এখন তো কত ভক্ত, চারিদিকে হই হই।তাঁর অসুখের সময় একজন ভেগে গেল বিশ টাকার জন্য --- চাঁদা ধরেছিল।এখন তো আর ঠাকুরের সেবা কঠিন নয়, ঠাকুরকে ভোগ দিয়ে নিজেরাই খায়। ঠাকুরকে বসিয়ে রাখে, বসেই আছেন ; শুইয়ে রাখ, শুয়েই আছেন -- ছবি তো !
" বলরামবাবুকে দেখেছিলেন, মা কালীর পাশে হাতজোড় করে রয়েছেন,মাথায় পাগড়ি। বলরাম সেই বরাবরই হাতজোড় করেছিল, কখনো পায়ে হাত দিয়ে প্রণাম করত না।ঠাকুর তার মনের ভাব বুঝতে পেরে বললেন,' ও বলরাম, এই পা - টা চুলকাচ্ছে, হাত বুলিয়ে দাও না।'
বলরাম অমনি নরেন, কি রাখাল - টাখাল যে কেউ কাছে থাকত তাকেই টেনে এনে বলত, ' এই ঠাকুরের পা- টায় হাত বুলিয়ে দাও তো, চুলকাচ্ছে'।"
আমি -- মহারাজকে আমি ঠাকুরের রং-এর কথা জিঞ্জাসা করেছিলাম।তিনি বলেন, 'এই আমাদের গায়ের রং-এর মতোই ছিল।'
মা - সে তারা যখন দেখেছে। তখন তাঁর শরীর ও ছিল না, সে রং ও ছিল না।এই আমার ই দেখ না, এখন কেমন রং হয়েছে --- কেমন শরীর হয়েছে।আগে আমার কি এইরকম ছিল ? আগে খুব সুন্দর ছিলাম। আমি প্রথমে বেশি মোটা ছিলুম না।শেষে (ঠাকুরের শরীর ত্যাগের পর) মোটা হয়েছিলুম।দক্ষিণেশ্বরে যখন ছিলুম তখন তো বার হতুম না। খাজাঞ্চী বলেতেন, ' তিনি আছেন শুনেছি, কিন্তু কখনো দেখতে পাই নি।'
শ্রী শ্রী মায়ের কথা
স্বামী অরূপানন্দ
মা যখন প্রাণদাত্রী। কৃপাময়ী।
💐💐💐💐💐💐💐💐💐💐
কায়রো শহরে এক ক্যাথলিক খৃষ্টান পরিবার বাস করত। তাদের তের বছরের ছোট ছেলেটির নাম আ্যন্টনি। তার একবার হল টাইফয়েড।সে সময় এই রোগের কোনো চিকিৎসা ছিল না। রোগ শুরু হওয়ার চল্লিশ দিনের মাথায় অধিকাংশ রোগী মারা যেত।
আ্যন্টনির মা তাকে প্রার্থনা করার জন্য প্রভু যীশু এবং মা মেরীর একটি ছবি দিলেন। আ্যন্টনি সেই ছবির দিকে তাকিয়ে প্রার্থনা করত। দেখতে দেখতে চল্লিশ তম দিন এসে উপস্থিত হল।বাড়ির সকলে অপেক্ষা করছে যে এই হয়তো আ্যন্টনির প্রাণস্পন্দন থেমে যাবে। আ্যন্টনি একমনে মা মেরীর কাছে প্রার্থনা করে চলেছে।
হঠাৎ আ্যন্টনী দেখল একজন সাদা কাপড় পরা বিদেশি নারী তার কাছে এসে মাথায় হাত বুলি isয়ে দিতে লাগল।তাঁর চুলগুলি সামনের দিকে বিন্যস্ত। এই দর্শনের পরেই আ্যন্টনি ক্রমশঃ সুস্থ হয়ে উঠতে লাগল। বাড়ির সকলে তো অবাক! আ্যন্টনি সুস্থ হয়ে উঠল, কিন্তু তাকে দর্শন দেওয়া সেই দেবী কে, তা সে বুঝতে পারল না। তাঁকে সে চেনে না।
তারপর দীর্ঘ দিন কেটে গেছে। আ্যন্টনি এখন পূর্ণ বয়স্ক যুবক। জীবিকা অর্জনের জন্য এখন সে থাকে ব্রাজিলের সাও পাওলো শহরে। একদিন তার এক বন্ধু তাকে নিয়ে এল সাও পাওলোর রামকৃষ্ণ মিশনে।সেখানে সে দেখল মা সারদার ছবি। দেখেই চিনতে পারল সে। এই সেই দেবী যিনি তাকে দুরারোগ্য টাইফয়েড থেকে বাঁচিয়ে তুলেছিলেন।চোখে জল এল আ্যন্টনির। তার নবজন্ম ঘটল। রামকৃষ্ণ মিশনে দীক্ষা হল তার। মায়ের কৃপায় আ্যন্টনি পেল মায়ের কাছে চরম ও পরম আশ্রয়।
💐💐💐💐💐💐💐💐💐💐💐💐💐💐💐
জয় মা
তথ্যসূত্র : শ্রীমৎ স্বামী বিমলাত্মানন্দজী মহারাজের বক্তৃতা
বুড়ির রকমসকম দেখে মায়া হলো শাকওলার। বললেঃ " তা নাও না বুড়ি - মা, দু আঁটি তিন আঁটি - যা ইচ্ছে! স্বচ্ছন্দে নাও, পয়সা লাগবে না।
মহিলা মাথা নেড়ে বললেন ঃ না বাবা, এখন নিতে পারব না।এখন ঘরকে যাচ্ছি না।
তারপর একটু থেমে বললেন ঃ তুমি কোথায় যাবে বললে? শ্যামবাজারে যাও শাক বেচতে? তা বাবা যদি আমার দয়া হয়, একদিন বরং আমার ঘরে দু- আঁটি শাক ফেলে দিয়ে এসো। যেদিন বাঁচবে টাঁচবে--- "
আমি ঠিকানা পাব কোথায়?
কিছু না, শ্যামবাজারের বাজার থেকে বেরিয়ে একটু উত্তরে -- বাগবাজার, সেই মুখে যেয়ে জিজ্ঞেস করো, মার বাড়িটা কোথায়, কেউ না কেউ দেখিয়ে দেবেই -
তা গেছিল সে লোকটি। বাজারে যাবার আগেই গিছিল। আলাদা করে চাঁপানটে একটা ছেঁড়া কাপড়ে বেঁধে নিয়ে। বাড়ি খুঁজে বের করতেও কোন অসুবিধে হয়নি। কিন্তু মুশকিল হলো- লোকটি যখন বলল ঃ এ-ই ঠিকানার একটি বুড়িমতো মেয়ে ছেলে থাকে, আমাকে বলছেন একটু লটে শাক নিয়ে যেতে - তাই আমি এনেছি।
সেটা আসলে মঠ, সাধুরা থাকেন। তাঁরা তো অবাক। না বাপু, এখানে কেউ মেয়েছেলে থাকে না। দেখতে পাচ্ছ তো সাধুদের আস্তানা - এখানে মেয়েছেলে থাকবেই বা কেন? নিশ্চয় তোমার ভুল হয়েছে। তবু লোকটি বারবারই বলতে লাগলঃ না, সেই বুড়ী- মা আমাকে অনেক করে বলেছেন যে-- " বলতে বলতেই নজরে পড়ল,সিঁড়ির বাঁকে বিশ্বজনীন সারদামনির নানা বয়েসের ছবি -- একটা ফ্রেমে বাঁধানো - সে বলে উঠলো ঃ বা রে! এই তো। এই বুড়ী - মাই তো আমাকে লটে শাকের কথা বলেছেন - আপনারা বলছ তিনি এখানে থাকেন না!
সাধুরা তো অবাক! মাগো, তোমার দুটো শাক খাবার ইচ্ছে হয়েছিল তো আমাদের বলোনি কেন মা!
১৯১৬ খ্রিস্টাব্দের দুর্গাপূজার কয়েকদিন শ্রীমা বেলুড় মঠের উত্তরের বাগানবাড়িতে( এখন যেটি 'লেগেট হাউস' নামে পরিচিত) ছিলেন।অষ্টমীর দিন সন্ধি পূজার পরে স্বামী সারদানন্দ একজন ব্রহ্মচারীকে বললেনঃ 'এই গিনিটা মাকে দিয়ে প্রণাম করে আয়'। ব্রহ্মচারী ভাবলেন গিনিটি দুর্গাপ্রতিমা কে প্রণামী দিতে হবে । তাই শরৎ মহারাজকে নিঃসন্দেহ হবার জন্য জিজ্ঞাসা করলেন। সারদানন্দ বললেন ঃ ' ও বাগানে মা আছেন; তাঁর পায়ে গিনিটা দিয়ে প্রণাম করে আয়। এখানে তো তাঁরই পুজো হ'ল।'
অগ্নি আর তার দাহিকা শক্তি যেমন অভেদ, স্বামী সারদানন্দের চোখে শ্রীরামকৃষ্ণ ও শ্রীমা ছিলেন তেমনই। স্বামী সারদানন্দ বিশ্বাস করতেন সর্ব বিদ্যার অধিষ্ঠাত্রী দেবী সরস্বতী এবার সারদা দেবী রূপে পৃথিবীতে অবতীর্ণ হয়েছেন।
একটি শ্লোকে তিনি বলেছেন ঃ
যথাগ্নের্দাহিকা শক্তি রামকৃষ্ণে স্থিতা হি যা।
সর্ববিদ্যাস্বরূপাং তাং সারদাং প্রণমাম্যহম।।
শুধু কথাতেই নয় তাঁর সকল আচরণেও শ্রী মায়ের প্রতি তাঁর ওই মনোভাব প্রতিফলিত হতো। এ সম্বন্ধে ব্রহ্মচারী প্রকাশ চন্দ্রের লেখা থেকে কিছু অংশ উদ্ধৃত করা যেতে পারেঃ
'মায়ের ইচ্ছার ওপর তিনি [স্বামী সারদানন্দ] কখন নিজের ইচ্ছা প্রয়োগ করিতেন না ।.... তাহার বিশ্বাস ছিল শ্রী শ্রী মাতৃদেবীর ইচ্ছা বা অনিচ্ছা দৈব নির্দেশ। মানুষের মন গড়া আইন সেখানে প্রযোজ্য নয়। শরৎ কখনো সেই ইচ্ছা বা অনিচ্ছায় প্রতিবাদ করেন নাই।প্রতিবাদ তো দূরের কথা।তাঁহার মন স্বতঃই মানিয়া লইত যে মায়ের ইচ্ছাই ঠাকুরের বিধান।
বলিতেন, 'মা ও ঠাকুর কি আলাদা?'
স্বামী সারদানন্দ কে বার একজন জিজ্ঞাসা করেছিলেন ঃ
' আপনারা যে মাকে এত ভক্তি করেন সেটা কি গুরুপত্নী বলে ?'
মহারাজ উত্তর দেন ঃ 'না, তা নয়। ঠাকুর ও মা অভেদ তবে ঠাকুরের সঙ্গে তর্ক করা চলত মার সঙ্গে চলে না।
শ্রী শ্রী মাঃ সেবক চতুষ্টয়ের দৃষ্টিতে
🌷স্নেহময়ী মা🙏
এক ভক্ত অনেক কষ্ট করে দূরদেশ থেকে সরু সুগন্ধি চাল আনিয়েছেন এবং একজন ভক্তিমতী মহিলাকে দিয়ে সেই চালের ভাল পিঠে তৈরি
করিয়েছেন মাকে খাওয়ানাের জন্য। সেই পিঠে নিয়ে যখন জয়রামবাটী রওনা হচ্ছেন, তখন বিকেল হয়েছে। রওনা হওয়ার মুখে জনৈক ব্রাহ্মণ
ভক্ত তাকে মনে করিয়ে দিলেন : মা ব্রাহ্মণের বিধবা, রাতে চালের জিনিস তিনি মুখে দেবেন না। ভক্তটির মাথায় আকাশ ভেঙে পড়ল।
সত্যিই তাে! একথা তাে তার আগে মনে হয়নি। এত পরিশ্রম, এত আশা সব বুঝি বৃথা গেল। যাই হােক, তিনি ঠিক করলেন—মায়ের উদ্দেশ্যে
তৈরী জিনিস মায়ের পায়ে নিয়ে গিয়ে নিবেদন করবেন। গ্রহণ করতে হয় তিনিই গ্রহণ করবেন, ফেলতে হয় তিনিই ফেলবেন। জয়রামবাটী যখন
পৌছলেন তখন সন্ধ্যে। মা কিন্তু সব দেখে ও শুনে খুব প্রসন্নভাবে
বললেন : “বাবা! মুখে দেব বইকি! তুমি এতদূর থেকে বয়ে নিয়ে এসেছ, কত কষ্ট করে তৈরী করিয়েছ, আর একজন দূরদেশ থেকে কষ্ট করে
পাঠিয়েছে। রাত্রে ঠাকুরকে দিয়ে মুখে দেব। তুমি এজন্য চিন্তা করাে না।
উপস্থিত একজন সন্তানকে লক্ষ্য করে মা হাসিমুখে বললেন : ‘ছেলেদের জন্য আমার কোন নিয়মকানুন ঠিক থাকে না।'
অনুরূপ আর একটি ক্ষেত্রে মা একবার বলেছিলেন : ‘ছেলেদের কল্যাণের জন্য আমি সব করতে পারি।'
নিরন্তর মায়ের অন্তরে তার জগৎজোড়া ছেলেদের কল্যাণকামনা প্রবহমান ছিল বলেই জনৈক চিকিৎসকের স্ত্রী যখন তার কাছে প্রার্থনা
করলেন স্বামীর উপার্জনের উন্নতির জন্য, মা পারলেন না সেই প্রার্থনা মঞ্জুর করতে। বললেন : ‘বউমা, এমন আশীর্বাদ করব আমি—লােকের
অসুখ হােক কষ্ট পাক ? তা তাে আমি পারব না, মা! সব ভাল থাকুক, জগতের মঙ্গল হােক।' নিত্য স্নানের পরও তার মুখে উচ্চারিত হত ঐ
প্রার্থনা : ‘মা জগদম্বে, জগতের কল্যাণ কর।'
জয় মা 🙏
সংগৃহীত পোস্ট।
ভগবানের বৈঠকখানা
মানবজীবনে শান্তিলাভের উপায় হিসেবে শ্রী শ্রী মা বলতেন :: ' যখন যেমন তখন তেমন , যাকে যেমন তাকে তেমন, যেখানে যেমন সেখানে তেমন' ..... এটি একটি বানী হলেও যেন তিনটি মন্ত্র। এর মে কোনো একটি পালন করতে পারলে মানুষ ব্যক্তিগত জীবনে সুখী হতে পারবে। শুধু ব্যাক্তিগত নয়, অন্যকেও সুখী সমাজে শান্তি প্রতিষ্ঠা করতে পারবে। " যখন যেমন তখন তেমন" বাক্যে সময় বা কালকে বোঝানো হয়েছে , "যাকে যেমন তাকে তেমন" বাক্যে পাত্র এবং " যেখানে যেমন সেখানে তেমন " বাক্যে স্থান বোঝানো হয়েছে। এই স্থান-কাল-পাত্র হিসেব করে পরস্পর পরস্পরের সাথে আলোচনা করলে ভূল বোঝাবুঝির অবকাশ থাকে না। শ্রীরামকৃষ্নদেবও বলতেন :: " দেশ-কাল-পাত্রভেদ বিবেচনাপূর্বক সংসারে সকল বিষয়ের অনুষ্ঠান করিতে এবং না চালাইতে পারিলে শান্তিলাভ অথবা নিজ অভিষ্ঠ লখ্যে পৌঁছাতে কেহ সমর্থ হয় না।" শ্রী শ্রী মায়ের জীবনদর্শন আলোচনায় দেখা যায়, তিনি যথার্থই তাঁর বানীর জ্বলন্ত দৃষ্টান্ত হয়ে উঠছিলেন। আমরা যদি তাঁর এই কথাটি জীবনে বাস্তাবায়িত করতে পারি, তবে আমাদের প্রত্যেকের জীবন আনন্দময় হয়ে উঠবে। তখন সংসার হবে " ভগবানের বৈঠকখানা"।১)অসতো মা সদ্গময়,তমসো মা জ্যোতির্গময়,মৃত্যোর্মা অমৃতংগময়।অর্থাৎ সত্যে প্রতিষ্ঠিত করো,অন্ধকার থেকে আলোয় নিয়ে চলো, মৃত্যুর হাত থেকে রক্ষা করে অমৃতলোকে নিয়ে যাও।
২) সর্বে ভবন্তু সুখিন:,সর্বে সন্তু নিরাময়া:, সর্বে ভদ্রানি পশ্যন্তু, মা কশ্চিৎ দুঃখভাক্ ভবেৎ। অর্থাৎ সকলে সুখী হোক, সকলে নীরোগ থাকুক, সকলে চারিদিকে মঙ্গলময় দেখুক,কেউ যেন দুঃখ কষ্ট না পায়।
---------------------------------------
"ঈশ্বরের অন্বেষণে কোথায় যাইতেছ?গঙ্গা তীরে বসিয়া করিতেছো কেন?"..........
আমাদের প্রত্যেকের মধ্যেই ঈশ্বর আছেন, এখন সেই ঈশ্বরের সেবা করা উচিত।
আত্ম সেবা করা উচিত। আর তাতেই বিশ্ব সেবা করা হবে। আত্মনি সর্বভূতানাম্। এখন নিজের মধ্যেই সকলকে দেখতে হবে। এসবই আমাদের ধর্ম কথা।ঠাকুর মা স্বামীজীর শ্রী চরণে প্রনাম জানাই ঠাকুর সাবার মঙ্গল করো
এত ভালো লাগলো, মায়ের কথা .... তাই পাঠালাম, এর তথ্যসূত্র নেই, আমাকে বললে বলতে পারবো না, ..........🌺🌺🌺মাতৃদর্শন🌺🌺🌺
ঘটনার কথাটা শুনেছিলাম অনন্যানন্দ মহারাজের কাছে। তিনি তখন হায়দ্রাবাদ আশ্রমে। পূজনীয় স্বামী রঙ্গনাথানন্দজী, মিশনের অন্যতম ভাইস-প্রেসিডেন্ট তখন, তিনিও সেখানে থাকেন। একটা কাজে আমাকে যেতে হয়েছিল হায়দ্রাবাদ কয়েকদিনের জন্য। তখনই শুনি ঘটনাটা।
কি সেই ঘটনা ?
স্থানীয় তিন ভদ্রমহিলা আসবেন বেলুড়মঠে। সেইসাথে দক্ষিণেশ্বর ইত্যাদি দেখে কামারপুকুর জয়রামবাটি। যাওয়ার আগের দিন আশ্রমে গেছেন মহারাজের সাথে দেখা করতে। এক ভদ্রমহিলা বললেন, "মহারাজ, জয়রামবাটি থেকেও অনুমতি পেয়েছি তিনদিন থাকার।" রঙ্গনাথানন্দজী হাসিমুখে বললেন : খুব ভাল। শ্রীশ্রীমায়ের সঙ্গে তিনদিন থাকতে পারা সৌভাগ্যের বিষয়। মহিলার দুঃখ প্রকাশ -- আজ যদি মা থাকতেন খুব আনন্দ হতো। এতদূর থেকে যাচ্ছি। ধন্য হয়ে যেতাম। মহারাজের উত্তর : মা রয়েছেন ওখানে। চিন্তা করো না। ভক্ত মহিলা ভাবলেন, মহারাজ তাকে সান্ত্বনা দিচ্ছেন। সঙ্গেসঙ্গে রঙ্গনাথানন্দজী গম্ভীর স্বরে বললেন: আমি বলছি, মা ওখানে আজও রয়েছেন। ভদ্রমহিলা অবাক হলেন। মহারাজ তো এমনভাবে কথা বলেননা! তার কথা সবসময়ই সহজ সরল আন্তরিক।
পরদিন ভক্ত তিন ভদ্রমহিলা যাত্রায় বেরোলেন। মঠ, কলকাতা, কামারপুকুর হয়ে পৌঁছুলেন জয়রামবাটি।
এক ... দুই ... তিন দিন কেটে গেল দেখতে দেখতে। জয়রামবাটি থেকে কালই ফিরে যাওয়া।
রাতে খাওয়ার পর দু'জন মহিলা ঘুমোতে গেলেন। তৃতীয়জন বাইরে একা বসে আছেন। ঘুম নেই। মায়ের কথা মনে পড়ছে খুব। সবই আছে -- পুরনো ও নতুন বাড়ি, রাস্তা যে-পথ দিয়ে 3-4 বছরের ছোট্ট মেয়ে সারু হেঁটে যেতো, আমোদর নদী, সেই ধানক্ষেত, স-ব-ই আছে, সব। শুধু মা নেই। ভদ্রমহিলার চোখ দিয়ে জল গড়িয়ে পড়ছে। কালই ফিরে যেতে হবে। জয়রামবাটির মাটি বেঁধে নিয়েছেন কাপড়ে। সারা জীবন শুধু এই স্মৃতি, এই মাটি, নিয়ে কাটাতে হবে?চোখের জল মুছে উঠে দাঁড়ালেন। শেষবারের মতো প্রাণভরে দেখতে চান তিনি। হয়তো জীবনে আর কখনো জয়রামবাটিতে আসার সৌভাগ্য হবেনা।রাত অনেক। সারা গ্রাম ঘুমিয়ে পড়েছে। চারদিক শান্ত। তিনি একাই হাঁটতে-হাঁটতে চললেন মন্দিরের দিকে। কিন্তু কিছুটা গিয়েই ওকি !!! দেখে বিশ্বাস হচ্ছেনা তার।
কি দেখলেন তিনি?
দেখলেন যে শ্রীশ্রীমা মন্দিরের একপাশে বসে জায়গাটা পরিস্কার করছেন। চারদিক অন্ধকার, কিন্তু মায়ের আলোয় স্থানটি আলোকিত। হতবাক হয়ে দাঁড়িয়ে রইলেন ঐ ভক্ত মহিলা। মা তো বহুবছর আগেই দেহত্যাগ করেছেন। এ কিভাবে সম্ভব? বাকরুদ্ধ হয়ে গেছেন তিনি।
এমন সময় শ্রীশ্রীমা তার দিকে তাকিয়ে বললেন : এসো বাছা, এখানে এসে বসো। মন্ত্রমুগ্ধের মতো মহিলা গেলেন তাঁর কাছে। হুঁশ ফিরে পেয়ে অনুরোধ করলেন -- মা, আপনি বসুন, আমি জায়গাটা পরিস্কার করে দিচ্ছি। মা হেসে বললেন, মেয়ে মায়ের বাড়ি এলে কি তাকে কাজ করতে দেয় মা? মহিলার কথা: তাহলে কোনো মহারাজকে ডেকে আনছি! মা এবারও মানা করলেন-- ছেলেরা সারাদিন কাজ করে ক্লান্ত হয়ে একটু ঘুমোচ্ছে। ওদের ডেকো না।
কাজ শেষ হলে আরো কথা হলো দু'জনের মধ্যে। মহিলা অবাক হয়ে দেখলেন, মা তেলেগু ভাষায় কথা বলছেন তার সাথে। বিস্ময়ের পর বিস্ময়। কিছু বুঝতে পারছেননা তিনি। সবকিছু এতো বাস্তব, তিনি সচেতন। স্বপ্ন নয়, কল্পনা নয়, পুরোপুরি জাগ্রত তিনি। বিশ্বাস হচ্ছেনা, অথচ উড়িয়ে দেওয়াও যাচ্ছেনা।
এবার মা তাকে বললেন : যাও বাছা, শুয়ে পড়ো গিয়ে। কাল তো যেতে হবে।
ভদ্রমহিলা উঠে যেতে লাগলেন ঘরের দিকে। রাস্তা থেকে দেখলেন মা তাকিয়ে রয়েছেন তার দিকে।
পরদিন ভোরে উঠে দুই বান্ধবীকে রাতের ঘটনা বলতে তারা অবাক। ঘুমের ঘোরে এসব দেখনি তো? হতেও পারে সত্যি, মায়ের কৃপা। ঠিক করলেন, আর কাউকে একথা বলবেননা
সবাই এসব বুঝবেনা।
ফিরে এলেন সবাই হায়দ্রাবাদে। পরদিন আশ্রমে গেলেন। মন্দিরে প্রণাম করে রঙ্গনাথানন্দজীর সাথে দেখা করলেন। প্রণাম করে উঠতেই মহারাজ হাসিমুখে প্রশ্ন করলেন : কি, বিশ্বাস হলো? মায়ের কৃপা।
মহিলা জিজ্ঞেস করলেন -- আপনি কিভাবে জানলেন?
মহারাজ এড়িয়ে গেলেন উত্তরটা। একটা বাংলা গানের দুটো লাইন শোনালেন ::
ডাক দেখি মন ডাকার মতো
দেখি শ্যামা কেমন থাকতে পারে ।
জয় মা ! জয় মা 🌺🙏
জপধ্যানের নিয়ম
"মন নিয়েই জপধ্যান করতে হয়। তুমি, তোমার মন ও ইষ্ট - এই তিনটি চিন্তা করবে। আর অন্য চিন্তা সব তাড়িয়ে দেবে। যদি ইহাতে একটু অসুবিধা হয় তাহলে শ্রীশ্রীঠাকুর ও মার ছবি সামনে রেখে তাঁদের দিকে তাকিয়ে জপধ্যানাদি করবে। মনকে সঙ্গে না রাখলে কিছুই হবে না। যত শ্রীশ্রীঠাকুর ও মার প্রতি ভালোবাসা আসবে এবং আপনার জ্ঞান করতে পারবে, ততোই চঞ্চল ও বিক্ষিপ্ত মন ক্রমশঃ শান্ত হয়ে আসবে। আর কাজের মধ্যে সব সময়ে তাঁর জপ, স্মরণমনন সব সময়ে রাখবে। মোটকথা, কর্ম ও উপাসনা যেন একসঙ্গেই চলে।"
- শ্রীমৎ স্বামী বিশুদ্ধানন্দজী মহারাজ(অষ্টম সঙ্ঘাধ্যক্ষ, রামকৃষ্ণ মঠ ও মিশন)🌺🌺মায়ের বইএ একটি অলিপিবদ্ধ ঘটনা🌺🌺
~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
“মায়ের এই ঘটনাটা কোনা বইতে নেই। অশোক মহারাজ আমাকে বলেছিলেন। মা তখন উদ্বোধনে। শরৎ মহারাজ একদিন রাসবিহারী মহারাজকে বলেন, “দেখ, মা জয়রামবাটী যাবেন। তুমি ও অশোক মায়ের জিনিসপত্র গুছিয়ে প্যাক করবে‘ শরৎ মহারাজ মায়ের জন্য একটা সুন্দর দামি মশারি কেনেন—যা মা জয়রামবাটীতে ব্যবহার করবেন। মায়ের ঐ দুই সেবক তাঁর সব জিনিসপত্র গোছালেন এবং মশারিখানা একটা ট্রাঙ্কে রাখলেন।
“মা ও তাঁর সঙ্গীরা সন্ধ্যাকালে হাওড়ায় গিয়ে ট্রেন ধরলেন এবং শেষরাতে বিষ্ণুপুর স্টেশনে পৌঁছান। তারপর গরুর গাড়িতে করে সন্ধ্যার আগে জয়রামবাটী যান। মায়ের জিনিসপত্র ও ট্রাঙ্ক তাঁর ঘরে পৌঁছে দিয়ে তাঁরা বৈঠকখানার ঘরে যান। মা আস্তে আস্তে তাঁর জিনিসপত্র গোছাতে লাগলেন এবং ট্রাঙ্ক খুলে কাপড়চোপড় বের করতে লাগলেন। ইতিমধ্যে কালীমামা খবর পেয়ে মাকে দেখতে এসেছেন। খোলা ট্রাঙ্কে নতুন ঝকঝকে মশারিখানা দেখে কালীমামা বলেন, “দিদি, এ মশারিখানা আমাকে দিতেই হবে।‘ এই বলে তিনি মশারিখানা বগলদাবা করে নিজের ঘরের দিকে চলে গেলেন। মা নির্বাক হয়ে দাঁড়িয়ে দেখলেন।
“তারপর সন্ধ্যারতির পর অশোক মহারাজ ও রাসবিহারী মহারাজ মার
শোওয়ার বিছানা ঠিক করে মশারি টাঙাতে এলেন।মা চুপচাপ দাঁড়িয়ে আছেন। তাঁরা ট্রাঙ্কে মশারি না দেখে কাপড়চোপড় সব ওলটপালট করে দেখলেন, কিন্তু নতুন মশারি দেখতে পেলেন না। তাঁরা মাকে বারবার জজ্ঞাসা করছেন, মা কিন্তু কোনো উত্তর না দিয়ে চুপচাপ দাঁড়িয়ে আছেন। তারপর সেবকদের পীড়াপীড়িতে মা বললেন, ‘বাবা, কালী চেয়েছিল, তাই তাকে দিয়ে দিয়েছি।‘ রাসবিহারী মহারাজ বললেন, ‘মা, শরৎ মহারাজ আপনাকে ব্যবহার করতে দিয়েছেন। আপনি একদিনও ব্যবহার করলেন না।মহারাজ কী মনে করবেন! ‘ মা বললেন, বাবা, শরৎ আর কী মনে করবে। তোমরা ঐ পুরানো মশারিটাই খাটিয়ে দাও।‘ সেবকরা নিরুপায় হয়ে মায়ের পুরানো মশারি খাটিয়ে ঘর থেকে বেরিয়েছেন, এমনসময় তাঁরা দেখেন কালীমামা উঠান দিয়ে আবার মায়ের কাছে যাচ্ছেন। তখন ঐ দুই সেবক কালীমামার দু-হাত চেপে ধরে বললেন, “মামা, মায়ের মশারি কোথায়? ‘দিদি আমাকে দিয়েছে।‘ ‘দিদি আপনাকে দেননি। আপনি নিয়ে গিয়েছেন।আপনাকে মশারি ফেরত দিতেই হবে। তখন কালীমামা চিৎকার করে বললেন, ‘ও দিদি, তোমার সেবকরা আমায় মেরে ফেলল!’ ঐ চিৎকার শুনে মা দ্রুত ঘর থেকে বেরিয়ে উঠানে হাজির হলেন। তখন কালীমামা হাত ছিনিয়ে নিজের ঘরের দিকে দৌড় দিলেন। সেবকরাও পেছন পেছন ছুটলেন। মা তাঁদের ডেকে বললেন, তোমরা সাধু। চলে এসো ওর পিছনে ছুটো না। কালীমামা ততক্ষণে ঘরে গিয়ে দরজা বন্ধ করে দিয়েছেন। মা সেবকদের একটু ভৎসনার সুরে বললেন, তোমরা সাধু, ত্যাগ-বৈরাগ্য নিয়ে থাকবে। সামান্য একটা মশারির জন্য ঝগড়া করা ঠিক নয়। সত্যি,মা দেখিয়ে গেলেন ত্যাগ ও সহনশীলতা।
সত্যি আশ্চর্য বোধ হয়, মাঁ তাঁর আত্মীয়দের কী করে মায়ামোহের দ্বারা ঢেকে রেখেছিলেন--- এজন্য তাঁরা মাকে চিনতে পারেননি। (প্রাচীন সাধুদের কথা-১ম খন্ড-পৃ ২০৯)
🌸🌻🌸🌻🌸🌻🌸🌻🌸
🌷🙏শ্রী শ্রী মা সারদার Footprint🙏🌷
🌷🙏🏻আমরা সবাই মায়ের এই Footprint দেখি। কিন্তু অনেকেরই অজানা এই তথ্য।
🌷🙏🏻1919 সালে কোয়ালপাড়ায় মা বরদা মহারাজজীকে দিয়ে কোতলপুর থেকে কাপড় ও আলতা কিনিয়ে 32 টি পায়ের ছাপ দেন। এগুলোই জীবিত অবস্থায় নেওয়া তাঁর শেষ পায়ের ছাপ। মা নিজে বরদা মহারাজ কে একটি দেন এবং সেইটি বোর্ডে এঁটে লাল শালু দিয়ে মুড়ে মহারাজ সর্বত্র নিয়ে যেতেন। বরদা মহারাজের দেহত্যাগ হয় কাশী অদ্বৈত আশ্রমে 1974 সালে। 1986 সালে আমি ভারতে যাই এবং রজনী মহারাজের কাছে মায়ের ঐ পায়ের ছাপ দেখি। আমি আন্তরিক ভাবে প্রার্থনা করলে তিনি তা আমাকে দেন। আমি ঐ চরণচিহ্ন Acid free কাপড় পিছনে দিয়ে সংরক্ষণ করে St, Louis এর ঠাকুর ঘরে ঠাকুরের বেদীর নিচে রেখে দিয়েছি।
(প্রাচীন সাধুদের কথা)
জয় মা, সকলের মঙ্গল করো। তোমার পদচিহ্ন সকল সন্তানের ঘরে পড়ুক মাগো।
🙏🌷🙏🌷🙏🌷🙏🌷🙏🌷🙏🌷🙏🌷🙏
|| দেবী সুরেশ্বরী ভগবতী গঙ্গে,ত্রিভুবনতারিণি তরল তরঙ্গে ||
শ্রীশ্রী ঠাকুর নিজের মুখে বলেছিলেন আমাদের মা ই স্বয়ং গঙ্গা— যোগেন-মার মনে একবার সংশয় আসে - 'ঠাকুর অমন ত্যাগী ছিলেন, আর মাকে দেখছি ঘোর সংসারীর মতন - ভাই, ভাই-পো, ভাই-ঝিদের জন্য অস্থির। কিছুই বুঝতে পারি না।' এরপর একদিন গঙ্গার ঘাটে ধ্যান করতে বসে তিনি দেখলেন, ঠাকুর সামনে দাঁড়িয়ে বলছেন, "দেখ, গঙ্গায় কি ভাসছে।" যোগেন-মা দেখেন একটি সদ্যোজাত শিশু নাড়িভুঁড়ি-জড়ানো গঙ্গায় ভেসে যাচ্ছে। ঠাকুর বললেন, "গঙ্গা কি কখনো অপবিত্র হয়? না তাকে কিছু স্পর্শ করে? ওকে তেমনি জানবে। ওর উপর সন্দেহ এনো না, ওকে একে (নিজেকে দেখিয়ে) অভেদ জানবে।" গঙ্গার ঘাট থেকে ফিরে এসে যোগেন-মা মাকে প্রণাম করে বললেন, "মা আমায় ক্ষমা কর।" মা বললেন, "কেন যোগেন, কি হয়েছে?" তখন যোগেন-মা সব ঘটনাটি বলে বললেন: "তোমার উপর অবিশ্বাস এসেছিল। তা আজ ঠাকুর আমাকে দেখিয়ে দিলেন।" মা একটু হেসে বললেন, "তার আর কি হয়েছে? অবিশ্বাস তো আসবেই। সংশয় আসবে, আবার বিশ্বাস হবে। এই রকম করেই তো বিশ্বাস হয়। এই রকম হতে হতে পাকা বিশ্বাস হয়।
১৯১৯ সালে মা তখন কোয়ালপাড়ায় ছিলেন। দশহরার দিন কয়েকজন ভক্ত মায়ের পায়ে পদ্মফুল দিয়ে পুজো করে চলে গেলেন। পরে মা সেবক-কে জিজ্ঞাসা করলেন, "আজ কি যে ছেলেরা সব পায়ে ফুল দিয়ে গেল?" সেবক বললেন, "আজ দশহরা তাই।" মা একটু হেসে বললেন, "ওমা, আমি মনসা নাকি?" পরে ঠাকুরের পটের দিকে হাতজোড় করে বললেন, "উনিই মনসা, গঙ্গা, সব।" আজ তাই দশহরার পূণ্যদিনে চির পবিত্রতাস্বরূপিণী গঙ্গারূপিণী শ্রীশ্রীমায়ের চরণে জানাই শতকোটি প্রণাম
*মাতৃ কৃপার অজানা ইতিহাস*
ভুবনেশ্বর মন্দির প্রতিষ্ঠা ও গৃহপ্রবেশের পর রাজা মহারাজ সেখানে ছিলেন ! ঐকালে মৈমনসিংহ -এর সাব জজ ও তার স্ত্রী কুলগুরুর থেকে দীক্ষা নেন! দীক্ষার পর তাদের মনে দারুন অশান্তি দেখা দিল ! বন্ধুরা বলল " ভগবানের নাম করো ,সব ঠিক হয়ে যাবে ! অশান্তি কেবল বেড়েই চলল ! তিনি তখন ছুটি নিয়ে সস্ত্রীক তীর্থ দর্শন করতে যান! কাশী ,বৃন্দাবন ,প্রভৃতি স্থানে সাধুদের সাধুদের জিজ্ঞাসা রে তারা বললেন "ভগবানের নাম করো তাতেই শান্তি পাবে ! " তারপর তারা দক্ষিণভারতে রামেশ্বর তীর্থ করে পুরীতে জগন্নাথ দর্শন করে ভুবনেশ্বরে আসেন। পান্ডা তাদের রামকৃষ্ণ মঠে নিয়ে আসে এবং তারা মহারাজের (স্বামী ব্রহ্মানন্দ ) দর্শন প্রাথী হন ! তিনি তাদের অপেক্ষা করতে বলেন !
তারপর মহারাজ ওই সাব জজের সমস্ত কাহিনী শুনে বলেন " আমার মনে হয় আপনাদের মন্ত্রে কোন ভুল আছে ! ভদ্রলোক মহারাজের পায়ে ধরে বলেন "একথা ত কেউ বলে নি !আপনি দয়া করে মন্ত্র সংশোধন করে আমাদের বাঁচান !" মহারাজ বলেন "আমি পারবো না ,আপনারা শ্রীশ্রীমায়ের কাছে যান , তিনিই সব ঠিক করে দেবেন !" তারা শ্রীশ্রীমায়ের জয়রামবাটির ঠিকানা ও direction নিয়ে সেখানে উপস্থিত হলেন ! মা সব শুনে বললেন "দেখো মন্ত্রে ভুল থাকলে ইষ্টের বদলে অনিষ্ট হতে পারে ! ঐজন্য তোমরা শান্তি পাচ্ছ না ,আচ্ছা আমি ঠিক করে দিচ্ছি ! " মা যেই তাদের মন্ত্র ঠিক করে দিলেন ,অমনি তাদের মন আনন্দে ভোরে গেলো ! তাদের মুখের চেহারা পাল্টে গেলো ! তারপর তারা আবার মহারাজের সঙ্গে দেখা করতে এসেছিলেন এবং কয়েকদিন ভুবনেশ্বর থেকে দেশে ফিরে গেলেন !
মায়ের এই ঘটনাটি কোন বইতে নেই ! অশোক মহারাজ আমাকে বলেছিলেন !
**স্বামী সত্যস্বরূপানন্দ *
* প্রাচীনা সাধুদের কথা থেকে *
(সংকলক :স্বামী চেতনানন্দ )*
স্বামী ভূতেশানন্দ মহারাজ ::
একবার মহারাজ বলছেন, " আমি মায়ের পছন্দ করা ছেলে ছিলাম জান তো ?
মা বলতেন, - একদিন রাত্রে স্বপ্ন দেখছেন যে শিবঠাকুর তিনটি ছেলে মায়ের কাছে এনে মাকে বলছেন , ' এর মধ্যে একটিকে নাও ।' দুটি ছেলে খুব সুন্দর আর একটি কদাকার । মা ভাবলেন , সুন্দর ছেলে যদি না সয় ? তাই কদাকারটিকে তুলে নিলেন । তাই আমি কদাকার, দেখছো তো ? "
আমরা ভাবলুম, ইনি যদি কদাকার, তবে সুন্দর কাকে বলে কে জানে ? যাঁকে দেখলে কথা বলতে, ভালোবাসতে ইচ্ছে করে তিনি যদি কদাকার হন, তবে সুন্দরের সংজ্ঞা কী ?
মহারাজ আরো বললেন, " মা আমাকে বলতেন , 'সোনার চাঁদ ছেলে'। আমার মনে পড়ে , গ্রামের বাড়িতে জানালায় পা গলিয়ে রাস্তার দিকে তাকিয়ে পা দোলাচ্ছি । রাস্তায় মেয়েদের দেখে বলছি , 'এই মেয়েরা, তোমরা সোনার চাঁদ ছেলে কোলে নেবে ? তারা হাসত ।
দুধ খেতে খুব ভালবাসতাম। মা গরু দুইতে শিখেছিলান। গরু দোয়ার শব্দ পেলেই বাটি নিয়ে ছুটতুম , গরম দোওয়া দুধ খাব বলে। জান, আমি গরুর বাঁটে মুখ লাগিয়েও দুধ খেয়েছি । গরুটাও এত ভালো ছিল যে বসে থাকলে পা সরিয়ে দিত যাতে খেতে পারি।
বড় আদরের ছিলুম ।"
--- শ্রীমৎ স্বামী ভূতেশানন্দজীর স্মৃতি
দীনু ও মা সারদা
🌺🌹 জয়রামবাটীতে শ্রী মায়ের গরুগুলির সেবা যত্নের জন্য যে ছেলে টি ছিল,তার নাম দীনু৷দীনু জল খাবার খেয়ে বেলা ৯ টা নাগাদ মাঠে গরু নিয়ে চরাতে যেত৷ফিরত বেলা ১ টা নাগাদ৷তারপর গরু গুলিকে বেঁধে স্নান করে খেতে বসত৷শ্রীমা কিন্তু সবার খাওয়া হয়ে গেলেও দীনুর জন্য অপেক্ষা করতেন৷
একদিন দীনুর আসতে খুব দেরি হয়েছে৷দীনু মাঠে গিয়ে অন্যান্য রাখাল ছেলেদের সাথে গুলি খেলত৷সেদিন খেলতে খেলতে ফিরতে খুব দেরি হয়েছে৷শ্রীমা অনেকক্ষণ অপেক্ষা করে যখন বেলা তিনটে পেরিয়ে গেছে তখন বাড়ির মেয়েদের অনুরোধে দীনুর খাবার বেড়ে ঢাকা দিয়ে সবে খেতে বসেছেন, তখনই দীনু ফিরল৷দীনু কে শ্রীমা বললেন, 'কি রে বাবা এত দেরি করলি!দেখ না ওরা জোর করে আমায় খেতে বসাল৷আমি তোর খাবার বেড়ে রেখেছি৷তুই স্নান করে ঢাকা তুলে খাবার নিয়ে নে৷'দীনু ঝটপট স্নান করে খেতে বসল,শ্রীমাও খাচ্ছেন৷দীনুর খাওয়া প্রায় শেষ হয়ে এল৷শ্রীমা বললেন,বাবা দীনু ,আর দুটো ভাত নিবি? দীনু ইতস্ততঃ করতে লাগল৷কারণ শ্রীমা খাচ্ছেন, কাছে কেউ নেই যে ভাত দেবে৷শ্রীমার তখনও খাওয়া শেষ হয়নি৷বয়স হয়েছে,দাঁত নেই সব৷তাই খেতে দেরি হয়৷ব্যাপারটা বুঝে শ্রীমা দীনু কে বললেন,"বাবা,থালা টা কাছে আনত"৷দীনু থালাটা কাছে আনলে শ্রীমা তাঁর থালা থেকে কিছু ভাত দীনু কে তুলে দিলেন৷পরম তৃপ্তিতে দীনু তা খেল৷
পরের দিন শ্রীমা কে আড়ালে পেয়ে দীনু জিজ্ঞেস করল,আচ্ছা মা,তোমাদের কি আলাদা করে রান্না হয়?শ্রীমা বললেন,সে কি বাবা,ও কথা কেন বলছিস?তখন দীনু বলল,তবে কাল তোমার পাতের ভাত অত সুন্দর লাগল কেন?অমন ভাত তো মা জীবনে কখনও খাইনি৷তখন শ্রীমা বললেন,না,বাবা একই হাঁড়িতে ভাত হয়৷যে হাঁড়ির ভাত তোকে দিয়েছি-সেই হাঁড়ির ভাত তো আমিও নিয়েছি৷শ্রীমা চেপে গেলেন তাঁর দেবী ঐশ্বর্যের কথা৷তাঁর প্রসাদী অন্ন যে অমৃতে পরিণত হয়েছে, তা দীনু বুঝবে কি করে!দীনু মহাভাগ্যবান-সে পেয়েছিল তাঁর মহাপ্রসাদ৷🌺🌹
(শ্রীশ্রী মায়ের পদপ্রান্তে ৩/৬৬৩)
( শ্রীমা সারদা দেবীর উপদেশামৃত)
দশ-অবতারের বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা ( ডারউইনের জীবতত্ত্ব ও দশ অবতার)
এক মা নিজের পূজা-পাঠ সেরে,বিদেশে থাকা নিজের ছেলেকে "ভিডিও কল" করে,কথার ফাঁকে জিজ্ঞাসা করে বসলেন-
" বেটা,অর্থ রোজগারের পাশাপাশি পূজাপাঠও করছ তো?
ছেলের দাম্ভিক উত্তর-
মা তুমি জানো,আমি এক জীববৈজ্ঞানিক। আমি এখন আমেরিকায়,মানব বিবর্তনের উপর কাজ করছি।
এই বিবর্তনের সিদ্ধান্ত কি?
চার্লস ডারউইন...
মা,তুমি জানো তার সম্পর্কে?
তার মা মৃদু হাসলেন,এবং উত্তর দিলেন-
হ্যাঁ,আমি জানি ডারউইন সম্পর্কে। তবে তিনি যা-ই ব্যাখ্যা দিয়েছেন,তা সকলই সনাতন শাস্ত্রগ্রন্থের বহু পুরানো অধ্যায়।
ছেলে ব্যাঙ্গ করে বলল-হতে পারে মা?
তার মা সেই ব্যাঙ্গের প্রতিবাদ করে বললেন- যদি তুমি প্রকৃতই নিজেকে বুদ্ধিমান ভাবো...
আচ্ছা,তুমি কি দশাবতার সম্পর্কে শুনেছ?
বিষ্ণুর দশ অবতার?
হ্যাঁ শুনেছি। কিন্তু আমার পরীক্ষা-নীরিক্ষার সঙ্গে দশাবতারের কি সম্পর্ক?
সম্পর্ক অবশ্যই আছে। শোনো,আমি তোমাকে বোঝাচ্ছি- তুমি এবং ডারউইন এখনও কোন বিষয়গুলি সম্পর্কে অনভিজ্ঞ আছ।
দশ অবতারের প্রথম অবতার ছিল-মৎস্য অর্থাৎ মাছ।
এটা সকলকে বোঝাতে যে,জীবন জল থেকেই প্রথম শুরু হয়েছে।
ঠিক কি না?
এবার পুত্র মনোযোগ সহকারে শুনতে লাগল।
এরপর দ্বিতীয় অবতার হলো-কুর্ম অর্থাৎ কচ্ছপ।
অর্থাৎ জীবন এবার জল থেকে ভূমির দিকে আসা শুরু করল।
প্রথম অবস্থায় উভচররূপে ( Amphibian) রইল। এই কচ্ছপই-
বিবর্তনকে সমুদ্র থেকে ভূমির দিকে নির্দেশ করছে।
তৃতীয় হলো-বরাহ অবতার। যার দ্বারা জঙ্গলের জন্তুদের বোঝানো হয়েছে। অর্থাৎ জীব তার অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে জঙ্গলে ধাবিত হলো। তাদের বুদ্ধি তখনও তেমন উন্নত নয়। বিজ্ঞানের ভাষায় তোমরা যাদের "ডাইনোসর" বলো।
অর্থাৎ সরীসৃপ ও পক্ষীর মধ্যবর্তী অবস্থা।
ছেলে এবার বড় বড় চোখ করে শুনতে লাগল,এবং "হ্যাঁ" বলে সহমতিও জানাল।
চতুর্থ অবতার হলো নৃসিংহ-অর্ধেক মানব,অর্ধেক পশু।
যা ধীরে ধীরে জংলী জীব থেকে,উন্নত বুদ্ধিমান জীবের বিবর্তনকে নির্দেশ করছে।।
পঞ্চম অবতারে এল-বামন অবতার। "বামন" -
যে লম্বায় অনেক দূর পর্যন্ত বিস্তৃত হতে পারত।
তুমি কি জানো,সেই সময় দুই প্রকারের মানুষ ছিল- হোমোইরেক্টস (নরবানর) ও হোমোসেপিয়েন্স (মানব)। আর এই হোমোসেপিয়েন্সই বিবরতনের লড়াইয়ে জয়লাভ করে।
এই ব্যাখ্যাই তো দিয়েছেন "যোগ্যতমের উদবর্তন" রূপে- তোমার ডারউইন?
ছেলে তো দশাবতারের ব্যাখ্যার বিস্তার শুনে স্তব্ধ হয়ে গেল।
মা আবার বললেন-
"পরশুরাম" এলেন ষষ্ঠ অবতারে। যার মধ্যে ছিল শস্ত্র (কুড়াল) এর ক্ষমতা। যা নির্দেশ করে জঙ্গল ও গুহাবাসী মানুষকে।
সপ্তম অবতারে এলেন- ভগবান "মর্যাদা পুরুষোত্তম-রাম"।
যা প্রথমবার বিবেকযুক্ত মানুষকে নির্দেশ করে। কিভাবে সেই বিবেক দ্বারা মানুষ প্রতিটি সম্পর্কের মধ্যে মর্যাদা,এবং সমাজের বিভিন্ন নিয়ম তৈরি করে,সমাজবদ্ধ হতে শিখল- তা নির্দেশ করে।
অষ্টম অবতারে-
"স্বয়ং ভগবান শ্রীকৃষ্ণ"।
একাধারে রাজনেতা,কূটনীতিজ্ঞ এবং প্রেমীও। তিনি শেখালেন- কিভাবে সমাজের নিয়মকানুনের মধ্যেও আনন্দে থাকা যায়,এবং আরও উন্নত বিবেক ও বিচারসম্পন্ন হওয়া যায়।
মায়ের জ্ঞানগঙ্গা বইতেই রইল-
"মহাত্মা বুদ্ধ" হলেন নবম অবতার। যিনি সেই নৃসিংহ থেকে উদ্ভূত মানবজাতির স্বভাব-প্রকৃতির পুনরালোচনা করলেন।
তিনিই মানবজাতিকে জ্ঞানের অন্তিম লক্ষের সন্ধান দিলেন।
আর শেষে?
দশম অবতার "কল্কি" রূপে আসবে।
যেই মানব বিবর্তনের উপর তোমরা কাজ করছ-
মানুষের বিবর্তন,উদবর্তন, এবং উন্নতির অন্তিম নিদর্শণ রূপে তিনি আসবেন।
পুত্র অবাক হয়ে মায়ের দিকে তাকিয়েই রইল।এ তো অদ্ভূত মা! হিন্দু দর্শণ তো বাস্তবেই অতীব অর্থপূর্ণ!
হ্যাঁ,
বেদ,পুরাণ,গ্রন্থ,উপনিষদ বাস্তবেই খুবই অর্থপূর্ণ। তবে এই দর্শণকে গ্রহণ করার মতো,বিবেকযুক্ত দর্শণও তো তোমার থাকা চাই?
তখন দেখবে-
এই দর্শণের মধ্যেও রস খুঁজে পাবে। তাতে তুমি ধার্মিক হও বা
" বৈজ্ঞানিক "।।
♥ জয় শ্রী রাম ♥ জয় রাধামাধব ❤
১৯১৮ সালের পূজার পূর্বে একজন শ্রীশ্রীমা-কে জিজ্ঞাসা করেছিল, "মা, মনের মধ্যে অসৎ চিন্তা ওঠে কেন?" মা বললেন, "সাধারণ মনের স্বভাবই হলো নিচের দিকে যাওয়া। মানুষ কত মনের জোর সম্বল করে বাঁধ দিয়ে রাখে, আবার বাঁধ ভেঙে কখন কখন জল বেরিয়ে পড়ে। তবুও বরাবর চেষ্টা রাখতে হয়। কিন্তু জানবে সাধুসঙ্গ সৎচর্চায় মন খুব ঊর্ধ্বমুখী হয়, সাধুদের কৃপায় অতি নীচ লোকেরও মনের গতি ফিরে যায়, দেখ বৃন্দাবনের সেই সোনা খোঁজা সাধুর মহাপুরুষের কৃপায় দিব্যজ্ঞান হয়ে গেল, পরশ-পাথর পেয়েও ফেলে দিলে। সাধুর বেশ ধরে এক ব্যাধ পাখি ধরতে গিয়ে পাখিদের সরল নির্ভয় ভাব দেখলে, তাতে নিজেরই বৈরাগ্য উদয় হলো; সে ব্যাধবৃত্তি ছেড়ে দিলে। সেইজন্য সৎসঙ্গ সময় পেলেই করবে, সাধুসঙ্গ না পেলে সৎ গ্রন্থ পড়বে, মহাপুরুষদের জীবন আলোচনা করলে চিত্ত শুদ্ধ হয়। দেখ জলের গতি স্বভাবত নিচের দিকে, কিন্তু সূর্যের আলো পেয়ে সেই জল আবার আকাশে ওঠে, পাহাড়ের মাথায় বরফ হয়ে যায়, আবার বৃষ্টি, ঝর্না, নদী হয়ে জীবের কত কল্যাণ করে।"
-মাতৃদর্শন।
বাগ বাজারে এক সন্ন্যাসী ।সবজি বিক্রেতা কে জিগ্যেস করলেন "লংকা ঝাল তো ?"
বিক্রেতা সম্ভ্রমে সেই অপূর্ব দর্শন সন্ন্যাসী মহারাজ কে বললেন 'মহারাজ লংকার এমনই বরাত ঝাল ছাড়া তো অন্য কিছু হওয়ার উপায় নেই । '
"না না ঝালের ও তারতম্য আছে ।এটা চেখে দেখি। "
সন্ন্যাসী একটা লংকা নিয়ে কচ মচ করে চিবলেন। অবাক বিক্রেতা !আস্ত একটা কাঁচা লংকা শুধু মুখে খেয়ে ফেললেন।
'কি বুঝলেন মহারাজ ?'
"ঝাল । তবে আরো ঝাল হতে পারতো। আরো কয়েকটা বাজারে চেখে দেখি । "
সেই সন্ন্যাসী কয়েকটি বাজারে চাখতে চাখতে অবশেষে বড় বাজারে এসে হাজির ।সেই বাজারে একটি লংকা চেখে দেখলেন। হ্যাঁ লংকা বটে ।ব্রহ্ম তালু ফেটে যাওয়ার উপক্রম।
সন্ন্যাসী লংকা কিনে বাগবাজারে ফিরে এলেন ।লংকা চাখতে চাখতে তাঁর জিভ ফুলে উঠেছে ।চোখ লাল ।মুখ দিয়ে অবিরত লালা ঝরছে ।যোগীন মা ভীত কণ্ঠে জিজ্ঞেস করলেন 'তোমার একি অবস্থা বাবা ! কি হয়েছে ?
যোগীন মা ই সারদা প্রসন্ন , যাঁর সন্ন্যাসী নাম স্বামী ত্রিগুনাতীতনন্দ জি কে বলেছিলেন, মায়ের জন্য বাজার থেকে ঝাল লংকা কিনে আনতে।মায়ের জন্য ঝাল লংকা !বাজারের সর্বাধিক ঝাল লংকা না আনলে চলে ?
মায়ের সন্তান সারদা, পথের ওপর পিঠ পেতে দিয়ে বলেছিলেন গরুর গাড়ির চাকা চালিয়ে দাও।দেখো ,মা আছেন গাড়িতে যেন ঝাকুনি না লাগে । এই ত্রিগুনাতীতনন্দজী উদ্বোধনের প্রথম সম্পাদক ছিলেন।
মায়ের বাড়িটির দিকে তাকিয়ে বলতে ইচ্ছে করে মা, কত ইতিহাস জমা আছে এই মন্দিরে । ঊর্ধ্বে, আরো ঊর্ধ্বে নক্ষত্র খচিত আকাশের সীমানার পারে যদি কিছু থাকে, সেখানে কি এখন এই মুহূর্তে এইরকম কোনো দৃশ্য কল্পনা করা যাবে।
ঠাকুর মা কে জিজ্ঞেস করলেন "সারদা পৃথিবীতে এখন কত সাল ? "
দু হাজার ।
আমরা সবাই মিলে কত তে গিয়েছিলুম ?
ওই আঠারো শোর কোনো এক সময়ে ।
"আর একবার যাবে নাকি তোমার ছেলেদের নিয়ে , নরেন , রাখাল ,শরৎ ,লাটু , যোগীন ।
সারদা । পৃথিবীতে এখন যে বড় "মায়ের "
অভাব ।
রাজ রাজেশ্বরী শ্রীমা
সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়।
পুরুষাত্মানন্দজী ( বাংলাদেশের হাবীগঞ্জে তাঁর বাড়ি ) কলকাতা এসে বেলুড় মঠ দর্শন করে জয়রামবাটী যান। সেখানে শ্রী beশ্রীমাকে দর্শন করার পর তাঁর মনে হয়েছিল যে ইনিই কি সেই পরমহংসদেবের সহধর্মিণী ? ইনিই কি ভবতারিণী , জগৎতাড়িণী শ্রীশ্রীমা , যাঁকে দেখবার জন্য ব্যাকুল হয়ে সুদূর বাংলাদেশ থেকে এসেছেন ! দেখতে অতি সাধারণ এবং গায়ের রং মলিন । এটি ভাবা মাত্র , শ্রীশ্রীমা কাছেই ছিলেন তিনি বললেন ---- " বাবা, আমার গায়ের রং এমন মলিন ছিল না। ঠাকুর চলে যাবার পর সবসময় মনে হতো , এমন সোনার ঠাকুরই যখন চলে গেলেন এ শরীরটা রেখে আর কি করব । পঞ্চতপা করেছিলাম । তাতে মনের জ্বালা কিছুটা জুড়িয়েছিল। গায়ের রং তখনই মলিন হল ।" মহারাজ বিস্ময়ে হতবাক। তিনি যা ভাবলেন মা তা বুঝতে পারলেন। তিনি অত্যন্ত লজ্জিত হয়ে ক্ষমা চাইলেন মায়ের কাছে ।
তারপর শ্রীশ্রীমায়ের কাছে তাঁর দীক্ষা হয়। দীক্ষার পর যখন তিনি প্রসাদ নিচ্ছেন তখন দেখলেন যিনি পরিবেশন করছেন তিনি একজনকে খুব সামান্য ভাত, ডাল, তরকারি দিচ্ছেন । তখন পুরুষাত্মানন্দজী মহারাজের মনে হল , ' আমার তো ভীষন ক্ষিদে পেয়েছে। এতটুকু ভাত, ডাল, তরকারি তো আমার পেটের এককোণে পড়ে থাকবে । সঙ্গে সঙ্গে শ্রীশ্রীমা যিনি পরিবেশন করছিলেন তাঁকে বললেন , " আমার ছেলেকে বেশী করে ভাত দাও , তরকারি দাও , তার ভীষণ ক্ষিদে পেয়েছে । এতটুকু ভাত , ডাল , তরকারি তার পেটের এককোণায় পড়ে থাকবে।" মায়ের অন্তর্যামীত্ব দেখে পুরুষাত্মানন্দজী অবাক হয়ে গিয়েছিলেন।
পরবর্তী সময়ে পুরুষাত্মানন্দজী শিলচর রামকৃষ্ণ মিশনের অধ্যক্ষ হন। জীবনের শেষ সময়ে যখন তিনি ব্যাধিগ্রস্ত হয়ে হাসপাতালে শয্যাশায়ী তখন একদিন ভোরবেলা হঠাৎ উঠে বসলেন এবং বললেন , " মা এসেছো ? আমায় নিয়ে যাওয়ার জন্য এসেছো ? একটু অপেক্ষা করো , আমি আসছি ।" তারপর আশেপাশে রোগীদের বললেন , " ভাই আমি চললাম , মা এসেছেন , তোমরা সবাই ভালো থেকো " --- বলে তিনি চোখ বুজলেন, শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করলেন।
বাসনা মা,শ্রী শ্রী মায়ের পরিচারিকা। ধন্য জীবন।(ফটো সৌজন্যে,আমার ফেসবুকের বন্ধু দূর্গাপদ চ্যাটার্জি)
পাগল ঠাকুর ও মা সারদা ***
🙏🙏🙏🙏🙏🙏শ্রীশ্রীমা🙏🙏🙏🙏🙏🙏🙏
🌸🌾🌸🌾🌸🌾🌸🌾🌸🌾🌸🌾🌸🌾🌸
স্বামী সুবোধানন্দের কথা থেকে জানা যায়,ঠাকুরের তখন সাধনার প্রাবল্যে পরনের কাপড় ঠিক থাকে না,বেশির ভাগ সময় কাপড় থাকত বগলে।সেই সব কারণে সকলে তাঁকে পাগল ভাবত।একবার জয়রামবাটি তে শশুরবাড়ি র কাছে গিয়ে বাড়ির বাইরে বসে আছেন।মায়ের এক সম্পর্কের দাদা
মাকে ডেকে আনেন পাগল দেখবার জন্য।মা দেখে লজ্জিত হয়ে বললেন,"দাদা,উনি যে আমার স্বামী।"তখন তাঁকে বাড়িতে ডেকে আনা হল।রাত্রে আহারের পর ঠাকুর যে ঘরে ছিলেন,মা সেই ঘরে প্রবেশ করে দেখলেন, বিছানায় কেউ নেই।কেবল একটা জ্যোতি সেখানে জমাট হয়ে রয়েছে। তা দেখে মা হাত জোর করে দাড়িয়ে থাকেন,সারারাত।রাত্রির অবসানে ঠাকুর সেই জ্যোতির সমুদ্র থেকে বেরিয়ে এসে মাকে বললেন,"তুমি? এই রূপে আবির্ভূত হয়েছো?বেশ বেশ।" বলে মাকে সাস্টাঙ্গে প্রণাম করলেন।মা ও বাঁধা দিলেন না।কারণ এটা তাঁর প্রাপ্য।
মাগো,তুমি যে স্বয়ং কালী, তা তো ঠাকুর জানতেনই।

নহবতের পাশেই পবিত্র পঞ্চবটী। মা আর লক্ষীদিদি নহবতে রাতের বিশ্রামে। শয্যা বলে কিছুই নেই। মায়ের কথায় পটপটে একটা মাদুর। ঠাকুর একসময় কিছু পাটের দড়ি এনে মাকে দিয়ে বলেছিলেন দুটো শিকে তৈরি করে দিতে। তৈরির পর একদলা দড়ি বেঁচেছিল। সেই দড়ি তালগোল পাকিয়ে দুটো বালিশের মতো বস্তু তৈরি করে দুজনে মাথায় দিতেন। মেঝেতেই শয়ন। চতুর্দিকে নানা জিনিস হাঁড়িকুড়ি, হাতা,খুন্তি জলের জ্বালা, কাঠের বাক্স। মা তোলা উনুনে রাঁধতেন না পাতা উনুনে ? শীতকালে ব্যবহার করতেন কাঁথা। বন্ধ দরজার ফাঁক দিয়ে ঢুকছে গঙ্গার জোলো বাতাস। মায়ের কোনো অভিযোগ নেই। বলছেন, কোনো দুঃখ, কোনো কষ্ট নেই। ঠাকুর অন্তরে বসিয়ে দিয়েছেন আনন্দের পরিপূর্ণ ঘট।
মায়ের সেবা, মায়ের পরিচর্যা করার অদ্ভুত ক্ষমতার কথা লেখা হয়েছে; কিন্তু কেউ লিখলেন না মায়ের আহারের কথা। সকালে কি গ্রহণ করতেন? মন্দিরের মঙ্গল আরতির প্রসাদ? সে আর কতটা? জয়রামবাটীর মতো ভাই- বোনেদের সঙ্গে যেমন মুড়ি খেতেন, দক্ষিণেশ্বরে সেরকম ব্যবস্থা ছিল কি? মুড়ি ছিল মন্দিরের ভাঁড়ারে। কে এনে দেবে? দিলেও মা কি নিজেকে তরিবাদি করে খাওয়াবেন ! মাকে প্রকাশ্যে কেউ কখনও আহার করতে দেখেছে কি? তিনি তো সকলকে খাওয়াবেন, তাঁকে কে খাওয়াবে? ভক্ত সন্তানদের জন্যে, দিস্তে দিস্তে রুটি, ছোলার ডাল, অড়হর ডাল তৈরি হবে। কোনো কোনো দিন ঠাসা হবে তিন সেরের মতো আটা। রুটি বেলছেন তো বেলছেন। পান সাজছেন তো সাজছেন। নেই ক্লান্তি, নেই বিরক্তি।
নরেন্দ্রনাথ এই মাকে প্রতি মুহূর্তে অনুভব করতেন। সামনা সামনি দাঁড়াতে ভয় পেতেন। মায়ের মুখের দিকে তাকাতেন না। কেন ? কিসের ভয় দুঃসাহসী নরেন্দ্রর! পবিত্রতার প্রতিমূর্তি মা সারদা, নরেন্দ্রনাথ তাঁর এই পবিত্রতাকে ভয় পেতেন। গঙ্গাপথে মায়ের কাছে যাওয়ার সময় বারে বারে গঙ্গাজলে মুখ ধুতেন। কারণ? এই মুখে ভালো, মন্দ কত কথা বলি, অসাত্ত্বিক আহার ! এই মুখে মায়ের সাথে কথা বলা যায় ! তাই তো তিনি বলেছেন---- ' মাকে তোমরা চেনোনি, চিনবেও না কোনোদিন।'
' তিনি দেবী, তিনি মানবী। তিনি প্রাচীন, তিনি নবীন। তিনি খন্ডকাল, তিনি মহাকাল। তিনি সমস্ত সমস্যার চির সমাধান। তিনি সকলের মা। তিনি রামকৃষ্ণের মাতৃরূপ, জীবনযজ্ঞের বেদী। ' 🌺🌺
সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়ের লেখনী থেকে--- -----জয়_মা 🌺🌺🌼🌼🙏🙏
*!*শতবর্ষের ভাব মন্দির *!*
🌸একটি দুর্লভ এবং ঐতিহাসিক আমন্ত্রণপত্র : শতবর্ষ পূর্বে শ্রীশ্রীমায়ের জন্মতিথিতে বেলুড় মঠে মায়ের মন্দির প্রতিষ্ঠার আমন্ত্রণ পত্র। পত্রটি লিখছেন শ্রীরামকৃষ্ণপার্ষদ, শ্রীরামকৃষ্ণের মানসপুত্র এবং বেলুড় মঠের প্রথম অধ্যক্ষ স্বামী ব্রহ্মানন্দ। ১৯২০ সালে শ্রীশ্রীমায়ের মহাসমাধির পরে ১৯২১ সালের ২১শে ডিসেম্বর মায়ের জন্মতিথিতে বেলুড় মঠে মায়ের মন্দির প্রতিষ্ঠা হয়। এই মন্দির ঠিক সেই স্থানটিতে অবস্থিত যেইখানে শ্রীশ্রীমায়ের ভাগবতী শরীর চিতাগ্নিতে সমর্পণ করা হয়েছিল। এই প্রসঙ্গে শ্রীরামকৃষ্ণপার্ষদ স্বামী শিবানন্দ বলেছিলেন আদ্যাশক্তি মহামায়া সতীর দেহের এক একটি অংশ পড়ে এক একটি শক্তিপীঠ গড়ে উঠেছে আর বেলুড়মঠের ভূমিতে সেই মহামায়ার সমগ্র শরীর মিশে রয়েছে অতএব বেলুড় মঠ কত বড় মহাতীর্থ। 🌸
ভ্যাট সুন্দরী মা সারদা
২০১৪ সাল। দশমীর দিন বাড়ির পাশেই দুর্গামন্ডপে বাজছে বিসর্জনের বাজনা। মাতৃগতপ্রাণ ভক্ত জননীর মন তখন বেদনাতুর। চোখের জলে "আবার এস মা" বলে মাদুর্গাকে যখন বিদায় দিলেন, মনের কোণে উঁকি দিল এক সুপ্ত বাসনা----মাকে যে জগদ্ধাত্রীরূপে একবার পূজা করতে চাই। ঠিক পরদিন ঘটল সেই অলৌকিক কাণ্ড।
সূতাকলের মাঠটা আজ আর নেই। সাত আট বছর আগে ওখানে ছিল ভ্যাট। সেবার একাদশীর সকালে ভ্যাটের মধ্যেই দেখা গেল শ্রীশ্রীমায়ের একখানি ছবি পড়ে আছে, কিন্তু শারদ রবির কিরণে কি অপরূপ উজ্বলতা! যেন জ্যোতি বেরুচ্ছে। একটুও দেরী না করে মাকে ফোন করে জানাল মেয়ে। তারপর ভ্যাট থেকে তুলে নিয়ে আসল বাড়িতে।
খুব তাড়াতাড়ি রামকৃষ্ণ মঠ ও মিশনের বরিষ্ঠ সন্ন্যাসী পূজনীয় স্বামী অচ্যূতানন্দজী মহারাজের শরণাপন্ন হয়ে সবিস্তার জানাতেই মহারাজ বললেন তিনি অবশ্যই বিধান দেবেন, তবে একটু সময় লাগবে। ছবিখানির কথা বলতে গিয়ে বললেন,"'শতরূপে সারদা' বইটিতে এই মূর্তিরই বর্ণনা করা হয়েছে। ফ্রাঙ্ক ডোরাকের আঁকা এই ছবিটির অপূর্ব ব্যখ্যা করেছেন স্বামী অভেদানন্দজী। তাঁর মতে মাতৃভাব এছবিতে বড় প্রকট।"
এত অপরূপ মায়ের ছবিটি যে, ভক্ত জননী তাঁর নামকরণ করেছিলেন 'ভ্যাটসুন্দরী'। কারণ জানতে চাইলে বলেছিলেন,"সুন্দরী মাকে ভ্যাটের মধ্যে পাওয়া গেলে আর কি নামেই বা ডাকব?" শুনে খুশিই হয়েছিলেন মহারাজ। সপ্তাহ খানেক বাদে বিধান দিয়ে বললেন শুধু নবমীর দিন পূজো করলে হবে না, মাকে শাস্ত্রমতে পূজো করতে হবে চারদিনেই।
মায়ের কৃপায় অল্প কয়েকদিনের মধ্যেই পূজার আয়োজন হয়ে গেল। সেই থেকে প্রতি বছর মাতৃগতপ্রাণার সেবা গ্রহণ করে আসছেন মা জগাই। মৃন্ময়ী মাতৃ প্রতিমার সঙ্গে একাসনে বসে চিন্ময়ী মাসারদা।
পূজোর সংকল্প হয় নাগেরবাজার রামকৃষ্ণ সারদা সংঘের নামে। মহানবমীর দিন হয় কুমারীপূজাও। এখানে এলে শুনতে পাবেন পবিত্র ভিটের আরও নানা কাহিনী। আজ এখানে উপস্থিত থাকতে পেরে ধন্য হলাম আমরা। কি অপূর্ব তাঁদের আয়োজন! জয় মা জগদ্ধাত্রী! জয় মা ভ্যাটসুন্দরী! শতকোটি প্রণাম জানাই তোমার চরণে।
গৃহ মন্দিরের ঠিকানা: 'স্নেহচ্ছায়া'
১৮১/২ নগেন্দ্রনাথ রোড,
সাতগাছি বটতলা,
কোলকাতা-৭০০০২৮




















No comments:
Post a Comment