Friday, 19 November 2021

পঞ্চমুন্ডীর আসনের সম্বন্ধে

 



পঞ্চমুন্ডীর আসন।

🌺🌺🌺🌺🌺🌺🌺

পঞ্চমুন্ডীর আসন কি?

#পঞ্চমুন্ডীর আসন কি ভাবে তৈরি করা হয়?

#পঞ্চমুন্ডীর আসনে বসে ধ্যানের উপকারিতা কি? 

স্বীকারোক্তি:-

                    গোড়াতেই স্বীকারোক্তি করি যে, পঞ্চমুন্ডীর আসন তৈরী করা অতোটা সহজ কাজ নয়। অনেক অনেক সাধ্য সাধনা করে, অনেক কষ্ট করে একটা পঞ্চমুন্ডীর আসন তৈরী করতে হয়।

             পঞ্চমুন্ডীর আসন সাধারণত তন্ত্র সাধনায় সিদ্ধিলাভ করার জন্য ব্যবহার করা হয়। এই তন্ত্র সাধনায় নারী ও পুরুষ কিন্তু বসে সাধনা করতে পারেন। কেবলমাত্র গুরুদেবের আদেশ ছাড়া এই পঞ্চমুন্ডীর আসনে বসা উচিত নয়। আর কেউ যদি শখ করে গুরুদেবের আদেশ ছাড়া এই আসনে বসে ধ্যান করেন তবে তিনি হয় উন্মাদ না হয় মৃত্যু পর্যন্ত ঘটতে পারে। আমি বেশ কয়েকটি পঞ্চমুন্ডীর আসন দেখেছি সেগুলি কিন্তু নিষ্ক্রিয় করা হয়েছে।

উপাদান:- 

(১) একটি অপঘাতে মৃত্যুু চন্ডালের মাথা,

##########################

কারন, চন্ডালের কাজ হলো হিন্দুদের মৃতদেহ দাহ করে পঞ্চভূতে বিলীন করে দেওয়া। এমন একটা চন্ডাল বা চাঁড়ালের মাথা, যার মৃত্যু হয়েছে অপঘাতে অর্থাৎ সাপের কামড়ে, বিষ খেয়ে, গলায় দঁড়ি দিয়ে, এ্যাক্সিডেন্টে অথবা আগুনে পুড়ে।

(২) একটা সাপের মাথা।

#################

সাপ হলেই হবে না, বিষধর সাপ অর্থাৎ কেউটে বা গোখরো এমন সাপ চাই, যে সাপ ফনা ধরতে পারে এবং খুব বিষধর। কারন, সাপ হলো হিংস্রতার প্রতীক, তাই এমন সাপের মাথা নেওয়া হয়।

(৩) একটা বেজী বা নেউলের মাথা।

######################

কারন, বেজী বা নেউল হলো ক্ষিপ্রতার প্রতীক। তাই ক্ষিপ্রতার প্রতীক হিসেবে বেজীর মাথা নেওয়া হয়।

(৪) একটা শৃগাল বা শেয়ালের মাথা।

#######################

কারন, সমস্ত পশুদের মধ্যে শেয়াল সবচেয়ে ধূর্ত বা চালাক। সাধনা তে শীঘ্র সিদ্ধিলাভ করার জন্য শেয়াল বা শৃগালের মাথা নেওয়া হয়।


(৫) একটা হনুমানের মাথা  অথবা বানরের মাথা।

#################

কারন, হনুমান হলেন ব্রহ্মজ্ঞানী, ধীর,স্থির তাই সাধকের চিন্তাধারনাকে স্থির রাখার জন্য হনুমানের মাথা নেওয়া হয়।

স্থান নির্বাচন:-

#########

       শহর বা জনবসতি পূর্ণ এলাকায় পঞ্চমুন্ডীর আসন তৈরী করা যাবে না। পঞ্চমুন্ডীর আসন তৈরী করতে গেলে কোন নির্জন শ্মশানস্থান, বা গভীর জঙ্গলের মধ্যে স্থান নির্বাচন করতে হবে।

বৃক্ষ বা গাছ নির্বাচন:-

##############

         পঞ্চমুন্ডীর আসন তৈরী করতে গেলে কোন নির্জন স্থানে অর্থাৎ যেখানে মানুষের আনাগোনা খুব কম সেইখানে নির্দিষ্ট পাঁচটি গাছ যথা,,,,,,,

(১) শিমুল, (২) বেল, (৩) নিম, (৪) বট,(৫) পিপুল।

এই পাঁচটি গাছের মধ্যে যে কোন একটি গাছের নীচে আসন তৈরী করতে হবে।


তিথি 

#######

            কেবলমাত্র অমাবস্যা তিথিতে রাত ১২টার পর এই পঞ্চমুন্ডীর আসন প্রতিষ্ঠার কাজ করতে হবে। তবে কৃষ্ণপক্ষের চতুর্দশী তিথিতে ও প্রতিষ্ঠান করা যায়, তবে গুরুদেবের আদেশে।

নিয়ম

#######

           প্রথমেই বলি সাধারণ মানুষের জন্য কিন্তু পঞ্চমুন্ডীর আসন নয়। এই পঞ্চমুন্ডীর আসনে সাধনা হলো গুরুমুখী, গুরুদেবের আদেশ ছাড়া এইসব ক্রিয়া করলে সাধক হয় উন্মাদ নাহলে মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে।

            উক্ত পাঁচটি মাথা সংগ্ৰহ করে প্রথমে ভালো করে পঞ্চগব্য দিয়ে ভালো করে শোধন করতে হবে। প্রথমে মনে রাখতে হবে ঐ মৃত প্রানীর মধ্যে সাধককে প্রান সঞ্চার করতে হবে।

           এক একটি মাথার উপর বসে, প্রথমে সাধককে টানা ৪৫ দিন ব্রহ্মচর্য ও হবিষ্যান্ন পালন করে, অর্থাৎ ব্রাহ্ম মুহূর্তে স্নান করে উদয় অস্ত গুরুদেবের আদেশ নিয়ে তাঁর দেওয়া মন্ত্র জপ করতে হবে। এই একই ভাবে পাঁচটি মাথার উপর আলাদা আলাদা করে ৪৫ দিন ধরে চলবে কঠোর ভাবে সাধনা, ব্রহ্মচর্য পালন ও হবিষ্যান্ন গ্ৰহন।


       এই ভাবে ৪৫ দিন করে পাঁচটি মাথার উপর সাধনার পর ঐ মাথাগুলির প্রানসঞ্চার হবে। তখন নির্ধারিত গাছের নীচে অর্থাৎ শিমুল, বেল, নিম, বট বা পিপুল গাছের তলায় তিন ফুট লম্বা ও তিন ফুট চওড়া গর্ত খুঁড়তে হবে। ঐ মাপের একটা পাথর অভাবে মার্বেল ও সংগ্ৰহ করে রাখতে হবে।

       ঐ গর্তের মধ্যে চারকোনে চারটি অর্থাৎ ঈশান, বায়ু, অগ্নি ও নৈঋত কোনে চারটি প্রানীর মাথা এবং ঠিক মাঝখানে চন্ডালের মাথা প্রতিস্থাপন করতে হবে। এর মধ্যে কয়েকটি গাছের শিকড় যথা, 

(১) শ্বেত মাকাল গাছের শিকড়।

(২) শ্বেত লজ্জাবতী গাছের শিকড়।

(৩) ডুমুর গাছের শিকড়।

(৪) সিংহ পুচ্ছ গাছের শিকড়।

            উপরোক্ত চারটি গাছের শিকড় দিতে হবে। তাছাড়া ও দিতে হবে কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ জিনিস পত্র যেমন, আতর, অগুরু, চন্দন, কুমকুম, তেল, লালবস্ত্র ও কারণ। 

            তারপর লাল বস্ত্রের উপর চারটি কোনে ঐ পাঁচটি মাথা প্রতিস্থাপন করে, অগুরু, কুমকুম, অষ্টগন্ধ্যা, শ্বেতচন্দন, রক্তচন্দন, হলুদ চন্দন চামেলী তেল, জবাকুসুম তেল, সিঁদুর ও কস্তুরী দিয়ে মন্ত্র উচ্চারণ করে অভিষেক করতে হবে। অভিষেকের পর পাথর বা মার্বেল পাথর চাপা দেওয়ার পর ঐ পঞ্চমুন্ডির আসনের সামনে টানা নয়দিন নয় রাত্রি পূজা অর্চনা করতে হবে। নয়দিন পর পাথর চাপা দেওয়ার পর গুরুদেবের আদেশ নিয়ে ঐ আসনে বসতে হবে।

         এই পঞ্চমুন্ডীর আসনে বসে সাধনা করলে খুব শীঘ্রই ঈষ্ট দর্শন হয়। তবে গুরুদেবের আদেশ ব্যতীত সমস্ত সাধনাই বিফল

*****" মনে রাখবেন এই পঞ্চমুন্ডীর আসন সাধনা সাধারণ মানুষের জন্য নয়। এগুলো হলো গুরুমুখী বিদ্যা। প্রতিটি কাজের জন্য আলাদা আলাদা নিয়ম আছে, আছে আলাদা আলাদা মন্ত্র। কেউ কোনদিন কোন ভাবেই কৌতুহল বশত ভুলেও এই ধরনের ক্রিয়া করতে যাবেন না। এখানে নিজের আত্মরক্ষার মন্ত্র আগে প্রয়োগ করতে হয়, আমি কিন্তু কোন জ্যায়গায় কোন মন্ত্র প্রকাশ করিনি। 


সংগৃহীত

No comments:

Post a Comment