালভে স্বামীজিকে প্রশ্ন করলেন, “এসব কথা আপনি জানলেন কি করে ?এসব কে বলেছে আপনাকে ? “
স্বামীকে কমোল ভাবে বললেন , “কেউ এসব কথা আমাকে বলেনি ।বলার দরকার আছে কি??? আমি তো তোমার ভিতরটা বইয়ের খোলা পাতার মতো পড়তে পারছি।”
শেষে বললেন,” কা তব কান্তা কস্তে পুত্রঃ সংসারোহয়মতীববিচিত্রঃ।
কস্য ত্বং বা কুতঃ আয়াতঃ তত্ত্বং চিন্তয় তদিদং ভাতঃ।।
কে তোমার স্ত্রী? কেই বা তোমার সন্তান? এই সংসার হল অতীব বিচিত্র। তুমি কার? তুমি কোথা থেকে এসেছ? তত্ত্ব সহকারে এই বিষয়ে চিন্তা করে দেখ।
যা ঘটে গেছে তাকে ভুলতে হবে । আবার উৎফুল্ল স্বাস্থ্য রক্ষা কর । নিজের দুঃখ নিয়ে একান্তে নাড়াচাড়া করো না । গহন বেদনাকে বাহ্য অভিব্যক্তিতে খুলে দাও। তা তোমার আধ্যাত্মিক জীবনের জন্য প্রয়োজন , তা তোমার শিল্পের জন্য প্রোয়জন।”
এই স্বল্প আলাপচারিতায় কালভে পরিপূর্ণ হয়ে উঠলেন ।
এমার স্বীকারোক্তি অনুযায়ী তিনি সেদিন যখন বিবেকানন্দ সান্নিধ্যমুগ্ধ অভিজ্ঞতা নিয়ে সেই বাড়িটি থেকে বেরিয়ে এসেছিলেন, তখন তিনি স্বামীজীর বাণী ও ব্যক্তিত্ব দ্বারা গভীরভাবে আচ্ছন্ন। তাঁর মাথা থেকে অসুস্থ ও জটিল চিন্তাদি অপসৃত হয়ে স্বামীজীর তীব্র ইচ্ছাশক্তির প্রভাবে শান্ত-স্বচ্ছ ভাবে পরিপূর্ণ।
এমা একথাও বলেছেন যে স্বামীজী কোন সম্মোহন শক্তি কাজে লাগান নি, তিনি শুধু তাঁর চারিত্রিক শক্তি, পবিত্রতা এবং লক্ষ্যের প্রতি তীব্র মনঃসংযোগ দিয়ে তাঁর মধ্যে এই পরিবর্তন ঘটাতে সক্ষম হয়েছিলেন। মানসিক শক্তি আর স্থৈর্য ফিরিয়ে আনার উদ্দেশ্যে বিবেকানন্দ যে কথা এমাকে বলেছিলেন, সেটি এই অনন্যা নারীর আত্মজীবনীর পাতায় পরে স্থান করে নিয়েছিল।
পরবর্তী কালে এই দিনের অভিজ্ঞতাকে তিনি লিপিবদ্ধ করেছেন এইভাবে:
” বিবেকানন্দএর বাক্য ব্যক্তিত্বে গভীর ভাবে প্রভাবিত হয়ে আমি চলে এলাম। যেন আমার মস্তিষ্ক থেকে সকল রুগ্ণ জটিলতাকে তুলে নিয়ে সেখানে ভরে দিলেন শান্ত শুদ্ধ ভাবনা।”
1900 সালে দ্বিতীয়বার প্রাশ্চাত্য সফরে বের হয়ে কালভের প্যারিসে স্বামীজির সঙ্গে সাক্ষাৎ ঘটে। ম্যাকলাউড, কালভে, ফাদার হিয়াসান্ত প্রমুখ ব্যক্তির সঙ্গে তিনি মিশর ভ্রমণে বের হয়েছিলেন।
স্বামীজির সঙ্গে এই ভ্রমণকে কালভে বলেছেন “,আমার জীবনে এক অবিস্মরণীয় ঘটনা রূপে চিহ্নিত হয়ে আছে ।। সেটি আমার জীবনের সর্বোত্তম কাল। স্বামীজির নিকট থাকার অর্থ অবিরাম প্রেরণার মধ্যে থাকা । ওই কালে আমারা গভীর তীব্র আধ্যাত্মিক আবহাওয়ার মধ্যে বাস করেছি। যে কোন ব্যাপারেই তার মুখে এনে দিত গল্পকথা , নীতি কাহিনী , নানা উদ্ধৃতি হিন্দু পুরাণ থেকে শুরু করে গভীর দার্শনিক শাস্ত্র পর্যন্ত। “
পরে আবার লিখেছেন, ” সেকি তীর্থযাত্রা বিজ্ঞান, দর্শন, ইতিহাসের কোন রহস্যই স্বামীজির কাছে অনালোকিত নয় । “
মিশরের কায়রো ভ্রমণকালে স্বামীজি এক বিচিত্র অভিজ্ঞতার সম্মুখীন হয়েছিলেন সে কথা জানিয়েছেন তাঁর স্মৃতিকথায়:
” একদিন কায়রোয় আমরা পথ হারিয়ে ফেলেছি মনে হয় খুবই মগ্ন হয়ে আমারা কথাবার্তা বলছিলাম। যেভাবেই তা ঘটুক আমরা সচেতন হয়ে দেখলাম একটি নোংরা কটুগন্ধময় পথে হাজির হয়েছি যেখানে অর্ধ নগ্ন নারীদের কেউ জানলা থেকে উঁকি দিচ্ছে, কেউবা দরজার গোড়ায় পা হাত ছড়িয়ে এলিয়ে বসে আছে।………. স্বামীজি পরিবেশ বিশেষ লক্ষ্য করেননি ,যতক্ষণ না একটি জীর্ণ বাড়ির ছায়ায় বসে থাকা একদল অত্যন্ত প্রগলভা নারী খিলখিল করে হেসে তাকে ডাকাডাকি করছিল ।।
আমাদের দলের জনৈক মহিলা তাড়াতাড়ি ওখান থেকে আমাদের সরিয়ে নিয়ে যেতে ব্যস্ত হলেন।কিন্তু স্বামীজি মৃদুভাবে নিজেকে দল থেকে বিচ্ছিন্ন করে বেঞ্চে বসে থাকা মেয়েগুলির দিকে এগিয়ে গেলেন।
‘হায় হতভাগিনী রা !হায় হতভাগ্য সন্তানেরা !এরা নিজেদের ঈশ্বরত্ব কে টেনে নামিয়েছে দেহের রূপে! দেখো একবার ওদের!’ এরপর তিনি কাঁদতে লাগলেন― যে কান্না প্রভু কাঁদতে পারেন ব্যভিচারিণী নারীদের সামনে।
মেয়েগুলি স্তব্ধ হয়ে গেল। অত্যন্ত অপ্রতিভ হয়ে উঠল ।তাদের একজন নতজানু হয়ে তার বসনপ্রান্ত চুম্বন করে ভাঙ্গা ভাঙ্গা স্প্যানিশে অস্ফুট বলতে লাগলো ,’ঈশ্বর পুত্র !ঈশ্বর পুত্র !’ অন্য একজন সহসা লজ্জায় আতঙ্কে অভিভুত হয়ে হাত দিয়ে মুখ ঢেকে ফেলল ।সে যেন ঐ পবিত্র আত্মা থেকে নিজের সংকুচিত আত্মাকে ঢেকে রাখতে চাইছিল।”
1902 সালে তাঁর পিতার মৃত্যুর সংবাদ জানিয়ে স্বামীজিকে পত্র দিয়েছিলেন উত্তরে স্বামীজী তাকে সান্ত্বনা দিয়েছিলেন। 15 মে 1902 স্বামীজী এমা কালভেকে তাঁর পিতৃবিয়োগের জন্য সান্ত্বনা জানিয়ে এই চিঠি লিখেছিলেন।
প্রসঙ্গত, পিতার মৃত্যুসংবাদও এমার কাছে পৌঁছেছিল যখন তিনি মঞ্চে কারমেন-এর ভূমিকায় অভিনয়রত। স্বামীজী লিখছেন, ‘অত্যন্ত দুঃখের সঙ্গে আমি তোমার উপর নেমে আসা স্বজন হারানো ব্যথার কথা জেনেছি। এ আঘাত আমাদের সবার জীবনে আসবেই আসবে। প্রকৃতির এই নিয়ম, অথচ একে মেনে নেওয়া অতীব কঠিন।আমাদের মধ্যেকার এই সব সম্পর্কের এমনই শক্তি যে তার ফলে এই মায়াময় জগতকে সত্য বলে মনে হয়; এবং সান্নিধ্য যত দীর্ঘ হবে, ততই তা মায়াকে অধিকতর সত্য বলে প্রতিভাত করবে। কিন্তু দিন আসবেই, যখন এই মায়া আবার মায়াতেই বিলীন হয়ে যাবে, এবং তাকে মেনে নেওয়া বড় দুঃখের। অথচ সেইটি, যা সত্য বা মায়ার অতীত –অর্থাৎ আমাদের আত্মা, তা সর্বদাই আমাদের ঘিরে রয়েছে – সেটি সর্বত্র বিদ্যমান। তিনিই ধন্য যিনি এই অপস্রিয়মাণ ছায়াময় জগতের মধ্যে সত্যরূপটিকে চিনে নিতে পারেন। … বিবেকানন্দের সদাই এই প্রার্থনা যে, প্রভু তাঁর শ্রেষ্ঠ আশীর্বাদ তোমার উপর বর্ষণ করুন।’
স্বামীজীর মহাপ্রয়াণের 8 বছর পর 1910 সালে কালভে এসেছিলেন কলকাতায়। এসেছিলেন বেলুড় মঠে। সঙ্গী ছিলেন পূর্ণচন্দ্র ঘোষ ও কুমুদবন্ধু সেন । তাকে অভ্যর্থনা জানান স্বামী সারদানন্দ ।বেলুড় মঠে তিনি দর্শন স্বামীজির সমাধি মন্দির (মন্দির তখনো নির্মীয়মান) দর্শন করে। দর্শন করেন শ্রী রামকৃষ্ণ দেবের মন্দির। কালভের অনুরোধে স্বামী সারদানন্দ জি তাঁকে আবৃত্তি করে শোনান:
ওঁ অসতো মা সদ্গময়।
তমসো মা জ্যোতির্গময়।
মৃত্যোর্মামৃতং গময়। ( – বৃহদারণ্যক উপনিষদ্‌ ১।৩।২৮)
পাশ্চাত্যের সংগীত রানীকে ভারতীয় সংগীত শোনাবার জন্য প্রসিদ্ধ বংশীবাদক স্বামীজীর খুড়তুতো ভাই হাবু দত্ত কে সদলবলে মঠে আনিয়েছিলেন সারদানন্দ। সারদানন্দএর অনুরোধে কালভে মঠে কয়েকটি ফরাসি সংগীত ঠাকুরকে শোনালেন । কালভের ইচ্ছা ছিল ভারতীয় সুর ও সঙ্গীতের সঙ্গে পরিচিত হতে।
যাতে পাশ্চাত্যের সুর ও সংগীতে সেই সুর আরোপ করা যায়। সেই উদ্যোগে হাবু দত্ত কালভকে থে শোনালেন এসরাজ ও ক্লেয়ারিঅনেট ।অতিথি উচ্ছ্বসিত প্রশংসা করলেন হাবু দত্তের দলের এরপর তারা মঠ ত্যাগ করে কলকাতার অ হোটেলের অভিমুখে যাত্রা করেন।
এই সুর ও নৃত্যের ঊর্বশী দীর্ঘায়ু ছিলেন। 1942 সালের 6 জানুয়ারি 83 বছর বয়সে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করে প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করে জানিয়েছেন , “আমার সৌভাগ্য, আমার পরমানন্দ ,আমি এমন একজন মানুষকে জেনেছিলাম যিনি সত্যই “ঈশ্বরের সহযাত্রী” তিনি মহান, তিনি ঋষি, দার্শনিক এবং যথার্থ বন্ধু। আমার সামনে তিনি নতুন দিগন্ত উন্মোচন করে দিয়েছেন ।আমার আত্মা অনন্ত কৃতজ্ঞতা তাঁর প্রতি।”

বিপ্লবী নায়ক হেমচন্দ্র ঘোষ



বিবেকানন্দের পা ছুঁয়েছিলেন বলে, সেই হাত দিয়ে  গান্ধীজিকে প্রনাম করেননি বিপ্লবী হেমচন্দ্র!!!
                                                                            জীবনে আর দ্বিতীয় একজন মানুষকেও দেখিনি যাঁকে স্বামীজির পাশে দাঁড় করাতে পারি। গান্ধীজির সঙ্গে যখন আমার প্রথম দেখা হয় তখন দেখলাম সবাই তাঁকে প্রনাম করছেন। কিন্তু আমি করিনি।একজন সেই  বিষয়ে আমার দৃষ্টি আকর্ষণ করলেন।বললেন গান্ধীজিকে প্রনাম করার কথা।আমি বললাম আমার এই দক্ষিণ হস্ত দিয়ে আমি স্বামী বিবেকানন্দের চরণ স্পর্শ করেছি।আমার এই দক্ষিণ হস্ত দিয়ে আর কারও পা আমি স্পর্শ করতে পারবনা।যে মস্তক স্বামী বিবেকানন্দের চরণতলে নত হয়েছে , সে মস্তক আর কোথাও নত হবেনা।জীবনে আর কখনও কাউকে প্রনাম করিনি, আর কারও পায়ে মাথা নোয়াইনি। আমার মাথায় , পিঠে তাঁর অগ্নিস্পর্শ এখনও লেগে রয়েছে।
                              -বিপ্লবী নায়ক হেমচন্দ্র ঘোষ

(Amit Dutta র টাইমলাইন থেকে নেওয়া)





*এই বাস্তব সত্য আমাদের সকলকে জানা উচিত, উচিত প্রায়শ্চিত্ত করার...............*


 **সেই সময় স্বামিজি প্রাপ‍্য 
সন্মান পাননি---বাঙালিদের কাছে।** 

স্বামীজির মহাপ্রয়াণ হয় ৩৯ বছর বয়েসে ১৯০২ সালে । বেলুড় মঠে তখন রাত ৯ টা ১০ মিনিট। তখন বেলুড় মঠে বা তার পার্শ্ববর্তী গ্রামে বিদ‍্যূৎ ছিল না । কিন্তু টেলিফোন ছিল তবুও কোন সংবাদমাধ্যম আসেনি এবং পরের দিন বাঙ্গলাদেশের কোন কাগজেই বিবেকানন্দের মৃত্যূ সংবাদ প্রকাশিত হয়নি,এমন কি  কোন রাষ্ট্রনেতা বা কোন বিখ্যাত বাঙ্গালী কোন শোকজ্ঞাপনও করেননি । 
ভাবতে পারেন ???

স্বামী বিবেকানন্দ তাঁর স্বল্প জীবনে অপমান, অবহেলা বহু পেয়েছেন,উপেক্ষিত হয়েছেন বার বার। পিতার মৃত্যূর পর স্বজ্ঞাতির সঙ্গে কোর্ট কাছারী করতে হয়েছে তাঁকে ।বহু বার হাজিরা দিয়েছেন কাঠগড়ায় l

 নিদারুণ দরিদ্রের সংসারে সকালে উঠে অফিস পাড়া ঘুরে ঘুরে চাকরির খোঁজে বেরুতেন । দিনের পর দিন মা কে বলতেন মা আজ রাতে বন্ধুর বাড়িতে খেতে যাবো। প্রায় দিন দেখতেন সংসারে চাল,ডাল,নুন ,তেল কিছুই নেই কিন্তু ভাই ও বোন নিয়ে 5 টা পেটের খাবার কি ভাবে জুটবে ? মুদির দোকানে ধার করে মাকে এক- দুই দিনের চাল ডাল দিয়ে ... মা কে বলতেন আমার রান্না কোরো না... মা ! দিন দুই বন্ধুর বাড়িতে নিমন্ত্রণ আছে কিন্তু..কোথায় নিমন্ত্রণ ? .. আনাহার আর অর্ধপেটে থাকতেন তৎ কালীন নরেন্দ্র .........

 ভাবা যায় !!!!!!!

চরম দারিদ্রের মধ্যে সারা জীবনটাই টেনে নিয়ে গেছেন । ২৩ বছর বয়েসে শিক্ষকের চাকরি পেলেন মেট্রোপলিটন স্কূলে । যাঁর প্রতিষ্ঠাতা বিদ্যাসাগর মশাই আর হেডমাস্টার বিদ্যাসাগরের জামাতা । জামাতা পছন্দ করতেন না নরেন্দ্রনাথ দত্তকে .. শ্বশুরকে বলে..." *খারাপ পড়ানোর অপরাধে"* বিদ‍্যালয় থেকে তাড়িয়ে দিলেন বিবেকানন্দকে । অথছ, যাঁর জ্ঞান,বুদ্ধি,ব্যুৎপত্তি তর্কাতীত, অন্তত সেই সময়েও।
 আবার বেকার বিবেকানন্দ। বিদেশেও তাঁর নামে এক বাঙ্গালি গুরু প্রচার করেন .. বিবেকানন্দ বেশ কয়েকটি বৌ ও দশ -বারো ছেলে পুলের পিতা ও এক আস্ত ভন্ড ও জুয়াখোর। ......

দেশে ও বিদেশে অর্ধপেটে বা অভুক্ত থেকেছেন দিন থেকে দিনান্তে.... 

চিঠিতে লিখেছিলেন :- 

"-কতবার দিনের পর দিন অনাহারে কাটিয়েছি । মনে হয়েছে আজই হয়ত মরে যাবো ... জয় ব্রহ্ম বলে উঠে দাঁড়িয়েছি .... বলেছি . ..আমার ভয় নেই,নেই মৃত্যূ, নেই ক্ষুধা, আমি পিপাসা বিহীন । জগতের কি ক্ষমতা আমাকে ধ্বংস করে ?" ...

অসুস্থ বিবেকানন্দ বিশ্ব জয় করে কলকাতায় এলে তাঁর সংবর্ধনা দিতে বা সংবর্ধনা সভা তে আসতে রাজি হয় নি অনেক বিখ্যাত বাঙ্গালী ( নাম গুলি অব্যক্ত রইল) শেষে প্যারিচাঁদ মিত্র রাজি হলেও ... তিনি বলেছিলেন .. ব্রাহ্মণ নয় বিবেকানন্দ । ও কায়েত... তাই সন্ন্যাসী হতে পারে না , আমি ওকে brother বিবেকানন্দ বলে মঞ্চে সম্বোধন করবো । 
১৮৯৮, বিদেশের কাগজে তাঁর বাণী ও ভাষণ পড়ে আমেরিকানরা অভিভূত আর বাঙ্গালীরা !
সেই  বছরই অক্টোবরে অসুস্থ স্বামীজি কলকাতার বিখ্যাত ডক্টর রসিকলাল দত্তকে দেখাতে যান,(চেম্বার- 2 সদর স্ট্রিট। কলকাতা যাদুঘরে পাশের রাস্তা )। রুগী বিবেকানন্দ কে দেখে সেই সময় 40 টাকা ও ঔষুধের জন্যে 10 টাকা মানে আজ ২০২০র হিসাবে প্রায় ১৬০০০ টাকা নিলেন 
বিবিধ রোগে আক্রান্ত বিশ্বজয়ী দরিদ্র সন্ন্যাসীর কাছ থেকে . বেলুড় মঠের জন্যে তোলা অর্থ থেকে স্বামী ব্রহ্মনন্দ এই টাকা বিখ্যাত বাঙ্গালী(?) ডক্টর রসিকলাল কে দিয়েছিলেন। ..

আরও আছে .........!!!


 বিবেকানন্দের মৃত্যূর কোন ফটো নেই । এমনকি বীরপুরুষের কোন ডেথ সার্টিফিকেটও নেই কিন্তু সে সময় বালি - বেলুড় মিউনিসিপালিটি ছিলো। 

 আর এই municipality বেলুড় মঠে প্রমোদ কর বা amusement tax ধার্য করেছিলো ।
বলা হয়েছিল ওটা ছেলে ছোকরাদের আড্ডার ঠেক আর সাধারণ মানুষ বিবেকানন্দকে ব্যঙ্গ করে মঠকে বলতো .. "বিচিত্র আনন্দ" বা "বিবি- কা আনন্দ" । ( মহিলা /বধূ / ... নিয়ে আনন্দ ধাম)। এই ছিলো তৎকালীন মুষ্টিমেয় বাঙ্গালীদের মনোবৃত্তি l 

সাধে কি শেষ সময় বলে গিয়েছিলেন- " *একমাত্র আর একজন বিবেকানন্দই বুঝেতে পারবে যে এই বিবেকানন্দ কি করে গেল।"* 
ঋণস্বীকার---

শংকরের অচেনা অজানা  বিবেকানন্দ।



এক বিদেশী মেয়ের  গল্প ::


একবার এক বিদেশী মেয়ে স্বামী বিবেকান্দকে এসে বলে "আমি তোমাকে বিয়ে করতে চাই।"


স্বামীজি বলেন: কেন? আমি তো ব্রহ্মচারী।
মেয়েটি বলে: কারন আমি আপনার মতন একজন সন্তান চাই , যে সারা পৃথিবীতে আমার নাম উজ্জ্বল করবে। সেটা আপনাকে বিয়ে করলেই সম্ভব।
স্বামীজি বলেন: সেটার জন্য আরো একটি উপায় আছে।
মেয়ে জিজ্ঞেস করে: কি উপায়?
স্বামীজি মৃদু হেসে বলেন: আমাকে আপনার পুত্র বানিয়ে নেন। আর আমিও আপনাকে মা বলে ডাকব। এরফলে আপনার মনোবাসনাও পূর্ণ হবে আর আমার ব্রহ্মচর্যও অটুট থাকবে।
 এমনটাই হলো মহাত্মাদের বিচারধারা।
পুরো সমুদ্রের জল একটি জাহাজকে ততক্ষন ডুবোতে পারেনা , যতক্ষন না সমুদ্রের জল জাহাজের ভেতর প্রবেশ করছে।
ঠিক তেমনি খারাপ কুবুদ্ধি ও অসামাজিক কাজ দ্বারা আপনি প্রভাবিত হবেন না, যতক্ষন না পর্যন্ত আপনি নিজে সেগুলি আপনার অন্তরে প্রবেশের অনুমতি দিচ্ছেন।




এই জগৎ , সমাজ এই কারনে খারাপ নয় যে. খারাপ মানুষের সংখ্যা বেশী। খারাপ কারন ভালো মানুষেরা চুপ থাকে...

A professor and Swami Vivekananda ::



😫      In 1881, a professor asked his student, whether it was God, who created EVERYTHING, that exists in the universe..?
🙄     Student replied : YES..
😫    He again asked : What about EVIL..? Has God created, EVIL ALSO.. ?
🙄     The student got silent. Somehow, the student requested that may he ask 2 questions..?
😫     Professor allowed him, to do so..
🙄     Student asked : Does COLD exists..?
😫     Professor said : Yes. Don't you feel the cold.. ?
🙄     Student said :  I am sorry, but you are wrong sir. Cold is a complete ABSENCE OF HEAT. There is no cold. It is only, an absence of heat..
🙄      Student asked again : Does DARKNESS exists..?
😫     Professor said :  YES..
🙄    Student replied : You are again wrong, sir. There is nothing like darkness. It is actually the ABSENCE OF LIGHT..
🙄       Sir, we always study LIGHT & HEAT, but not cold & darkness. Similarly, the evil does not exist. Actually it is the absence of LOVE, FAITH & BELIEF IN GOD ALMIGHTY. Name of this student was : VIVEKANANDA..



🍂🍂🍂🍂🍂   দেওঘরে   স্বামীজী   🍂🍂🍂🍂🍂


                                      ( ৬ )

        স্বামীজী ষষ্ঠবার অর্থাৎ শেষবারের মতো দেওঘরে আসেন ১৯০০ খ্রীষ্টাব্দের ডিসেম্বরে ।  সেই সময়ের একটি বিশেষ ঘটনা জানা যায় হরিচরণ মিশ্রের অপ্রকাশিত রচনা থেকে ---------
                 
                 " দেওঘরে থাকাকালীন স্বামীজী প্রায়ই পাশ্ববর্তী গ্রামের সাঁওতালপল্লী ভ্রমণ করতেন ।  তিনি বলেছিলেন, 'এই সাঁওতালরাই এদেশের আদি অধিবাসী ।  এরা সরল, সৎ ও উদার ।  মহাজন, জমিদার ও ফড়েদাররাই এদের ঠকায় ।  এরা এদের সততার মূল্য পায় না ।'  সাঁওতালদের প্রতি স্বামীজীর গভীর ভালবাসা ছিল ।
                 " মুনিয়া মাঝির কথা মনে পড়ে ।  প্রিয়বাবুর আনন্দকুটিরে যেখানে স্বামীজী এসে থাকতেন, কাজ করত মুন্না সাঁওতাল ও তার স্ত্রী ঝরি সাঁওতাল ।  তাদের একমাত্র মেয়ে মুনিয়া মাঝি ।  মুনিয়ার যখন সাত বছর বয়স, তার বাবা মারা যায় কলেরায় । এরপর থেকে  মা-মেয়ে প্রিয়বাবুর বাড়িতে ঘরমোছা, জলতোলা, বাসনমাজা, কাপড়কাচা প্রভৃতি কাজ করত ।
                  " মুনিয়া স্বামীজীর স্নানের জল তুলে দিত, কাপড় কেচে দিত, খড়ম ধুয়ে দিত ।  মুনিয়া স্বামীজীকে বলত 'সাধুবাবা' ।  স্বামীজী দেওঘরে এলে নিমকাঠি দিয়ে দাঁত মাজতেন ।  এই নিমকাঠি জোগাড় করে আনত মুনিয়া ।  পেটের গোলমালে ভুগতেন বলে স্বামীজীর জন্য মুনিয়া হিঞ্চেশাক এনে তার রস করে কাঁচা দুধ দিয়ে খেতে দিত তাঁকে ।  স্বামীজী তা খেয়ে বলতেন, 'মুনিয়া আমার এখানকার গার্জেন !'  একবার মুনিয়া অনেকগুলো ভুট্টা এনে স্বামীজীকে বলল, 'সাধুবাবা এগুলো পুড়িয়ে দেব খাবি ----- খুব ভাল খেতে ।'  স্বামীজী মুনিয়ার কথা শুনে হো হো করে হাসতে লাগলেন ।  বাপ-মরা এই মেয়েটির প্রতি স্বামীজীর অপরিসীম করুণা ছিল ।  তাই আমাকে বলেছিলেন, 'এই অনাথা আদিবাসী মেয়েটাকে একটু লেখাপড়া শেখানোর ব্যবস্থা করুন ।'
                    " স্বামীজীর নির্দেশমত মুনিয়াকে প্রাথমিক লেখাপড়া শিখিয়ে কুষ্ঠাশ্রমে একটা কাজের ব্যবস্থা করে দিয়েছিলাম ।  কাজ করার সুবাদে সংসার একটু সচ্ছল হল ।  সে লেখাপড়া জানায় পরমহংসদেবের নাম জানতে পারল ।  স্বামীজীর কর্মকাণ্ডও কিছু জানল ।  এদিকে বয়স হওয়ায় তার মা তার বিয়ে দিতে চাইল । কিন্তু সে কোনমতেই রাজি হল না ।  সে বলেছিল, 'সাধুবাবা আমার মাথা ছুঁয়ে আশীর্বাদ করেছে ----- সেই-ই আমাকে রক্ষা করবে ।'
                    " মা-মেয়ের সংসার ।  থাকত ধারোয়া নদীর তীরে ।  স্বামীজীর প্রয়াণের সংবাদ পেয়ে মুনিয়া খুব কেঁদেছিল ।  তখন কুড়ি-বাইশ বছর বয়স তার, মারণ জ্বরে পড়ল সে ।  সংবাদ পেয়ে তাদের বাড়ি ছুটলাম ।  পাড়াতে পৌঁছেই কান্নার রোল শুনতে পেলাম, বুকটা ধড়াস করে উঠল ।  শুনলাম, আজই মুনিয়া আমাদের ছেড়ে চলে গেছে ।  বাড়িতে গিয়ে দেখি, দাওয়ায় চেটায়ের ওপর মুনিয়া চিরঘুমে ঘুমিয়ে আছে ।  তার মাথার কাছে একজোড়া খড়ম ।  জিজ্ঞাসা করলাম, 'ওর মাথার কাছে খড়মজোড়া কেন ?' তার মা বলল, 'পাণ্ডাজী, ঐ খড়মজোড়া হল সাধুবাবার ।  পুজো করার লেগে মুনিয়া বাবুর কাছ থেকে চেয়ে নিয়েছিল ।  অসুখের সময় বলেছিল, মা তুই সাধুবাবার খড়ম-দুটো মাথায় ঠেকিয়ে মাথার কাছে রাখ ।  সাধুবাবা এসে পড়বে ।'  এ কথা বলে মুনিয়ার মা কান্নায় ভেঙে পড়ল ।
                    " স্বামীজী মুনিয়ার মাথায় হাত রেখে আশীর্বাদ করেছিলেন ।  মুনিয়া নিশ্চিত স্বামীজীর আশীর্বাদ পেয়েছিল ।  তা না হলে অশিক্ষিত সাঁওতাল গোষ্ঠীর মেয়ে হয়ে রোগীদের সেবায় নিজেকে বলি দেওয়ার সাহস পেল কোথা থেকে ?  ধন্য মুনিয়া মাঝি ------- ধন্য তার সাধুবাবার প্রতি ভক্তি ! "

                                              ( উদ্বোধন : ৯ / ১৪১৯ )

🍂🍂🍂🍂🍂🍂  জয়  স্বামীজী  🍂🍂🍂🍂🍂🍂



স্বামী বিবেকানন্দ ও সূর্যগ্রহণ


আজ সূর্যগ্রহণ -সর্বগ্রাসী গ্রহণ। জ্যোতির্বিদগণও গ্রহণ দেখতে নানাস্থানে গেছেন। ধর্মপিপাসু নরনারীগণ গঙ্গা স্নান করতে বহুদূর থেকে এসে উৎসুক হয়ে গ্রহণবেলার প্রতীক্ষা করছেন। স্বামীজীর কিন্তু গ্রহণ সম্বন্ধে বিশেষ কোন উৎসাহ নেই। কয়েকদিন হল তিঁনি বাগবাজারে বলরাম বসুর বাড়িতে আছেন। সকালে ,দুপুরে বা সন্ধ্যায় তাঁর কিছুমাত্র বিরাম নেই।বহু উৎসাহী মানুষ ,কলেজের ছাত্র তাঁকে দর্শনের জন্য আসছেন।
স্বামীজী শিষ্যকে(শরৎচন্দ্র চক্রবর্তী) বলেছেন নিজ হাতে রান্না করে খাওয়াতে।সেইমত শিষ্যও মাছ ,তরকারি ও রান্নার সব জিনিস নিয়ে বলরাম বাবুর বাড়িতে সকাল ৮টার মধ্যে এসেছেন।তাকে দেখে স্বামীজী বললেন,"তোদের দেশের মতো রান্না হওয়া চাই আর গ্রহণের আগে খাওয়া-দাওয়া শেষ হওয়া চাই।"
বলরামবাবুদের বাড়ির মেয়েছেলেরা কেউ কলকাতাতে নেই ।শিষ্য বাড়ির ভিতরে রন্ধনশালায়  গিয়ে রান্না শুরু করলেন।আজ তার পরম আনন্দের দিন ,তার গুরুকে রান্না করে খাওয়াবেন।যোগীন মা সেদিন বলরাম বাবুর বাড়িতে ছিলেন।তিনি দাঁড়িয়ে শিষ্যকে নানারকম  রান্না বিষয়ে সাহায্য করছিলেন।স্বামীজীও মাঝে মাঝে ভিতরে এসে শিষ্যকে উৎসাহিত করে যাচ্ছিলেন ;দেখিস মাছের "জুল" যেন ঠিক বাঙ্গালদিশি ধরনের হয় বলে রঙ্গ করছিলেন। ভাত ,মুগের ডাল ,কই মাছের ঝোল ,মাছের টক ও মাছের সুক্তনী রান্না প্রায় শেষ হয়েছে ,এমন সময় স্বামীজী স্নান করে এসে নিজেই পাতা নিয়ে খেতে বসে পড়লেন।এখনো কিছু রান্না বাকি আছে বলাতেও আবদেরে ছেলের মত বললেন ,"যা হয়েছে নিয়ে আয় ,আমি আর বসতে পারছি না ,পেট খিদেয় জ্বলে যাচ্ছে।"শিষ্য তাড়াতাড়ি আগে মাছের সুক্তনী ও ভাত দিয়ে খেতে দিলেন।তারপর শিষ্য বাটিতে করে অন্য যা রান্না হয়েছিল সেগুলিও পরিবেশন করলেন।এবার তিনি ভিতরে গিয়ে প্রেমানন্দ ও যোগানন্দ প্রমুখ সন্ন্যাসী মহারাজদের  কেও ডেকে এনে খেতে দিলেন।
শিষ্য কোনকালেই রান্নায় পটু ছিলেন না।কিন্তু স্বামীজী আজ শিষ্যের রান্নার ভূয়সী প্রশংসা করতে লাগলেন।কলকাতার লোক মাছের সুক্তনী নামে খুব ঠাট্টা তামাশা করে কিন্তু সেই সুক্তনী খেয়ে বললেন,"এমন কখনো খাই নি।" কিন্তু মাছের 'জুল'টা যেমন ঝাল হয়েছে ,এমন আর কোনটা ই হয় নি।মাছের টক খেয়ে বললেন ,"এটা ঠিক যেন বর্ধমানী ধরনের হয়েছে।অনন্তর দই ও সন্দেশ খেয়ে স্বামীজী ভোজন শেষ করে আচমনান্তে ঘরে এসে খাটে বসলেন।স্বামীজী তামাক টানিতে টানিতে বললেন ,"যে ভাল রাঁধতে পারে না ,সে ভাল সাধু হতে পারে না -মন শুদ্ধ না হলে ভাল সুস্বাদু রান্না হয় না।"

কিছুক্ষণ পরে চারিদিকে শাঁক ঘন্টা বেজে উঠল এবং স্ত্রীকণ্ঠের উলুধ্বনি শোনা যেতে লাগল। স্বামীজী বলে উঠলেন ,"ওরে গেরন লেগেছে - আমি ঘুমোই ,তুই আমার পা টিপে দে।" এই বলে একটু তন্দ্রা অনুভব করতে লাগলেন। শিষ্যও তাঁহার পদসেবা করতে করতে ভাবলেন ,"এই পূণ্যক্ষণে গুরুপদসেবাই আমার গঙ্গাস্নান ও জপ।" তিনি শান্তমনে গুরুর পদসেবা করতে লাগলেন। গ্রহণে সর্বগ্রাস হয়ে ক্রমে চারদিক  সন্ধ্যাকালের মত তমসাছন্ন হয়ে গেল।
গ্রহণ ছেড়ে যাবার ১৫/২০ মিনিট বাকি থাকতে স্বামীজীর নিদ্রাভঙ্গ হয়ে গেল।নিদ্রা থেকে উঠে মুখ হাত ধুয়ে তামাক খেতে চাইলেন। তামাক খেতে খেতে শিষ্যকে পরিহাস করে বললেন,"লোকে বলে ,গেরনের সময় যে যা করে ,সে নাকি তাই কোটিগুণে পায় ; তাই ভাবলুম মহামায়া এ শরীরে সুনিদ্রা দেননি,যদি এই সময়ে একটু ঘুমুতে পারি তো বেশ ঘুম হবে, কিন্তু তা হলো না  ; জোর ১৫ মিনিট ঘুম হয়েছে ।"

(১৮৯৮ খ্রিস্টাব্দের ২২ জানুয়ারি মধ্যাহ্নে পূর্ণ সূর্যগ্রহণ হয়েছিল)

ঠিক কি ঘটেছিল ৪ঠা জুলাই ১৯০২ সালে...........


স্বামীজীর তিরোধান দিবসে জানাই স্বশ্রদ্ধ প্রণাম !!

II আজ  সেই চৌঠা জুলাই - এইদিনে স্বামী বিবেকানন্দ ছেড়ে গিয়েছিলেন আমাদের কে ......

ঠিক কী ঘটেছিলো এই দিন.... ৪ঠা জুলাই, ১৯০২
========


ভোরবেলা ঘুম ভাঙল বিবেকানন্দের । তাকালেন ক্যালেন্ডারের দিকে । আজই তো সেই দিন । আমেরিকার স্বাধীনতা দিবস। আর আমার দেহত্যাগের দিন। মা ভুবনেশ্বরী দেবীর মুখটি মনে পড়ল তাঁর। ধ্যান করলেন সেই দয়াময় প্রসন্ন মুখটি। বুকের মধ্যে অনুভব করলেন নিবিড় বেদনা ।তারপর সেই বিচ্ছেদবেদনার সব ছায়া সরে গেল ।ভারী উৎফুল্ল বোধ করলেন বিবেকানন্দ। মনে নতুন আনন্দ, শরীরে নতুন শক্তি । তিনি অনুভব করলেন, তাঁর সব অসুখ সেরে গিয়েছে । শরীর ঝরঝর করছে । শরীরে আর কোনো কষ্ট নেই।

মন্দিরে গেলেন স্বামীজি । ধ্যানমগ্ন উপাসনায় কাটালেন অনেকক্ষন । আজ সকাল থেকেই তাঁর মনের মধ্যে গুন গুন করছে গান । অসুস্থতার লক্ষন নেই বলেই ফিরে এসেছে গান, সুর, আনন্দ । তাঁর মনে আর কোনও অশান্তি নেই । শান্ত , স্নিগ্ধ হয়ে আছে তাঁর অন্তর।উপাসনার পরে গুরুভাইদের সঙ্গে হাসিঠাট্টা করতে করতে সামান্য ফল আর গরম দুধ খেলেন ।

বেলা বাড়ল। সাড়ে আটটা নাগাদ প্রেমানন্দকে ডাকলেন তিনি। বললেন, আমার পুজোর আসন কর ঠাকুরের পূজাগৃহে । সকাল সাড়ে নটায় স্বামী প্রেমানন্দও সেখানে এলেন পূজা করতে ।

 বিবেকানন্দ একা হতে চান ।
প্রেমানন্দকে বললেন‚ আমার ধ্যানের আসনটা ঠাকুরের শয়নঘরে পেতে দে ।
এখন আমি সেখানে বসেই ধ্যান করব ।

অন্যদিন বিবেকানন্দ পুজোর ঘরে বসেই ধ্যান করেন । আজ ঠাকুরের শয়নঘরে প্রেমানন্দ পেতে দিলেন তাঁর ধ্যানের আসন ।চারদিকের দরজা জানালা সব বন্ধ করে দিতে বললেন স্বামীজি ।

বেলা এগারোটা পর্যন্ত ধ্যানে মগ্ন রইলেন স্বামীজি । ধ্যান ভাঙলে ঠাকুরের বিছানা ছেড়ে গান গাইতে গাইতে বেরিয়ে এলেন তিনি --

মা কি আমার কালো,
কালোরূপা এলোকেশী
হৃদিপদ্ম করে আলো ।
তরুন সন্ন্যাসীর রূপের দিকে মুগ্ধ হয়ে তাকিয়ে গুরুভাইরা ।

বেলা সাড়ে এগারোটার মধ্যেই দুপুরের খাওয়া সারতে বললেন বিবেকানন্দ । আজ নিজে একলা খাচ্ছেন না । খেতে বসলেন সবার সঙ্গে ।

সকালবেলা বেলুড়ঘাটে জেলেদের নৌকো ভিড়েছিল । নৌকোভর্তি গঙ্গার ইলিশ । স্বামীজির কানে খবর আসতেই তিনি মহাউত্‍সাহে ইলিশ কিনিয়েছেন । তাঁরই আদেশে রান্না হয়েছে ইলিশের অনেকরকম পদ ।

 গুরুভাইদের সঙ্গে মহানন্দে ইলিশভক্ষনে বসলেন বিবেকানন্দ । তিনি জানেন, আর মাত্র কয়েকঘন্টার পথ তাঁকে পেরোতে হবে । ডাক্তারের উপদেশ মেনে চলার আর প্রয়োজন নেই । জীবনের শেষ দিনটা তো আনন্দেই কাটানো উচিত।

'একাদশী করে খিদেটা খুব বেড়েছে। ঘটিবাটিগুলোও খেয়ে ফেলতে ইচ্ছে করছে ।' বললেন স্বামীজি ।

পেট ভরে খেলেন ইলিশের ঝোল, ইলিশের অম্বল. ইলিশ ভাজা ।

দুপুরে মিনিট পনেরো বিছানায় গড়িয়ে নিয়ে প্রেমানন্দকে বললেন, সন্ন্যাসীর দিবানিদ্রা পাপ। চল, একটু লেখাপড়া করা যাক ।

 বিবেকানন্দ শুদ্ধানন্দকে বললেন‚ লাইব্রেরি থেকে শুক্লযজুর্বেদটি নিয়ে আয় ।
তারপর হঠাৎ বললেন‚ এই বেদের মহীধরকৃতভাষ্য আমার মনে লাগে না |
আমাদের দেহের অভ্যন্তরে মেরুদণ্ডের মধ্যস্থ শিরাগুচ্ছে‚ ইড়া ও পিঙ্গলার মধ্যবর্তী যে সুষুন্মা নাড়িটি রয়েছে‚ তার বর্ণনা ও ব্যাখ্যা আছে তন্ত্রশাস্ত্রে । আর এই ব্যাখ্যা ও বর্ণনার প্রাথমিক বীজটি নিহিত আছে বৈদিক মন্ত্রের গভীর সংকেতে । মহীধর সেটি ধরতে পারেননি ।
বিবেকানন্দ এইটুকু বলেই থামলেন ।

এরপর দুপুর একটা থেকে চারটে পর্যন্ত তিনঘন্টা স্বামীজী লাইব্রেরী ঘরে ব্যাকরণ চর্চা করলেন ব্রহ্মচারীদের সঙ্গে ।

তিনি পাণিনির ব্যাকরণের সূত্রগুলি নানারকম মজার গল্পের সঙ্গে জুড়ে দিতে লাগলেন ।
ব্যাকরণশাস্ত্রের ক্লাস হাসির হুল্লোড়ে পরিণত হল ।

ব্যাকরনের ক্লাস শেষ হতেই এক কাপ গরম দুধ খেয়ে প্রেমানন্দকে সঙ্গে নিয়ে বেলুড় বাজার পর্যন্ত প্রায় দু মাইল পথ হাঁটলেন ।
এতটা হাঁটা তাঁর শরীর ইদানিং নিতে পারছে না ।

কিন্তু ১৯০২ এর ৪ ঠা জুলাইয়ের গল্প অন্যরকম । কোনও কষ্টই আজ আর অনুভব করলেন না।
বুকে এতটুকু হাঁফ ধরল না । আজ তিনি অক্লেশে হাঁটলেন ।

বিকেল পাঁচটা নাগাদ মঠে ফিরলেন বিবেকানন্দ । সেখানে আমগাছের তলায় একটা বেঞ্চি পাতা । গঙ্গার ধারে মনোরম আড্ডার জায়গা । স্বামীজির শরীর ভাল থাকে না বলে এখানে বসেন না । আজ শরীর -মন একেবারে সুস্থ । তামাক খেতে খেতে আড্ডায় বসলেন বিবেকানন্দ ।
আড্ডা দিতে দিতে ঘন্টা দেড়েক কেটে গেল ।

সন্ধ্যে সাড়ে ছ'টা হবে । সন্ন্যাসীরা কজন মিলে চা খাচ্ছেন । স্বামীজি এক কাপ চা চাইলেন ।

সন্ধ্যে ঠিক সাতটা। শুরু হলো সন্ধ্যারতি । স্বামীজি জানেন আর দেরি করা চলবে না । শরীরটাকে জীর্ন বস্ত্রের মতো ত্যাগ করার পরমলগ্ন এগিয়ে আসছে ।

তিনি বাঙাল ব্রজেন্দ্রকে সঙ্গে নিয়ে নিজের ঘরে চলে গেলেন । ব্রজেন্দ্রকে বললেন , 'আমাকে দুছড়া মালা দিয়ে তুই বাইরে বসে জপ কর ।

 আমি না ডাকলে আসবি না ।'
স্বামীজি হয়তো বুঝতে পারছেন যে এটাই তাঁর শেষ ধ্যান ।

তখন ঠিক সন্ধ্যে সাতটা পঁয়তাল্লিশ । স্বামীজি যা চেয়েছিলেন তা ঘটিয়ে দিয়েছেন ।

ব্রজেন্দ্রকে ডাকলেন তিনি ।  বললেন , জানলা খুলে দে । গরম লাগছে ।মেঝেতে বিছানা পাতা । সেখানে শুয়ে পড়লেন স্বামীজি । হাতে তাঁর জপের মালা ।

ব্রজেন্দ্র বাতাস করছেন স্বামীজিকে । স্বামীজি ঘামছেন । বললেন , আর বাতাস করিসনে । একটু পা টিপে দে ।

রাত ন'টা নাগাদ স্বামীজি বাঁপাশে ফিরলেন । তাঁর ডান হাতটা থরথর করে কেঁপে উঠল । কুন্ডলিনীর শেষ ছোবল । বুঝতে পারলেন বিবেকানন্দ । শিশুর মতো কাঁদতে লাগলেন তিনি ।

 দীর্ঘশ্বাস ফেললেন । গভীর সেই শ্বাস । মাথাটা নড়ে উঠেই বালিশ থেকে পড়ে গেল ।

 ঠোঁট আর নাকের কোনে রক্তের ফোঁটা । দিব্যজ্যোতিতে উজ্জ্বল তাঁর মুখ । ঠোঁটা হাসি ।
ঠাকুর তাঁকে বলেছিলেন , 'তুই যেদিন নিজেকে চিনতে পারবি সেদিন তোর এই দেহ আর থাকবে না ।'

স্বামীজি বলেছিলেন , 'তাঁর চল্লিশ পেরোবে না ।'
বয়েস ঠিক উনচল্লিশ বছর পাঁচ মাস, চব্বিশ দিন ।

পরের দিন ভোরবেলা ।
একটি সুন্দর গালিচার ওপর শায়িত দিব্যভাবদীপ্ত‚ বিভূতি-বিভূষিত‚ বিবেকানন্দ ।

তাঁর মাথায় ফুলের মুকুট ।
তাঁর পরনে নবরঞ্জিত গৈরিক বসন ।
তাঁর প্রসারিত ডান হাতের আঙুলে জড়িয়ে আছে রুদ্রাক্ষের জপমালাটি ।
তাঁর চোখদুটি যেন ধ্যানমগ্ন শিবের চোখ‚ অর্ধনিমীলিত‚ অন্তর্মুখী‚ অক্ষিতারা ।

নিবেদিতা ভোরবেলাতেই চলে এসেছেন ।
স্বামীজির পাশে বসে হাতপাখা দিয়ে অনবরত বাতাস করছেন ।তাঁর দুটি গাল বেয়ে নামছে নীরব অজস্র অশ্রুধারা ।

স্বামীজির মাথা পশ্চিমদিকে ।
পা-দুখানি পুবে‚ গঙ্গার দিকে ।
শায়িত বিবেকানন্দের পাশেই নিবেদিতাকে দেখে বোঝা যাচ্ছে সেই গুরুগতপ্রাণা‚ ত্যাগতিতিক্ষানুরাগিণী বিদেশিনী তপস্বিনীর হৃদয় যেন গলে পড়ছে সহস্রধারে । আজকের ভোরবেলাটি তাঁর কাছে বহন করে এনেছে বিশুদ্ধ বেদনা ।অসীম ব্যথার পবিত্র পাবকে জ্বলছেন‚ পুড়ছেন তিনি ।

এ বেদনার সমুদ্রে তিনি একা ।নির্জনবাসিনী নিবেদিতা ।বিবেকানন্দের দেহ স্থাপন করা হল চন্দন কাঠের চিতায় ।

আর তখুনি সেখানে এসে পৌঁছলেন জননী ভুবনেশ্বরী ।চিৎকার করে কাঁদতে- কাঁদতে লুটিয়ে পড়লেন মাটিতে ।

কী হল আমার নরেনের ?
হঠাৎ চলে গেল কেন ?
ফিরে আয় নরেন‚ ফিরে আয় ।
আমাকে ছেড়ে যাসনি বাবা ।
আমি কী নিয়ে থাকব নরেন ?
ফিরে আয় । ফিরে আয় ।
সন্ন্যাসীরা তাঁকে কী যেন বোঝালেন ।

তারপর তাঁকে তুলে দিলেন নৌকায় ।
জ্বলে উঠল বিবেকানন্দের চিতা ।
মাঝগঙ্গা থেকে তখনো ভেসে আসছে ভুবনেশ্বরীর বুকফাটা কান্না ।

ফিরে আয় নরেন ফিরে আয় ।
ভুবনেশ্বরীর নৌকো ধীরে ধীরে মিলিয়ে গেল ।
তাঁর কান্না‚ ফিরে আয় নরেন‚ ফিরে আয়‚ ভেসে থাকল গঙ্গার বুকে ।

নিবেদিতা মনে মনে ভাবলেন‚ প্রভুর ওই জ্বলন্ত বস্ত্রখণ্ডের এক টুকরো যদি পেতাম !

সন্ধে ছটা ।
দাহকার্য সম্পন্ন হল । আর নিবেদিতা অনুভব করলেন‚ কে যেন তাঁর জামার হাতায় টান দিল । তিনি চোখ নামিয়ে দেখলেন‚ অগ্নি ও অঙ্গার থেকে অনেক দূরে‚ ঠিক যেখানে দাঁড়িয়ে তিনি‚ সেখানেই উড়ে এসে পড়ল ততটুকু জ্বলন্ত বস্ত্রখণ্ড যতটুকু তিনি প্রার্থনা করেছিলেন ।

নিবেদিতার মনে হল‚ মহাসমাধির ওপার থেকে উড়ে-আসা এই বহ্নিমান পবিত্র বস্ত্রখণ্ড তাঁর প্রভুর‚ তাঁর প্রাণসখার শেষ চিঠি ।




আ  বা  র  জানুন ::


 *সেই 4ঠা জুলাই ১৯০২ এর স্বামীজীর  শেষ দিনটা কেমন ছিল জানুন*
**************************
 *৪ঠা জুলাই ১৯০২  ভোর*
====≠= ============
ভোরবেলা ঘুম ভাঙল বিবেকানন্দের। তাকালেন ক্যালেন্ডারের দিকে। আজই তো সেই দিন। আমেরিকার স্বাধীনতা দিবস। আর আমার দেহত্যাগের দিন। মা ভুবনেশ্বরী দেবীর মুখটি মনে পড়ল তাঁর। ধ্যান করলেন সেই দয়াময় প্রসন্ন মুখটি। বুকের মধ্যে অনুভব করলেন নিবিড় বেদনা।

তারপর সেই বিচ্ছেদবেদনার সব ছায়া সরে গেল।
ভারী উৎফুল্ল বোধ করলেন বিবেকানন্দ। মনে নতুন আনন্দ, শরীরে নতুন শক্তি। তিনি অনুভব করলেন, তাঁর সব অসুখ সেরে গিয়েছে। শরীর ঝরঝর করছে। শরীরে আর কোনো কষ্ট নেই।

মন্দিরে গেলেন স্বামীজি। ধ্যানমগ্ন উপাসনায় কাটালেন অনেকক্ষন। আজ সকাল থেকেই তাঁর মনের মধ্যে গুন গুন করছে গান। অসুস্থতার লক্ষন নেই বলেই ফিরে এসেছে গান, সুর, আনন্দ। তাঁর মনে আর কোনও অশান্তি নেই। শান্ত , স্নিগ্ধ হয়ে আছে তাঁর অন্তর।

উপাসনার পরে গুরুভাইদের সঙ্গে হাসিঠাট্টা করতে করতে সামান্য ফল আর গরম দুধ খেলেন।

 *৪ঠা জুলাই সকাল সাড়ে আটটা*
===============

প্রেমানন্দকে ডাকলেন তিনি। বললেন, আমার পুজোর আসন কর ঠাকুরের পূজাগৃহে। সকাল সাড়ে নটায় স্বামী প্রেমানন্দও সেখানে এলেন পূজা করতে। বিবেকানন্দ একা হতে চান।

প্রেমানন্দকে বললেন‚ আমার ধ্যানের আসনটা ঠাকুরের শয়নঘরে পেতে দে।
এখন আমি সেখানে বসেই ধ্যান করব।

অন্যদিন বিবেকানন্দ পুজোর ঘরে বসেই ধ্যান করেন।
আজ ঠাকুরের শয়নঘরে প্রেমানন্দ পেতে দিলেন তাঁর ধ্যানের আসন ।চারদিকের দরজা জানালা সব বন্ধ করে দিতে বললেন স্বামীজি।

 *৪ঠা জুলাই বেলা এগারোটা*
=============
ধ্যান ভাঙলে ঠাকুরের বিছানা ছেড়ে গান গাইতে গাইতে বেরিয়ে এলেন তিনি --

মা কি আমার কালো,
কালোরূপা এলোকেশী
হৃদিপদ্ম করে আলো।

তরুন সন্ন্যাসীর রূপের দিকে মুগ্ধ হয়ে তাকিয়ে গুরুভাইরা।

বেলা সাড়ে এগারোটার মধ্যেই দুপুরের খাওয়া সারতে বললেন বিবেকানন্দ। আজ নিজে একলা খাচ্ছেন না। খেতে বসলেন সবার সঙ্গে।

 *সকালবেলা বেলুড়ঘাটে জেলেদের নৌকো ভিড়েছিল। নৌকোভর্তি গঙ্গার ইলিশ। স্বামীজির কানে খবর আসতেই তিনি মহাউত্‍সাহে ইলিশ কিনিয়েছেন। তাঁরই আদেশে রান্না হয়েছে ইলিশের অনেকরকম পদ।*

গুরুভাইদের সঙ্গে মহানন্দে ইলিশ ভক্ষনে বসলেন বিবেকানন্দ।

 *তিনি জানেন, আর মাত্র কয়েকঘন্টার পথ তাঁকে পেরোতে হবে। ডাক্তারের উপদেশ মেনে চলার আর প্রয়োজন নেই। জীবনের শেষ দিনটা তো আনন্দেই কাটানো উচিত।*

'একাদশী করে খিদেটা খুব বেড়েছে। ঘটিবাটিগুলোও খেয়ে ফেলতে ইচ্ছে করছে।' বললেন স্বামীজি । *পেট ভরে খেলেন ইলিশের ঝোল, ইলিশের অম্বল, ইলিশ ভাজা।*

দুপুরে মিনিট পনেরো বিছানায় গড়িয়ে নিয়ে প্রেমানন্দকে বললেন, সন্ন্যাসীর দিবানিদ্রা পাপ। চল, একটু লেখাপড়া করা যাক। বিবেকানন্দ শুদ্ধানন্দকে বললেন‚ লাইব্রেরি থেকে শুক্ল যজুর্বেদটি নিয়ে আয়।
তারপর হঠাৎ বললেন‚ এই বেদের মহীধরকৃতভাষ্য আমার মনে লাগে না।

আমাদের দেহের অভ্যন্তরে মেরুদণ্ডের মধ্যস্থ শিরাগুচ্ছে‚ ইড়া ও পিঙ্গলার মধ্যবর্তী যে সুষুন্মা নাড়িটি রয়েছে‚ তার বর্ণনা ও ব্যাখ্যা আছে তন্ত্রশাস্ত্রে। আর এই ব্যাখ্যা ও বর্ণনার প্রাথমিক বীজটি নিহিত আছে বৈদিক মন্ত্রের গভীর সংকেতে। মহীধর সেটি ধরতে পারেননি।
বিবেকানন্দ এইটুকু বলেই থামলেন।

 *৪ঠা জুলাই দুপুর একটা থেকে চারটে*
==================
এই  তিনঘন্টা স্বামীজী লাইব্রেরী ঘরে ব্যাকরণ চর্চা করলেন ব্রহ্মচারীদের সঙ্গে।
তিনি পাণিনির ব্যাকরণের সূত্রগুলি নানারকম মজার গল্পের সঙ্গে জুড়ে দিতে লাগলেন।

ব্যাকরণশাস্ত্রের ক্লাস হাসির হুল্লোড়ে পরিণত হল।
ব্যাকরনের ক্লাস শেষ হতেই এক কাপ গরম দুধ খেয়ে প্রেমানন্দকে সঙ্গে নিয়ে বেলুড় বাজার পর্যন্ত প্রায় দু মাইল পথ হাঁটলেন।

এতটা হাঁটা তাঁর শরীর ইদানিং নিতে পারছে না। কিন্তু ১৯০২ এর ৪ ঠা জুলাইয়ের গল্প অন্যরকম। কোনও কষ্টই আজ আর অনুভব করলেন না।

বুকে এতটুকু হাঁফ ধরল না। আজ তিনি অক্লেশে হাঁটলেন।


 *৪ঠা জুলাই বিকেল পাঁচটা*
==============
মঠে ফিরলেন বিবেকানন্দ। সেখানে আমগাছের তলায় একটা বেঞ্চি পাতা। গঙ্গার ধারে মনোরম আড্ডার জায়গা। স্বামীজির শরীর ভাল থাকে না বলে এখানে বসেন না।আজ শরীর -মন একেবারে সুস্থ। তামাক খেতে খেতে আড্ডায় বসলেন বিবেকানন্দ।

 *৪ঠা জুলাই সন্ধে  ছটা*
=================
আড্ডা দিতে দিতে সন্ধ্যে সাড়ে ছ'টা হলো । সন্ন্যাসীরা কজন মিলে চা খাচ্ছেন। স্বামীজি এক কাপ চা চাইলেন।

 *৪ঠা জুলাই সন্ধ্যে ঠিক সাতটা।*
===============
শুরু হলো সন্ধ্যারতি। স্বামীজি জানেন আর দেরি করা চলবে না। শরীরটাকে জীর্ন বস্ত্রের মতো ত্যাগ করার পরমলগ্ন এগিয়ে আসছে।

তিনি বাঙাল ব্রজেন্দ্রকে সঙ্গে নিয়ে নিজের ঘরে চলে গেলেন। ব্রজেন্দ্রকে বললেন , 'আমাকে দুছড়া মালা দিয়ে তুই বাইরে বসে জপ কর। আমি না ডাকলে আসবি না।'

স্বামীজি হয়তো বুঝতে পারছেন যে এটাই তাঁর শেষ ধ্যান।

 *৪ঠা জুলাই ঠিক সন্ধ্যে সাতটা পঁয়তাল্লিশ।*
=================
 স্বামীজি যা চেয়েছিলেন তা ঘটিয়ে দিয়েছেন। ব্রজেন্দ্রকে ডাকলেন তিনি। বললেন , জানলা খুলে দে। গরম লাগছে।
মেঝেতে বিছানা পাতা। সেখানে শুয়ে পড়লেন স্বামীজি। হাতে তাঁর জপের মালা।

ব্রজেন্দ্র বাতাস করছেন স্বামীজিকে। স্বামীজি ঘামছেন। বললেন , আর বাতাস করিসনে। একটু পা টিপে দে।

 *৪ঠা জুলাই রাত ন'টা দশ মিনিট*
================
স্বামীজি বাঁপাশে ফিরলেন। তাঁর ডান হাতটা থরথর করে কেঁপে উঠল। কুন্ডলিনীর শেষ ছোবল। বুঝতে পারলেন বিবেকানন্দ। শিশুর মতো কাঁদতে লাগলেন তিনি। দীর্ঘশ্বাস ফেললেন। গভীর সেই শ্বাস। মাথাটা নড়ে উঠেই বালিশ থেকে পড়ে গেল। ঠোঁট আর নাকের কোনে রক্তের ফোঁটা। দিব্যজ্যোতিতে উজ্জ্বল তাঁর মুখ। ঠোঁটে হাসি,
 *চলে গেলেন ঠিক  রাত নটা  দশ মিনিট এ*

ঠাকুর তাঁকে বলেছিলেন , 'তুই যেদিন নিজেকে চিনতে পারবি সেদিন তোর এই দেহ আর থাকবে না।'

 *স্বামীজি বলেছিলেন , 'তাঁর চল্লিশ পেরোবে না।' বয়েস ঠিক উনচল্লিশ বছর পাঁচ মাস, চব্বিশ দিন।**

 *পরের দিন 5ই জুলাই ভোরবেলা।*
================

একটি সুন্দর গালিচার ওপর শায়িত দিব্যভাবদীপ্ত‚ বিভূতি-বিভূষিত‚ বিবেকানন্দ।
তাঁর মাথায় ফুলের মুকুট।
তাঁর পরনে নবরঞ্জিত গৈরিক বসন।

তাঁর প্রসারিত ডান হাতের আঙুলে জড়িয়ে আছে রুদ্রাক্ষের জপমালাটি।
তাঁর চোখদুটি যেন ধ্যানমগ্ন শিবের চোখ‚ অর্ধনিমীলিত‚ অন্তর্মুখী‚ অক্ষিতারা।
নিবেদিতা ভোরবেলাতেই চলে এসেছেন।

স্বামীজির পাশে বসে হাতপাখা দিয়ে অনবরত বাতাস করছেন।
তাঁর দুটি গাল বেয়ে নামছে নীরব অজস্র অশ্রুধারা।
স্বামীজির মাথা পশ্চিমদিকে।
পা-দুখানি পুবে‚ গঙ্গার দিকে।

শায়িত বিবেকানন্দের পাশেই নিবেদিতাকে দেখে বোঝা যাচ্ছে সেই গুরুগতপ্রাণা‚ ত্যাগতিতিক্ষানুরাগিণী বিদেশিনী তপস্বিনীর হৃদয় যেন গলে পড়ছে সহস্রধারে।আজকের ভোরবেলাটি তাঁর কাছে বহন করে এনেছে বিশুদ্ধ বেদনা।
অসীম ব্যথার পবিত্র পাবকে জ্বলছেন‚ পুড়ছেন তিনি।
এই বেদনার সমুদ্রে তিনি একা।

নির্জনবাসিনী নিবেদিতা।
বিবেকানন্দের দেহ স্থাপন করা হল চন্দন কাঠের চিতায়।

 *আর তখুনি সেখানে এসে পৌঁছলেন জননী ভুবনেশ্বরী।*

চিৎকার করে কাঁদতে- কাঁদতে লুটিয়ে পড়লেন মাটিতে।*

কী হল আমার নরেনের ?
হঠাৎ চলে গেল কেন ?
ফিরে আয় নরেন‚ ফিরে আয়।
আমাকে ছেড়ে যাসনি বাবা।
আমি কী নিয়ে থাকব নরেন ?
ফিরে আয়। ফিরে আয়।

সন্ন্যাসীরা তাঁকে কী যেন বোঝালেন।

তারপর তাঁকে তুলে দিলেন নৌকায়। জ্বলে উঠল বিবেকানন্দের চিতা।
মাঝগঙ্গা থেকে তখনো ভেসে আসছে ভুবনেশ্বরীর বুকফাটা কান্না। ফিরে আয় নরেন ফিরে আয়। ভুবনেশ্বরীর নৌকো ধীরে ধীরে মিলিয়ে গেল।

তাঁর কান্না‚ ফিরে আয় নরেন‚ ফিরে আয়‚ ভেসে থাকল গঙ্গার বুকে।
নিবেদিতা মনে মনে ভাবলেন‚ প্রভুর ওই জ্বলন্ত বস্ত্রখণ্ডের এক টুকরো যদি পেতাম!

 *৫ই জুলাই সন্ধে ছটা।*
================

দাহকার্য সম্পন্ন হল। আর নিবেদিতা অনুভব করলেন‚ কে যেন তাঁর জামার হাতায় টান দিল। তিনি চোখ নামিয়ে দেখলেন‚ অগ্নি ও অঙ্গার থেকে অনেক দূরে‚ ঠিক যেখানে দাঁড়িয়ে তিনি‚ সেখানেই উড়ে এসে পড়ল ততটুকু জ্বলন্ত বস্ত্রখণ্ড যতটুকু তিনি প্রার্থনা করেছিলেন।

 নিবেদিতার মনে হল‚ মহাসমাধির ওপার থেকে উড়ে আসা এই বহ্নিমান পবিত্র বস্ত্রখণ্ড তাঁর প্রভুর‚ তাঁর প্রাণসখার শেষ চিঠি।
🙏🏼🙏🏼🙏🏼🙏🏼
(সংগৃহীত)






আ র ও  জানুন...... ৪ঠার  পর ________


※※  আজ স্বামীজীর শেষ  পূজা তোর হাতেই হোক ********************************


   ( স্বামীজীর  মহাপ্রয়াণের পর ৫ জুলাই১৯০২   )


    ৪ জুলাই ১৯০২ ----- রাত ৯ টার পরে নব্যভারতের মন্ত্রদ্রষ্টা শ্রীমৎ স্বামী বিবেকানন্দ ধ্যানযোগে মহাসমাধির আনন্দে চিরমগ্ন হয়েছেন | আষাঢ়ের ঘন-অন্ধকারে ধর্ম জগতের  উজ্জ্বল আলোক স্তম্ভের জীবন প্রদীপটি হঠাৎ নিভে গেল | এই দুঃসংবাদ পর দিন সকালে কলকাতা সহ ভারতের  সর্বত্র ছড়িয়ে পড়ল | আমাদের আহিরিটোলার বাড়ীতে স্বামীজীর শিষ্য কানাই মহারাজ ( স্বামী নির্ভয়ানন্দ ) এসে শোক-সংবাদটি জানিয়ে গেছেন | আমি তখন পাশে কোন ঠাকুর মন্দিরে পূজা করতে গিয়েছিলাম  |  ৯টায় বাড়ি ফিরে দেখলাম আমার মা শোকবিহ্বল হয়ে কান্নাকাটি করছেন | কারণ জিজ্ঞাসা করায়

 মা বললেন ,  ""  বাবা !  তোদের সর্বনাশ হয়ে
                     গেছে ----- মঠের স্বামীজী আর নেই  ,
         
দেহ রেখেছেন ,  আমাকে একবার
                      তাঁকে দেখালি না  !  ""

আমি বললাম ,  ""  মঠের সকল সাধুই "স্বামী" ,
                            তুমি কোন স্বামীজীর কথা
                            বলছো  ?  তুমি বোধ হয়
                                 ভুল  শুনেছো  | ""

 মা বলেন ,   ""  ওরে না ,  কানাই ভোরে এসে
                     খবর দিয়ে গেছে ------ বড় স্বামীজী
                       গতকাল রাত ৯টায় শরীর ছেড়ে
                       চলে গেছেন  |  কানাই তোদের
                      মঠে যেতে বলেছে  |  ""

ক্রন্দনরত মাকে আশ্বস্ত করে বললাম  ,  ""  সাধুর
                            দেহত্যাগে শোক করতে নেই | ""

 সেই সময়  বন্ধু নিবারণচন্দ্র ( শ্রীশ্রীমায়ের শিষ্য )  আসাতে তাকে ও আমর ভাই দুলালশশীকে নিয়ে  অফিসে না গিয়ে স্বামীজীকে শেষ দর্শন করার জন্য আহিরিটোলা ঘাট থেকে  নৌকায়  বেলুড় মঠে পৌঁছলাম বেলা দশটায় | তখন সামান্য বৃষ্টি হয়েছে |  দেখলাম পুজনীয় রাখাল মহারাজ ( স্বামী ব্রহ্মানন্দজী ) প্রমুখ কয়েকজন মহারাজ পশ্চিম দিকের নীচের বারান্দায় খাটে ফুল সাজাচ্ছেন |

 আমাদের দেখে শ্রীরাখাল মহারাজ কেঁদে ফেললেন , তাঁর বাক্য বের হলো না ----- হাত ইশারা করে উপরে যেতে ইঙ্গিত করলেন |

      উপরে   স্বামীজীর ঘরে পৌঁছে দেখলাম ------ একটি সুন্দর গালিচার উপর শয়ান স্বামীজীর মুখমণ্ডল  দিব্যভাবদীপ্ত , সমস্ত শরীর নতুন রং করা গেরুয়া বস্ত্রে  ঢাকা রয়েছে  |  ডানহাতে রুদ্রাক্ষের জপমালাটি  জড়িয়ে আছে | ঠিক ধ্যানমগ্ন  মহাদেবের মতো তাঁর চোখ দুটি অন্তর্মুখী  ও  অর্ধনিমীলিত  |  স্বামীজীর বাঁ দিকে ভগিনী  নিবেদিতা অশ্রুপূর্ণচোখে  স্বামীজীর মাথায় একভাবে  পাখার  বাতাস করছেন  | স্বামীজীর মাথাটি পশ্চিমদিকে ও পা দুখানি পূর্বদিকে গঙ্গারদিকে শয়ন করা | তাঁর পায়ের কাছে নন্দলাল ব্রহ্মচারী বিষাদ মৌনমুখে নীরবে বসে আছেন | আমরা তিনজনে মাথা নিচু করে স্বামীজীর পাদপদ্ম স্পর্শ ও প্রণাম  করে সেখানে বসলাম | স্পর্শ করে অনুভব করলাম স্বামীজীর দেহ বরফের মতোন ঠাণ্ডা হয়ে  গেছে |

         স্বামীজীর ডানহাতের আঙুলে রুদ্রাক্ষের মালার দানাগুলিতে আমি গুরুদত্ত মন্ত্র জপ করে নিলাম | ইতিমধ্যে অনেক ভক্ত স্বামীজীকে শেষ দর্শন করতে উপরে  এসেছেন ও  প্রণাম  করে  একে একে  চলে  যাচ্ছেন  | আমার জপ শেষ হলে নিবেদিতা আমাকে ডেকে চুপি চুপি বললেনঃ ------ ""  Can you sing , my friend  ?  Would you mind singing those  which our  Thakur  used to  sing  ?  ""

ঐ বিষয়ে আমার অক্ষমতা জানালে ,
 নিবেদিতা আবার অনুরোধ করলেন ,
       ""  Will  you  please request  your
              friend  on  my  behalf  ?   ""

তখন বন্ধু নিবারণ  প্রাণ খুলে কয়েকটি  গান  গাইলেন ,  ""  ১) যতনে হৃদয়ে রেখো  আদরিনী .শ্যামা মাকে  ,   ২) গয়াগঙ্গাপ্রভাসাদি কাশী কাঞ্চি কেবা চায়  |  ৩) কে বলে  শ্যামা  আমার  কালো  , মা যদি কালো তবে কেন আমার হৃদয় করে আলো  ,  ৪)  মজলো আমার মন ভ্রমরা , শ্যামাপদ নীলকমলে  ,  ৫ )  মন আমার কালী কালী বলনা ,  কালী কালী বললে পরে , কালের ভয় আর রবে না    ইত্যাদি

       আকুল আগ্রহভরে সুমধুর  গান  শুনতে  শুনতে বিষণ্ণ ভগিনী নিবেদিতার অন্তর থেকে বেদনার স্রোত বুক ফেটে বেরিয়ে এসে  চোখ দিয়ে অনর্গল অশ্রু নির্গত হতে লাগল | এই দৃশ্যটি বড় করুণ , অবিস্মরণীয় ------ এই স্মৃতিটুকু তো ভুলবার নয় |  যদিও স্রোতের মতো  ৪৫টা বছর চলে গিয়েছে |  তবুও সেই স্মৃতি আজও আমাদের মনে সোনার অক্ষরে লিখিত আছে

※※※※※※※※※※※※※※※※※※※※※※※※※※※※※※※

      বেলা প্রায় একটার সময় শ্রীশরৎ মহারাজ ( স্বামী সীরদানন্দজী ) দোতলায় স্বামীজীর ঘরে এসে আমাদের তিনজন ও ব্রহ্মচারীকে ডেকে বললেন ,  ""  বাবা !  স্বামীজী চলে যাওয়াতে
                        আমরা ভেঙে পড়েছি |
                    ------ আমাদের বল টুটে গেছে  |
                      তোরা  সকলে  ধরাধরি করে
                         স্বামীজীর দেহটি নিচে নামিয়ে
                         আনতে পারবি  ?  ""

তৎক্ষণাৎ  আমরা তিনজন গৃহিভক্ত ও নন্দলাল ব্রহ্মচারীজি স্বামীজীর দেহটি বহন করে ধীরে ধীরে সিঁড়ি বেয়ে নিচে এসে বারান্দায় রাখা পুষ্পসজ্জিত খাটটিতে শুইয়ে দিলাম |  সেইসময় কয়েকটি বেদানা , আপেল , ন্যাসপাতি , আঙুর স্বামীজীর বুকের উপর সাজিয়ে দেওয়া হলো |

তখন বুড়োগোপালদাদা ( স্বামী অদ্বৈতানন্দজী ) ব্রহ্মচারীকে বললেন ,  ""   ওরে  নন্দলাল  !
                         আমাদের চেয়ে স্বামীজী তোকেই
                       বেশি ভালোবাসতেন |  আজ  তাঁর
                       শেষ  পুজো তোর হাতেই হোক্  |  ""

 এই প্রস্তাব শ্রীরাখাল মহারাজ ও অন্যান্য মহারাজও অনুমোদন করায় , নন্দলাল স্বামীজীকে ফুল-মালা এবং নানা ফলাদি  মিষ্টান্ন প্রভৃতি নিবেদনের পর আরতি করে স্তোত্রপাঠ করলেন |  এই সময়  স্বামীজীর শেষ ফটো তোলার প্রস্তাব হলে ,
শ্রীরাখাল মহারাজ (স্বামী ব্রহ্মানন্দজী )
 বলেন ,  ""  স্বামীজীর কত রকমের ভাল
                   ফটো রয়েছে , এই বিষাদ মাখা
               ছবি সকলের হৃদয়কে বিদীর্ণ করবে  | ""

 তারপর শ্রীরাখাল মহারাজ প্রমুখ সন্ন্যাসীবৃন্দ ও ব্রহ্মচারীরা একে একে স্বামীজীর শ্রীচরণে পুষ্পাঞ্জলি প্রদান করলেন |  পরে  স্বামীজীর বন্ধু হরমোহন ও অন্যান্য গৃহিভক্তরাও পুষ্পাঞ্জলি দিলেন | পরে স্বামীজী চরণতলে আলতা মাখিয়ে  পায়ের ছাপ রাখা হলো | ভগিনী নিবেদিতাও একটি রুমালে স্বামীজীর চরণের ছাপ তুলে নিলেন | একটি ফুটন্ত " মার্শাল নীল " জাতীয় গোলাপ  ফুলে  চন্দন মাখিয়ে স্বামীজীর চরণতলে বুলিয়ে আমার বুকপকেট রাখলাম |

         স্বামীজীর পূজাদি কার্য শেষ হলে শ্রীশরৎ মবারাজ আমাদের চারজনকেই  পালঙ্কটি বহন করে যেখানে অগ্নিসংস্কার করা হবে সেখানে নিয়ে যেতে অনুমতি দিলেন | আমরা তাই করলাম , বাকি সকলে পিছে পিছে আসতে লাগলেন |  সেইদিন পূর্বেই বৃষ্টি হওয়াতে মঠ প্রাঙ্গন পিচ্ছিল হওয়ায় অতি সাবধানে বহন করে পূর্বে সজ্জিত চন্দন কাঠের চিতার উপরে স্থাপন করা হলো  |

 তারপর শ্রীশরৎ মহারাজ
উপস্থিৎ সকলকে বললেন ,  ""  তোমরা     বাণ্ডিল পাঁকাঠি আগুন  ধরিয়ে এই বেদিকে
                                      সাতবার প্রদক্ষিণ  করে
                                      শেষে খাটের নিচে
                         স্বামীজীর পায়ের তলায় জ্বলন্ত
                  আগুন রেখে প্রণাম করে চলে এস  |  ""

     তাঁর আদেশ মতো স্বামীজীর শরীরকে চন্দন কাঠে অগ্নি সংযোগ করে জ্বলন্ত চিতাকে বেষ্টন করে ভক্তেরা পাথরের মূর্তির মতো বসে রইল |  চিতার আগুন ক্রমশ লেলিহমান হয়ে  উর্ধমুখী অনেকগুলি  জিহ্বা বের করে ধূ ধূ করে জ্বলতে লাগল  |  সেসময়  মহাকবি গিরিশ ঘোষ , মাস্টার মহাশয় মহেন্দ্র গুপ্ত , শাঁখচুন্নী ( অক্ষয় কুমার সেন ) , জলধর সেন , বসুমতীর উপেন্দ্রনাথ মুখোপাধ্যায় প্রভৃতি ভক্তেরা বেলতলার কাছে রকে বসে এই মর্মান্তিক দৃশ্য দেখতে লাগলেন |

               গিরিশবাবু তো ভগ্নহৃদয়ে
         চিৎকার করে বলতে লাগলেন ,

                 ""  নরেন ! কোথায় তুমি বেঁচে থেকে
                    আমার কথা লোকের কাছে বলে
                        ঠাকুরের মহিমা প্রচার করবে -------
                       কিন্তু সে সাধে পোড়া বিধি হলো
                          বাদী , আমি  বুড়ো বেঁচে  রইলুম
                  তোমার এই দৃশ্য দেখবার  জন্য  ?
                        তুমি  তো  ঠাকুরের  ছেলে  ,
                     ঠাকুরের  কোলে  গিয়ে  উঠলে  ,
                    বল  দেখি  এখানে  আমাদের কি
                          দশায় ফেলে অকালে চলে
                              গেলে  ?  নিশ্চয়ই  আমাদের
                               কপাল  ভেঙ্গেছে  |  ""

এই কথা শুনে নিবেদিতা শোকচ্ছাস চেপে রাখতে পারলেন না | তিনি জ্বলন্ত চিতার কাছে গিয়ে চারদিক ঘুরতে লাগলেন |  পাথে তাঁর গাউনে আগুন লাগে , তাই মহারাজজীর নির্দেশে কানাই মহারাজ নিবেদিতার হাত ধরে দূরে গঙ্গার ধারে নিয়ে গিয়ে বসালেন ও  সাহস দিতে লাগলেন  | স্বামীজীর নারায়ণী শরীরটির নিম্নাংশ অনুকুল বায়ুর প্রভাবে অল্প সময়েই ভস্মিভুত হলো  |  কিন্তু আশ্চর্যের বিষয় , তাঁর বুকে , মুখে মাথায় আগুন  স্পর্শ না করায় সেই মুখভঙ্গি , আয়ত চোখ দুটির দৃষ্টি কী সুন্দর দেখাতে লাগল |  স্বামীজীর সন্ন্যাসী শিষ্য শ্রীনিশ্চয়ানন্দ নিকটের একটি গাছে উঠে শুকনো কাঠ সংগ্রহ করে জ্বলন্ত চিতার উপর সাজিয়ে দিতে লাগলেন |

     এই সময় শ্রীরাখাল মহারাজ আমাকে একটু তফাতে নিয়ে একটি দশটাকার নোট দিয়ে

 বললেন , ""  তুমি নিবারণকে সঙ্গে নিয়ে
                            গিরিশবাবুর নৌকায় ওপারে
                           বরানগর বাজার থেকে কিছু
                          সন্দেশ ও খাবার কিনে আনো |   
 কাল  রাত্তির থেকে সাধুরা কেউজল মুখে দেয় নি ------ আরউপস্থিৎ অনেক ভক্তদেরওখাওয়া হয় নি |  ""

 মহারাজের কথা মতো কাজ করতে যেতে দেখে বরানগরের এক ভক্ত বিপিন সাহা আরও পাঁচ টাকা দিয়ে আমাদের সঙ্গে ওপারে গিয়ে গরম লুচি , কচুরী ও সন্দেশ নিয়ে ঝুড়ি নিজের মাথায় বহন করে আমাদের সঙ্গে মঠে ফিরলেন |  এসে দেখলাম চিতা নিভিয়ে স্বামীজীর দেহাবশেষ সংগ্রহ করে সন্ন্যাসী ও ভক্তরা স্নান করে গঙ্গায় তর্পণ  করছেন |
 
             মাস্টার মহাশয় ( শ্রীম )আমাকে বললেন ,  ""  তুমি শব ছঁয়েছো ,  স্নান তর্পণ কর |   "" 

একথায় আমি বললাম ,   ""  সাধু  নারায়ণ  -------
                                   সেই নারায়ণী দেহ স্পর্শ
                        করাতে আমি অপবিত্র হয়েছি  ?
                       এই কাপড়েই  মহারাজের  আদেশে
                         ঠাকুরের ভোগের জিনিস বহন
                                 করে এনেছি  |  ""

আমার মনের ভাব বুঝতে পেরে স্বামী প্রেমানন্দজী বললেন  ,  ""  তোমার স্নান
                                       করবার  দরকার নেই  ,
                                   তোমার  মাথায়  গঙ্গাজল
                                  দিলুম  ,  ঠাকুরঘরে  খাবার
                                রেখে  এসে  তুমি  গঙ্গায়
                  স্বামীজীকে  তর্পণ  অঞ্জলি  দাও | ""
সমস্ত দিনের পর ঠাকুরের এই প্রথম  সান্ধ্য-জলপানি   ভোগ  ও. আরতি  হয়ে  গেলে  নিচের  তলায়  সংবেত  সাধু ও  ভক্তমণ্ডলীর মধ্যে চা , সরবৎ এবং প্রসাদ  বিতরিত হল  |
 স্বামীজীর  অন্তিম ইচ্ছাপূরণেরজন্য ৪ জুলাইয়ের পরদিনের অমাবস্যাতে রাতে বেলুড়মঠে শ্রীশ্রীকালীপূজা অনুষ্ঠান | বাইরের কাউকেই আমন্ত্রণ করা হয়নি  |কেবল স্বামীজীর ছোটভাই ভূপেন্দ্রনাথ মহাশয় এসেছিলেন |  মাখন মহারাজ নিবারণ ও আমাকে হোমের জন্য পনের সের বেল কাঠ আনার আদেশ দিলেন | সেই নির্দিষ্ট তিথিতে শনিবার বিকালে আমরা দুজন ঐ বেলকাঠ বহন করে আনলে মহারাজজী খুশী হয়ে উচ্চারণ করেন ,

  ""   চন্দ্রশেখর চন্দ্রশেখর চন্দ্রশেখর পাহি মাম্  |
        চন্দ্রশেখর চন্দ্রশেখর চন্দ্রশেখর রক্ষ মাম্  ||

    বাঁচালে বাবা  !  আজ এমন ঝড় বৃষ্টি দূর্যোগে শুকনো বেলকাঠ এনেছো  ----- মা তোমাদের মঙ্গল করুন  |  ""

      রাত দশটার পরে দোতলায় ঠাকুরঘরে শ্রীশ্রীকালী পূজা আরম্ভ হলো |  রামকৃষ্ণানন্দজীর পিতা প্রাচীন তান্ত্রিক সাধক  ঁঈশ্বরচন্দ্র চক্রবর্তী  মহাশয়  পূজকের আসন গ্রহন করেন  |  সাধূ  ব্রহ্মচারীরা  ঠাকুর  প্রণাম করে স্বামীজীর ঘরে  গিয়ে  বসলেন | সেদিন রাতে প্রসাদ পাবার পর আমরা তিনজন মঠেই থাকলাম  | রাত্রে মধ্যে মধ্যেই স্বামীজীর বৃদ্ধ শিষ্য নিত্যানন্দ স্বামীর সকরুণ  ক্রন্দন ধ্বনিতে  বেলুড় মঠ যেন মুখরিত হয়ে উঠল | রাত তিনটার পরে শ্রীশরৎ মহারাজ আমাদের জাগিয়ে উপরের ঠাকুর ঘরে যেতে বললেন |  উপরে ঠাকুর ঘরে গেলে  মহারাজজী আমাকে আচমন করে কিছুক্ষণ জপ করতে বললেন | কিছু পরে মহারাজজীর আদেশে সকলে নিচে বিরাট হোমকুণ্ডের চারদিকে বসে জপ করতে লাগলাম |  হোমক্রিয়া শেষ হলে যেখানে স্বামীজীর দেহ দাহ হয়েছে , সেখানে এসে সাতবার প্রদক্ষিণ করে প্রণাম করলাম এবং বেলতলায় বসে জপ করে ফিরে এসে ঠাকুর ঘরে প্রণামের পরে প্রসাদ গ্রহণ করলাম |

※※※ জয় স্বামীজী মহারাজজী কী জয় |
প্রণাম নাও হে অমর-আত্মা,ভারত-আত্মা স্বামীজী***

                       
                        ※※※※※
                     ※※※※※※※
                  ※※※প্রণাম※※※
               ※※※※※※※※※※※※
             ※※※※ভালবাসা※※※※
            ※※※※※※※※※※※※※※※※
           ※※※※※※※জানাই※※※※※※
           ※※※※※※※※※※※※※※※※※※
           ※※※※※※ বুদ্ধদেব ※※※※※※
           ※※※※※※※※※※※※※※※※※
            ※※※※※※※※※※※※※※※
            ※※※※※※※※※※※※
             ※※※※※※※※※※※※
               ※※※※※※※※※※※
                ※※※※※※※※※※※
                 ※※※※※※※※※※※
                  ※※※※※※※※※※
                   ※※※※※※※※※
                    ※※※※※※※※
                     ※※※※※※※
                       ※※※※※※
                        ※※※※※
                         ※※※※
                         ※※※
                        ※※







বিবেকানন্দর মায়ের দুঃখের জীবনি.....


শ্রীমতী ভুবনেশ্বরী দাসী। জগতবিখ্যাত সন্ন্যাসী বিবেকানন্দর জননী।
১৮৪১ সালে অভিজাত পরিবারে জন্ম। ছেলেবলায় মেমের কাছে ইংরাজি শিখেছিলেন। শিশু নরেন জননীর কাছেই প্রথম ইংরাজির পাঠ নেন। পরবর্তী কালে বিবেকানন্দর বিদেশি ভক্তদের সঙ্গে ইংরাজি তে কথাও বলেছেন। চরিত্রগুণে ছিলেন মহীয়সী। আর আক্ষরিক অর্থেই ছিলেন সর্বংসহা। এত সহ্যশক্তির পরীক্ষা ঈশ্বর আর কারোর কাছে নিয়েছেন কিনা জানিনা।

আদরে ও ঐশ্বর্যে লালিত বাবা মার একমাত্র সন্তান ভুবনেশ্বরীর সারা জীবন শুধু দুঃখের কাহিনী। দশ বছর বয়সে বিয়ে। ছটি কন্যা ও চার পুত্রের জননী। অতি অল্প বয়সে বৈধব্য। অপরিসীম অভাব। তারপর কখনো আদরের কন্যাদের আত্মহনন, প্রাণাধিক প্রিয় সন্তানের সন্ন্যাসী হয়ে যাওয়া। শরিকি মামলায় বিপর্যস্ত হয়ে স্বামীর ভিটে থেকে বিতাড়ন এবং প্রায় কপর্দকশূন্য হয়ে পড়া। 

দুর্ভাগ্যের এখানেই শেষ নয়। মধ্যমপুত্র মহেন্দ্রনাথ নিখোঁজ, কনিষ্ঠ ভূপেন্দ্রনাথ ইংরেজের বিরুদ্ধাচার করে জেলে এবং শেষ অব্দি মায়ের শেষ সম্বল গয়নাগুলো বেচে মার্কিন দেশে যাত্রা। এতকিছু নীরবে সহ্য করে নিঃসহায় অবস্থায় বিধবা মায়ের আশ্রয়ে জীবনের বাকী দিনগুলো কাটান।

১৯১১ সালের ২৫ শে জুলাই  মেনিনজাইটিস রোগে মৃত্যু। শেষকৃত্যে শ্মশানে উপস্থিত ছিলেন মেজছেলে মহেন্দ্রনাথ ও সিস্টার নিবেদিতা। কনিষ্ঠ ভূপেন্দ্রনাথ তখন আমেরিকায় নির্বাসিতের জীবন যাপন করছেন। আর বিশ্ববন্দিত সন্ন্যাসীপুত্র বিবেকানন্দ ন'বছর আগেই মহাসমাধিতে মগ্ন।

নীচে একটি ছবি দিলাম। নির্মম দারিদ্র্য, বিচ্ছেদ, আত্মীয়দের অপমান ও পুত্রকন্যা র অকালমৃত্যুতে শোকজর্জরিত বিবেকানন্দজননীর এই হৃদয়বিদারক ছবিটি ছেপেছিলেন ব্রহ্মানন্দ উপাধ্যায়, সন ১৩১৪ র বৈশাখ সংখ্যায়, স্বরাজ পত্রিকায়। 
ক্যাপশনে লেখা ছিল নিম্নরুপে...

"নরেন্দ্রর মাতার চিত্রও দিলাম। নরেন্দ্রর মাতা রত্নগর্ভা।.... আহা- মায়ের ছবিখানি দেখ-দেখিলে বুঝিতে পারিবে যে নরেন্দ্র মায়ের ছেলে বটে---আর মাতা ছেলের মা বটে "





আজকের দিনে ২৫ জুলাই,১৯১১ স্বামীজীর মা এই পৃথিবীর মায়া ত্যাগ করে অমৃতলোকে যাত্রা করেন  |প্রণাম গ্রহণ করুন বীরেশ্বর বিবেকানন্দের মা ভূবনেশ্বরী দেবী।
   এই প্রসঙ্গে খেতড়ি মহারাজকে লেখা স্বামীজীর একটি চিঠি মায়ের জন্য----
১ ডিসেম্বর,১৮৯৮, মঠ, বেলুড়, হাওড়া
মহারাজা,
আপনার তারবার্তা আমায় যে আনন্দ দিয়াছে তাহা বর্ণনাতীত| এমন বার্তা আপনার মত মহান ব্যক্তিরই যোগ্য |আমি কি চাই তাহা বিশদভাবে লিখিলাম |
কলকাতায় একটি ছোটখাটো বাড়ী নির্মাণের নুন্যতম খরচ আনুমানিক দশ হাজার টাকা |সংসার খরচের জন্য মাসিক একশত টাকা আপনি যে আমার মাকে পাঠাইয়া থাকেন তাহা তাঁহার পক্ষে যথেষ্ট | যদি আমার জীবদ্দশা পর্যন্ত আমার ব্যায় নির্বাহের জন্য আরও একশত টাকা পাঠাইতে পারেন তবে আমি বড়ই খুশী হইব ;কিন্তু এই বাড়তি একশত টাকা আপনাকে খুব বেশী দিন বহন করিতে হইবে না কেননা আমি বড়জোর আর দু-এক বৎসর বাঁচিব |আমি আর একটি ভিক্ষা এখানে চাহিব |মায়ের জন্য একশত টাকার সাহায্যটি সম্ভব হইলে আপনি স্হায়ী রাখিবেন | মহারাজা যেন সাধুর দুঃখী বৃদ্ধা মাতার প্রতি এই করুণা বর্ষণ করেন|••••••••••••••
যে -জগন্মাতার লীলা-খেলা এই বিশ্বচরাচর,যাঁহার হাতে আমরা যন্ত্রমাত্র----তিনি যেন আপনাকে সকল অমঙ্গল হইতে রক্ষা করেন |
ভগবানের নামে চিরদিন আপনার ----
বিবেকানন্দ





স্বামীজীর ধীরা মাতা ---Mrs.Ole Bull


          বর্তমান বেলুড়মঠ নির্মাণের জন্য একটা বিশাল অঙ্কের টাকা দিয়েছিলেন, এই মহিলা। বিবাহের দশ বছর পরেই তার স্বামীর মৃত্যু হয় ।

এর ১৪ বছর পর স্বামীজীর সঙ্গে সাক্ষাৎ হয় |স্বামীজী বলেছেন Most Spiritual Women.
জন্মসূত্রে অগাধ ঐশ্বর্যের অধিকারিণী হয়েও জাগতিক সুখ বিমুখ ছিলেন ।এঁর একমাত্র কন্যার নাম ওলিয়া |  ইনি মৃত্যুর আগে উইল করে যান যার একটা বড় অংশই শ্রীরামকৃষ্ণ ভাবাদর্শের উদ্দেশ্যে দান করেছিলেন ।

মামলা করেছিলেন,মেয়ে ওলিয়া মৃতা মায়ের উইলের যথার্থতা নিয়ে।

কিন্তু মামলায় তার পরাজয় হয় আর ওলিয়ার মৃত্যুও হয় মামলার রায় যেদিন প্রকাশিত হয়, সেদিনই আকস্মিকভাবে ।

শ্রীরামক়ষ্ণ মিশনে তিনি Saint Sara নামে পরিচিত | 

বাইরের ঘটনা সবসময় কোন মানুষের সঠিক পরিচয় দেয় না।জীবনের উচ্চতম আদর্শকে সামনে রেখে তিলে তিলে নিজেকে উৎসর্গ করেছেন যে রমণী, তিনিই স্বামীজীর ধীরামাতা --- শ্রীমতী সারা চ্যাপম্যান বুল |




🔴🔴🔴🔴🔴   মহাপ্রাণ   স্বামীজী   🔴🔴🔴🔴🔴  

                 বাগবাজারে বলরাম বসুর বাড়িতে বেদ বেদান্তের গভীর আলোচনায় মেতে রয়েছেন স্বামীজী তাঁর শিষ্য শরচ্চন্দ্র চক্রবর্তীকে নিয়ে ।  এমন সময় সেখানে হাজির হলেন ভক্তভৈরব গিরিশচন্দ্র ঘোষ ।  গিরিশবাবুর দিকে তাকিয়ে স্বামীজী বললেন, " কি জি. সি., এ-সব তো কিছু পড়লে না, কেবল কেষ্টু-বিষ্টু নিয়েই দিন কাটালে । "  গিরিশবাবু বললেন, " কি আর পড়ব ভাই ?  অত অবসরও নেই, বুদ্ধিও নেই যে, ওতে সেঁধুব ।  তবে ঠাকুরের কৃপায় ও-সব বেদবেদান্ত মাথায় রেখে এবার পাড়ি মারব ।  তোমাদের দিয়ে তাঁর ঢের কাজ করাবেন বলে ও-সব পড়িয়ে নিয়েছেন, আমার ও-সব দরকার নেই । "  এ কথা বলে গিরিশবাবু প্রকাণ্ড ঋগ্বেদ গ্রন্থখানিকে বারবার প্রণাম করে বলতে লাগলেন ------ " জয় বেদরূপী শ্রীরামকৃষ্ণের জয় । "
                  এবার স্বামীজীর দিকে তাকিয়ে গিরিশবাবু বলে উঠলেন, " হাঁ, হে নরেন, একটা কথা বলি ।  বেদবেদান্ত তো ঢের পড়লে, কিন্তু এই যে দেশে ঘোর হাহাকার, অন্নাভাব, ব্যভিচার, ভ্রূণহত্যা, মহাপাতকাদি চোখের সামনে দিনরাত ঘুরছে, এর উপায় তোমার বেদে কিছু বলেছে ?  ঐ অমুকের বাড়ির গিন্নি, এককালে যার বাড়িতে রোজ পঞ্চাশখানি পাতা পড়ত, সে আজ তিন দিন হাঁড়ি চাপায়নি ;  ঐ অমুকের বাড়ির কুলস্ত্রীকে গুণ্ডাগুলো অত্যাচার করে মেরে ফেলেছে ;  ঐ অমুকের বাড়িতে ভ্রূণহত্যা হয়েছে, অমুক জোচ্চুরি করে বিধবার সর্বস্ব হরণ করেছে ------- এ-সকল রহিত করবার কোন উপায় তোমার বেদে আছে কি ? "   গিরিশবাবু এভাবে সমাজের বিভীষিকাময় ছবিগুলো চোখের সামনে তুলে ধরাতে স্বামীজী নির্বাক হয়ে রইলেন ।  জগতের দুঃখকষ্টের কথা ভাবতে ভাবতে স্বামীজীর চোখে জল এল ।  মনের ভাব কাউকে জানতে দেবেন না বলে তাড়াতাড়ি উঠে বাইরে চলে গেলেন ।
                     গিরিশবাবু শিষ্যকে লক্ষ্য করে বললেন, " দেখলি বাঙাল, কত বড় প্রাণ !  তোর স্বামীজীকে কেবল বেদজ্ঞ পণ্ডিত বলে মানি না ;  কিন্তু ঐ যে জীবের দুঃখে কাঁদতে কাঁদতে বেরিয়ে গেল, এই মহাপ্রাণতার জন্য মানি ।  চোখের সামনে দেখলি তো মানুষের দুঃখকষ্টের কথাগুলো শুনে করুণায় হৃদয় পূর্ণ হয়ে স্বামীজীর বেদবেদান্ত সব কোথায় উড়ে গেল ! "


🔴🔴🔴🔴জয়  স্বামীজী  🔴🔴🔴🔴






১৮৬৩ সালের পৌষ সংক্রান্তি কৃষ্ণা সপ্তমী তিথিতে কলকাতায় সিমুলিয়ায় দত্ত বংশে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতার নাম বিশ্বনাথ দত্ত, জননীর নাম ভুবনেশ্বরী দেবী।

১৮৬৩ সালের ১২ই জানুয়ারী পৌষ সংক্রান্তির পুণ্যপ্রভাতে সূর্যোদয়ের ৬ মিনিট  পূর্বে, ৬ টা ৩৩ মিনিট ৩৩ সেকেন্ডে দেবী ভুবনেশ্বরী বিশ্ববিজয়ী পুত্রের  জন্ম দিয়েছিলেন।

বিশ্বনাথ দত্ত ও ভুবনেশ্বরী দেবীর মোট দশটি সন্তান-- 
 ১) পুত্র শৈশবে মৃত। 
 ২) কন্যা শৈশবে মৃত। 
 ৩) হারামণি ২২ বৎসর জীবিত ছিলেন। 
 ৪) স্বর্ণময়ী ৭২ বৎসর জীবিত ছিলেন। 
 ৫) কন্যা শৈশবে মৃত। 
 ৬) নরেন্দ্রনাথ ৩৯ বৎসর ৫ মাস ২৪ দিন জীবিত ছিলেন। 
 ৭) কিরণবালা ১৬ বৎসর জীবিত ছিলেন। 
 ৮) যোগীন্দ্রবালা ২২ বৎসর জীবিতছিলেন। 
 ৯) মহেন্দ্রনাথ ৮৭ বৎসর জীবিত ছিলেন। 
 ১০) ভূপেন্দ্রনাথ ৮১ বৎসর জীবিত ছিলেন।

বিরজাহোম করে সন্ন্যাসগ্রহণ কালে নরেন্দ্রনাথের নতুন নাম হয় বিবিদিষানন্দ।  পরিব্রাজক জীবনে তিনি সচ্চিদানন্দ ও বিবেকানন্দ নামও ব্যবহার করেছেন।  শেষোক্ত নামেই তিনি বিশ্ববিখ্যাত হন।

ॐ নমঃ শ্রীযতিরাজায় বিবেকানন্দসূরয়ে ।
 সচ্চিৎ সুখস্বরূপায় স্বামিনে তাপহারিণে ।।


শ্রীমান্, সন্ন্যাসিরাজ, সচ্চিদানন্দস্বরূপ, ত্রিতাপহারী, সর্বজ্ঞ স্বামী বিবেকানন্দকে প্রণাম করি।




#আমি_কচুরি_সম্প্রদায়ভুক্ত_সন্ন্যাসী !
স্বামী বিবেকানন্দ।


বাঙালি মানেই ভোজনরসিক। সেই তালিকায় মধ্যে রয়েছেন বহু মনিষীও। নেতাজীর যেমন লক্ষ্মীনারায়ণের চপ না হলে রাজনৈতিক মিটিং জমত না। রবীন্দ্রনাথ আবার তিনি খান আর নাই খান তাঁর পাতে বিভিন্ন ধরনের খাবার সাজানো রয়েছে এটা দেখতে পছন্দ করতেন। রামকৃষ্ণদেব আবার সারদামণির হাতের ভাত আর ঝোলেই তৃপ্তি পেতেন। তাঁরই শিষ্য বিবেকানন্দ, তিনি আবার কচুরি খেতে খুব পছন্দ করতেন।

কলকাতার বিভিন্ন দোকান থেকে তিনি কচুরি আনিয়ে তো খেতেন। লন্ডনে তাঁকে কে বানিয়ে দেবে কচুরি তরকারি ? তোয়াক্কা করতেন না। বিদেশে বাড়ির বেসমেন্টে বসেই বানিয়ে ফেলতেন। তারপর তৃপ্তি করে তা উদরস্থ করতেন। ভারত ভ্রমণে বেরিয়েছেন স্বামীজি। পথে এক ব্যক্তি তাঁকে জিজ্ঞাসা করে বসে, “আচ্ছা, আপনি কোন সম্প্রদায়ের সন্ন্যাসী? পুরী না গিরি?” বিবেকানন্দ বরাবরই কথার প্যাঁচে পটু ছিলেন। তাঁর অসাধারন উত্তরে কাবু প্রশ্নকর্তা। তিনি বলেন, ” পুরী গিরি দুটোর কোনোটাই না, আমি কচুরি সম্প্রদায়ভুক্ত।” এমনই ছিল তাঁর কচুরি প্রেম।

মৃত্যুর দিনেও স্বামী বিবেকানন্দ দুপুরে ভাত আর ইলিশ মাছের ঝোল খেয়েছিলেন। তারপর বলেছিলেন যে “একাদশীতে না খেয়ে পেটটা কেমন হয়ে গিয়েছিল। স্বস্তি পেলাম।” কিন্তু সব কিছু ছাড়িয়ে তাঁর খাদ্য তালিকায় সবার উপরে থাকত কচুরি আর তরকারি। এটা না খেলে তাঁর দিন যেত না। সমস্ত মায়া ত্যাগ করা মানুষটির কচুরি দেখলে লোভ সংবরন করতে মুশকিলে পড়তেন। কচুরি-আলু ছেঁচকি বানানোর কেউ না থাকলে নিজেই বানিয়ে খেয়ে নিতেন। এর প্রতি স্বামীজির দুর্বলতা মারাত্মক ছিল।

শুধু খাওয়া নয় রান্না করতেও ভালোবাসতেন। মাংসের নানা পদ তাঁর প্রিয় ছিল। ফাউল ছিল তার মধ্যে অন্যতম। শিকাগো যাত্রার আগে তৎকালীন বোম্বাইতে স্বামীজি ১৪ টাকা খরচ করে এক হাঁড়ি পোলাও রান্না করে শিষ্যদের খাইয়েছিলেন। কই মাছের তরকারি তাঁর প্রিয় খাবারের আরও একটি।

তখন তিনি শুধুই নরেন্দ্রনাথ দত্ত। পড়াশোনা করছেন। পেটুক এবং খাদ্যরসিক বন্ধুদের নিয়ে তৈরি করেছিলেন ‘পেটুক সংঘ’। তাদের কাছে ঘোষণা করেন, “দেখবি কলকাতা শহরে গলির মোড়ে মোড়ে পানের দোকানের মতো চপ-কাটলেটের দোকান হবে।” এখন সত্যি শহরের প্রত্যেক মোড়ে একটি অন্তত চপ বা তেলেভাজার দোকান থাকেই। কিছু না হোক মিষ্টির দোকানের শিঙারা তো পাওয়াই যায়। খেতে পছন্দ করতেন রসগোল্লা এবং আইসক্রিমও।


স্বামীজির আমেরিকায় থাকাকালীন প্রাতঃরাশের তালিকাও ছিল বেশ লম্বা। প্রথমেই খেতেন কমলালেবু এবং আঙুর। এরপরেই খেয়ে নিতেন ডবল ডিমের পোচ। এরপরে দুই পিস টোস্ট এবং ক্রিম ও চিনি সহকারে দুই কাপ কফি। সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার মধ্যে স্যুপ এবং মাংস বা মাছের সঙ্গে রাতের আহার সেরে নিতেন। এরপর কোনও একটি মিষ্টির পদ থাকতই। আর প্রত্যেকবার খাবার শেষে ধূমপান ছিল অতি আবশ্যক।






স্বামী বিবেকানন্দের বাংলাদেশ (তৎকালীন পূর্ববঙ্গ) ভ্রমনের একাংশ:


১৯০১ সালের ১৮ মার্চ জলপথে ঢাকার উদ্দেশ্যে রওনা হন সন্ন্যাসী বিবেকানন্দ। ভ্রমণসঙ্গী ছিলেন তাঁর মা ও কয়েকজন বন্ধু। পরবর্তীতে কিছু আত্মীয় স্বজনও এসে যুক্ত হন তাদের সাথে । পূর্ববঙ্গে তিনি ১৫ দিনের বেশি অবস্থান করেছিলেন এবং ঢাকায় দুটি ভাষনও প্রদান করেন৷ 

জগন্নাথ কলেজে প্রদত্ত প্রথম ভাষণের শুরুতে বলেন, "আমি নানা দেশ ভ্রমণ করেছি-কিন্তু আমি কখনো নিজের জন্মভূমি বাংলাদেশ বিশেষভাবে দর্শন করিনি। জানতাম না, এ দেশের জলে স্থলে সর্বত্র এত সৌন্দর্য ;কিন্তু নানা দেশ ভ্রমণ করে আমার এই লাভ হয়েছে যে, আমি বাংলার সৌন্দর্য বিশেষভাবে উপলব্ধি করতে পারছি।"

ঢাকায় অবস্থানকালে তাঁর ভ্রমণ অভিজ্ঞতা জানিয়ে লন্তনে অবস্থানরত মিসেস ওলি বুলকে স্বামীজি দুটি চিঠি পাঠান (২০ মার্চ ও ২৯ মার্চ)। আমার প্রিয় মা সম্বোধন করে তিনি লেখেন,

" শেষ পর্যন্ত আমি পূর্ব বাংলায় এসেছি। এখানে আমি এবারই প্রথম এবং কখনো জানতাম না বাংলা এত সুন্দর। এখানকার নদীগুলো আপনার দেখা উচিৎ - নিয়মিত পরিষ্কার জলের প্রবাহ এবং সবকিছু এত সবুজ। গ্রামগুলো সমগ্র ভারতের মধ্যে সবচেয়ে পরিষ্কার ও সুন্দর।"

ঢাকার জীবন সম্পর্কে লিখেছেন, " I am peaceful and calm. I'm finding every day the old begging and trudging life is the best for me after all."

দ্বিতীয় চিঠিতে লেখেন," এখানে ব্রহ্মপুত্র নদে বিরাট একটি পবিত্র স্নান আছে। যখনই গ্রহ-নক্ষত্রের সংযোগ হয়, যা খুবই কদাচিৎ  হয়ে থাকে,তখনই নদের একটি নির্দিষ্ট স্থানে বিশাল লোকের সমারোহ হয়ে থাকে। এবছর এখানে হাজার হাজার লোকের সমারোহ হয়েছিল; মাইলব্যাপী নদটি নৌকাদ্বারা পরিপূর্ণ হয়েছিল।.... নদটি যদিও স্নানের স্থানে প্রায় একমাইল প্রশস্ত, তবে স্থানটি কর্দমাক্ত। "

৫ জুলাই, মেরি হলকে চিঠিতে স্বামীজি লেখেন," তুমি জানো, আমার এই দেশকে বলা হয় জলের দেশ। কিন্তু এর তাৎপর্য পূর্বে কখনো উপলব্ধি করিনি৷ পূর্ববঙ্গের নদীগুলো যেন তরঙ্গসঙ্কুল স্বচ্ছ জলের সমুদ্র, নদী মোটেই নয় - সেগুলি এত দীর্ঘ যে, স্টীমার সপ্তাহের পর সপ্তাহ এদের মধ্যে দিয়ে চলতে থাকে। "


  *অচেনা অজানা  বিবেকানন্দ*

স্বামীজির মহাপ্রয়াণ হয় ৩৯ বছর বয়েসে ১৯০২ সালে । বেলুড় মঠে তখন রাত ৯ টা ১০ মিনিট। তখন বেলুড় মঠে বা তার পার্শ্ববর্তী গ্রামে বিদ‍্যূৎ ছিল না । কিন্তু টেলিফোন ছিল তবুও কোন সংবাদমাধ্যম আসেনি এবং পরের দিন বাঙ্গলাদেশের কোন কাগজেই বিবেকানন্দের মৃত্যূ সংবাদ প্রকাশিত হয়নি,এমন কি  কোন রাষ্ট্রনেতা বা কোন বিখ্যাত বাঙ্গালী কোন শোকজ্ঞাপনও করেননি । 
ভাবতে পারেন ???

স্বামী বিবেকানন্দ তাঁর স্বল্প জীবনে অপমান, অবহেলা বহু পেয়েছেন,উপেক্ষিত হয়েছেন বার বার। পিতার মৃত্যূর পর স্বজ্ঞাতির সঙ্গে কোর্ট কাছারী করতে হয়েছে তাঁকে ।বহু বার হাজিরা দিয়েছেন কাঠগড়ায় l

 নিদারুণ দরিদ্রের সংসারে সকালে উঠে অফিস পাড়া ঘুরে ঘুরে চাকরির খোঁজে বেরুতেন । দিনের পর দিন মা কে বলতেন মা আজ রাতে বন্ধুর বাড়িতে খেতে যাবো। প্রায় দিন দেখতেন সংসারে চাল,ডাল,নুন ,তেল কিছুই নেই কিন্তু ভাই ও বোন নিয়ে 5 টা পেটের খাবার কি ভাবে জুটবে ? মুদির দোকানে ধার করে মাকে এক- দুই দিনের চাল ডাল দিয়ে ... মা কে বলতেন আমার রান্না কোরো না... মা ! দিন দুই বন্ধুর বাড়িতে নিমন্ত্রণ আছে কিন্তু..কোথায় নিমন্ত্রণ ? .. আনাহার আর অর্ধপেটে থাকতেন তৎ কালীন নরেন্দ্র .........

 ভাবা যায় !!!!!!!

চরম দারিদ্রের মধ্যে সারা জীবনটাই টেনে নিয়ে গেছেন । ২৩ বছর বয়েসে শিক্ষকের চাকরি পেলেন মেট্রোপলিটন স্কূলে । যাঁর প্রতিষ্ঠাতা বিদ্যাসাগর মশাই আর হেডমাস্টার বিদ্যাসাগরের জামাতা । জামাতা পছন্দ করতেন না নরেন্দ্রনাথ দত্তকে .. শ্বশুরকে বলে..." *খারাপ পড়ানোর অপরাধে"* বিদ‍্যালয় থেকে তাড়িয়ে দিলেন বিবেকানন্দকে । অথছ, যাঁর জ্ঞান,বুদ্ধি,ব্যুৎপত্তি তর্কাতীত, অন্তত সেই সময়েও।
 আবার বেকার বিবেকানন্দ। বিদেশেও তাঁর নামে এক বাঙ্গালি গুরু প্রচার করেন .. বিবেকানন্দ বেশ কয়েকটি বৌ ও দশ -বারো ছেলে পুলের পিতা ও এক আস্ত ভন্ড ও জুয়াখোর। ......

দেশে ও বিদেশে অর্ধপেটে বা অভুক্ত থেকেছেন দিন থেকে দিনান্তে.... 

চিঠিতে লিখেছিলেন :- 

"-কতবার দিনের পর দিন অনাহারে কাটিয়েছি । মনে হয়েছে আজই হয়ত মরে যাবো ... জয় ব্রহ্ম বলে উঠে দাঁড়িয়েছি .... বলেছি . ..আমার ভয় নেই,নেই মৃত্যূ, নেই ক্ষুধা, আমি পিপাসা বিহীন । জগতের কি ক্ষমতা আমাকে ধ্বংস করে ?" ...

অসুস্থ বিবেকানন্দ বিশ্ব জয় করে কলকাতায় এলে তাঁর সংবর্ধনা দিতে বা সংবর্ধনা সভা তে আসতে রাজি হয় নি অনেক বিখ্যাত বাঙ্গালী ( নাম গুলি অব্যক্ত রইল) শেষে প্যারিচাঁদ মিত্র রাজি হলেও ... তিনি বলেছিলেন .. ব্রাহ্মণ নয় বিবেকানন্দ । ও কায়েত... তাই সন্ন্যাসী হতে পারে না , আমি ওকে brother বিবেকানন্দ বলে মঞ্চে সম্বোধন করবো । 
১৮৯৮, বিদেশের কাগজে তাঁর বাণী ও ভাষণ পড়ে আমেরিকানরা অভিভূত আর বাঙ্গালীরা !
সেই  বছরই অক্টোবরে অসুস্থ স্বামীজি কলকাতার বিখ্যাত ডক্টর রসিকলাল দত্তকে দেখাতে যান,(চেম্বার- 2 সদর স্ট্রিট। কলকাতা যাদুঘরে পাশের রাস্তা )। রুগী বিবেকানন্দ কে দেখে সেই সময় 40 টাকা ও ঔষুধের জন্যে 10 টাকা মানে আজ ২০২০র হিসাবে প্রায় ১৬০০০ টাকা নিলেন বিবিধ রোগে আক্রান্ত বিশ্বজয়ী দরিদ্র সন্ন্যাসীর কাছ থেকে . বেলুড় মঠের জন্যে তোলা অর্থ থেকে স্বামী ব্রহ্মনন্দ এই টাকা বিখ্যাত বাঙ্গালী(?) ডক্টর রসিকলাল কে দিয়েছিলেন। ..

আরও আছে .........!!!

 বিবেকানন্দের মৃত্যূর কোন ফটো নেই । এমনকি বীরপুরুষের কোন ডেথ সার্টিফিকেটও নেই কিন্তু সে সময় বালি - বেলুড় মিউনিসিপালিটি ছিলো। 

 আর এই municipality বেলুড় মঠে প্রমোদ কর বা amusement tax ধার্য করেছিলো ।
বলা হয়েছিল ওটা ছেলে ছোকরাদের আড্ডার ঠেক আর সাধারণ মানুষ বিবেকানন্দকে ব্যঙ্গ করে মঠকে বলতো .. "বিচিত্র আনন্দ" বা "বিবি- কা আনন্দ" । ( মহিলা /বধূ / ... নিয়ে আনন্দ ধাম)। এই ছিলো তৎকালীন মুষ্টিমেয় বাঙ্গালীদের মনোবৃত্তি l 

সাধে কি শেষ সময় বলে গিয়েছিলেন- " *একমাত্র আর একজন বিবেকানন্দই বুঝেতে পারবে যে এই বিবেকানন্দ কি করে গেল।"* 

ঠাকুরের ছবি


ঠাকুরের ছবি তোলার প্রসঙ্গে 





একদিন স্বামী অখণ্ডানন্দ মহারাজ কথাচ্ছলে আমাদের বলেছিলেন - "ঠাকুরের যে ছবি পূজা হয়, তার সম্বন্ধে কিছু জানিস?" আমরা বিশেষ কিছু জানি না বলাতে তিনি বলেন : "বরানগরের ভক্ত ভবনাথ ( স্বামীজীর বন্ধু ) ঠাকুরের ফটো তুলতে চায়। একদিন অনেক অনুরোধ করে। পরদিন বরানগর থেকেই এক ফটোগ্রাফার সঙ্গে নিয়ে এসেছে বিকেলের দিকে। ঠাকুরকে প্রথমে রাজি করাতে পারেনি। ঠাকুর রাধাকান্তের মন্দিরের দিকে চলে গেলেন।

ইত্যবসরে স্বামীজী এসে পড়েছেন। সব শুনে বললেন, "দাঁড়া, আমি সব ঠিক করছি।" এই বলে রাধাকান্তের মন্দিরের উত্তরদিকে রকের ওপর যেখানে ঠাকুর বসেছিলেন, সেখানে গেলেন ও তাঁর সঙ্গে ভগবৎ-প্রসঙ্গ আরম্ভ করলেন। ঠাকুর সমাধিস্থ হয়ে গেলেন। স্বামীজী উঠে গিয়ে তাদের ডেকে নিয়ে এসে বললেন, "তাড়াতাড়ি ক্যামেরা ফিট কর।"
সমাধিতে ঠাকুরের শরীর একটু হেলে গিয়েছিল। ক্যামেরাম্যান ঠাকুরের চিবুক ধরে সোজা করে দিতে গেছে, চিবুক ধরামাত্র ঠাকুরের শরীর হালকা কাগজের মতো হাতের সঙ্গে উঠে পড়েছে। তখন স্বামীজী বললেন "ওকি করছিস, শীঘ্র শীঘ্র ক্যামেরা ফিট কর।" ক্যামেরাম্যান যথাসম্ভব তাড়াতাড়ি ফটো তুলে নিল। এই ঘটনা ঠাকুর কিছুই জানতেন না । কয়েকদিন পরে ভবনাথ যখন প্রিন্ট করা ছবি নিয়ে এল,  ঠাকুর দেখে বললেন, "এ মহাযোগের লক্ষণ, এই ছবি কালে ঘরে ঘরে পূজা হবে।”
           স্বামী নির্বাণানন্দ।





অনেকের বাড়িতেই এই ছবিটা দেখতে পাওয়া গেলেও কিন্ত অনেকেই সম্ভবত এই ছবির পেছনের আসল রহস্যটা জানেন না। 

শ্রীরামকৃষ্ণ সাধারণত কাউকে নিজের ছবি তুলতে দিতেন না। তিনি সেটা পছন্দ করতেন না। কিন্তু ঠাকুরের যে মহান ছবিগুলো তোলা হয়েছিল তারমধ্যে এই ছবিটা ভীষণ রহস্যময়। ছবিটাতে দেখা যাচ্ছে ঠাকুর তাঁর ডান হাত ঊর্ধ্বে করে এবং বাম হাত বুকের কাছে রেখে এক মুদ্রায় দাঁড়িয়ে আছেন এবং পেছনে একজন তাঁকে ধরে আছেন। চলুন জেনে নেওয়া যাক এই ছবির পেছনের রহস্যটা।

আসলে ঠাকুর দাঁড়িয়ে রয়েছেন মৃগ মুদ্রাতে। এই ছবিটা তোলার ব্যবস্থা করেছিলেন শ্রীযুক্ত কেশব চন্দ্র সেন মহাশয় এবং ছবিটা তোলাও হয়েছিল তাঁরই ভবনে। সেই সময়ে কীর্তনের আসরে ঠাকুরের সমাধি ভাব আসে। উক্ত ছবিটাতে ঠাকুর রয়েছেন সম্পূর্ণ সমাধিস্থ অবস্থায় এবং তাঁকে ধরে রয়েছেন তাঁর নিজের ভাগ্নে হৃদয়রাম মুখোপাধ্যায়।

ছবিটাতে দেখা যায় ঠাকুরের দুই হাতের এক অনন্য ভঙ্গী। কিন্তু কি রহস্য রয়েছে এর পেছনে? পরে তাঁর শিষ্য স্বামী প্রেমানন্দজীর লেখা থেকে জানা যায় যে ঠাকুরের উর্ধমুখী ডান হাতটা আসলে বোঝায় “পরমাত্মা”-কে এবং বাম হাতটা বোঝায় এই “বিশ্ব সংসার”-কে। এর অর্থ এ জগতের সব কিছুই ক্ষণস্থায়ী, সবাই পর, সবাইকেই অবশেষে মিলতে হবে পরমাত্মাতে, কেউ এ ব্রহ্মান্ডের কিছুই নিয়ে যেতে পারবেনা।

‌(সংগৃহীত)

🙏🌹🙏🌹🙏🌹🙏🌹🙏



শশী মহারাজকে লেখা স্বামী বিবেকানন্দের চিঠি 


✉️ Math, Belur,
Dist., Howrah,
3rd June, 1901.

My Dear Shashi,
[Swami Ramakrishnanda]

Reading your letter I felt like laughing, and also rather sorry. The cause of the laughter is that you had a dream through indigestion and made yourself miserable, taking it to be real. The cause of my sorrow is that it is clear from this that your health is not good, and that your nerves require rest very badly.

Never have I laid a curse on you, and why should I do so now? All your life you have known my love for you, and today are you doubting it? True, my temper was ever bad, and nowadays owing to illness it occasionally becomes terrible — but know this for certain that my love can never cease.

My health nowadays is becoming a little better. Have the rains started in Madras? When the rains begin a little in the South, I may go to Madras via Bombay and Poona. With the onset of the rains the terrible heat of the South will perhaps subside.

My great love to you and all others. Yesterday Sharat returned to the Math from Darjeeling — his health is much better than it was before. I have come here after a tour of East Bengal and Assam. All work has its ups and downs, its periods of intensity and slackness. Again it will rise up. What fear? ...

Whatever that may be, I say that you stop your work for some time and come straight back to the Math. After you have taken a month's rest here, you and I together will make a grand tour via Gujarat, Bombay, Poona, Hyderabad, Mysore to Madras. Would not that be grand? If you cannot do this, stop your lectures in Madras for a month. Take a little good food and sleep well. Within two or three months I shall go there. In any case, reply immediately as to what you decide to do.

Yours with blessings,
Vivekananda
(The Complete Works of Swami Vivekananda/Volume 5/Epistles - First Series/CIV Shashi)


ওম (OM) কথার অর্থ : 


জেনে নিন ওম ( OM )এর তাৎপর্য
ওম সনাতন ধর্মে অনুসৃত প্রতীক চিহ্নের মধ্যে অত্যন্ত্ গুরুত্বপূর্ন চিরন্তন চিহ্ন এবং এই শব্দের ধ্বনি ধ্যানের জন্য ব্যাবহৃত হয়ে থাকে । এছাড়া সকল ধরনের প্রার্থনার প্রথমে ওম শব্দ উচ্চারন করা হয় । মূলত ওম শব্দ মহাবিশ্ব ও প্রকৃত বাস্তবতাকে নির্দেশ করে থাকে । ওম শব্দ দিয়ে ভগবানের তিনটি প্রকৃতি অর্থাৎ ব্রহ্মা , বিষ্ণু এবং মহেশ্বর নির্দেশ করে থাকে ।
স্বামী বিবেকানন্দের মতে, ওঁ-কার “সমগ্র ব্রহ্মাণ্ডের প্রতীক, ঈশ্বরেরও প্রতীক।

ধর্মীয় চিহ্ন হলেও ব্যবহারিক জীবনে ওঁ-কারের প্রয়োগ আরও ব্যাপক। প্রত্যেকটি মন্ত্র ওঁ-কার দিয়ে শুরু হয়। চিঠিপত্রের শুরুতেও কেউ কেউ ওঁ-কার লিখে থাকেন। মন্দির, ঠাকুরঘর প্রভৃতি ধর্মীয় স্থানের প্রতীকচিহ্ন রূপেও ওঁ-কার ব্যবহৃত হয়। শাস্ত্রীয় সঙ্গীত , যোগব্যায়ামে ওম দিয়ে শুরু হয়







ঠাকুর রামকৃষ্ণদেবের সাথে স্বামীজির কথপোকথন


নরেন এসে শক্ত হাতে ধরছে ঠাকুরকে। বললে, কেমন আপনার মা এইবার দেখবো। তাকে বলুন আপনার গলার ব্যাথা  সারিয়ে দিতে। 
তোকে বলছি না যে মন সচ্চিদানন্দে অর্পণ করেছি, তা এই হাড়মাসের খাঁচার মধ্যে আনতে পারব না।
ও সব কথা শুনব না কিছুতেই। বলতেই হবে আপনাকে। সন্তানের ব্যথা হরন করে না সে কেমন জননী।
ঠাকুর  কথা কন না, আবিষ্টের মতো তাকিয়ে থাকেন। 
আপনি বললে নিশ্চয় শুনবে। নরেন আবার তাড়া দিল ; আপনি কিছু খেতে পাচ্ছেন না এই কষ্ট আর আমরা দেখতে পাচ্ছি না। 
ওরে ও - সব কথা যে মুখ দিয়ে বেরোয় না। 
আমাদের জন্যে বার করতেই হবে।শুনব না কিছুতেই। নরেন দৃঢ়স্বরে বললে, যেখানে একটা মুখের কথা বললেই কষ্টের উপশম হয়, কেন আপনি বলবেন না? আপনার জন্য বলতে বলছি না, আমাদের জন্য বলুন, আমাদের কষ্টের লাঘবের জন্যে। যাতে অন্তত একটু খেতে পারেন তাই চেয়ে নিন। আপনি খেতে পাচ্ছেন না আর আমারা দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে তাই দেখছি, এ কষ্ট সহনাতীত। 
ঠাকুর উঠলেন। বললেন, দেখি। যখন বলছিস এত করে। দেখি বলতে পারি কিনা। 
ঠাকুর আঙুল দিয়ে গলার ঘা ইঙ্গিত করলেন। বললেন, সরল শিশুর মত; 
মা, এইটের দরুন কিছু খেতে পারছি না যাতে দুটো খেতে পারি তাই করে দে।
মা বুঝি পার্থনা শুনলেন। উজ্জ্বলনয়নে হেসে কি যেন বললেন ঠাকুরের কানে- কানে। মন্দির থেকে ফিরে চললেন ঠাকুর। নরেন ব্যস্তসমস্ত হয়ে এগিয়ে এল। কি, বললেন মাকে? দীপ্তিদ্রুত  তীরের মতন তার প্রশ্ন। 
বললুম।
কি বললেন? 
বললুম, কিছু  খেতে পারছি না।যাতে দুটো খেতে পারি তাই করে দে।
শুনে মা কি বললেন?
তোদের সবাইকে দেখিয়ে দিলেন। বললেন, কেন, তোর একমুখ বন্ধ হয়েছে তো কি হয়েছে!  তুই  তো এদের শতমুখে খাচ্ছিস।লজ্জায় আর কথাটি কইতে পারলুম না। 
নরেনের মাথাও হেঁট হল।


জয় ঠাকুর।


আত্মারামের কৌটো
---------------------------------------------
ছবিতে যে রূপার তৈরী শিবলিঙ্গটি দেখা
 যাচ্ছে, ওর মধ্যেই আছে শ্রীরামকৃষ্ণদেবের
 পবিত্র অস্থিভস্ম, ঠাকুরের অস্থিভস্ম অল্প
 অল্প পরিমাণে বহু মঠে ছড়িয়ে আছে, যেমন বেলুড় মঠ, চেন্নাই মঠ, মুম্বাই, ভুবনেশ্বর,
শিলং, কাশী, বৃন্দাবন, রাজকোট,
জামতাড়া, কামারপুকুর, যোগোদ্যান,
উদ্বোধন, জয়রামবাটী ইত্যাদি আশ্রমে।

এছাড়াও ঢাকা ও সিঙ্গাপুরেও রয়েছে এই অস্থিভস্ম।

বেলুড় মঠে ঠাকুরের বেদীতে প্রোথিত আছে এর এক অংশ, অপরাংশ সযত্নে রক্ষিত আরেকটি বিশেষ জায়গায়, বছরের বিশেষ বিশেষ দিনে এটি মূল গর্ভগৃহে এনে পূজা করা হয় ।


ছবিতে যে শিবলিঙ্গটি, এটিই সেই অস্থিভস্মের অপরাংশের আধার।






আজ ২রা মে,একটি বিশেষ দিন। একে ঐতিহাসিক দিনও বলা যেতে পারে। ১৮৮৩ খ্রীষ্টাব্দের এই দিনটিতে মহামিলন ঘটে দুই ঠাকুরের, শ্রীরামকৃষ্ণ ও রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। এই ছিল তাঁদের প্রথম ও শেষ দেখা। কোলকাতার শ্যামবাজারের কাছে কাশীশ্বর মিত্রর বাড়ি ২০তম ব্রাহ্ম উৎসবে নিমন্ত্রিত ছিলেন শ্রীরামকৃষ্ণ। বিকেল ৫টায় রাখাল মহারাজ, শ্রীম ও অন্যান্য ভক্তদের নিয়ে তিনি উপস্থিত হন সেখানে। একই বাড়িতে নিমন্ত্রিত হয়ে আসেন রবি ঠাকুর ও। কবির বয়স তখন মাত্র ২২ বছর,কিন্তু ইতিমধ্যে লিখে ফেলেছেন অনেক গান ।শ্রীরামকৃষ্ণের অনুরোধে তরুন কবি যে গান টি শুনিয়েছিলেন,সেটিও ২/৩ দিন আগে লেখা।বোধ হয় এই উপলক্ষেই ঈশ্বর তাঁকে দিয়ে গান টি রচনা করিয়েছিলেন।কবি গাইলেন তাঁর বিখ্যাত গান "আমার মাথা নত ক'রে দাও হে তোমার চরনধুলার তলে" । শ্রীরামকৃষ্ণ কবির মাথায় হাত দিয়ে আশির্বাদ করেন। প্রতি বছর এই দিন টি মিত্তির বাড়িতে বিশেষ ভাবে পালন করা হয়।

আমার   মাথা নত করে দাও হে তোমার চরণধুলার তলে।
সকল অহংকার হে আমার ডুবাও চোখের জলে॥




"সবাই কি তাঁকে ধরতে পারে" ?
              __________

হে বীর যুবক ! অনুভব কর, হৃদয় দিয়ে অনুভব কর। তাঁদের দুঃখ হৃদয়ে ধারণ কর, যতক্ষণ না হৃৎস্পন্দন স্তব্ধ হয়ে আসে, যতক্ষণ না চিত্ত বিকল হয়, যতক্ষণ না মনে হয় তুমি পাগল হয়েছ। উৎসর্গ কর আত্মাকে ঈশ্বরের শ্রীচরণে। শক্তি পাবে, ঈশ্বরের সহায়তা পাবে, পাবে অদম্য কর্মোৎসাহ।

খালি পেটে ধর্ম হয় না। আগে সংসার। বিয়ে দশবিধ সংস্কারের এক সংস্কার। সংসার কর্তব্য। জ্ঞানের অপর খন্ড। চিনি থেকে বালি সরাও, সরাও দুধ থেকে জল, অনিত্য থেকে নিত্যকে বের করে, শান দাও বৈরাগ্যে, ক্ষুদ্র সংস্কার চূর্ণ করে মহাকালের কোলে এসে বসো। শ্রীরামকৃষ্ণদেব বললেন, অহং আমিকে দাস আমি কর, থাক শালা দাস আমি হয়ে, শরণাগত হও। কিন্তু ফোঁস ছাড়লে চলবে না। তুমি তোমার গুরু। তুমিই আত্মা পরমাত্মার অংশ। তৈরি কর নিজেকে। মৃত্যু নয়, মুক্তির আনন্দে।

সব পারি, ব্যাকুল হতে পারি না কেন ? কোথায় আটকায় ? বুঝেছি, এই পৃথিবীতে নিজেকে ঠিক ততটা অসহায় মনে করতে পারি না। জৈব অভ্যাসে যা যা প্রয়োজন, কম পাই আর বেশি, পেয়ে তো যাচ্ছি। আপনজনরা ঘিরে আছে, যতই দুঃখ দিক, আঘাত দিক, মনের এমন অভ্যাস, কিছুতে মানতে চায় না। ওরে কেউ তোর আপন নয়। স্বার্থের টানাপোড়েনে বাঁধা। রামকৃষ্ণদেব বললেন, বড় ধন্দে পড়েছিস না ! যে তাঁকে ভাবে না, সে এইরকম। তার বিশ্বাস নিয়ে সে থাকে। খায় দায়, সংসার করে, হাসে, কাঁদে, রাগে। তার দুঃখের কারণ অন্য, আনন্দের কারণ অন্য ; কিন্তু যার মনে একবার তিনি ছায়া ফেলেছেন, সে বেটা মরেছে। সে বুঝেছে, হাতের কাছে রয়েছে আনন্দ ভান্ডার, অপার আনন্দ ধারা। নদী বইছে, নদীর শব্দ, উজ্জয়ী বাতাস বইছে, কিন্তু অবগাহন করা যে যায় না। সূক্ষ্ম অথচ শক্ত ব্যবধান। কিছুতে ভাঙা যায় না, উত্তীর্ণ হওয়াও যায় না। পিঞ্জরের পাখির মতো হতে যাব কেন ? হ্যাক থু ! সীতার মতো করে দাও। একেবারে সব ভুলে যাই। দেহ ভুল, হাত, পা, কোন দিকে হুঁশ নেই। কেবল এক চিন্তা, কোথায় রাম !

বদ্ধজীবের মনে প্রশ্ন আসে না, দিন তো যায়, কি করলুম ! ফেলে আসা দিনগুলিতে, চিন্তায় কর্মে আমি কি করে এলুম। বদ্ধজীব সম্পর্কে রামকৃষ্ণদেব বলেছেন, "বদ্ধজীব সংসারের কামিনী কাঞ্চনে বদ্ধ, হাত পা বাঁধা। লোভ লাগামছাড়া। আবার মনে করে, কামিনী কাঞ্চনে সুখ, তাই নির্ভয়ে থাকে। জানে না ওতে মৃত্যু আছে। বদ্ধজীব যখন মরে তার পরিবার বলে, 'তুমি ত চললে, করে গেলে কি আমায়' ? এমনি মায়া যে, মৃত্যশয্যায় শুয়ে প্রদীপে বেশি সলতে পুড়লে বলে, 'তেল পুড়বে, সলতে কমাও'। বদ্ধজীব ঈশ্বরচিন্তা করে না, অত সোপান নেই। যদি অবসর পায়, আবোল তাবোল গল্প করে, নয় মিছে কাজ করে। জিজ্ঞেস করলে বলে, আমি চুপ করে থাকতে পারি না তাই ঘাস ছিঁড়ি, বেড়া বাঁধি। সময় কাটে না দেখে তাস টাস খেলে"।

সদসৎ বিচারের নাম বিবেক। ঈশ্বর সৎ, নিত্য। আর সব অসৎ, অনিত্য ; দু'দিনের। এটি বোধ, ঈশ্বরে অনুরাগ। গোপীদের শ্রীকৃষ্ণের প্রতি যেরূপ অনুরাগ। ঈশ্বরে রাগানুগা ভক্তি আর বিবেক বৈরাগ্য। গুরু কি প্রয়োজন ! সচ্চিদানন্দ গুরু। কেবল বিচার। যদি রাগভক্তি হয়, অনুরাগের সাথে ভক্তি, তিনি স্থির থাকতে পারেন না। রাগভক্তি, শুদ্ধাভক্তি, অহেতুকী ভক্তি, যেমন প্রহ্লাদ।

রামকৃষ্ণদেব বললেন, "সবাই কি তাঁকে ধরতে পারে ? তিনি ভাল লোক করেছেন, মন্দ লোক করেছেন, ভক্ত করেছেন, অভক্ত করেছেন, বিশ্বাসী করেছেন, অবিশ্বাসী করেছেন। তাঁর লীলা সব বিচিত্র, শক্তি তাঁর কোনখানে বেশি প্রকাশ, কোনখানে কম ! সূর্যের আলো মাটির চেয়ে বেশি প্রকাশ জলে, আবার জল অপেক্ষা দর্পণে বেশি প্রকাশ। পান্ডিত্য দ্বারা তাঁকে পাওয়া যায় না। তাঁর বিষয় কে বিচার করে বুঝবে, তাঁর পাদপদ্মে ভক্তি যাতে হয়, সে চেষ্টাই কর না"।

পরমপদকমলে -





ঠাকুর এ কয়টার উপর বিশেষ লক্ষ্য রাখতেনঃ প্রথম, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা। প্রায়ই আলস্যের জন্যই লোক অপরিষ্কার থাকে। ঈশ্বরচিন্তা করে দেহভুল ক’জনের হচ্ছে? পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন না থাকলে ভগবানের আবির্ভাব হয় না। অন্তর্বহিঃ শৌচের দরকার। দ্বিতীয়, waste (অপব্যয়) না হয়। অনেকে জিনিস নষ্ট করে, তা দেখতে পারতেন না। একবার এক টুকরা লেবুর জায়গায় ছয় টুকরা কেটেছিল বলে তিরস্কার করেছিলেন কাশীপুরে। বলেছিলেন, ভক্তরা কত কষ্ট করে অর্থোপার্জন করে, সেই অর্থে সেবা হচ্ছে, তার অপব্যবহার! বলতেন, লক্ষ্মীছাড়া থেকে কৃপণ হওয়া ভাল। দু’টোই খারাপ, তবু তো যা তা নষ্ট না করে কৃপণ হওয়া ভাল। আহারের সময় অনেকে ভাতটাত কত নষ্ট করে। এসব পছন্দ করতেন না। কুকুরের জন্য দুটি রাখতে হয়। তাছাড়া যেমন আবশ্যক তেমনি নাও – নষ্ট না হয়। তৃতীয়, ছেঁড়া কাপড় কিংবা ময়লা কাপড় পরা দেখতে পারতেন না। বলতেন, সেলাইকরা কাপড় পরলে লক্ষ্মীছাড়া হয়। চতুর্থ, এলোমেলো ভাব – যেমন এখানকার জিনিস ওখানে রাখা। যার যে স্থান সেখানে রাখা আর সাজিয়ে রাখা। পঞ্চম, নিজের রান্না নিজে করা। বলতেন, ভক্তরা যারা তাঁর ভজন করবে, তারা নিজের দুটি চাল নিজে ফুটিয়ে নেবে। ভগবানে অর্পণ করে প্রসাদ পাবে। এতে পরের উপর নির্ভর করতে হয় না, আর সত্ত্বহানিও হয় না।

বলতেন, সর্বাবস্থায় তাঁর পূজা। কোনটাই অবহেলা করা চলে না। আহার বিহার, শয়ন, চলন, বলন, সর্বদা সর্ববস্তুতে তাঁর অনুধ্যান। তবে তো ধর্ম।

ধর্ম ধর্ম করে লোক – ধর্ম কি অত সোজা? – শ্রীম দর্শন।






🔱  ঠাকুর শ্রীশ্রী রামকৃষ্ণ তৈরি করা লোক এনে কতকগুলো সেনাপতি করে গিয়েছেন।  তাঁর শিষ্যেরা কেউ সাধারণ মানুষ নয়।  ঠাকুর তাঁর কাজের জন্য বিভিন্ন দেব-দেবী, পূর্ববর্তী অবতারের পার্ষদদের নিয়ে শিষ্যমন্ডলী গঠন করলেন।

🔱  স্বামীজী ছিলেন সপ্তর্ষির ঋষি।  তিনি নররূপী নারায়ণ ও শিবের অংশ।

🔱  রাখাল মহারাজ ছিলেন কৃষ্ণসখা ব্রজের রাখাল।  🍀 প্রেমানন্দ রাধার অংশে  🍀 নিরঞ্জনানন্দ রামের অংশে, পূর্ণ বিষ্ণুর অংশে জন্মগ্রহণ করেন।  🍀 শিবানন্দের  শিবের অংশে জন্ম কিন্তু তিনি নিজে একবার বলেছিলেন, "হয়তো আর জন্মে বৌদ্ধ সন্ন্যাসী ছিলাম।

🔱  যোগানন্দ পূর্বজন্মে অর্জুন ছিলেন।  🍀 বিজ্ঞানানন্দ ছিলেন জাম্বুবান।  🍀 লাটুবাবুর মহারাজ হনুমান ছিলেন।  🍀 রামকৃষ্ণানন্দ ও সারদানন্দ খ্রীষ্টের পার্ষদ ছিলেন।  🍀 শ্রীম ও বলরাম শ্রীচৈতন্যের পার্ষদ ছিলেন।  🍀 গিরিশ ছিলেন ভৈরবের অবতার।  🍀 অখন্ডানন্দ বলতেন, "আমি মা-যশোদা"।

🔱  ভক্ত মহিলাদের মধ্যে গোপালের মা ছিলেন কৃষ্ণ অবতারে ব্রজের ফলওয়ালি।  🍀 যোগীন মা ছিলেন কৃপা-সিদ্ধা গোপী ও জয়া।  🍀 গোলাপ মা ছিলেন বিজয়া।  🍀 নিস্তারিণী দেবী ছিলেন ছিন্নমস্তার অংশ।  🍀 রানী রাসমণি ছিলেন অষ্টসখীর এক সখী।  🍀 লক্ষ্মীদিদি ছিলেন মা শীতলার অবতার।

🔱  এ যুগের অবতার ঠাকুর লীলা করবার জন্য এই সব চিহ্নিত ব্যক্তিদের সঙ্গে নিয়ে এলেন।  এনারা কেউ আমাদের মতো সাধারণ মানুষ ছিলেন না।

🔱  ঠাকুরের অনন্তভাব তাঁর শিষ্যদের মধ্যে বিভিন্ন ভাবে রূপ পেয়েছে।  স্বামীজী ছিলেন দারুন শক্তিমান পুরুষ।  তিনি ঠাকুরের অনন্তভাবরাশি সারা পৃথিবীতে ছড়ালেন, কৃষকদের বীজ ছড়ানোর মতো।  স্বামীজী বলেছেন, "এই ভাবধারা ১৫০০ বছর চলবে।"

⚜  প্রাচীন সাধুদের কথা : সংগ্রহীত





🌹🌹পশুপাখিদের সঙ্গে শ্রীরামকৃষ্ণ(১)🌹🌹🌹
---------------------------------------

দক্ষিণেশ্বরে একটি কুকুর ছিল। ঠাকুর তাকে কাপ্টেন বলে ডাকতেন। সে প্রায়ই মা ভবতারিণীর মন্দিরের সমানে চাতালে বসে থাকতো। ঠাকুর কাপ্টেন ডাকলেই সে এসে তাঁর পায়ে গড়াগড়ি দিত,তিনি তাকে লুচি সন্দেশ খেতে দিতেন। বলতেন,"দেখ, এত যে কুকুর রয়েছে,কৈ কেউ তো মায়ের সামনে বসে না। গঙ্গার ধাপে বসতে,গঙ্গাজল খেতে এর মত কাউকে দেখিনি। এই ক্যাপ্টেনটা শাপভ্রষ্ট হয়ে জন্মেছে,ওর পূর্ব জন্মের সংস্কার যা ছিল, তাই এখানে এসে করছে, ধন্য হয়ে গেল।"
ঠাকুর তাঁর ভাতুস্পুত্র রামলালকে বলেছিলেন,"এখানকার কুকুর বেড়াল পর্যন্ত ধন্য হয়ে গেল।দেখনা মায়ের প্রসাদ খাচ্ছে,গঙ্গা দর্শন করছে,গঙ্গা জল খাচ্ছে, মন্দিরের চারদিকে যাওয়া আসা করছে...!!
দক্ষিণেশ্বরে একবার একটি কুকুরের অনেকগুলি ছানা হয়।কয়েকদিন পর কুকুরটি কঠিন রোগে মারা যায়। মায়ের দুধ না পেয়ে অনাথ কুকুর ছানাগুলি খুব কষ্টে রাতদিন এক জায়গাতেই শুয়ে থাকে। একদিন ঠাকুর যখন ওই পথে আসছিলেন, কুকুরছানা গুলি তাঁর পায়ের কাছে এসে কুঁইকুঁই করে কাঁদতে লাগলো। তিনি করুনা পরোবশ হয়ে সান্তনা দিতে লাগলেন। তারপরই একটি অলৌকিক ঘটনা ঘটল। তাঁর ঘরে এসে একজন খবর দিলো,কোথা থেকে একটি কুকুর এসে ছানাগুলিকে দুধ খাওয়াতে শুরু করেছে। কুকুরটির চেহারা,রং ও মুখের আকৃতি অনেকটা আগের কুকুরটির মতো। সুন্দর শ্রীশ্রী ঠাকুর বড়ই তুষ্ট হলেন:-
"শুনিয়া বড়ই তুষ্ট প্রভুদেবরায়।
বলিলেন সব হয় শ্যামার ইচ্ছায়।।
জগতের যেখানেতে যতবিধ প্রাণী।
সকলে সমানচক্ষে দেখেন জননী।।"
কামারপুকুরে বসবাসকালে ঠাকুর একদিন ভুতির খালের দিক থেকে হেঁটে আসছেন, একটু আগে বৃষ্টি হয়েছে। ঠিক তখন একটি মাগুর মাছ রাস্তায় উঠে এসে ঠাকুরের পায়ে থেকেছে। পরম দয়াল শ্রীশ্রী ঠাকুর তাঁকে পায়ে পায়ে ঠেলে ঠেলে এনে পুকুরে ছেড়ে দিয়ে বললেন,"পালা,পালা, হৃদে দেখতে পেলে এখুনি তোকে মেরে ফেলবে।"
ঠাকুর একবার দক্ষিণেশ্বর থেকে এসে কিছুদিন কামপুকুরে ছিলেন। ঠাকুর যখন বাড়ীর দাওয়ায় বসে থাকতেন, তখন মানুষের সঙ্গে বহু পাখিও তাঁকে দর্শন করতে আসতো। পাখিরা নির্দ্বিধায় তাঁর শরীরে বসে থাকতো। তাদের বিন্দুমাত্র ভয় ছিলোনা। কারণ তারা বুঝতে পারত জগতের সবথেকে নিরাপদ ও কাঙ্খিত স্থানে আশ্রয় নিয়েছে।
💓💓💓💓💓❤❤



কেশব সেন যখন আসে দক্ষিনেশ্বরে,  হাতে করে কিছু নিয়ে আসে। হয় ফল নয় মিষ্টি। ঠাকুরের পায়ের কাছে বসে কথা কয়। একেক দিন বা বক্তৃতা দেয়। 
সেদিন বড় ঘাটে গঙ্গার দিকে মুখ করে বক্তৃতা দিলে কেশব সেন। 
কিন্তু বক্তৃতার মধ্যেই উঠে গেলেন ঠাকুর। যারা জমাযেত হয়েছিল বলাবলি করতে লাগল,  লোকটা মুখ্খ্ কিনা, মাথায় কিছু ঢোকে না, তাই কেটে পড়ল। 
কিন্তু কেশব সেনের মনে ডাক দিল,  কোনো ত্রুটি হয়েছে নিশ্চয়ই। তাড়াতাড়ি কাছে এসে জিজ্ঞেসা করলেন ঠাকুর,  ' কিছু কি অন্যায় করে ফেলেছি?  
' নিশ্চয়ই।  তুমি বললে, ভগবান, তুমি আকাশ দিয়েছ বাতাস দিয়েছ-- কত কি দিয়েছ।  তারই জন্যে যেন তোমার কৃতজ্ঞতার অন্ত নেই। ও সব তো ভগবানের বিভূতি। বিভূতি নিয়ে কথা কইবার দরকার কি? এ কি তুমি বলে শেষ করতে পারবে?  তা ছাড়া,  এ সব বিভূতি যদি তিনি নাই দিতেন,  তা হলেও কি তিনি ভগবান হতেন না? একটু থামলেন ঠাকুর। বললে, ' বড়লোক হলেই কি তাঁকে বাপ বলবে?  যদি তিনি গরীব হতেন, নিঃস্ব ও নির্ধন হতেন, তা হলে কি তাঁকে বাপ বলবে না?
কেশব সেন চুপ করে রইল।
সকলে বলাবলি করতে লাগল, সত্যি বড়লোক হলেই কি বাপ হবে?  গরীব হলে সে আর বাপ নয়?
এরই নাম ভালোবাসা। ভগবান আমাকে  কিছু দিন বা না- দিন,  আমার দিকে তাকান বা না- তাকান, তবু আমি তাঁকে ভালোবাসি।  আমি তাকিয়ে আছি তাঁর দিকে। 
দক্ষিনেশ্বরের পাগলা বামুন কেশব সেনের মাথা ভেঙে দিয়েছে। এই নিয়ে শুরু হল হৈ- চৈ। 
তার পরে যখনই কেশব সেনকে  বক্তৃতা  দেবার জন্যে অনুরোধ করেছে ঠাকুর,  কেশব  সলজ্জে হাস্যে বলেছে, কামারের দোকানে আমি আর ছুঁচ বেচতে আসব না। আপনিই বলুন  আমরা শুনি।


জয় ঠাকুর।




অমৃতকথা................



সকালে ঘুম থেকে উঠেই ও শুতে যাবার আগেই ঈশ্বর-স্মরণ করা যদি কঠিন মনে হয়, তবে কাছেই তাঁর একটা ছবি রেখে দাও, আলো নিভিয়ে দেবার সময় আর সকালে ঘুম ভাঙলেই, ঐ ছবির দিকে তাকানো অভ‍্যাসে পরিণত কর।

ছবির দিকে তাকানোর স্বভাবটি যদি অভ‍্যাস করতে থাক, শীঘ্রই দেখবে--- তাঁর বিষয়ে চিন্তা না করে শুতে যাওয়া বা ঘুম থেকে ওঠা, তোমার পক্ষে কঠিন হয়ে পড়ছে।

শুতে যাবার আগে, আমাদের পক্ষে দরকার কিছু পবিত্র চিন্তায় ও শব্দে মনকে নিবিষ্ট রাখা।

চিন্তা কর তুমি যেন ঈশ্বরের কোলে শুতে যাচ্ছ বা আলোকবিন্দুর মতো তোমার আত্মা দিব‍্য আলোকের সমুদ্রে মিশে যাচ্ছে বা এই রকম কোন ভাব।
ঘুমিয়ে পড়ার আগে আমাদের সমস্ত মন যেন দিব‍্য ভাবে ভরে থাকে।


                 - স্বামী যতীশ্বরানন্দজী



জগন্নাথদেব  ও শ্রীরামকৃষ্ন



জগন্নাথদেবই রামকৃষ্ণ রূপে অবতীর্ণ । সেইজন্যই ঠাকুর পুরীতে যেতেন না এবং বলতেন, পুরীতে গেলে তাঁর শরীর ত্যাগ হবে । 
স্বাস্থ্যোন্নতির জন্য স্বামী তুরীয়ানন্দ  পুরীধামে গমন করেন । উক্ত তীর্থে অবস্থানকালে তিনি একদিন দিনের বেলা জগন্নাথদেবের দর্শনে যান। অরুনস্তম্ভের পাশ দিয়া মন্দিরের সিঁড়িতে উঠিছিলেন । এমন সময় দেখলেন, সিঁড়ির অন্য পাশ দিয়ে ঠাকুর রামকৃষ্ণ নামছেন।
ঠাকুরের গলায় ফুলের মালা এবং দেহে সাধারণ জামাকাপড়।
ঠাকুরকে দেখামাত্র তিনি ছুটে গিয়ে তাঁকে ভূমিষ্ঠ প্রনাম করলেন। কিন্তু যখন তিনি প্ৰণমান্তে ঠাকুরের পাদস্পর্শ করবার জন্য হাত বাড়ালেন তখন ঠাকুর অদৃশ্য হলেন। সেই মুহূর্তে তাঁর চমক ভাঙল।       

              💞💞 জয়তু শ্রীরামকৃষ্ণ💞💞





ডা:  মহেন্দ্রলাল  সরকার  ও  শ্রী শ্রী ঠাকুর 



শ্রীরামকৃষ্ণের ডাক্তার, ঘোর নাস্তিক, দুর্মুখ, এত সাহস!   শ্রীরামকৃষ্ণকে ধমকাতেন আর তুমি করে কথা বলতেন একজনই। তিনি হলেন কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়েের দ্বিতীয় এম ডি ডাক্তার, ধন্বন্তরি! লোকে মরা মানুষ কাঁধে করে নিয়ে এসে বলত, ডাক্তারবাবু আপনি বাঁচিয়ে দিন! এমন ডাক্তারের ফি ছিল সর্বকালীন রেকর্ড! কত? ১৮৬৩ সালে তাঁর ফি ছিল ৩২ টাকা!তখন সায়েব ডাক্তারের সর্বোচ্চ ফি ছিল ১৬ টাকা, তাহলে বন্ধু! বুঝতেই পারছেন কত বড় ডাক্তার ছিলেন! তাহলে তাঁর নামটা এবার বলি? তিনি হলেন ডাক্তার মহেন্দ্রলাল সরকার, একটি নাম, একটি আলোকবর্তিকা!  
আজ তাঁর কথা নিজের তুলি দিয়ে আঁকতে বসেছি। আর  আমার লেখার মাঝেমাঝে উঠে আসবে টুকরো টুকরো কিছু জলছবি। কিছু বই পড়ার স্মৃতি থেকে।   
যেমন শ্রীম কথিত "শ্রীশ্রীরামকৃষ্ণকথামৃত", সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের "প্রথম আলো",   শিবনাথ শাস্ত্রীর, "রামতনু লাহিড়ী ও তৎকালীন বঙ্গসমাজ" শঙ্করের লেখা, "আনন্দবাজার পত্রিকা, রবিবাসরীয়, ৯ জুন, ২০১৭" প্রভৃতি আরো কিছু বই পড়ার মুগ্ধতা! 
এবার "আমাদের যাত্রা হল শুরু..."

★★

"আনন্দলোকে মঙ্গলালোকে বিরাজ সত্যসুন্দর..."

আনন্দলোকে জন্ম নিলেন মহেন্দ্রলাল সরকার (১৮৩৩- ১৯০৪)। হাওড়া জেলার পাইকপাড়ায়। 
স্কুল হেয়ার। সেখান থেকে দারুণ রেজাল্ট করে হিন্দু কলেজ (এখন প্রেসিডেন্সি) সেখান থেকে দারুণ, দারুণ রেজাল্ট করে এলেন কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে ডাক্তারি পড়তে। সেখানেই তাঁর প্রতিভা দেখে বিস্মিত হয়ে গেলেন শিক্ষকরা।  তিনি যখন থার্ড ইয়ারের ছাত্র। তখন মেডিকেল শিক্ষকরা তাঁকে মাঝেমধ্যে সেকেন্ড ইয়ারের ক্লাসে ছাত্রদের লেকচার দিতে পাঠাতেন। এটা রেকর্ড! 
১৮৬০ সালে মেডিকেল কলেজ থেকে সসম্মানে মেডিসিন,  সার্জারি, মিডওয়াইফেরিতে (গাইনোকলজি বিষয়ক) অনার্স নিয়ে পাস করলেন।
১৮৬৫ সালে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এম ডি হলেন। তিনিই হলেন কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের দ্বিতীয় এম ডি।  

এরপর প্র্যাকটিশ। ফি হল ৩২ টাকা। আজ পর্যন্ত এত ফি কোন ডাক্তারের হয়নি। সালটা হল ১৮৬৫৷ 
দারুণ মেজাজ, কঠোর নিয়ম মেনে চলেন, লোকে ভয় খেত, নাম হল দুর্মুখ ডাক্তার।
পুরো প্রফেশনাল। বড়লোকদের ১ টাকাও ছাড় নেই। আবার গরীবদের ভগবান, বিনাপয়সায়। 
চিরকাল হোমিওপ্যাথিকে নিয়ে মজা করে এসেছেন। হঠাৎ  হোমিওপ্যাথি লাইনে এলেন। হয়ে গেলেন এ্যালোপ্যাথি থেকে ১ নম্বর হোমিওপ্যাথি ডাক্তার। ফিস সেই ৩২ টাকা, কম নেই। 

"আমার যে সব দিতে হবে সে তো আমি জানি - আমার যত বিত্ত প্রভু, আমার যত বাণী।"

ঠিক তাই। তাঁর যে সমাজকে অনেক কিছু দিতে হবে, সেজন্যই তো পৃথিবীতে আসা। গড়ে তুললেন ভারতবর্ষের সর্বশ্রেষ্ঠ প্রাচীনতম গবেষণা কেন্দ্র, "Indian cultivation of science, ১৮৭৬।" 
অনেক লড়াই করে শেষপর্যন্ত মেয়েদের বিবাহের বয়েস ঠিক করতে পারলেন ১৬ বছর।
আসামে চা শ্রমিকদের দুরবস্থা নিয়ে সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করলেন। শ্রমিকদের "কুলী" বলে ডাকা নিয়ে চরম আপত্তির কথা জানালেন সরকারকে। 

আর অনুভব করলেন মহিলারা লেডি ডাক্তারদের কাছে তাদের সমস্যা যতটা খুলে বলতে পারে ততটা পুরুষ চিকিৎসকদের কাছে নয়। 
তাই তাঁর ও দ্বারকানাথ গাঙ্গুলির প্রেরণায় অনুপ্রাণিত হয়ে ভারতবর্ষের দ্বিতীয় এবং পশ্চিমবঙ্গের প্রথম বিলেত ফেরত মহিলা ডাক্তার হলেন কাদম্বনি গঙ্গোপাধ্যায় (বসু)। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম মহিলা গ্র্যাজুয়েট। 
আর দুর্ভাগ্য আর একজন মহিলা ডাক্তার হতে পারলেন না। চেন্নাই গেছলেন ডাক্তারি পড়তে। অসুস্থ হয়ে মাঝপথে ডাক্তারি পড়া কমপ্লিট করতে পারলেন না। তিনি হলেন স্যার জগদীশ বসুর সহধর্মিণী লেডি অবলা বসু। 

এবার  সেই যুগান্তকারী ঘটনা! 

"আগুনের পরশমণি ছোঁয়াও প্রাণে। 
এ জীবন পূণ্য করো দহন দানে।" 

অনেক টাকাকড়ি, নাম সুখ্যাতি তো হল। এ জীবন তবু পূর্ণ হল না!  
একদিন কাশীপুর থেকে আচমকা  ডাক এল! 

শ্রীরামকৃষ্ণের  কর্কট রোগ ধরা পড়েছে। মহেন্দ্রলাল সরকার এলেন! 
এসেই রোগীকে চোটপাট। ঠাকুরের বিছানায় সটান বসে পড়ে, "তুমি" করে ধমকাতে লাগলেন, তুমি নাকি আজকাল পরমহংসগিরি করছো? চারপাশে সব আগামীদিনের বিখ্যাত হবেন সব মানুষরা দাঁড়িয়ে পড়েছেন। শ্রীমও আছেন।
জিভ টেনে ধরলেন। কথামৃতে ঠাকুর বলছেন, যেন গরুর জিভ টেনে ধরল, কি যন্ত্রণা! কি যন্ত্রণা! ... এইসব মোটামুটি।
এদিকে শ্রীরামকৃষ্ণকে ধমকাচ্ছেন আর ঠাকুর হাসছেন। হয়'ত মনে মনে বলছেন, ওরে দাঁড়া, দেখব তুই কতবড় নাস্তিক। কেশব সেন, বঙ্কিম, মাইকেল, বিদ্যাসাগর, গিরীশ, নরেন সব এখানে ড্রাইভ মারল। এবার দেখি মহেন্দ্র  ডাক্তার তোমার দৌড়!

যাবার আগে মহেন্দ্রলাল বলে গেলেন, কথা বলা, নাচা গানা এসব চলবে না। তাহলে রোগ বেড়ে যাবে। 
ডাক্তার সরকার নাস্তিক ছিলেন।   কিন্তু শ্রীরামকৃষ্ণের কাছে এলেই কেমন দ্রবীভূত হয়ে যান। 
চেম্বার ফেলে ৩২ টাকার ডাক্তার ছুটে আসছেন শ্রীরামকৃষ্ণকে দেখতে।  
বলছেন, শোনো তুমি শুধু আমার সঙ্গে কথা বলবে। কোন ধর্মের কথা একবারও কেউ বলছেন না। অথচ মহেন্দ্রলাল চেম্বার ফেলে ঘন্টার পর ঘন্টা শ্রীরামকৃষ্ণের সঙ্গে গল্প করছেন। আসছেন প্রায়ই চেম্বার ফেলে। ঠাকুর হাসেন। ঠাকুর হেসে বলেন, কি ডাক্তার চেম্বারে যাবেন না? ডাক্তার রাগ দেখিয়ে বলেন, সে তোমায় অত ভাবতে হবে না? ঠাকুর হাসেন, এ তো রাগ নয়, এ যে অনুরাগ! 

এবার শ্রীরামকৃষ্ণ বিদায় নিলেন। মহেন্দ্রলাল সরকার খবর পেয়ে এলেন। দেখলেন। বললেন,  প্রাণবায়ু নির্গত হয়ে গেছে।
নিঃশব্দে নেমে এলেন। একজনকে বললেন, শোনো একটা ফটো তোলার ব্যবস্থা কর। এই রইল আমার ১০ টাকা চাঁদা।

ডাক্তারকে কাঁদতে নেই। আবার যে সে ডাক্তার নয়। চরম নাস্তিক ডাক্তার মহেন্দ্রলাল সরকার! লোকে কি বলবে! নাস্তিক মহেন্দ্রলাল কাঁদছেন! 
কিন্তু "ভালবাসি" কি শুধু মুখে বললেই ভালবাসা বলা হয়?  হৃদয়ের ভাষা কি সবাই পড়তে পারে?
ভালবাসা মুখে বলা হয়নি। হৃদয় শুধু বলেছিল! 
 "আমি তোমায় ভালবাসি, ভালবাসি, হে শ্রীরামকৃষ্ণ!"  

আমি নাস্তিক। কিন্তু মানুষ চিনি।  তুমি মানুষটা একেবারে খাঁটি। মহেন্দ্রলাল সরকার চলে গেলেন নিঃশব্দে। আজ তাঁর নিজের একটা ওষুধ চাই, বুকের ভেতরটা এমন আনচান করছে কেন! ৩২ টাকার ডাক্তারকে কে এখন ব্যথা জুড়োনোর ওষুধ দেবে? 

"জুড়াইতে চাই, কোথায় জুড়াই..."
সংগৃহীত।




বিভিন্ন মতে ঠাকুরের ঈশ্বর সাধনা......... 


বিয়ের পর ঠাকুর দক্ষিণেশ্বর মন্দিরে ফিরে এসে আবার ডুবে গেলেন সাধন সাগরে। মায়ের কাছে তীব্র আকুতি নিয়ে জানতে চাইলেন বিভিন্ন ধর্মের সার মর্ম।মা তাঁর সে ইচ্ছে ও পূরণ করেন । দীর্ঘ বার বছর ধরে তিনি যোগেশ্বেরী নামে এক ভৈরবীর কাছে তন্ত্র মন্ত্র সাধনা। ভৈরবী ঠাকুরকে ৬৪ খানা তন্ত্র সাধনা করালেন। এরপর জটাধারী নামে এক সাধুর কাছে গোপাল মন্ত্রে দীক্ষা নিলেন। বৈষ্ণব মতে সাধন কালে রাম ,সীতা,রাধা কৃষ্ণ ,গৌর ,নিতাই প্রভৃতি অবতারদের দর্শন লাভ করেন। দর্শণের পরে তাঁরা তাঁর দিব্য দেহে লীন হয়ে যান। তারপর এলেন শ্রী মৎ তোতাপুরীজী , তিনি ঠাকুর কে বেদান্ত সাধনা করালেন। ঠাকুর বেদান্ত সাধনায় ডুবে গেলেন। মাত্র তিন দিনের মধ্যে তা তিনি লাভ করেন। তখনই তিনি পরিণত হলেন শ্রী রামকৃষ্ণে। বিভিন্ন মতে সাধনা করে ঠাকুর এই সিদ্ধান্তে এলেন যত মত তত পথ। তিনি উপলব্ধি করলেন যে, ঈশ্বর এক, কেবল নামে তফাৎ।..... জয় শ্রী রামকৃষ্ণ প্রণাম নিও।







*ঠাকুরের অমূল্য তিন ছবি* 



ঠাকুর নিজের ছবি তুলতে দিতেন না! স্বামী অভেদানন্দজী ' মন ও মানুষ ' গ্রন্থে একথা বলেছেন। প্রতাপ চন্দ্র মজুমদার বলেছিলেন, "শ্রীরামকৃষ্ণ চাইতেন না যে কেউ তাঁর ছবি তুলুক। তিনি সমাধিস্থ না হলে তাঁর ছবি তোলা যেত না- তাই তিনি বুঝতেই পারতেন না কী করা হচ্ছে। 

অবতারের করুনায় তিনি তাঁর আকৃতি ও চেহারার সুস্পষ্ট প্রতিকৃতি রক্ষা করার জন্য ফটো তুলতে অনুমতি দিয়েছিলেন।"


১) পৃথিবীর ইতিহাসে এই প্রথম অবতারের প্রত্যক্ষ ফটোগ্রাফ সবাই দেখতে পেল। আর ফটোতে উঠেছে ছায়ার পিছনে কায়ার জাগ্রত উপস্থিতি। 

শ্রীরামকৃষ্ণ এর তিনটি ছবি জগদ্বিখ্যাত। তিনটিতেই ফুটে উঠেছে ঊর্ধ্বজাগতিক, অতীন্দ্রিয়, পরিপূর্ণ ঈশ্বর তন্ময়তার, ব্রহ্মানন্দের ভাব।

শ্রীরামকৃষ্ণের পথম ফটো তোলা হয় কেশবচন্দ্রের ব্যাবস্থাপনায় তাঁর গৃহে। ওই ফটোয় শ্রীরামকৃষ্ণ কীর্তনের আসরে ভাবাবিষ্ট হয়ে দাঁড়িয়ে আছেন। তাঁর ডান হাত ঊর্ধ্ববাহু, বাঁ হাত বুকের উপর ন্যস্ত। হাতের আঙুলিগুলি মৃগমুদ্রাবদ্ধ। তিনি সমাধিস্থ। পাছে পড়ে যান, তাই তাঁর ভাগ্নে হৃদয়রাম মুখোপাধ্যায় তাঁকে ধরে আছেন। ঠাকুর এর পরনে ধুতি ও পাঞ্জাবী, ধুতির খুট ও চাদর কোমরে জড়ানো।


শ্রীরামকৃষ্ণের পিছনে মেঝেতে চার-পাচজন ভক্ত উপবিষ্ট। পায়ের কাছে ফুল আকা গালচের আসন ও সাদা চাদর বিছানো ফরাস। পিছনে একটা খোলা জানালা খোলা ও অন্যটিতে পাখিদার খড়খড়ি। 


শ্রীম-র ১৮৮২ সালের ২রা এপ্রিলের বর্ণনা থেকে জানা যায় "২১শে সেপ্টেম্বর (১৮৭৯) 'কমলকুটিরে' উৎসবে যোগদান করিতে লইয়া যান। এই সময়ে শ্রীরামকৃষ্ণ সমাধিস্থ হইলে ব্রাহ্মভক্ত সংগে তার ফটো নেওয়া হয়। ঠাকুর দন্ডায়মান, সমাধিস্থ। হৃদয় ধরিয়া আছেন।

উত্তরকালে ভক্তরা জিজ্ঞেস করলে, অন্তরঙ্গ শিষ্য স্বামী প্রেমানন্দজী এই ঊর্ধ্ববাহুমুদ্রায় দাঁড়ানো ঠাকুরের মূর্তির ব্যাখা করেছিলেন । 

"যা কিছু সবই উপরে, এখানে কিছু নেই। অর্থাৎ ব্রহ্মই সত্য যা জগতের ঊর্ধ্বে। আর জাগতিক সব কিছুই ক্ষণস্থায়ী, মিথ্যা ও দুঃখদায়ক।"


২) দ্বিতীয় ফটো তোলা হয় রাধাবাজারে ফটোগ্রাফারের দোকানে । দ্বিতীয় ফটোর বর্ণনায় কথামৃত্কার  ২৪ শে ফেব্রুয়ারী, ১৮১৪ তারিখে শ্রীরামকৃষ্ণের স্মৃতি বর্ণনা করেছেন I


"রাধাবাজারে যেদিন আমাকে ছবি তোলাতে নিয়ে গেছিলো সেদিন রাজেন্দ্র মিত্রের বাড়ি যাবার কথা ছিল-কেশব সেন আর সব আসবে শুনেছিলুম I গোটাকতক কথা বলব বলে ঠিক করেছিলাম I রাধাবাজারে গিয়ে সব ভুলে গেলাম I"


এ-ফটো গৃহীত হবার সময় শ্রীরামকৃষ্ণের সঙ্গে তাঁর দুজন সাক্ষাত শিষ্য স্বামী অভেদানন্দ {কালী মহারাজ } ও স্বামী অদ্ভুতানন্দ {লাটু মহারাজ } উপস্থিত ছিলেন I 

দ্বিতীয় ফটো প্রসঙ্গে স্বামী অভেদানন্দ জানিয়েছেন-"শ্রীশ্রী ঠাকুরের দ্বিতীয় ছবি তোলা হয় রাধাবাজারে {কলিকাতা} একটি ফটোগ্রাফারের দোকানে । আমি ও লাটু মহারাজ তাঁর সঙ্গে ছিলাম I থামের ওপর হাত দিয়ে দাঁড়াতেই তিনি সমাধিস্থ হয়ে পড়েছিলেন I"

৩) অক্টোবর ১৮৮৩ তে তৃতীয় এবং জগতে শ্রীরামকৃষ্ণের সর্বাধিক পরিচিত এই ফটোটি ১৮৮৪ খ্রীষ্টাব্দের ২ ফেব্রুয়ারির পর কোন সময় স্বামী বিবেকানন্দ ও ভবনাথ চট্টোপাধ্যায়ের উদ্যোগে দক্ষিণেশ্বরে রাধাকান্তের মন্দিরের সামনের বারান্দায় তোলা । ফটোগ্রাফার বরাহনগরের অবিনাশচন্দ্র দাঁ ।


 তিনি তখন ' *বার্ণ অ্যান্ড শেফার্ড'* কোম্পানী'র শিক্ষানবীশ হিসেবে কাজ করছিলেন । সেদিন ছিল রবিবার । সময় : অপরাহ্ন ( মতান্তরে সকাল প্রায় সাড়ে নটা ) ।


 ফটোটি তোলার সময় শ্রীরামকৃষ্ণ সমাধিস্থ হয়ে পড়েছিলেন । মূল ফটোটির ছয়টি কপি ছিল ।

স্বামী সারদানন্দ লীলাপ্রসঙ্গে লিখেছেন : 'কাশীপুরের বাগানে অবস্থানকালে ঠাকুর নিজ ছায়ামূর্তি (Photograph) দেখিতে দেখিতে আমাদিগকে বলিয়াছিলেন, "ইহা অতি উচ্চ যোগাবস্থার মূর্তি ----- কালে এই মূর্তির ঘরে ঘরে পূজা হইবে ।" 

এই ফটো দেখে শ্রীরামকৃষ্ণ ভাবাবিষ্ট হয়ে পড়েছিলেন এবং ফটোটি মাথায় কয়েকবার ছুঁইয়ে গদ্ গদ্ কণ্ঠে বলেন , 'ফটোখানি বেশ তুলেছে । এর ভাব অতি উচ্চ । তাঁতে একেবারে লীন হয়ে গিয়েছে । এতে তাঁরই স্বরূপ ফুটে উঠেছে।।বেলুড়ে একদিন স্বামী অখণ্ডানন্দ মহারাজ কথাচ্ছলে এই তৃতীয় ছবি সমন্ধে কাহিনী বলেছিলেন - "ঠাকুরের যে ছবি পূজা হয়, তার সম্বন্ধে কিছু জানিস?" আমরা বিশেষ কিছু জানি না বলাতে তিনি বলেন : "বরানগরের ভক্ত ভবনাথ ( স্বামীজীর বন্ধু ) ঠাকুরের ফটো তুলতে চায়। একদিন অনেক অনুরোধ করে। পরদিন বরানগর থেকেই এক ফটোগ্রাফার সঙ্গে নিয়ে এসেছে বিকেলের দিকে। ঠাকুরকে প্রথমে রাজি করাতে পারেনি। ঠাকুর রাধাকান্তের মন্দিরের দিকে চলে গেলেন।


ইত্যবসরে স্বামীজী এসে পড়েছেন। সব শুনে বললেন, "দাঁড়া, আমি সব ঠিক করছি।" এই বলে রাধাকান্তের মন্দিরের উত্তরদিকে রকের ওপর যেখানে ঠাকুর বসেছিলেন, সেখানে গেলেন ও তাঁর সঙ্গে ভগবৎ-প্রসঙ্গ আরম্ভ করলেন। ঠাকুর সমাধিস্থ হয়ে গেলেন। স্বামীজী উঠে গিয়ে তাদের ডেকে নিয়ে এসে বললেন, "তাড়াতাড়ি ক্যামেরা ফিট কর।"
সমাধিতে ঠাকুরের শরীর একটু হেলে গিয়েছিল। ক্যামেরাম্যান ঠাকুরের চিবুক ধরে সোজা করে দিতে গেছে, চিবুক ধরামাত্র ঠাকুরের শরীর হালকা কাগজের মতো হাতের সঙ্গে উঠে পড়েছে। তখন স্বামীজী বললেন "ওকি করছিস, শীঘ্র শীঘ্র ক্যামেরা ফিট কর।" ক্যামেরাম্যান যথাসম্ভব তাড়াতাড়ি ফটো তুলে নিল। এই ঘটনা ঠাকুর কিছুই জানতেন না । কয়েকদিন পরে ভবনাথ যখন প্রিন্ট করা ছবি নিয়ে এল,  ঠাকুর দেখে বললেন, "এ মহাযোগের লক্ষণ, এই ছবি কালে ঘরে ঘরে পূজা হবে।”
          * স্বামী নির্বাণানন্দ *

এ প্রসঙ্গে আর একটা কথা বলা যায়, সেটা হল - ঘটনার আকস্মিকতায় ক্যামেরাম্যানের হাত থেকে কাঁচের নেগেটিভ-টি পড়ে গিয়ে কোণা ভেঙ্গে যায়। সেটা মেক আপ দেবার জন্য নেগেটিভ-টির উপরের দিকে অর্ধ-চন্দ্রাকৃতি আকারে কাটা হয়। সেই ক্যামেরা-টির অংশবিশেষ ভক্তদের দেখার জন্য এখনও রাখা আছে শ্যামপুকুর বাটির দোতলায়।


হরি ওঁ রামকৃষ্ণ ॥






***🔴 কাশীতে ঠাকুরের এক অলৌকিক লীলা *** 🔴



    💥  শ্রীরামকৃষ্ণ মঠ ও মিশনের সাধুদের আগে পর্যন্ত্য  #দশনামী সম্প্রদায়ের সাধুরা বলতে '#ভাঙ্গি' সাধু | যেহুতু তাঁহারা আর্ত লোকেদের সেবার জন্য গু-মুত ঘাটত আর গু-মুত ঘাটার কাজ তো মেথরেরা করে, তাই তাদের দৃষ্টিতে তারা #মেথর| আবার #মাছ_খাবার জন্যও অনেক সময় #মছলি_সাধুও সেই দশনামী সম্প্রদায়ের সাধুরা বলত | এরকম ভাবেই চলছিল, হঠাৎ কাশীর পবিত্র ভূমিতে ঘটে যায় এক #অদ্ভুত_অলৌকিক ঘটনা যা কাশীর ইতিহাসে আজও অক্ষয় অমর  হয়ে আছে তার বিস্তৃত রুপরেখা|

     🚩 কাশীর বারানসী আশ্রম নির্ভরানন্দজী (চন্দ্রবাবা)র নেতৃত্বে ১৯৩৬ খ্রীষ্টাব্দের ২৪শে ফেব্রুয়ারী সোমবার শুক্লা দ্বিতীয়া তিথিতে #ঠাকুরের_শতবর্ষের তিথিপূজার দিন ঠাকুরের মন্দির ও মূর্তি প্রতিষ্ঠার ব্যবস্থা করেন|  এই মহোৎসবে কাশীর দশনামী সম্প্রদায়ের কিভাবে আমন্ত্রন করা যায় তা নিয়ে আশ্রমের প্রবীন সাধুগন চিন্তা করতে লাগলেন| কারণ কাশীর শ্রীরামকৃষ্ণ অদ্বৈত আশ্রম কাশীর দশনামী সাধু সম্প্রদায়ের কাছে বিশেষ পরিচিত নয়| শ্রীরামকৃষ্ণ দেবও কাশীর সাধু সমাজে অনেকটাই অপরিচিত| এই সময়ে বিদেহী ঠাকুর শ্রীরামকৃষ্ণ দেব এক #অলৌকিক_লীলা ঘটালেন| তার ফলে কাশীর শ্রীরামকৃষ্ণ অদ্বৈত আশ্রমের কর্তৃপক্ষের যে চিন্তা ভাবনা ছিল ভারতবিখ্যাত কাশীর দশনামী সাধু সমাজ নিয়ে তা দূর হয়ে গেল| সেই সময় কাশীর শ্রীরামকৃষ্ণ অদ্বৈত আশ্রমের নিকটে লক্ষী কলিতে কাশীর সমগ্র সাধু সমাজের সর্বজন শ্রদ্ধেয় বিশিষ্ট সাধু মহাত্মা মঙ্গলগিরি  অবস্থান করছেন|

   💥 তাঁর কথা কাশীর সমগ্র সাধু সমাজ এক কথায় শিরোধার্য্য করেন | মঙ্গলগিরি মাঝে মাঝে সেবাশ্রমে বেড়াতে আসেন| একদিন রাতে মঙ্গলগিরি তাঁর লক্ষীকুন্ডের কাছে ড়েলিএস মঠে রয়েছেন| সহসা ঠাকুর শ্রীরামকৃষ্ণ দেব মঙ্গলগিরির সামনে আবির্ভূত হয়ে বলেন,
    🔥   " এখানে আমার উৎসব হচ্ছে, তুমি কি তাতে কিছু করবে না?" এই বলে ঠাকুর অদৃশ্য হয়ে গেলেন| 🔥

মঙ্গলগিরি স্তম্ভিত হয়ে গেলেন ঠাকুর শ্রীরামকৃষ্ণ দেবকে দর্শন করে এবং ঠাকুরের কথা শুনে| পরদিন কাশীর শ্রীরামকৃষ্ণ অদ্বৈত  আশ্রমে গিয়ে আশ্রমের কর্তৃপক্ষদের বলেন তাঁর ঠাকুরের দর্শনের কথা| আশ্রম কর্তৃপক্ষও বিস্মিত ও আনন্দিত হলেন একথা শুনে|
 #ঠাকুর_স্বয়ং_তাঁদের_সমস্যার সমাধান করে দিলেন মঙ্গলগিরিকে দর্শন দিয়ে| তারপর মঙ্গলগিরি জানতে চাইলেন তিনি কি ভাবে সাহায্য করতে পারেন শ্রীরামকৃষ্ণ অদ্বৈত আশ্রমকে|

  🚩  আশ্রম কর্তৃপক্ষ তা শুনে তাঁকে কাশীর সাধু সমাজকে ঠাকুরের শতবার্ষিকী উৎসবে যোগদানের জন্য এবং উৎসব উপলক্ষ্যে শোভাযাত্রায় অংশ নেবার জন্য বললেন| কাশীর সর্বজন শ্রদ্ধেয় প্রবীন মহাত্মা মঙ্গলগিরি সানন্দে রাজী হলেন| তারপর তিনি কাশীর #নির্বাণী, #নিরঞ্জনী, #দক্ষিণা_মূর্ত্তি, #ভোলাগিরি প্রভৃতি সকল আশ্রমের ও আখড়ার সাথে যোগাযোগ করে তাঁদের ঠাকুরের উৎসব ও শোভাযাত্রায় অংশ নিতে নির্দেশ দেন| তার ফলে মহাসমারোহে ১৯৩৬ খ্রীষ্টাব্দের ২৬ শে ফেব্রুয়ারী সোমবার ঠাকুর শ্রীরামকৃষ্ণ দেবের জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষ্যে শোভাযাত্রায় কাশীর সকল বিশিষ্ট সাধু সম্প্রদায় অর্থাৎ নির্বাণী,নিরঞ্জনী, জুনা, বর্ণনা প্রভৃতি বিভিন্ন আখড়ার বিশাল সাধুমন্ডলী যোগদান করেন এবং তাঁরা ঠাকুর শ্রীরামকৃষ্ণ দেবের বড় বড় ছবি নিয়ে বিরাট শোভাযাত্রা করে কাশীর প্রধান প্রধান রাস্তা পরিক্রমা করেন| তার সাথে ঘোড়ার পিঠে বহু নাগা সন্ন্যাসীগণ পতাকা বাদ্য, প্রভৃতি নিয়ে যাত্রা করেন| সর্বধর্ম সমন্বয় আচার্য্য শ্রীরামকৃষ্ণের সর্বধর্মের সমন্বয় যেন মূর্ত  হয়ে উঠল এই সর্বধর্মের সাধু সন্ন্যাসীদের বিরাট শোভাযাত্রায়|

   ♥শোভাযাত্রায় প্রথমে ছিল নয়টি হাতি, তার সাথে প্রতিটি আখড়ার মহামন্ডেলশ্বরগণ শোভাযাত্রার পুরোভাবে থাকেন| তার সাথে কাশীর অদ্বৈত আশ্রমের প্রবীণ সাধুরা বারটি মোটরগাড়িতে থাকেন| তাঁদের সাথে বহু ভক্ত ও গায়ত্রীর দলও যান নামকীর্তন করতে করতে| সুদীর্ঘ ছয় মাইল রাস্তা এই বিরাট শোভাযাত্রা পরিক্রমা করে| কাশীর রাজা ও তাঁর ব্যাক্তিগত দেহরক্ষীদের ও অশ্ব, হাতি প্রভৃতি পাঠিয়ে দেন এই শোভাযাত্রায় যোগদানের জন্য|

 ♥  ইতিপূর্বে কাশীতে এর আগে এই রকম সকল সম্প্রদায়ের সাধুরা একসাথে কোন উৎসব উপলক্ষ্যে এমনভাবে যোগদান করেননি| ঠাকুর শ্রীরামকৃষ্ণের সর্বধর্ম সমন্বয়ের ভাবটি মনে রেখেই সব সম্প্রদায়ের সাধুরা স্বেচ্ছায় যোগদান করেন| হিন্দুধর্মের  ইতিহাসেও এই অভূতপূর্ব শোভাযাত্রা  চিরষ্মরণীয় হয়ে রইলো|

  #বিদেহী_ঠাকুর_শ্রীরামকৃষ্ণের এই অলৌকিক অপ্রাকৃত লীলার জন্যই এই মহাসম্মেলন সর্বতোভাবে সার্থক হল|

_______  🔵 তারপর শুভক্ষনে সুদৃশ্য প্রাথর্না ঠাকুর মন্দির ও ঠাকুরের মূর্তি প্রতিষ্ঠা হল মহাসমারোহে| সমগ্র মঠ ও মিশনের মধ্যে এটি-ই হল প্রথম ঠাকুরের পাথরের মন্দির ও মূর্তি|

    _______🔵  শ্রীরামকৃষ্ণ মঠ ও মিশনের সহ অধ্যক্ষ পূজ্যপাদ স্বামী বিজ্ঞানানন্দ মহারাজ মন্দির উৎসর্গ ও নিগ্রহ প্রতিষ্ঠার কাজ শাস্ত্রমতে সুসম্পন্ন করেন| তাঁকে সহযোগিতা করেন স্বামী নির্ভরানন্দজী ( চন্দ্রবাবা) ও স্বামী ওঁকারানন্দজী , কৃষ্ণলাল মহারাজজী, শঙ্করানন্দজী, সর্বানন্দজী,  জগদানন্দজী, অচলানন্দজী, কৈবল্যানন্দজী, শান্তানন্দজী, প্রভৃতি প্রবীন সন্ন্যাসীগণ| প্রতিষ্ঠার পর মূল মন্দিরের বেদীতে একটি পাত্রে ঠাকুর শ্রীরামকৃষ্ণ দেবের ও সারদামায়ের কেশ, নখ ও একটি দাঁত প্রোথিত করা হয়| তাছাড়া শ্রীশ্রী মা, স্বামীজী ও মহাপুরুষ মহারাজের দেহাবশেষ ও আলাদাভাবে রাখা হয়|

  🔵 পরদিন বিরাট সমষ্টি সাধু ভান্ডারা দেওয়া হয়| সব সম্প্রদায় ও আখড়ার সাধুগন একসাথে বসে সানন্দে প্রসাদ গ্রহন করেন| এদিন প্রায় দু হাজার সাধু সেবা হয়| যা কাশীর ইতিহাসে অভূতপূর্ব ঘটনা| তারপর তিনদিন ধরে বিরাট ধর্মসভা অনুষ্ঠিত হয়| তাতে পন্ডিত মদন মোহন মালিবু, পন্ডিত প্রমতিওনাল তর্কভূষণ, মহামন্ডলেশ্বর স্বামী দেবানন্দ গিরি প্রভৃতি মহাত্মাগণ বক্তৃতা করেন|

ঠাকুর শ্রীরামকৃষ্ণ দেবের পাথরের অপূর্ব মূর্তিটি যেন যথার্থ সজীব| শ্রদ্ধেয় প্রেমেশ মহারাজ এই বিগ্রহ সম্পর্কে বলেন, _____🔵

   🔺   " অদ্বৈত আশ্রমের মর্মর বিগ্রহে কেহ কেহ ঠাকুরের প্রত্যক্ষ দর্শন করিয়া থাকেন" ( শতবর্ষে শ্রীরামকৃষ্ণ, অদ্বৈত আশ্রম, বারানসী, ১৯০২-২০০২)| 🔺

জয় ঠাকুর, জয় মা, জয় স্বামীজী|।।
🙏🏻🌹🌼🌺🙏🏻🌹🌼🌺🌹🌼🌺🙏🏻🌹🌼🌺🙏🏻🌹🌼🌺🙏🏻🌹🌼🌺🙏🏻🌹🌼🌺🙏🏻🌹🌼





শ্রীরামকৃষ্ণের জন্ম ঢেঁকিশালে। জন্মস্থানের ঠিক উপরেই তৈরী হয়েছে শ্রীরামকৃষ্ণ মন্দির।

এই মন্দিরটির শিল্প পরিকল্পনা করেন প্রখ্যাত চিত্রশিল্পী নন্দলাল বসু এবং নির্মান দেখাশোনার ভার ন্যস্ত হয়েছিল মার্টিন বার্নের ইঞ্জিনিয়ার গোপেন্দ্রনাথ সরকারের উপর । পাথর খোদাই-এর কাজ করেছিলেন সুদক্ষ নৃসিংহ হাজরা । ঠাকুরের মূর্তি এবং বেদী তৈরি করেন তখনকার প্রখ্যাত শিল্পী মণি পাল ।

মন্দিরটির প্রতিষ্ঠা হয় ১৯৫১ সালের ১১ই মে । জন্ম গ্রহণের সময়টির স্মারক রূপে শ্বেতপাথরের বেদীর সামনে ঢেঁকি, চুল্লী ও প্রদীপ খোদাই করা রয়েছে। এখানে সকাল-সন্ধ্যা পূজা, আরতি ও ভোগ হয় এবং প্রতি সন্ধ্যায় স্তোত্রপাঠ ও সঙ্গীতানুষ্ঠান হয়।

নির্বাচিত ভাস্কর মূর্তিটি নিখুঁত ভাবে তৈরী করার জন্য ঠাকুরের দৈহিক উচ্চতা জানতে চান । যে কোটটি পরে শ্রীরামকৃষ্ণ রাধাবাজারে অধুনা লুপ্ত " বেঙ্গল ফটোগ্রাফার " নামক ষ্টুডিওতে ফটো তুলিছিলেন, সূর্য মহারাজ ( স্বামী নির্ব্বাণানন্দ ) বেলুড় মঠে সংরক্ষিত সেই কোটটি থেকে ঠাকুরের উচ্চতা মোটামুটি ৫ ফুট ৯ ইঞ্চি অনুমান করেন । সেই অনুপাতেই মূর্তিটি গড়া হয় । (সংগৃহীত)



সাধু, সন্ন্যাসী  ও গৃহস্থ :: ==


সকলেই যদি সাধু হবে, তো গৃহস্থ হবে কে? সাধু হওয়া সহজ কথা নয়; লক্ষ লক্ষ গৃহস্থের মধ্যে একজন সাধু হয়। গেরুয়া পরলেই সাধু হওয়া যায় না। ঠিক ঠিক বৈরাগ্য চাই, সংযম, ত্যাগ, তপস্যা চাই—তবে সাধু হওয়া যায়। তেমনি, গৃহস্থ হলেই হলো না। বিয়ে করে কতকগুলো ছেলে-পিলে হলে, আর খুব টাকা কামাতে পারলেই গৃহস্থ হল না। যে গৃহস্থ এই-সব ধন-দৌলত, ছেলেপিলে থাকা সত্ত্বেও ভগবানের জন্য ব্যস্ত, ঐ-সবে তার মন নেই; সেই ঠিক ঠিক গৃহস্থ। গৃহস্থ সত্‌, শান্ত, জ্ঞান-পিপাসী হবে, আর সেই ঠিক আদর্শ গৃহী। আদর্শ গৃহী, আর সাচ্চা সাধু-এক।
ভগবানের জন্য ষোল-আনা ত্যাগ করার নাম হচ্ছে সন্ন্যাস। গীতাতে এ-সব কথা আছে। গেরুয়া পরলেই সন্ন্যাসী হয় না; অনেক ত্যাগ তপস্যার দরকার। তোমরা হয়তো বলবে—এত যে সন্ন্যাসী দেখছি, তারা কি সকলেই ভগবানের জন্য ষোল-আনা ত্যাগ করেছে? না—তা করতে পারেনি; তবে এরা চেষ্টা করছে তাঁর জন্য সর্বত্যাগী হতে, তাঁকে মনেপ্রাণে ভালবাসতে। তাঁর দায় হলে এক মুহূর্তে ঠিক ঠিক সন্ন্যাসী হয়ে যেতে পারে। আর দেখ, একটা ভাল উদ্দেশ্য নিয়ে লোকে সন্ন্যাস নেয়। আর কিছু না হোক, সদ্‌ভাবে জীবনটা কাটিয়ে দিতে চেষ্টা করে, কারো অনিষ্ট করতে যায় না। এটা কি কম কথা! যুবা বয়সই সাধন-ভজনের ঠিক সময়; এ সময়টা আলস্যে কাটিও না, সাধন-ভজন করে তাঁকে লাভ কর, মানুষ হও। যদি সাধন-ভজন না করতে পার, তবে কোন সত্‌ কাজ কর, কারও অনিষ্ট করো না। পরচর্চা করো না, তার চেয়ে ঘুমান ভাল।
যার সাধু স্বভাব সে কখনও অসাধু ভাব আনতে পারে না। তার মনে কখনও অমন প্রবৃত্তি হয় না। সে কোন কাজ গোপন করে করতে চায় না, যা করে সব প্রকাশ্যে সে নির্ভীক-চিত্ত সিংহের মত দুনিয়ার কাউকেও ভয় করে না। আর কেনই বা করবে? কারো অনিষ্ট করে না, কারো চর্চায় থাকে না, সত্—কপটতা নেই, কেনই বা (ভয়) করবে?
ছেলের বাপ হলেই হল? তোমার যে দায়িত্ব আছে—যে পর্যন্ত ছেলে সাবালক না হয়। ছেলের ভালমন্দ তোমার উপর নির্ভর করছে। বাপ-মায়ের দোষেই ছেলে খারাপ হয়। তারা কি জানে?—যেমন শিক্ষা পাবে, তেমনই হবে। সেজন্য বাপ-মাকে খুব সাবধানে চলাফেরা, কথাবার্তা কইতে হয়। কারণ বাপ-মাকেই ছেলে বেশী নকল করে। ছেলে সাবালক হয়ে গেলে—নিশ্চিন্ত; তখন সে নিজের কর্মের জন্য নিজেই দায়ী, বাপ-মার আর কোন ‘দায়’ থাকে না। কিন্তু এ ঘোর দায়িত্ব কটা লোক বুঝে? ছেলেগুলো কোন প্রকারে খেতে-পরতে পেলেই যথেষ্ট হল—এই ভাল। আরে, মানুষের আকার হলেই কি মানুষ হয়? মানুষের আকারে অনেক দানা-দৈত্যও আছে—পশু আছে। দশটা দানা-দৈত্যের মতো ছেলের চেয়ে একটা ‘মানুষ’ ভাল। ছেলেদের আর দোষ কি? তাদের মানুষ করলে তবে তো মানুষ হবে? ছেলেকে মানুষ করতে হলে বাপ-মাকে আগে মানুষ হতে হবে—তবে হবে। এই দায়িত্ব-জ্ঞান কি অমনি হয়, কত সত্‌-সঙ্গ করতে হয়, আদর্শ পুরুষদের জীবন দেখতে হয়, কত সব চেষ্টা করতে হয়, তবে হয়। যার এ দায়িত্ব-জ্ঞান আছে সেই মানুষ। আমার ছবি ‘অমুক’ পূজো করছে। তা সে পূজো না করলে আমার আর স্বর্গে যাওয়া হবে না! আমার ছবি পূজা করে কি হবে? তাঁকে (ঠাকুরকে) পূজো কর, যাতে কল্যাণ হবে। ত্রৈলঙ্গস্বামী কত যে কষ্ট (তপস্যা) করেছেন, তা তোমরা কি বুঝবে? তাঁকে যারা ভক্তি-শ্রদ্ধা করে, পূজো করে, তাদের কল্যাণ হবেই। তিনি (ঠাকুর) বলতেন—‘‘ত্রৈলঙ্গস্বামী সব্‌সে পার। শরীর সাধারণের মতো, কিন্তু কর্ম মানুষের মতো নয়। শিবত্ব প্রাপ্ত হয়েছেন। বিশ্বনাথ আর ত্রৈলঙ্গস্বামী অভেদ।’’
মাস্টার মহাশয় খুব পণ্ডিত লোক; ওঁর দরুন কত লোকের কল্যাণ হয়েছে, আর এখনও হচ্ছে। ‘কথামৃত’ পড়ে কত লোকে ঠাকুরকে জানতে পাচ্ছে। মাস্টার মহাশয়ের বয়স হয়ে আসছে, এখন তাঁর দয়ার শরীর ভাল থাকলেই বাঁচোয়া। এ-সব লোক যতদিন সংসারে থাকে সংসারের কল্যাণ।
সত্‌লোক অপরের দুঃখ দেখলে দুঃখিত হয়; আর যদি শক্তিতে কুলোয় তো যতটুকু পারে দুঃখ দূর করতে চেষ্টা করে। কিন্তু অসৎলোক অন্যের দুঃখে আনন্দিত হয়, হাসে; বলে—কর্মফলে ভুগছে। জানে না—তারও একদিন অমনি দুঃখ হতে পারে। এ-সব অতি নীচ জীবের কথা। মানুষের ধর্ম হচ্ছে—পরস্পরের দুঃখ দূর করতে চেষ্টা করা, পরস্পরের কল্যাণ কামনা করা। মহাপুরুষদের জীবন দেখলে এ সব বুঝতে পারবে।

স্বামী সিদ্ধানন্দ-সংগৃহীত স্বামী অদ্ভুতানন্দের ( লাটু মহারাজের ) সত্‌কথা



'কেন ভাল লোকেরা সর্বদা দুঃখ পান', বিলে-কে এই প্রশ্নের ব্যাখ্যা দিয়েছিলেন রামকৃষ্ণ পরমহংস 

রামকৃষ্ণ কথামৃত, কথিত আছে যে রামকৃষ্ণ পরমহংস মা কালীকে খাবার নিজের হাতে খাবার খাওয়াতেন। ঠাকুর একজন বিখ্যাত চিন্তাবিদ, ধর্মগুরু এবং প্রেরণা ছিলেন। রামকৃষ্ণ পরমহংস স্বামী বিবেকানন্দের গুরু ছিলেন। যখনই বিবেকানন্দ সমস্যায় পড়তেন বা মনে কোনও বিষয়ে মনে চঞ্চল থাকত, তিনি প্রায়শই তাঁর প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে তাঁর গুরু রামকৃষ্ণ পরমহংসের কাছে পৌঁছে যেতেন। 

 

একবার স্বামী বিবেকানন্দ তাঁর গুরু রামকৃষ্ণ পরমহংসকে জিজ্ঞাসা করেছিলেন কেন ভাল লোকেরা সর্বদা দুঃখ পান এবং রামকৃষ্ণ পরমহংস তাদের খুব সহজে উত্তর দিয়েছিলেন

ঠাকুর বলেছিলেন, জীবনের ক্রিয়াকলাপ তোমাকে ঘিরে থাকবে, তবে উত্পাদনশীলতা তোমাকে মুক্তি দেবে। তাই জীবনকে বিশ্লেষণ করা বন্ধ কর, এটি জীবনকে আরও জটিল করে তোলে।


শুধু জীবন কাটাও, যেমন ভাবে তোমার মন চায়। আর মন খারাপ! তা অভ্যাসের কারণে হয়, এর কারণেই তুমি (বিলে) খুশি নও।
রামকৃষ্ণ পরমহংস আরও বলেছিলেন, হীর ঘষলেই কেবল জ্বলজ্বল হয়। খাঁটি হয়ে উঠতে সোনাকে আগুনে গরম করতে হয়। ভাল মানুষ দুঃখিত তখনই পায় যখন ঈশ্বর তাঁর পরীক্ষা নেন।


পরীক্ষার মধ্য দিয়ে গেলেই এই অভিজ্ঞতা জীবনকে উন্নত করে তোলে, অকেজো নয়। আর অভিজ্ঞতা প্রতিটি অর্থে কঠোর শিক্ষকের মতো। প্রথমে তিনি পরীক্ষা দেন এবং তারপরে শিক্ষা দেন।



তাই বিপদে পড়লে সর্বদা মন শক্ত রাখ, ঈশ্বরের কাছে প্রার্থণা কর। কারণ কোনও প্রার্থনা বৃথা যায় না। নিজের প্রতি বিশ্বাস রাখ এবং ভয়কে দূরে রাখ।


জীবনকে তোমায় আবিষ্কার করতে হবে, এর সমস্ত সমস্যা তোমায় সমাধান করতে হবে তবেই তুমি সঠিক জীবনে সঠিক অঙ্ক কষতে পারবে।