সব ধর্মমতে দান প্রশঙসিত। দান করতে হয় দীন হয়ে, কোনো প্রত্যাশা না রেখে। দান করলে দাতার অন্তরে দয়া noর দরজা খুলে যায়। দয়া করা হিসেবে দান করা উচিত নয়। এতে দাতার মনে অহঙ্কার জন্মে। তিনি দান গ্রহন করেন গুরুরূপে তিনি দাতার হৃদয়ে দয়াভাব জাগ্রত করেন। তাই দান করে দাতার কাছে গ্রহীতার কাছে কৃতজ্ঞ থাকা উচিত।
দাতা যাকে দান করবে তার অর্থাৎ গ্রহীতার দু:খ অনুভব করে তাকে তার প্রতি সহানুভূতি প্রকাশ করতে হবে। তাকে সাহস দিতে হবে। সান্ত্বনা দিতে হবে। পরে সাধ্যমতো যা সম্ভব যত্নসহকারে দিতে হবে। এর ফলে দাতা প্রেমের অধিকারী হবে। তার দান সিদ্ধ হবে।
দান করে প্রকাশ করতে নেই। এমনভাবে দান করতে হবে যাতে কেউ যানতে না পারে। ডান হাতের দানের কথা বা-হাতও জানতে না পারে। কেউ কিছু চাইলে দিতে হয়। যাচ্ঞাকারীকে ফেরাতে নেই। অর্থ না থাকলে সহানুভূতি দেখাতে হবে, সাহস দিতে হবে, সান্ত্বনা দিতে হবে। তার সঙ্গে মিষ্টি কথা বলতে হবে। এতে হৃদয় কোমল হবে।
শাস্ত্রে আছে ...... ভিয়া দেয়ম্, শ্রিয়া দেয়ম্, হ্রিয়া দেয়ম্, সংবিদা দেয়ম্, শ্রদ্ধায়া দেয়ম্, অশ্রদ্ধায় অদেয়ম্ । ভিয়া দেয়ম্ --- দাতাকে ভয়ে ভয়ে দান করতে হবে। কারন দাতা যাকে দান করতে যাচ্ছে, সে দান নাও গ্রহন করতে পারে। শ্রিয়া দেয়ম্ --- দাতার দান যে গ্রহন করে সে গ্রীহিতা। দাতা গ্রীহিতার মঙ্গল কামনা করে দান করবে। হ্রিয়া দেয়ম্ --- দাতা লজ্জার সঙ্গে দান করবে। হ্রী ___ লজ্জা, লাজ। সঙবিদা দেয়ম্ --- দাতা সঞ্জানে দান করবেন। দান করে যেন অনুতাপ না করতে হয়। এক দাতা এক ভিখারিকে ২৫ পয়সার কয়েন দিতে গিয়ে ভুল করে পাঁচ টাকার একটি কয়েন দিয়ে ফেলেছেন। তাঁর সে কি অনুতাপ। দান করার পর দাতার অবস্থা এমন যেন না হয়। শ্রদ্ধায় দেয়ম্ --- দান করতে হবে শ্রদ্ধার সঙ্গে। অশ্রদ্ধায় অদেয়ম্ --- গ্রীহিতাকে অশ্রদ্ধা করে দান করতে নেই।
দাতা দান করবেন, গ্রীহিতা গ্রহন করবেন। দান গ্রহণ করে গ্রীহিতা যে আনন্দ পাবেন, দাতা দান করে তার থেকে ঢের বেশি আনন্দ পাবেন। গ্রীহিতা পেয়ে ধন্য, দাতা দিয়ে ধন্য।
দান করতে হয় প্রত্যাশা না রেখে। কিন্তু এর ব্যতিক্রমও আছে। এক ভক্ত এক দু:স্থকে তার দুটি রুটি দিয়ে সেবা করলেন। একটু পরে দশজন অতিথি এসে উপস্থিত। কিন্তু তার ঘরে তো কিছুই নেই। এই সময় এক ব্যক্তি একটি পাত্রে ১৮টি রুটি নিয়ে আসে। ভক্ত ব্যক্তিটিকে বলেন যে এ রুটি তুমি নিয়ে যাও। এ রুটি আমার নয়। লোকটি বাড়ি গিয়ে দেখে , ভূল করে দু'খানা রুটি সে বাড়িতে ফেলে গেছে। লোকটি সে দু'খানা রুটি সহ ২০টি রুটি ভক্তকে আবার এনে দেয়। ভক্ত তা গ্রহন করে। ভক্তটি খুবই ধর্মপ্রাণ ব্যক্তি ছিলেন। তিনি জানতেন ঈশ্বরকে যা দেওয়া যায় , তার দশগুন পাওয়া যায়। ইতিপূর্বে তিনি একজনকে দুখানা রুটি দিয়েছেন, তাঁর দৃঢ় বিশ্বাস ঈশ্বর তাঁকে ২০ খানা রুটিই দেবেন, ১৮ খানা নয়। এ সাধারণ মানুষের কথা নয়। এ উচ্চকোটির সাধনর্গের ভক্তের কথা।
দাতা দিতে চাইলেই একজন গ্রহন করবেন তার কোনও কথা নেই।
:: এক রাজা এক ব্রাহ্মনকে বলেন, আমি আপনাকে কিছু দিতে চাই। বলুন আপনার কি লাগবে? সেই ব্রাহ্মন বলেন..... নদীর জল, গাছের ফল, কোমল তৃনশয্যা আছে। আমার তো সবই আছে, তোমার কাছে কি চাইব? দাতা দিলেই যে মানুষ নেবে তার কোনও মানে নেই।
:: আলেকজান্ডার তাঁর গুরু অ্যারিস্টটলকে বলেন আমি আপনাকে কিছু দিতে চাই। আপনার কি লাগবে বলুন। শিক্ষা গুরু শীতের সকালে উঠোনে বসে রোদ পোহাচ্ছিলেন। আলেকজান্ডার তাঁর সামনে দাড়ানোয় তাঁর গায়ে রোদ লাগছিল না। শিক্ষা গুরু আলেকজান্ডারকে বলেন, তুমি একটু সরে দাড়াও। আলেকজান্ডার সরে দাঁড়ালেন। শিক্ষা গুরু বললেন, তুমি আমাকে রোদ দিয়েছ, আর আমার কি লাগে।
শ্রীকৃষ্ণের কাছে কর্ণই বড় দাতা। আর অর্জুন মনে করেন , তাঁর দাদা যুধিষ্ঠির বড় দাতা। পরীক্ষা করার জন্য শ্রীকৃষ্ণ ও অর্জুন ব্রাহ্মনের জদ্মবেশে যুধিষ্ঠিরের কাছে যান এবং বলেন , শীতে বড় কষ্ট পাচ্ছি। একটু চন্দনকাঠের আগুন লাগবে। চন্দনকাঠ আছে ? যুধিষ্ঠির বলেন, চন্দনকাঠ নেই। অন্য কাঠ দেব। সুগন্ধি গেলে দেব। শ্রীকৃষ্ণ ও অর্জুন এবার কর্ণের কাছে গিয়ে কীছু চন্দনকাঠ চাইলেন। কর্ণ ঘরের চন্দনকাঠের দরজা জানালা ভেঙ্গে চন্দনকাঠ দিলেন।
এই খানেই শেষ নয়। এরপর কর্ণ মৃত্যু শয্যায়। তাঁকে পরীক্ষা করার জন্য অর্জুনকে সঙ্গে নিয়ে শ্রীকৃষ্ণ বললেন, কর্ণ , তুমি আমাকে কিছু সোনা দাও। কর্ণ একটু চিন্তা করে বললেন , অর্জুন, তুমি আমার একটা দাঁত খুলে নাও। ওকি সোনার। সঙ্গে সঙ্গে শ্রীকৃষ্ণ তাঁর চতুর্ভুজ , শঙ্খচক্রধারী রূপ দেখালেন। দানের জন্যই কর্ণ মুক্তি লাভ করেন। এইভাবে শ্রীকৃষ্ণ অর্জুনকে বোঝালেন, যুধিষ্ঠির ও অর্জুনের মধ্যে কে বড় দাতা।
জনৈক মহর্ষি বলেছেন....... দিতে যে পারে না, পাওয়া তাঁর ঘটে না। দিয়ে দাও, নিজের জন্য কিছু চেও না। দেখবে সব তোমার হয়ে যাবে।
এ ভক্তি ও বিশ্বাসের কথা। আর ধর্মজগতে ভক্তি ও বিশ্বাসই তো সব।

No comments:
Post a Comment