Sunday, 6 July 2025

গুরু ও গুরুপূর্নিমা

 


আষাঢ় মাসের পূর্ণিমা তিথিকে গুরু পূর্ণিমা বলে চিহ্নিত করা হয়। এদিন মহর্ষি বেদ ব্যাসের জন্মবার্ষিকীর দিন হিসেবেও পরিচিত। প্রাচীন ভারতের হিন্দু ঐতিহ্যে মহর্ষি বেদব্যাসের ভূমিকা অনস্বীকার্য। এদিন বেদব্যাসকে শ্রদ্ধা ও সম্মান জানানোর জন্যই গুরু পূর্ণিমাকে এতো তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে পালন করা হয়।হিন্দু বিশ্বাস মতে, এই তিথিতে মুণি পরাশর ও মাতা সত্যবতীর ঘরে মহাভারতের রচয়িতা মহর্ষি বেদব্যাস জন্মগ্রহণ করেছিলেন। আর এই দিনটিকে বিশেষ মর্যাদা দিতেই ব্যাস পূর্ণিমাও বলা হয়।

হিন্দু পুরাণ অনুযায়ী, মহাদেব হলেন আদি গুরু। তাঁর প্রথম শিষ্য ছিলেন সপ্তর্ষির সাত ঋষি- অত্রি, বশিষ্ঠ, পুলহ, অঙ্গীরা, পুলস্থ্য, মরীচি, কেতু। আদিযোগী শিব এই তিথিতে আদিগুরু রুপে রূপান্তরিত হন। তিনিই এই সাতঋষিকে মহাজ্ঞান প্রদান করেন । তাই এই তিথি হল গুরুপূর্ণিমা। শুধু হিন্দু ধর্মেই গুরুপূর্ণিমার মাহাত্ম্য  রয়েছে তা নয়, বৌদ্ধ ধর্মেও গুরুপূর্ণিমার গুরুত্ব রয়েছে। জানা যায়, বোধিজ্ঞান লাভের পরে আষাঢ় মাসের পূর্ণিমায় সারনাথে প্রথম উপদেশ দেন গৌতম বুদ্ধ। আর সেই সময় থেকেই গুরুর স্থানে বিরাজ করছেন বুদ্ধ। ভারতের অনেক জায়গায় গুরু পূর্ণিমার দিনে মহাঋষি বেদব্যাসের জন্মতিথি হিসেবে পালন করা হয়। ঋষি পরাশর ও মত্স্যগন্ধা সত্বতীর সন্তান ছিলেন বেদব্যাস। পরবর্তীকালে  তিনিই মহাঋষিতে পরিণত হন। তিনি চতুর্বেদের সম্পাদনা ও পরিমার্জনা করেন। ১৮টি পুরাণ ছাড়াও রচনা করেন মহাভারত ও শ্রীমদ্ভগবত।

ভারত হল ঋষি-মুনিদের দেশ, যেখানে তাঁদের ঈশ্বরতুল্য বলে মনে করা হয়। বিশ্বাস করা হয় যে, ভক্তদের প্রতি ভগবান রুষ্ট হলে গুরুই রক্ষার পথ দেখাতে পারেন। প্রাচীনকাল থেকেই এই দেশে গুরুদের সম্মানজনক স্থান দেওয়া হয়েছে। গুরুর দেখানো পথে চললে, কোনও ব্যক্তি শান্তি, আনন্দ ও মোক্ষ প্রাপ্ত করতে পারেন। তাই গুরুকে শ্রদ্ধা জানাতে বৈদিক যুগ থেকেই গুরু পূর্ণিমা পালিত হয়ে আসছে। ধর্মীয় বিশ্বাস অনুযায়ী, এই পূর্ণিমায় গুরুর পূজার্চনা করলে অক্ষয় আশীর্বাদ মেলে।

হিন্দু ও বৌদ্ধদের পাশাপাশি জৈনদের কাছেও গুরুত্বপূর্ণ। ২৪ তম তীর্থঙ্কর মহাবীর প্রথম ও প্রদান শিষ্য হিসেবে গৌতম স্বামীকে বেছে নেন। শিক্ষা ও নির্দেশনার প্রকাশকে শ্রদ্ধা ও সম্মান জানাতে  গুরু পূর্ণিমা পালন করা হয়।

গুরু (সংস্কৃত: गुरु) হলেন নির্দিষ্ট জ্ঞান বা ক্ষেত্রের জন্য "পরামর্শদাতা, প্রদর্শক, বিশেষজ্ঞ বা শিক্ষক"। সর্ব-ভারতীয় ঐতিহ্যে, গুরু শিক্ষকের চেয়েও বেশি শ্রদ্ধেয়: তিনি শিষ্য বা ছাত্রের "শ্রদ্ধাশীল ব্যক্তিত্ব, পরামর্শদাতা, জীবনের আদর্শ, অনুপ্রেরণার উৎস, এবং আধ্যাত্মিক বিবর্তনে সাহায্যকারী"।


*শুভ গুরু পূর্ণিমার আদি কথা*


পরাশর মুনি এবং সত্যবতীর পুত্র যমুনা নদীর এক দ্বীপে জন্মগ্রহণ করলেন। দ্বীপে জন্ম, তাই সেই পুত্র দ্বৈপায়ন নামে পরিচিত হলেন।

তাঁর গায়ের রং কালো। তাই তাঁর পুরো নাম হলো কৃষ্ণ দ্বৈপায়ন।

কৃষ্ণ দ্বৈপায়ন তাঁর মার কাছ থেকে তপস্যা যাত্রার অনুমতি নিলেন।

বদরিকাশ্রমে তিনি কঠোর তপস্যায় নিমগ্ন হলেন। তপস্যা বলে তিনি মহর্ষি বৈশিষ্ট্য লাভ করলেন। বদরিকাশ্রমে তপস্যার কারণে তিনি বাদরায়ণ নামেও পরিচিত হন।

মহর্ষি কৃষ্ণ দ্বৈপায়ন মহাসমুদ্র সমান অসীম বেদকে চার ভাগে ভাগ করে সুশৃংখলভাবে লিপিবদ্ধ করলেন।

তাই তিনি কৃষ্ণ দ্বৈপায়ন ব্যাস বা বেদ ব্যাস নামে পরিচিত হলেন। 'ব্যাস' শব্দের অর্থ সংকলক বা ব্যবস্থাকারী। সমগ্র বেদকে চারভাগে বিভক্ত করে লিপিবদ্ধ করার জন্য তিনি এই নামে পরিচিত হলেন।

তিনি মহাভারত, অষ্টাদশ পুরাণ, ব্রহ্মসূত্র রচনা করলেন।

মহর্ষি বেদব্যাসের জন্মদিন সারা ভারতবর্ষে গুরু পূর্ণিমা হিসেবে পালিত হয়।

গুরু শব্দটা 'গু' এবং 'রু'-  এই দুটো শব্দাংশের যোগে তৈরি হয়। 'গু' মানে হল যে অজ্ঞানের অন্ধকারে জগৎ নিমজ্জিত থাকে। আর 'রু' মানে হল সেই অন্ধকার থেকে বের হওয়ার জন্য যে আলোকের প্রয়োজন হয়। সুতরাং যিনি অজ্ঞানের অন্ধকার  থেকে মহান জ্ঞানের মাধ্যমে মুক্তির আলো দেখান তিনি হলেন গুরু।

বেদ ব্যাস তাঁর সব রচনার মাধ্যমে যা বলেছেন তা সমগ্র জগতকে জ্ঞানের আলো দেখিয়েছে। এবং সেটা চিরকালীন- আজকের দিনেও সমান ভাবে প্রযোজ্য।

এর কিছু উদাহরণ হলো-

বৃহৎ মানে জগতের মঙ্গলের জন্য যে কাজই করা হোক না কেন সেটা পুণ্য।

অন্যের প্রতি অত্যাচার,নিপীড়ন এগুলো হল পাপ।

কাউকে ভালো কর্মফল থেকে বঞ্চিত করার অধিকার স্বয়ং দেবতারও নেই।আবার কেউ যত শক্তিশালী বা জ্ঞানী হোক না কেন খারাপ কর্মের ফল তাকে ভোগ করতেই হবে।

সমগ্র জগতকে অন্ধকার থেকে জ্ঞানের আলোকে নিয়ে আসার জন্য মহর্ষি কৃষ্ণ দ্বৈপায়ন ব্যাস বা বেদব্যাস হলেন আদি গুরু এবং তার জন্মদিন হল ভারতবর্ষে গুরু পূর্ণিমা।

"অখণ্ড মণ্ডলা কারং ব্যাপ্তং যেন চরাচরম।

তদপদং দর্শিতং যেন তস্মৈ শ্রী গুরুবে নমঃ।।

অজ্ঞান তিমিরান্ধস্য জ্ঞানাঞ্জন শলাকয়া।

চক্ষুরুন্মিলিত যেন তস্মৈ শ্রী গুরুবে নমঃ।।

গুরু ব্রহ্মা গুরু বিষ্ণু গুরুদেব মহেশ্বর।

গুরু রেব পরং ব্রহ্ম তস্মৈ শ্রী গুরুবে নমঃ।।"

গুরু কে?

— যিনি অন্ধকার থেকে আলোয় আনয়ন করেন, তিনিই গুরু। 

গুরুর কৃপায় জন্ম-জন্মান্তরের অন্ধকার বা অজ্ঞান দূর হয়ে হৃদয়কন্দর জ্ঞানের আলোয় আলোকিত হয়।

প্রাচীন ঋষিরা এই ভাবেই আধ্যাত্মিক জ্ঞান লাভ করেছিলেন। যিনি এই ভাবে আত্মজ্ঞানের আলোক সম্পাত করতে পারেন তিনি কখনোই সাধারণ জীব হ'তে পারেন না, তিনি শিব। তাই এই জ্ঞানও মনুষ্যরচিত নয়, তা 'অপৌরুষেয়'।

এই জ্ঞানই 'আত্মতত্ত্ব', এই জ্ঞানই প্রাচীন আর্য-ভারতের সাংস্কৃতিক বৈশিষ্ট্য।


                  🙏 **শ্রী গুরু প্রণাম**🙏

ওম অজ্ঞান-তিমিরন্ধস্য জ্ঞানানঞ্জনা-শলাকায়

চক্ষুর অমিলিতম্ য়েনা তসমই শ্রী-গুরাভে নমঃ

আমি আমার আধ্যাত্মিক গুরুকে আমার শ্রদ্ধার সাথে প্রণাম জানাই, যিনি আমার চোখ খুলে দিয়েছেন, যা অজ্ঞতার অন্ধকারে অন্ধ হয়ে গিয়েছিল, জ্ঞানের মশালের আলোয আলোকিত হউক। 

🪷 *গুরু বন্দনা*🪷


*ভব-সাগর-তারণ-কারণ হে, রবি-নন্দন-বন্ধন-খণ্ডন হে,*

 *শরণাগত কিঙ্কর ভীত মনে, গুরুদেব দয়া কর দীনজনে।।*

হৃদিকন্দর-তামস-ভাস্কর হে, তুমি বিষ্ণু প্রজাপতি শঙ্কর হে, 

পরব্রহ্ম পরাৎপর বেদ ভণে, গুরুদেব দয়া কর দীনজনে।।

মন-বারণ-শাসন-অঙ্কুশ হে, নরত্রাণ তরে হরি চাক্ষুষ হে, 

গুণগান-পরায়ণ দেবগণে, গুরুদেব দয়া কর দীনজনে।।

কুলকুণ্ডলিনী-ঘুম-ভঞ্জক হে, হৃদি-গ্রন্থি-বিদারণ-কারক হে, 

মম মানস চঞ্চল রাত্রদিনে, গুরুদেব দয়া কর দীনজনে।।


রিপু-সূদন-মঙ্গল-নায়ক হে, সুখ-শান্তি-বরাভয়-দায়ক হে,

 ত্রয়তাপ হরে তব নাম গুণে, গুরুদেব দয়া কর দীনজনে।।


অভিমান-প্রভাব-বিমর্দ্দক হে, গতিহীন জনে তুমি রক্ষক হে,

 চিত-শঙ্কিত-বঞ্চিত-ভক্তিধনে, গুরুদেব দয়া কর দীনজনে।।


তব নাম সদা শুভ-সাধক হে, পতিতাধম-মানব-পাবক হে, 

মহিমা তব গোচর শুদ্ধ মনে, গুরুদেব দয়া কর দীনজনে।।


জয় সদ্‌গুরু ঈশ্বর-প্রাপক হে, ভব-রোগ-বিকার-বিনাশক হে, 

মন যেন রহে তব শ্রীচরণে, গুরুদেব দয়া কর দীনজনে।।


রচনা - দেবেন্দ্রনাথ মজুমদার 

➖➖➖➖♠︎♠︎♠︎♠︎■■■■☆☆☆☆♥︎♥︎♥︎♥︎¤¿


গুরু কেমন হবেন ???

এ বিষয়ে  স্বামীজি শিক্ষা দেন :

*"...গুরুর মন এরূপ প্রবল আধ্যাত্মিক স্পন্দনবিশিষ্ট হওয়া চাই যে, তাহা যেন সমবেদনাবশে শিষ্যে সঞ্চারিত হইয়া যায়।* 

*গুরুর বাস্তবিক কার্যই এই : কিছু সঞ্চার করা, কেবল শিষ্যের বুদ্ধিশক্তি বা অন্য কোন শক্তি উত্তেজিত করিয়া দেওয়া নয়।* 

*বেশ স্পষ্ট বুঝিতে পারা যায়, গুরু হইতে শিষ্যে যথার্থই একটি শক্তি আসিতেছে।..."* 

ভগবান শঙ্করই আদিগুরু। আজকের পবিত্র তিথিতে তিনি তাঁর দক্ষিণামূর্তিতে পরম আধ্যাত্মিক সনাতন জ্ঞানভান্ডার উন্মুক্ত করেন। 

তাই তাঁর স্মরণেই আজ গুরুপূর্ণিমা।


এই মূর্তিতে দেখা যাচ্ছে, ভগবান রুদ্র পদদলিত করেছেন অজ্ঞানকে এবং চারজন ঋষি লাভ করছেন পরম সত্য সনাতন জ্ঞান। এই শাশ্বত জ্ঞানই ভারতীয় আধ্যাত্মিক দর্শন, আমাদের জাতীয় পরম্পরা।

- সেই রুদ্র আমাদেরকে সনাতন জ্ঞান প্রদান করুন।

সেই আদিগুরু, যাঁর স্মরণে এই গুরুপূর্ণিমা, দক্ষিণামূর্তিধারী সেই শঙ্কর মহেশ্বর শিবের প্রতি আদি শঙ্করাচার্য স্তব করে সকলে।

*_গুরু প্রসঙ্গে ভগবান শ্রীরামকৃষ্ণের শিক্ষা, কিছু উদ্ধৃতি :_*

🌼🌼🌼

প্রতিবেশী -- 'গুরুর উপদেশ বললেন। গুরু কেমন করে পাব?"

শ্রীরামকৃষ্ণ -- *"যে-সে লোক গুরু হতে পারে না। বাহাদুরী কাঠ নিজেও ভেসে চলে যায়, অনেক জীবজন্তুও চড়ে যেতে পারে। হাবাতে কাঠের উপর চড়লে, কাঠও ডুবে যায়, যে চড়ে সেও ডুবে যায়। তাই ঈশ্বর যুগে যুগে লোকশিক্ষার জন্য নিজে গুরুরূপে অবতীর্ণ হন। সচ্চিদানন্দই গুরু।*


🌼🌼🌼

 

শ্রীরামকৃষ্ণ -- *"মানুষের কী সাধ্য অপরকে সংসারবন্ধন থেকে মুক্ত করে?* 

*যাঁর এই ভুবনমোহিনী মায়া, তিনিই সেই মায়া থেকে মুক্ত করতে পারেন। সচ্চিদানন্দগুরু বই আর গতি নাই।*

*যারা ঈশ্বরলাভ করে নাই, তাঁর আদেশ পায় নাই, যারা ঈশ্বরের শক্তিতে শক্তিমান হয় নাই, তাদের কী সাধ্য জীবের ভববন্ধন মোচন করে?*

*আমি একদিন পঞ্চবটীর কাছ দিয়ে ঝাউতলায় বাহ্যে যাচ্ছিলাম। শুনতে পেলুম যে, একটা কোলা ব্যাঙ খুব ডাকছে। বোধ হল সাপে ধরেছে। অনেকক্ষণ পরে যখন ফিরে আসছি, তখনও দেখি, ব্যাঙটা খুব ডাকছে।* 

*একবার উঁকি মেরে দেখলুম কী হয়েছে। দেখি, একটা ঢোঁড়ায় ব্যাঙটাকে ধরেছে -- ছাড়তেও পাচ্ছে না -- গিলতেও পাচ্ছে না -- ব্যাঙটার যন্ত্রণা ঘুচছে না।*

*তখন ভাবলাম, ওরে! যদি জাতসাপে ধরত, তিন ডাকের পর ব্যাঙটা চুপ হয়ে যেত। এ-একটা ঢোঁড়ায় ধরেছে কি না, তাই সাপটারও যন্ত্রণা, ব্যাঙটারও যন্ত্রণা!*

*যদি সদ্‌গুরু হয়, জীবের অহংকার তিন ডাকে ঘুচে। গুরু কাঁচা হলে গুরুরও যন্ত্রণা, শিষ্যেরও যন্ত্রণা! শিষ্যেরও অহংকার আর ঘুচে না, সংসারবন্ধন আর কাটে না।* 

*কাঁচা গুরুর পাল্লায় পড়লে শিষ্য মুক্ত হয় না।”*


🌼🌼🌼


শ্রীরামকৃষ্ণ -- *"ব্যাকুল হয়ে তাঁকে ডাকতে হয়। গুরুর মুখে শুনে নিতে হয় -- কী করলে তাঁকে পাওয়া যায়।*

*গুরু নিজে পূর্ণজ্ঞানী হলে তবে পথ দেখিয়ে দিতে পারে।*

*পূর্ণজ্ঞান হলে বাসনা যায়, পাঁচ বছরের বালকের স্বভাব হয়। দত্তাত্রেয় আর জড়ভরত -- এদের বালকের স্বভাব হয়েছিল।”*

*"মানুষ গুরু হ'তে পারে না। ঈশ্বরের ইচ্ছাতেই সব হচ্ছে। মহাপাতক, অনেকদিনের পাতক, অনেকদিনের অজ্ঞান, তাঁর কৃপা হলে একক্ষণে পালিয়ে যায়।*

*হাজার বছরের অন্ধকার ঘরের ভিতর যদি হঠাৎ আলো আসে, তাহলে সেই হাজার বছরের অন্ধকার কি একটু একটু করে যায়, না একক্ষণে যায়? অবশ্য আলো দেখালেই সমস্ত অন্ধকার পালিয়ে যায়।*

*"যাদের একটু সিদ্ধাই থাকে তাদের প্রতিষ্ঠা, লোকমান্য এই সব হয়। অনেকের ইচ্ছা হয় গুরুগিরি করি -- পাঁচজনে গণে মানে -- শিষ্য-সেবক হয়; লোকে বলবে, গুরুচরণের ভাইয়ের আজকাল বেশ সময় -- কত লোক আসছে যাচ্ছে -- শিষ্য-সেবক অনেক হয়েছে -- ঘরে জিনিসপত্র থইথই করছে! -- কত জিনিস কত লোক এনে দিচ্ছে -- সে যদি মনে করে -- তার এমন শক্তি হয়েছে যে, কত লোককে খাওয়াতে পারে।*

*গুরুগিরি বেশ্যাগিরির মতো। -- ছার টাকা-কড়ি, লোকমান্য হওয়া, শরীরের সেবা, এই সবের জন্য আপনাকে বিক্রি করা। যে শরীর মন আত্মার দ্বারা ঈশ্বরকে লাভ করা যায়, সেই শরীর মন আত্মাকে সামান্য জিনিসের জন্য এরূপ করে রাখা ভাল নয়।”*

🌼🌼🌼

*"গুরুগিরি করা ভাল নয়। ঈশ্বরের আদেশ না পেলে আচার্য হওয়া যায় না। যে নিজে বলে, ‘আমি গুরু’ সে হীনবুদ্ধি। দাঁড়িপাল্লা দেখ নাই? হালকা দিকটা উঁচু হয়, যে ব্যক্তি নিজে উঁচু হয়, সে হালকা। সকলেই গুরু হতে যায়! -- শিষ্য পাওয়া যায় না!”*


_গুরু কে?_


*দীক্ষা প্রদান করেন একজন আধ্যাত্মিক শক্তিসম্পন্ন ব্যক্তি।* 

*একটি প্রদীপ থেকে আরেকটি প্রদীপ জ্বালানোর মতো একটি উন্নত আত্মা (গুরু) থেকে অপর এক অপেক্ষাকৃত অনুন্নত আত্মায় (শিষ্য) আধ্যাত্মিক শক্তির সঞ্চারই দীক্ষা।* 

*বিশেষ আধ্যাত্মিক ক্ষমতাশালী ব্যক্তি  দীক্ষা প্রদান করতে পারেন। কোনও প্রতিষ্ঠান কখনও  দীক্ষা দিতে পারে না। এমনকি যে কোনও সাধক কিন্তু গুরু হ'তে পারেন না।* 

*ভগবান শ্রীরামকৃষ্ণ দুইরকম কাঠের উপমা দিতেন :* *একরকম কাঠ হ'ল 'হাভাতে কাঠ'। এরা নিজেরা জলে ভাসতে পারে কিন্তু উপরে একটা পাখী এসে বসলে টুপ করে ডুবে যায়। অর্থাৎ এরা অপরের ভার নিতে অক্ষম।*  

*আবার আর একরকমের কাঠকে ঠাকুর বলতেন 'বাহাদুরী কাঠ'। এরা নিজেরাও জলে ভেসে থাকতে পারে আবার এদের উপরে হাতি এসে বসলেও ডোবে না।*

*সাধারণ আধ্যাত্মিক সাধক যেন এই 'হাভাতে কাঠ'। এঁরা নিজের নিজের সাধন পথে অগ্রসর হ'তে সক্ষম হ'লেও অন্যকে নিয়ে যেতে পারেন না।*

*আর 'বাহাদুরী কাঠ' হ'ল সেই বিশেষ শক্তিসম্পন্ন সাধক, যাঁরা অন্যের ভার বহন করতে সক্ষম। এঁরাই গুরু।*

*'গুরু' কোনও বিশেষ 'পদমর্যাদা' নয়। 'গুরু' একটি বিশেষ আধ্যাত্মিক শক্তিস্তর। তাই গুরুর যোগ্যতা কখনোই প্রাতিষ্ঠানিক পদমর্যাদা দ্বারা নির্ধারিত হ'তে পারে না।* *আবার কোনও সাধক কোনও শিষ্যের গুরু হওয়ার যোগ্য হ'লেও অন্য কারও ক্ষেত্রে হয়তো তিনি গুরু হবার যোগ্য নন এমনও হ'তে পারে।* 

*আধ্যাত্মিক  সাধকদের অনেকের জীবনকথায় পাওয়া যায় যে কোনও গুরুর কাছে দীক্ষা গ্রহণের ইচ্ছা প্রকাশ করলে তিনি হয়তো বলছেন যে, 'আমি তোমার গুরু নই,  তোমার গুরু অন্য কেউ।'*

*প্রকৃত দীক্ষার জন্য তাই গুরুকরণের আগে গুরুকে যাচাই করে নেওয়া উচিৎ।* *ভগবান শ্রীরামকৃষ্ণ বলতেন,*

*'সাধুকে দিনে দেখবি রাতে দেখবি।'* *দেখে-শুনে যাচাই করে তবে গ্রহণ করার কথা বলতেন তিনি।*

*এই 'দেখা শোনা'-টি ঠিক কেমন তার কিছুটা পরিচয় স্বামী বিবেকানন্দজীর জীবনীতেও পাওয়া যায়।*

*তিনি ঠাকুরকে গুরুরূপে গ্রহণের আগে যথাসাধ্য পরীক্ষা করেছিলেন।*

*তাই কাউকে গুরু রূপে গ্রহণের আগে তাঁর সঙ্গ করা উচিত,  তাঁকে নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করা উচিত। দেখতে হয় তাঁর 'মন-মুখ' এক কিনা। অর্থাৎ যে আদর্শের কথা তিনি মুখে বলছেন সেটা তাঁর জীবনের ছোট ছোট ঘটনাগুলিতেও প্রতিফলিত হচ্ছে কিনা।*

*দ্বিতীয়তঃ দেখতে হয় তিনি তত্ত্বের আক্ষরিক ব্যাখ্যার গভীরে মর্মার্থ গ্রহণে সমর্থ কিনা। স্বামীজি বলতেন, 'গুরু হবেন তত্ত্বসমূহের মর্মদর্শী।'*

*আবার উপরের দুটি শর্ত ঠিকঠাক থাকলেও তিনি আমার পক্ষে উপযুক্ত হবেন এমন নাও হতে পারে।*

*তাই তৃতীয়তঃ দেখতে হবে তিনি আমার অন্তর পড়তে পারছেন কিনা।*

*স্বামী বিবেকানন্দজিকে প্রশ্ন করা হয়েছিল, 'গুরু কাকে করতে পারা যায়?'*

*স্বামীজি উত্তর দিলেন, 'যিনি তোমার ভূত ভবিষ্যৎ বলে দিতে পারেন তিনিই গুরু।* *দেখনা, আমার গুরু (শ্রীরামকৃষ্ণ) আমার ভূত ভবিষ্যৎ বলে দিয়েছিলেন।*

*স্বামীজি একজনকে দীক্ষা দেবার কালে প্রশ্ন করছেন, 'কোন দেবতা তোর ভাল লাগে?*

*শিষ্য একটি উত্তর দিলে স্বামীজি বললেন,*

 *'তা নয়,  গুরু জানতে পারেন কার কী পথ।'*

*বলে স্বামীজি ওই শিষ্যের হস্তস্পর্শ করে গভীর ভাবে ধ্যানস্থ হলেন।* *তারপর ধ্যানোত্থিত হয়ে হাত ছেড়ে দিয়ে জিজ্ঞাসা করছেন, 'তুই কি কখনও ঘট-স্থাপন করে পুজো করেছিস?'*

*শিষ্যের তখন মনে পড়ল ছেলেবেলায় তিনি একবার ঘট-স্থাপন করে পূজা করেছিলেন। তিনি নিজেই বোধহয় ভুলে গেছিলেন সে কথা।*

অঁ*তখন স্বামীজি বললেন, 'এই দেবতার মন্ত্র তোর উপযুক্ত।'*

*বলে মহাবীজমন্ত্র শিষ্যের কানে উচ্চারণ করলেন।*

*আর শিষ্যটিও দেখলেন স্বামীজি ঠিকই বলেছেন৷ এই দেবতাই তাঁর আশৈশব প্রিয়।*

*এই হ'ল গুরুর ক্ষমতা। তিনি শিষ্যের অন্তর দেখতে পান, সেখানে দেখতে পান তার অতীত সংস্কাররাশি। আর সেই সংস্কার অনুযায়ী শিষ্যকে ভবিষ্যতের পথে পরিচালিত করেন।*

*সুতরাং যে গুরু শিষ্যকে চেনেন না, শিষ্যের অতীত, বর্তমান,  ভবিষ্যত কিছুই জানেন না; তিনি আর যাই হোন ওই শিষ্যের গুরু হ'তে পারেন না।*

*শিষ্য এগুলো দেখে নিতেই পারে। তার জন্য তাকে গুরুর সমান ক্ষমতাবিশিষ্ট হ'তে হয়না।*

*তার হৃদয়ই বলে দেয়, 'ইনিই আমার গুরু।'*

*আরও একটি সহজ পন্থা আছে সঠিক গুরু নির্বাচনের। সেটা হ'ল সম্পূর্ণরূপে ইষ্টের শরণাগত হয়ে ইষ্টের কাছেই সঠিক গুরুলাভের জন্য প্রার্থনা।*

*প্রার্থনা আন্তরিক হ'লে ও দীক্ষালাভের তৃষ্ণা প্রবল হ'লে ইষ্টই গুরু জুটিয়ে দেন, গুরুর মধ্যে দিয়ে তিনিই কৃপা করেন ;  কারণ সেই শরণাগত ভক্তের ভার স্বয়ং ভগবান বহন করেন।* *'যোগক্ষেমং বহাম্যহম্।'*



Thursday, 3 July 2025

নীরবতার ভাষা

 


নীরবতার ভাষা একটি গভীর এবং বহুমাত্রিক ধারনা। শুধুমাত্র "শব্দহীন" বলে বোঝালে হবে না  কেননা এ এক অনুভূতি, অভিজ্ঞতা এবং যোগাযোগের মাধ্যমে। এর প্রকাশ ..... একাকীত্বে, প্রত্যাখ্যান, প্রতিরোধে অথবা বলা যেতে পারে গভীর-অনুসন্ধানে। যার এক  নিজস্ব ধরন বা ছন্দ রয়েছে। সাধারণত এটা ভালো বা খারাপ দুইজনের জন্য ব্যবহার করা হয়। খুব ছোট কথায় বলা যেতে পারে নীরবতা ভাষা যোগাযোগের এক বিশেষ রূপ। তবে এ ভাষার কোনো লিপি নেই। কিন্ত যে কোনো... সে দুঃখের বা সুখের বিষয় হোক না কেন , তা আলোকিত করে প্রদর্শন করবার এক সুদক্ষ যন্ত্র। নীরবতার ভাষার প্রকৃষ্ট উদাহরণ হ'ল ' মায়া' যা শব্দ ছাড়া  কথা বলে। আর নীরবতা তখনই কথা বলে যখন ভাষা মনের অবস্থা প্রকাশ করতে পারে না। 



নীরবতার ভাষা অনুভূতির গভীরতম প্রকাশ। কোনো কথা বা শব্দ ছাড়া এটি অনেক কিছু প্রকাশ করতে পারে। কখনো এটি শান্তি বা তৃপ্তির প্রতীক হয়। কখনো আবার বেদনা, বিষন্নতা বা অপ্রকাশিত অনুভুতির ইঙ্গিত দেয়। নীরবতা কখনো এমন কিছু প্রকাশ করে, শব্দের  মাধ্যমে যা বলা সম্ভব নয়। তাই এটি শুধুমাত্র শব্দের অনুপস্থিত না, এটি একটি গভীর যোগাযোগের মাধ্যমে। এখানে শব্দ অপ্রয়োজনীয় হয়। তাই অনেক সময়ই দেখা যায় দুটি মানুষ একে অপরের প্রতি সহনাভুতি জানাতে "নীরব" থাকে। 


বলা হয়ে থাকে নীরবতা একটি শিল্প। এটা আমাদের শব্দ ছাড়াই কথা বলতে শেখায়। কখনো কখনো এ এক শক্তিশালী আর্তনাদ  বা  খুব জোড়ে  চিৎকারেরও  সমান হতে পরে। আবার নীরবতা শক্তির এক রূপ। চিন্তাশীল এবং জ্ঞানী ব্যক্তিরা সব সময় কম কথা বলে ।  কিন্ত এর শক্তি এমন,  দেশের যে কোন প্রান্ত থেকে জানা যায় তাদের ব্যক্তব্য। অতীতে আমাদের মুনি ঋষিরা সমাজ থেকে দূরে থাকতেন এবং  সময় ধরে নিরবে বনে প্রার্থনা ও ধ্যান করতেন। যার ফলে তাঁরা আত্মদর্শন বা সার্বজনীন গ্রহনযোগতার দর্শন, নীরবেই গড়ে তুলতে পারতেন। নীরবতা হ'ল ধৈর্যের , সহনশীলতার, তপস্যা, সত্যগ্রহের, ধ্যানের , প্রতিবাদের এক ভাষা। সেইজন্য গান্ধীজী মাঝে মাঝেই মৌন ব্রত পালন করতেন। কবিগুরু নীরবতার সমর্থনে বলেছেন..... এটাই হ'ল সবচেয়ে গভীর ভাষা, যা শব্দের চেয়েও স্পষ্ট করে হৃদয়ের কথা বলে। কাজী নজরুল নীরবতার ব্যাখ্যা এইভাবে করেছেন যে......... নীরবতা কখনো কখনো হ'ল সেই গান যা কেবল হৃদয়ের অন্তর্গত সুরে বাজে।


পশু-পাখিদের নীরবতার ভাষা ব্যাখ্যা করা হয় এভাবে------- অন্য পশু-পাখিদের সাথে যোগাযোগের জন্য তারা সচরাচর কোনো শব্দ ব্যবহার না করে। তারা অঙ্গ ভঙ্গি, শারীরিক ভাষা বা অন্যান্য সংকেত ব্যবহার করে এই যোগাযোগ স্থাপন করে। পশুরা একে অন্যের দিকে তাকিয়ে তাদের মনোভাব প্রকাশ করে। অনেক পশু তাদের শরীরের বিশেষ গ্রন্থি থেকে  গন্ধ জড়িয়ে তাদের উপস্থিতি প্রকাশ করে। একে অপরের সাথে খেলা ও আলিঙ্গন করে ঘনিষ্ঠতা স্থাপন করে। আবার কিছু বিপদ বা সতর্ক বার্তা, সেই অঞ্চলের পশুদের জানানোর জন্য বিশেষ শব্দ ব্যবহার করতে থাকে।      এছাড়া সাধারণ সংকেত হিসেবে আমরা দেখি___ লেজ নাড়ানো, শরীরের অবস্থান পরিবর্তন করা, লোম খাঁড়া করা বা কান ঝাকানো ইত্যাদি। এসবের সাহায্যই তারা নিজেদের মধ্যে ভাব আদান প্রদান করে আর একে অপরের সাথে সংযোগ স্থাপন করে। তবে দেখা গিয়েছে যে বেশিরভাগ মানুষ পশুদের নীরব ভাষা বুঝতে পারে। এর ফলে পশুদের সাথে মানুষের যোগাযোগ সহজেই স্থাপিত হয়। 


প্রকৃতির নীরবতার ভাষাতেও কোনো শব্দ নেই। এখানেও শব্দহীনতা...... সম্পূর্ণ অনুভূতি প্রকাশ। এক গভীর অর্থ খুঁজে পাওয়া যায় এই অনুভূতির মাধ্যমে। তাইতো আমরা বাতাসের প্রবাহ উপলব্ধি করে, গাছের পাতার নড়াচড়া বা শুকনো ঝড়া পাতার মুচমুচ শব্দ, সমুদ্রের গভীরে ঢেউ অথবা সীমাহীন নীল আকাশের দিকে, আবার কখনো সে আকাশে ছোটাছুটি করা মেঘের দলগুলি দেখে , বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন অনুভুতি করি। নীল উপরে বা কালো মেঘলা আকাশ আর নীচে সবুজ প্রকৃতি। মনে হয় এ বিধাতার সবচেয়ে সুন্দর রূপ। প্রকৃতির গভীরে তাকালে আমরা আরও কিছু ভাল মতন জানতে পারি। সবুজ প্রকৃতি আমাদের  মনে করিয়ে যে আমরা প্রকৃতির সন্তান।  বর্ষার পর প্রকৃতির সবুজ  তার নতুন প্রান ফিরে পায়  আর মনে হয় পৃথিবী স্নানের পর পরিস্কার হয়েছে। পাখির ডাকে মুখরিত প্রকৃতির এই আঙিনায় নতুন এক দিন শুরু করার সাথে জীবন পূর্ণতা উপলব্ধি করতে পারি। এই সব অনুভুতি সাহায্যই আমরা প্রকৃতির সাথে এক যোগসূত্র স্থাপন করি। আর্থাৎ প্রকৃতির সাথে আমাদের এক বন্ধন হয়। মনে আসে শান্তি ও স্থিরতা। যেগুলি কিনা দৈনন্দিন জীবনের চাপ থেকে আমাদের মুক্তি পেতে সাহায্য করে। এই সংযোগ প্রায় সময়ই প্রকৃতির চিরন্তন সুন্দরের প্রতি আমাদের কৌতুহল বাড়িয়ে তোলে। আর স্বাভাবিক ভাবেই প্রকৃতির প্রতি  আমাদের আকর্ষণ বৃদ্ধি পায়। তাই  বাইরের শব্দ থেকে আমাদের  পালিয়ে যেতে হবে বা শব্দকে শান্ত করে  প্রকৃতির  গানের সুর আমাদের কাছে আসতে দিতে হবে।  ধরিত্রি মাতাকে বাধাহীনভাবে তার নিজের গান গাইতে হবে। আর এই নীরবতার মধ্যে লুকিয়ে আছে সেই শক্তি যার সাহায্যে আমরা শুনতে পারবো সেই গান আর তার সাথে  নিজেদের  ভিতরের গুনাগুনানি স্বরের সাথে তাল মেলানোর এক কঠোর প্রচেষ্টা করে আনন্দের  স্বাদ  পাবো।



মনে রাখতে হবে একজন "নীরব " বলে সে নিষ্ক্রিয় হয়ে গিয়েছে ভাবাটা ঠিক নয়। কেননা ঝড়ের আগে এক ভয়ঙ্কর নিস্তব্ধতা ঝড়ের  পূর্বাভাস দিয়ে থাকে। বিক্ষোভে ভরা এই পৃথিবীতে , নীরবতা কেবল বিলাসিতা নয়। এরও এক বিরাট প্রয়োজন আছে। নীরব মুহুর্তগুলি আলিঙ্গন করলে, আরও ভালভাবে মনোযোগ দিয়ে বিশৃঙ্খলা নিরাময় করতে পারি বা বিশৃঙ্খলতার মাঝে ষ্পটতা খুজে পেতে পারি। শব্দে ভরা এই পৃথিবীতে , নীরবতা আমাদের মনোযোগকে তীক্ষ্ণ করে, মনের চাপ কমায়,  মানসিক ও শারীরিক সুস্থতা বৃদ্ধি করে ........ এগুলি সব প্রমানিত। প্রকৃতির নীরবতা আমাদের শেখায় কিভাবে শান্ত থাকতে হয়। পাখির গান থেমে গেলেও বাতাসের হাল্কা শব্দ শোনা যায়। এ শব্দেও এক শান্তি লুকিয়ে রয়েছে। বেশি কথা বললে সাধারণত মিথ্যা বলার সম্ভবনা থেকে যায়। কিন্ত নীরব থাকলে অপ্রত্যাশিতভাবে সত্যটা যেন ফুটে উঠে। এই নীরবতা গভীর চিন্তাভাবনা, ধ্যান এবং আত্মউপলব্ধির জন্য এক গুরুত্বপূর্ণ পরিবেশ তৈরি করে থাকে। সেজন্যই কিছু কিছু সংস্কৃতিতে নীরবতাকে সন্মান ও শ্রদ্ধার প্রতীক হিসেবে ধরা হয়।


শেষে এখন একটাই প্রশ্ন জাগে ...... মানুষ কি মানুষের নীরবতার ভাষা বোঝে ??? এককথায় উত্তর দেওয়া যেতে পারে " না "। কিছু মানুষ হয়তো এর ব্যাতিক্রম। তবে তাদের সংখ্যা নগন্য।  বলা হয়ে থাকে যে মানুষ যদি কথা না বলার মতো নীরব থাকার ক্ষমতা পেতো বা মানুষ যদি মানুষের নীরবতার ভাষা বুঝতে পারতো, তবে পৃথিবী আরও সুখি হতো। মানুষ অনেকেই পশু-পাখিদের নীরবতার ভাষা বুঝতে পারে বা প্রকৃতির নীরবতার ভাষা বুঝতে পারে ।  তাই তাদের  সাথে এক সুখের সম্পর্ক,  এক আনন্দের সম্পর্ক গড়ে উঠে সহজেই। পৃথিবীর কথা ছেড়েই দিয়ে যদি আমাদের এই ছোট মধ্যবিত্ত সমাজের দিকে তাকাই  , তবে লক্ষ্য করা যায় যে নীরবতার ভাষা না বোঝার কারনেই আমাদের এতো অস্থিরতা, এতো অশান্তি, এতো উত্তেজনা, এতো ভুল বোঝাবুঝি। তাই  আমরা এতো অসুখি। বিশেষ করে বয়স বাড়ার সাথে আমাদের নীরবতা বাড়তে থাকে। অবসর জীবনে সেই  নীরবতা এক বিরাট রূপ নিয়ে থাকে। কিন্ত আমরা সেই নীরবতার ভাষা পাঠ করতে পারি না। আর তারই ফলে সংসারে নেমে আসে অশান্তি।  অসুখি হয়ে বাকি জীবন কাটায় । এ সংসারের সুখ সাচ্ছন্দ তখন জ্বালা হয়ে উঠে। পৃথিবী ত্যাগের ইচ্ছা প্রবল হয়ে উঠে।

Thursday, 8 May 2025

বিদেশী সাহেব

 


অবশেষে শ্রীমান সাহেব চক্রবর্তী ধরাধামে এলেন। তবে নিজের দেশে নয়, বিদেশে। তাই তো তিনি বিদেশী সাহেব। আসার কথা ছিল  আরও কয়েক দিন পরে। কিন্ত কয়েকদিন আগেই চলে এসেছেন। হয়তো মায়ের কাছে ঐ জায়গাতে থাকতে থাকতে হাপিয়ে উঠে নানা চিন্তা ভাবনা নিয়ে বেড়িয়ে এলেন সবার সাথে পরিচিত হতে। সৌন্দর্য্যপূর্ন এই পৃথিবীর রুপ কেই বা না দেখতে চায়। এছাড়া মাতৃগর্ভে তার বাস .......কতদিন আগে থেকেই আরম্ভ হয়েছে। মাতৃগর্ভে আসার পর থেকে সৃষ্টিকর্তা তাকে নানা ভাবে সাজিয়ে চলেছেন।  সৃষ্টিকর্তা প্রজাপতি নিজেই  এই দায়িত্ব নিয়ে জীবের নিজস্ব কাজকর্মের ফল স্বরূপ যে পাপপুণ্য অর্জন করেছে তা তার কপালে লিখতে আরম্ভ করে দিয়েছেন।  এর জন্যই তো কারও রাজকুলে জন্ম হয় বা কারও দরিদ্র কুলে। কেহ বা খর্বাকৃতি আবার সৌমদর্শন হয়ে থাকে। এ যেন এক বৈচিত্র্যের খেলা । কারও সাথে কারও মিল নেই ।

মায়ের কাছে  ভ্রুন হিসেবে আসা। পাঁচ রাত্রে পেশি, চৌদ্দরাত্রে অব্বুর্দ,  পঁচিশ রাতে অস্থি, এক মাসে আকৃতি, দুই মাসে মাথা, তিন মাসে গলা, চার মাসে গায়ের চামড়া,  পাঁচ মাসে নখ ও লোম, ছয় মাসে মুখ, কান ও চোখ, সাত মাসে বুদ্ধি, নয় মাসে সর্বাঙ্গ অবয়ব তৈরি হয়। নয় বা দশ মাসে মায়ের পেটেই জীবনের সব লক্ষনই প্রকাশ পেয়ে যায় । তখন মায়ের খাবার থেকেই খাওয়া দাওয়া সেরে ফেলা। সেইজন্যই মাকে সবসময় উপযুক্ত খাবার খেতে হয় সুস্থ ও সবল থাকার জন্য।  আর সেইজন্যই শাস্ত্রে বিধানে তৈরি হয়েছে পঞ্চমৃত,  সপ্তামৃত বা সাদভক্ষন প্রভৃতি নানারকম অনুষ্ঠান। এগুলি বাঙালিদের গর্ভাবস্থা কালীন ঐতিহ্যবাহী আচার অনুষ্ঠান।  এর মধ্যে সাধভক্ষন অনুষ্ঠান বিশেষ ভাবে প্রচলিত।  এ শুধু পশ্চিমবঙ্গেই নয়, অন্য প্রদেশেও অন্য নামে এ বহুল প্রচলিত। গর্ভধারনের সাত মাস পূর্ন হলে আট বা নয় মাসে মায়ের ও সন্তানের সুস্বাস্থ্য কামনায় মাকে ভালো ভালো জিনিস খাওয়ানোর প্রথাকেই বলা হয় সাধভক্ষন।  শাস্ত্রীয় ব্যাখ্যায়  বলা হয় যে এই অনুষ্ঠানে জীবাত্মার সাথে পরমাত্মার মিলন ঘটে। বঙ্গ ছাড়াও অন্য রাজ্যে অন্য নামে যেমন কেরালায় সীমান্তধাম,  তামিলনাড়ুর ভালকাপ্পু, পাঞ্জাবে ও বিহারে গোধ ভারাই, গুজরাতে গোধ ভরনা ও মহারাষ্ট্রে দোহাল জেভান নামে প্রচলিত।  সহজ কথায় বলা হয় মা এর ইচ্ছা / আকাঙ্খা অনুযায়ী খাবারের উৎসব বা অনুষ্ঠান।  এর অনুষ্ঠানে হরেক রকম  খাবারের পাশাপাশি উপহার সামগ্রী দিয়েও হবু মায়ের কোল পূর্ন করা হয। এখানেও বিদেশী সাহেবের মা এর সাধভক্ষন প্রথম হল ৩০শে মার্চ ২০২৫, বাংলা পঞ্জিকার ১৬ই চৈত্র ১৪৩১।  দিন ছিল  রবিবার।  আর দ্বিতীয় সাধভক্ষন হল ৩রা এপ্রিল ২০২৫, দিন পরেছিল বৃহস্পতিবার ২০ই চৈত্র ১৪৩১ সাল। এদিন আবার ছিল বাসন্তী দূর্গাপূজোর ষষ্ঠী।

ক্রমবিবর্তনে আস্তে আস্তে  সেই ভ্রুন দেহের আকার নেয় ও চৈতন্যসত্ত্বা লাভ করে ও সব কিছু চিন্তা করতে আরম্ভ করে। চিন্তা আর কিছুই নয় বুদ্ধির উন্মেষ।  বুদ্ধিগুলি কি কি...... শব্দ, স্পর্শ, রূপ, রস,  গন্ধ  এই  পাঁচটি। সে এই নয় মাসে  পূর্ন অবয়ব  নিয়ে উপরোক্ত বিভিন্ন ইন্দ্রীয়গুলির সাথে যুক্ত হয়। আর তাতেই তার জ্ঞান , বুদ্ধি, দর্শন,  বিবেক বিষয়ে  কিছু কিছু ঞ্জান সঞ্চয় হতে থাকে। আর  এটা হওয়া আরম্ভ হলে সে তখন মা এর গর্ভে এপাশ ওপাশ নড়াচড়া আরম্ভ করতে থাকে। আর তখনই মনে পরে যায় পূর্ব জন্মের কথা । স্মরণ করে জন্ম জন্মান্তরের শুভ ও অশুভ কর্মের কথা। মনে মনে বলতে থাকে .......... এর আগে কত হাজার হাজার বার বিভিন্ন গর্ভে বাস করেছি, কত রকম খাদ্য খেয়েছি আবার কত জীবজন্তুর গর্ভে জন্মে কত রকমের স্তন্যপান করেছি। আমি বহু জন্ম এইভাবে পরিভ্রমন করে এই মনুষ্যজন্ম লাভ করেছি। হে শুভাশিস ফলদানকারী পরমেশ্বর, এবার আমায় মুক্তি দাও। তোমার তৈরী এই প্রকৃতির সঙ্গে মিলে মিশে যেন তোমাকেই  স্মরণ করিতে পারি.... এই আমার  করজোড়ে তোমার কাছে প্রার্থনা। 

এই রকম এক চঞ্চলতা নিয়ে , বিশ্বের রূপ, রস, গন্ধ,  স্পর্শ  ও শব্দের স্বাদ নেওয়ার প্রবল ইচ্ছায়   বিধাতার স্থির করা ভূমিষ্ঠ হওয়ার দিন ক্ষনে, যা কিনা চিকিৎসকের নির্ধারিত দিনের আগেই , সাহেব  বাবু ধরাধামে এসে উপস্থিত হলেন। মা র  গর্ভে ৩৭ সপ্তাহ ২ দিন থাকার পর, পৃথিবীকে চিনলেন,  দেখলেন  যা কিনা নির্ধারিত দিনের অর্থাত ৫ই মে ২০২৫ এর বেশ কিছুদিন আগেই।  তবে তারিখাটা কি ভাবে জানাবো। এ তো বিদেশী বাবু।  বিদেশের তারিখ ও সময় হল ....১৬ই এপ্রিল , ২০২৫,  বুধবার  , রাত ৯টা ৩২ মিনিট।  আর  আমাদের দেশের তারিখ ও সময় ...... ১৭ই এপ্রিল ২০২৫, বৃহস্পতিবার,  সকাল  ৭টা ২মিনিট। এত দিন মায়ের গর্ভে থেকে খাওয়া দাওয়া করে ৩ কিলোগ্রাম ২৫ গ্রাম  ( 6 lb 11 oz ) ওজন  ও  ৫২.১ সেমি উচ্চতা নিয়ে ধরাধামে এলেন।  এলেন তিনি আমেরিকার  North Carolina র Charlotte শহরের এক সরকারি হাসপাতালে। এই জন্মস্থান চেনার জন্য নাম,  ঠিকানা ...... Atrium Health University City,     8800 N Tryon st, Charlotte NC 28262.

পৃথিবীর রুপ দেখে মা বাবার সাথে বেশ কয়েকদিন জন্মস্থানে অর্থাত নার্সিংহোমে / হাসপাতালে ভালোভাবে কাটানোর  পর  ২০ তারিখে বাড়ীর পথে রওনা। তবে নিজের গাড়িতে বসে নিজের আলাদা সীটে বসে আনন্দের সাথে বাড়ীতে এসে উঠলেন। কিন্ত মা বাবাকে সবসময় কাছে চাই।  

এখন যেন খুব আনন্দের সাথে দিন কাটছে। হাত পা ছোরা, কান্নাকাটি,  খাওয়া দাওয়া ,ঘুম সবকিছুর সাথেই এক আনন্দের ছোয়া লেগে রয়েছে। আস্তে আস্তে ষষ্ঠীর দিন এসে গেল। বাচ্চাদের এই ষষ্ঠীপুজো মূলত এক হিন্দু ব্রত। যা সন্তানের জন্মানোর  ছয় দিন পর পালন করা হয়। বিশেষত এটি গ্রাম বাংলায় বেশি প্রচলিত। এই ব্রত মায়ের মঙ্গল এবং সন্তানের ভালো ভবিষ্যতের জন্য করা হয়ে থাকে। বিদেশে যখন জন্ম তখন বিদেশের জন্ম তারিখ ধরলে ছয় দিন পর অর্থাত ২২ তারিখে ষষ্ঠী পালন করা হল। ষষ্ঠী দেবী এক হিন্দু দেবী যাঁকে শিশুদের কল্যাণদাতা এবং রক্ষাকর্তা হিসেবে পূজা করা হয়। ইনাকে সন্তান দায়িত্ব এবং সন্তান পালনের দেবী হিসেবে ধরা। নবজাত শিশুর রক্ষয়িত্রী।  প্রচলিত বিশ্বাস অনুযায়ী ষষ্ঠী দেবী ঐ দিন  নবজাতকের কপালে ভবিষ্যত লিখে দেন। সেই বিশ্বাসে নবজাতকের পাশে কলম, কাগজ, ধূপ, দ্বীপ রাখা হয়। সাথে থাকে নানা রকম ফলমূল , মিষ্টান্ন জল ইত্যাদি। 

যদিও সাহেব বাবু, সব কিছুই তো ইংরেজি মতেই চলবে। তবুও অনেক সময়ই  বাংলা তারিখ, তিথি, রাশি, নক্ষত্র ইত্যাদির দরকার হয়ে পরে। জন্মের তারিখ বাংলা ক্যালেন্ডার মতে কি হল জানা হল না। একটু আধটু পঞ্জিকা ঘেটে যা জানতে পারলাম সেগুলি এইরকম....... সাহেবি জন্মতারিখ অর্থাত বিদেশের জন্মতারিখ  ধরলে সেটা বাংলায় হবে ২রা বৈশাখ, ১৪৩২ সাল।  বুধবার,  অনুরাধা নক্ষত্র। আর হ'ল বৃশ্চিক রাশি, বিপ্রবর্ন,  দেবগন, মাহেন্দ্রযোগ,  অষ্টোত্তরী ও বিংশোত্তরী শনির দশা। আর রাশিফল দেখলে দেখা যাচ্ছে .... বৃশ্চিক.... পারিবারিক শুভ। এবার আসি আমাদের দেশের জন্ম তারিখ ধরলে কি দেখা যায়।  তা এইরকম.... ৩রা বৈশাখ, ১৪৩২ সাল ।  বৃহস্পতিবার , জ্যেষ্ঠানক্ষত্র। আর হ'ল বৃশ্চিক রাশি, বিপ্রবর্ন, রাক্ষসগন, অষ্টোত্তরী শনির ও বিংশোত্তরী বুধের দশা। আর  রাশিফল দেখলে দেখা যাচ্ছে..... বৃশ্চিক.... গৌরব বৃদ্ধি। এবার আরও একটু এগুলে জানতে ইচ্ছা করবে জন্মতারিখের মূলাঙ্ক কত? তবে প্রশ্ন জাগে জন্মতারিখ কি ধরে মূলাঙ্ক নির্ণয় করা হবে। যেহেতু সাহেব বিদেশে জন্মেছে, বিদেশের জন্মতারিখ অর্থাত ১৬ই এপ্রিল ২০২৫ জন্মতারিখ ধরা-ই ঠিক হবে। তাই বিদেশী সাহেবের জন্মতারিখ মূলাঙ্ক তখন হবে .... ১+৬= ৭ । সাহেবের জন্মতারিখ মূলাঙ্ক হলো ৭। নিউমেরোলজি  বা সংখ্যাতত্ত্ব অনুযায়ী সবচেয়ে ভাগ্যবান নম্বর হল সাত।  জ্যোতিষ শাস্ত্রে ৭ নম্বরকে কেতু এবং জ্যোতির্বিদ্যায়  নেপচুনের প্রতিনিধি হিসেবে দেখা হয়।      যাঁদের মূলাঙ্ক ৭ , তাঁরা সবার থেকে অন্যরকম হয়। জ্যোতিষ শাস্ত্র অনুযায়ী আমরা বলতে পারি এই  জন্মতারিখ মূলাঙ্ক বিশিষ্ট ব্যক্তিদের ভাগ্য অত্যন্ত উজ্জ্বল হয়। অভিব্যাক্তির ক্ষমতা এই মূলাঙ্কের ব্যক্তিদের মধ্যে খুব ভালো। এঁদের কল্পনাশক্তিও তীব্র।  এই ধরনের লোকেরা স্পষ্টভাষী,  অকুতোভয় ও আত্মবিশ্বাসী হয়ে থাকে। সাধারণত ৭ সংখ্যাটিকে শুভ সংখ্যা হিসেবে বিবেচনা করা হয়। অনেক ক্ষেত্রেই ৭ এর সঙ্গে শুভ কাছের সম্পর্ক রয়েছে। ৭ নম্বরকে লাকি নম্বর বলা হয় কেননা ব্যবহারিক জীবনে আমরা দেখতে  পায় যেমন ৭ দিনে সপ্তাহ হয়, রামধনুর রঙও সাতটি, মানব শরীরের চক্রের সংখাও ৭  , আবারও স্বর্গে যাওয়ার ৭টি ধাপ রয়েছে বলে বিশ্বাস।  তাই ৭ কে সম্পূর্ন  ও ভাগ্যশালী সংখ্যা হিসেবে মনে করা হয়।

এবার নামকরণের পালা। আমাদের মধ্যে প্রচলিত এক সংস্কার যাকে বলা হয় নামকরণ অর্থাত শিশুর নাম রাখা। সাধারণত এটি সন্তান ভূমিষ্ঠ হওয়ার দশম,  একাদশ,  দ্বাদশ  বা শততম দিনে হয়ে থাকে। এদিন শিশুকে স্নান করিয়ে নতুন জামা পরানো হয়। পরে পিতামাতার দেওয়া নির্বাচিত নাম ঘোষণা করা হয়। বেশিরভাগ সময়  অন্নপ্রাশনের দিন নামকরণ করা হয়। অর্থাত অনুষ্ঠানটি একটি পূজো বা বিশেষ আয়োজনের মাধ্যমে করা হয়ে থাকে। সাধারণত বলা হয়ে থাকে নবজাতকের রাশি, নক্ষত্র,  মাস, পারিবারিক দেবতা এবং জাগতিক নাম অনুসারে সবচেয়ে বেশি পাঁচটি নাম দেওয়া যেতে পারে। তবে ইনি তো সাহেব বাবু। দেশী নিয়ম কোনো কিছুই চলবে না। বিদেশী নিয়মে বলছে যে...... জন্মের পর নার্সিংহোম থেকে বাড়ী যাবার আগে নামকরন করতে হবে। বিদেশী সাহেবের ক্ষেত্রে একই নিয়ম প্রজন্ম হ'ল।  বাড়ি যাওয়ার আগে বাবা মা নাম রাখলো।  নাম হ'লো "আহির " যার ইংরেজী বানান হ'ল  AHIR. আহির নামের অর্থ হলো 'সাহসী' বা 'উদাত্ত ' অর্থাত উচ্চস্বর বিশেষ। এছাড়াও এটি 'বিজেতা' বা "বিজয়ী" এবং 'জাগ্রত ' বা "ভোর" এর মত বিভিন্ন অর্থের ব্যবহার হয়ে থাকে। আবার "আহির " শব্দের আরেকটি অর্থ হল " শেষ" বা " ভক্ত এবং ঈশ্বর এক"। সাধারণত এই নামটি প্রিয় বাংলী ছেলের নাম হিসেবে ব্যবহার করা হয়। আরবী ভাষায় "আহির" শব্দের অর্থ 'বিজয়ী' হয়। এই  নামের ভাগ্যবান  সংখ্যা  " ৯  " ।  যাই হোক একটি শিশুর জন্য বাংলা নাম নির্বাচন করা একটি চিন্তাশীল প্রক্রিয়া। কারণ এটি তাদের পরিচয়ের একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে উঠে। বাংলায় হিন্দু নাম আহিরের অর্থ সৌন্দর্য্য এবং গভীরতার প্রতীক। তাই কেউ যদি বাংলায় গভীর অর্থ সহ নাম বিবেচনা করেন, তাহলে আহির এমন একটি নাম যা সৌন্দর্য্য এবং তাৎপর্য উভয়ই ধারণ করেন। 

দিন এভাবে চলতে থাকে। একুশ দিনের মাথায় আবার ষষ্ঠী পূজো করতে হবে। দেশে হলে এ দিন পুরোহিত ডেকে বাড়ীতে ষষ্ঠী পুজো করা হয়। যদিও ষষ্ঠী দেবীর কোনো নির্দিষ্ট অবয়ব নেই।  পূজোর জায়গাতে মাটির পুতুল রাখা হয়। অনেক জায়গাতে শিশুর চুল কামানো হয়। নখ কেটে দেওয়া হয়।  চলতি কথায় নবজাতক ও তার পরিবারের সদস্যদের অশৌচের সমাপ্তি ঘটে। তাই শিশুকে স্নান করিয়ে নতুন জামা পরিয়ে পূজোর কাছে রাখা হয়।  সাথে   মা-ও নতুন শাড়ি পরে ষষ্ঠী পূজোর কাছে বসে। এসব যে কিছু বললাম সবই আমাদের দেশের কথা। কিন্ত এ তো বিদেশী বাবু। বাড়িতে পূজো করার বদলে স্থানীয় ঠাকুরের মন্দিরে গিয়ে পূজো দিয়ে ঠাকুরের আশীর্বাদ প্রার্থনা করা হল। অবশ্য সেখানে সাহেববাবুও গিয়েছিলেন। জন্মের পরে তার এই প্রথম বাড়ি থেকে বেরোনো। ইংরেজীর ৬ ই মে সেজেগুজে তার জীবনের প্রথম সফর হলো । 

হিন্দুমতের বিশ্বাস অনুযায়ী , শিশু মা-র গর্ভ হতে ভূমিষ্ঠ হওয়ার পরেই মায়া এসে তাকে আচ্ছন্ন করে ফেলে। এর ফলে শিশু মোহাচ্ছন্ন হয়ে পরে। আর সেজন্যই মায়ের পেটে থাকাকালীন পূর্ব্ব জন্মের স্মৃতি সম্পূর্ণ ভাবে ভুলে যায়। আমাদের বিদেশী সাহেবের তাই হয়েছে। এখন তার পৃথিবীর নতুন এই জল-আবাহায়াতে, সূর্যালোকের প্রভাবে ও সুষম খাদ্যের প্রভাবে ক্রমে ক্রমে স্বাভাবিক নিয়মে পরিপুষ্ঠ হচ্ছে।মন , বুদ্ধি একত্রিত হয়ে বিভিন্ন ইন্দ্রীয়গুলি আরও সক্রিয় হচ্ছে। এর ফলে পৃথিবীর রুপ, রস, গন্ধ  ইত্যাদির প্রতি আরও আকৃষ্ট হচ্ছে।  প্রকৃতির মনমুগ্ধকারী সৌন্দর্যের প্রতি আকৃষ্ট হচ্ছে। আর তার সাথে রয়েছে মা বাবার অকৃত্রিম স্নেহ ভালবাসা।



Saturday, 19 April 2025

কর্মযোগ ** কর্মফল

 



সংস্কৃত 'কৃ' ধাতু থেকে কর্ম শব্দের উৎপত্তি। এই কর্ম শব্দের অর্থ হল কিছু কাজ করা। শারীরিক বা মানসিক সব ধরনের কাজ করা কর্ম। এই কর্মের সাথে কর্মফলের একটি কার্যকর সম্পর্ক রয়েছে। মানুষ তার কর্ম অনুযায়ী ফল ভোগ করে। সৎ কর্মের ফল পুন্য এবং অসৎ কর্মের ফল পাপ বলে আমাদের ধারনা। 

কুরুক্ষেত্র যুদ্ধে স্বজন বধের আশঙ্কায় বিষন্ন অর্জুনকে যুদ্ধে উদ্ধত বা উদ্বুদ্ধ করার জন্য ভগবান শ্রীকৃষ্ণ ২ প্রকার কর্মের কথা বলেছেন। প্রথমত সকাম কর্ম ও দ্বিতীয়ত নিষ্কাম কর্ম। ফল আকাঙ্ক্ষা সহ কর্ম হল সকাম কর্ম এবং ফল আকাঙ্ক্ষা বর্জিত যে কর্ম তা হলো নিষ্কাম কর্ম। নিষ্কাম কর্ম যেমন কর্মফল সঞ্চয় করে না, তেমনি আবার সঞ্চিত কর্মফলকেও বিনষ্ট করে। নিষ্কাম কর্মে কোনো বাসনা না থাকায় কোন ফল ভোগ থাকে না। নিষ্কাম কর্ম সম্পাদন করে অর্থাৎ ফলাফলের চিন্তা না করে কামনা, বাসনা শূন্যভাবে অর্থাৎ নিষ্কাম ভাবে নিজে ও বুদ্ধিকে পরমাত্তা ঈশ্বরের বুদ্ধির সঙ্গে যুক্ত করে কর্ম সম্পাদন করলে সংসার থেকেই মুক্তি লাভ করতে পারে।

অবার নিষ্কাম কর্ম হল অহং মুক্ত  বা অকাঙ্খাহীন কর্ম, কোন ফলাফল ছাড়া সম্পাদিত কর্ম এবং মুক্তির কর্মযোগ পথের কেন্দ্রীয় নীতি।  এটি ভগবত গীতার কেন্দ্রীয় বার্তা হিসাবে  সুপরিচিত। অর্থাত যে কর্ম স্বার্থযুক্ত থাকে তাকে সকাম কর্ম  আর যে কর্ম স্বার্থবর্জিত তাহাই নিষ্কাম কর্ম।  

ভগবত গীতার নিষ্কাম কর্মের ফলাফল সম্বন্ধে বলা হয়েছে ..... শরীর দিয়ে, মন , বুদ্ধি দিয়ে, এমনকি নিছক ইন্দ্রিয় দিয়ে যোগীরা আসক্তি ত্যাগ করে আত্মশুদ্ধির কাজ করে। যিনি যোগে শৃঙ্খলাবদ্ধ কর্মফল ত্যাগ করেন, তিনি স্থির শান্তি লাভ করেন।

যে কর্মের ফল আকাঙ্ক্ষা নেই, ফল ভোগ নেই, সেই কর্মই নিষ্কাম কর্ম। আর যে কর্মে ফল আকাঙ্ক্ষা আছে, ফলভোগ আছে, বাসনা আছে, সেই কর্মই সকাম কর্ম।  প্রসঙ্গত গীতার নিস্কাম কর্মকে কর্মযোগ বলা হয়েছে। 

তবে স্বাভাবিকভাবেই সংশয় হতে পারে যে  নিস্কাম কর্ম কি উদ্দেশ্যবিহীন? কিন্ত উদ্দেশ্য ছাড়া কোনও কর্ম করা যায় না। নিষ্কাম কর্ম যদি উদ্দেশ্যবিহীন হয় তবে এই কর্মের অনুষ্ঠান অসম্ভব। তাহলে এর উত্তর যে নিষ্কাম কর্ম উদ্দেশ্যবিহীন নয়।  সকাম কর্মের মত নিষ্কাম কর্মেরও উদ্দেশ্য থাকে। পার্থক্য হল, সকাম কর্মের উদ্দেশ্য হল বিষয়াশক্তি,  যা জীবের বন্ধনের কারন।  অপরদিকে নিষ্কাম কর্মের উদ্দেশ্য হল ঈশ্বর। ঈশ্বরের উদ্দেশ্যে যঞ্জরূপে কর্ম সম্পাদন করলে সেই কর্ম নিষ্কাম হয়। 

কিন্ত নিস্কাম কর্ম করব কি ভাবে ? গীতায় নিষ্কাম কর্মের অনুষ্ঠানকে এক প্রকার কৌশল বলা হয়েছে। এই  কৌশল হল :: যোগস্থ হয়ে কর্ম করতে হবে।  কর্মফলে অধিকার ত্যাগ করতে হবে। তাই  গীতায় বলা হয়েছে :: যোগস্থ কুরু কর্মাণি । কর্মণ্যেবাধিকারস্তে মা ফলেষু কদাচন। ফলের আকাঙ্ক্ষা  ত্যাগ করে, কর্ম করার কুশলতাই হল যোগ শব্দের অর্থ।  মনে রাখতে হবে ঈশ্বর এই জগতের স্রষ্টা,  প্রতিপালক ও পরিচালক।  মানুষ হল সৃষ্ট জীব।  মানুষের  সত্তা ঈশ্বরে  আশ্রিত। মানুষের কর্ম ঈশ্বর দ্বারা পরিচালিত।  তাঁর পরিকল্পনা অনুযায়ী মানুষ কর্ম করে। মানুষ যন্ত্র,  তিনি যন্ত্রী। তিনিই আমাদের কর্মের কর্তা। আমরা নিমিত্ত মাত্র।  তারই উদ্দেশ্যে কর্ম করতে হবে । কিন্ত মূঢ় ব্যাক্তি অহংকার বশে মনে করে যে আমিই সব। তাই অহংবোধ ত্যাগ করে ঈশ্বর প্রীতির জন্য বা ঈশ্বরের উদ্দেশ্যে কর্ম সম্পাদন করতে হবে।


বিবেকানন্দও  নিষ্কাম কর্মের অনুশীলনের কথা বলেছেন। কর্মফলের প্রতি আসক্তি পরিত্যাগ করে আনাসক্তভাবে কর্ম সম্পাদনই নিষ্কাম কর্মের অর্থ।  আসক্তি বর্জনের দুটি পথ রয়েছে। একটি হল কর্মফল ঈশ্বরে সমার্পন করা। গীতা এইরূপ নিষ্কাম কর্মের প্রচার করে। দ্বিতীয় পথের অনুসারী ব্যক্তিরা বলেন নিজের ইচ্ছাশক্তি,  মনের শক্তি ও বিচার বিশ্লেষণ অনুযায়ী কর্ম করলে কর্ম অনাসক্ত হয়।  অনাসক্ত কর্ম কর্ম জগতের মঙ্গল সাধন করে। জীবনকে মহৎ করে। মহৎ ব্যক্তিরা জগতের মঙ্গলের জন্য নিজেদের উৎসর্গ করেন। 

এই নিষ্কাম কর্ম সংসারের মধ্যে থেকে দু ভাবে হয়ে থাকে। এক অনাগ্রহ ভাবে , অপরটি অনাসক্ত ভাবে। অনাগ্রহ ভাবে কাজ করলে এর মধ্যে একটা বিতৃষ্ঞা ভাব জড়িয়ে থাকে। তখন সবসময়ই মনে হয় এই কাজটা করে আমি তো কোনো কিছু পাবো না। তাই যখন কাজটা করতেই হবে, তখন কোনো রকমে সেরে ফেলি। কিন্ত অপরদিকে অনাসক্ত ভাবে কাজ করার মধ্যে নিজের একটা স্বাধীনতা লুকিয়ে থাকে। সেই কাজটার দ্বায়িত্বভাব নিজে নিয়ে , চারদিক দেখে শুনে কাজগুলির সমস্ত খুটিনাটি নিজেই আগ্রহভরে সেরে ফেলি। যেমন পূজো করবার সময়  নিজের ইচ্ছামতন যতটা পারি যোগারযন্ত্র করে থাকি, ইচ্ছামতন ঠাকুর সাজানো,  মন্ত্র উচ্চারণ জোরে না আস্তে ....... সব কিছুই যিনি পূজো করেন  তার উপর নির্ভর করে। কিন্ত এসবের পিছনে কোনও চাওয়া পাওয়ার থাকে না। জীবনে আধ্যাত্মিক পথে  কিছুটা এগোলেই এগুলি করা সম্ভব।   তাই জীবনকে আধ্যাত্মিক করে তোলার চেষ্টা করতে হবে। অর্থাৎ  সংসার দৃষ্টি ত্যাগ করে ব্রহ্মদৃষ্টির অনুসন্ধান করার চেষ্টা........ এক কথায় যে দৃষ্টির দ্বারা মানুষ সবকিছুর মধ্যে ঈশ্বরকে দেখতে পাবে, ঈশ্বরের কৃপা অনুভব করতে পারবে, তবেই সে আসল ঈশ্বরের উপাসনা করতে পারবে।

 ভগবান শ্রী কৃষ্ণ সকাম কর্মের কতগুলি উন্নতির জন্য সকাম ও নিষ্কাম কর্মের পৃথক পৃথক (সকাম এবং নিস্কাম কর্মের মধ্যে পার্থক্য) উল্লেখ করেছেন –

১) সকাম কর্মে নানা আয়োজন প্রয়োজন হয় বলে তা অনেক জটিলতায় পূর্ণ , এজন্য কর্মটি অনেক ক্ষেত্রে  অসম্পূর্ণ থাকে এবং ওই  অসম্পূর্ণতার জন্য কর্মকর্তাকে  ভীত থাকতে  হয়, বিনাশের ভয় এবং প্রাননাশের  ভয় ইত্যাদি। কিন্তু নিষ্কাম কর্মে কর্মটি আংশিকভাবে নিস্পন্ন হলেও ফল আকাঙ্খিত না থাকার জন্য বিভিন্ন ভয় থেকে মুক্তি থাকে।

২) সকাম কর্মের ক্ষেত্রে যাগ-যঞ্জ তপস্যাদি শেষ না হলে তা চালু হয়। কাজটি  পুনরায় আরম্ভ করতে হয়। কৃষি কর্মাদি ও উচ্চবৃষ্টি, অনাবৃষ্টি ইত্যাদি কারণে বন্ধ হয় এবং কাজটি পুনরায় আরম্ভ করতে হয়। কিন্তু নিষ্কাম কর্মে কখনো কখনো দেখা যায় না এবং সেই কর্মের কোনো আকাঙ্ক্ষা নেই তা কখনো ব্যার্থ হতে পারে না।

৩) সকাম কর্ম কেবলমাত্র ব্যার্থ না হয়, তা অঞ্চল বিশেষে পাপের কারণও হয়। অপরের সম্পদ  অন্যায় ভাবে অধিকারের জন্য যে প্রবঞ্চনামূলক, প্রতারণামূলক কর্ম তা পাপের কারণ হয়। নিষ্কাম কর্মে আকাঙ্ক্ষা আর্থাৎ ফলাকাঙ্ক্ষা না থাকায় সেই কর্ম কখনো প্রতারণামূলক হতে পারে না এবং পাপের কারণও হয় না।

৪) সকাম কর্মে শক্তি বহির্মুখী হওয়ায় প্রকাশ-বাসনার অন্ত থাকে  না। কিন্তু নিষ্কাম কর্মের ক্ষেত্রে নিজের বুদ্ধিকে পরমাত্মা ঈশ্বরের সঙ্গে যুক্ত করার ফলে সেই জ্ঞান নিশ্চয়াত্মক ও  একনিষ্ঠ হয়ে থাকে, নানাদিকে ধাবিত হয় না। ফলে নিষ্কাম কর্মে-বাসনাও থাকে না।

৫) সকাম কর্মের ক্ষেত্রে সমস্ত রকম কর্ম স্বার্থে ব্যবহৃত হয়ে থাকে এবং  স্বপক্ষে কর্মে সম্পাদিত হয়। অন্যদিকে নিষ্কাম  কর্ম হলো এমন কর্ম যা সকল প্রকার স্বার্থের ঊর্ধ্বে থাকে এবং ঈশ্বরের প্রতি উৎসর্গ করা হয়।

৬) সকাম কর্ম মূলত আকাঙ্ক্ষায় পরিপূর্ণ। অর্থাৎ এইরূপ কর্মে আকাঙ্ক্ষা থাকে, চাহিদাও থাকে। কিন্তু নিষ্কাম কর্মের ক্ষেত্রে এরূপ কোন চাহিদা থাকে না। অর্থাৎ তা সমগ্রভাবে আকাঙ্ক্ষা মুক্ত এবং যেখানে কোনও রূপ কামনার জায়গা থাকেনা।

উপসংহার হিসেবে বলা যায় ... কর্ম হল এমন একটা বিষয় যার মধ্যে ভালো এবং মন্দ উভয়েরই স্থান রয়েছে। তাই কামনা বাসনা দ্বারা ঘটিত কর্ম  এবং  কামনা বাসনা বর্জিত কর্ম,  এই দায়ের পরিপ্রেক্ষিতেই সকাম ও নিষ্কাম কর্মের পার্থক্য করা যায়। কিন্ত সর্বপরি  নিষ্কাম কর্মেই হল শ্রেষ্ঠ যা সকাম কর্মের থেকে ভিন্ন এবং উৎকৃষ্ট।  

Friday, 28 March 2025

বহুলাড়ায় সিদ্ধেশ্বর শিব মন্দির

 সিদ্ধেশ্বর শিব মন্দির,  বহুলাড়া, বাঁকুড়া   





পশ্চিম বাংলার মন্দির স্থাপত্যের কথা বলতে গেলে যার নাম প্রথমেই উঠে আসে .... সে হ'ল বিষ্ণুপুর । এটা ঠিক যে বাংলার স্থাপত্যশৈলীর বিকাশে বিষ্ণুপুরের এক বিরাট অবদান রখেছে। তবে এই আবদান শুধুমাত্র বিষ্ণুপুরের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয় । এই উদাহরণ বিষ্ণুপুরের ঠিক বাইরে আশে পাশেও ছড়িয়ে রয়েছে। 






সে রকমই বাংলার এক গ্রামের নাম বহুলারা। পশ্চিমবঙ্গের বাঁকুড়া জেলার ওন্দা সি ডি ব্লকের ওন্দা ২ নং গ্রাম পঞ্চায়েতের অন্তর্গত বহুলারা গ্রাম।  দ্বারকেশ্বর নদীর দক্ষিণে, এটি মন্দির নগরী বিষ্ণুপুরের থেকে প্রায় ২৫ কি মি বা ওন্দাগ্রাম রেলওয়ে স্টেশন থেকে প্রায় ৫ কি মি দূরে অবস্থিত।  এখানেই রয়েছে অনন্য স্থাপত্য শৈলী ও কাটা ইট এবং চুন-স্টুকো অলঙ্কার পরিচিত সিদ্ধেশ্বর শিব মন্দির।  মধ্যযুগীয় রেখা দেউল মন্দিরের সর্বোত্তম নমুনা হিসেবে এটিকে অনুমান করা হয়। মন্দিরের উচ্চতা প্রায় ৬০ ফুটের মতন। মন্দিরটির ভিত্তিমাত্রা প্রায় ২৩ বর্গফুটের মতন যা মন্দিরটিকে তার স্থাপত্য এবং অসাধারণ সৌন্দর্যের জন্য বিখ্যাত করে তুলেছে। এটি আনুমানিক ৮ম -- ১১শ শতাব্দীর কাছাকাছি সময়ে বৌদ্ধ  / জৈন  মন্দির হিসেবে নির্মিত হয়েছিল।  কিন্ত পরে বিষ্ণুপুরের মল্ল রাজারা এটিকে শৈব স্মৃতিস্তম্ভ হিসেবে পুন নির্মাণ করেছিলেন।  তবে এটি  কখন হিন্দুমন্দিরে রুপান্তরিত হয়েছিল তার কোনও নথিপত্র নেই। তাই শিবলিঙ্গ ছাড়া গর্ভগৃহে গনেশ,  জৈন তীর্থঙ্কর পার্শ্বনাথ এবং মহিসাসুরমর্দিনির  মূর্তি রয়েছে। নগ্ন জৈন দন্ডায়মান মূর্তিটি সেই সময়ের জৈন ধর্মের অস্তিত্বর স্পষ্ট প্রমাণ বহন করে। তবে যাই হোক এখানকার শিবলিঙ্গ সিদ্ধেশ্বর মহাদেব নামে পরিচিত।  মন্দিরটি পশ্চিমমুখী এবং ওড়িশার মন্দিরগুলির সাথে কিছু কিছু  মিল দেখা যায়। অতীতে কোনও এক সময়ে এর চূড়ার সর্ব্বোচ্চ অংশটি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল।  সাম্প্রতিক কালে সরকার কিছু সংস্কার করা সত্ত্বেও মন্দিরের মূল অলংকরনে বেশিরভাগ অংশই নষ্ট হয়ে গিয়েছে। 






মন্দিরের অভ্যন্তরীণ গর্ভগৃহটি একটি নিখুঁত বর্গাকার হলেও বাইরে থেকে এটি দেখা যায় না। কারণ বাইরের পৃষ্টটি  " রথ " শৈলীতে নির্মিত।  উত্তর ভারতীয় নাগর স্থাপত্য শৈলীর একটি উপাদান রথ। সেইজন্য এই মন্দিরটি এক অসাধারন চেহারা এবং দুর্দান্ত গভীরতা বহন করে। উড়িষ্যা বা খাজুরাহোর মন্দিরগুলি এই রকম রথ শৈলীতে নির্মিত এবং এই মন্দিরটিও ঐ রকম ঐতিহ্য বহন করে চলেছে। 






বহুলাড়া মন্দিরের চারপাশের আবাসস্থল এবং যে ধর্মীয় ঢিবি রয়েছে সেগুলি দেখে প্রত্নতাত্ত্বিকদের অনুমান যে এটি প্রাচীনকালে একটি জৈন / বৌদ্ধ  কেন্দ্র ছিল। দেউলের পাশে ইট ও পাথরের তৈরী ঢিবিগুলি দেখে ধারনা করা হয় যে এগুলি বৌদ্ধস্তূপের ধ্বংসাবশেষ।  মনে করা হয় যে এখানে বৌদ্ধ ভিক্ষুক বা ভিক্ষুণীদের দেহাবশেষ দাহের পর সমাহিত করা হত। ইতিহাস ঘাটলে দেখা যায় যে এই অঞ্চল অর্থাৎ বাঁকুড়া  অঞ্চল বৌদ্ধ  / জৈন ধর্ম দ্বারা প্রভাবিত ছিল। মল্লরাজ প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর মন্দিরগুলি শিব মন্দিরে রূপান্তরিত হয়। 






ওন্দাগ্রাম রেল ষ্টেশনের কাছেই বহুলাড়া গ্রাম। তাই ষ্টেশন থেকে সাইকেল রিক্সা বা টোটোতে করে মন্দিরে যাওয়া যায়। কিন্ত এই পথের উপর নির্ভর না করায় শ্রেয়। কেননা এই পথে রেল পরিষবা এখনও যথেষ্ট নয়। তাই রেলে বা বাসে বাঁকুড়ায় এসে, সেখান থেকে বাসে করে ওন্দা বাস ষ্টপে নেমে রিকশা বা টোটোতে যাওয়া যেতে পারে মন্দিরে। এছাড়া যদি সড়ক পথে গাড়ি নিয়ে আসা যায় তবে ওন্দা মোড় থেকে ডানদিকের রাস্তা ধরে বহুলারা গ্রামে আসা যায়।







চৈত্র মাসে আজও বহুলারা শিবমন্দিরে তিন দিন ধরে গাজন উৎসব পালিত হয়। তাতে আঞ্চলিক ও দূরের শত শত ভক্ত যোগদান করে। এছাড়াও শিবরাত্রি আর বাংলার  নববর্ষ ধুমধামের সাথে পালিত হয়। মন্দিরটি গ্রামের এক মনোরম শান্তিপূর্ণ স্থানে অবস্থিত।  তাই আপনি যদি বাংলার গ্রামীণ জীবনের স্বাদ উপভোগ করতে চান তবে বহুলাড়া সিদ্ধেশ্বর শিব মন্দির দেখতে পারেন। আর আপনি যদি একটু ঐতিহাসিক মনোভাবাপন্ন হন অর্থাত আপনার ইতিহাস জানার আগ্রহ থাকে তবে অবশ্যই এটি আপনার সঠিক পচ্ছন্দের স্থান হবে।







Thursday, 13 March 2025

বঙ্গে সূর্য মন্দির

 

সোনাতপলের সূর্য মন্দির -- আলোকমন্দির  

বিশ্বে ভারতবর্ষ হ'ল এক রহস্যের দেশ হিসেবে পরিচিত। সেই রহস্যময় দেশ হিসেবে এক বিশেষ গৌরবও আছে। আর এই গৌরব আরও বাড়িয়ে তুলেছে তার প্রাচীন সূর্য মন্দিরগুলি। সবগুলি মন্দিরই সূর্যদেব সূর্যকে উৎসর্গীকৃত।ইতিহাস ঘাটলে দেখা যাবে প্রায় প্রত্যেকটি মন্দিরই  প্রাচীন ভারতীয় শাসকদের দ্বারা বহু বছর আগে নির্মিত হয়েছিল।  এই মন্দিরগুলি ভারতীয় হিন্দুদের ধর্মীয় জীবনে গুরুত্বপূর্ণ স্থান দখল করে রয়েছে।




সূর্য মন্দির কি ?? সূর্য মন্দির বা সৌর মন্দির হ'ল এমন একটি ভবন যা ধর্মীয় বা আধ্যাত্মিক কার্যকলাপের জন্য ব্যবহৃত হয়। যেমন প্রার্থনা বা বলিদান...... যা সূর্য বা সৌর দেবতার উদ্দেশ্যে উৎসর্গ করা হয়। এই ধরণর মন্দিরগুলো বিভিন্ন সংস্কৃতি দ্বারা নির্মিত হয়েছিল এবং ভারত, চীন,  জাপান , মিশর ও পেরু সহ বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে।  এর মধ্যে কিছু মন্দির ধ্বংসস্তূপে রয়েছে, খনন, সংরক্ষণ  বা পুনরুদ্ধার কাজ চলছে এবং কয়েকটি বৃহত্তর স্থানের অংশ হিসেবে বিশ্ব-ঐতিহ্যবাহী স্থান হিসেবে তালিকাভুক্ত। 



ভারতে বেশ কয়েকটি ( প্রায় ১৪টি ) উল্লেখযোগ্য সূর্য মন্দির রয়েছে। এর মধ্যে মেধরার সূর্য মন্দিরটি, যা কিনা গুজরাতে অবস্থিত। ১০২৬-২৭ খ্রিস্টাব্দের মধ্যে এটি নির্মিত হয়েছিল।  চালুক্য রাজবংশের প্রথম ভীমসেনের শাসনকালে এর নির্মাণ হয়। এই মন্দিরের স্থাপত্য শৈলী মারু-গুর্জরা শৈলীর।  এটি পশুপতি নদীর তীরে অবস্থিত।




সূর্য মন্দির মাতন্ড..... যা জম্ম্-কাশ্মীরে অবস্থিত।  এটি একটি অসাধারণ মন্দির। কারকোটা রাজবংশ এটি নির্মাণ করেছিলেন ৮ম শতাব্দীতে। মন্দিরটির আশ্চর্যজনক খোদাই আজ ধ্বংসস্তূপে পরিনত হয়েছে। মন্দিরটি মালভূমির উপর অবস্থিত হওয়ায়, এখান থেকে সমগ্র কাশ্মীর উপত্যকার দৃশ্য দেখা যায়।




দক্ষিণার্ক মন্দির যা গয়ায় অবস্থিত।  হিন্দু ধর্মগ্রন্থ বায়ু পুরাণে এর উল্লেখ পাওয়া যায়। গয়ায় পিন্ডদান স্থানের কাছেই রয়েছে এই মন্দির।  আবার বিষ্ণুপদ মন্দিরটি এর কাছেই।  গয়ায় আরও দুটি সূর্য মন্দির রয়েছে..... সেগুলি হ'ল উত্তরকা মন্দির আর গয়াদিত্য মন্দির।  




তবে ভারতে সূর্য মন্দিরের কথা বললেই...... যে মন্দিরের কথা মাথায় আসে তা হল কোনারকের সূর্য মন্দির। এটি সাতটি বিস্মেয়ের একটি। ইউনেস্কো ঐতিহ্যবাহী স্থানগুলির মধ্যে কোণার্ক সূর্য মন্দির হ'ল একটি প্রাচীন  সূর্য মন্দির।  এটি পুরী থেকে ৩৫ কি মি দূরে অবস্থিত।  ভারতের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ এই মন্দিরে আপনি দেখতে পাবেন ছয়টি ঘোড়া দ্বারা পরিচালিত ২৪ চাকার সূর্যদেবের রথ। কিন্ত  আজ মন্দিরের বেশিরভাগ অংশই ধ্বংস হয়ে গিয়েছে।





তবে আজ আর পুরীর সূর্য মন্দিরের কথা নয়, এমন একটি সূর্য মন্দিরের কথা লিখছি যেটা কিনা রয়েছে পশ্চিমবঙ্গেই। শোনা যায় এই মন্দির কোনারকের সূর্য মন্দিরের থেকেও প্রাচীন।  তাই আজ সে ন্যাশনাল হেরিটেজের  তকমায় পুরস্কৃত। কিন্ত কোথায় রয়েছে সেই মন্দির  ??  সেই মন্দির রয়েছে আমাদের পশ্চিমবঙ্গেরই লাল মাটির দেশে, বাঁকুড়া জেলার ওন্দা থানার অন্তর্গত সোনাতপল গ্রামে সোনাতপল সূর্য মন্দির।   সূর্য মন্দির বলা হয় কারন মন্দিরটি পূর্বমুখী হওয়ায় দিনের প্রথম সূর্যকিরণ এসে পড়ে মন্দিরের গর্ভগৃহে। আলোকিত করে এই মন্দিরের গর্ভগৃহকে। তাই এটি সূর্য মন্দির নামে পরিচিত।  এই দেউলে আগে কোন দেবদেবী ছিল না। কিন্ত বর্তমানে একটি ত্রিশূল ও  শিবলিঙ্গ স্থাপন করা হয়েছে।  দারকেশ্বর নদীর দক্ষিণ-পশ্চিমে, বাঁকুড়া শহর থেকে প্রায় ১০ কি মি দূরে এই প্রাচীন গ্রাম সোনাতপল। সোনাতপলের সূর্য মন্দিরটি অত্যন্ত চিত্তাকর্ষক ও কিছুটা রহস্যময়। মন্দিরে লাগানো সরকারী বোর্ড থেকে জানা যায় আনুমানিক খ্রীস্টীয় একাদশ শতাব্দীতে মন্দিরটি তৈরী হয়েছিল।  ঔপনিবেশিক সময়ে তৈরী এটি ইটের রেখা দেউল। উচু ইটের ভিতের উপর তৈরী এই সূর্য মন্দিরটির উচ্চতা প্রায় ১২০ ফুট। এত উচু মন্দির এই অঞ্চলে আর নেই।  এটি জেলার অন্যতম পুরাকীর্তি।




তবে কবে এই মন্দির তৈরি হয়েছিল তা নিয়ে প্রচুর বিতর্ক রয়েছে। কেউ কেউ বলেন, এই মন্দির বিষ্ণুপুরের মল্লরাজাদের তত্ত্বাবধনে গড়ে উঠেছিল। আবার একসময় বাঁকুড়া ছিল বৌদ্ধ ও জৈনদের বাস।  তাই এই অঞ্চলে রয়েছে বৌদ্ধ ও জৈন ধর্মের নানা পুরাকীর্তির। এই মন্দিরের গায়ে অনেক উপরে দেখা যায় এক ছোট্ট বৌদ্ধ মূর্তি। তাই কেউ মত প্রকাশ করেন যে এই মন্দির বৌদ্ধ বা জৈনদের পৃষ্ঠপোষকতায় গড়ে উঠেছিল।  ইতিহাস ঘাটলে আমরা দেখতে পায় যে সোনাতপল গ্রামের প্রাচীন নাম ছিল হামিরডাঙা। মন্দিরটির নির্মানকাল এগারো শতকে। শোনা যায় যে শালবাহন নামের কোনও এক রাজা এই মন্দিরটি নির্মাণ করেছিলেন।  তৎকালীন হামিরডাঙায় শাকদ্বীপি ব্রাহ্মণদের  বাস ছিল। তাঁরা সূর্যের উপাসনা করতেন।  তবে অন্য এক ঐতিহাসিকের মত যে জনশ্রুতির মাধ্যমেই ঐ রাজার নাম জানতে পারা যায়। ওন্দার কোথাও সেই রাজার কোনও চিহ্ন খুঁজে পাওয়া যায়নি। তবে সূর্য মন্দির যে জৈন বা বৌদ্ধ স্থাপত্য---- এ বিষয়ে কোনও সন্দেহ নেই। 




ট্রেনে যেতে হলে নিকটতম রেল ষ্টেশন বাঁকুড়া জংশন।  এখান থেকে দশ কি মি গাড়ী বা অটোতে যেতে পারেন। আর গাড়ি নিয়ে গেলে আরামবাগ- জয়পুর-বিষ্নুপুর-ওন্দা হয়ে কিছুটা গিয়ে ডান দিকের রাস্তা ধরে সোনাতপল গ্রামে পৌঁচ্ছাতে পারেন। এছাড়া বাঁকুড়া-বিষ্নুপুর রাস্তা ধরে ধলডাঙ্গার মোর থেকে বেকে এই মন্দিরে যেতে পারেন। 




হাজারো বছরের প্রাচীন এই মন্দিরের সংস্কার এখনই প্রয়োজন।  স্থানীয়দের দাবী...... এত পুরানো মন্দির আজ ভেঙে পরেছে সংস্কারের অভাবে। এখানে যাতায়াতের রাস্তা পর্যন্ত নেই।  আলপথ পেরিয়ে এই মন্দির দেখতে যেতে হয়। একখানা সরু রাস্তা থাকলেও বর্ষাকালে তা বেহাল হয়ে পরে। আগাছায় পরিপূর্ণ মন্দির।  এলাকাবাসী বারবার বিভিন্ন মহলে মন্দির সংস্কারের আবেদন  জানালেও কোনো কাজ হয়নি।   ভারতীয় পুরাতত্ত্ব বিভাগ এই মন্দিরের তত্ত্বাবধায়ক হলেও সরকার শুধুমাত্র এলাকাটির চারপাশে প্রাচীর দিয়েছে। মন্দিরের অবস্থা বেশ জরাজীর্ন ও ভগ্নপ্রায়।  মন্দির রক্ষণাবেক্ষণের জন্য বর্তমানে শ্রী ষষ্ঠী মল্ল নামে একজন গ্রামবাসী নিযুক্ত আছেন। এর আগে তাঁর মা শ্রীমতী সবিতা মল্ল দেখাশোনা করতেন। তবে একার পক্ষে এই স্থাপত্য রক্ষণাবেক্ষণ সম্ভব নয়। কথায় কথায় ষষ্ঠী মল্ল ক্ষোভের সাথে জানালেন ......" অনেকেই মন্দির দেখতে  আসেন।  গ্রামে আসার রাস্তাটি লাল মাটির।  কিন্ত মন্দির দেখতে হলে জমির আলপথ মাড়িয়ে আসতে হয়। সেই কারণে অনেকে দূর থেকে মন্দির দেখে ফিরে যান। সরকার সচেষ্ট হলে এই মন্দিরটিকে ঘিরে  গ্রামটিকে একটি পর্যটন স্থল হিসেবেও গড়া যেতে পারে। আর তখনই স্বাভাবিকভাবেই গ্রামের মানুষের রুজি রোজগারের একটা ক্ষেত্রও তৈরি হতে পারে।"





এখন প্রশ্ন হ'ল ........ ইতিহাসের হাত ধরে এই এলাকা কি ভবিষ্যতের পর্যটন স্থান হিসেবে উঠে আসবে ?? এর জবাব পেতে হলে আগামী দিনগুলির জন্য অপেক্ষা করা ছাড়া আমাদের আর কিছুই করার নেই।