ছিটমহল বা enclave ভৌগলিক সীমানা থেকে বিচ্ছিন্ন কিছু ভূখন্ড যা অন্য দেশের মধ্যে একটি দেশের বিচ্ছিন্ন অঞ্চল হিসাবে আত্মপ্রকাশ করে। কোনো দেশের ছিটমহল গুলি সাধারণত সীমান্তের উল্টো দিকে থাকে। এগুলি আসলে বিচ্ছিন্ন কিছু জনপদ মাত্র। তাই ছিটমহল গুলি অন্য কোন রাজ্য দ্বারা সম্পূর্ণ বা কখনও কখনও আংশিক ভাবে পরিবেষ্টিত। ভ্যাটিকান সিটি এবং সান মেরিনো উভয়েই ইতালি দ্বারা পরিবেষ্টিত । লেসোথো হলো দক্ষিণ আফ্রিকা দ্বারা পরিবেষ্টিত ছিটমহল রাষ্ট্র।
ইংরেজ শাসনের অবসানের পর ভারত ভাগের সময় কোচবিহারের রাজা কোচের জমিদারির আটটি থানা পূর্ব পাকিস্তানের মধ্যে চলে যায়। আর কুচবিহার চলে আসে ভারতের মধ্যে। তাই কিছু ভূখন্ড চলে যায় বাংলাদেশের মধ্যে আর কিছু ভূখন্ড চলে আসে আমাদের ভারতে। এই ধরনের ভূমি বা জমিজমাকে ছিটমহল বলে। ভারত বাংলাদেশের এই ধরনের ১৬২টি ভূখন্ড ছিল। এরমধ্যে ১১১ টি ছিটমহল ভারতের যা বাংলাদেশের দিকে অবস্থিত। এর আয়তন ১৭ একরের একটু বেশি। বাকি ৫১টি বাংলাদেশি ছিটমহল হল ভারতের দিকে। এগুলির আয়তন ৭১১০ একর। এই ৫১টি ছিটমহলের মধ্যে পশ্চিমবঙ্গের কোচবিহারে ৪৭টি ও জলপাইগুড়ি জেলায় ৪টি ছিটমহল অবস্থিত। ২০১৫ সালে আগষ্ট মাসে ভারত বাংলাদেশের মধ্যে ছিটমহল বিনিময় চুক্তি দুই দেশের প্রধানমন্ত্রীর দ্বারা স্বাখ্খরিত হয়েছিল।
তিনবিঘা করিডোর হল ভারত বাংলাদেশ সীমান্তে একটি সতন্ত্র ভূমি যা ভারতের মালিকানাধীন তিন বিঘা জায়গার মধ্যে অবস্থিত। ২০১২ সালে বাংলাদেশের দহগ্রাম -আঙ্গারাপোতা ছিটমহল যাতায়াতের সুবিধার্থে এটি বাংলাদেশকে ইজারার মাধ্যমে দেওয়া হয়। এটি পশ্চিমবঙ্গের কোচবিহার জেলার মেখলিগঞ্জ মহকুমা ও বাংলাদেশের লালমনিরহাট জেলার পাটগ্রাম উপজেলার সীমান্তে অবস্থিত।
নাম কেন ‘তিনবিঘা’?
বাংলা আয়তন পরিমাপের একটি একক হলো ‘বিঘা’ এবং এই ভূমিটির মোট আয়তন ১,৫০০ থেকে ৬,৭৭১ বর্গমিটার (১৬,১৫০ থেকে ৭২,৮৮০ বর্গফুট) যা তিন বিঘা পরিমাপের সমান; এ থেকে ‘তিনবিঘা’ নামের উৎপত্তি।
১৬ মে ১৯৭৪-এর ইন্দিরা গান্ধী-শেখ মুজিবুর রহমান চুক্তি অনুসারে ভারত ও বাংলাদেশ তিনবিঘা করিডোর (১৭৮ বাই ৮৫ মিটার (৫৮৪ ফু × ২৭৯ ফু)) ও দক্ষিণ বেরুবাড়ীর (৭.৩৯ বর্গকিলোমিটার (২.৮৫ বর্গমাইল)) সার্বভৌমত্ব পরস্পরের কাছে হস্তান্তর করে। এরফলে উভয়দেশেই তাদের ছিটমহলে যথাক্রমে দহগ্রাম-আঙ্গরপোতা ও দক্ষিণ বেরুবাড়ীর যাতায়াত সুবিধা তৈরি হয়। ১৯৭৪ সালে বাংলাদেশ চুক্তি অনুসারে সাথে সাথেই দক্ষিণ বেরুবাড়ী ভারতের কাছে হস্তান্তর করে। তবে ভারত তিনবিঘা করিডোর বাংলাদেশের কাছে হস্তান্তর করতে ভারতের সাংবিধান সংশোধনের প্রয়োজন ছিল, যা রাজনৈতিক কারণে সম্ভব হয়নি।
১২ নং দক্ষিণ বেরুবাড়ী ইউনিয়নের ১১.২৯ বর্গকিলোমিটার বাংলাদেশ পেয়েছিল। এছাড়াও পূর্বের ভাগ অনুসারে কোচবিহারের চারটি ছিটমহল বাংলাদেশে পড়েছিল যার আয়তন ৬.৮৪ বর্গকিলোমিটার । ১৯৬৭ সালের হিসেব অনুযায়ী এই ভূখন্ডগুলোর মোট জনসংখ্যার ৯০%ই ছিল হিন্দু ধর্মাবলম্বী। পক্ষান্তরে বাংলাদেশের ছিটমহল দহগ্রাম-আঙ্গরপোতা ভারতে হস্তান্তরের কথা ছিল। যার মোট আয়তন ১৮.৬৮ বর্গকিলোমিটার । ১৯৬৭ সালের হিসেব অনুযায়ী মোট জনসংখ্যার ৮০% ছিল মুসলমান। যদি এই হস্তান্তর সফল হতো তাহলে এটি জাতিগত দাঙ্গা সৃষ্টির সম্ভাবনা থাকত। ফলে তখন বেরুবাড়ীর জনগণ এই হস্তান্তরের বিরোধিতা করেছিল।
১৯৭১ এর পর ভারত বাংলাদেশকে প্রস্তাব দেয় বেরুবাড়ীর অর্ধাংশ ভারতের অধীন থাকবে এবং দহগ্রাম-আঙ্গরপোতা বাংলাদেশেই থাকবে। এই চুক্তি অনুসারে ভারত দহগ্রাম-আঙ্গরপোতাবাসীর বাংলাদেশের মূল ভূখণ্ডের সাথে যোগাযোগ রক্ষার জন্য একটি তিনবিঘা আয়তনের জায়গা ইজারা হিসেবে দিয়েছিল। এটি বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক গৃহীত হয়েছিল এবং তিনবিঘার চারপাশে সতর্কতার সাথে বেষ্টনী দেওয়া হয়েছিল। ১৯৭৪ সালের ১৬ই মে ইন্দিরা গান্ধী ও শেখ মুজিবুর রহমানের মধ্যে একটি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয় এবং শেষ পর্যন্ত বেরুবাড়ী বিরোধের অবসান ঘটে। চুক্তি অনুসারে: "ভারত দক্ষিণ বেরুবাড়ীর দক্ষিণাংশের অর্ধেক নিয়ন্ত্রণ করবে যার আনুমানিক আয়তন ৬.৮ বর্গকিলোমিটার এবং বিনিময়ে বাংলাদেশ দহগ্রাম-আঙ্গরপোতা নিয়ন্ত্রণ করবে। ভারত দহগ্রাম-আঙ্গরপোতাবাসীদের বাংলাদেশের মূল ভূখন্ডের সাথে যোগাযোগ স্থাপনের জন্য ১৭৮ বাই ৮৫ মিটার (৫৮৪ ফু × ২৭৯ ফু) আয়তনের একটি ভূমি বাংলাদেশকে ইজারা হিসেবে দেবে।"
দহগ্রাম ইউনিয়ন বাংলাদেশের লালমনিরহাট জেলার পাটগ্রাম উপজেলার একটি ইউনিয়ন ও বাংলাদেশের অন্যতম বৃহৎ ছিটমহল, যা ভারতের মূল ভূখণ্ডের মধ্যে অবস্থিত। এর তিন দিকে ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের কোচবিহার জেলা, একদিকে তিস্তা নদী, নদীর ওপারেও ভারতীয় ভূখণ্ড। ভৌগোলিক কারণে এটি দহগ্রাম-আঙ্গোরপোতা ছিটমহল নামেই বেশি পরিচিত। এ ইউনিয়নের মোট আয়তন ২২.৬৮ বর্গ কিমি. ও মোট জনসংখ্যা প্রায় ২০,০০০ জন। ১৯৮৫ সালে দহগ্রাম ও আঙ্গরপোতা ছিটমহল একত্রে পাটগ্রাম উপজেলার একটি স্বতন্ত্র ইউনিয়ন (দহগ্রাম ইউনিয়ন) হিসেবে ঘোষণা করা হয়। ১৯৮৯ খ্রিষ্টাব্দের ১৯ আগস্টে এখানে ইউনিয়ন পরিষদের উদ্বোধন করা হয়।
Berubari is a village in Jalpaiguri Block, Jalpaipuri District, West Bengal, India . এটি বাংলাদেশের সীমান্তের কাছে অবস্থিত, জেলা এবং ব্লকের রাজধানী জলপাইগুড়ি থেকে প্রায় 12.7 কিলোমিটার দক্ষিণে। 2011 সালে, এর মোট জনসংখ্যা 41,593 জন।
- মুজিব-ইন্দিরা চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়: ১৬ মে, ১৯৭৪ সালে।
- চুক্তি কার্যকর: ১ আগস্ট, ২০১৫ সালে।
- চুক্তি অনুমোদনে সংশোধনী: বাংলাদেশের ১৯৭৪ সালের ৩য় সংশোধনী আনে সিটমহল সমস্যা সমাধানে।
- ভারতের ২০১৫ সালের ১০০তম সংশোধনী করা হয়।
- ভারতে বাংলাদেশের ৫১টি ছিটমহলের মোট আয়তন ছিল-৭,১১০ একর।
- বাংলাদেশে থাকা ভারতের ১১১টি ছিটমহলের মোট আয়তন ছিল- ১৭,১৫৮.৭৫ একর।
- ছিটমহল বিনিময়ের ফলফল: বাংলাদেশের সাথে যুক্ত হয়েছে- ১০,০৪১.২৫ একর ।
- প্রথম বাংলাদেশের পতাকা উত্তোলন করা হয় কুড়িগ্রামের দশিয়ারছড়া ছিটমহলে ।
- দশিয়ারছড়া ছিটমহলের বর্তমান নাম- মুজিব-ইন্দিরা ইউনিয়ন ।
- বাংলাদেশ থেকে ভারতে যায়- ৯৭৯ জন ভারত থেকে কেউ আসেনি।
তিনবিঘা করিডোরের চার মাথা
কারণ তিস্তা নদী ভারতের চর খড়খড়িয়াতে বাঁধা পেয়ে এর বড় মুখটা চর খড়খড়িয়ার ডান পাশ দিয়ে বাংলাদেশের দহগ্রামে ঢুকে পড়েছে। আর ছোট মুখটা চর খড়খড়িয়ার বাম পাশ দিয়ে সরাসরি বাংলাদেশের মূল ভূ-খন্ডে ঢুকেছে। ওদিকে তিস্তার বড় মুখটা দহগ্রাম থেকে বের হয়ে আবার চর খড়খড়িয়ার ডান পাশ দিয়ে ভারতীয় ভূমির উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়ে সরাসরি বাংলাদেশের মূল ভূ-খন্ডে স্থায়ীভাবে ঢুকে পড়েছে। তিনবিঘা করিডোর ছাড়া কুচলিবাড়ীর লোকজনকে হলদিবাড়ী বা ভারতের মূল ভূ-খন্ডে যেতে হলে জলপথ(দুই বার তিস্তা পার হতে হবে)ছাড়া কোন পথ নেই। সেখানে কুচলিবাড়ীর লোকজনকে একবার তিস্তা নদী পার হয়ে চর খড়খড়িয়াতে যেতে হবে। আবার চর খড়খড়িয়া থেকে মূল তিস্তা পার হয়ে হলদিবাড়ী বা ভারতের মূল ভূ-খন্ডে প্রবেশ করতে হবে।






















No comments:
Post a Comment