অবশেষে শ্রীমান সাহেব চক্রবর্তী ধরাধামে এলেন। তবে নিজের দেশে নয়, বিদেশে। তাই তো তিনি বিদেশী সাহেব। আসার কথা ছিল আরও কয়েক দিন পরে। কিন্ত কয়েকদিন আগেই চলে এসেছেন। হয়তো মায়ের কাছে ঐ জায়গাতে থাকতে থাকতে হাপিয়ে উঠে নানা চিন্তা ভাবনা নিয়ে বেড়িয়ে এলেন সবার সাথে পরিচিত হতে। সৌন্দর্য্যপূর্ন এই পৃথিবীর রুপ কেই বা না দেখতে চায়। এছাড়া মাতৃগর্ভে তার বাস .......কতদিন আগে থেকেই আরম্ভ হয়েছে। মাতৃগর্ভে আসার পর থেকে সৃষ্টিকর্তা তাকে নানা ভাবে সাজিয়ে চলেছেন। সৃষ্টিকর্তা প্রজাপতি নিজেই এই দায়িত্ব নিয়ে জীবের নিজস্ব কাজকর্মের ফল স্বরূপ যে পাপপুণ্য অর্জন করেছে তা তার কপালে লিখতে আরম্ভ করে দিয়েছেন। এর জন্যই তো কারও রাজকুলে জন্ম হয় বা কারও দরিদ্র কুলে। কেহ বা খর্বাকৃতি আবার সৌমদর্শন হয়ে থাকে। এ যেন এক বৈচিত্র্যের খেলা । কারও সাথে কারও মিল নেই ।
মায়ের কাছে ভ্রুন হিসেবে আসা। পাঁচ রাত্রে পেশি, চৌদ্দরাত্রে অব্বুর্দ, পঁচিশ রাতে অস্থি, এক মাসে আকৃতি, দুই মাসে মাথা, তিন মাসে গলা, চার মাসে গায়ের চামড়া, পাঁচ মাসে নখ ও লোম, ছয় মাসে মুখ, কান ও চোখ, সাত মাসে বুদ্ধি, নয় মাসে সর্বাঙ্গ অবয়ব তৈরি হয়। নয় বা দশ মাসে মায়ের পেটেই জীবনের সব লক্ষনই প্রকাশ পেয়ে যায় । তখন মায়ের খাবার থেকেই খাওয়া দাওয়া সেরে ফেলা। সেইজন্যই মাকে সবসময় উপযুক্ত খাবার খেতে হয় সুস্থ ও সবল থাকার জন্য। আর সেইজন্যই শাস্ত্রে বিধানে তৈরি হয়েছে পঞ্চমৃত, সপ্তামৃত বা সাদভক্ষন প্রভৃতি নানারকম অনুষ্ঠান। এগুলি বাঙালিদের গর্ভাবস্থা কালীন ঐতিহ্যবাহী আচার অনুষ্ঠান। এর মধ্যে সাধভক্ষন অনুষ্ঠান বিশেষ ভাবে প্রচলিত। এ শুধু পশ্চিমবঙ্গেই নয়, অন্য প্রদেশেও অন্য নামে এ বহুল প্রচলিত। গর্ভধারনের সাত মাস পূর্ন হলে আট বা নয় মাসে মায়ের ও সন্তানের সুস্বাস্থ্য কামনায় মাকে ভালো ভালো জিনিস খাওয়ানোর প্রথাকেই বলা হয় সাধভক্ষন। শাস্ত্রীয় ব্যাখ্যায় বলা হয় যে এই অনুষ্ঠানে জীবাত্মার সাথে পরমাত্মার মিলন ঘটে। বঙ্গ ছাড়াও অন্য রাজ্যে অন্য নামে যেমন কেরালায় সীমান্তধাম, তামিলনাড়ুর ভালকাপ্পু, পাঞ্জাবে ও বিহারে গোধ ভারাই, গুজরাতে গোধ ভরনা ও মহারাষ্ট্রে দোহাল জেভান নামে প্রচলিত। সহজ কথায় বলা হয় মা এর ইচ্ছা / আকাঙ্খা অনুযায়ী খাবারের উৎসব বা অনুষ্ঠান। এর অনুষ্ঠানে হরেক রকম খাবারের পাশাপাশি উপহার সামগ্রী দিয়েও হবু মায়ের কোল পূর্ন করা হয। এখানেও বিদেশী সাহেবের মা এর সাধভক্ষন প্রথম হল ৩০শে মার্চ ২০২৫, বাংলা পঞ্জিকার ১৬ই চৈত্র ১৪৩১। দিন ছিল রবিবার। আর দ্বিতীয় সাধভক্ষন হল ৩রা এপ্রিল ২০২৫, দিন পরেছিল বৃহস্পতিবার ২০ই চৈত্র ১৪৩১ সাল। এদিন আবার ছিল বাসন্তী দূর্গাপূজোর ষষ্ঠী।
ক্রমবিবর্তনে আস্তে আস্তে সেই ভ্রুন দেহের আকার নেয় ও চৈতন্যসত্ত্বা লাভ করে ও সব কিছু চিন্তা করতে আরম্ভ করে। চিন্তা আর কিছুই নয় বুদ্ধির উন্মেষ। বুদ্ধিগুলি কি কি...... শব্দ, স্পর্শ, রূপ, রস, গন্ধ এই পাঁচটি। সে এই নয় মাসে পূর্ন অবয়ব নিয়ে উপরোক্ত বিভিন্ন ইন্দ্রীয়গুলির সাথে যুক্ত হয়। আর তাতেই তার জ্ঞান , বুদ্ধি, দর্শন, বিবেক বিষয়ে কিছু কিছু ঞ্জান সঞ্চয় হতে থাকে। আর এটা হওয়া আরম্ভ হলে সে তখন মা এর গর্ভে এপাশ ওপাশ নড়াচড়া আরম্ভ করতে থাকে। আর তখনই মনে পরে যায় পূর্ব জন্মের কথা । স্মরণ করে জন্ম জন্মান্তরের শুভ ও অশুভ কর্মের কথা। মনে মনে বলতে থাকে .......... এর আগে কত হাজার হাজার বার বিভিন্ন গর্ভে বাস করেছি, কত রকম খাদ্য খেয়েছি আবার কত জীবজন্তুর গর্ভে জন্মে কত রকমের স্তন্যপান করেছি। আমি বহু জন্ম এইভাবে পরিভ্রমন করে এই মনুষ্যজন্ম লাভ করেছি। হে শুভাশিস ফলদানকারী পরমেশ্বর, এবার আমায় মুক্তি দাও। তোমার তৈরী এই প্রকৃতির সঙ্গে মিলে মিশে যেন তোমাকেই স্মরণ করিতে পারি.... এই আমার করজোড়ে তোমার কাছে প্রার্থনা।
এই রকম এক চঞ্চলতা নিয়ে , বিশ্বের রূপ, রস, গন্ধ, স্পর্শ ও শব্দের স্বাদ নেওয়ার প্রবল ইচ্ছায় বিধাতার স্থির করা ভূমিষ্ঠ হওয়ার দিন ক্ষনে, যা কিনা চিকিৎসকের নির্ধারিত দিনের আগেই , সাহেব বাবু ধরাধামে এসে উপস্থিত হলেন। মা র গর্ভে ৩৭ সপ্তাহ ২ দিন থাকার পর, পৃথিবীকে চিনলেন, দেখলেন যা কিনা নির্ধারিত দিনের অর্থাত ৫ই মে ২০২৫ এর বেশ কিছুদিন আগেই। তবে তারিখাটা কি ভাবে জানাবো। এ তো বিদেশী বাবু। বিদেশের তারিখ ও সময় হল ....১৬ই এপ্রিল , ২০২৫, বুধবার , রাত ৯টা ৩২ মিনিট। আর আমাদের দেশের তারিখ ও সময় ...... ১৭ই এপ্রিল ২০২৫, বৃহস্পতিবার, সকাল ৭টা ২মিনিট। এত দিন মায়ের গর্ভে থেকে খাওয়া দাওয়া করে ৩ কিলোগ্রাম ২৫ গ্রাম ( 6 lb 11 oz ) ওজন ও ৫২.১ সেমি উচ্চতা নিয়ে ধরাধামে এলেন। এলেন তিনি আমেরিকার North Carolina র Charlotte শহরের এক সরকারি হাসপাতালে। এই জন্মস্থান চেনার জন্য নাম, ঠিকানা ...... Atrium Health University City, 8800 N Tryon st, Charlotte NC 28262.
পৃথিবীর রুপ দেখে মা বাবার সাথে বেশ কয়েকদিন জন্মস্থানে অর্থাত নার্সিংহোমে / হাসপাতালে ভালোভাবে কাটানোর পর ২০ তারিখে বাড়ীর পথে রওনা। তবে নিজের গাড়িতে বসে নিজের আলাদা সীটে বসে আনন্দের সাথে বাড়ীতে এসে উঠলেন। কিন্ত মা বাবাকে সবসময় কাছে চাই।
এখন যেন খুব আনন্দের সাথে দিন কাটছে। হাত পা ছোরা, কান্নাকাটি, খাওয়া দাওয়া ,ঘুম সবকিছুর সাথেই এক আনন্দের ছোয়া লেগে রয়েছে। আস্তে আস্তে ষষ্ঠীর দিন এসে গেল। বাচ্চাদের এই ষষ্ঠীপুজো মূলত এক হিন্দু ব্রত। যা সন্তানের জন্মানোর ছয় দিন পর পালন করা হয়। বিশেষত এটি গ্রাম বাংলায় বেশি প্রচলিত। এই ব্রত মায়ের মঙ্গল এবং সন্তানের ভালো ভবিষ্যতের জন্য করা হয়ে থাকে। বিদেশে যখন জন্ম তখন বিদেশের জন্ম তারিখ ধরলে ছয় দিন পর অর্থাত ২২ তারিখে ষষ্ঠী পালন করা হল। ষষ্ঠী দেবী এক হিন্দু দেবী যাঁকে শিশুদের কল্যাণদাতা এবং রক্ষাকর্তা হিসেবে পূজা করা হয়। ইনাকে সন্তান দায়িত্ব এবং সন্তান পালনের দেবী হিসেবে ধরা। নবজাত শিশুর রক্ষয়িত্রী। প্রচলিত বিশ্বাস অনুযায়ী ষষ্ঠী দেবী ঐ দিন নবজাতকের কপালে ভবিষ্যত লিখে দেন। সেই বিশ্বাসে নবজাতকের পাশে কলম, কাগজ, ধূপ, দ্বীপ রাখা হয়। সাথে থাকে নানা রকম ফলমূল , মিষ্টান্ন জল ইত্যাদি।
যদিও সাহেব বাবু, সব কিছুই তো ইংরেজি মতেই চলবে। তবুও অনেক সময়ই বাংলা তারিখ, তিথি, রাশি, নক্ষত্র ইত্যাদির দরকার হয়ে পরে। জন্মের তারিখ বাংলা ক্যালেন্ডার মতে কি হল জানা হল না। একটু আধটু পঞ্জিকা ঘেটে যা জানতে পারলাম সেগুলি এইরকম....... সাহেবি জন্মতারিখ অর্থাত বিদেশের জন্মতারিখ ধরলে সেটা বাংলায় হবে ২রা বৈশাখ, ১৪৩২ সাল। বুধবার, অনুরাধা নক্ষত্র। আর হ'ল বৃশ্চিক রাশি, বিপ্রবর্ন, দেবগন, মাহেন্দ্রযোগ, অষ্টোত্তরী ও বিংশোত্তরী শনির দশা। আর রাশিফল দেখলে দেখা যাচ্ছে .... বৃশ্চিক.... পারিবারিক শুভ। এবার আসি আমাদের দেশের জন্ম তারিখ ধরলে কি দেখা যায়। তা এইরকম.... ৩রা বৈশাখ, ১৪৩২ সাল । বৃহস্পতিবার , জ্যেষ্ঠানক্ষত্র। আর হ'ল বৃশ্চিক রাশি, বিপ্রবর্ন, রাক্ষসগন, অষ্টোত্তরী শনির ও বিংশোত্তরী বুধের দশা। আর রাশিফল দেখলে দেখা যাচ্ছে..... বৃশ্চিক.... গৌরব বৃদ্ধি। এবার আরও একটু এগুলে জানতে ইচ্ছা করবে জন্মতারিখের মূলাঙ্ক কত? তবে প্রশ্ন জাগে জন্মতারিখ কি ধরে মূলাঙ্ক নির্ণয় করা হবে। যেহেতু সাহেব বিদেশে জন্মেছে, বিদেশের জন্মতারিখ অর্থাত ১৬ই এপ্রিল ২০২৫ জন্মতারিখ ধরা-ই ঠিক হবে। তাই বিদেশী সাহেবের জন্মতারিখ মূলাঙ্ক তখন হবে .... ১+৬= ৭ । সাহেবের জন্মতারিখ মূলাঙ্ক হলো ৭। নিউমেরোলজি বা সংখ্যাতত্ত্ব অনুযায়ী সবচেয়ে ভাগ্যবান নম্বর হল সাত। জ্যোতিষ শাস্ত্রে ৭ নম্বরকে কেতু এবং জ্যোতির্বিদ্যায় নেপচুনের প্রতিনিধি হিসেবে দেখা হয়। যাঁদের মূলাঙ্ক ৭ , তাঁরা সবার থেকে অন্যরকম হয়। জ্যোতিষ শাস্ত্র অনুযায়ী আমরা বলতে পারি এই জন্মতারিখ মূলাঙ্ক বিশিষ্ট ব্যক্তিদের ভাগ্য অত্যন্ত উজ্জ্বল হয়। অভিব্যাক্তির ক্ষমতা এই মূলাঙ্কের ব্যক্তিদের মধ্যে খুব ভালো। এঁদের কল্পনাশক্তিও তীব্র। এই ধরনের লোকেরা স্পষ্টভাষী, অকুতোভয় ও আত্মবিশ্বাসী হয়ে থাকে। সাধারণত ৭ সংখ্যাটিকে শুভ সংখ্যা হিসেবে বিবেচনা করা হয়। অনেক ক্ষেত্রেই ৭ এর সঙ্গে শুভ কাছের সম্পর্ক রয়েছে। ৭ নম্বরকে লাকি নম্বর বলা হয় কেননা ব্যবহারিক জীবনে আমরা দেখতে পায় যেমন ৭ দিনে সপ্তাহ হয়, রামধনুর রঙও সাতটি, মানব শরীরের চক্রের সংখাও ৭ , আবারও স্বর্গে যাওয়ার ৭টি ধাপ রয়েছে বলে বিশ্বাস। তাই ৭ কে সম্পূর্ন ও ভাগ্যশালী সংখ্যা হিসেবে মনে করা হয়।
এবার নামকরণের পালা। আমাদের মধ্যে প্রচলিত এক সংস্কার যাকে বলা হয় নামকরণ অর্থাত শিশুর নাম রাখা। সাধারণত এটি সন্তান ভূমিষ্ঠ হওয়ার দশম, একাদশ, দ্বাদশ বা শততম দিনে হয়ে থাকে। এদিন শিশুকে স্নান করিয়ে নতুন জামা পরানো হয়। পরে পিতামাতার দেওয়া নির্বাচিত নাম ঘোষণা করা হয়। বেশিরভাগ সময় অন্নপ্রাশনের দিন নামকরণ করা হয়। অর্থাত অনুষ্ঠানটি একটি পূজো বা বিশেষ আয়োজনের মাধ্যমে করা হয়ে থাকে। সাধারণত বলা হয়ে থাকে নবজাতকের রাশি, নক্ষত্র, মাস, পারিবারিক দেবতা এবং জাগতিক নাম অনুসারে সবচেয়ে বেশি পাঁচটি নাম দেওয়া যেতে পারে। তবে ইনি তো সাহেব বাবু। দেশী নিয়ম কোনো কিছুই চলবে না। বিদেশী নিয়মে বলছে যে...... জন্মের পর নার্সিংহোম থেকে বাড়ী যাবার আগে নামকরন করতে হবে। বিদেশী সাহেবের ক্ষেত্রে একই নিয়ম প্রজন্ম হ'ল। বাড়ি যাওয়ার আগে বাবা মা নাম রাখলো। নাম হ'লো "আহির " যার ইংরেজী বানান হ'ল AHIR. আহির নামের অর্থ হলো 'সাহসী' বা 'উদাত্ত ' অর্থাত উচ্চস্বর বিশেষ। এছাড়াও এটি 'বিজেতা' বা "বিজয়ী" এবং 'জাগ্রত ' বা "ভোর" এর মত বিভিন্ন অর্থের ব্যবহার হয়ে থাকে। আবার "আহির " শব্দের আরেকটি অর্থ হল " শেষ" বা " ভক্ত এবং ঈশ্বর এক"। সাধারণত এই নামটি প্রিয় বাংলী ছেলের নাম হিসেবে ব্যবহার করা হয়। আরবী ভাষায় "আহির" শব্দের অর্থ 'বিজয়ী' হয়। এই নামের ভাগ্যবান সংখ্যা " ৯ " । যাই হোক একটি শিশুর জন্য বাংলা নাম নির্বাচন করা একটি চিন্তাশীল প্রক্রিয়া। কারণ এটি তাদের পরিচয়ের একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে উঠে। বাংলায় হিন্দু নাম আহিরের অর্থ সৌন্দর্য্য এবং গভীরতার প্রতীক। তাই কেউ যদি বাংলায় গভীর অর্থ সহ নাম বিবেচনা করেন, তাহলে আহির এমন একটি নাম যা সৌন্দর্য্য এবং তাৎপর্য উভয়ই ধারণ করেন।
দিন এভাবে চলতে থাকে। একুশ দিনের মাথায় আবার ষষ্ঠী পূজো করতে হবে। দেশে হলে এ দিন পুরোহিত ডেকে বাড়ীতে ষষ্ঠী পুজো করা হয়। যদিও ষষ্ঠী দেবীর কোনো নির্দিষ্ট অবয়ব নেই। পূজোর জায়গাতে মাটির পুতুল রাখা হয়। অনেক জায়গাতে শিশুর চুল কামানো হয়। নখ কেটে দেওয়া হয়। চলতি কথায় নবজাতক ও তার পরিবারের সদস্যদের অশৌচের সমাপ্তি ঘটে। তাই শিশুকে স্নান করিয়ে নতুন জামা পরিয়ে পূজোর কাছে রাখা হয়। সাথে মা-ও নতুন শাড়ি পরে ষষ্ঠী পূজোর কাছে বসে। এসব যে কিছু বললাম সবই আমাদের দেশের কথা। কিন্ত এ তো বিদেশী বাবু। বাড়িতে পূজো করার বদলে স্থানীয় ঠাকুরের মন্দিরে গিয়ে পূজো দিয়ে ঠাকুরের আশীর্বাদ প্রার্থনা করা হল। অবশ্য সেখানে সাহেববাবুও গিয়েছিলেন। জন্মের পরে তার এই প্রথম বাড়ি থেকে বেরোনো। ইংরেজীর ৬ ই মে সেজেগুজে তার জীবনের প্রথম সফর হলো ।
হিন্দুমতের বিশ্বাস অনুযায়ী , শিশু মা-র গর্ভ হতে ভূমিষ্ঠ হওয়ার পরেই মায়া এসে তাকে আচ্ছন্ন করে ফেলে। এর ফলে শিশু মোহাচ্ছন্ন হয়ে পরে। আর সেজন্যই মায়ের পেটে থাকাকালীন পূর্ব্ব জন্মের স্মৃতি সম্পূর্ণ ভাবে ভুলে যায়। আমাদের বিদেশী সাহেবের তাই হয়েছে। এখন তার পৃথিবীর নতুন এই জল-আবাহায়াতে, সূর্যালোকের প্রভাবে ও সুষম খাদ্যের প্রভাবে ক্রমে ক্রমে স্বাভাবিক নিয়মে পরিপুষ্ঠ হচ্ছে।মন , বুদ্ধি একত্রিত হয়ে বিভিন্ন ইন্দ্রীয়গুলি আরও সক্রিয় হচ্ছে। এর ফলে পৃথিবীর রুপ, রস, গন্ধ ইত্যাদির প্রতি আরও আকৃষ্ট হচ্ছে। প্রকৃতির মনমুগ্ধকারী সৌন্দর্যের প্রতি আকৃষ্ট হচ্ছে। আর তার সাথে রয়েছে মা বাবার অকৃত্রিম স্নেহ ভালবাসা।
