পঞ্জিকা (বা পাঁজি) হলো বাংলা, ওড়িয়া, মৈথিলী এবং অসমীয়া ভাষায় প্রকাশিত হিন্দু জ্যোতির্বিজ্ঞানীয় পঞ্জিকা।আড়ম্বরপূর্ণ ভাষায় একে ‘পাঁজি’ বলা হয়। ভারতের অন্যান্য অঞ্চলে একে পঞ্চঙ্গম বলা হয়। এটি ভারতে প্রকাশিত সর্বাধিক জনপ্রিয় বার্ষিক বইগুলির মধ্যে অন্যতম এবং এটি পর্যবেক্ষক হিন্দুদের তাদের ধর্মীয় অনুষ্ঠান, উৎসব, উদ্যাপন এবং বিবাহ, ভ্রমণ, ইত্যাদিসহ বিভিন্ন প্রকারের সাধনার জন্য সর্বাধিক শুভ সময় নির্ধারণ করার একটি সহজ রেফারেন্স। কোনও কোনও পুরোহিত বা জ্যোতিষীর কাছে বিশদ সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে এটি কিছুটা প্রস্তুত-গণনাকারী বা প্রথম উৎস। এমনকি হিন্দুদের মধ্যে ‘অবিশ্বাসী’ এবং যারা হিন্দু নন তারা প্রায়শই ব্যবহারিক তথ্যের জন্য একটি পঞ্জিকার প্রকাশিত তথ্যের পরামর্শ নেন। এটিতে মুসলমান, খ্রিস্টান এবং অন্যান্য উৎসব, অনেক শীর্ষস্থানীয় ব্যক্তিত্বের জন্ম ও মৃত্যুর তারিখ লিপিবদ্ধ করে এবং জ্যোতিষশাস্ত্র সম্পর্কিত তথ্যমূলক নিবন্ধ থাকে। বাঙালিদের মধ্যে বেণীমাধব শীলের ফুল পঞ্জিকাটি হলো অন্যতম জনপ্রিয় ও বহুল ব্যবহৃত পঞ্জিকা। তবে ১৮৯০ খ্রিস্টাব্দে প্রখ্যাত গণিতজ্ঞ মাধবচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় প্রবর্তিত বিশুদ্ধ সিদ্ধান্ত পঞ্জিকা বিজ্ঞানসম্মত এবং অনেকেই তা অনুসরণ করেন।
সাধারণ বাঙালির প্রাত্যহিক জীবনে এবং গৃহস্থলীতে রোজকার আচার- বিচার, পূজা-পার্বন, জন্ম থেকে মৃত্যু এবং বিভিন্ন কাজকর্মে পঞ্জিকা অবিচ্ছেদ্য সঙ্গী। পঞ্জি কথার অর্থ তালিকা। কিন্ত সৃষ্টিকাল থেকেই পঞ্জিকা বাঙালির আটপৌরে জীবনে ধর্ম সম্বলিত কর্মপ্রনালীর এক জরুরী গাইডবুক। বাঙালি ঘর ছেড়ে দূর যাত্রার লগ্ন নির্বাচনে আজও পঞ্জিকার দারস্থ হয় এবং এর বিধানই গুরুত্ব পায়। অতএব পঞ্জিকা, যার ডাকনাম পাঁজি, সে হুবহু বিয়ের মত দেখতে হলেও পাঁজি কেউ পড়ে না, পাঁজি দেখে, এবং প্রায় দুই শতকেরও বেশি সময় ধরে অদ্ভুত গোলাপি মায়ের, বাংলার এই বেষ্টসেলার বাঙালির একান্ত নিজস্ব বৈশিষ্ট্য।
পঞ্জিকার মূল পাঁচটি বিষয়কে বলে পঞ্চাঙ্গ। গণক ঠাকুররা পঞ্চাঙ্গের প্রথমটিকে বার বলেন মানে শনি থেকে শুক্র- এই সাত দিনকে বুঝিয়ে থাকেন। তিথি হলো চান্দ্রদিন। চান্দ্রমাসের ৩০ দিন মানে ৩০ তিথি। এক পূর্ণিমা থেকে আরম্ভ করে পরবর্তী অমাবস্যা পর্যন্ত কৃষ্ণপক্ষীয় তিথি এবং ওই অমাবস্যা থেকে পরবর্তী পূর্ণিমার প্রারম্ভ পর্যন্ত শুক্লপক্ষীয় তিথি।
বাংলায় পঞ্জিকা নির্মাতাদের দুটি পদ্ধতি রয়েছে – দৃকসিদ্ধান্ত (বিশুদ্ধসিদ্ধান্ত পঞ্জিকা) এবং অদৃকসিদ্ধান্ত (গুপ্ত প্রেস, পিএম বাগচি ইত্যাদি)। যে দিনগুলিতে উৎসব অনুষ্ঠিত হবে সেগুলি তারা নির্দেশ করে। কখনও কখনও, তারা বিশেষ উৎসব জন্য বিভিন্ন তারিখ নির্দিষ্ট। ২০০৫ সালে দুর্গাপূজার জন্য, দুটি পৃথক তারিখের মধ্য দিয়ে এসেছিল। কিছু সম্প্রদায় পূজা গুপ্ত প্রেস পঞ্জিকা অনুসরণ করেছিল, এর জনপ্রিয়তার কারণে। এটি সম্মেলনের সম্মানের সাথেই ছিল, বৈদিক পণ্ডিত ও পুরুষোহিত মহামিলন কেন্দ্রের সভাপতি পণ্ডিত নিতাই চক্রবর্তী নিশ্চিত করেছেন। বেলুড় মঠ বিশুদ্ধসিদ্ধান্ত পঞ্জিকার প্রতি অনুগত ছিলেন। স্বামী বিজ্ঞানানন্দ (যিনি ১৯৩৭-৩৮ সালে গণিতের রাষ্ট্রপতি হয়েছিলেন), তিনি একজন জ্যোতিষী ছিলেন, যিনি সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন যে রামকৃষ্ণ মিশন আরও বৈজ্ঞানিক হওয়ায় এই পঞ্জিকা অনুসরণ করবেন।
![]() |
| হিন্দু পঞ্জিকার একটি পৃষ্ঠা [১৮৭১-১৮৭২] |
এদের পার্থক্য দুটি স্কুল লুনি-সৌর আন্দোলনের ভিন্ন ক্যালেন্ডার অনুসরণ করে যার তিথি উপর ভিত্তি করে। যদিও গুপ্ত প্রেস পঞ্জিকা ১৬ শতাব্দীতে অনুসরণ রঘুনন্দন রচিত অষ্টবিংশতিতত্ত্ব ১৫০০ বছর বয়সী জ্যোতির্বিদ্যা গ্রন্থ উপর ভিত্তি করে সূর্যসিদ্ধান্ত। বিশুদ্ধসিদ্ধান্ত পঞ্জিকা, সূর্যসিদ্ধান্তের দেওয়া গ্রহের অবস্থানের একটি ১৮৯০ সংশোধনীর উপর ভিত্তি করে।
![]() |
| একটি বাংলা পঞ্জিকার প্রচ্ছদ |
বিশুদ্ধ সিদ্ধান্ত পঞ্জিকা ১৮৯০ সালে প্রথম প্রকাশিত হয়েছিল। গুপ্ত প্রেস সূর্যসিদ্ধান্তকে মূল বিন্যাসের সাথে অনুসরণ করে যখন ‘সংশোধন’ শাস্ত্রের সংস্করণটিকে বিশুদ্ধ সিদ্ধান্ত বলা হয়।
বিশুদ্ধ সিদ্ধান্ত পঞ্জিকা অস্তিত্ব নিয়েছিলেন কারণ একজন জ্যোতির্বিদ মাধবচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়, পঞ্জিকা অধ্যয়ন করার পরে প্রচলিতভাবে গ্রহ-নক্ষত্রের প্রকৃত এবং জ্যোতিষীয় অবস্থানের মধ্যে পার্থক্য খুঁজে ছিলেন। তিনি বৈজ্ঞানিক পাঠ অনুসারে পঞ্জিকা সংশোধন করেছিলেন। ভারতের বিভিন্ন অঞ্চলে অন্যান্য ব্যক্তিরাও ছিলেন যাঁরা পঞ্জিকার বৈজ্ঞানিক পুনর্বিবেচনার পদ্ধতিকে সমর্থন করেছিলেন। এটি উড়িষ্যার মহামহোপাধ্যায় চন্দ্রশেখর সিংহ সামন্ত এবং পুনেতে বাল গঙ্গাধর তিলকের মতো লোককে অন্তর্ভুক্ত করেছিল।
১৯৫২ সালে পঞ্জিকার একটি বড় সংশোধনী ভারত সরকারের নেতৃত্বে গৃহীত হয়েছিল।
গুপ্ত প্রেস, একজন বাঙালি পঞ্জিকা, ২০০৭ সালে একটি সিডি-সংস্করণ প্রকাশ করেছে যা ‘আপনার দিনটি জানুন’, ‘প্রতিদিনের রাশিফল’ এবং ‘কোষ্ঠী বিচার’ (রাশিফল) এর মত ইন্টারেক্টিভ বৈশিষ্ট্যযুক্ত। পঞ্জিকার মূল রূপান্তর। সময়ের সাথে সাথে এটি আরও আকর্ষণীয় করে তুলতে পর্যটকদের আকর্ষণ, তীর্থস্থানগুলির স্থান, টেলিফোন কোড এবং সাধারণ মানুষ যে সাধারণ তথ্যের সন্ধান করে তার মতো তথ্য যুক্ত করেছে। বিভিন্ন গোষ্ঠীর চাহিদা পূরণের জন্য এই ফর্ম্যাটটি আরও নমনীয় করা হয়েছে। ‘ডিরেক্টরি পঞ্জিকা’ (ম্যাগনাম ওপাস) ‘পূর্ণ পঞ্জিকা’ (পাতলা সংস্করণ) এবং ‘অর্ধ পঞ্জিকা’ (সংক্ষিপ্ত সংস্করণ) এবং ‘পকেট পঞ্জিকা’-এর মতো রূপগুলির আলাদা আলাদা দাম রয়েছে। পকেট পঞ্জিকা স্থানীয় ট্রেনগুলিতে হকারদের আনন্দ।
অনুসন্ধিৎসু, সাহিত্যভাবাপন্ন বৃদ্ধদের বিশ্ব মানচিত্রে স্থান করলেন বাঙালিরা তিথি, নক্ষত্র, পূজো, পার্বন, যাত্রা, অযাত্রা, শুভকর্ম, বারবেলা, কালবেলা, অমৃতযোগ, বিবাহ, সাধভক্ষন, অন্নপ্রাশন সব কিছুরই বিধানদাতা এই গাইডবুকে করে। প্রাধান্য এতখানি দেওয়া হয়েছিল যে রেভারেন্ড লং সাহেব অব্দি মন্তব্য করলেন ..... পান তামাকের মতোই বাঙালির জীবনে পঞ্জিকা অপরিহার্য। সেই সত্য বাঙালিরা আজও ধরে রেখেছে।
বাঙালির জীবনে পঞ্জিকা কি ..... হয়ত তা বোঝানো গিয়েছে। কিন্ত আরও প্রশ্ন একে একে উঠে আসে ----- কবে থেকে এটি চালু হলো ? কেনই বা সে বঙ্গজীবনের নিত্য নিমিত্ত নানা ওঠাপড়ায় এতখানি ভরসা বা নির্ভরযোগ্য হয়ে উঠল ?? এবিষয় মতান্তর বা গবেষণা অন্তহীন। আলোচনার শেষে দেখা যায় যে ______ প্রাচীন ঋষিগন যে ঋতুভিত্তিক বছর গননা করতেন, তাতে এক বছরকে উত্তরায়ণ এবং দক্ষিণায়ন হিসেবে ভাগ করতেন। ১৫০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দে অয়নবিভাগ ছিল সূর্যের উত্তর ও দক্ষিণ গতি লক্ষ্য করে। তখন তিনটি তিথি বিশেষ গুরুত্ব পেত---- পূর্নিমা, অমাবস্যা ও অষ্টকা। বৈদিক সাহিত্যে চান্দ্রমাসের উল্লেখ থাকলেও, সেটা ছিল পূর্ণিমান্ত মাস। কিন্ত ১০০০ খ্রিস্টপূর্ব বেদাঙ্গ-জ্যোতিষ পঞ্জিকা গণনায় উত্তরায়ণের দিন থেকে বছর শুরু হলেও, ১২টি অমান্য চান্দ্রমাস, ২৭টি নক্ষত্র এবং ৩০টি তিথি সম্বলিত কালগননা প্রথাটি ১৫০০ বছর ধরে চলেছে। মহাভারতে বর্ণিত পান্ডবদের অঞ্জাতবাসের সময়সীমা নির্ধারিত হয়েছিল বেদান্ত-জ্যোতিষ পদ্ধতিতে। পরবর্তী সময়ে আর্যভট্ট, বরাহমিহির, ব্রহ্মগুপ্তের মত জ্যোতির্বিদগন সূক্ষ্ম কালগননার মাধ্যমে " সূর্যসিদ্ধান্ত " নামে একটি কালনির্নায়ক পূর্ণাঙ্গ গ্রন্থ রচনা করেন। শকাব্দ থেকে বাংলা সন গণনার প্রচলন হয়েছে ষোড়শ শতকের শেষ দিকে মোগল সম্রাট আকবরের আমলে। আবুল ফজল " আইন-ই-আকবরি " গ্রন্থে বাংলা সনকে " তারিখ-ই-আকবরি " হিসেবে অভিহিত করেছেন। এর আগে , চান্দ্রমাসের নিরিখে হিজরি সন হিসেবে রাষ্ট্রীয় কাজকর্ম হলেও, পরে সৌরমাসকেই অধিক যুক্তিযুক্ত ভেবে হিজরি সনকে রুপান্তর করে কার্যকরী করা হয় ১১ই মার্চ, ১৫৮৬ থেকে। মেষ রাশিতে প্রবিষ্ট সূর্য অনুসারে বাংলা সন শুরু হয় পয়লা বৈশাখ থেকে। কিন্ত , অন্য মতান্তর, আকবরের আগেই শশাঙ্কের শাসন শুরুর দিন থেকে বঙ্গাব্দের হিসেব শুরু হয়ে, ৯৬৩ হিজরি ৯৬৩ বঙ্গাব্দ হয়ে গেছে।
এবার এলো পঞ্জিকার প্রকারভেদ। প্রাচীন কালপ্রবাহ থেকে জানা যায় , নদিয়া অঞ্চলে স্মার্ট রঘুনন্দনের প্ররনায় বাংলা পঞ্জিকা প্রচলিত হয়েছিল। রঘুনন্দনের পরে এর গণনার দায়িত্ব পালন করেন যথাক্রমে রামরুদ্র বিদ্যানিধি (রাজা কৃষ্ণচন্দ্রের সময়ে) এবং বিশ্বম্ভর জ্যোতিষার্ণব। কিছুদিন পরে এর গণনাকার্য বন্ধ হয়ে যায়। ইংরেজ আমলে কৃষ্ণনগরের জনৈক সমাহর্তার প্রচেষ্টায় বিশ্বম্ভর পুনরায় পঞ্জিকা প্রকাশের কার্যক্রম আরম্ভ করেন। এটি তখন পুথির আকারে লিখিত হতো। ১৮৬৯ খ্রিস্টাব্দ থেকে পঞ্জিকাটি মুদ্রিতাকারে প্রকাশিত হতে থাকে। তখন এটিই ছিল প্রথম মুদ্রিত পঞ্জিকা। পরবর্তীকালে ১২৯৭ বঙ্গাব্দ (১৮৯০) থেকে বিশুদ্ধ সিদ্ধান্ত পঞ্জিকা প্রকাশিত হতে থাকে। অনুরূপ পঞ্জিকা বোম্বাই ও পুনা থেকেও প্রকাশিত হয়। পঞ্জিকার সর্বশেষ সংস্কার করা হয় ১৯৫২ খ্রিস্টাব্দে ভারত সরকারের তত্ত্বাবধানে। প্রখ্যাত বিজ্ঞানী মেঘনাদ সাহার সভাপতিত্বে একটি পঞ্চাঙ্গ শোধন সমিতি (ক্যালেন্ডার রিফর্ম কমিটি) গঠন করে প্রচলিত পঞ্জিকাগুলির গণনাপদ্ধতির নিরীক্ষা ও প্রয়োজনবোধে সংস্কারের জন্য সুপারিশ করা হয়। এই সমিতির পরামর্শক্রমে রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে পঞ্জিকা প্রকাশনার দায়িত্ব গ্রহণ করা হয়। সে মতে ভারতে ১৯৫৭ খ্রিস্টাব্দ থেকে পঞ্জিকা প্রকাশিত হতে থাকে। বর্তমানে তা ১২টি ভাষায় প্রকাশিত হচ্ছে। বাংলা পঞ্জিকায় বাংলা, ইংরেজি ও হিজরি সনের তারিখ, মাস ও বছরের উল্লেখ থাকে। এ ছাড়াও আরও বিভিন্ন বছরে যে সব পঞ্জিকা প্রাধান্য ভাবে পাওয়া গেছে সেগুলি হল .... পূর্ণচন্দ্র {১৩২৫}, মদন গুপ্ত (১৩৯০) , বেণীমাধব শীলে প্রমুখের পঞ্জিকা। সঙ্কলক মাধবচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের বিশুদ্ধ সিদ্ধান্ত পঞ্জিকা ১২৯৭ সনে পাওয়া গিয়েছিল। প্রকারভেদে পঞ্জিকা ডাইরেক্টরি, ফুল, হাফ বা পকেট। বাঙালির বেঁচে থাকার জন্য যা যা দরকার, তারই হদিশ দেয় পঞ্জিকা। বাঙালির বর্ষবরণের অঙ্গাঙ্গি সে। সামাজিক অবস্থান নির্বিশেষে সমস্ত বাঙালি পরিবারের যে নতুন জিনিসটির আগমন পয়লা বৈশাখে অপরিহার্য সেটি হল পঞ্জিকা। বেশিরভাগ পরিবারেই, নারী পুরুষ নির্বিশেষে সবচেয়ে বয়স্ক সদস্যটির জন্য কেনা পঞ্জিকাটি তার নিজস্ব জীবন যাপনের সঙ্গী হয়ে উঠেছে বার বার। তাইতো অনেকের বাড়ির ছাদের চিলেকোঠার ঘরের তাকে কিংবা দাদু ঠাকুমার ঘরের পালঙ্কের নীচে গোলাপ আকা সবুজ ট্রাঙ্কে দেখা মেলে থরে থরে সাজানো বছরের পর বছরের পঞ্জিকা।
এক কালে রাজা, জমিদার এবং বনেদি পরিবারে "পহেলা বৈশাখ " ছিল এলাহি ব্যাপার । এটা দুর্গাপূজার মত না হলেও, সাধ্যমতো নববর্ষের কেনাকাটা বাঙালির বর্ষবরণের ঐতিহ্য। যদিও এখন কেনাকাটা হয়ে উঠেছে সম্পূর্ণ অনলাইন নির্ভর, তবুও চৈত্র সেলের সুরভি আজও হাতিবাগান বা গড়িয়াহাটে গেলে অবশ্যই পাবেন। পরিবারের সকলের জন্য খুব সাধারণ হলেও একটি পোশাক অবশ্যই। আর ঠাকুর ঘরের ঠাকুরদের জন্য নতুন পোশাক চাই-ই। সেরকমই তার সাথে চায় পরিবার পিছু একটা করে পঞ্জিকা।
বুদ্ধিজীবী বাঙালি যতই তুচ্ছ তাচ্ছিল্য করুক , পাঁজিকে পাঠ্য বা অপাঠ্য যা-ই মনে করুক, আপামর বাঙালির কাছে প্রাক-বেতার, দূরদর্শন, ইন্টারনেট হীন যুগের পাঁজি হল সেই " কাজের বই " অর্থাৎ পঞ্জিকা যেখানে আলপিন থেকে রকেট, স্নো, পাউডার,গনোরিয়ার ওষুধ, চশমা, বন্দুক, বাঁশি, বীজ, সার, কবিরাজি সালসা, কুন্তলবাহার, কেতকীকুসুম, গোলাপকুসুম সুবাসিত তেল, বিভিন্ন উপন্যাসের সচিত্র বিঞ্জাপন, সচিত্র বিলাতি গুপ্তকথা, বেনারসির বিঞ্জাপন, নারীর বালা, চুড়ি,কেমিক্যাল গহনা, দুলালের তালমিছড়ি, শিশুদের ওষুধ সহ সব কিছুর খোজ এক ছাদের তলায়। এক কথায় বলা যেতে পারে মুস্কিল আসানের ভিকসনারি। ১৯২৯ সাল বা তার পরেও পাঁজিতে প্রচুর রবার স্ট্যাম্পের বিঞ্জাপনে পাওয়া যায় যে ফরিদপুর, নোয়খালির রবার স্ট্যাম্প তৈরি হত কলকাতার চিৎপুরে।
ব্রতপার্বন, প্রাত্যহিক জীবনের সংস্কার, জন্ম, মৃত্যু, বিবাহ, গর্ভধান, হিতকথা, ফলিত গুপ্তচর্চা, শুভ অশুভ অমৃতযোগ, তিথি নক্ষত্রের বিচার, পূর্নিমা আমাবস্যা, যাত্রা শুভ, যাত্রা নাস্তি________ এই সমস্ত কিছু সহ পঞ্জিকা সমাজজীবনকে নিজস্ব মহিমায় প্রভাবিত করে চলেছে বছরের পর বছর ধরে। বিভিন্ন ভাবে আধুনিকতা আত্মস্থ করে পঞ্জিকা এখনও সমকালীন। বাংলা নববর্ষের যতই বিশ্বায়ন ঘটুক , নব্য প্রজন্ম পুরাতন ঐতিহ্যের প্রতি যতই উদাসীন হউক, বাংলা বর্ষবরণ...পয়লা বৈশাখের শুভেচ্ছা বিনিময়.... আর নতুন পোশাকের মতো নতুন পঞ্জিকাও বাঙালির বৈশাখী প্রয়োজন। এ আগেও ছিল.... এখনও আছে..... আর ভবিষ্যতেও থাকবে।







Mr Raren Chakraborty has commented in this manner::
ReplyDeleteOtantyo tothyo samridhyo .Bangalir Noboborsho o panjika ongangi bhabe mile ache.Ghore ghore Tai ponjikar eto chahida.
Khub bhalo laglo .
Aro bhalo bhalo lekhar oppekhyai roilum
শ্রী সচীবিলাস রায় বলেছেন এই রকম:
ReplyDeleteপ্রচুর তথ্য বহুল সংগ্রহ। গবেষণায় কাজে লাগাতে পারে। কিছু কিছু জায়গায় খাপছাড়া মনে হলো, অর্থাৎ আগের paragraph -এর সঙ্গে link -এর অভাব (এটা আমার ব্যক্তিগত মতামত) মনে হয়। পাঁজি বাঙালির জীবনের সাথে অঙ্গাঅঙ্গি ভাবে জড়িয়ে আছে। Overall খুবই ভালো লাগলো, অনেক খাটনির ফসল। 👍