Saturday, 19 October 2024

মঙ্গলাপোতা রাজবাড়ির দূর্গাপূজো

 

ঐতিহ্য রক্ষায় তরবারি পুজো......

মঙ্গলাপোতা রাজবাড়ি দূর্গাপূজোয় 

পশ্চিম মেদিনীপুরের গড়বেতা শহর থেকে আট কি. মি. পূর্বে শিলাবতী অববাহিকায় সবুজ গাছপালায় ভরা মঙ্গলাপোতা গ্রাম। এখানেই রয়েছে মঙ্গলাপোতা রাজবাড়ি। ইতিহাস ঘাটলে জানা যায় যে এই রাজবাড়ি একদা ছিল রাজাদের আমোদ প্রোমদের  বাগানবাড়ি। এটি নির্মাণ করেছিলেন বগড়ীর রাজা ছত্র সিংহ এবং শোনা যায় যে তিনিই  র্প্রচলন করেছিলেন দূর্গাপূজোর। তৎকালীন বগড়ী পরগনার শেষ স্বাধীন রাজা তিনি ছিলেন। প্রায় ৪০০ বছর আগে সেই দূর্গাপূজো আজও চলে আসছে মঙ্গলপোতা রাজবাড়ির  দূর্গাপূজো নামে।  আবার এও শোনা যায় যে এই রাজবংশের প্রথম রাজা ছিলেন গজপতি সিংহ৷ তবে এই বংশের নবম রাজার  নামও ছিল গজপতি সিংহ। ইনিও মঙ্গলপোতাতে দেবী দুর্গার আরোধনা আরম্ভ করতে পারেন। ইতিহাস বলে বা আঞ্চলিক অধিবাসীদের  বিশ্বাস এখানে যে ঘটটি আছে,  সেই ঘটটি  বাস্তবে গড়বেতার মা সর্বমঙ্গলার ঘট। ছত্র সিংহ ঘটটি জোর করে নিয়ে এসেছিলেন এবং সেটা আর ফেরত দিয়েছিলেন না। আর সেই দেবী সর্বমঙ্গল ঘট এখানে পুঁতে তিনি দূর্গাপূজোর প্রচলন করেছিলেন। ঘট পোতা হয়েছিল বলে এই জায়গার নাম মঙ্গলপোতা। এও জানা যায় যে বিষ্ণুপুরের রাজা মল্লরাজ খয়েরমল্ল  দেবী সর্বমঙ্গলার এই ঘট একবার নিয়ে যান। সামসের জং বাহাদুর, রাজা ছত্র সিংহের পাশে দাড়িয়ে যুদ্ধে খয়েরমল্লকে পরাজিত করে এই ঘট আবার উদ্ধার করে আনেন। 






পূজোর ১৫ দিন আগে দেবীর ঘট স্থাপন করা হয়। আগে পূজার মন্ডপ  ছিল মাটির। ছাউনি ছিল টালির ও টিনের। কাঠের ছিল দরজা। এখন স্থায়ী মন্ডপ হয়েছে। রয়েছে পূর্বকার পঞ্চমুন্ডির আসন। বারান্দায় রয়েছে ৬টি প্রকান্ড থাম। আর ভিতরে একই রকম চারটি থাম। মণ্ডপে ভিতরে বাঁদিকে রয়েছে এক উই এর ঢিপি। শোনা যায় যে ষষ্ঠী থেকে নবমীর ভিতর যে কোনো দিন এক সাপ সেই ঢিপি থেকে বেড়িয়ে দেবীর কাছে এসে ঘোরা ফেরা করে। পরে আবার নিজে থেকে সেই ঢিপির ভিতর ঢুকে যায়। এই পূজোর বৈশিষ্ট্য হল প্রচীন রীতি মেনে  দূর্গাপূজোর ঐতিহ্য বজায়  রাখা। এই পুজোতে ৪টি তরবারি পুজো করা হয়। রাজাদের বীরত্বের প্রতীক হিসেবে তরবারীগুলোকে পুজো করা হয় দেবীর সামনে রেখে।  জিতাষ্টমীর দিন প্রথম তরবারী, দ্বিতীয় তলবারি পূজো হয় মহালোয়ার দিন, তৃতীয় তরবারি পুজো ষষ্ঠীর দিন, আর সপ্তমীর দিন পূজো করা হয় সবচেয়ে বড় চতুর্থ তলবারিটি। তৎকালীন উড়িষ্যার বীরযোদ্ধা সামসের জং বহাদুর ছিলেন মা কালীর এক পরম সাধক এবং সাধনাবলে তিনি এই তরবারি পেয়েছিলেন। বিশ্বাস  তরবারি মন্ত্রপূত ছিল। এই তরবারি দিয়ে তিনি বিষ্ণুপুরের রাজা খয়েরমল্লকে যুদ্ধে পরাজিত করে মা সর্বমঙ্গলার আসল  ঘট উদ্ধার করেন। অন্য তিনটি  তরবারি কুলদেবতা রাধাকৃষ্ণ জিউ-এর মন্দিরে রাখা আছে। রাধাকৃষ্ণ, নারায়ন, সর্বমঙ্গলা ও দূর্গা ছাড়াও  এই তরবারিগুলি রোজদিন পুজো করা হয়। দূর্গাপূজোর সময় এই সব তরবাড়ি মূল মন্ডপে নিয়ে আসা হয়। স্থানীয় বাসিন্দাদের ও অন্য ভক্তদের দৃঢ় বিশ্বাস যে বড়ো তরবারিটি কালী মা। প্রতি দূর্গার সপ্তমীর দিন ও কালীপুজোর দিন দুমিটার করে চার মিটার লাল শালু কাপড় দিয়ে তরবারিটি জড়ানো হয়। পুরোনো লাল শালু কাপড়টি ফেলে দেওয়া হয় না। তার উপর এই লাল শালু কাপড় জড়ানো হয়। কিন্ত আশ্চর্যের বিষয় হল যে এটি মোটা হয়ে যাওয়ার কথা কিন্ত মোটা হয় না, একই রকম আছে।





ষষ্ঠীর দিন হোম থেকে, যাগযঞ্জ এবং চন্ডীপাঠ শুরু হয়। যঞ্জকুন্ডে অবিরাম ২৪ ঘন্টা এই কয়দিনে কাঠ জ্বলতে থাকে। কিন্ত অবাক লাগে যে প্রাচীন কালের সেই দূর্গাপূজোর শুরু থেকে সেখান থেকে যঞ্জের কাঠ পুড়ে ছাই হলেও কোনদিন ছাই পরিস্কার করা হয়নি অথচ গর্তটি ছাই-এ ভর্তিও  হয়নি। প্রতি বছর নতুন করে দেবী বিগ্রহ তৈরি করা হয়। এখানে এক চালায় দেবীর পূজো হয়। প্রাচীন কালে এখানে নরবলি হত। যাকে বলি দেওয়া হতো সে কোথা থেকে আসতো বা কিভাবে দেবীর পিছনে এসে বসে থাকতো তা কেউ জানতে পারতো না।  এখন আর সে সব নেই। এখনও সপ্তমী ও সন্ধি পুজোতে ছাগ বলি হয়। কিছু বছর আগে পর্যন্ত মোষ বলি হত। এখন আর মোষ বলি দেওয়া হয় না। কেননা মোষ বলির পর, তার মাংস আদিবাসীরা এসে প্রসাদ হিসেবে নিয়ে যেত। এখন তারা আর আসে না, আর তার জন্য মোষ বলিও বন্ধ গেছে। 




এই পূজোয় নিয়মবিধি মেনে সবকিছু অনুষ্ঠান করাটা মুখ্য।  সুপ্রাচীন কালে যে নিয়ম ছিল তা আজও মেনে চলা হচ্ছে। দূর্গাপূজোয় এখানকার ঘট স্থাপনের সময় যে তোপধ্বনি হয়, সেই ধ্বনি শুনে গড়বেতাতে দেবী সর্বমঙ্গলার পূজো আরম্ভ হয়।  আবার গড়বেতার মা সর্বমঙ্গলার  পূজোর তোপধ্বনি শুনে গোয়ালতোড়ে দেবী সনকা মায়ের পূজো আরম্ভ হয়ে থাকে।  প্রায় ৪০০ বছর ধরে ঐতিহ্যের এই পরম্পরা রক্ষা হয়ে চলেছে।  একটি বারের জন্য তা লঙ্ঘন হয়নি।





১৯৮০ সালে এই রাজবাড়ির অদূরেই জঙ্গল থেকে আবিষ্কৃত হয়েছিল যশোবন্ত সিংহের নাম খোদাই করা তিনটি কমান । দুইটি ব্রোঞ্জের ও একটি লোহার।  এগুলিকে কলকাতার প্রত্নতত্ত্ব সংগ্রহশালায় সংরক্ষণের জন্য দিয়ে দেওয়া হয়েছে। মঙ্গলাপোতা রাজবাড়ির সেই বনেদিয়ানা আজ আর নেই। নেই সেই আভিজাত্য।  সেইসঙ্গে হারিয়েছে দূর্গাপূজোর জৌলুস।  ভগ্নপ্রায় অবস্থা রাজবাড়ির।  পলেস্তরা খসে পড়েছে।  রয়েছে চূনসুড়কির গাঁথা মোটা মোটা দওয়াল ওয়ালা দালান কোঠা।  বহু দূর দূর থেকে একসময় মানুষ আসত এই পূজো দেখতে ও আনন্দ করতে।  পূজা মন্ডপ বা ঐ রাজবাড়ি এলাকা গম্ গম্  করতো।  চলত যাত্রা , থিয়েটার, নাটক।  বসতো বাউল গান বা কীর্তনের আসর। এখন ঐ রাজবাড়ি এলাকায় এক ছোট্ট মেলা বসে। এখন রাজবাড়ির বংশধর হিসেবে রয়েছেন শ্রী অরবিন্দ সিংহ এবং তার ভাইয়েরা।  তারাই পূজো করেন।  আর্থিক সংকটের জন্যই পূজো নিষ্প্রভ হয়ে পরেছে। তবে গ্রামের বা আশেপাশের মানুষ সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন।  এই ভাবেই মঙ্গলাপোতার এই সুপ্রাচীন গৌরবময় দূর্গাপূজো নিজের ঐতিহ্য বজায় রেখে আজও টিকে রয়েছে। 



খুব সহজেই এখানে আসা যায়।  ট্রেনে বা বাসে বা গাড়ীতে এখানে আসতে পারেন।  ট্রেনে আসতে হলে পুরুলিয়া এক্সপ্রেস, রূপসী বাংলা এক্সপ্রেস বা অরন্যক এক্সপ্রেসে এসে নামতে হবে গড়বেতা স্টেশনে। আর আছে প্রচুর বাস কলকাতা বা হাওড়া থেকে গড়বেতা আসার জন্য।  গড়বেতা থেকে অটো বা যে কোনো গাড়ী ভারা নিয়ে আসা যেতে পারে মঙ্গলাপোতা গ্রামে। গাড়ী নিয়ে এলে আরামবাগ--গড়বেতা--ধাদিকা মোড় হয়ে সহজেই পৌঁছানো যায় মঙ্গলাপোতায়।  যদি কেউ রাত্রে থাকতে চান তবে গড়বেতায় ছোটোখাটো লজ আছে। এছাড়া চন্দ্রকোনা রোডে ভালো থাকার জায়গা আছে।


Tuesday, 15 October 2024

দূর্গোতিনাশিনীর আরোধনায় কুমারীপূজা

 

শুদ্ধাত্মা কুমারী ...........বিশ্বজননী ভগবতীর আর এক রূপ  


সাধারণত   পূজা হয় কোনো না কোনো দেব দেবীর। আর সব পূজাই উপাসনা পদ্ধতিতে থাকে। সেখানে ঘট বা প্রতিমা দেব-দেবীর প্রতীক হিসেবে গণ্য হয়। অনেকক্ষেত্রে চিত্রপট ব্যবহার করা হয়। কিন্ত দুর্গাপুজোর সময় কুমারী পুজো নিয়ে একটা প্রশ্ন জাগে......কুমারী বালিকা আবার পুজনীয় হয় কি? কুমারীতো পার্থিব একজন। তার আবার পুজো কেন?এ কি দুর্গা নাকি ছোটো  দুর্গা হিসেবে  পুজো করা হয়?

কুমারী পূজার দার্শনিক তথ্যে সেখানে বলা হয়েছে...... পরমার্থ ও দর্শন নারী পরমার্থ অর্জন। এই বিশ্বে প্রতিনিয়ত সৃস্টি, স্থিতি ও লয় সাধিত হচ্ছে, সেই ত্রিশক্তি বীজকারে কুমারীতে নিহিত। কুমারী প্রকৃতি বা নারী প্রতিক ও বীজ। এই ভাবনায় ভাবিত হতে দেখা যায় শ্রীরামকৃষ্ণ পরমহংসদেব স্ত্রীকে ষোড়শী ঞ্জানে পুজো করতেন। 

 কুমারী পূজার শুরু ঠিক কবে তা নির্দিষ্ট করে বলা যায় না। যোগীনিতন্ত্র নারী কুমারী দেবী দুর্গার উল্লেখ পাওয়া যায়। সেখানে দেবীর উদ্দেশ্যে বলা হয়েছে....... হে দুর্গা, তুমি নারী ও কুমারী। আমরা কাত্যায়নকে জানার জন্য তোমার ধ্যান করছি। আপনি আমাদের প্রেরণা প্রদান করেন।  যোগীনিতন্ত্রে কুমারী পূজা সম্পর্কে উল্লেখ আছে...... ব্রহ্মাশাপবশে মহাতেজা বিষ্ণুর দেহে পাপ সঞ্চার হলে হিমাচলে মহাকালীর তপস্যা শুরু করেন। বিষ্ঞুর তপস্য মহাকালী সন্তুষ্ট হন৷ দেবী সন্তোষষ্টি মাত্র বিষ্ণুর পদ্ম হতে "কোলা" নামক মহাসুরের আবির্ভাব হয়। সেই কোলাসুর ইন্দ্রাদি দেব গণকে পরা করে অখিল ভূমণ্ডল, বিষ্ণুর বৈকুণ্ঠ এবং ব্রহ্মার কমলাসন প্রভৃতি দখল করে। তখন পরাজিত বিষ্ণু ও আদিদেব দেবীর স্তব শুরু করেন। দেবগণের স্তবে দেবী সন্তুষ্ট হয়ে বলেন, “হে বিষ্ণু! আমি কুমারীরূপ ধারণ করে কোলানগরী গমন করে কোলাসুরকে সবন্ধবে বধ করিব ৷ অতঃপর তিনি কোলাসুরকে বদ করেন এবং------সেই থেকে দেব-গন্ধর্ব, কিন্নর-কিন্নরী, দেবীগন সমবেত হয়ে কুসুম-চন্দন-ভারে কুমারী অর্চনা করেন। কথিত  আছে, বাসুদেব শ্রীকৃষ্ণের নির্দেশে তৃতীয় পান্ডব অর্জুন কুমারী পুজো করেন।

শিশুকন্যাকে কুমারী রূপে পূজা করার এক সুক্ষ্ম নিদর্শন রয়েছে 'বৃহদ্ধর্ম পুরাণ'-এ। সেখানে আছে, রাম কর্তৃক রাবন বধের জন্য   দেবতারা  ব্রহ্মার  কাছে যজ্ঞ করার জন্য অনুমতি চাইলে ব্রহ্মা দেবীকে জাগরিত করার কথা উল্লেখ করেন। দেবতারা তখন আদ্যাশক্তির স্তব করেন। সেই স্তবে সন্তুষ্ট হয়ে এক কুমারী দেবী আবিভূত হয়ে দেবীর বোধন করে পূজা করার নির্দেশ দেন।

সেই নির্দেশমতো ব্রহ্মা দেবতাদের  সঙ্গে পৃথিবীতে এসে  ঘুরতে ঘুরতে এক নির্জন স্থানে বেলগাছের একটি পাতায়  সোনার বরণ এক শিশুকন্যাকে নিদ্রিত দেখে 'সোনাবিশ্বপ্রসবিনী জগজ্জননী মহামায়া'  বলে স্তব করেছিলেন । ব্রহ্মার সেই স্তবেই শিশুকন্যা জাগরিত হয়ে দেবীরূপে আবির্ভূত হয়েছিলেন এবং দেবতাদের অভীষ্ট পূরণ করবেন বলে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন।

 শ্বেতাশ্বতর উপনিষদেও কুমারী পুজোর কথা উল্লেখ আছে। এছাড়াও প্রাচীন শাস্ত্র ও বই থেকে নেপাল, ভুটান ও সিকিমের কুমারী পুজোর উল্লেখ করা যায়। সুদূর অতীতের কুমারী পূজার প্রচলন ছিল এবং তার ব্যবহার পাওয়া যায় "কুমারী পূজাদি আবেদন" বইয়ের পুথি থেকে। আর লেখা থেকে অনুমান করা কঠিন নয় দেবীর কুমারীর নাম অনেক পুরানো। দেবীর কুমারী নাম যেমন পুরানো, তার আরাধনা ও পূজার ঘটনা আচরনও প্রাচীন।

স্বামী বিবেকানন্দ তাঁর প্রথম কুমারী পুজো করেন ১৮৯৮ সালে, তাঁর কাশ্মীর ভ্রমণের সময়। এক  মুসলমান মাঝির শিশুকন্যাকে কুমারী হিসেবে পুজো করেন স্বামীজি। যা দেখে তার মানসকন্যা নিবেদিতা সহ তার অন্যান্য পশ্চাত্য শিষ্যও  বিস্মিত হন। প্রব্রাজক হিসেবে উত্তরপ্রদেশের রায়বাহাদুর গগনচন্দ্রের শিশুকন্যা মণিকা রায়কে কুমারী রুপে পুজো করেন। ১৮৯৮ সালের অক্টোবরে কাশ্মীরের ক্ষীরভবানীতে কুমারীপূজো করেন।  ক্ষীরভবানী কাশ্মীরের এক অতি প্রাচীন দেবীপীঠ। স্বামীজি এই সময় প্রায় একাকীই থাকতেন এবং ক্ষীরভবানীর প্রথা অনুযায়ী পূজা করে "পায়েস"  নিবেদন করতেন।   ১৯০১ সালে যখন তাঁর হাতে বেলুড় মঠে দুর্গা পুজো শুরু হয়, তখন নয়জন কুমারী এক সঙ্গে পুজিত হন। তবে এখন শাস্ত্রীয় রীতি মেনে একটি কুমারীকে পুজো করা হয়।

বিশেষত দুর্গাপুজোর অংশ হিসাবে কুমারী পূজা করা হয়।এছাড়াও কালীপুজো, জগদ্ধাত্রীপূজা, অন্নপূর্ণা পূজা এবং কামাখ্যাই কুমারী পূজার প্রচলন রয়েছে। মাদুরাইয়ের মীনাক্ষী দেবী মন্দিরে ও কুমারীতে মহা ধুমধামে কুমারী পূজা করা হয়। বিশ্বাস করা হয় যে কুমারীপুজো ছাড়া হোম- যঞ্জ করে দুর্গাপুজোর সম্পূর্ন ফল পাওয়া যায় না। সাধারণত দুর্গাপুজোর অষ্টমী তিথিতে কুমারী পুজো করা হয়। তবে সপ্তমী, অষ্টমী ও নমবী ---- এই তিনদিনই বা নিয়মনীতি অনুসারে কুমারী পূজো করা যেতে পারে।

পুরোহিতদর্পন গ্রন্থে কুমারী পুজোর পদ্ধতি ও মাহাত্ম্য সবিস্তারে লেখা রয়েছে। বলা হয়েছে কুমারী পূজায় কোনো জাতি, ধর্ম বা বর্নভেদ নেই। দেবী , এক থেকে ষোলো বছর পর্যন্ত সুলক্ষণ যে কোনো কুমারী পূজনীয়। তবে সাধারন ব্রাহ্মণ কুমারী নারী পুজাই সর্বাত্মক। তবে এ কথা বলা যাবে না যে ব্রাহ্মণ্যই কেবলমাত্র পূজ্য।


পুরাতন ক্রমানুসারে পূজা কাল এই সকল কুমারীদর বিভিন্ন প্রকারের নামে  অভিহিত করা হয়। অনেকে বিশ্বাস করেন যে বিভিন্ন  পুজোয় বিভিন্ন ফল লাভ করা যায়। তবে দুই থেকে দশ বছর কুমারী হওয়া ভালো।

[১] এক বছরের   নারী কুমারীকে সন্ধ্যা  বলা হয়েছে। [২] দুই বছর বয়সী কুমারীকে সরস্বতী বলে ডাকা হয়। পূজার ফল :-: দুঃখ ও দারিদ্র কাটানোর জন্য, ভাগ বৃদ্ধির জন্য, ছাত্র ওনা ও আয়ু বৃদ্ধির জন্য। [৩] তিন বছর বয়স্ক কুমারীকে ত্রিমূর্ত্তি বলা হয়েছে। পূজার ফল :÷: পুত্র সন্তান, বিদ্যা ও বুদ্ধির জন্য এবং সব ধরনের মনস্কামনা পূরণের জন্য। [৪] চার নারী কুমারীকে কালিকাগ্রাম   নির্দেশ করা হয়। কথিত আছে রাজসুখ প্রাপ্তি, অত্যন্ত জটিল সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া যায় এই পুজো থেকে। [৫] পাঁচ বছর পুরানো কুমারীকে সুতাপা বলে   নামকরণ করা হয়। বলা হয়, সমস্ত রোগমুক্তির জন্য এবং সব ক্ষেত্রে জয় লাভের জন্য এঁর পুজো ফলপ্রদ৷  [৬]  ছয়  বছর বয়সী কুমারীকে  উমা ডাকা হয়। জয়ের জন্য এবং সবার প্রিয় পূজার জন্য এঁর জো করা হয়। [৭] সাত বছর পুরানো কুমারী মালিনীগ্রাম  পরিচিত। প্রকৃত ধনসম্পদ ও মান সন্মান লাভের জন্য এঁর পুজো হয়ে থাকে । [৮] আট বছর  কুমারীকে কুঞ্জিকা আখ্যা দেওয়া হয়েছে।  ঝগড়ার অবসান ও সিদ্ধিলাভের আশায় এঁর পূজো করা হয়।  [৯] নয় বছর নারী কুমারীকে কলিসংমা  বলা হয়েছে।  কঠিন থেকে  কঠিনতর মমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য এঁর পূজো হয়ে থাকে। [১০] দশ বছরের কুমারীকে অপরাজিত ডাকা হতে পারে।   অশুভ শক্তির হাত থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য এঁর পূজার আয়োজন।      [১১] এগারো বছরের কুমারীর নাম রুদ্রাণী । [১২] বরো রছর কুমারী হলে  ভৈরবী    ডাকা হয়। [১৩] তেড় বছরের পুরনো কুমারীর নাম হবে মহালক্ষী । [১৪] চোদ্দ বছরের কুমারীর  নাম পাঠক । [১৫] পনেরো বছরের কুমারীকে এলাকাঞ্জা মনে হবে। [১৬] ষোল বছরের পুরনো কুমারীর  নাম অন্নদা বা অন্য রাষ্ট্রে অম্বিকা নাম হবে।

পুজোর আগে কুমারী কে স্নান করিয়ে নতুন শাড়ি পরিয়ে দেওয়া হয়। ফুলের গয়না দিয়ে অঙ্গ সাজানো হয়। পা ধোয়ানো হয়।  পায়ে আলতা ও কপালে সিঁদুরের টিপ দেওয়া হয়। কুমারীকে দেবী জ্ঞানে উপচারে পুজো করা হয়। পূজারী ও ভক্তগণ কুমারীর মধ্যে দেবীকে অভিবাদন করে। কুমারীর মধ্যে মাতৃ ধর্মকে পুজো করা হয়। সাধারণ মনের পশুত্ব নাশ করতেই এই পুজো। ১৬ টি উপকরণ ব্যবহার করা হয়। পাঁচ উপকরণ দিয়ে কুমারীকে পুজো করা হয়। 


কুমারী,  মহিলা দেবী... কালীতন্ত্রে। কুমারীর চরণ ধুয়ে দিয়ে কেশর ও তিল দিয়ে ভক্তিপূর্বক পুজোতে অসুর, বিরুদ্ধ গ্রহ, ভূত, পিচাশ, গন্ধর্ব, যক্ষ, রাক্ষস, দেবীগন, ব্রহ্মা, বিষ্ণু ও মহেশ্বর, সকলে  প্রীত ও প্রসন্ন হন।

নিয়ম পূর্বক কুমারীপূজা নাশ করে বিঘ্ন, ভয় ও শত্রু। রোগ আরগ্য হয়। শান্ত ও প্রসন্ন এই পুজো, বিরুদ্ধ ও রুষ্ট গ্রহদি শুভ ফলদান করে। মানুষ সম্মান, ভূমি, লক্ষ্মী, বিদ্যালাভ করেন। মহাতেজ প্রাপ্তি হয়। অপ্রত্যাশিত দৈবপাত, দুঃস্বপ্ন, অমৃত্যু ব্যক্তি মানুষের সমস্ত দুঃখদায়ক দূর হয় কুমারী পূজার সময়।

শক্তিপীঠে কুমারী পূজার ফল অশেষ। যেকোনও জাতির কুমারী পুজো করা বাধা নেই। তন্ত্রের কথায়, কুমারী পূজায় জাতিভেদ বিচার করতে নেই। জাতিভেদে মানুষ নরকগামী হয়।

জাগতিক সমস্ত দুঃখ দারিদ্র ও শত্রু এবং শক্তি প্রাপ্তির জন্য কুমারী পুজো সর্বোত্তম। কুমারী পূজার ফলে অপ্রাপ্তি পূরণ করেন দেবতারা। তবে এক নারীপূজোর ফল, শত কুমারী পুজো ফল একই, তারতম্য নেই। 

ব্যবস্থায় বলা হয়েছে, কুমারী পুজো স্বয়ং ভগবতী প্রসন্ন হন। যেখানে কুমারী পুজো হয়, সেখানেই ভগবতীর নিবাস। সেইজন্য কুমারীকে মান্য করা হয় ভগবতীতে। যে রাজরূপ রূপক পুজোর দেবীকে নৈবেদ্য ও ভোজনে তৃপ্ত করে, সে ত্রিলোক তৃপ্ত করে

Tuesday, 6 August 2024

গেরুয়া বসনের অন্তরালে

 

মানুষকে এই বস্তুবাদী দুনিয়া থেকে ত্যাগের পথে নিয়ে যায় এই গেরুয়া রং। তাই সেই বেদের সময় থেকেই গেরুয়া হয়ে গিয়েছিল বস্তুবাদী দুনিয়া ত্যাগ করে বৃহত্তম আধ্যাত্ম্য দুনিয়ায় নিজেকে সঁপে দেওয়ার রং। তাই গেরুয়া হয়ে গেল সাধু মহাত্মাদের পরিধেয় বসনের রং।



স্বামীজি থেকে শুরু করে ভারতের বিভিন্ন প্রান্তে যে সাধু মহাত্মাদের দেখা যায়, তাঁরা গেরুয়া বসন পরে থাকেন। যুগ যুগ ধরেই কিন্তু এ দৃশ্য মানুষ দেখে এসেছেন। কিন্তু কেনই কেবল গেরুয়া বসন? কেন অন্য কোনও রং নয়? এর কারণ খুঁজতে কিন্তু পিছিয়ে যেতে হয় বেদের সময়ে।

গেরুয়া রং হল আগুনের রং। গেরুয়া হল সূর্যের রং। ঋগ্বেদে অগ্নিকে আগুনের দেবতা হিসাবে চিহ্নিত করা হয়। বৈদিক যে কোনও ক্রিয়ায় আগুনের ব্যবহার আবশ্যিক। সে হোম হোক বা আরতি। বলা হয় আগুন সবকিছুকে পবিত্র করে তোলে। আগুনের রং হল ত্যাগের রং। আর সেই রং হল গেরুয়া। মানুষকে এই বস্তুবাদী দুনিয়া থেকে ত্যাগের পথে নিয়ে যায় এই গেরুয়া রং। তাই সেই বেদের সময় থেকেই গেরুয়া হয়ে গিয়েছিল বস্তুবাদী দুনিয়া ত্যাগ করে বৃহত্তম আধ্যাত্ম্য দুনিয়ায় নিজেকে সঁপে দেওয়ার রং।

আমাদের অনেকেরই মনে প্রশ্ন জাগে, পৃথিবীতে এত রঙ থাকা সত্ত্বেও কেন সাধু সন্ন্যাসীরা গেরুয়া রঙকে এত পছন্দ করেন? এই রং অনেকটা কমলা রঙের মতো। আসলে গেরুয়া রঙের যোগ রয়েছে পুরাণের সঙ্গে। আধ্যাত্বিক বিশ্বাস সহকারে সাধুরা এই রঙের পোশাক পরিধান করেন। বলা হয় অগ্নিদেবের রঙ্গ গেরুয়া। হিন্দু ধর্মের পাশাপাশি বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদেরও গেরুয়া রঙের পোশাক পরতে দেখা গিয়েছে। লাল হলুদের মিশেলে পাওয়া এই রঙকে বলা হয় সুখের প্রতীক। কথিত আছে, গেরুয়া রঙের সঙ্গে মানব শরীরের অঙ্গের বিশেষ যোগ রয়েছে। সেই তালিকায় রয়েছে কিডনি, প্রজননতন্ত্র, মলাশয় এবং মূত্রথলি। এই রং নাকি শারীরিক সুস্থতার পাশাপাশি মানসিক ভারসাম্য বজায় রাখে তাই এর সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে সুস্থ অসুস্থতার বিষয়।

গেরুয়া রং বলতে দেশের জাতীয় পতাকার সর্বোচ্চ রং।  এর পাশাপাশি আরও একটি বৈশিষ্ট্য স্পষ্ট লক্ষ্যনীয় যা কিনা প্রধানত ধর্মীয় এবং পৌরাণিক তাৎপর্য পূর্ন।   


ইতিহাস ঘাটলে দেখা যাবে এক সময় এদেশে প্রচলিত ছিল বর্ণাশ্রম প্রথা। কালের গহ্বরে সেই প্রথা এখন প্রায় অস্তমিত। এই প্রথারই শেষ পর্যায় ছিল সন্ন্যাস। অর্থাৎ বৃদ্ধ বয়সের অন্তিম আস্তানা। সন্যাস এখন আর বাধ্যতামূলক নয় ঠিকই, তবে ভারতীয়দের স্মৃতিতে এ প্রথা আজও স্পষ্ট। এখনও বহুজন সন্যাসী রয়েছেন......., একান্তই ব্যক্তিগত ইচ্ছেয় যাঁরা এই পথ বেছে নিচ্ছেন। কিন্তু সন্ন্যাস এই প্রথার সঙ্গে যে অচিরেই মিলেমিশে গিয়েছে একটি রং, গেরুয়া। এটির আসল কারণ কী? কি কি যুক্তি রয়েছে এর পিছনে।

সাধারণত গেরুয়া রংটি আমরা আধ্যাত্মিক চোখেই দেখে থাকি। রংটি হিন্দু পুরাণের দুটি শুভ জিনিসের সাথে অনুরণিত হয়। তা হল সূর্যোদয় ও সূর্যাস্তের রঙ এবং আগুনের রং। পুরাণ মতে, সূর্য এবং আগুন এই দুটিই গুরুত্বপূর্ণ উপাদান যা উল্লেখযোগ্য শক্তি। কিন্তু আধুনিক সময় দাঁড়িয়ে কেবল পুরাণের উপর ভিত্তি করে জীবন চলে না তার সঙ্গে অনিবার্য হয়ে দাঁড়ায় বিজ্ঞানও। আপনি কি জানেন শুধু ধর্ম নয়,  সাধুদের গেরুয়া পোশাক পরার পিছনে বৈজ্ঞানিক কারণও আছে।

এ বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য তুলে ধরেছেন, সাইকো নিউরোবিক্স বিশেষজ্ঞ ডক্টর বি কে চন্দ্রশেখর। তাঁর মতে, সাতটি প্রাথমিক রং আমাদের শরীরের সাতটি চক্রের সাথে যুক্ত। এগুলি হল- লাল, গেরুয়া বা কমলা, হলুদ, সবুজ, নীল এবং বেগুনি। প্রতিটি রঙেরই রয়েছে ভিন্ন তরঙ্গদৈর্ঘ্য। যখন আমরা কোনও রঙের দিকে তাকাই, তখন সেই রংগুলি প্রত্যেকেই নিজের নিজের বৈশিষ্ট্য মেনে আমাদের মনের ওপর প্রভাব বিস্তার করে। এটিকেই বলে কালার ভাইব্রেশন থেরাপি।

কিন্তু কী এই কালার ভাইব্রেশন থেরাপি?

যখন আমরা একটি রং দেখি, তখন এটি আমাদের রেটিনায় একটি চিত্র তৈরি করে যা বৈদ্যুতিক সংকেতে রূপান্তরিত হয় এবং তৎক্ষণাৎ মস্তিষ্কে নির্দেশ পাঠায়। চোখের অপটিক নার্ভ এটিকে ভিজ্যুয়াল কর্টেক্স এবং মস্তিষ্কের অন্যান্য অংশের সাথে সংযুক্ত করে। প্রতিটি রংই আমাদের মস্তিষ্কে আলাদা আলাদা কম্পন তৈরি করে। এবং এই কম্পন থেকেই মানসিক প্রভাব বিস্তার হতে পারে মনে করেন তিনি।

গেরুয়া রংকে এমনিতেই আমরা ত্যাগ ও সহনশীলতার প্রতীক হিসেবে জেনে থাকি। পাশাপাশি ডাঃ চন্দ্রশেখর ব্যাখ্যা থেকে জানা যায়, এই রঙের উপর দৃষ্টি নিক্ষেপ করার ফলে মানুষের মস্তিষ্কে যে কম্পন তৈরি হয় তা একজনের স্বাস্থ্যের ক্ষেত্রেও গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলে। মানুষের কোলন, মূত্রাশয়, কিডনি, প্রজনন ব্যবস্থা এবং মূত্রথলি জনিত বিভিন্ন ক্রিয়া নিয়ন্ত্রণ করতে পারে এই রং।


যদিও বৌদ্ধরা বিশ্বাস করেন কমলা আনন্দের রঙ কারণ এটি লাল এবং হলুদের সংমিশ্রণ। কিন্তু বিশ্বাস যাই হোক এই রঙের যে বৈজ্ঞানিক ভিত্তিও যথেষ্ট রয়েছে তা জানা যায় চিকিৎসকের ব্যাখ্যা থেকেই। গেরুয়া রঙের উপর মনোনিবেশ করা একজনের জীবনে মানসিক এবং শারীরিক উভয় ক্ষেত্রেই একাধিক উপকার করতে পারে এটি। এমনকী ক্লান্তি দুর করতেও সহায়তা করে।


সুতরাং সাধুদের পোশাকের এহেন রং কেবল একটা মিথ নয়, অভ্যাসও নয়। এটির নেপথ্যে রয়েছে বিজ্ঞান। আধ্যাত্মিক বা ধর্মীয় ব্যাখ্যার পাশাপাশি একজন সাধুর প্রতি সাধারণ মানুষের বিশ্বাস এবং আকর্ষণ জোরালো করতেও সাহায্য করে পরনের ওই গেরুয়া বসনটিই।

তবে পুরানো নথিপত্র ঘাটলে এই গেরুয়া রং-এর পোশাক কেন সন্ন্যাসীদের পোশাকের রং হল, তা সম্বন্ধে কিছুটা আলোকপাত করা যেতে পারে। জানা যায় এইরকম..........

শ্মশানে মৃতদেহ নামিয়ে রাখার পর পুরোনো কাপড় ফেলে দিয়ে দেহটি গঙ্গায় স্নান করিয়ে নতুন কাপড় পরিয়ে শুরু করা হয় মৃতের অন্তিম যাত্রা। ওই ফেলে দেওয়া কাপড় সংগ্রহ করে আনতেন বৌদ্ধ শ্রমণেরা। লাল মাটির উপর অনেক দিন ফেলে রাখলে সেই কাপড়ে মাটির রঙ ধরত। তখন মাটি থেকে কাপড় তুলে নিয়ে সামান্য ধুয়ে তাঁরা গায়ে পরতেন। এইভাবে তৈরি হত সন্ন্যাসীর পরিধেয় আড়াই হাজার বছর আগে।

বৈদিক যুগের সন্ন্যাসী প্রায়শই নগ্ন, লজ্জা তাঁকে ছেড়ে গেছে। তবু দিন পাল্টায়। অরণ্য কেটে যতই বসতি স্থাপন করা হল, ততই সন্ন্যাসীরও প্রয়োজন হল বসনের। সামাজিকতার কারণে তো বটেই, শীত এবং রৌদ্রের তাপ হতে বাঁচার তাগিদেও। 

কাপড়ে মাটির রঙ ধরানো হত একথা মনে রাখার জন্যেই যে, এ দেহ একদিন মাটি হয়ে যাবে। তাই, জড়িয়ে পোড়ো না এ দেহের মায়ায়।  মাটির রঙে রাঙানো কাপড় সদাই সেকথা মনে করাতো। 

কিন্তু কাপড়ের রাঙানোর এই প্রক্রিয়া দীর্ঘ বলে মনে হল একদিন। কনখলে আর রাজমহেন্দ্রীর মত জায়গায় এমন সব পাহাড় পাওয়া গেল যাদের রঙ লালচে গেরুয়া। তখন সেখান থেকে পাথর নিয়ে আসা হল। দুই খণ্ড বাদামী পাথর দুহাতে ধরে জলের মধ্যে ডুবিয়ে ক্রমাগত ঘষে ঘষে রঙ তৈরি হত। জলের সঙ্গে গুলে সেই আশ্চর্য রঙ তৈরি হলে, কাপড় বারবার ডুবিয়ে ডুবিয়ে নিংড়ে নিংড়ে থুপে থুপে রঙ করার প্রক্রিয়া চলতে লাগল। হাত ব্যথা, কোমর ব্যথা, শিরদাঁড়া ব্যথা হয়ে গেলেও গৈরিক কাপড় শুকিয়ে গেলে গায়ে পরবার সময় সন্ন্যাসীরা অনির্বচনীয় শান্তি ও স্থির ধ্রুব আনন্দের অধিকারী হতেন।

অনেকের মনে প্রশ্ন হতে পারে,  কেন বাজার থেকে গেরুয়া থান কাপড় কিনে আনলেই তো হতো। তার থেকে জামা, কাপড় বানিয়ে নিলেই হল। এত কাণ্ডের দরকার কী? কিন্তু অমন রেডিমেড কাপড়ে এত বছরের ইতিহাস মাখা থাকত কি? মাটির সুঘ্রাণ, মাটি হয়ে যাবে সব একদিন, মনে পড়ত কি? দশনামী সাধুদের কাপড় অন্তত মাটিতে ছুপিয়েই পরার রীতি। 

কালক্রমে কনখল কিংবা রাজমহেন্দ্রীর সেই  গিরিশ্রেণী ধ্বংস হয়ে গেল। মাটির নীচে পাওয়া গেল কপারের মাইন। লাল পাথর চলে গেল, এল এক কেমিকাল। খুব সহজে জলে গুলে যায়। রঙ উজ্জ্বল, পাক্কা। এখন এই কেমিকালেই সাধুরা কাপড় রাঙান। একটা ইতিহাস হারিয়ে গেল।

এই রঙের মূল বৈশিষ্ট্য হল এই রঙ মনের ওপর বিশেষ দৃষ্টিভঙ্গিগত প্রভাব সৃষ্টি করে। ক্রমাগত গৈরিক রঙ ব্যবহার করলে আর কোনও রঙের পোশাক পড়তেই ইচ্ছা করবেনা। এই রঙ পরিধান করলে মনে শান্তি আসে, কালিমা দূর করে, ধীরে ধীরে আত্মচেতনা বৃদ্ধি পায়। মানব জীবনে গৈরিক রঙের প্রভাব সূদূর প্রসারী। গৈরিক রঙ অত্যন্ত শুভ রঙ। এই রঙ মনের কুসংস্কারকে দূর করে সংস্কারি করে তোলে চিত্তকে। ত্যাগের অন্যতম প্রতীক এই গেরুয়া রঙ। এই জন্য সর্বত্যাগী সন্ন্যাসীর সঙ্গে গৈরিক রঙটি ওতোপ্রতো ভাবে জড়িয়ে আছে। সামাজিক আচার অনুষ্ঠানে বা উপনয়নের মতো অনুষ্ঠানে এই বসন আবশ্যিক।

 গেরুয়া রঙ 'ত্যাগ, সাহস, শক্তি এবং বীরত্বের ' প্রতীক।

 একজন সন্ন্যাসী তার সমস্ত কামনা ত্যাগ করেছেন, তার লাভের কিছুই নেই। যেহেতু তার কিছু পাওয়ার আশা নেই, তাই কিছু হারানোর ভয়ও তার নেই। যেহেতু তার কোনো ভয় নেই, তাই তার সাহস ও মানসিক শক্তির কোনো অভাব নেই। এই কারণে সন্ন্যাসীরা গেরুয়া পরেন।


<< সংগৃহীত >>

Saturday, 27 April 2024

ভগবান সাধনায় জপ ও দীক্ষা



(******** দীক্ষা********)

'' মানুষ গুরু দীক্ষা দেয় কানে , জগৎ গুরু দীক্ষা দেন প্রাণে ।

আপনারা খুব করে জ্ঞান অর্জন করুন । বিজ্ঞান , দর্শন , ইতিহাস আলোচনা করুন ।

মূর্খ থেকে কি লাভ ?

লোকের কথায় কেবল চালিত  হবেন , কোন কিছুতে নিষ্ঠা সহকারে লেগে থাকতে পারবেন না । তীক্ষ্ণ , তীক্ষ্ণতর বুদ্ধির নিকট ভয় পেয়ে যাবেন ।

একটু জ্ঞান লাভ হলেই বুঝতে পারবেন দেশকাল - ভেদে আপনাদের প্রাণ কি চায় । আপনাদের আকাঙ্ক্ষার স্বরূপ টি কি , আপনার আদর্শই বা কি ।

শুধু হুজুগ করে দীক্ষা দীক্ষা করে মাতলে কি হবে ?

জমি প্রস্তুত হলে ভগবান আপনি ই দীক্ষা দেবেন । সে দীক্ষা লাভের জন্য হৃদয় কপাট খুলে সতত উন্মুখ হয়ে বসে থাকুন । সময় হলে কার মুখ দিয়ে কার হৃদয় থেকে প্রেরণা লাভ করবেন তা কে বলতে পারে ?

কোন পথ দিয়ে প্রভু কাকে তাঁর আঙ্গিনায় নিয়ে যাবেন কে বলতে পারে ?

কিন্তু মনে প্রাণে সত্যি কারের দীক্ষা পেলে তা অমনি বুঝতে পারবেন ।

বাহ্য আনুষ্ঠানিক দীক্ষা র একটা সংক্রামক শক্তি আছে । একজন দীক্ষা র আগ্রহ প্রকাশ করলে তা বহুর মধ্যে সংক্রামিত হয় ; কিন্তু কিছুদিন পরে ঐ আগ্রহ কেটে যায় । তখন সে লোক যে সেই । তাতে বরং অনিষ্ট হয় ।

হুজুক কেটে গেলে জ্ঞান - মার্জিত বিচার - বুদ্ধি নিয়ে গুরুকে পরীক্ষা করে স্থির শান্ত চিত্তে , বজ্র দৃঢ় সংকল্প নিয়ে দীক্ষা গ্রহণ করতে হয় । ''

 দীক্ষা শব্দের বর্ণদুটির প্রথমটি দান-বাচক, কিন্তু দ্বিতীয়টি 'ক্ষয়-বাচক'।

দ-> দান

ক্ষ-> ক্ষয় বা ধ্বংস।

অর্থাৎ দীক্ষা হ'ল সেই প্রক্রিয়া, যার দ্বারা দীক্ষাপ্রাপ্ত ব্যক্তিকে গুরু আধ্যাত্মিক শক্তি ও জ্ঞান *দান* করেন, যা শিষ্যের অজ্ঞান ও বন্ধনকে *ক্ষয়* বা ধ্বংস করে।

আর একটি অর্থে দীক্ষা মূল ক্রিয়াপদ 'দীক্ষ' থেকে উদ্ভূত,  যার অর্থ 'বৃদ্ধি করা', 'উন্নত করা' কিংবা পবিত্র করা। এই অর্থে দীক্ষা হ'ল 'পবিত্রকরণ', যা আমাদের আধ্যাত্মিক উন্নতি ঘটায়।

সুতরাং দীক্ষা একমাত্র তাঁর কাছ থেকেই নেওয়া যেতে পারে যাঁর আধ্যাত্মিক শক্তি দানের যোগ্যতা আছে। 

গুরু এইরূপ যোগ্যতাসম্পন্ন না হ'লে কিন্তু দীক্ষা ব্যর্থ হয়ে যায়। সেক্ষেত্রে মন্ত্রে কোনও কাজ হয় না। 

_দীক্ষাপ্রসঙ্গে_ 🌼🌼🌼

*দীয়তে (দেওয়া) এবং ক্ষীয়তে (ক্ষয় পাওয়া) এই দুটি শব্দ সমন্বয়ে 'দীক্ষা' শব্দটির ব্যুৎপত্তি। আলো দেওয়া এবং অন্ধকার ক্ষয় —এই হল সকল দীক্ষাকর্মের মূল ভাবনা।* 

*কুলার্ণবতন্ত্রে বলা হয়েছে—*

*'দীয়তে বিমলং জ্ঞানং*

*ক্ষীয়তে কর্মবাসনা'*

*—অর্থাৎ দীক্ষা হল তাই যাতে বিমল জ্ঞানের উৎপত্তি ঘটে ও জীবের কর্মবাসনা নিঃশেষে ক্ষয় পায়।*

*দীক্ষা মানে 'দয়াপূর্বক ঈক্ষণ'— পরমেশ্বরের অর্থাৎ সদ্গুরুর সস্নেহ কৃপাদৃষ্টিপাতের নাম দীক্ষা।*

*একটি সুনিদ্দিষ্ট জীবনাদর্শের নিকটে নিজেকে নিঃশেষে নিবেদনের জন্য সঙ্কল্প গ্রহণের নাম দীক্ষা। সেই আদর্শটি কোনও দেবতা, মন্ত্র, মূর্তি, প্রতীক, ভাব, ব্যক্তি বা মতবাদকে অবলম্বন করে প্রকটিত হতে পারে।* 

*যিনি যে মত বা পথেই দীক্ষিত হয়ে থাকুন না কেন, কোন একটা উচ্চ লক্ষ্য বা আদর্শ সামনে না থাকলে তা যথার্থ দীক্ষা হয় না।*

*জন্ম, মৃত্যু, বিবাহের মতনই দীক্ষা মানুষের জীবনের একটি অতীব গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার। অথবা বলা চলে জন্ম, মৃত্যু বিবাহের চেয়েও তা গুরুত্বপূর্ণ কারণ জন্ম-মৃত্যু-বিবাহ জড় জীবজগতকে নিয়েই কারবার করে। দীক্ষার মধ্য দিয়ে জড় ছাড়িয়ে আমি চৈতন্যের অভিসারী হই অথবা জড়ের মধ্যে চৈতন্যকে খুঁজে পাই।...* 

*দীক্ষা শুধু নবজন্ম নয়, জন্ম-জন্মান্তরের মধ্যে এক ভিন্নতর জন্মের নিশানা।*

*দীক্ষাকে বলা হয় আধ্যাত্মিক বিবাহ -জীবের সঙ্গে পরমেশ্বরের মিলন। গুরু হলেন সেই বিবাহের ঘটক। লৌকিক বিবাহে যেমন দুটি দেহ মন ও প্রাণ একত্রে মিলিত হয়, দীক্ষারূপ বিবাহে জীবাত্মা তেমনি পরমাত্মার সঙ্গে মিলিত হবার উদ্যোগ নেয়। দীক্ষার মধ্য দিয়ে ঘটে সেই দিব্য মিলনের সূচনা।* 

*ঋগ্বেদের কাল থেকে বর্তমানের মহাকাশ যুগ পর্যন্ত দীক্ষার উপযোগিতা সমভাবে বিদ্যমান।*

*দীক্ষা হল সাধারণ অর্থে একটি ধর্মীয় অনুষ্ঠান যার মধ্য দিয়ে মানুষ নিজের অন্তরস্থ আত্মিক সাম্রাজ্যে প্রবেশের চেষ্টা করে। সাংসারিক জীবের আত্মিক ব্যাপারে আলোর জন্য তাগিদ অনুভব করাই হল দীক্ষার যথার্থ মূল প্রেরণা।*

><><><><><><><><><><><><><><><><><><><><><><><><><><><><><

○●○●○●○●সাধনা○●○●○●○●

আমরা ভগবানের নাম করব, কত হাজার জপ করব...এটি বড় কথা নয়।

কেউ হয়ত নিরামিষ খায়, কেউ হয়ত এক বস্ত্রে থেকে ভগবানের জন্য তপস্যা করে ।

সেসব কিন্তু কিছুই নয়,যদি না সেগুলিতে আন্তরিকতা থাকে।

আসল কথা হচ্ছে,আমাদের সমস্ত অন্তর দিয়ে ভগবানকে ভালোবাসতে পারছি কি না তা দেখতে হবে...

যে ভালোবাসায় সংসারের অন্য সমস্ত আকর্ষণ তুচ্ছ হয়ে যাবে। এই কথাটি মনে রাখতে হবে।

ভাগবতে বলেছে....

তাঁর প্রতি যে অনুরাগ তা জগতের অন্যসব অনুরাগকে ভুলিয়ে দেয়। সুতরাং তাঁর প্রতি আমাদের ভালোবাসা কতখানি হলো...এই বিচার করে আমাদের সাধন পথে হাঁটতে হবে।

আমরা তাঁর নামে মুহুর্মুহু মূর্ছা গেলেও কিছু হবে না বা আমাদের সমস্ত জীবনটা বসে বসে ধ্যান করলেও হবে না, বছরের পর বছর লক্ষ লক্ষ জপ করলেও হবে না। তীর্থে তীর্থে ঘুরে বেড়ালেও হবে না।

হবে তখন, যখন দেখব তিনি আমাদের অন্তরকে সর্বদা পরিপূর্ন করে রয়েছেন। তিনি ভিন্ন আর কোনো চিন্তা বা বস্তু বা ব্যক্তির সেখানে স্থান নেই।

আমাদের অন্তরের পূর্ন অনুরাগ তাঁকে দিতে হবে। তাঁর চরণে নিজেদের পরিপূর্ন ভাবে সমর্পণ করতে হবে।

....... এটিই সাধনার সার কথা ।

♤♧♤♧♤♧♤♧♤♧♤♧♤♧♤♧♤

*꧁জপ꧂*

পবিত্র ঈশ্বরীয় নাম অথবা শক্তিশালী ইষ্টমন্ত্রের পুনঃ পুনঃ উচ্চারণই 'জপ'।

অরণি কাঠ বারবার ঘর্ষণ করতে করতে যেমন তা থেকে আগুন বার হয়, ঠিক তেমনই গোপন ইষ্টমন্ত্র সঠিক উচ্চারণে জপ করতে করতে তা থেকে শক্তি নির্গত হয়ে সাধককে অতীন্দ্রিয় রাজ্যের দিকে নিয়ে যায়। তখন স্তরে স্তরে মন উপরে উঠতে থাকে।

জপের সময় মুখ বন্ধ এবং জিভ স্তব্ধ থাকা উচিৎ। অর্থাৎ জপ হবে মনে মনে। 

মন অন্যদিকে নিযুক্ত রেখেও মুখে কোনও শব্দ উচ্চারণ করা সহজ। কিন্তু মনকে জপের দিকে নিযুক্ত না রেখে মানসিক জপ প্রায় অসম্ভব, তাই নীরব মানসজপই শ্রেষ্ঠ। 

মনকে অন্য সকল চিন্তা থেকে মুক্ত করে সর্ব প্রকারে ঈশ্বরমুখী করাই সাধনার উদ্দেশ্য। 

মনের চিন্তা দুই প্রকার : শ্রবণধর্মী এবং দর্শনধর্মী।

অর্থাৎ আমরা কোনও শব্দ চিন্তা করতে পারি অথবা দৃশ্য চিন্তা করতে পারি। 

এই দুইপ্রকার চিন্তনকে ঈশ্বরমুখী করতে গেলে অন্তরে ইষ্টের রূপ (দৃশ্য ) চিন্তন এবং তাঁর ভাব-প্রতিপাদক মন্ত্র (শব্দ) চিন্তন করতে হয়। তাহলে মনে আর অন্য চিন্তা আসেনা।

আর তা না হলে মুখে নাম করে যাচ্ছি কিন্তু মন তার অভ্যাসবশতঃ জাগতিক চিন্তা করে যাচ্ছে তাতে কী লাভ?  

মুখে একটি শব্দ উচ্চারণ করা সহজ, কিন্তু দৈহিক কম্পন বন্ধ করে শুধু মানস জপ করতে গিয়ে দেখা যায় সেটা কত কঠিন! আর কঠিন বলেই সেটা অধিকতর ফল প্রদানকারী।

স্বামী বিবেকানন্দ রাজযোগের আলোচনায় বলছেন,

_‘‘...মন্ত্র জপ করিবার তিন প্রকার নিয়ম আছে — 'বাচিক', 'উপাংশ' ও 'মানস'।_

_বাচিক জপ সর্বনিম্নে এবং মানস জপ সর্বাপেক্ষা শ্রেষ্ঠ।...’’_

মন্ত্র জপের সঙ্গে সঙ্গে মন্ত্রের অর্থ অর্থাৎ মন্ত্রের ভাবটি চিন্তা করতে হয়। মহর্ষি পতঞ্জলি শেখাচ্ছেন, _'তজ্জপস্তদর্থ- ভাবনম্';_

— অর্থাৎ জপের সঙ্গে সঙ্গে জপমন্ত্রের অর্থ ভাবার কথা বলা হয়েছে। 

এখানে 'মন্ত্র' বলতে ঈশ্বরীয় নাম এবং তার অর্থ বলতে নামের প্রতিপাদ্য ভাবের কথা বলা হচ্ছে। 

এই ভাব-চিন্তন থেকেই বিক্ষেপহীন ভাবময় স্থিতি বা ধ্যান আসে। এভাবেই জপ থেকে ক্রমে ধ্যানে উন্নীত হতে হয়।

যাঁরা শ্রীরামকৃষ্ণ-নাম জপ করছেন, তাঁরা জপের সাথে সাথে সেই নামের অর্থ বা ভগবান শ্রীরামকৃষ্ণের রূপ চিন্তন করেন। 

কিন্তু ভগবান শ্রীরামকৃষ্ণের প্রকৃত রূপ আমাদের বুদ্ধির অগম্য। তাঁর অনন্ত ভাব আমাদের ধারণার বাইরে। আমরা তাই নিজেদের সীমাবদ্ধ ক্ষমতা অনুযায়ী আমাদের পক্ষে যতটুকু সম্ভব শুধু ততটুকুই তাঁকে চিন্তা করতে পারি। 

স্বয়ং স্বামী বিবেকানন্দ তাঁর সম্পর্কে বলেছেন, 

_‘‘এই অদ্ভুত রামকৃষ্ণ-চরিত্র তোমার ক্ষুদ্র বিদ্যাবুদ্ধি দিয়ে যতদূর সাধ্য আলোচনা  কর, অধ্যয়ন কর। আমি তো তাঁর লক্ষাংশের একাংশও এখনও বুঝতে পারিনি। ও যত বুঝবার চেষ্টা করবে, ততই সুখ পাবে, ততই মজবে।’’

কথামৃতে আছে — শ্রীমতি রাধিকা যত কুঞ্জবনের দিকে এগোচ্ছেন তত কৃষ্ণ-গন্ধ নাকে আসছে।

 — এর আধ্যাত্মিক তাৎপর্য হল : আমরা যত পবিত্র হব, যত তাঁর দিকে এগোতে থাকব, ততই তাঁর স্বরূপ আমাদের কাছে স্পষ্ট থেকে স্পষ্টতর হবে। 

জপের পথে আমরা ভাবময় ইষ্টের কাছাকাছি পৌঁছে যাই।

<><><><><><><><><><><><><><><><><><><><>

(*)(*)(*)(*)(*)(*)(*)(*)(*)(*)(*)(*)(*)(*)(*)(*)(*)


&&&&&&&&&&&প্রনাম &&&&&&&&&&&&


সাধারণত আমরা মন্দিরে প্রবেশ করেই শ্রীরামকৃষ্ণের পট বা বিগ্রহের সম্মুখে ভূমিষ্ঠ বা সাষ্টাঙ্গ হয়ে অল্প সময়ের মধ্যেই প্রনাম পর্ব শেষ করে ফেলি। কিন্তু প্রনামের এক আদর্শ পদ্ধতি আছে । এ প্রসঙ্গে স্বামী ব্রহ্মানন্দজীর সেবক ও সচিব এবং রামকৃষ্ণ মঠ ও মিশনের সপ্তম প্রেসিডেন্ট স্বামী শঙ্করানন্দ একবার বলেছিলেনঃ মন্দিরে ঠাকুরকে কি ভাবে প্রনাম করতে হয় জানো? কখনও মন্দিরে গিয়ে ঢিপ করে প্রনাম করবে না। আগে স্থির হয়ে দাঁড়িয়ে ঠাকুরকে কিছুক্ষণ দেখবে। ভাববে, ঠাকুর জীবন্ত, তোমায় দেখছেন। এইভাবে মন স্থির হলে তখন প্রনাম করবে এবং ভাববে ঠাকুরকে পা জড়িয়ে ধরে প্রনাম করছো।