Friday, 14 April 2023

পঞ্জিকা--- বাঙালির মুশকিল আসান





পঞ্জিকা (বা পাঁজি) হলো বাংলাওড়িয়ামৈথিলী এবং অসমীয়া ভাষায় প্রকাশিত হিন্দু জ্যোতির্বিজ্ঞানীয় পঞ্জিকা।আড়ম্বরপূর্ণ ভাষায় একে ‘পাঁজি’ বলা হয়। ভারতের অন্যান্য অঞ্চলে একে পঞ্চঙ্গম বলা হয়। এটি ভারতে প্রকাশিত সর্বাধিক জনপ্রিয় বার্ষিক বইগুলির মধ্যে অন্যতম এবং এটি পর্যবেক্ষক হিন্দুদের তাদের ধর্মীয় অনুষ্ঠান, উৎসব, উদ্‌যাপন এবং বিবাহ, ভ্রমণ, ইত্যাদিসহ বিভিন্ন প্রকারের সাধনার জন্য সর্বাধিক শুভ সময় নির্ধারণ করার একটি সহজ রেফারেন্স। কোনও কোনও পুরোহিত বা জ্যোতিষীর কাছে বিশদ সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে এটি কিছুটা প্রস্তুত-গণনাকারী বা প্রথম উৎস। এমনকি হিন্দুদের মধ্যে ‘অবিশ্বাসী’ এবং যারা হিন্দু নন তারা প্রায়শই ব্যবহারিক তথ্যের জন্য একটি পঞ্জিকার প্রকাশিত তথ্যের পরামর্শ নেন। এটিতে মুসলমানখ্রিস্টান এবং অন্যান্য উৎসব, অনেক শীর্ষস্থানীয় ব্যক্তিত্বের জন্ম ও মৃত্যুর তারিখ লিপিবদ্ধ করে এবং জ্যোতিষশাস্ত্র সম্পর্কিত তথ্যমূলক নিবন্ধ থাকে।  বাঙালিদের মধ্যে বেণীমাধব শীলের ফুল পঞ্জিকাটি হলো অন্যতম জনপ্রিয় ও বহুল ব্যবহৃত পঞ্জিকা। তবে ১৮৯০ খ্রিস্টাব্দে প্রখ্যাত গণিতজ্ঞ মাধবচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় প্রবর্তিত বিশুদ্ধ সিদ্ধান্ত পঞ্জিকা বিজ্ঞানসম্মত এবং অনেকেই তা অনুসরণ করেন।




সাধারণ বাঙালির প্রাত্যহিক জীবনে এবং গৃহস্থলীতে রোজকার আচার- বিচার, পূজা-পার্বন, জন্ম থেকে মৃত্যু এবং বিভিন্ন কাজকর্মে পঞ্জিকা অবিচ্ছেদ্য সঙ্গী। পঞ্জি কথার অর্থ তালিকা। কিন্ত সৃষ্টিকাল থেকেই পঞ্জিকা বাঙালির আটপৌরে জীবনে ধর্ম সম্বলিত কর্মপ্রনালীর এক জরুরী গাইডবুক। বাঙালি ঘর ছেড়ে দূর যাত্রার লগ্ন নির্বাচনে আজও পঞ্জিকার দারস্থ হয় এবং এর  বিধানই গুরুত্ব পায়। অতএব পঞ্জিকা, যার ডাকনাম পাঁজি, সে হুবহু বিয়ের মত দেখতে হলেও পাঁজি কেউ পড়ে না, পাঁজি দেখে, এবং প্রায় দুই শতকেরও বেশি সময় ধরে অদ্ভুত গোলাপি মায়ের, বাংলার এই বেষ্টসেলার বাঙালির একান্ত নিজস্ব বৈশিষ্ট্য।

পঞ্জিকার মূল পাঁচটি বিষয়কে বলে পঞ্চাঙ্গ। গণক ঠাকুররা পঞ্চাঙ্গের প্রথমটিকে বার বলেন মানে শনি থেকে শুক্র- এই সাত দিনকে বুঝিয়ে থাকেন। তিথি হলো চান্দ্রদিন। চান্দ্রমাসের ৩০ দিন মানে ৩০ তিথি। এক পূর্ণিমা থেকে আরম্ভ করে পরবর্তী অমাবস্যা পর্যন্ত কৃষ্ণপক্ষীয় তিথি এবং ওই অমাবস্যা থেকে পরবর্তী পূর্ণিমার প্রারম্ভ পর্যন্ত শুক্লপক্ষীয় তিথি।


বাংলায় পঞ্জিকা নির্মাতাদের দুটি পদ্ধতি রয়েছে – দৃকসিদ্ধান্ত (বিশুদ্ধসিদ্ধান্ত পঞ্জিকা) এবং অদৃকসিদ্ধান্ত (গুপ্ত প্রেসপিএম বাগচি ইত্যাদি)। যে দিনগুলিতে উৎসব অনুষ্ঠিত হবে সেগুলি তারা নির্দেশ করে। কখনও কখনও, তারা বিশেষ উৎসব জন্য বিভিন্ন তারিখ নির্দিষ্ট। ২০০৫ সালে দুর্গাপূজার জন্য, দুটি পৃথক তারিখের মধ্য দিয়ে এসেছিল। কিছু সম্প্রদায় পূজা গুপ্ত প্রেস পঞ্জিকা অনুসরণ করেছিল, এর জনপ্রিয়তার কারণে। এটি সম্মেলনের সম্মানের সাথেই ছিল, বৈদিক পণ্ডিত ও পুরুষোহিত মহামিলন কেন্দ্রের সভাপতি পণ্ডিত নিতাই চক্রবর্তী নিশ্চিত করেছেন। বেলুড় মঠ বিশুদ্ধসিদ্ধান্ত পঞ্জিকার প্রতি অনুগত ছিলেন। স্বামী বিজ্ঞানানন্দ (যিনি ১৯৩৭-৩৮ সালে গণিতের রাষ্ট্রপতি হয়েছিলেন), তিনি একজন জ্যোতিষী ছিলেন, যিনি সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন যে রামকৃষ্ণ মিশন আরও বৈজ্ঞানিক হওয়ায় এই পঞ্জিকা অনুসরণ করবেন। 

হিন্দু পঞ্জিকার একটি পৃষ্ঠা [১৮৭১-১৮৭২]


এদের পার্থক্য দুটি স্কুল লুনি-সৌর আন্দোলনের ভিন্ন ক্যালেন্ডার অনুসরণ করে যার তিথি উপর ভিত্তি করে। যদিও গুপ্ত প্রেস পঞ্জিকা ১৬ শতাব্দীতে অনুসরণ রঘুনন্দন রচিত অষ্টবিংশতিতত্ত্ব ১৫০০ বছর বয়সী জ্যোতির্বিদ্যা গ্রন্থ উপর ভিত্তি করে সূর্যসিদ্ধান্ত। বিশুদ্ধসিদ্ধান্ত পঞ্জিকাসূর্যসিদ্ধান্তের দেওয়া গ্রহের অবস্থানের একটি ১৮৯০ সংশোধনীর উপর ভিত্তি করে।

একটি বাংলা পঞ্জিকার প্রচ্ছদ

বিশুদ্ধ সিদ্ধান্ত পঞ্জিকা ১৮৯০ সালে প্রথম প্রকাশিত হয়েছিল। গুপ্ত প্রেস সূর্যসিদ্ধান্তকে মূল বিন্যাসের সাথে অনুসরণ করে যখন ‘সংশোধন’ শাস্ত্রের সংস্করণটিকে বিশুদ্ধ সিদ্ধান্ত বলা হয়। 


বিশুদ্ধ সিদ্ধান্ত পঞ্জিকা অস্তিত্ব নিয়েছিলেন কারণ একজন জ্যোতির্বিদ মাধবচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়, পঞ্জিকা অধ্যয়ন করার পরে প্রচলিতভাবে গ্রহ-নক্ষত্রের প্রকৃত এবং জ্যোতিষীয় অবস্থানের মধ্যে পার্থক্য খুঁজে ছিলেন। তিনি বৈজ্ঞানিক পাঠ অনুসারে পঞ্জিকা সংশোধন করেছিলেন। ভারতের বিভিন্ন অঞ্চলে অন্যান্য ব্যক্তিরাও ছিলেন যাঁরা পঞ্জিকার বৈজ্ঞানিক পুনর্বিবেচনার পদ্ধতিকে সমর্থন করেছিলেন। এটি উড়িষ্যার মহামহোপাধ্যায় চন্দ্রশেখর সিংহ সামন্ত এবং পুনেতে বাল গঙ্গাধর তিলকের মতো লোককে অন্তর্ভুক্ত করেছিল। 


১৯৫২ সালে পঞ্জিকার একটি বড় সংশোধনী ভারত সরকারের নেতৃত্বে গৃহীত হয়েছিল। 

গুপ্ত প্রেস, একজন বাঙালি পঞ্জিকা, ২০০৭ সালে একটি সিডি-সংস্করণ প্রকাশ করেছে যা ‘আপনার দিনটি জানুন’, ‘প্রতিদিনের রাশিফল’ এবং ‘কোষ্ঠী বিচার’ (রাশিফল) এর মত ইন্টারেক্টিভ বৈশিষ্ট্যযুক্ত। পঞ্জিকার মূল  রূপান্তর। সময়ের সাথে সাথে এটি আরও আকর্ষণীয় করে তুলতে পর্যটকদের আকর্ষণ, তীর্থস্থানগুলির স্থান, টেলিফোন কোড এবং সাধারণ মানুষ যে সাধারণ তথ্যের সন্ধান করে তার মতো তথ্য যুক্ত করেছে। বিভিন্ন গোষ্ঠীর চাহিদা পূরণের জন্য এই ফর্ম্যাটটি আরও নমনীয় করা হয়েছে। ‘ডিরেক্টরি পঞ্জিকা’ (ম্যাগনাম ওপাস) ‘পূর্ণ পঞ্জিকা’ (পাতলা সংস্করণ) এবং ‘অর্ধ পঞ্জিকা’ (সংক্ষিপ্ত সংস্করণ) এবং ‘পকেট পঞ্জিকা’-এর মতো রূপগুলির আলাদা আলাদা দাম রয়েছে। পকেট পঞ্জিকা স্থানীয় ট্রেনগুলিতে হকারদের আনন্দ। 

অনুসন্ধিৎসু, সাহিত্যভাবাপন্ন  বৃদ্ধদের বিশ্ব মানচিত্রে স্থান করলেন বাঙালিরা তিথি, নক্ষত্র,  পূজো, পার্বন, যাত্রা, অযাত্রা,  শুভকর্ম, বারবেলা, কালবেলা,  অমৃতযোগ,  বিবাহ,  সাধভক্ষন,  অন্নপ্রাশন সব কিছুরই বিধানদাতা এই গাইডবুকে করে। প্রাধান্য এতখানি দেওয়া হয়েছিল যে রেভারেন্ড লং সাহেব অব্দি মন্তব্য করলেন  ..... পান তামাকের মতোই বাঙালির জীবনে পঞ্জিকা অপরিহার্য। সেই সত্য বাঙালিরা আজও ধরে রেখেছে।

বাঙালির জীবনে পঞ্জিকা কি ..... হয়ত তা বোঝানো গিয়েছে। কিন্ত আরও প্রশ্ন  একে একে উঠে আসে ----- কবে থেকে এটি চালু হলো ? কেনই বা সে বঙ্গজীবনের নিত্য নিমিত্ত নানা ওঠাপড়ায় এতখানি  ভরসা বা নির্ভরযোগ্য হয়ে উঠল ?? এবিষয় মতান্তর বা গবেষণা অন্তহীন। আলোচনার শেষে দেখা যায় যে ______ প্রাচীন  ঋষিগন যে ঋতুভিত্তিক বছর গননা করতেন, তাতে এক বছরকে উত্তরায়ণ এবং দক্ষিণায়ন হিসেবে ভাগ করতেন।  ১৫০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দে অয়নবিভাগ ছিল সূর্যের উত্তর ও দক্ষিণ গতি লক্ষ্য করে। তখন তিনটি তিথি বিশেষ গুরুত্ব পেত---- পূর্নিমা, অমাবস্যা ও অষ্টকা। বৈদিক সাহিত্যে চান্দ্রমাসের উল্লেখ থাকলেও,  সেটা ছিল পূর্ণিমান্ত মাস। কিন্ত ১০০০ খ্রিস্টপূর্ব বেদাঙ্গ-জ্যোতিষ পঞ্জিকা গণনায় উত্তরায়ণের দিন থেকে বছর শুরু হলেও,  ১২টি অমান্য চান্দ্রমাস, ২৭টি নক্ষত্র এবং ৩০টি তিথি সম্বলিত কালগননা প্রথাটি ১৫০০ বছর ধরে চলেছে। মহাভারতে বর্ণিত পান্ডবদের অঞ্জাতবাসের সময়সীমা নির্ধারিত হয়েছিল বেদান্ত-জ্যোতিষ পদ্ধতিতে। পরবর্তী সময়ে আর্যভট্ট, বরাহমিহির, ব্রহ্মগুপ্তের মত জ্যোতির্বিদগন সূক্ষ্ম কালগননার মাধ্যমে " সূর্যসিদ্ধান্ত  " নামে একটি কালনির্নায়ক পূর্ণাঙ্গ গ্রন্থ রচনা করেন। শকাব্দ থেকে বাংলা সন গণনার প্রচলন হয়েছে ষোড়শ শতকের শেষ দিকে মোগল সম্রাট আকবরের আমলে। আবুল ফজল  " আইন-ই-আকবরি " গ্রন্থে বাংলা সনকে " তারিখ-ই-আকবরি " হিসেবে অভিহিত করেছেন। এর আগে , চান্দ্রমাসের নিরিখে হিজরি সন হিসেবে রাষ্ট্রীয় কাজকর্ম হলেও,  পরে সৌরমাসকেই অধিক যুক্তিযুক্ত ভেবে হিজরি সনকে রুপান্তর করে কার্যকরী করা হয় ১১ই মার্চ,  ১৫৮৬ থেকে। মেষ রাশিতে  প্রবিষ্ট সূর্য অনুসারে বাংলা সন শুরু হয়  পয়লা বৈশাখ থেকে। কিন্ত , অন্য মতান্তর, আকবরের আগেই শশাঙ্কের শাসন শুরুর দিন থেকে বঙ্গাব্দের হিসেব শুরু হয়ে, ৯৬৩ হিজরি ৯৬৩ বঙ্গাব্দ হয়ে গেছে।

এবার এলো পঞ্জিকার প্রকারভেদ। প্রাচীন কালপ্রবাহ থেকে জানা যায় , নদিয়া অঞ্চলে স্মার্ট রঘুনন্দনের প্ররনায় বাংলা পঞ্জিকা প্রচলিত হয়েছিল। রঘুনন্দনের পরে এর গণনার দায়িত্ব পালন করেন যথাক্রমে রামরুদ্র বিদ্যানিধি (রাজা কৃষ্ণচন্দ্রের সময়ে) এবং বিশ্বম্ভর জ্যোতিষার্ণব। কিছুদিন পরে এর গণনাকার্য বন্ধ হয়ে যায়। ইংরেজ আমলে কৃষ্ণনগরের জনৈক সমাহর্তার প্রচেষ্টায় বিশ্বম্ভর পুনরায় পঞ্জিকা প্রকাশের কার্যক্রম আরম্ভ করেন। এটি তখন পুথির আকারে লিখিত হতো। ১৮৬৯ খ্রিস্টাব্দ থেকে পঞ্জিকাটি মুদ্রিতাকারে প্রকাশিত হতে থাকে। তখন এটিই ছিল প্রথম মুদ্রিত পঞ্জিকা। পরবর্তীকালে ১২৯৭  বঙ্গাব্দ (১৮৯০) থেকে বিশুদ্ধ সিদ্ধান্ত পঞ্জিকা প্রকাশিত হতে থাকে। অনুরূপ পঞ্জিকা বোম্বাই ও পুনা থেকেও প্রকাশিত হয়। পঞ্জিকার সর্বশেষ সংস্কার করা হয় ১৯৫২ খ্রিস্টাব্দে ভারত সরকারের তত্ত্বাবধানে। প্রখ্যাত বিজ্ঞানী মেঘনাদ সাহার সভাপতিত্বে একটি পঞ্চাঙ্গ শোধন সমিতি (ক্যালেন্ডার রিফর্ম কমিটি) গঠন করে প্রচলিত পঞ্জিকাগুলির গণনাপদ্ধতির নিরীক্ষা ও প্রয়োজনবোধে সংস্কারের জন্য সুপারিশ করা হয়। এই সমিতির পরামর্শক্রমে রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে পঞ্জিকা প্রকাশনার দায়িত্ব গ্রহণ করা হয়। সে মতে ভারতে ১৯৫৭ খ্রিস্টাব্দ থেকে পঞ্জিকা প্রকাশিত হতে থাকে। বর্তমানে তা ১২টি ভাষায় প্রকাশিত হচ্ছে। বাংলা পঞ্জিকায় বাংলা, ইংরেজি ও হিজরি সনের তারিখ, মাস ও বছরের উল্লেখ থাকে। এ ছাড়াও আরও বিভিন্ন বছরে যে সব পঞ্জিকা প্রাধান্য ভাবে পাওয়া গেছে সেগুলি হল .... পূর্ণচন্দ্র {১৩২৫}, মদন গুপ্ত  (১৩৯০) , বেণীমাধব শীলে প্রমুখের পঞ্জিকা। সঙ্কলক মাধবচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের বিশুদ্ধ সিদ্ধান্ত পঞ্জিকা ১২৯৭ সনে পাওয়া গিয়েছিল।  প্রকারভেদে পঞ্জিকা ডাইরেক্টরি, ফুল, হাফ বা পকেট। বাঙালির বেঁচে থাকার জন্য যা যা দরকার,  তারই হদিশ দেয় পঞ্জিকা। বাঙালির বর্ষবরণের অঙ্গাঙ্গি সে। সামাজিক অবস্থান নির্বিশেষে সমস্ত বাঙালি পরিবারের যে নতুন জিনিসটির আগমন পয়লা বৈশাখে অপরিহার্য সেটি হল পঞ্জিকা। বেশিরভাগ পরিবারেই,  নারী পুরুষ নির্বিশেষে সবচেয়ে বয়স্ক সদস্যটির জন্য কেনা পঞ্জিকাটি তার নিজস্ব জীবন যাপনের সঙ্গী হয়ে উঠেছে  বার বার। তাইতো  অনেকের বাড়ির ছাদের চিলেকোঠার ঘরের তাকে কিংবা দাদু ঠাকুমার ঘরের পালঙ্কের নীচে গোলাপ আকা সবুজ ট্রাঙ্কে দেখা মেলে থরে থরে সাজানো বছরের পর বছরের পঞ্জিকা।


এক কালে রাজা, জমিদার এবং বনেদি পরিবারে  "পহেলা বৈশাখ " ছিল  এলাহি ব্যাপার । এটা দুর্গাপূজার মত না হলেও,  সাধ্যমতো নববর্ষের কেনাকাটা বাঙালির বর্ষবরণের ঐতিহ্য। যদিও এখন কেনাকাটা হয়ে উঠেছে সম্পূর্ণ  অনলাইন নির্ভর,  তবুও  চৈত্র সেলের সুরভি  আজও  হাতিবাগান  বা গড়িয়াহাটে গেলে অবশ্যই পাবেন। পরিবারের সকলের জন্য খুব সাধারণ হলেও একটি পোশাক অবশ্যই।   আর ঠাকুর ঘরের ঠাকুরদের জন্য নতুন পোশাক চাই-ই। সেরকমই তার সাথে চায় পরিবার পিছু একটা করে পঞ্জিকা। 

বুদ্ধিজীবী বাঙালি যতই তুচ্ছ তাচ্ছিল্য করুক , পাঁজিকে পাঠ্য বা অপাঠ্য যা-ই মনে করুক, আপামর বাঙালির কাছে প্রাক-বেতার,  দূরদর্শন, ইন্টারনেট হীন যুগের পাঁজি হল সেই  " কাজের বই " অর্থাৎ পঞ্জিকা  যেখানে আলপিন থেকে রকেট, স্নো, পাউডার,গনোরিয়ার ওষুধ,  চশমা, বন্দুক, বাঁশি, বীজ, সার, কবিরাজি সালসা, কুন্তলবাহার, কেতকীকুসুম,  গোলাপকুসুম সুবাসিত তেল, বিভিন্ন উপন্যাসের সচিত্র বিঞ্জাপন, সচিত্র বিলাতি গুপ্তকথা, বেনারসির বিঞ্জাপন, নারীর বালা, চুড়ি,কেমিক্যাল গহনা, দুলালের তালমিছড়ি, শিশুদের ওষুধ সহ সব কিছুর খোজ এক ছাদের তলায়। এক কথায় বলা যেতে পারে মুস্কিল আসানের ভিকসনারি। ১৯২৯ সাল বা তার পরেও পাঁজিতে প্রচুর রবার স্ট্যাম্পের বিঞ্জাপনে পাওয়া যায় যে ফরিদপুর, নোয়খালির রবার স্ট্যাম্প তৈরি হত কলকাতার চিৎপুরে।



ব্রতপার্বন, প্রাত্যহিক জীবনের সংস্কার,  জন্ম,  মৃত্যু, বিবাহ, গর্ভধান, হিতকথা, ফলিত গুপ্তচর্চা, শুভ অশুভ অমৃতযোগ,  তিথি নক্ষত্রের বিচার,  পূর্নিমা আমাবস্যা,  যাত্রা শুভ, যাত্রা নাস্তি________ এই সমস্ত কিছু সহ পঞ্জিকা সমাজজীবনকে নিজস্ব মহিমায় প্রভাবিত করে চলেছে বছরের পর বছর ধরে। বিভিন্ন ভাবে আধুনিকতা আত্মস্থ করে পঞ্জিকা এখনও সমকালীন।  বাংলা নববর্ষের যতই বিশ্বায়ন ঘটুক , নব্য প্রজন্ম পুরাতন ঐতিহ্যের প্রতি যতই উদাসীন হউক,  বাংলা বর্ষবরণ...পয়লা বৈশাখের শুভেচ্ছা বিনিময়.... আর নতুন পোশাকের মতো নতুন পঞ্জিকাও বাঙালির বৈশাখী প্রয়োজন।  এ আগেও ছিল.... এখনও আছে..... আর ভবিষ্যতেও থাকবে। 

Tuesday, 4 April 2023

উদ্বোধনের জীবনপঞ্জী-- বয়স ১২৫

 



রামকৃষ্ণ মঠ ও মিশন পরিচালিত বাংলা ভাষার অন্যতম প্রাচীন পত্রিকার নাম  " উদ্বোধন "।  ইং ১৪ই জানুয়ারি, ১৮৯৮ সালে আর বা: ১৩০৫ সালের  ১লা মাঘ এর প্রথম সংখ্যার প্রকাশ।  তখনকার মূল্য ছিল প্রতি সংখ্যা ২   ( দুই ) আনা। আর বার্ষিক মূল্য বাবদ অগ্রিম ২ [ দুই ] টাকা দিতে হতো। এই দীর্ঘ ১২৫ বছর ধরে লাগাতার ভাবে বইটি প্রকাশের গৌরব অর্জন করেছে এই বাংলায়। প্রথম প্রকাশের স্থান ছিল---- শ্যামবাজার স্ট্রিট,  কুম্বলিয়াটোলায় ১৪ নং রামচন্দ্র মৈত্র লেন, কলকাতা। " উদ্বোধন  " নামটি দিয়েছিলেন স্বামী বিবেকানন্দ।  আর প্রথম সম্পাদক ছিলেন ত্রিগুনাতীতানন্দ মহারাজ। যদিও স্বামী ত্রিগুণাতীতানন্দ প্রথম সম্পাদক ছিলেন,  এছাড়াও উল্লেখযোগ্য সম্পাদকরা হলেন -----  স্বামী শুদ্ধানন্দ,  স্বামী সারদানন্দ,  স্বামী প্রঞ্জানন্দ,  স্বামী মধবানন্দ, স্বামী  ৠতানন্দ প্রমুখ। 

উদ্বোধনের একটা বিশেষত্ব রয়েছে। এটিই একমাত্র বাংলা পত্রিকা যেটি ১২৫ বছর ধরে নিরিবিচ্ছিন্ন ভাবে প্রকাশিত হয়ে চলেছে। স্বামী বিবেকানন্দ ছিলেন বহুমুখী প্রতিভা ও অসাধারণ কর্মক্ষমতার অধিকারী। ত্যাগ, নি:স্বার্থ সেবা ও প্রকৃত জ্ঞানলাভের মাধ্যমে সত্যের পথে এ গিয়ে যাওয়াই , তাঁর প্রতিষ্ঠিত রামকৃষ্ণ মিশনের আদর্শ।  এই ভাবধারাকে সময়মতো করে জনসাধারণের মধ্যে প্রচার করার উদ্দেশ্যে একটি প্রত্রিকার প্রয়োজনীয়তা স্বামীজী অনুভব করেছিলেন।  এই প্রত্রিকায় শুধুমাত্র ধর্ম বিষয়ক প্রবন্ধই স্থান পেত তা কিন্ত নয়, ভ্রমণ কাহিনী, কবিতা , সমাজনীতি বিষয়ক রচনাও মুদ্রিত হয়েছে।  " সংবাদ ও মন্তব্য  " বিভাগে থাকত বিভিন্ন সংবাদ ও প্রাসঙ্গিক বিষয়ে আলোচনা । " সমালোচনা " বিভাগ ছিল এই প্রত্রিকার একটি নিয়মিত বিভাগ।  সেই অংশে সেই সময়ে নতুন প্রকাশিত বইয়ের আলোচনা থাকত।





এই পত্রিকা প্রকাশের প্রেক্ষাপট ও আরও কিছু প্রাসঙ্গিক তথ্য আমরা স্বামী ভূতেশানন্দ মহারাজের লেখা থেকে জানতে পারি। তাঁর লেখা এই অংশ পড়লে বুঝতে পারি_____ পত্রিকা প্রকাশের আগ্রহ  স্বামীজী  অনেক  আগে থেকেই মনে মনে পোষন করছিলেন।  শিকাগো থেকেই স্বামীজি আলসিঙ্গাকে লিখলেন ‍  " এখন একখানা কাগজ কোনোরূপে বার করতে খুব ঝোক হয়েছে আমার।  "  তার এই সঙ্কল্প বাস্তবে রূপায়ণ হয়েছিল " ব্রহ্মবাদিন " পত্রিকা প্রকাশের মাধ্যমে ( ১৮৯৫ সালের  ১৪ই সেপ্টেম্বর) । শিকাগোর ধর্মসন্মেলন তথা পাশ্চাত্যের বিভিন্ন দেশে বেদান্ত প্রচারের ফলে স্বদেশে ও বিদেশে বেদান্ত সম্বন্ধে একটা নতুন ধারনার সৃষ্টি হয়েছিল।  এই ধারণাকে আরও স্থায়ী ভিত্তিতে প্রতিষ্ঠা এবং ব্যাপক প্রচারের জন্য একটি ইংরেজি পত্রিকার খুব দরকার ছিল।  কিন্ত "ব্রহ্মবাদিন " ছিল খুব উচ্চধরণের দার্শনিক পত্রিকা। স্বামীজি সেইজন্য অপেক্ষাকৃত সহজ আরও একটি ইংরেজি পত্রিকা প্রকাশের কথা ভেবেছিলেন। এই ভাবনার ফলশ্রুতি আত্মপ্রকাশ " প্রবুদ্ধ  ভারত " ১৮৯৬ সালের জুলাই মাসে। 

সঙ্ঘ প্রতিষ্ঠার পর থেকেই একটা বাঙলা মুখপাত্র প্রকাশের জন্য চেষ্টা করে যাচ্ছিলেন।  সেজন্য তিনি তার গুরুভাই ও অনুরাগীদের এ বিয়ে এগিয়ে আসতে অনুপ্রেরণা দিয়েছিলেন।  ২৫ শে সেপ্টেম্বর ১৮৯৪ তারিখে গুরুভাইদের উদ্দেশ্য করে একটি পত্রে লিখলেন  ------- " তোমাদের একটা কিনা কাগজ ছাপর কথা ছিল,  তার কি খবর?? একটা খবরের কাগজ তোমাদের edit করতে হবে, আদ্দেক বাংলা আদ্দেক হিন্দি -- পারতো আর একটা ইংরাজিতে। পৃথিবী ঘুরে বেড়াচ্ছ, খবরের কাগজেরsubscriber সংগ্রহ করতে কদিন লাগে ? যারা   বাহিরে আছে, subscriber জোগাড় করুক – গুপ্ত [সদানন্দ] হিন্দি দিকটা লিখুক, বা অনেক হিন্দি লিখবার লোক পাওয়া যাবে। মিছে ঘুরে বেড়ালে চলবে না।” সকলে হয়ত এ ব্যাপারে বেশি উৎসাহী ছিলেন না, কিন্তু স্বামীজী সকলকে পত্রিকা প্রকাশের বিষয়ে ক্রমাগত উদ্দীপিত করে চলেছিলেন। স্বামী ব্রহ্মানন্দকে আমেরিকা থেকে একটা চিঠিতে (১৮৯৫) লিখেছিলেন –“যে খবরের কাগজ বাহির হইবার কথা হইতেছিল, তাহার কি হইল ?”




  স্বামীজী উৎসাহ দিয়ে গেলেও আসল কাজটি কিন্তু বাস্তবে রূপায়িত হচ্ছিল না। তার কারণ হয়ত ছিল সঙ্ঘবদ্ধ প্রচেষ্টার অভাব। তাছাড়া মনে হয়, এ ধরণের কাজের সঙ্গে ঠাকুরের সন্তানেরা মানসিক ভাবে তৈরি হন নি। ...... এছাড়া গৃহী ভক্ত ও অনুরাগীদের অনেকের মধ্যেও সে সময় স্বামীজীর পরিকল্পনা নিয়ে নানা সংশয় জেগেছিল। স্বামীজীর শিষ্য শরচ্চন্দ্রের মনেও এই প্রশ্ন উঠেছিল এবং স্বামীজীকে তিনি এ বিষয়ে জিজ্ঞাসা করলে স্বামীজী বলেছিলেন –“পত্রের প্রচার তো গৃহীদের কল্যাণের জন্য। দেশে নবভাব প্রচারের দ্বারা জনসাধারণের কল্যাণ সাধিত হবে। এই ফলাকাঙ্ক্ষা-রহিত কর্ম বুঝি তুই সাধন-ভজনের চেয়ে কম বলে মনে করছিস ? ...... শুধু পরহিতেই আমাদের সকল movement (কাজকর্ম) এটা জেনে রাখবি।” ...... এত চেষ্টা সত্ত্বেও পত্রিকা প্রকাশের দিন কিন্তু নানা কারণে ক্রমশই পিছিয়ে যাচ্ছিল। এদিকে ১লা মে ১৮৯৭ বলরাম বসুর বাড়িতে “রামকৃষ্ণ মিশন” প্রতিষ্ঠা করলেন স্বামীজী। সঙ্ঘের মুখপত্র প্রকাশের প্রয়োজনীয়তা স্বামীজীর কাছে তখন আরও প্রকট হয়ে দাঁড়াল, আরও অস্থির হয়ে উঠেছিলেন তিনি। শেষ পর্যন্ত ১৩০৫ সালের ১লা মাঘ (১৪ই জানুয়ারি ১৮৯৯) কম্বুলিয়াটোলার ১৪নং রামচন্দ্র মৈত্র লেনের গিরীন্দ্রমোহন বসাকের বাড়িতে প্রতিষ্ঠিত ‘উদ্বোধন প্রেস’ থেকে স্বামীজীর বহু-আকাঙ্ক্ষিত ও প্রত্যাশিত ‘উদ্বোধন’ পত্রিকা স্বামী ত্রিগুণাতীতানন্দের সম্পাদনায় আত্মপ্রকাশ করল।”





উদ্বোধন’-এর যাত্রা শুরু হয়েছিল আজ থেকে প্রায় ১২৫ বছর আগে। সে সময়ে প্রকাশিত অধিকাংশ পত্রিকায় লেখকদের নাম থাকত না। এদিক থেকে ‘উদ্বোধন’ একটি ব্যতিক্রম। কচিৎ দু’একটি রচনা ছাড়া সব ক্ষেত্রেই লেখকের নাম মুদ্রিত হয়েছে। পত্রিকার প্রথম সংখ্যাটি অনেক কষ্ট করে উদ্ধার করা হয়েছে। এতে প্রকাশিত হয়েছিল ছ’টি রচনা – ‘প্রস্তাবনা’ (স্বামী বিবেকানন্দ), ‘রাজযোগ’ (স্বামী বিবেকানন্দ), ‘পরমহংসদেবের উপদেশ’(১৭ পর্ব)(স্বামী ব্রহ্মানন্দ), ‘শ্রীশ্রীমুকুন্দমালাস্তোত্রম’ (৪ পর্ব)(স্বামী রামকৃষ্ণানন্দেনানুবাদিতম), ‘সারদানন্দ স্বামীর বক্তৃতার সারাংশ’ (২ পর্ব)(রামকৃষ্ণমিশন সভা, রবিবার ২৮শে আগস্ট), ‘বিবিধ’ (স্বামী শুদ্ধানন্দ)। প্রথম সংখ্যায় সাধারণ রীতি অনুসারে কোনও ‘সম্পাদকীয়’ নিবন্ধ ছিল না, স্বামী বিবেকানন্দের ‘প্রস্তাবনা’ অংশটিই সে অভাব পূরণ করেছে।

সন্ন্যাসী সঙ্ঘের সভ্যরা ছাড়াও আর যারা ‘উদ্বোধনে’ লিখেছেন তাদের মধ্যে আছেন রবীন্দ্রনাথ, গিরিশ চন্দ্র ঘোষ, শ্রীঅরবিন্দ, হরপ্রসাদ শাস্ত্রী, সুনীতিকুমার চট্টোপাধ্যায়, বিবেকানন্দ মুখোপাধ্যায়, নজরুল ইসলাম, ইন্দিরা গান্ধী, বিনয়কুমার সরকার, রমেশচন্দ্র মজুমদার, জীবনানন্দ দাস, সুরেশচন্দ্র মজুমদার, তারাশঙ্কর বন্দোপাধ্যায়, সজনীকান্ত দাস, বনফুল, কালিদাস রায়, আশাপূর্ণা দেবী, নরেন্দ্র দেব, কুমুদরঞ্জন মল্লিক, রমা চৌধুরী, দিলীপকুমার রায়, নন্দলাল বসু, শঙ্করীপ্রসাদ বসু, জ্যোতির্ময়ী দেবী, আশুতোষ দাস, শেখ সদরউদ্দীন, রেজাউল করীম, এস.ওয়াজেদ আলি, শক্তি চট্টোপাধ্যায়, প্রসিত রায়চৌধুরী, রমারঞ্জন মুখোপাধ্যায়, সান্ত্বনা দাশগুপ্ত, চারুচন্দ্র বসু, ব্রহ্মবান্ধব উপাধ্যায় , প্রভাবতী দেবী সরস্বতী, খগেন্দ্রনাথ মিত্র, আশাপূর্ণা দেবী প্রমুখ একাল ও সেকালের নাম করা লেখকেরা। একমাত্র রাজনীতি বাদ দিয়ে সব ধরণের লেখাই ‘উদ্বোধনে’ প্রকাশিত হত। একদা স্বাধীনতা সংগ্রামে অংশ গ্রহণকারী তরুণ ও যুবকেরা স্বামীজীর তেজদৃপ্ত বাণী ও ত্যাগের আদর্শে অনুপ্রাণিত হয়েছিলেন; ‘উদ্বোধন’-এর বিভিন্ন লেখা তাদের প্রেরণার অন্যতম উৎস ছিল। তদানীন্তন গোয়েন্দা বিভাগের স্পেশাল সুপারিন্টেনডেন্ট চার্লস টেগার্ট বৃটিশ সরকারকে ‘উদ্বোধন’ বাজেয়াপ্ত করার পরামর্শ দিয়েছিলেন বলে শোনা যায়। বহু স্বাধীনতা সংগ্রামী স্বামীজীর ভাষণ ও গীতা পড়ে উদ্বুদ্ধ হয়েছিলেন।

শ্রীম- রচিত ‘শ্রীশ্রীরামকৃষ্ণকথামৃত’ থেকে কিছু কিছু অংশ অর্থাৎ আংশিক ভাবে এই প্রত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছিল । পত্রিকার একটি নিয়মিত বিভাগ ছিল ‘সমালোচনা’, এতে সে সময়ে নতুন প্রকাশিত বইয়ের আলোচনা থাকত। ‘সংবাদ ও মন্তব্য’ বিভাগে ছিল বিবিধ সংবাদ ও প্রাসঙ্গিক বিষয়ের আলোচনা। লক্ষণীয় যে ‘উদ্বোধনে’ শুধুমাত্র যে ধর্ম বিষয়ক প্রবন্ধই স্থান পেত তা কিন্তু নয়। কবিতা, ভ্রমণ কাহিনী, সমাজনীতি ইত্যাদি বিষয়ক রচনাও মুদ্রিত হয়েছে। বহু রচনা, বিশেষ করে বিবেকানন্দ রচিত, পরে পুস্তকাকারে প্রকাশিত হয়েছে।


স্বামীজীর শেষ ইচ্ছা ছিল ‘উদ্বোধন’ যেন নিছক ধর্মীয় পত্রিকা বা নিছক সাহিত্য-পত্রিকা না হয়। তিনি চেয়েছিলেন পত্রিকা-জগতে ‘উদ্বোধন’ বিভিন্ন দিকের পথপ্রদর্শক হবে, সাহিত্যের আঙিনায় এক বিশিষ্ট স্থান পাবে, বাঙলা ভাষার উন্নতি সাধন করবে, আবার ধর্মের ক্ষেত্রেও নতুন মাত্রা যোগ করবে। ‘উদ্বোধন’-এ কেবলমাত্র গঠনমূলক ভাবের প্রবন্ধ প্রকাশিত হবে, কোন নেতিবাচক লেখা ‘উদ্বোধন’-এ প্রকাশিত হবে না। স্বামীজী বলেছিলেন যে, একমাত্র গঠনমূলক ভাবই জনসাধারণকে তুলতে পারে।”  

স্বামীজীর ইচ্ছায় ও নির্দ্দেশে ‘উদ্বোধন’ কেবলমাত্র এক ধর্মীয় পত্রিকার গন্ডিতেই সীমাবদ্ধ থাকে নি – ধর্ম, সাহিত্য, ইতিহাস, লোকসংস্কৃতি, বিজ্ঞান, সমাজবিজ্ঞান, ভ্রমণ ও স্মৃতিকথা প্রভৃতি বিভিন্ন বিষয়ে সুখপাঠ্য অথচ সুগভীর রচনা প্রকাশ করে একটি পূর্ণাঙ্গ পারিবারিক পত্রিকারূপে ‘উদ্বোধন’ আজ সকলের কাছে সমাদৃত।”