#অথ_মলমাস_বৃত্তান্তম্
মল মাস প্রকৃত পক্ষে কী? মনে হল যে এ নিয়ে ক'লাইন লিখি। বিশেষতঃ যেহেতু এই বছর মল মাস সকলকে আন্দোলিত করেছে, যেহেতু এর কারণে এবছর মহালয়া অমাবস্যা ও দুর্গা পূজার মধ্যে একমাসের অধিক ব্যবধান।
এবার প্রসঙ্গে আসি। মল মাস কোন আকস্মিক ঘটনা নয়, এটা আমাদের বৎসর ও মাস গণনার সঙ্গে সম্পর্কিত। এবং মল মাস প্রতি তিন বছর অন্তর আসে, এবছর ঘটনাচক্রে আমাদের সবার প্রিয় দুর্গাপূজার মাস অর্থাৎ আশ্বিন মাস মল মাস পড়েছে। অন্যবার অন্যান্য মাস পরে তাই আমাদের এতটা প্রভাবিত করেনা।
পঞ্জিকা বা পঞ্চাঙ্গের সঙ্গে নিশ্চয়ই সকলের অল্প বিস্তর পরিচিতি আছে।আমাদের পঞ্জিকা গণনায় সূর্য ও চন্দ্র দুয়েরই ভূমিকা আছে।আপনারা দেখে থাকবেন, বিভিন্ন পূজা হয় কোন নির্দিষ্ট "তিথি"তে, এই তিথি কী? তিথি হল চান্দ্র দিবস।এখন এই চান্দ্র দিবস কী? চান্দ্র মাসের ৩০ ভাগের এক ভাগ হল চান্দ্র দিবস।
চন্দ্র পৃথিবীকে সাড়ে ২৯ দিনে (প্রায়) একবার প্রদক্ষিণ করে, এই সময়কালকে একটি চান্দ্র মাস বলা হয়। একটি চান্দ্র মাস আবার দুটি পক্ষে বিভক্ত:- শুক্ল পক্ষ ও কৃষ্ণ পক্ষ।অমাবস্যার পর শুক্লা প্রতিপদ (অমাবস্যা ও পূর্ণিমার পরের দিন/তিথিকে প্রতিপদ বলে) থেকে পূর্ণিমা পর্যন্ত শুক্ল পক্ষ এবং পূর্ণিমার পর কৃষ্ণা প্রতিপদ থেকে অমাবস্যা পর্যন্ত কৃষ্ণ পক্ষ।প্রতি পক্ষেই ১৫ টি তিথি অর্থাৎ চান্দ্র দিন থাকে, অর্থাৎ একটি চান্দ্র মাসে ৩০ টি তিথি বা চান্দ্র দিন থাকে।চান্দ্র মাসের গণনা আরম্ভ হয় কৃষ্ণ পক্ষের প্রতিপদ থেকে আর সমাপন হয় পূর্ণিমা তিথির অবসানে।
কৃষ্ণ পক্ষের তিথি বা চান্দ্র দিনগুলি হল:-
কৃষ্ণা প্রতিপদ
দ্বিতীয়া
তৃতীয়া
চতুর্থী
পঞ্চমী
ষষ্ঠী
সপ্তমী
অষ্টমী
নবমী
দশমী
একাদশী
দ্বাদশী
ত্রয়োদশী
চতুর্দশী
অমাবস্যা
শুক্ল পক্ষের তিথিগুলি হল:-
শুক্লা প্রতিপদ
দ্বিতীয়া
তৃতীয়া
চতুর্থী
পঞ্চমী
ষষ্ঠী
সপ্তমী
অষ্টমী
নবমী
দশমী
একাদশী
দ্বাদশী
ত্রয়োদশী
চতুর্দশী
পূর্ণিমা
এই ভাবে একটি চান্দ্র মাস শেষ হয়।
বারোটি চান্দ্র মাসে একটি চান্দ্র বৎসর হয়।
কিন্তু আমরা জানি সৌর বৎসরে ৩৬৫ দিন থাকে, অপর দিকে একটি চান্দ্র বৎসরে প্রায় ৩৫৫ দিন হয়।
অতএব,
১ সৌর বৎসর = ১ চান্দ্র বৎসর + ১০ দিন (১)
(এজন্যই আমরা দেখি পূজা প্রতি বৎসর ১০ দিন এগিয়ে যায়, কিন্তু এই এগিয়ে যাওয়া যাতে অনন্তকাল ধরে না চলে সেজন্যই মল মাসের অবধারণা, নাহলে এগোতে এগোতে আশ্বিন মাসের পূজা বৈশাখে চলে আসত।)
(১) থেকে পাই,
৩ সৌর বৎসর = ৩ চান্দ্র বৎসর + ৩০ দিন
> ৩ সৌর বৎসর = ৩ চান্দ্র বৎসর + ১ মাস
অতএব দেখা যাচ্ছে ৩ টি সৌর বৎসর পার করলে ৩ টি চান্দ্র বৎসরের সঙ্গে ১ টি গোটা চান্দ্র মাস অতিরিক্ত (extra) পাওয়া যাচ্ছে।
তাই এবার গণনা পদ্ধতিকে reset করার জন্য ৩ বছর অন্তর একটি মাসকে বাদ দিতে হয়, এই বাদ দেওয়া অতিরিক্ত মাসকেই অধিক মাস বলে, অনেকে যাকে মল মাস বলেন। বৈষ্ণবরা আবার এই মাসকে পুরুষোত্তম মাস বলেন।
এবারে নিশ্চয়ই বুঝলেন অধিক মাস বা মল মাস কীভাবে হয়। মল মাস কোন অশুভ মাস নয়, কেবল একটা অধিক মাস। এই মাসের পূজা বা অন্যান্য কৃত্য পরের মাসে সংঘটিত হয়।
এবার বলি কিভাবে নির্ণয় হয় কোন মাসকে মল মাস রূপে চিহ্নিত করা হবে? লটারি করে?
আজ্ঞে না।
সে বৎসরের যে সৌর মাসে ২ টি অমাবস্যা তার পরের মাসটিকে মল মাস রূপে চিহ্নিত করা হয়।
এ বছর ঘটনাচক্রে সৌর ভাদ্র মাসে দুটি অমাবস্যা ছিল, তাই পরবর্তী চান্দ্র আশ্বিন মাসটিকে মল মাস রূপে চিহ্নিত করা হয়েছে।
অর্থাৎ আগামীকাল প্রতিপদ থেকে আরম্ভ যে চান্দ্র মাস সেটা আগামী অমাবস্যা পর্যন্ত চলবে, তারপরের প্রতিপদ থেকে আবার চান্দ্র আশ্বিন মাস গণনা করা হবে।
সুতরাং যারা ভাবছেন যে এবার পূজা কার্তিক মাসে হচ্ছে তাঁরা আংশিক ঠিক আংশিক ভুল, কারণ মাসটা সৌর গণনায় কার্তিক হলেও চান্দ্র গণনায় আশ্বিন মাস। বস্তুতঃ গত পূর্ণিমার পরদিন অর্থাৎ কৃষ্ণা প্রতিপদ তিথি থেকেই চান্দ্র আশ্বিন মাস আরম্ভ হয়ে গেছে, আশ্বিন মাসের একটি পক্ষ পার হয়ে গেল। আগামীকাল থেকে আগামী অমাবস্যা পর্যন্ত মল আশ্বিনে আবার চান্দ্র আশ্বিন স্থগিত থাকবে, আবার তারপরের প্রতিপদ থেকে আরম্ভ হয়ে কোজাগরী পূর্ণিমা তিথির অবসানে চান্দ্র আশ্বিন মাসের অবসান হবে।
ব্যাপারটা এরকম দাঁড়াবে,
শুদ্ধ আশ্বিনের কৃষ্ণ পক্ষ > মল আশ্বিনের শুক্ল ও কৃষ্ণ পক্ষ > শুদ্ধ আশ্বিনের শুক্ল পক্ষ।
৩১সে ভাদ্র, ১৪২৭ বঙ্গাব্দ (gregorian 17th Sep, 2020)
No comments:
Post a Comment