Thursday, 7 May 2020

ঠাকুরের ছবি


ঠাকুরের ছবি তোলার প্রসঙ্গে 





একদিন স্বামী অখণ্ডানন্দ মহারাজ কথাচ্ছলে আমাদের বলেছিলেন - "ঠাকুরের যে ছবি পূজা হয়, তার সম্বন্ধে কিছু জানিস?" আমরা বিশেষ কিছু জানি না বলাতে তিনি বলেন : "বরানগরের ভক্ত ভবনাথ ( স্বামীজীর বন্ধু ) ঠাকুরের ফটো তুলতে চায়। একদিন অনেক অনুরোধ করে। পরদিন বরানগর থেকেই এক ফটোগ্রাফার সঙ্গে নিয়ে এসেছে বিকেলের দিকে। ঠাকুরকে প্রথমে রাজি করাতে পারেনি। ঠাকুর রাধাকান্তের মন্দিরের দিকে চলে গেলেন।

ইত্যবসরে স্বামীজী এসে পড়েছেন। সব শুনে বললেন, "দাঁড়া, আমি সব ঠিক করছি।" এই বলে রাধাকান্তের মন্দিরের উত্তরদিকে রকের ওপর যেখানে ঠাকুর বসেছিলেন, সেখানে গেলেন ও তাঁর সঙ্গে ভগবৎ-প্রসঙ্গ আরম্ভ করলেন। ঠাকুর সমাধিস্থ হয়ে গেলেন। স্বামীজী উঠে গিয়ে তাদের ডেকে নিয়ে এসে বললেন, "তাড়াতাড়ি ক্যামেরা ফিট কর।"
সমাধিতে ঠাকুরের শরীর একটু হেলে গিয়েছিল। ক্যামেরাম্যান ঠাকুরের চিবুক ধরে সোজা করে দিতে গেছে, চিবুক ধরামাত্র ঠাকুরের শরীর হালকা কাগজের মতো হাতের সঙ্গে উঠে পড়েছে। তখন স্বামীজী বললেন "ওকি করছিস, শীঘ্র শীঘ্র ক্যামেরা ফিট কর।" ক্যামেরাম্যান যথাসম্ভব তাড়াতাড়ি ফটো তুলে নিল। এই ঘটনা ঠাকুর কিছুই জানতেন না । কয়েকদিন পরে ভবনাথ যখন প্রিন্ট করা ছবি নিয়ে এল,  ঠাকুর দেখে বললেন, "এ মহাযোগের লক্ষণ, এই ছবি কালে ঘরে ঘরে পূজা হবে।”
           স্বামী নির্বাণানন্দ।





অনেকের বাড়িতেই এই ছবিটা দেখতে পাওয়া গেলেও কিন্ত অনেকেই সম্ভবত এই ছবির পেছনের আসল রহস্যটা জানেন না। 

শ্রীরামকৃষ্ণ সাধারণত কাউকে নিজের ছবি তুলতে দিতেন না। তিনি সেটা পছন্দ করতেন না। কিন্তু ঠাকুরের যে মহান ছবিগুলো তোলা হয়েছিল তারমধ্যে এই ছবিটা ভীষণ রহস্যময়। ছবিটাতে দেখা যাচ্ছে ঠাকুর তাঁর ডান হাত ঊর্ধ্বে করে এবং বাম হাত বুকের কাছে রেখে এক মুদ্রায় দাঁড়িয়ে আছেন এবং পেছনে একজন তাঁকে ধরে আছেন। চলুন জেনে নেওয়া যাক এই ছবির পেছনের রহস্যটা।

আসলে ঠাকুর দাঁড়িয়ে রয়েছেন মৃগ মুদ্রাতে। এই ছবিটা তোলার ব্যবস্থা করেছিলেন শ্রীযুক্ত কেশব চন্দ্র সেন মহাশয় এবং ছবিটা তোলাও হয়েছিল তাঁরই ভবনে। সেই সময়ে কীর্তনের আসরে ঠাকুরের সমাধি ভাব আসে। উক্ত ছবিটাতে ঠাকুর রয়েছেন সম্পূর্ণ সমাধিস্থ অবস্থায় এবং তাঁকে ধরে রয়েছেন তাঁর নিজের ভাগ্নে হৃদয়রাম মুখোপাধ্যায়।

ছবিটাতে দেখা যায় ঠাকুরের দুই হাতের এক অনন্য ভঙ্গী। কিন্তু কি রহস্য রয়েছে এর পেছনে? পরে তাঁর শিষ্য স্বামী প্রেমানন্দজীর লেখা থেকে জানা যায় যে ঠাকুরের উর্ধমুখী ডান হাতটা আসলে বোঝায় “পরমাত্মা”-কে এবং বাম হাতটা বোঝায় এই “বিশ্ব সংসার”-কে। এর অর্থ এ জগতের সব কিছুই ক্ষণস্থায়ী, সবাই পর, সবাইকেই অবশেষে মিলতে হবে পরমাত্মাতে, কেউ এ ব্রহ্মান্ডের কিছুই নিয়ে যেতে পারবেনা।

‌(সংগৃহীত)

🙏🌹🙏🌹🙏🌹🙏🌹🙏



শশী মহারাজকে লেখা স্বামী বিবেকানন্দের চিঠি 


✉️ Math, Belur,
Dist., Howrah,
3rd June, 1901.

My Dear Shashi,
[Swami Ramakrishnanda]

Reading your letter I felt like laughing, and also rather sorry. The cause of the laughter is that you had a dream through indigestion and made yourself miserable, taking it to be real. The cause of my sorrow is that it is clear from this that your health is not good, and that your nerves require rest very badly.

Never have I laid a curse on you, and why should I do so now? All your life you have known my love for you, and today are you doubting it? True, my temper was ever bad, and nowadays owing to illness it occasionally becomes terrible — but know this for certain that my love can never cease.

My health nowadays is becoming a little better. Have the rains started in Madras? When the rains begin a little in the South, I may go to Madras via Bombay and Poona. With the onset of the rains the terrible heat of the South will perhaps subside.

My great love to you and all others. Yesterday Sharat returned to the Math from Darjeeling — his health is much better than it was before. I have come here after a tour of East Bengal and Assam. All work has its ups and downs, its periods of intensity and slackness. Again it will rise up. What fear? ...

Whatever that may be, I say that you stop your work for some time and come straight back to the Math. After you have taken a month's rest here, you and I together will make a grand tour via Gujarat, Bombay, Poona, Hyderabad, Mysore to Madras. Would not that be grand? If you cannot do this, stop your lectures in Madras for a month. Take a little good food and sleep well. Within two or three months I shall go there. In any case, reply immediately as to what you decide to do.

Yours with blessings,
Vivekananda
(The Complete Works of Swami Vivekananda/Volume 5/Epistles - First Series/CIV Shashi)


ওম (OM) কথার অর্থ : 


জেনে নিন ওম ( OM )এর তাৎপর্য
ওম সনাতন ধর্মে অনুসৃত প্রতীক চিহ্নের মধ্যে অত্যন্ত্ গুরুত্বপূর্ন চিরন্তন চিহ্ন এবং এই শব্দের ধ্বনি ধ্যানের জন্য ব্যাবহৃত হয়ে থাকে । এছাড়া সকল ধরনের প্রার্থনার প্রথমে ওম শব্দ উচ্চারন করা হয় । মূলত ওম শব্দ মহাবিশ্ব ও প্রকৃত বাস্তবতাকে নির্দেশ করে থাকে । ওম শব্দ দিয়ে ভগবানের তিনটি প্রকৃতি অর্থাৎ ব্রহ্মা , বিষ্ণু এবং মহেশ্বর নির্দেশ করে থাকে ।
স্বামী বিবেকানন্দের মতে, ওঁ-কার “সমগ্র ব্রহ্মাণ্ডের প্রতীক, ঈশ্বরেরও প্রতীক।

ধর্মীয় চিহ্ন হলেও ব্যবহারিক জীবনে ওঁ-কারের প্রয়োগ আরও ব্যাপক। প্রত্যেকটি মন্ত্র ওঁ-কার দিয়ে শুরু হয়। চিঠিপত্রের শুরুতেও কেউ কেউ ওঁ-কার লিখে থাকেন। মন্দির, ঠাকুরঘর প্রভৃতি ধর্মীয় স্থানের প্রতীকচিহ্ন রূপেও ওঁ-কার ব্যবহৃত হয়। শাস্ত্রীয় সঙ্গীত , যোগব্যায়ামে ওম দিয়ে শুরু হয়







ঠাকুর রামকৃষ্ণদেবের সাথে স্বামীজির কথপোকথন


নরেন এসে শক্ত হাতে ধরছে ঠাকুরকে। বললে, কেমন আপনার মা এইবার দেখবো। তাকে বলুন আপনার গলার ব্যাথা  সারিয়ে দিতে। 
তোকে বলছি না যে মন সচ্চিদানন্দে অর্পণ করেছি, তা এই হাড়মাসের খাঁচার মধ্যে আনতে পারব না।
ও সব কথা শুনব না কিছুতেই। বলতেই হবে আপনাকে। সন্তানের ব্যথা হরন করে না সে কেমন জননী।
ঠাকুর  কথা কন না, আবিষ্টের মতো তাকিয়ে থাকেন। 
আপনি বললে নিশ্চয় শুনবে। নরেন আবার তাড়া দিল ; আপনি কিছু খেতে পাচ্ছেন না এই কষ্ট আর আমরা দেখতে পাচ্ছি না। 
ওরে ও - সব কথা যে মুখ দিয়ে বেরোয় না। 
আমাদের জন্যে বার করতেই হবে।শুনব না কিছুতেই। নরেন দৃঢ়স্বরে বললে, যেখানে একটা মুখের কথা বললেই কষ্টের উপশম হয়, কেন আপনি বলবেন না? আপনার জন্য বলতে বলছি না, আমাদের জন্য বলুন, আমাদের কষ্টের লাঘবের জন্যে। যাতে অন্তত একটু খেতে পারেন তাই চেয়ে নিন। আপনি খেতে পাচ্ছেন না আর আমারা দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে তাই দেখছি, এ কষ্ট সহনাতীত। 
ঠাকুর উঠলেন। বললেন, দেখি। যখন বলছিস এত করে। দেখি বলতে পারি কিনা। 
ঠাকুর আঙুল দিয়ে গলার ঘা ইঙ্গিত করলেন। বললেন, সরল শিশুর মত; 
মা, এইটের দরুন কিছু খেতে পারছি না যাতে দুটো খেতে পারি তাই করে দে।
মা বুঝি পার্থনা শুনলেন। উজ্জ্বলনয়নে হেসে কি যেন বললেন ঠাকুরের কানে- কানে। মন্দির থেকে ফিরে চললেন ঠাকুর। নরেন ব্যস্তসমস্ত হয়ে এগিয়ে এল। কি, বললেন মাকে? দীপ্তিদ্রুত  তীরের মতন তার প্রশ্ন। 
বললুম।
কি বললেন? 
বললুম, কিছু  খেতে পারছি না।যাতে দুটো খেতে পারি তাই করে দে।
শুনে মা কি বললেন?
তোদের সবাইকে দেখিয়ে দিলেন। বললেন, কেন, তোর একমুখ বন্ধ হয়েছে তো কি হয়েছে!  তুই  তো এদের শতমুখে খাচ্ছিস।লজ্জায় আর কথাটি কইতে পারলুম না। 
নরেনের মাথাও হেঁট হল।


জয় ঠাকুর।


আত্মারামের কৌটো
---------------------------------------------
ছবিতে যে রূপার তৈরী শিবলিঙ্গটি দেখা
 যাচ্ছে, ওর মধ্যেই আছে শ্রীরামকৃষ্ণদেবের
 পবিত্র অস্থিভস্ম, ঠাকুরের অস্থিভস্ম অল্প
 অল্প পরিমাণে বহু মঠে ছড়িয়ে আছে, যেমন বেলুড় মঠ, চেন্নাই মঠ, মুম্বাই, ভুবনেশ্বর,
শিলং, কাশী, বৃন্দাবন, রাজকোট,
জামতাড়া, কামারপুকুর, যোগোদ্যান,
উদ্বোধন, জয়রামবাটী ইত্যাদি আশ্রমে।

এছাড়াও ঢাকা ও সিঙ্গাপুরেও রয়েছে এই অস্থিভস্ম।

বেলুড় মঠে ঠাকুরের বেদীতে প্রোথিত আছে এর এক অংশ, অপরাংশ সযত্নে রক্ষিত আরেকটি বিশেষ জায়গায়, বছরের বিশেষ বিশেষ দিনে এটি মূল গর্ভগৃহে এনে পূজা করা হয় ।


ছবিতে যে শিবলিঙ্গটি, এটিই সেই অস্থিভস্মের অপরাংশের আধার।






আজ ২রা মে,একটি বিশেষ দিন। একে ঐতিহাসিক দিনও বলা যেতে পারে। ১৮৮৩ খ্রীষ্টাব্দের এই দিনটিতে মহামিলন ঘটে দুই ঠাকুরের, শ্রীরামকৃষ্ণ ও রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। এই ছিল তাঁদের প্রথম ও শেষ দেখা। কোলকাতার শ্যামবাজারের কাছে কাশীশ্বর মিত্রর বাড়ি ২০তম ব্রাহ্ম উৎসবে নিমন্ত্রিত ছিলেন শ্রীরামকৃষ্ণ। বিকেল ৫টায় রাখাল মহারাজ, শ্রীম ও অন্যান্য ভক্তদের নিয়ে তিনি উপস্থিত হন সেখানে। একই বাড়িতে নিমন্ত্রিত হয়ে আসেন রবি ঠাকুর ও। কবির বয়স তখন মাত্র ২২ বছর,কিন্তু ইতিমধ্যে লিখে ফেলেছেন অনেক গান ।শ্রীরামকৃষ্ণের অনুরোধে তরুন কবি যে গান টি শুনিয়েছিলেন,সেটিও ২/৩ দিন আগে লেখা।বোধ হয় এই উপলক্ষেই ঈশ্বর তাঁকে দিয়ে গান টি রচনা করিয়েছিলেন।কবি গাইলেন তাঁর বিখ্যাত গান "আমার মাথা নত ক'রে দাও হে তোমার চরনধুলার তলে" । শ্রীরামকৃষ্ণ কবির মাথায় হাত দিয়ে আশির্বাদ করেন। প্রতি বছর এই দিন টি মিত্তির বাড়িতে বিশেষ ভাবে পালন করা হয়।

আমার   মাথা নত করে দাও হে তোমার চরণধুলার তলে।
সকল অহংকার হে আমার ডুবাও চোখের জলে॥




"সবাই কি তাঁকে ধরতে পারে" ?
              __________

হে বীর যুবক ! অনুভব কর, হৃদয় দিয়ে অনুভব কর। তাঁদের দুঃখ হৃদয়ে ধারণ কর, যতক্ষণ না হৃৎস্পন্দন স্তব্ধ হয়ে আসে, যতক্ষণ না চিত্ত বিকল হয়, যতক্ষণ না মনে হয় তুমি পাগল হয়েছ। উৎসর্গ কর আত্মাকে ঈশ্বরের শ্রীচরণে। শক্তি পাবে, ঈশ্বরের সহায়তা পাবে, পাবে অদম্য কর্মোৎসাহ।

খালি পেটে ধর্ম হয় না। আগে সংসার। বিয়ে দশবিধ সংস্কারের এক সংস্কার। সংসার কর্তব্য। জ্ঞানের অপর খন্ড। চিনি থেকে বালি সরাও, সরাও দুধ থেকে জল, অনিত্য থেকে নিত্যকে বের করে, শান দাও বৈরাগ্যে, ক্ষুদ্র সংস্কার চূর্ণ করে মহাকালের কোলে এসে বসো। শ্রীরামকৃষ্ণদেব বললেন, অহং আমিকে দাস আমি কর, থাক শালা দাস আমি হয়ে, শরণাগত হও। কিন্তু ফোঁস ছাড়লে চলবে না। তুমি তোমার গুরু। তুমিই আত্মা পরমাত্মার অংশ। তৈরি কর নিজেকে। মৃত্যু নয়, মুক্তির আনন্দে।

সব পারি, ব্যাকুল হতে পারি না কেন ? কোথায় আটকায় ? বুঝেছি, এই পৃথিবীতে নিজেকে ঠিক ততটা অসহায় মনে করতে পারি না। জৈব অভ্যাসে যা যা প্রয়োজন, কম পাই আর বেশি, পেয়ে তো যাচ্ছি। আপনজনরা ঘিরে আছে, যতই দুঃখ দিক, আঘাত দিক, মনের এমন অভ্যাস, কিছুতে মানতে চায় না। ওরে কেউ তোর আপন নয়। স্বার্থের টানাপোড়েনে বাঁধা। রামকৃষ্ণদেব বললেন, বড় ধন্দে পড়েছিস না ! যে তাঁকে ভাবে না, সে এইরকম। তার বিশ্বাস নিয়ে সে থাকে। খায় দায়, সংসার করে, হাসে, কাঁদে, রাগে। তার দুঃখের কারণ অন্য, আনন্দের কারণ অন্য ; কিন্তু যার মনে একবার তিনি ছায়া ফেলেছেন, সে বেটা মরেছে। সে বুঝেছে, হাতের কাছে রয়েছে আনন্দ ভান্ডার, অপার আনন্দ ধারা। নদী বইছে, নদীর শব্দ, উজ্জয়ী বাতাস বইছে, কিন্তু অবগাহন করা যে যায় না। সূক্ষ্ম অথচ শক্ত ব্যবধান। কিছুতে ভাঙা যায় না, উত্তীর্ণ হওয়াও যায় না। পিঞ্জরের পাখির মতো হতে যাব কেন ? হ্যাক থু ! সীতার মতো করে দাও। একেবারে সব ভুলে যাই। দেহ ভুল, হাত, পা, কোন দিকে হুঁশ নেই। কেবল এক চিন্তা, কোথায় রাম !

বদ্ধজীবের মনে প্রশ্ন আসে না, দিন তো যায়, কি করলুম ! ফেলে আসা দিনগুলিতে, চিন্তায় কর্মে আমি কি করে এলুম। বদ্ধজীব সম্পর্কে রামকৃষ্ণদেব বলেছেন, "বদ্ধজীব সংসারের কামিনী কাঞ্চনে বদ্ধ, হাত পা বাঁধা। লোভ লাগামছাড়া। আবার মনে করে, কামিনী কাঞ্চনে সুখ, তাই নির্ভয়ে থাকে। জানে না ওতে মৃত্যু আছে। বদ্ধজীব যখন মরে তার পরিবার বলে, 'তুমি ত চললে, করে গেলে কি আমায়' ? এমনি মায়া যে, মৃত্যশয্যায় শুয়ে প্রদীপে বেশি সলতে পুড়লে বলে, 'তেল পুড়বে, সলতে কমাও'। বদ্ধজীব ঈশ্বরচিন্তা করে না, অত সোপান নেই। যদি অবসর পায়, আবোল তাবোল গল্প করে, নয় মিছে কাজ করে। জিজ্ঞেস করলে বলে, আমি চুপ করে থাকতে পারি না তাই ঘাস ছিঁড়ি, বেড়া বাঁধি। সময় কাটে না দেখে তাস টাস খেলে"।

সদসৎ বিচারের নাম বিবেক। ঈশ্বর সৎ, নিত্য। আর সব অসৎ, অনিত্য ; দু'দিনের। এটি বোধ, ঈশ্বরে অনুরাগ। গোপীদের শ্রীকৃষ্ণের প্রতি যেরূপ অনুরাগ। ঈশ্বরে রাগানুগা ভক্তি আর বিবেক বৈরাগ্য। গুরু কি প্রয়োজন ! সচ্চিদানন্দ গুরু। কেবল বিচার। যদি রাগভক্তি হয়, অনুরাগের সাথে ভক্তি, তিনি স্থির থাকতে পারেন না। রাগভক্তি, শুদ্ধাভক্তি, অহেতুকী ভক্তি, যেমন প্রহ্লাদ।

রামকৃষ্ণদেব বললেন, "সবাই কি তাঁকে ধরতে পারে ? তিনি ভাল লোক করেছেন, মন্দ লোক করেছেন, ভক্ত করেছেন, অভক্ত করেছেন, বিশ্বাসী করেছেন, অবিশ্বাসী করেছেন। তাঁর লীলা সব বিচিত্র, শক্তি তাঁর কোনখানে বেশি প্রকাশ, কোনখানে কম ! সূর্যের আলো মাটির চেয়ে বেশি প্রকাশ জলে, আবার জল অপেক্ষা দর্পণে বেশি প্রকাশ। পান্ডিত্য দ্বারা তাঁকে পাওয়া যায় না। তাঁর বিষয় কে বিচার করে বুঝবে, তাঁর পাদপদ্মে ভক্তি যাতে হয়, সে চেষ্টাই কর না"।

পরমপদকমলে -





ঠাকুর এ কয়টার উপর বিশেষ লক্ষ্য রাখতেনঃ প্রথম, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা। প্রায়ই আলস্যের জন্যই লোক অপরিষ্কার থাকে। ঈশ্বরচিন্তা করে দেহভুল ক’জনের হচ্ছে? পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন না থাকলে ভগবানের আবির্ভাব হয় না। অন্তর্বহিঃ শৌচের দরকার। দ্বিতীয়, waste (অপব্যয়) না হয়। অনেকে জিনিস নষ্ট করে, তা দেখতে পারতেন না। একবার এক টুকরা লেবুর জায়গায় ছয় টুকরা কেটেছিল বলে তিরস্কার করেছিলেন কাশীপুরে। বলেছিলেন, ভক্তরা কত কষ্ট করে অর্থোপার্জন করে, সেই অর্থে সেবা হচ্ছে, তার অপব্যবহার! বলতেন, লক্ষ্মীছাড়া থেকে কৃপণ হওয়া ভাল। দু’টোই খারাপ, তবু তো যা তা নষ্ট না করে কৃপণ হওয়া ভাল। আহারের সময় অনেকে ভাতটাত কত নষ্ট করে। এসব পছন্দ করতেন না। কুকুরের জন্য দুটি রাখতে হয়। তাছাড়া যেমন আবশ্যক তেমনি নাও – নষ্ট না হয়। তৃতীয়, ছেঁড়া কাপড় কিংবা ময়লা কাপড় পরা দেখতে পারতেন না। বলতেন, সেলাইকরা কাপড় পরলে লক্ষ্মীছাড়া হয়। চতুর্থ, এলোমেলো ভাব – যেমন এখানকার জিনিস ওখানে রাখা। যার যে স্থান সেখানে রাখা আর সাজিয়ে রাখা। পঞ্চম, নিজের রান্না নিজে করা। বলতেন, ভক্তরা যারা তাঁর ভজন করবে, তারা নিজের দুটি চাল নিজে ফুটিয়ে নেবে। ভগবানে অর্পণ করে প্রসাদ পাবে। এতে পরের উপর নির্ভর করতে হয় না, আর সত্ত্বহানিও হয় না।

বলতেন, সর্বাবস্থায় তাঁর পূজা। কোনটাই অবহেলা করা চলে না। আহার বিহার, শয়ন, চলন, বলন, সর্বদা সর্ববস্তুতে তাঁর অনুধ্যান। তবে তো ধর্ম।

ধর্ম ধর্ম করে লোক – ধর্ম কি অত সোজা? – শ্রীম দর্শন।






🔱  ঠাকুর শ্রীশ্রী রামকৃষ্ণ তৈরি করা লোক এনে কতকগুলো সেনাপতি করে গিয়েছেন।  তাঁর শিষ্যেরা কেউ সাধারণ মানুষ নয়।  ঠাকুর তাঁর কাজের জন্য বিভিন্ন দেব-দেবী, পূর্ববর্তী অবতারের পার্ষদদের নিয়ে শিষ্যমন্ডলী গঠন করলেন।

🔱  স্বামীজী ছিলেন সপ্তর্ষির ঋষি।  তিনি নররূপী নারায়ণ ও শিবের অংশ।

🔱  রাখাল মহারাজ ছিলেন কৃষ্ণসখা ব্রজের রাখাল।  🍀 প্রেমানন্দ রাধার অংশে  🍀 নিরঞ্জনানন্দ রামের অংশে, পূর্ণ বিষ্ণুর অংশে জন্মগ্রহণ করেন।  🍀 শিবানন্দের  শিবের অংশে জন্ম কিন্তু তিনি নিজে একবার বলেছিলেন, "হয়তো আর জন্মে বৌদ্ধ সন্ন্যাসী ছিলাম।

🔱  যোগানন্দ পূর্বজন্মে অর্জুন ছিলেন।  🍀 বিজ্ঞানানন্দ ছিলেন জাম্বুবান।  🍀 লাটুবাবুর মহারাজ হনুমান ছিলেন।  🍀 রামকৃষ্ণানন্দ ও সারদানন্দ খ্রীষ্টের পার্ষদ ছিলেন।  🍀 শ্রীম ও বলরাম শ্রীচৈতন্যের পার্ষদ ছিলেন।  🍀 গিরিশ ছিলেন ভৈরবের অবতার।  🍀 অখন্ডানন্দ বলতেন, "আমি মা-যশোদা"।

🔱  ভক্ত মহিলাদের মধ্যে গোপালের মা ছিলেন কৃষ্ণ অবতারে ব্রজের ফলওয়ালি।  🍀 যোগীন মা ছিলেন কৃপা-সিদ্ধা গোপী ও জয়া।  🍀 গোলাপ মা ছিলেন বিজয়া।  🍀 নিস্তারিণী দেবী ছিলেন ছিন্নমস্তার অংশ।  🍀 রানী রাসমণি ছিলেন অষ্টসখীর এক সখী।  🍀 লক্ষ্মীদিদি ছিলেন মা শীতলার অবতার।

🔱  এ যুগের অবতার ঠাকুর লীলা করবার জন্য এই সব চিহ্নিত ব্যক্তিদের সঙ্গে নিয়ে এলেন।  এনারা কেউ আমাদের মতো সাধারণ মানুষ ছিলেন না।

🔱  ঠাকুরের অনন্তভাব তাঁর শিষ্যদের মধ্যে বিভিন্ন ভাবে রূপ পেয়েছে।  স্বামীজী ছিলেন দারুন শক্তিমান পুরুষ।  তিনি ঠাকুরের অনন্তভাবরাশি সারা পৃথিবীতে ছড়ালেন, কৃষকদের বীজ ছড়ানোর মতো।  স্বামীজী বলেছেন, "এই ভাবধারা ১৫০০ বছর চলবে।"

⚜  প্রাচীন সাধুদের কথা : সংগ্রহীত





🌹🌹পশুপাখিদের সঙ্গে শ্রীরামকৃষ্ণ(১)🌹🌹🌹
---------------------------------------

দক্ষিণেশ্বরে একটি কুকুর ছিল। ঠাকুর তাকে কাপ্টেন বলে ডাকতেন। সে প্রায়ই মা ভবতারিণীর মন্দিরের সমানে চাতালে বসে থাকতো। ঠাকুর কাপ্টেন ডাকলেই সে এসে তাঁর পায়ে গড়াগড়ি দিত,তিনি তাকে লুচি সন্দেশ খেতে দিতেন। বলতেন,"দেখ, এত যে কুকুর রয়েছে,কৈ কেউ তো মায়ের সামনে বসে না। গঙ্গার ধাপে বসতে,গঙ্গাজল খেতে এর মত কাউকে দেখিনি। এই ক্যাপ্টেনটা শাপভ্রষ্ট হয়ে জন্মেছে,ওর পূর্ব জন্মের সংস্কার যা ছিল, তাই এখানে এসে করছে, ধন্য হয়ে গেল।"
ঠাকুর তাঁর ভাতুস্পুত্র রামলালকে বলেছিলেন,"এখানকার কুকুর বেড়াল পর্যন্ত ধন্য হয়ে গেল।দেখনা মায়ের প্রসাদ খাচ্ছে,গঙ্গা দর্শন করছে,গঙ্গা জল খাচ্ছে, মন্দিরের চারদিকে যাওয়া আসা করছে...!!
দক্ষিণেশ্বরে একবার একটি কুকুরের অনেকগুলি ছানা হয়।কয়েকদিন পর কুকুরটি কঠিন রোগে মারা যায়। মায়ের দুধ না পেয়ে অনাথ কুকুর ছানাগুলি খুব কষ্টে রাতদিন এক জায়গাতেই শুয়ে থাকে। একদিন ঠাকুর যখন ওই পথে আসছিলেন, কুকুরছানা গুলি তাঁর পায়ের কাছে এসে কুঁইকুঁই করে কাঁদতে লাগলো। তিনি করুনা পরোবশ হয়ে সান্তনা দিতে লাগলেন। তারপরই একটি অলৌকিক ঘটনা ঘটল। তাঁর ঘরে এসে একজন খবর দিলো,কোথা থেকে একটি কুকুর এসে ছানাগুলিকে দুধ খাওয়াতে শুরু করেছে। কুকুরটির চেহারা,রং ও মুখের আকৃতি অনেকটা আগের কুকুরটির মতো। সুন্দর শ্রীশ্রী ঠাকুর বড়ই তুষ্ট হলেন:-
"শুনিয়া বড়ই তুষ্ট প্রভুদেবরায়।
বলিলেন সব হয় শ্যামার ইচ্ছায়।।
জগতের যেখানেতে যতবিধ প্রাণী।
সকলে সমানচক্ষে দেখেন জননী।।"
কামারপুকুরে বসবাসকালে ঠাকুর একদিন ভুতির খালের দিক থেকে হেঁটে আসছেন, একটু আগে বৃষ্টি হয়েছে। ঠিক তখন একটি মাগুর মাছ রাস্তায় উঠে এসে ঠাকুরের পায়ে থেকেছে। পরম দয়াল শ্রীশ্রী ঠাকুর তাঁকে পায়ে পায়ে ঠেলে ঠেলে এনে পুকুরে ছেড়ে দিয়ে বললেন,"পালা,পালা, হৃদে দেখতে পেলে এখুনি তোকে মেরে ফেলবে।"
ঠাকুর একবার দক্ষিণেশ্বর থেকে এসে কিছুদিন কামপুকুরে ছিলেন। ঠাকুর যখন বাড়ীর দাওয়ায় বসে থাকতেন, তখন মানুষের সঙ্গে বহু পাখিও তাঁকে দর্শন করতে আসতো। পাখিরা নির্দ্বিধায় তাঁর শরীরে বসে থাকতো। তাদের বিন্দুমাত্র ভয় ছিলোনা। কারণ তারা বুঝতে পারত জগতের সবথেকে নিরাপদ ও কাঙ্খিত স্থানে আশ্রয় নিয়েছে।
💓💓💓💓💓❤❤



কেশব সেন যখন আসে দক্ষিনেশ্বরে,  হাতে করে কিছু নিয়ে আসে। হয় ফল নয় মিষ্টি। ঠাকুরের পায়ের কাছে বসে কথা কয়। একেক দিন বা বক্তৃতা দেয়। 
সেদিন বড় ঘাটে গঙ্গার দিকে মুখ করে বক্তৃতা দিলে কেশব সেন। 
কিন্তু বক্তৃতার মধ্যেই উঠে গেলেন ঠাকুর। যারা জমাযেত হয়েছিল বলাবলি করতে লাগল,  লোকটা মুখ্খ্ কিনা, মাথায় কিছু ঢোকে না, তাই কেটে পড়ল। 
কিন্তু কেশব সেনের মনে ডাক দিল,  কোনো ত্রুটি হয়েছে নিশ্চয়ই। তাড়াতাড়ি কাছে এসে জিজ্ঞেসা করলেন ঠাকুর,  ' কিছু কি অন্যায় করে ফেলেছি?  
' নিশ্চয়ই।  তুমি বললে, ভগবান, তুমি আকাশ দিয়েছ বাতাস দিয়েছ-- কত কি দিয়েছ।  তারই জন্যে যেন তোমার কৃতজ্ঞতার অন্ত নেই। ও সব তো ভগবানের বিভূতি। বিভূতি নিয়ে কথা কইবার দরকার কি? এ কি তুমি বলে শেষ করতে পারবে?  তা ছাড়া,  এ সব বিভূতি যদি তিনি নাই দিতেন,  তা হলেও কি তিনি ভগবান হতেন না? একটু থামলেন ঠাকুর। বললে, ' বড়লোক হলেই কি তাঁকে বাপ বলবে?  যদি তিনি গরীব হতেন, নিঃস্ব ও নির্ধন হতেন, তা হলে কি তাঁকে বাপ বলবে না?
কেশব সেন চুপ করে রইল।
সকলে বলাবলি করতে লাগল, সত্যি বড়লোক হলেই কি বাপ হবে?  গরীব হলে সে আর বাপ নয়?
এরই নাম ভালোবাসা। ভগবান আমাকে  কিছু দিন বা না- দিন,  আমার দিকে তাকান বা না- তাকান, তবু আমি তাঁকে ভালোবাসি।  আমি তাকিয়ে আছি তাঁর দিকে। 
দক্ষিনেশ্বরের পাগলা বামুন কেশব সেনের মাথা ভেঙে দিয়েছে। এই নিয়ে শুরু হল হৈ- চৈ। 
তার পরে যখনই কেশব সেনকে  বক্তৃতা  দেবার জন্যে অনুরোধ করেছে ঠাকুর,  কেশব  সলজ্জে হাস্যে বলেছে, কামারের দোকানে আমি আর ছুঁচ বেচতে আসব না। আপনিই বলুন  আমরা শুনি।


জয় ঠাকুর।




অমৃতকথা................



সকালে ঘুম থেকে উঠেই ও শুতে যাবার আগেই ঈশ্বর-স্মরণ করা যদি কঠিন মনে হয়, তবে কাছেই তাঁর একটা ছবি রেখে দাও, আলো নিভিয়ে দেবার সময় আর সকালে ঘুম ভাঙলেই, ঐ ছবির দিকে তাকানো অভ‍্যাসে পরিণত কর।

ছবির দিকে তাকানোর স্বভাবটি যদি অভ‍্যাস করতে থাক, শীঘ্রই দেখবে--- তাঁর বিষয়ে চিন্তা না করে শুতে যাওয়া বা ঘুম থেকে ওঠা, তোমার পক্ষে কঠিন হয়ে পড়ছে।

শুতে যাবার আগে, আমাদের পক্ষে দরকার কিছু পবিত্র চিন্তায় ও শব্দে মনকে নিবিষ্ট রাখা।

চিন্তা কর তুমি যেন ঈশ্বরের কোলে শুতে যাচ্ছ বা আলোকবিন্দুর মতো তোমার আত্মা দিব‍্য আলোকের সমুদ্রে মিশে যাচ্ছে বা এই রকম কোন ভাব।
ঘুমিয়ে পড়ার আগে আমাদের সমস্ত মন যেন দিব‍্য ভাবে ভরে থাকে।


                 - স্বামী যতীশ্বরানন্দজী



জগন্নাথদেব  ও শ্রীরামকৃষ্ন



জগন্নাথদেবই রামকৃষ্ণ রূপে অবতীর্ণ । সেইজন্যই ঠাকুর পুরীতে যেতেন না এবং বলতেন, পুরীতে গেলে তাঁর শরীর ত্যাগ হবে । 
স্বাস্থ্যোন্নতির জন্য স্বামী তুরীয়ানন্দ  পুরীধামে গমন করেন । উক্ত তীর্থে অবস্থানকালে তিনি একদিন দিনের বেলা জগন্নাথদেবের দর্শনে যান। অরুনস্তম্ভের পাশ দিয়া মন্দিরের সিঁড়িতে উঠিছিলেন । এমন সময় দেখলেন, সিঁড়ির অন্য পাশ দিয়ে ঠাকুর রামকৃষ্ণ নামছেন।
ঠাকুরের গলায় ফুলের মালা এবং দেহে সাধারণ জামাকাপড়।
ঠাকুরকে দেখামাত্র তিনি ছুটে গিয়ে তাঁকে ভূমিষ্ঠ প্রনাম করলেন। কিন্তু যখন তিনি প্ৰণমান্তে ঠাকুরের পাদস্পর্শ করবার জন্য হাত বাড়ালেন তখন ঠাকুর অদৃশ্য হলেন। সেই মুহূর্তে তাঁর চমক ভাঙল।       

              💞💞 জয়তু শ্রীরামকৃষ্ণ💞💞





ডা:  মহেন্দ্রলাল  সরকার  ও  শ্রী শ্রী ঠাকুর 



শ্রীরামকৃষ্ণের ডাক্তার, ঘোর নাস্তিক, দুর্মুখ, এত সাহস!   শ্রীরামকৃষ্ণকে ধমকাতেন আর তুমি করে কথা বলতেন একজনই। তিনি হলেন কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়েের দ্বিতীয় এম ডি ডাক্তার, ধন্বন্তরি! লোকে মরা মানুষ কাঁধে করে নিয়ে এসে বলত, ডাক্তারবাবু আপনি বাঁচিয়ে দিন! এমন ডাক্তারের ফি ছিল সর্বকালীন রেকর্ড! কত? ১৮৬৩ সালে তাঁর ফি ছিল ৩২ টাকা!তখন সায়েব ডাক্তারের সর্বোচ্চ ফি ছিল ১৬ টাকা, তাহলে বন্ধু! বুঝতেই পারছেন কত বড় ডাক্তার ছিলেন! তাহলে তাঁর নামটা এবার বলি? তিনি হলেন ডাক্তার মহেন্দ্রলাল সরকার, একটি নাম, একটি আলোকবর্তিকা!  
আজ তাঁর কথা নিজের তুলি দিয়ে আঁকতে বসেছি। আর  আমার লেখার মাঝেমাঝে উঠে আসবে টুকরো টুকরো কিছু জলছবি। কিছু বই পড়ার স্মৃতি থেকে।   
যেমন শ্রীম কথিত "শ্রীশ্রীরামকৃষ্ণকথামৃত", সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের "প্রথম আলো",   শিবনাথ শাস্ত্রীর, "রামতনু লাহিড়ী ও তৎকালীন বঙ্গসমাজ" শঙ্করের লেখা, "আনন্দবাজার পত্রিকা, রবিবাসরীয়, ৯ জুন, ২০১৭" প্রভৃতি আরো কিছু বই পড়ার মুগ্ধতা! 
এবার "আমাদের যাত্রা হল শুরু..."

★★

"আনন্দলোকে মঙ্গলালোকে বিরাজ সত্যসুন্দর..."

আনন্দলোকে জন্ম নিলেন মহেন্দ্রলাল সরকার (১৮৩৩- ১৯০৪)। হাওড়া জেলার পাইকপাড়ায়। 
স্কুল হেয়ার। সেখান থেকে দারুণ রেজাল্ট করে হিন্দু কলেজ (এখন প্রেসিডেন্সি) সেখান থেকে দারুণ, দারুণ রেজাল্ট করে এলেন কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে ডাক্তারি পড়তে। সেখানেই তাঁর প্রতিভা দেখে বিস্মিত হয়ে গেলেন শিক্ষকরা।  তিনি যখন থার্ড ইয়ারের ছাত্র। তখন মেডিকেল শিক্ষকরা তাঁকে মাঝেমধ্যে সেকেন্ড ইয়ারের ক্লাসে ছাত্রদের লেকচার দিতে পাঠাতেন। এটা রেকর্ড! 
১৮৬০ সালে মেডিকেল কলেজ থেকে সসম্মানে মেডিসিন,  সার্জারি, মিডওয়াইফেরিতে (গাইনোকলজি বিষয়ক) অনার্স নিয়ে পাস করলেন।
১৮৬৫ সালে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এম ডি হলেন। তিনিই হলেন কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের দ্বিতীয় এম ডি।  

এরপর প্র্যাকটিশ। ফি হল ৩২ টাকা। আজ পর্যন্ত এত ফি কোন ডাক্তারের হয়নি। সালটা হল ১৮৬৫৷ 
দারুণ মেজাজ, কঠোর নিয়ম মেনে চলেন, লোকে ভয় খেত, নাম হল দুর্মুখ ডাক্তার।
পুরো প্রফেশনাল। বড়লোকদের ১ টাকাও ছাড় নেই। আবার গরীবদের ভগবান, বিনাপয়সায়। 
চিরকাল হোমিওপ্যাথিকে নিয়ে মজা করে এসেছেন। হঠাৎ  হোমিওপ্যাথি লাইনে এলেন। হয়ে গেলেন এ্যালোপ্যাথি থেকে ১ নম্বর হোমিওপ্যাথি ডাক্তার। ফিস সেই ৩২ টাকা, কম নেই। 

"আমার যে সব দিতে হবে সে তো আমি জানি - আমার যত বিত্ত প্রভু, আমার যত বাণী।"

ঠিক তাই। তাঁর যে সমাজকে অনেক কিছু দিতে হবে, সেজন্যই তো পৃথিবীতে আসা। গড়ে তুললেন ভারতবর্ষের সর্বশ্রেষ্ঠ প্রাচীনতম গবেষণা কেন্দ্র, "Indian cultivation of science, ১৮৭৬।" 
অনেক লড়াই করে শেষপর্যন্ত মেয়েদের বিবাহের বয়েস ঠিক করতে পারলেন ১৬ বছর।
আসামে চা শ্রমিকদের দুরবস্থা নিয়ে সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করলেন। শ্রমিকদের "কুলী" বলে ডাকা নিয়ে চরম আপত্তির কথা জানালেন সরকারকে। 

আর অনুভব করলেন মহিলারা লেডি ডাক্তারদের কাছে তাদের সমস্যা যতটা খুলে বলতে পারে ততটা পুরুষ চিকিৎসকদের কাছে নয়। 
তাই তাঁর ও দ্বারকানাথ গাঙ্গুলির প্রেরণায় অনুপ্রাণিত হয়ে ভারতবর্ষের দ্বিতীয় এবং পশ্চিমবঙ্গের প্রথম বিলেত ফেরত মহিলা ডাক্তার হলেন কাদম্বনি গঙ্গোপাধ্যায় (বসু)। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম মহিলা গ্র্যাজুয়েট। 
আর দুর্ভাগ্য আর একজন মহিলা ডাক্তার হতে পারলেন না। চেন্নাই গেছলেন ডাক্তারি পড়তে। অসুস্থ হয়ে মাঝপথে ডাক্তারি পড়া কমপ্লিট করতে পারলেন না। তিনি হলেন স্যার জগদীশ বসুর সহধর্মিণী লেডি অবলা বসু। 

এবার  সেই যুগান্তকারী ঘটনা! 

"আগুনের পরশমণি ছোঁয়াও প্রাণে। 
এ জীবন পূণ্য করো দহন দানে।" 

অনেক টাকাকড়ি, নাম সুখ্যাতি তো হল। এ জীবন তবু পূর্ণ হল না!  
একদিন কাশীপুর থেকে আচমকা  ডাক এল! 

শ্রীরামকৃষ্ণের  কর্কট রোগ ধরা পড়েছে। মহেন্দ্রলাল সরকার এলেন! 
এসেই রোগীকে চোটপাট। ঠাকুরের বিছানায় সটান বসে পড়ে, "তুমি" করে ধমকাতে লাগলেন, তুমি নাকি আজকাল পরমহংসগিরি করছো? চারপাশে সব আগামীদিনের বিখ্যাত হবেন সব মানুষরা দাঁড়িয়ে পড়েছেন। শ্রীমও আছেন।
জিভ টেনে ধরলেন। কথামৃতে ঠাকুর বলছেন, যেন গরুর জিভ টেনে ধরল, কি যন্ত্রণা! কি যন্ত্রণা! ... এইসব মোটামুটি।
এদিকে শ্রীরামকৃষ্ণকে ধমকাচ্ছেন আর ঠাকুর হাসছেন। হয়'ত মনে মনে বলছেন, ওরে দাঁড়া, দেখব তুই কতবড় নাস্তিক। কেশব সেন, বঙ্কিম, মাইকেল, বিদ্যাসাগর, গিরীশ, নরেন সব এখানে ড্রাইভ মারল। এবার দেখি মহেন্দ্র  ডাক্তার তোমার দৌড়!

যাবার আগে মহেন্দ্রলাল বলে গেলেন, কথা বলা, নাচা গানা এসব চলবে না। তাহলে রোগ বেড়ে যাবে। 
ডাক্তার সরকার নাস্তিক ছিলেন।   কিন্তু শ্রীরামকৃষ্ণের কাছে এলেই কেমন দ্রবীভূত হয়ে যান। 
চেম্বার ফেলে ৩২ টাকার ডাক্তার ছুটে আসছেন শ্রীরামকৃষ্ণকে দেখতে।  
বলছেন, শোনো তুমি শুধু আমার সঙ্গে কথা বলবে। কোন ধর্মের কথা একবারও কেউ বলছেন না। অথচ মহেন্দ্রলাল চেম্বার ফেলে ঘন্টার পর ঘন্টা শ্রীরামকৃষ্ণের সঙ্গে গল্প করছেন। আসছেন প্রায়ই চেম্বার ফেলে। ঠাকুর হাসেন। ঠাকুর হেসে বলেন, কি ডাক্তার চেম্বারে যাবেন না? ডাক্তার রাগ দেখিয়ে বলেন, সে তোমায় অত ভাবতে হবে না? ঠাকুর হাসেন, এ তো রাগ নয়, এ যে অনুরাগ! 

এবার শ্রীরামকৃষ্ণ বিদায় নিলেন। মহেন্দ্রলাল সরকার খবর পেয়ে এলেন। দেখলেন। বললেন,  প্রাণবায়ু নির্গত হয়ে গেছে।
নিঃশব্দে নেমে এলেন। একজনকে বললেন, শোনো একটা ফটো তোলার ব্যবস্থা কর। এই রইল আমার ১০ টাকা চাঁদা।

ডাক্তারকে কাঁদতে নেই। আবার যে সে ডাক্তার নয়। চরম নাস্তিক ডাক্তার মহেন্দ্রলাল সরকার! লোকে কি বলবে! নাস্তিক মহেন্দ্রলাল কাঁদছেন! 
কিন্তু "ভালবাসি" কি শুধু মুখে বললেই ভালবাসা বলা হয়?  হৃদয়ের ভাষা কি সবাই পড়তে পারে?
ভালবাসা মুখে বলা হয়নি। হৃদয় শুধু বলেছিল! 
 "আমি তোমায় ভালবাসি, ভালবাসি, হে শ্রীরামকৃষ্ণ!"  

আমি নাস্তিক। কিন্তু মানুষ চিনি।  তুমি মানুষটা একেবারে খাঁটি। মহেন্দ্রলাল সরকার চলে গেলেন নিঃশব্দে। আজ তাঁর নিজের একটা ওষুধ চাই, বুকের ভেতরটা এমন আনচান করছে কেন! ৩২ টাকার ডাক্তারকে কে এখন ব্যথা জুড়োনোর ওষুধ দেবে? 

"জুড়াইতে চাই, কোথায় জুড়াই..."
সংগৃহীত।




বিভিন্ন মতে ঠাকুরের ঈশ্বর সাধনা......... 


বিয়ের পর ঠাকুর দক্ষিণেশ্বর মন্দিরে ফিরে এসে আবার ডুবে গেলেন সাধন সাগরে। মায়ের কাছে তীব্র আকুতি নিয়ে জানতে চাইলেন বিভিন্ন ধর্মের সার মর্ম।মা তাঁর সে ইচ্ছে ও পূরণ করেন । দীর্ঘ বার বছর ধরে তিনি যোগেশ্বেরী নামে এক ভৈরবীর কাছে তন্ত্র মন্ত্র সাধনা। ভৈরবী ঠাকুরকে ৬৪ খানা তন্ত্র সাধনা করালেন। এরপর জটাধারী নামে এক সাধুর কাছে গোপাল মন্ত্রে দীক্ষা নিলেন। বৈষ্ণব মতে সাধন কালে রাম ,সীতা,রাধা কৃষ্ণ ,গৌর ,নিতাই প্রভৃতি অবতারদের দর্শন লাভ করেন। দর্শণের পরে তাঁরা তাঁর দিব্য দেহে লীন হয়ে যান। তারপর এলেন শ্রী মৎ তোতাপুরীজী , তিনি ঠাকুর কে বেদান্ত সাধনা করালেন। ঠাকুর বেদান্ত সাধনায় ডুবে গেলেন। মাত্র তিন দিনের মধ্যে তা তিনি লাভ করেন। তখনই তিনি পরিণত হলেন শ্রী রামকৃষ্ণে। বিভিন্ন মতে সাধনা করে ঠাকুর এই সিদ্ধান্তে এলেন যত মত তত পথ। তিনি উপলব্ধি করলেন যে, ঈশ্বর এক, কেবল নামে তফাৎ।..... জয় শ্রী রামকৃষ্ণ প্রণাম নিও।







*ঠাকুরের অমূল্য তিন ছবি* 



ঠাকুর নিজের ছবি তুলতে দিতেন না! স্বামী অভেদানন্দজী ' মন ও মানুষ ' গ্রন্থে একথা বলেছেন। প্রতাপ চন্দ্র মজুমদার বলেছিলেন, "শ্রীরামকৃষ্ণ চাইতেন না যে কেউ তাঁর ছবি তুলুক। তিনি সমাধিস্থ না হলে তাঁর ছবি তোলা যেত না- তাই তিনি বুঝতেই পারতেন না কী করা হচ্ছে। 

অবতারের করুনায় তিনি তাঁর আকৃতি ও চেহারার সুস্পষ্ট প্রতিকৃতি রক্ষা করার জন্য ফটো তুলতে অনুমতি দিয়েছিলেন।"


১) পৃথিবীর ইতিহাসে এই প্রথম অবতারের প্রত্যক্ষ ফটোগ্রাফ সবাই দেখতে পেল। আর ফটোতে উঠেছে ছায়ার পিছনে কায়ার জাগ্রত উপস্থিতি। 

শ্রীরামকৃষ্ণ এর তিনটি ছবি জগদ্বিখ্যাত। তিনটিতেই ফুটে উঠেছে ঊর্ধ্বজাগতিক, অতীন্দ্রিয়, পরিপূর্ণ ঈশ্বর তন্ময়তার, ব্রহ্মানন্দের ভাব।

শ্রীরামকৃষ্ণের পথম ফটো তোলা হয় কেশবচন্দ্রের ব্যাবস্থাপনায় তাঁর গৃহে। ওই ফটোয় শ্রীরামকৃষ্ণ কীর্তনের আসরে ভাবাবিষ্ট হয়ে দাঁড়িয়ে আছেন। তাঁর ডান হাত ঊর্ধ্ববাহু, বাঁ হাত বুকের উপর ন্যস্ত। হাতের আঙুলিগুলি মৃগমুদ্রাবদ্ধ। তিনি সমাধিস্থ। পাছে পড়ে যান, তাই তাঁর ভাগ্নে হৃদয়রাম মুখোপাধ্যায় তাঁকে ধরে আছেন। ঠাকুর এর পরনে ধুতি ও পাঞ্জাবী, ধুতির খুট ও চাদর কোমরে জড়ানো।


শ্রীরামকৃষ্ণের পিছনে মেঝেতে চার-পাচজন ভক্ত উপবিষ্ট। পায়ের কাছে ফুল আকা গালচের আসন ও সাদা চাদর বিছানো ফরাস। পিছনে একটা খোলা জানালা খোলা ও অন্যটিতে পাখিদার খড়খড়ি। 


শ্রীম-র ১৮৮২ সালের ২রা এপ্রিলের বর্ণনা থেকে জানা যায় "২১শে সেপ্টেম্বর (১৮৭৯) 'কমলকুটিরে' উৎসবে যোগদান করিতে লইয়া যান। এই সময়ে শ্রীরামকৃষ্ণ সমাধিস্থ হইলে ব্রাহ্মভক্ত সংগে তার ফটো নেওয়া হয়। ঠাকুর দন্ডায়মান, সমাধিস্থ। হৃদয় ধরিয়া আছেন।

উত্তরকালে ভক্তরা জিজ্ঞেস করলে, অন্তরঙ্গ শিষ্য স্বামী প্রেমানন্দজী এই ঊর্ধ্ববাহুমুদ্রায় দাঁড়ানো ঠাকুরের মূর্তির ব্যাখা করেছিলেন । 

"যা কিছু সবই উপরে, এখানে কিছু নেই। অর্থাৎ ব্রহ্মই সত্য যা জগতের ঊর্ধ্বে। আর জাগতিক সব কিছুই ক্ষণস্থায়ী, মিথ্যা ও দুঃখদায়ক।"


২) দ্বিতীয় ফটো তোলা হয় রাধাবাজারে ফটোগ্রাফারের দোকানে । দ্বিতীয় ফটোর বর্ণনায় কথামৃত্কার  ২৪ শে ফেব্রুয়ারী, ১৮১৪ তারিখে শ্রীরামকৃষ্ণের স্মৃতি বর্ণনা করেছেন I


"রাধাবাজারে যেদিন আমাকে ছবি তোলাতে নিয়ে গেছিলো সেদিন রাজেন্দ্র মিত্রের বাড়ি যাবার কথা ছিল-কেশব সেন আর সব আসবে শুনেছিলুম I গোটাকতক কথা বলব বলে ঠিক করেছিলাম I রাধাবাজারে গিয়ে সব ভুলে গেলাম I"


এ-ফটো গৃহীত হবার সময় শ্রীরামকৃষ্ণের সঙ্গে তাঁর দুজন সাক্ষাত শিষ্য স্বামী অভেদানন্দ {কালী মহারাজ } ও স্বামী অদ্ভুতানন্দ {লাটু মহারাজ } উপস্থিত ছিলেন I 

দ্বিতীয় ফটো প্রসঙ্গে স্বামী অভেদানন্দ জানিয়েছেন-"শ্রীশ্রী ঠাকুরের দ্বিতীয় ছবি তোলা হয় রাধাবাজারে {কলিকাতা} একটি ফটোগ্রাফারের দোকানে । আমি ও লাটু মহারাজ তাঁর সঙ্গে ছিলাম I থামের ওপর হাত দিয়ে দাঁড়াতেই তিনি সমাধিস্থ হয়ে পড়েছিলেন I"

৩) অক্টোবর ১৮৮৩ তে তৃতীয় এবং জগতে শ্রীরামকৃষ্ণের সর্বাধিক পরিচিত এই ফটোটি ১৮৮৪ খ্রীষ্টাব্দের ২ ফেব্রুয়ারির পর কোন সময় স্বামী বিবেকানন্দ ও ভবনাথ চট্টোপাধ্যায়ের উদ্যোগে দক্ষিণেশ্বরে রাধাকান্তের মন্দিরের সামনের বারান্দায় তোলা । ফটোগ্রাফার বরাহনগরের অবিনাশচন্দ্র দাঁ ।


 তিনি তখন ' *বার্ণ অ্যান্ড শেফার্ড'* কোম্পানী'র শিক্ষানবীশ হিসেবে কাজ করছিলেন । সেদিন ছিল রবিবার । সময় : অপরাহ্ন ( মতান্তরে সকাল প্রায় সাড়ে নটা ) ।


 ফটোটি তোলার সময় শ্রীরামকৃষ্ণ সমাধিস্থ হয়ে পড়েছিলেন । মূল ফটোটির ছয়টি কপি ছিল ।

স্বামী সারদানন্দ লীলাপ্রসঙ্গে লিখেছেন : 'কাশীপুরের বাগানে অবস্থানকালে ঠাকুর নিজ ছায়ামূর্তি (Photograph) দেখিতে দেখিতে আমাদিগকে বলিয়াছিলেন, "ইহা অতি উচ্চ যোগাবস্থার মূর্তি ----- কালে এই মূর্তির ঘরে ঘরে পূজা হইবে ।" 

এই ফটো দেখে শ্রীরামকৃষ্ণ ভাবাবিষ্ট হয়ে পড়েছিলেন এবং ফটোটি মাথায় কয়েকবার ছুঁইয়ে গদ্ গদ্ কণ্ঠে বলেন , 'ফটোখানি বেশ তুলেছে । এর ভাব অতি উচ্চ । তাঁতে একেবারে লীন হয়ে গিয়েছে । এতে তাঁরই স্বরূপ ফুটে উঠেছে।।বেলুড়ে একদিন স্বামী অখণ্ডানন্দ মহারাজ কথাচ্ছলে এই তৃতীয় ছবি সমন্ধে কাহিনী বলেছিলেন - "ঠাকুরের যে ছবি পূজা হয়, তার সম্বন্ধে কিছু জানিস?" আমরা বিশেষ কিছু জানি না বলাতে তিনি বলেন : "বরানগরের ভক্ত ভবনাথ ( স্বামীজীর বন্ধু ) ঠাকুরের ফটো তুলতে চায়। একদিন অনেক অনুরোধ করে। পরদিন বরানগর থেকেই এক ফটোগ্রাফার সঙ্গে নিয়ে এসেছে বিকেলের দিকে। ঠাকুরকে প্রথমে রাজি করাতে পারেনি। ঠাকুর রাধাকান্তের মন্দিরের দিকে চলে গেলেন।


ইত্যবসরে স্বামীজী এসে পড়েছেন। সব শুনে বললেন, "দাঁড়া, আমি সব ঠিক করছি।" এই বলে রাধাকান্তের মন্দিরের উত্তরদিকে রকের ওপর যেখানে ঠাকুর বসেছিলেন, সেখানে গেলেন ও তাঁর সঙ্গে ভগবৎ-প্রসঙ্গ আরম্ভ করলেন। ঠাকুর সমাধিস্থ হয়ে গেলেন। স্বামীজী উঠে গিয়ে তাদের ডেকে নিয়ে এসে বললেন, "তাড়াতাড়ি ক্যামেরা ফিট কর।"
সমাধিতে ঠাকুরের শরীর একটু হেলে গিয়েছিল। ক্যামেরাম্যান ঠাকুরের চিবুক ধরে সোজা করে দিতে গেছে, চিবুক ধরামাত্র ঠাকুরের শরীর হালকা কাগজের মতো হাতের সঙ্গে উঠে পড়েছে। তখন স্বামীজী বললেন "ওকি করছিস, শীঘ্র শীঘ্র ক্যামেরা ফিট কর।" ক্যামেরাম্যান যথাসম্ভব তাড়াতাড়ি ফটো তুলে নিল। এই ঘটনা ঠাকুর কিছুই জানতেন না । কয়েকদিন পরে ভবনাথ যখন প্রিন্ট করা ছবি নিয়ে এল,  ঠাকুর দেখে বললেন, "এ মহাযোগের লক্ষণ, এই ছবি কালে ঘরে ঘরে পূজা হবে।”
          * স্বামী নির্বাণানন্দ *

এ প্রসঙ্গে আর একটা কথা বলা যায়, সেটা হল - ঘটনার আকস্মিকতায় ক্যামেরাম্যানের হাত থেকে কাঁচের নেগেটিভ-টি পড়ে গিয়ে কোণা ভেঙ্গে যায়। সেটা মেক আপ দেবার জন্য নেগেটিভ-টির উপরের দিকে অর্ধ-চন্দ্রাকৃতি আকারে কাটা হয়। সেই ক্যামেরা-টির অংশবিশেষ ভক্তদের দেখার জন্য এখনও রাখা আছে শ্যামপুকুর বাটির দোতলায়।


হরি ওঁ রামকৃষ্ণ ॥






***🔴 কাশীতে ঠাকুরের এক অলৌকিক লীলা *** 🔴



    💥  শ্রীরামকৃষ্ণ মঠ ও মিশনের সাধুদের আগে পর্যন্ত্য  #দশনামী সম্প্রদায়ের সাধুরা বলতে '#ভাঙ্গি' সাধু | যেহুতু তাঁহারা আর্ত লোকেদের সেবার জন্য গু-মুত ঘাটত আর গু-মুত ঘাটার কাজ তো মেথরেরা করে, তাই তাদের দৃষ্টিতে তারা #মেথর| আবার #মাছ_খাবার জন্যও অনেক সময় #মছলি_সাধুও সেই দশনামী সম্প্রদায়ের সাধুরা বলত | এরকম ভাবেই চলছিল, হঠাৎ কাশীর পবিত্র ভূমিতে ঘটে যায় এক #অদ্ভুত_অলৌকিক ঘটনা যা কাশীর ইতিহাসে আজও অক্ষয় অমর  হয়ে আছে তার বিস্তৃত রুপরেখা|

     🚩 কাশীর বারানসী আশ্রম নির্ভরানন্দজী (চন্দ্রবাবা)র নেতৃত্বে ১৯৩৬ খ্রীষ্টাব্দের ২৪শে ফেব্রুয়ারী সোমবার শুক্লা দ্বিতীয়া তিথিতে #ঠাকুরের_শতবর্ষের তিথিপূজার দিন ঠাকুরের মন্দির ও মূর্তি প্রতিষ্ঠার ব্যবস্থা করেন|  এই মহোৎসবে কাশীর দশনামী সম্প্রদায়ের কিভাবে আমন্ত্রন করা যায় তা নিয়ে আশ্রমের প্রবীন সাধুগন চিন্তা করতে লাগলেন| কারণ কাশীর শ্রীরামকৃষ্ণ অদ্বৈত আশ্রম কাশীর দশনামী সাধু সম্প্রদায়ের কাছে বিশেষ পরিচিত নয়| শ্রীরামকৃষ্ণ দেবও কাশীর সাধু সমাজে অনেকটাই অপরিচিত| এই সময়ে বিদেহী ঠাকুর শ্রীরামকৃষ্ণ দেব এক #অলৌকিক_লীলা ঘটালেন| তার ফলে কাশীর শ্রীরামকৃষ্ণ অদ্বৈত আশ্রমের কর্তৃপক্ষের যে চিন্তা ভাবনা ছিল ভারতবিখ্যাত কাশীর দশনামী সাধু সমাজ নিয়ে তা দূর হয়ে গেল| সেই সময় কাশীর শ্রীরামকৃষ্ণ অদ্বৈত আশ্রমের নিকটে লক্ষী কলিতে কাশীর সমগ্র সাধু সমাজের সর্বজন শ্রদ্ধেয় বিশিষ্ট সাধু মহাত্মা মঙ্গলগিরি  অবস্থান করছেন|

   💥 তাঁর কথা কাশীর সমগ্র সাধু সমাজ এক কথায় শিরোধার্য্য করেন | মঙ্গলগিরি মাঝে মাঝে সেবাশ্রমে বেড়াতে আসেন| একদিন রাতে মঙ্গলগিরি তাঁর লক্ষীকুন্ডের কাছে ড়েলিএস মঠে রয়েছেন| সহসা ঠাকুর শ্রীরামকৃষ্ণ দেব মঙ্গলগিরির সামনে আবির্ভূত হয়ে বলেন,
    🔥   " এখানে আমার উৎসব হচ্ছে, তুমি কি তাতে কিছু করবে না?" এই বলে ঠাকুর অদৃশ্য হয়ে গেলেন| 🔥

মঙ্গলগিরি স্তম্ভিত হয়ে গেলেন ঠাকুর শ্রীরামকৃষ্ণ দেবকে দর্শন করে এবং ঠাকুরের কথা শুনে| পরদিন কাশীর শ্রীরামকৃষ্ণ অদ্বৈত  আশ্রমে গিয়ে আশ্রমের কর্তৃপক্ষদের বলেন তাঁর ঠাকুরের দর্শনের কথা| আশ্রম কর্তৃপক্ষও বিস্মিত ও আনন্দিত হলেন একথা শুনে|
 #ঠাকুর_স্বয়ং_তাঁদের_সমস্যার সমাধান করে দিলেন মঙ্গলগিরিকে দর্শন দিয়ে| তারপর মঙ্গলগিরি জানতে চাইলেন তিনি কি ভাবে সাহায্য করতে পারেন শ্রীরামকৃষ্ণ অদ্বৈত আশ্রমকে|

  🚩  আশ্রম কর্তৃপক্ষ তা শুনে তাঁকে কাশীর সাধু সমাজকে ঠাকুরের শতবার্ষিকী উৎসবে যোগদানের জন্য এবং উৎসব উপলক্ষ্যে শোভাযাত্রায় অংশ নেবার জন্য বললেন| কাশীর সর্বজন শ্রদ্ধেয় প্রবীন মহাত্মা মঙ্গলগিরি সানন্দে রাজী হলেন| তারপর তিনি কাশীর #নির্বাণী, #নিরঞ্জনী, #দক্ষিণা_মূর্ত্তি, #ভোলাগিরি প্রভৃতি সকল আশ্রমের ও আখড়ার সাথে যোগাযোগ করে তাঁদের ঠাকুরের উৎসব ও শোভাযাত্রায় অংশ নিতে নির্দেশ দেন| তার ফলে মহাসমারোহে ১৯৩৬ খ্রীষ্টাব্দের ২৬ শে ফেব্রুয়ারী সোমবার ঠাকুর শ্রীরামকৃষ্ণ দেবের জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষ্যে শোভাযাত্রায় কাশীর সকল বিশিষ্ট সাধু সম্প্রদায় অর্থাৎ নির্বাণী,নিরঞ্জনী, জুনা, বর্ণনা প্রভৃতি বিভিন্ন আখড়ার বিশাল সাধুমন্ডলী যোগদান করেন এবং তাঁরা ঠাকুর শ্রীরামকৃষ্ণ দেবের বড় বড় ছবি নিয়ে বিরাট শোভাযাত্রা করে কাশীর প্রধান প্রধান রাস্তা পরিক্রমা করেন| তার সাথে ঘোড়ার পিঠে বহু নাগা সন্ন্যাসীগণ পতাকা বাদ্য, প্রভৃতি নিয়ে যাত্রা করেন| সর্বধর্ম সমন্বয় আচার্য্য শ্রীরামকৃষ্ণের সর্বধর্মের সমন্বয় যেন মূর্ত  হয়ে উঠল এই সর্বধর্মের সাধু সন্ন্যাসীদের বিরাট শোভাযাত্রায়|

   ♥শোভাযাত্রায় প্রথমে ছিল নয়টি হাতি, তার সাথে প্রতিটি আখড়ার মহামন্ডেলশ্বরগণ শোভাযাত্রার পুরোভাবে থাকেন| তার সাথে কাশীর অদ্বৈত আশ্রমের প্রবীণ সাধুরা বারটি মোটরগাড়িতে থাকেন| তাঁদের সাথে বহু ভক্ত ও গায়ত্রীর দলও যান নামকীর্তন করতে করতে| সুদীর্ঘ ছয় মাইল রাস্তা এই বিরাট শোভাযাত্রা পরিক্রমা করে| কাশীর রাজা ও তাঁর ব্যাক্তিগত দেহরক্ষীদের ও অশ্ব, হাতি প্রভৃতি পাঠিয়ে দেন এই শোভাযাত্রায় যোগদানের জন্য|

 ♥  ইতিপূর্বে কাশীতে এর আগে এই রকম সকল সম্প্রদায়ের সাধুরা একসাথে কোন উৎসব উপলক্ষ্যে এমনভাবে যোগদান করেননি| ঠাকুর শ্রীরামকৃষ্ণের সর্বধর্ম সমন্বয়ের ভাবটি মনে রেখেই সব সম্প্রদায়ের সাধুরা স্বেচ্ছায় যোগদান করেন| হিন্দুধর্মের  ইতিহাসেও এই অভূতপূর্ব শোভাযাত্রা  চিরষ্মরণীয় হয়ে রইলো|

  #বিদেহী_ঠাকুর_শ্রীরামকৃষ্ণের এই অলৌকিক অপ্রাকৃত লীলার জন্যই এই মহাসম্মেলন সর্বতোভাবে সার্থক হল|

_______  🔵 তারপর শুভক্ষনে সুদৃশ্য প্রাথর্না ঠাকুর মন্দির ও ঠাকুরের মূর্তি প্রতিষ্ঠা হল মহাসমারোহে| সমগ্র মঠ ও মিশনের মধ্যে এটি-ই হল প্রথম ঠাকুরের পাথরের মন্দির ও মূর্তি|

    _______🔵  শ্রীরামকৃষ্ণ মঠ ও মিশনের সহ অধ্যক্ষ পূজ্যপাদ স্বামী বিজ্ঞানানন্দ মহারাজ মন্দির উৎসর্গ ও নিগ্রহ প্রতিষ্ঠার কাজ শাস্ত্রমতে সুসম্পন্ন করেন| তাঁকে সহযোগিতা করেন স্বামী নির্ভরানন্দজী ( চন্দ্রবাবা) ও স্বামী ওঁকারানন্দজী , কৃষ্ণলাল মহারাজজী, শঙ্করানন্দজী, সর্বানন্দজী,  জগদানন্দজী, অচলানন্দজী, কৈবল্যানন্দজী, শান্তানন্দজী, প্রভৃতি প্রবীন সন্ন্যাসীগণ| প্রতিষ্ঠার পর মূল মন্দিরের বেদীতে একটি পাত্রে ঠাকুর শ্রীরামকৃষ্ণ দেবের ও সারদামায়ের কেশ, নখ ও একটি দাঁত প্রোথিত করা হয়| তাছাড়া শ্রীশ্রী মা, স্বামীজী ও মহাপুরুষ মহারাজের দেহাবশেষ ও আলাদাভাবে রাখা হয়|

  🔵 পরদিন বিরাট সমষ্টি সাধু ভান্ডারা দেওয়া হয়| সব সম্প্রদায় ও আখড়ার সাধুগন একসাথে বসে সানন্দে প্রসাদ গ্রহন করেন| এদিন প্রায় দু হাজার সাধু সেবা হয়| যা কাশীর ইতিহাসে অভূতপূর্ব ঘটনা| তারপর তিনদিন ধরে বিরাট ধর্মসভা অনুষ্ঠিত হয়| তাতে পন্ডিত মদন মোহন মালিবু, পন্ডিত প্রমতিওনাল তর্কভূষণ, মহামন্ডলেশ্বর স্বামী দেবানন্দ গিরি প্রভৃতি মহাত্মাগণ বক্তৃতা করেন|

ঠাকুর শ্রীরামকৃষ্ণ দেবের পাথরের অপূর্ব মূর্তিটি যেন যথার্থ সজীব| শ্রদ্ধেয় প্রেমেশ মহারাজ এই বিগ্রহ সম্পর্কে বলেন, _____🔵

   🔺   " অদ্বৈত আশ্রমের মর্মর বিগ্রহে কেহ কেহ ঠাকুরের প্রত্যক্ষ দর্শন করিয়া থাকেন" ( শতবর্ষে শ্রীরামকৃষ্ণ, অদ্বৈত আশ্রম, বারানসী, ১৯০২-২০০২)| 🔺

জয় ঠাকুর, জয় মা, জয় স্বামীজী|।।
🙏🏻🌹🌼🌺🙏🏻🌹🌼🌺🌹🌼🌺🙏🏻🌹🌼🌺🙏🏻🌹🌼🌺🙏🏻🌹🌼🌺🙏🏻🌹🌼🌺🙏🏻🌹🌼





শ্রীরামকৃষ্ণের জন্ম ঢেঁকিশালে। জন্মস্থানের ঠিক উপরেই তৈরী হয়েছে শ্রীরামকৃষ্ণ মন্দির।

এই মন্দিরটির শিল্প পরিকল্পনা করেন প্রখ্যাত চিত্রশিল্পী নন্দলাল বসু এবং নির্মান দেখাশোনার ভার ন্যস্ত হয়েছিল মার্টিন বার্নের ইঞ্জিনিয়ার গোপেন্দ্রনাথ সরকারের উপর । পাথর খোদাই-এর কাজ করেছিলেন সুদক্ষ নৃসিংহ হাজরা । ঠাকুরের মূর্তি এবং বেদী তৈরি করেন তখনকার প্রখ্যাত শিল্পী মণি পাল ।

মন্দিরটির প্রতিষ্ঠা হয় ১৯৫১ সালের ১১ই মে । জন্ম গ্রহণের সময়টির স্মারক রূপে শ্বেতপাথরের বেদীর সামনে ঢেঁকি, চুল্লী ও প্রদীপ খোদাই করা রয়েছে। এখানে সকাল-সন্ধ্যা পূজা, আরতি ও ভোগ হয় এবং প্রতি সন্ধ্যায় স্তোত্রপাঠ ও সঙ্গীতানুষ্ঠান হয়।

নির্বাচিত ভাস্কর মূর্তিটি নিখুঁত ভাবে তৈরী করার জন্য ঠাকুরের দৈহিক উচ্চতা জানতে চান । যে কোটটি পরে শ্রীরামকৃষ্ণ রাধাবাজারে অধুনা লুপ্ত " বেঙ্গল ফটোগ্রাফার " নামক ষ্টুডিওতে ফটো তুলিছিলেন, সূর্য মহারাজ ( স্বামী নির্ব্বাণানন্দ ) বেলুড় মঠে সংরক্ষিত সেই কোটটি থেকে ঠাকুরের উচ্চতা মোটামুটি ৫ ফুট ৯ ইঞ্চি অনুমান করেন । সেই অনুপাতেই মূর্তিটি গড়া হয় । (সংগৃহীত)



সাধু, সন্ন্যাসী  ও গৃহস্থ :: ==


সকলেই যদি সাধু হবে, তো গৃহস্থ হবে কে? সাধু হওয়া সহজ কথা নয়; লক্ষ লক্ষ গৃহস্থের মধ্যে একজন সাধু হয়। গেরুয়া পরলেই সাধু হওয়া যায় না। ঠিক ঠিক বৈরাগ্য চাই, সংযম, ত্যাগ, তপস্যা চাই—তবে সাধু হওয়া যায়। তেমনি, গৃহস্থ হলেই হলো না। বিয়ে করে কতকগুলো ছেলে-পিলে হলে, আর খুব টাকা কামাতে পারলেই গৃহস্থ হল না। যে গৃহস্থ এই-সব ধন-দৌলত, ছেলেপিলে থাকা সত্ত্বেও ভগবানের জন্য ব্যস্ত, ঐ-সবে তার মন নেই; সেই ঠিক ঠিক গৃহস্থ। গৃহস্থ সত্‌, শান্ত, জ্ঞান-পিপাসী হবে, আর সেই ঠিক আদর্শ গৃহী। আদর্শ গৃহী, আর সাচ্চা সাধু-এক।
ভগবানের জন্য ষোল-আনা ত্যাগ করার নাম হচ্ছে সন্ন্যাস। গীতাতে এ-সব কথা আছে। গেরুয়া পরলেই সন্ন্যাসী হয় না; অনেক ত্যাগ তপস্যার দরকার। তোমরা হয়তো বলবে—এত যে সন্ন্যাসী দেখছি, তারা কি সকলেই ভগবানের জন্য ষোল-আনা ত্যাগ করেছে? না—তা করতে পারেনি; তবে এরা চেষ্টা করছে তাঁর জন্য সর্বত্যাগী হতে, তাঁকে মনেপ্রাণে ভালবাসতে। তাঁর দায় হলে এক মুহূর্তে ঠিক ঠিক সন্ন্যাসী হয়ে যেতে পারে। আর দেখ, একটা ভাল উদ্দেশ্য নিয়ে লোকে সন্ন্যাস নেয়। আর কিছু না হোক, সদ্‌ভাবে জীবনটা কাটিয়ে দিতে চেষ্টা করে, কারো অনিষ্ট করতে যায় না। এটা কি কম কথা! যুবা বয়সই সাধন-ভজনের ঠিক সময়; এ সময়টা আলস্যে কাটিও না, সাধন-ভজন করে তাঁকে লাভ কর, মানুষ হও। যদি সাধন-ভজন না করতে পার, তবে কোন সত্‌ কাজ কর, কারও অনিষ্ট করো না। পরচর্চা করো না, তার চেয়ে ঘুমান ভাল।
যার সাধু স্বভাব সে কখনও অসাধু ভাব আনতে পারে না। তার মনে কখনও অমন প্রবৃত্তি হয় না। সে কোন কাজ গোপন করে করতে চায় না, যা করে সব প্রকাশ্যে সে নির্ভীক-চিত্ত সিংহের মত দুনিয়ার কাউকেও ভয় করে না। আর কেনই বা করবে? কারো অনিষ্ট করে না, কারো চর্চায় থাকে না, সত্—কপটতা নেই, কেনই বা (ভয়) করবে?
ছেলের বাপ হলেই হল? তোমার যে দায়িত্ব আছে—যে পর্যন্ত ছেলে সাবালক না হয়। ছেলের ভালমন্দ তোমার উপর নির্ভর করছে। বাপ-মায়ের দোষেই ছেলে খারাপ হয়। তারা কি জানে?—যেমন শিক্ষা পাবে, তেমনই হবে। সেজন্য বাপ-মাকে খুব সাবধানে চলাফেরা, কথাবার্তা কইতে হয়। কারণ বাপ-মাকেই ছেলে বেশী নকল করে। ছেলে সাবালক হয়ে গেলে—নিশ্চিন্ত; তখন সে নিজের কর্মের জন্য নিজেই দায়ী, বাপ-মার আর কোন ‘দায়’ থাকে না। কিন্তু এ ঘোর দায়িত্ব কটা লোক বুঝে? ছেলেগুলো কোন প্রকারে খেতে-পরতে পেলেই যথেষ্ট হল—এই ভাল। আরে, মানুষের আকার হলেই কি মানুষ হয়? মানুষের আকারে অনেক দানা-দৈত্যও আছে—পশু আছে। দশটা দানা-দৈত্যের মতো ছেলের চেয়ে একটা ‘মানুষ’ ভাল। ছেলেদের আর দোষ কি? তাদের মানুষ করলে তবে তো মানুষ হবে? ছেলেকে মানুষ করতে হলে বাপ-মাকে আগে মানুষ হতে হবে—তবে হবে। এই দায়িত্ব-জ্ঞান কি অমনি হয়, কত সত্‌-সঙ্গ করতে হয়, আদর্শ পুরুষদের জীবন দেখতে হয়, কত সব চেষ্টা করতে হয়, তবে হয়। যার এ দায়িত্ব-জ্ঞান আছে সেই মানুষ। আমার ছবি ‘অমুক’ পূজো করছে। তা সে পূজো না করলে আমার আর স্বর্গে যাওয়া হবে না! আমার ছবি পূজা করে কি হবে? তাঁকে (ঠাকুরকে) পূজো কর, যাতে কল্যাণ হবে। ত্রৈলঙ্গস্বামী কত যে কষ্ট (তপস্যা) করেছেন, তা তোমরা কি বুঝবে? তাঁকে যারা ভক্তি-শ্রদ্ধা করে, পূজো করে, তাদের কল্যাণ হবেই। তিনি (ঠাকুর) বলতেন—‘‘ত্রৈলঙ্গস্বামী সব্‌সে পার। শরীর সাধারণের মতো, কিন্তু কর্ম মানুষের মতো নয়। শিবত্ব প্রাপ্ত হয়েছেন। বিশ্বনাথ আর ত্রৈলঙ্গস্বামী অভেদ।’’
মাস্টার মহাশয় খুব পণ্ডিত লোক; ওঁর দরুন কত লোকের কল্যাণ হয়েছে, আর এখনও হচ্ছে। ‘কথামৃত’ পড়ে কত লোকে ঠাকুরকে জানতে পাচ্ছে। মাস্টার মহাশয়ের বয়স হয়ে আসছে, এখন তাঁর দয়ার শরীর ভাল থাকলেই বাঁচোয়া। এ-সব লোক যতদিন সংসারে থাকে সংসারের কল্যাণ।
সত্‌লোক অপরের দুঃখ দেখলে দুঃখিত হয়; আর যদি শক্তিতে কুলোয় তো যতটুকু পারে দুঃখ দূর করতে চেষ্টা করে। কিন্তু অসৎলোক অন্যের দুঃখে আনন্দিত হয়, হাসে; বলে—কর্মফলে ভুগছে। জানে না—তারও একদিন অমনি দুঃখ হতে পারে। এ-সব অতি নীচ জীবের কথা। মানুষের ধর্ম হচ্ছে—পরস্পরের দুঃখ দূর করতে চেষ্টা করা, পরস্পরের কল্যাণ কামনা করা। মহাপুরুষদের জীবন দেখলে এ সব বুঝতে পারবে।

স্বামী সিদ্ধানন্দ-সংগৃহীত স্বামী অদ্ভুতানন্দের ( লাটু মহারাজের ) সত্‌কথা



'কেন ভাল লোকেরা সর্বদা দুঃখ পান', বিলে-কে এই প্রশ্নের ব্যাখ্যা দিয়েছিলেন রামকৃষ্ণ পরমহংস 

রামকৃষ্ণ কথামৃত, কথিত আছে যে রামকৃষ্ণ পরমহংস মা কালীকে খাবার নিজের হাতে খাবার খাওয়াতেন। ঠাকুর একজন বিখ্যাত চিন্তাবিদ, ধর্মগুরু এবং প্রেরণা ছিলেন। রামকৃষ্ণ পরমহংস স্বামী বিবেকানন্দের গুরু ছিলেন। যখনই বিবেকানন্দ সমস্যায় পড়তেন বা মনে কোনও বিষয়ে মনে চঞ্চল থাকত, তিনি প্রায়শই তাঁর প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে তাঁর গুরু রামকৃষ্ণ পরমহংসের কাছে পৌঁছে যেতেন। 

 

একবার স্বামী বিবেকানন্দ তাঁর গুরু রামকৃষ্ণ পরমহংসকে জিজ্ঞাসা করেছিলেন কেন ভাল লোকেরা সর্বদা দুঃখ পান এবং রামকৃষ্ণ পরমহংস তাদের খুব সহজে উত্তর দিয়েছিলেন

ঠাকুর বলেছিলেন, জীবনের ক্রিয়াকলাপ তোমাকে ঘিরে থাকবে, তবে উত্পাদনশীলতা তোমাকে মুক্তি দেবে। তাই জীবনকে বিশ্লেষণ করা বন্ধ কর, এটি জীবনকে আরও জটিল করে তোলে।


শুধু জীবন কাটাও, যেমন ভাবে তোমার মন চায়। আর মন খারাপ! তা অভ্যাসের কারণে হয়, এর কারণেই তুমি (বিলে) খুশি নও।
রামকৃষ্ণ পরমহংস আরও বলেছিলেন, হীর ঘষলেই কেবল জ্বলজ্বল হয়। খাঁটি হয়ে উঠতে সোনাকে আগুনে গরম করতে হয়। ভাল মানুষ দুঃখিত তখনই পায় যখন ঈশ্বর তাঁর পরীক্ষা নেন।


পরীক্ষার মধ্য দিয়ে গেলেই এই অভিজ্ঞতা জীবনকে উন্নত করে তোলে, অকেজো নয়। আর অভিজ্ঞতা প্রতিটি অর্থে কঠোর শিক্ষকের মতো। প্রথমে তিনি পরীক্ষা দেন এবং তারপরে শিক্ষা দেন।



তাই বিপদে পড়লে সর্বদা মন শক্ত রাখ, ঈশ্বরের কাছে প্রার্থণা কর। কারণ কোনও প্রার্থনা বৃথা যায় না। নিজের প্রতি বিশ্বাস রাখ এবং ভয়কে দূরে রাখ।


জীবনকে তোমায় আবিষ্কার করতে হবে, এর সমস্ত সমস্যা তোমায় সমাধান করতে হবে তবেই তুমি সঠিক জীবনে সঠিক অঙ্ক কষতে পারবে।


No comments:

Post a Comment