Sunday, 16 May 2021

শ্রী শ্রী জগন্নাথ কথা


সত্যিই কি ভগবান তাঁর ভক্তের সমস্ত অভাব দূর করেন ????

পুরীতে অর্জুন মিশ্র নামে এক পাণ্ডা ছিলেন।সে প্রতিদিন সম্পূর্ণ গীতা পাঠ করতেন।তাই লোকে তাকে গীতা পাণ্ডা বলেও ডাকতেন।ভিক্ষাবৃত্তি করে জীবন নির্বাহ করত সে।একবার পুরীতে টানা সাতদিন প্রচণ্ড বৃষ্টিপাত হয়।ফলে গীতাপাণ্ডা ভীক্ষার জন্য বাইরে বেরুতে পারলেন না।কিন্তু তিনি মনে মনে খুব খুশি হলেন ,,এই ভেবে যে আজ সারাদিন গীতা পাঠ করতে পারব।এদিকে তার গৃহের খাবার সব শেষ হয়ে গিয়েছে।তখন তারা স্ত্রী এসে বলল ,,তুমি যদি সারাদিন গীতাপাঠ কর আর বাইরে গিয়ে ভিক্ষা না করো তাহলে আমাদের সংসার চলবে কি করে ,,সে খেয়াল কি আছে তোমার !!আমাদের তিনটি সন্তান সবাই অভুক্ত।তখন গীতাপাণ্ডা বললেন ,,ভগবান শ্রীমদ্ভগবত গীতায় বলেছেন তিনিই ভক্তের সমস্ত ভার গ্রহণ করেন।



আমরা যদি সম্পূর্ণভাবে তার উপর নির্ভর করি তাহলে তিনি অবশ্যই দেখবেন।গীতাপাণ্ডা তাঁর স্ত্রীকে গীতার ৯ম অধ্যায়ের ২২ নম্বর শ্লোকটু দেখালেন।তাঁর স্ত্রী আরো ক্রোধান্বিত হয়ে হাত থেকে গীতাটা নিয়ে ঐ শ্লোকের উপড় তিনটি লাইন কেটে দিলেন ,,আর বললেন আমরা যদি কর্ম না করি তাহলে কি ভগবান খাবার ঘরে এনে দিয়ে যাবে !! তারপর ক্ষুধায় কাতর হয়ে গীতা পাণ্ডার সন্তানরা ও তার স্ত্রী নিদ্রা গেল।কিছুক্ষণ পর গীতা পাণ্ডাও ঘুমিয়ে পড়ল।Tushar

গভীর রাতে গীতা পাণ্ডার স্ত্রী ঘরের দরজায় শব্দ শুনতে পেলেন।দরজা খুলে দেখেন দুটি ছেলে একটি কালো বর্ণের আরেকটি দুগ্ধদবল।ছেলে দুটি বলল ,, গীতা পাণ্ডার এক মিত্র এই খাবার সামগ্রি পাঠিয়েছে কৃপা করে আপনি তা গ্রহন করুন।খাবার সামগ্রিতে ঘর ভরে গেল।ছেলে দুটির প্রতি গীতা পাণ্ডার স্ত্রীর খুব মায়া হল।তিনি তাদেরকে বললেন ,, তোমরা আমাদের সাথে প্রসাদ পেয়ে যেয়ো।তখন কালো বর্ণের ছেলেটি বলল ,, হ্যাঁ !!আমাদেরও খুব ইচ্ছা ছিল আপনাদের সাথে প্রসাদ পাবার ,,কিন্তু আমার জিহ্বা কেটে দেওয়া হয়েছে আমি খেতে পারবো না।তারপর এই কথা বলেই ছেলে দুটো চলে গেলো।

গীতা পাণ্ডার স্ত্রী তার স্বামীকে ঘুম থেকে উঠিয়ে সব বললেন।গীতা পাণ্ডা বুঝতে পারলেন ,,ঐ কালো বর্ণের ছেলেটি আর কেহ নয়।স্বয়ং জগন্নাথ'ই ছিলেন !! যিনি অভিন্ন কৃষ্ণ ,,আর সাদা বর্ণের ছেলেটি বলদেব।

গীতা যেহেতু ভগবান শ্রীকৃষ্ণের মুখ নিঃসৃত বানী ,,তাই গীতার ঐ শ্লোক কেটে দেওয়ায় সেই দাগ ভগবানে শ্রী-কৃষ্ণের জিহ্বাতে পরেছে।তারপর গীতাপাণ্ডা ও তার স্ত্রী ভগবানের কাছের ক্ষমা চাইলেন ,, এবং তৎক্ষনাৎ জগন্নাথ মন্দীরে গিয়ে দেখেন জগন্নাথ দেবের অধরে তিনটি দাগ পরে আছে।

#শিক্ষনীয় বিষয় হলঃ যে ব্যক্তি ভগবানের উপর  নির্ভরশীল এবং শুদ্ধ ভক্ত তার দায়িত্ব স্বয়ং ভগবান'ই নেন।

শ্রী শ্রী জগন্নাথদেবের মহাস্নান যাত্রা ::






শ্রী শ্রী জগন্নাথদেবের মহাস্নান







আজকের এই পূণ্য দিনে দক্ষিণেশ্বরে শ্রী শ্রী ভবতারিণী মাতার মন্দির প্রতিষ্ঠিত করা হয়।

আজকের এই পূণ্য তিথিতে বেলুড়মঠে আত্মারামের কৌটাকে মহাস্নান করানো হয়।
স্বামীজী বেলুড়মঠে আত্মারামের কৌটোকে পুজো করে ঠাকুরের কাছে প্রার্থনা করেছিলেন, "যুগ যুগ ধরে বহুজনহিতায় বহুজনসুখায় তুমি এখানেই থাকবে"।
এই প্রসঙ্গে আমরা স্মরণ করতে পারি যে ঠাকুর কাশীপুরে নরেনকে বলেছিলেন, "তুই কাঁধে করে আমায় যেখানেই নিয়ে যাবি, আমি সেখানেই যাব ও থাকব।"

আজ শ্রীমৎ স্বামী বিরজানন্দ জী মহারাজের জন্মদিন। মহারাজ রামকৃষ্ণ সংঘের অধ্যক্ষ ছিলেন।

আর একটি বিশেষ ঘটনা আছে, আজ কালীঘাটের মন্দির প্রতিষ্ঠিত হয়।



🙏🏻🙏🏻🙏🏻  🙏🏻🙏🏻🙏🏻🌸প্রসাদের মাহাত্ম্য🌸🙏🏻🙏🏻🙏🏻🙏🏻

🌼🌼🌼🌼🌼🌼🌼🌼🌼🌼🌼🌼🌼🌼🌼


ঠাকুর বলতেন, ‘কলিতে জগন্নাথের মহাপ্রসাদ সাক্ষাৎ ব্রহ্ম। গঙ্গাজল আর বৃন্দাবনের রজঃকেও বলতেন সাক্ষাৎ ব্রহ্ম। তাঁর কি দৈবদৃষ্টি ছিল আমরা কি করে বুঝব! নিজের বিছানার পাশে পশ্চিমের দেওয়ালে একটি বটুয়াতে মহাপ্রসাদ থাকত। রোজ সকালে প্রণাম করে এক দানা খেতেন। ভক্তদেরও দিতেন। একদিন নরেন্দ্রকেও দিলেন। নরেন্দ্র তা খেতে চায় নি। বলে, “এ শুকনো ভাত, অপরিস্কার জিনিস।“ ঠাকুর তখন তাকে বলেন, “তুই দ্রব্যগুণ মানিস – আফিং খেলে আঁটে আর ত্রিফলায় দাস্ত হয়?” নরেন্দ্র উত্তর করল, “হাঁ,তা মানি।“ তখন ঠাকুর বললেন, “এও তেমনি। এই মহাপ্রসাদ খেলে জ্ঞান ভক্তি বিশ্বাস লাভ হয়।“ তখন নরেন্দ্র নির্বিচারে উহা খেল। ঠাকুরের কথায় তাঁর পূর্ন বিশ্বাস। ঠাকুর সত্যবাদী আর এ বিষয়ে বিশেষজ্ঞ।

অনেকবার বলেছেন আমাদের, “আমিই পুরীর জগন্নাথ।“ আমাদের কয়েকবারই পুরী পাঠিয়েছিলেন । কি করতে হবে এসব বলে দিতেন। একবার বলে দিলেন, “জগন্নাথকে আলিঙ্গন করবে।“ মহা ভাবনায় পড়লাম কি করে হয়। তখন আলিঙ্গনের সময় নয়। শেষে এক বুদ্ধি তিনি মনে জাগ্রত করে দিলেন। অনেকগুলি রেজকি পয়সা, কিছু টাকাও ছিল, পকেটে করে নিয়ে গিয়ে সব ছড়িয়ে ফেললাম গর্ভমন্দিরে। পান্ডারা সব ঐ সব কুড়োচ্ছিল আর আমি এই ফাঁকে রত্নবেদিতে উঠে আলিঙ্গন করলাম। কেউ কেউ দেখতে পেয়ে হৈ হৈ করে উঠল । আমি ফস করে নেমে প্রদক্ষিণ করতে লাগলাম । অন্ধকারে কেউ বুঝতে পারলে না – কে !
যিনি আমায় বলে দিয়েছিলেন তিনিই বুদ্ধি দিলেন আবার তিনিই ভিতরে লোভ দিয়ে ওদের সরিয়ে দিলেন । এখন ভাবলে অবাক হই, কি করে এ অসীম সাহসের কাজ করেছিলাম । ঠাকুর নিজে পুরী যেতেন না । বলতেন, “ওখানে গেলে এ শরীর থাকবে না ।“ ফিরে এলে ঠাকুর আমাকে গাঢ় আলিঙ্গন করেছিলেন। আর বলেছিলেন, “এই আমারও জগন্নাথকে আলিঙ্গন করা হলো ।“

দক্ষিণেশ্বরে এক বৈষ্ণব সাধুকে ঠাকুর প্রসাদ পাঠিয়েছিলেন। সাধু লুচিটুচি ছুঁড়ে ফেলে দিল। মা কালীর প্রসাদ খাবে না। শুনে ঠাকুরের রাগ হলো। বললেন, “শালাকে কেউ পা থেকে মাথা পর্যন্ত মেরে পাঠিয়ে দেয়, তবে আমার আহ্লাদ হয়।“ তিন চার দিন পর মালীর সঙ্গে ঝগড়া করায়, ওরা মেরে তাড়িয়ে দেয়। বলেছিলেন, “শালা মায়ের প্রসাদ ছুঁড়ে ফেলে দিল ! না খাও তো অপরকে দিয়ে দাও, নয় তো ফিরেয়ে দাও। তা না করে ছুঁড়ে ফেলে দিলে?” 


‘শ্রীম’ – শ্রীরামকৃষ্ণকে যেরূপ দেখিয়াছি।




মাহেশের রথ  ও  শ্রী রামকৃষ্ণ ::


১৮৮৫ সাল..ওই বছর ঠাকুর তাঁর পার্ষদদের একটি ছোট দল নিয়ে গেলেন মাহেশের রথ দেখতে..দলে আছেন নরেন্দ্রনাথ,বৈকুণ্ঠনাথ সান্যাল,গোলাপ মা, প্রভৃতি আরও কয়েকজন..প্রত্যক্ষদর্শী হরিপদবাবু জানিয়েছেন, "মাহেশে লোকের ভিড় দেখে তাঁকে(ঠাকুর শ্রীরামকৃষ্ণকে) দোতলায় রাখা হল..বাড়িটি ত্রিতল..দোতলার বারান্দায় দাঁড়িয়ে তিনি রথ দেখছেন..বলরাম,সুভদ্রা,জগন্নাথ তিন ঠাকুর রথে উঠলেন - শাঁখ,কাঁসর,ঘন্টা বাজনা সঙ্গে সঙ্গে বাজতে লাগল -চারদিকে হরিধ্বনি..ঠাকুর একেবারে নিচে নেমে ফটকের দরজার সামনে এসে দাঁড়ালেন..ভিড় আগলাবার জন্য আমরা সম্মুখে দাঁড়িয়েছিলাম..রথ টানবার জন্য গৌড়গয়লারা এসে রথের দড়ি ধরেছে -টান পড়বে -যাত্রীরাও দড়ি ধরেছে এমন সময় ঠাকুর আমাদের ঠেলে ছিটকে তীরের মত রথের দিকে ছুটে গেলেন..আমরা পেছনে ছুটে চললাম..এদিকে ঠাকুর একেবারে ভিতরে রথের চাকার কাছে জোড় হাতে জগন্নাথ দর্শন করে চোখের জলে ভাসছেন..আমরা কাছে গিয়েও ভিড় ঠেলে ভিতরে যেতে পারছি না..প্রায় পঞ্চাশজন গৌড়গয়লারা যারা রথ টানে একেবারে ভিতরে ঠাকুরকে ঘিরে দাঁড়াল..রথটানা স্থগিত হল..আমরা নিকটেই দেখছি - ঠাকুর যুক্তকরে বলছেন, 'তুহু জগন্নাথ জগতে কহায়াসি..জগবাহির নাহি মুঞি ছার..প্রভু তুমি জগন্নাথ - জগতের নাথ,আমি কি জগত ছাড়া..এ অপুর্ব ভাব !"

এই দৃশ্যপটটি আমাদের ক্ষণিকের জন্য নিয়ে চলে জগন্নাথ মন্দিরে চৈতন্য মহাপ্রভুর চরণপ্রান্তে..মনে করিয়ে দেয় গড়ুর স্তম্ভ ধরে জল ভরা নির্নিমেষ নয়নে,বাষ্পরুদ্ধ কণ্ঠে স্থির চিত্রার্পিতের ন্যায় তাঁর জগন্নাথ দর্শনের কথা..মুখে উচ্চারিত মর্মস্পর্শী আর্তি : "নয়নং গলদশ্রুধারয়া বদনং গদগদরুদ্ধয়া গিরা পুলকৈর্নিচিতং বপু: কদা তব নামগ্রহণে ভবিষ্যতি"
- তোমার নাম উচ্চারন করতে করতে কখন আমার নয়ন গলদশ্রুধারায়,বদন বাষ্পরুদ্ধ বাক্যে এবং শরীর রোমাঞ্চে পূর্ণ হবে !

হরিপদবাবুর স্মৃতিচারণ থেকে আরও জানতে পারি : "নিমেষ মধ্যে রটে গেল দক্ষিণেশ্বরে পরমহংস ঠাকুর এসেছেন..তাঁকে দর্শন করতে আবার লোকের ভিড় জমে গেল..ঠাকুর দাঁড়িয়ে সমাধিস্থ - একেবারে বাহ্য সংজ্ঞা নাই..চারদিকে 'জয় জগন্নাথ' - 'হরিবোল হরিবোল' তুমুল ধ্বনি উঠছে..কিন্তু ঠাকুরকে বাহিরে নিয়ে আসা কঠিন..একে মহাভাবে বাহ্যসংজ্ঞাশূন্য - মুখে আনন্দের হাসি,চক্ষুতে অশ্রুর প্রবাহ,কম্প রোমাঞ্চ আবার স্থাণুর মতো স্থির..আবার তাঁকে দেখার জন্য লোকের ভিড়..গোয়ালাদের সাহায্যে কোনওরকমে তাঁকে ধরে বাইরে নিয়ে এলাম..চারিদিকে হরিধ্বনি,লোক জমায়েত হতে লাগল - গৌড়দের সাহায্যে কোনওরকমে বাড়িতে আনা গেল...ঠাকুর দুপা যান টলে টলে চলেন আবার স্থির গম্ভীরভাবে দাঁড়ান..রথ চলতে আরম্ভ হল - চারিদিকে কাঁসর ঘন্টা বাজনা বেজে উঠল - জনতা রথের সঙ্গে চলল,স্থানটি নীরব নিঝুম হল কিন্তু আশ্চর্য ঠাকুরের ভাব ভঙ্গ হয় না..সূর্য অস্তে গেলে প্রায় গোধুলির সময় ঠাকুর ধীরে ধীরে সহজ অবস্থায় এলেন.."সেই দিন তিনতলায় খিচুড়ি খাওয়ার বন্দোবস্ত করা হয়েছিল..গোলাপমা রান্না করেছিলেন..কিন্তু ঠাকুর ভাবমুখে থাকায় সেই দিন তাঁর আর কিছু খাওয়া হল না..
প্রায় ৪০০ বছর পর মহাপ্রভুরই নীলাচল লীলার পুনরাবৃত্তি ঘটে যাওয়ার সাক্ষী থাকল পূণ্যভুমি মাহেশের মাটি..তৎকালীন বৈষ্ণব সমাজের সর্বাধ্যক্ষ ছিলেন বৈষ্ণবচরণ বাবাজী মশাই..তিনি নিজে পন্ডিত সমাজ তথা বৈষ্ণব সমাজের সামনে উচ্চকণ্ঠে ঘোষনা করেছিলেন ঠাকুরের অবতারত্বের কথা..এমনকি তিনি সংস্কৃত ভাষায় স্তব রচনা করে সকলের উপস্থিতিতে ভাবাবিষ্ট ঠাকুরের সামনে কীর্তন করে তাঁর বন্দনা করেছিলেন..তিনি বলেছিলেন,যে প্রধান প্রধান ১৯টি ভাবের সম্মিলনে উদ্ভুত ভাবকে মহাভাব বলা হয় ভক্তিশাস্ত্রে, তার সবকটির প্রকাশ রামকৃষ্ণ তনুতে..এই ভাব শুধু লক্ষণীয় ছিল রাধারাণী ও মহাপ্রভুর তনুতেই..তাঁরা আর নীলাচল প্রভু যদি অভিন্ন তনু হোন তবে ঠাকুর আর জগন্নাথ বিগ্রহ আলাদা সত্ত্বা হবেন কি করে? এ লীলা যেন নিজেকে নিজে দর্শনের লীলা..



No comments:

Post a Comment