Tuesday, 14 September 2021

মহানাদ ব্রহ্মময়ী মন্দির

 


卐 মহানাদ  ব্রহ্মময়ী  কালী  মন্দির  卐


মন্দিরটি মহানাদ কালীবাড়ী নামে পরিচিত।  আবার অনেকেই একে ব্রহ্মময়ী কালীবাড়ী নামে ডাকে। মা এখানে ব্রহ্মময়ী নামে পরিচিত।  মন্দিরটিতে ন'টি চূড়া আছে। তাই একে নবরত্ন মন্দিরও বলে। মহানাদ গ্রামটি হল হুগলী জেলার  চুচূড়া সাবডিভিশনের পোলবা-দাদপুর ব্লকে। হাওড়া-বর্ধমান মেন লাইনের পান্ডুয়া স্টেশন থেকে এর দূরত্ব  মাত্র সাত কিলোমিটার।  আর চুচূড়া থেকে প্রায় ১৯ কিমি। 



তেত্রিশ কোটি দেবতার  দেশ এই ভারতবর্ষ।  প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে মোরা এক এক অপূর্ব পরিবেশে এই  সব দেবতাদের অবস্থান। আর আমরা সাধারণ মানুষ , ধর্ম শাস্ত্র  অনুসরন করে,  পুন্য    লাভের আশায় ঘুরে বেড়ায় এইসব তীর্থস্থানে। পশ্চিমবঙ্গেও অবস্থান করছে এরকম নানান পীঠস্থান ও আদিমন্দির। হুগলীর  মহানাদ মন্দির এদের মধ্যে একটি। ১৮২২ সালে গভীর জঙ্গল পরিষ্কার করে এই মন্দিরের ভিত খোরা শুরু হয়। ভিত খোরার সময় কুশান সভ্যতার কিছু নিদর্শন পাওয়া যায়। কিছু মুদ্রা পাওয়া যায় যেগুলি কুশান ও গুপ্ত যুগের।  আর টেরাকোটা কাজের যে নিদর্শন পাওয়া যায় সেগুলি বেশিরভাগ গুপ্ত যুগের বলে ঐতিহাসিকরা চিহ্নিত করেন। মন্দির শেষ হতে সময় লাগে ৮ বছর। ১৮৩০ সলে মন্দিরের কাজ শেষ হয়। ৮৫ ফুট উচু তিন তলা এই মন্দির।  



জমিদার কৃষ্ণ চন্দ্র নিয়োগী কাঠ ও চিনির বড় ব্যাবসায়ী ছিলেন।  তিনি বাড়িতেই জাঁকজমক করে দূর্গা, লক্ষ্মী ও জগদ্ধাত্রী করতেন। পূজো শেষ হতেই বিগ্রহের বিসর্জন হয়ে যেত। তাই নিত্য প্রতিমা দর্শনের কোনও উপায় ছিল না। এই সব ভাবনা থেকেই জমিদার দক্ষিণা কালীর প্রতিষ্ঠার সিদ্ধান্ত নেন। আবার কেউ কেউ বলেন  তিনি মায়ের স্বপ্নাদেশ পেয়েছিলেন বলে মন্দির প্রতিষ্ঠা করতে চান। তখনি মহানাদ দক্ষিণ পাড়ার দু বিঘে জমির  জঙ্গল পরিষ্কার করতে লোকজন লাগান। মন্দিরের কাজ ১৮২২ সালে আরম্ভ হয়ে ১৮৩০ সালে শেষ হলে ৮ই মাঘ কৃষ্ণা চতুর্দশীতে রটন্তী কালী পুজোর দিন  পঞ্চমুন্ডি আসনের উপর তন্ত্র মতে দক্ষিণা কালী প্রতিষ্ঠা করেন।  তারপর থেকে একই ভাবে মায়ের পূজো হয়ে আসছে। কষ্টি পাথরের তৈরী এই মূর্তি। শোনা যায় যে মূর্তিকার এই মূর্তি তৈরী করেন, পরবর্তীকালে তারই হাতে তৈরী হয় দক্ষিণেশ্বরের ভবতারিণীর মূর্তি। এও শোনা যায় পারিবারিক পরিচয়ের সূত্রে মন্দির প্রতিষ্ঠার কয়েক বছর পরে জমিদার বাড়িতে আসেন রানী রাসমণি। মন্দিরের গঠনশৈলী ও দক্ষিণা কালীর মূর্তি দেখে তিনি মুগ্ধ হন। তার কিছুদিন পর তাঁর লোকজনদের এনে মন্দিরের উচ্চতা, প্রতিমার খুটিনাটি লিখে নিয়ে যান।  রানী শেষে মহানাদ কালী বাড়ির আদলেই দক্ষিণেশ্বরের ভবতারিণীর মন্দির তৈরিতে উদ্যোগী হন। মহানাদ কালীবাড়ীর বর্তমান বংশধর শ্রী স্বপন কুমার নিয়োগী। তাঁর কাছে এ বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে তিনি বললেন " রানী রাসমণি মহানাদ কালী বাড়িতে এসেছিলেন বলে পূর্ব পুরুষদের মুখে শুনেছি। কিন্ত তার কোনও প্রমাণ আমাদের কাছে নেই।"



মায়ের আসনের পাশাপাশি মাকে শয়ন দেওয়ান জন্য  সেগুন কাঠের একটি খাট আছে। নিয়োগী মশাই তাঁর ব্যবসার কাঠ দিয়ে এই  খাট বানিয়েছিলেন। এই খাটের বয়স এখন ১৯০ বছর।মন্দির প্রতিষ্ঠার সময় নিয়ে আসা হয়েছিল  তান্ত্রিকদের। সেই থেকে  এখনো এখানে তান্ত্রিক মতে পূজো হয়। আলাদা আলাদা দিনে আলাদা রকম ভোগ ও হোম করে পূজো করেন। প্রচুর মানুষের ভীর হয় রোজদিন।  এছাড়াও  বিশেষ বিশেষ আমাবস্যায় বিশেষ হোম যঙ্গোর আয়োজন করা হয় নিয়ম মেনে। মায়ের মূর্তির দু দিকে শিবের মূর্তি রয়েছে। আগে শিবের পূজো হয় এবং পরে মায়ের পূজো হয়। মায়ের কাছে পুজো দিতে হলে ধূপ, মোমবাতি, ফলমূল বা মিষ্টি সব কিছুই নিজেকে নিয়ে আসতে হয়। কেননা এখানে কোনো দোকান নেই। কালীপুজোর দিন কয়েক হাজার মানুষের সমাগম হয়। আবার শিবরাত্রীতে প্রতি বছর এখানে বিরাট মেলা বসে। তাতেও  হাওড়া, হুগলি, বর্ধমান  ও দুই ২৪  পরগনা থেকে কাতারে কাতারে মানুষ ভিড় জমান।  মন্দির চালানোর জন্য সেই সময়ই নিয়োগী বংশের লোকদের নিয়ে জমিদার কৃষ্ণ চন্দ্র একটি বোর্ড গঠন করেছিলেন।  তাদের সপ্তম পুরুষ শ্রী স্বপন কুমার নিয়োগী বর্তমানে মন্দির পরিচালনার দায়িত্ব বহন করছেন।  জমিদার মশাই-এর আদেশ মেনে এখনও বংশের মেয়েদের বিয়ে হয়ে গেলে মন্দির পরিচালনা থেকে বঞ্চিত হন। মন্দিরের পূজো পরিচালনার জন্য বর্তমানে সতরো জন সেবাইত আছে।কালী পুজোর আগে এখানে সাজো সাজো রব দেখা যায়। প্রচুর ভক্তের সমাগমে দীপাবলীর অমাবস্যা তিথিতে মা পূজিত হন মহা সমারোহে। 


পর্যটনের তালিকায় এখন এসেছে এই মহানাদ মন্দির।  মন্দিরের ভক্তরা ও সেবাইতরা সরকারের পর্যটন দপ্তরের কাছে এই মন্দির নতুন রূপে সংস্কার করবার আবেদন জানান।  সেই মত  সরকারের পর্যটন দপ্তরের পক্ষ থেকে মহানাদ মন্দির পরিদর্শন করেন এবং মন্দিরটিকে নতুন করে সংস্কার করবার ইচ্ছা প্রকাশ করা হয়। সরকারের পক্ষ থেকে এর সৌন্দর্যায়নের কাজ চলছে। এখন রাতে মন্দিরের সব আলো জ্বলে উঠলে মন্দিরের রূপ অন্য রকম হয়।


কলকাতা থেকে মন্দিরের দূরত্ব প্রায় ৬৪ কিমি মত। গাড়ী নিয়ে যেতে চইলে জি টি রোড বা দিল্লী রোড ধরে সহজেই চলে আসতে পারেন।  এছাড়া রেলে পান্ডুয়া বা চুচূড়া বা ব্যান্ডেল ষ্টেশনে নেমে বাস বা অটো বা টোটোতে করে মন্দিরে পৌচ্ছাতে পারেন।  এটুকু দৃঢ়ভাবে বলছি যে একবার মন্দিরটি দর্শন করতে এলে বার বার ছুটে আসতে হবে এই জায়গায়।একবার এসেই দেখুন যে এখনকার সবুজ ঠান্ডা কোলাহলহীন পরিবেশ  আপনার  মনকে কেমন শান্ত করে দেয় !!!



2 comments:

  1. Comment passed by Mr Ranen Chakraborty :::::::::

    Khub bhalo laglo, jantam na ei mondir somporke

    ReplyDelete
  2. কমেন্টে লিখেছেন শ্রীমতী সন্ধ্যা বোস~~~~

    লেখাটি পড়ে খুব ভালো লাগলো। ছো বি গুলো দারুন।

    ReplyDelete