Tuesday, 13 July 2021

স্মৃতির কোঠায়

 



স্মৃতির কোঠায় জমে ওঠা তথ্যগুলিতে একবার চোখ বোলাতে গেলে ধরা পরে যায় অনেক ঘটনাই। যা উল্লেখ করার আগে "স্মৃতি " জিনিসটা আমাদের জীবনে কি রকম , সে সম্বন্ধে দু-চার কথা বলে নেওয়া মনে হয় ভালো  হবে। 

মস্তিষ্কে তথ্য ধারন করে রাখার প্রক্রিয়া কিংবা মস্তিষ্কে ধারনকৃত তথ্যকেই স্মৃতি বলে থাকি। এই প্রক্রিয়ায় প্রথমে তথ্য আহরন করে মস্তিষ্কে জমা করা হয় এবং দরকার  আনুযায়ী সেই তথ্য আবার ভান্ডার থেকে খুঁজে নিয়ে আসা  হয়। অর্থাৎ অতীতে যা শেখা / দেখা হয়েছে তাকে মনে করার মধ্যে স্মৃতির অস্তিত্ব বর্তমান।  তাইতো বলে "Memory is the  diary that we all carry with us. "  শিক্ষণীয় বিষয় বা পরিস্থিতি আমাদের সাথে সাথেই থাকে। স্মৃতির  একটা সুন্দর  দিক আমাদের কাছে ধরা দেয়। " You may have  lost things,  persons in your life.  But you can capture  them in your memories forever. " এর সাহায্যে বিষয়বস্তু আমাদের সামনে না থাকলেও মানসছবির সাহায্যেই বিষয়বস্তু সম্পর্কে চিন্তা বা ধারনা করতে পারি।স্মৃতিই বিষয়বস্তু মনে রাখতে পারে এবং প্রয়োজন মত আমাদের  মনে করিয়ে দেয়।

কথায় আছে---- " পুরোনো চাল ভাতে বাড়ে, পুরোনো স্মৃতি রাতে বাড়ে।"  তবে রাতে বাড়ে কিনা জানিনা, কিন্ত  অবসর সময়ে বা কোনো বিশেষ পরিস্থিতির সন্মুখীন হলে কোনোও এক অজানা শক্তি এই মনে জমে থাকা স্মৃতিগুলোকে নারাচারা দিয়ে উৎতক্ত করে তোলো। মনে পড়ে যায় ফেলে আসা দিনের কথা ::::

::  ছোটবেলায় বাঁ হাতে দুটো টিকা দেওয়া হত যার দাগ সারা জীবন থাকে।

:: জন্মানোর পর একুশ দিন  আতুর ঘরে থেকে পরে শুদ্ধ হয়ে ঘরে উঠতে হতো। 

:: সেই  ষষ্ঠীপুজোতে বাড়ীতে এক আলাদা আনন্দ ও গাম্ভীর্য  ছিল। 

:: ঠাকুমা বা অন্যেরা যে কেঁথা করে দিত, সেটাতো শিশুর এক আবশ্যিক  শষ্যা বলে ধরা হত। 

:: অন্নপ্রাশনের আগে চালের কোনো জিনিসই  বাচ্চাকে খেতে দেওয়া হত না।

:: একটু বড়ো হলে ঘুটের ছাই বা যে কোন দাতন দিয়ে দাঁত মাজতে শেখানো হত । তারপর দাত মাজতাম কলগেটের সাদা পাউডার মাজন দিয়ে। Forhans Tooth Pest এর কথা মনে পরে। এর বিঞ্জাপনে লেখা হত _____ এটি একটি দাঁতের ডাক্তারের তৈরি। 

:: সরস্বতী পূজোর দিন  নতুন  জামা কাপড় পরিয়ে পাথরের শ্লেটে শ্লেট পেন্সিল দিয়ে হাতেখড়ি হত।

:: ভালো জুতো বলতে বাটার  জুতো বোঝাতো। আর সেই  বিঞ্জাপন এখনও  মনে পরে ---- পূজোয় চাই নতুন জুতো।

:: ঝুলন সাজানোতে বন্ধুদের মধ্যে এক  রেষারেষি চলত। কে কত বিভিন্ন ধরনের পুতুল জোগার করতে পারে।

:: সন্ধায় বড়েদর সাথে গাজনের মেলা দেখতে যাওয়ার  এক বিশেষ আনন্দ  ছিল। খাবার জিনিসের সাথে কোনো একটা খেলনা কেনা হবে ---- এই  আশায়।

:: রথের দিন  পাতাবাহারী গাছের ডাল/পাতা যোগার করে রথ সাজিয়ে নিয়ে বিকেলে রথ রাস্তায় নিয়ে টানা হত।

:: রাতে গোল হয়ে এক লন্ঠের আলোতে সব ভাই বোন মিলে পড়া আর দিনের বেলায় মা-র কাছে রান্নাঘরে গিয়ে পড়ার কথা ভোলা যায় না। 

:: স্কুলে যাওয়া হত হেটে হেটে, সে যত দূরত্বই হোক না কেন। কাঁধে থাকত বই বা কারও জুটতো বই নেওয়ার জন্য একটা টিনের বাক্স।

:: স্কুল থেকে ফেরা হত পাড়ার  সবাই প্রায় একসাথে গল্প করতে করতে। আর  বর্যাকালে ফেরার সময় যদি বৃষ্টি হত তবে  সবাই মিলে ভিজতে কি আনন্দ  হত ----- সে এখন সব স্মৃতি। ভিজে বাড়ীতে ফিরে এসে যথারিতি কারও কপালে জুটতো মায়ের হাতে মার। 

:: স্কুল থেকে ফিরে একটু কিছু খেয়ে নিয়ে ডাকাডাকি পরে যেত মাঠে খেলতে যাওয়ার জন্য। 



:: সপ্তাহের একটা দিন বিকেলের খেলা বাদ যেত রেশন তোলার জন্য। 

:: স্কুলে নতুন ক্লাসে উঠলে সবার  নতুন বই জুটতো না। উপরের ক্লাসের দাদাদের বলে রাখলে সেই বই  কিনে নেওয়া হত। আবার কেউ কেউ বন্ধুদের কাছ থেকে বই নিয়ে পড়াশোনা চালাতো। 

:: ছুটির দিনে গরমকালে সবাই মিলে ঘন্টার পর ঘন্টা  পুকুরে স্নান,  তার আনন্দ আলাদাই ছিল।  আর শীতকালে তেল মেখে এসে পুকুর পাড়ে বসে অনেকক্ষণ ধরে গল্প করা হত___ কে আগে জলে নামবে তার অপেক্ষায়। 

:: স্নানের সময় চুলে দেবার জন্য সর্ষের তেল জুটতো।  বল সাবান বা ৫০১ সাবান  দিয়ে কাপড় ধোয়া আর  লাইফবয় সাবান গায়ে মাথায় দেওয়া হত। কাছে পুকুর না থাকলে , টিউবওয়েলের তলায় বসে একজন স্নান করত আর আর একজন টিপে দিতো। স্নান করে উঠতে গিয়ে প্রায়সময়ই কলে ঠোক্কর লাগতো। 

:: যেদিন  খাবারে ভাতের সাথে ডিমের ঝোল হত, সেদিন  আনন্দের সীমা থাকত না। যদিও  অর্ধেক করে ডিম সকলের কপালে জুটত।

:: জাম্বুরা দিয়ে বল খেলতে ভালই লগতো। পুরোনো টায়ার আর একটা লাঠি দিয়ে গাড়ি চালাতে কি মজায় না হতো।

:: পেয়ারা বা কুল কিনে খেতে হয়, সে তো বড়ো হয়ে জানলাম। পাড়ার যে বাড়িতে এর গাছ  আছে সেখান থেকে পেরে খাবার  অধিকার  পাড়ার  ছেলেদের ছিল।  

:: চাকতি সাজিয়ে ছোট বল দিয়ে খেলা বা ডাং ঘুটি খেলা বা বিভিন্ন  ভাবে কাচের গুলি দিয়ে খেলা এখানকার  ছোটেদর বললে হাসবে। 

:: কলাপাতা ভাঁজ করে বাঁশী বাজানোর অনন্দই ছিল আলাদা।

:: ফুটবলের  ব্লাডারের লিক সারাতে বা ফুটবলের চামড়া সেলাই করতে অনেকেই ছুটতো মুচির কাছে।

:: একটু বড় হয়ে সিনেমা হলে ৭৫ পয়সার  লাইনে খাচার মধ্যে দাঁড়িয়ে টিকিট কেটে সিনেমা দেখেছি। 

:: বিয়ে বাড়িতে হ্যাজাকের আলো আর গেট সাজানো হত কলা গাছ দিয়ে---- সে তো অনেকেই জানেন।  আর বড়লোকেদের বিয়ে বাড়িতে দু-তিন দিন  আগে থেকে ভিয়েন বসত মিষ্টি বানানোর জন্য।

:: প্রায় প্রত্যেক ব্যাপার  বাড়িতে প্রথম পাতে বেগুন ভাজা আর শেষ পাতে মিষ্টির সাথে দই এক পদ থাকতই। কলার পাতায় মাটিতে বসে খেতে কোনই অসুবিধা হত না।

 :: বাড়িতে কোনো অনুষ্ঠান থাকলে বা যে কোনো পূজা পার্বনে মা, কাকিমা , জ্যাঠিমারা আলতা পরতেন।

:: দুর্গাপুজোর কদিন বিভিন্ন রকমের নাড়ু, মোয়া , মুড়খি দিয়ে জলখাবারের পাট মেটানো হত।

:: সন্ধায় ঠাকুরের কাছে প্রদীপ জ্বালানো , ধূপ-ধূনো দেওয়া আর শঙ্খ বাজানো মায়েদের নিত্যদিনের কাজ বলে ধরা হত।

:: মাকে দেখতাম  জ্যাঠার / ঠাকুরদার  সামনে ঘোমটা দিয়ে থাকত আর  সরাসরি তাঁদের সঙ্গে কোনো সময়ই কথা বলতেন না।

:: ছোট ছোট ছেলেমেয়েরা এখন আর রান্নাবাটি বা পুতুল বা এক্কা-দোক্কা খেলে না। 




:: শীতকালে ছোটরা বাড়ির ছাদে কজন মিলে পিকনিক করত। পয়সার অভাবে সেখানে মাংসের বদলে ডিম হত।

:: বাসের সব চেয়ে কম ভাড়া ১০ পয়সা ছিল,  এতো অনেকেই জানেন।  কিন্ত  একটি রূটে এটা ৮ পয়সা ছিল।  সেই  বাসে চরার কথা এখনো অনেকের মনে আছে। 

:: আমরা বোধহয় শেষ প্রজন্ম যারা হাতে লেখাশংসাপত্র বা সার্টিফিকেট পেয়েছি, এর পর উচ্চ মাধ‍্যমিক আর স্নাতক স্তরে মার্কশিটেই সার্টিফাই করা পেয়েছি তাও ছাপান।



:: অল্প জিনিসপত্র  পরিবহনের জন্য  নীচের  গাড়িটা আমরা ব্যবহার করতাম।  এখন এটি দেখতে পাওয়া যায় না।



 :: " আমরাই ভারতের প্রথম সাজগোজের মাল্টিপারপাস ভ্যানিশিং ক্রিম " ------ এক কালের প্রসাধনী পন্য নির্মাতা এক কোম্পানীর এই দাবী আজ ইতিহাসে পরিনত হয়েছে।



:: শ্মশানে মড়া নিয়ে যাওয়া হত কাধে করে। পুরো রাস্তা এভাবে হেটেই যাওয়া হত। কোনো লোকের মড়ার খবর শুনলে সারা পাড়ার লোক সেখানে জড়ো হত।

♤♡◇♤♡◇♤♡◇♤♡◇♤♡◇♤♡◇♤♡◇♤♡◇


অনেকেই তাদের স্মৃতি রোমন্থন করতে করতে তাদের কার্যকলাপের জন্য  আমরাই শেষ জেনারেশন  বলে আখ্যা দিয়ে থাকেন।  দেখুনতো আপনারা, এই বক্তব্যের  যৌক্তকতা কতখানি।

তারা প্রায়শ বলে থাকেন____এই পৃথিবীতে যত পরিবর্তন আমাদের এই জেনারেশন দেখতে পেয়েছে তা মনে হয় আগে কোনো জেনারেশনই দেখতে পায়নি অথবা ভবিষ্যতে পাবেও না  ! 

আমরাই সেই শেষ জেনারেশন যারা গরুর গাড়ি থেকে সুপার সনিক কনকর্ড জেট দেখতে পেয়েছি। পোস্টকার্ড, খাম, ইনল্যান্ড লেটার থেকে শুরু করে আজ হোয়াটস্যাপ চ্যাটিং,ই-মেইল পর্যন্তও করছি।  অসম্ভব মনে হওয়া অনেক জিনিসই সম্ভব হতে দেখেছি। 

আমরা সেই জেনারেশন, যারা টেলিগ্রাম এসেছে শুনলেই বাড়ির সবার মুখ শুকিয়ে যেতে দেখেছি.. 

আমরাই সেই শেষ জেনারেশন যারা মাটিতে বসে ভাত খেয়েছি এবং প্লেটে ঢেলে চা খেয়েছি। বিয়ে বা অন্য অনুষ্ঠানে কলাপাতার পরিবেশন থেকে ক্যাটারিং দেখেছি

আমরাই সেই শেষ জেনারেশন যারা ছোটবেলায় বন্ধুদের সাথে সেই পরম্পরাগত খেলা যেমন লুকোচুরি, কুমীরডাঙ্গা, ডাঙ্গুলি, কবাড্ডি, মার্বেল খেলেছি, আকাশের বুকে রং বেরঙের ঘুড়ি উড়িয়েছি

আমরাই সেই শেষ জেনারেশন যারা হ্যারিকেন আর বাল্বের হলুদ আলোতে পড়াশুনা করেছি এবং চাদরের ভিতরে লুকিয়ে আনন্দমেলা, শুকতারা,  পড়েছি। 

আমরাই সেই শেষ জেনারেশন যারা ফ্যান, এসি, হিটার, ফ্রীজ ছাড়াই ছোটবেলা কাটিয়েছি।

আমরাই শেষ জেনারেশন যারা দেখেছি ১পয়সা ট্রাম ভাড়া বাড়ানোর প্রতিবাদে কয়েকটা ট্রাম পুড়িয়ে দিতে।  দেখেছি অফিস কাছাড়ির কাজকর্মে computer ঢুকতে না দিতে রাত জেগে / দিনের বেলায় অফিসের সামনে কি বিক্ষভ হতে।

আমরাই সেই শেষ জেনারেশন যারা সুলেখা কালি আর খাগের কলম থেকে রাইটার্স, হিরো বা উইংসঙ পেন ব্যবহার করেছি এবং নতুন বই খাতার একটি আলাদা গন্ধ আর আনন্দ উপভোগ করেছি।

আমরাই সেই শেষ জেনারেশন যারা  শিক্ষকদের হাতে মার খেয়েছি এবং ঘরে আসার পর নালিশ করাতে দ্বিতীয়বার মা-বাবার হাতে মার খেয়েছি।

আমরাই সেই শেষ জেনারেশন যারা বয়স্ক বৃদ্ধ, বৃদ্ধাদের সম্মান করেছি এবং করেও যাচ্ছি।

আমরাই সেই শেষ জেনারেশন  যারা জোৎস্না রাতে রেডিওতে BBC'র খবর, রেডিও  সিলোনের " বিনাকা গীতমালা" , শনিবার এর বারবেলা  ছাড়াও আকাশবানী কলকাতার শুক্রবারের রাত আটটার নাটক, অনুরোধের আসর, দুপুরে মহিলামহল, রবিবার সকালে পঙ্কজ মল্লিকের সংগীত শিক্ষার আসর, আরো কতো কিছু শুনেছি l 

 আমরাই সেই শেষ জেনারেশন  যারা টেলিভিশন এ " চিত্র-হার ", "রামায়ণ " , "মহাভারত" সহ রাত জেগে খেলা দেখার জন্য ছাদে উঠে এ্যন্টেনা ঘুরিয়ে স্যিগনাল ধরার চেষ্টা করেছি ।

আমরাই সেই শেষ জেনারেশন যারা আত্মীয় স্বজন বাড়িতে আসার জন্য অপেক্ষা করতাম।

আমরা সেই শেষ জেনারেশন যারা স্কুল থেকে ইচ্ছে করে বৃষ্টিতে ভিজে ঘরে ফিরেছি, গরমে  পুকুরে সাঁতার কেটেছি, বর্ষায় মাছ শিকার করেছি.. 

আমরা সেই শেষ জেনারেশন যারা বিকেল বেলা সময়মত ঘরে না ফিরলে বার বার শাস্তি পেয়েছি...

আমরা সেই শেষ জেনারেশন যারা পুজোর সময় শুধু একটা নুতন জামার জন্য অপারগ বাবার হাতের দিকে চেয়ে থেকেছি.

আমরা সেই শেষ প্রজন্ম যারা রাস্তাঘাটে স্কুলের স্যারকে দেখামাত্র রাস্তার পাশের ঝোপঝাড়ে আত্মগোপন করে থেকেছি.. কেননা সেসব স্যার খুব রাগী ছিলেন আর তাদেরকে ভয়ও পেতাম খুব। তবে অন্য যেকোনো মাষ্টারমশাই কে দেখলে পায়ে হাত দিয়ে প্রনাম করতাম।  তিনিও নিজের ছেলের মত ভালবাসতেন ও আশীর্বাদ করতেন।

আমরাই সেই শেষ জেনারেশন যারা  মা-বাবার কথা শুনতাম এবং এখন বাচ্চাদের কথা শুনে দিনপাত করছি

আমাদের এই প্রজন্ম এই সংসারের আমূল পরিবর্তন দেখে নিয়েছি 😊



Sunday, 11 July 2021

মহাশক্তি মা কামাখ্যা

 




🌺মহাশক্তি🌺আদ্যাশক্তি🌺পরমা প্রকৃতি🌺


কামাখ্যা মায়ের মুখ ১৫ বছরে একবার দর্শন পাওয়া যায়, মায়ের মুখ সবসময়ই ফুল দিয়ে ঢাকা থাকে। মায়ের চোখ দুটি একদম চিন্ময় জ্বলজ্বল করে।

অসমের নীলাচল পাহাড়ে অবস্থিত কামরূপ কামাখ্যা ৫১ পীঠের অন্যতম এক পবিত্র পীঠস্থান। বিষ্ণুচক্রে এখানে দেবী সতীর যোনি পতিত হয়েছিল। কথিত আছে যোনিরূপ যে প্রস্তরখণ্ডে মা কামাখ্যা অবস্থান করছেন, সেই শিলা স্পর্শ করলে মানুষ মুক্তিলাভ করে।

কামাখ্যা মায়ের প্রথম মন্দির নির্মাণ করেন দেবশিল্পী বিশ্বকর্মা। ভগবান শিবের নয়নাগ্নিতে কামদেব ভস্ম হয়ে বিকৃত চেহারা প্রাপ্ত হলে, এই স্থানে এসে তিনি পূর্ব রূপ ফিরে পাবার জন্য মা কামাখ্যার তপস্যা করেন। সেই থেকে এই পীঠ কামদেবতা পূজিত "কামাখ্যা পীঠ" নামে খ্যাত।

কামাখ্যা মায়ের বর্তমান মন্দির কোচরাজ বিশ্বসিংহ দ্বারা নির্মিত। কালিকাপুরাণে কামাখ্যাপীঠের বর্ণনা আছে। বলা হয় মা সতীর যোনিদেশ এই স্থানে পতিত হলে, মায়ের সেই অঙ্গ ত্রিদেব মিলেও ধারণ করতে পারেন নি। সেই স্থান রসাতলে যাচ্ছিল। তখন দেবতাদের প্রার্থনায় মা ভগবতী প্রকট হয়ে নিজেই নিজের অঙ্গকে ধারণ করেছিলেন।

কামাখ্যা মায়ের ভৈরব উমানন্দ। ব্রহ্মপুত্রের মাঝে একটি পাহাড়ে অবস্থিত ভৈরবের মন্দির। বলা হয় দেবী উমার আনন্দের জন্য ভগবান শিব এখানে লিঙ্গ রূপে আবির্ভূত হন। তাই এঁনার নাম উমানন্দ।

দেবী কামাখ্যার পঞ্চ মূর্তি ও অষ্টযোগিনী আছে। পঞ্চ মূর্তি হল- কামাখ্যা, কামেশ্বরী, ত্রিপুরা, সারদা, মহোৎসহা। অষ্টযোগিনী রা হলেন- কটীশ্বরী, গুপ্তকাশী, শ্রীকামা, বিন্ধ্যবাসিনী, পাদদুর্গা, দীর্ঘেশ্বরী, ধনস্থা ও প্রজটা।

কামাখ্যা ধামে অম্বুবাচী কে কেন্দ্র করে বিশাল মেলা বসে। এই সময় বহু সাধু সন্তদের আগমন হয়। জ্যোতিষ শাস্ত্র মতে আষাঢ় মাসে রবি মিথুন রাশিস্থ আর্দ্রা (৬) নক্ষত্রের প্রথমপাদে অর্থাৎ এক চতুর্থাংশ  (৩°|২০') স্থিতিকালে বসুমাতা অর্থাৎ পৃথিবী ঋতুমতী হন। এই সময়কে “অম্বুবাচী” বলে।

অম্বুবাচী সময় দেবী কামাখ্যা ঋতুমতী হন। সে জন্য কামাখ্যা মন্দিরের দরজা বন্ধ করে রাখা হয়৷ তখন শুরু হয় অম্বুবাচী প্রবৃত্তি। অম্বুবাচী কে কেন্দ্র করে মন্দির ঘিরে বিশাল মেলার আয়োজন করা হয়। প্রচুর ভক্তসমাগম হলেও সে সময় দেবী দর্শন নিষিদ্ধ। ঠিক তিন দিন পরে সেটা শেষ হয়, সেটা হল অম্বুবাচী নিবৃত্তি। উত্‍সবের চতুৰ্থ দিন মন্দিরের গর্ভগৃহে দেবীকে স্নান করিয়ে পূজা শেষ করা হয়। এর পর ভক্তদের দেবী দর্শনের জন্য মন্দিরের দরজা খুলে দেওয়া হয়।

কামাখ্যা মায়ের অম্বুবাচী চলাকালীন রক্তবস্ত্রের মাহাত্ম্য অনেক। এই বস্ত্র ধারণ করলে তান্ত্রিক কর্ম করলে তা সফল হয়। যোগিনী তন্ত্রে লিখিত আছে --

কামাখ্যাবস্ত্রমাদায় কপ- পূজাং সমাচরেৎ ।

পূর্ণকামং লভেদ্দেবী সত্যং সত্যং ন সংশয় ॥

(কুব্জিকা তন্ত্র/সপ্তম পটল) 

অর্থাৎ- উক্ত রক্তবস্ত্র শরীরে ধারণ করিলে অভীষ্ট ফল লাভ হয়, তদুপরি কামাখ্যার রক্তবস্ত্র শরীরে ধারণ করিয়া অন্যত্র জপ, পূজা করিলেও পূর্ণকাম হইয়া থাকেন।

অম্বুবাচীর মুহূর্তে আপনাদের কাছে দিলাম মা কামাখ্যা ধ্যানমন্ত্র, স্তোত্রম্ ও প্রণাম মন্ত্র। ইহা সত্যি দুর্মূল্য ও দুর্লভ, পাঠ করুন মা এর কৃপায় মঙ্গল হবেই। একসময় এই সব গুপ্ত ছিল আজ মা এর কৃপায় তা তুলে দিলাম আপনাদের কাছে, সবার মঙ্গল হোক মা কামাখ্যা ও উমানন্দ ভৈরব এর রাতুল চরণে এই প্রার্থনা।





🕉️🌷 কামাখ্যা ধ্যানমন্ত্র --

রবিশশিয়ুতকর্ণা কুংকুমাপীতবর্ণা

মণিকনকবিচিত্রা লোলজিহ্বা ত্রিনেত্রা ।

অভয়বরদহস্তা সাক্ষসূত্রপ্রহস্তা

প্রণতসুরনরেশা সিদ্ধকামেশ্বরী সা ॥ ১॥


অরুণকমলসংস্থা রক্তপদ্মাসনস্থা

নবতরুণশরীরা মুক্তকেশী সুহারা ।

শবহৃদি পৃথুতুঙ্গা স্বাঙ্ঘ্রিয়ুগ্মা মনোজ্ঞা

শিশুরবিসমবস্ত্রা সর্বকামেশ্বরী সা ॥ ২॥


বিপুলবিভবদাত্রী স্মেরবক্ত্রা সুকেশী

দলিতকরকদন্তা সামিচন্দ্রাবতংসা ।

মনসিজ-দৃশদিস্থা য়োনিমুদ্রালসন্তী

পবনগগনসক্তা সংশ্রুতস্থানভাগা ।

চিন্তা চৈবং দীপ্যদগ্নিপ্রকাশা

ধর্মার্থাদ্যৈঃ সাধকৈর্বাঞ্ছিতার্থা ॥ ৩॥

🕉️🌺 কামাখ্যা স্তোত্রম্ --

জয় কামেশি চামুণ্ডে জয় ভূতাপহারিণি ।

জয় সর্বগতে দেবি কামেশ্বরি নমোঽস্তু তে ॥ ১॥

বিশ্বমূর্তে শুভে শুদ্ধে বিরূপাক্ষি ত্রিলোচনে ।

ভীমরূপে শিবে বিদ্যে কামেশ্বরি নমোঽস্তু তে ॥ ২॥

মালাজয়ে জয়ে জম্ভে ভূতাক্ষি ক্ষুভিতেঽক্ষয়ে ।

মহামায়ে মহেশানি কামেশ্বরি নমোঽস্তু তে ॥ ৩॥

ভীমাক্ষি ভীষণে দেবি সর্বভূতভয়ঙ্করি ।

করালি বিকরালি চ কামেশ্বরি নমোঽস্তু তে ॥ ৪॥

কালি করালবিক্রান্তে কামেশ্বরি হরপ্রিয়ে ।

সর্বশাস্ত্রসারভূতে কামেশ্বরি নমোঽস্তু তে ॥ ৫॥

কামরূপপ্রদীপে চ নীলকূটনিবাসিনি ।

নিশুম্ভ-শুম্ভমথনি কামেশ্বরি নমোঽস্তু তে ॥ ৬॥

কামাখ্যে কামরূপস্থে কামেশ্বরি হরিপ্রিয়ে ।

কামনাং দেহি মে নিত্যং কামেশ্বরি নমোঽস্তু তে ॥ ৭॥

বপানাঢ্যমহাবকত্রে তথা ত্রিভুবনেশ্বরি ।

মহিষাসুরবধে দেবি কামেশ্বরি নমোঽস্তু তে ॥ ৮॥

ছাগতুষ্টে মহাভীমে কামাখ্যে সুরবন্দিতে ।

জয় কামপ্রদে তুষ্টে কামেশ্বরি নমোঽস্তু তে ॥ ৯॥

ভ্রষ্টরাজ্যো য়দা রাজা নবম্যাং নিয়তঃ শুচিঃ ।

অষ্টম্যাঞ্চ চতুর্দশ্যামুপবাসী নরোত্তমঃ ॥ ১০॥

সংবত্সরেণ লভতে রাজ্যং নিষ্কণ্টকং পুনঃ ।

য় ইদংশৃণুয়াদ্ ভক্ত্যা তব দেবি সমুদ্ভবম্ ॥ ১১॥

সর্বপাপবিনির্মুক্তঃ পরং নির্বাণমৃচ্ছতি ।

শ্রীকামরূপেশ্বরি ভাস্করপ্রভে প্রকাশিতাম্ভোজনিভায়তাননে ।

সুরারি-রক্ষঃস্তুতিপাতনোত্সুকে ত্রয়ীময়ে দেবনুতে নমামি ॥ ১২॥

সিতাসিতে রক্তপিশাঙ্গবিগ্রহে রূপাণি য়স্যাঃ প্রতিভান্তি তানি ।

বিকাররূপা চ বিকল্পিতানি শুভাশুভানামপি তাং নমামি ॥ ১৩॥

কামরূপসমুদ্ভূতে কামপীঠাবতংসকে ।

বিশ্বাধারে মহামায়ে কামেশ্বরি নমোঽস্তু তে ॥ ১৪॥

অব্যক্তবিগ্রহে শান্তে সন্ততে কামরূপিণি ।

কালগম্যে পরে শান্তে কামেশ্বরি নমোঽস্তু তে ॥ ১৫॥

য়া সুষুম্নান্তরালস্থা চিন্ত্যতে জ্যোতিরূপিণি ।

প্রণতোঽস্মি পরাং ধীরাং কামেশ্বরি নমোঽস্তু তে ॥ ১৬॥

দংষ্ট্রাকরালবদনে মুণ্ডমালোপশোভিতে ।

সর্বতঃ সর্বগে দেবি কামেশ্বরি নমোঽস্তু তে ॥ ১৭॥

চামুণ্ডে চ মহাকালি কালি কপোলহারিণি ।

পাশহস্তে দণ্ডহস্তে কামেশ্বরি নমোঽস্তু তে ॥ ১৮॥

চামুণ্ডে কুলমালাস্যে তীক্ষ্ণদংষ্ট্রামহাবলে ।

শবয়ানাস্থিতে দেবি কামেশ্বরি নমোঽস্তু তে ॥ ১৯॥

🕉️🌸 কামাখ্যা প্রণাম মন্ত্র --

ত্বং আদ্যাদেবী কামাখ্যারুপেন জগত্মাতৃকা 

তত্ চরনারবিন্দ সর্বভূতানাং স্বর্মপয়ামি ॥১॥


কামাখ্যে বরদে দেবী নীলপর্ব্বত বাসিনী 

ত্বং দেবী জগতাং মাতর্যোনিমুদ্রে নমোহস্তুতে ॥২॥


🙏🏻 জয় মা 🌺 জয় মা 🌺 জয় মা 🙏🏻



আম্বুবাচি কী ? এর অর্থ কী ?

 

ভগবতী র ষোড়শ যাত্রা র মধ্যে অন্যতম হলো আম্বুবাচি যাত্রা । অম্বুবাচী কথাটি এসেছে সংস্কৃত শব্দ " অম্ব " ও " বাচি " থেকে। " অম্ব " শব্দের অর্থ হলো জল এবং " বাচি " শব্দের অর্থ হলো বৃদ্ধি । গ্রীষ্মের প্রখর দাবদাহে ধরিত্রী যখন শুকিয়ে যায়, আষাঢ়ের বৃষ্টি নব জল ধারার আশীর্বাদ নিয়ে পৃথিবী মাতা কে সিক্ত করে.. ধরিত্রী মাতার মাটি বীজ ধরনের উপযুক্ত হয় , সেই সময় টিকেই বলা হয় অম্বুবাচী।

অনেকের বিশ্বাস এই সময় আরাধ্য দেবতার পুজো করতে নেই, স্পর্শ করতে নেই, ঢেকে রাখতে হয়। এই বিশ্বাস টি কি ঠিক ?  এই দিনগুলিতে আমাদের কর্তব্য দেবীকে বিশেষভাবে যত্নে  রাখা । এমন ধারণা ঠিক নয় যে দেবী এইসময় অশুচি বা অস্পৃশ্যা হয়ে যান । অনেকে এই সময় মায়ের নিত্যসেবাও বন্ধ করে দেন , যা একেবারেই অনুচিত । এই দিনগুলিতে আমাদের কর্তব্য দেবীকে বিশেষভাবে যত্নে রাখা। উপরন্তু যথাসম্ভব একান্ত পরিবেশে নির্জন বাসের ব্যবস্থা করা উচিত । কোনভাবেই আমাদের কোন আচরণে মায়ের বিরক্তির উদ্রেক যেন না হয় সেদিকে সর্বদাই খেয়াল রাখতে হবে । সংকল্প বিহীন নিত্য পূজাপাঠ ও আচার অনুষ্ঠান যথাসম্ভব অনাড়ম্বর ভাবে পালন করা উচিত । এই সময় বেশী করে জপ-ধ্যান ইত্যাদি করা উচিত , এই কালে জপ করলে বহুগুণ ফল লাভ হয় । ভূমি কর্ষণ বা ভূমিতে কোনরকম আঘাত করা এবং ক্ষৌরকর্ম ইত্যাদি এই তিন দিন নিষিদ্ধ । সকল সাধক ও ভক্তগণেরই এই সময় সংযত জীবনযাপন করা একান্ত কর্তব্য ।

আম্বুবাচির স্থিতিকাল কতক্ষন ?


উত্তরে , রঘুনন্দন ভট্টাচার্য  তাঁর " অষ্টবিংশতি তত্ত্ব " নামক গ্রন্থে তিথিতত্ব ও কৃত্যতত্বে অম্বুবাচি ও তার স্থিতিকাল নিয়ে লিখেছেন : - 

             সূর্য আষাঢ় মাসে যে দিন যে সময়ে মিথুন রাশিতে আদ্রা নক্ষত্রের প্রথম পাদে গমন করে সেই সময়কাল থেকে মাতৃস্বরূপা পৃথিবী এবং আদ্যাশক্তি মহামায়া ঋতুমতী বা রজ্বসলা হয় ইহাই অম্বুবাচির কাল শুরু হয় । 

সূর্যের মিথুন রাশি গমনের কাল থেকে শুরু করে বিংশতিদন্ডাধিক্ তিনদিন বা তিনদিন কুড়িদন্ড কাল সময় অম্বুবাচির স্থিতি ।

আম্বুবাচি কালে কী কী কর্তব্য ?


উত্তর পাওয়া যাবে বামকেশ্বর তন্ত্রের ৫৫ তম পটলে । যথা :- 

      "   আষাঢ়ে প্রথমে দেবী অম্বুবাচী দিনত্রয়ং ।

         সংগোপন গৃহে দেবিং স্থাপয়েদ্বস্ত্র বেষ্টনে ।।

        রাত্রৌ মহানিশা যোগে পঞ্চাচারেণ দেশিকঃ।

         পূজয়িত্বা বলিং দত্বা হোময়িত্বা বিহারয়েৎ।।   "


অর্থাৎ : - 

            আষাঢ়ের প্রথমে অম্বুবাচী দিবসত্রয়ে দেবীকে গুপ্তভাবে বস্ত্রাদি দ্বারা বেষ্টন করিয়া ( বেষ্টন অর্থে চোখমুখ ঢেকে কাপড় চাপা দিয়ে রাখতে বলা হয় নি ) রাখিবে । অম্বুবাচী নিবৃত্তি হইলে সাধক মহানিশাতে পঞ্চতত্ত্ব  দ্বারা দেবীর পূজা করিয়া , বলিদানাদি , হোমাদি সম্পন্ন করিবে ।


তবে সাধারণ মানুষের কর্তব্য কী ? 

এই দিনগুলিতে আমাদের কর্তব্য দেবীকে বিশেষভাবে যত্নে রাখা । এমন ধারণা ঠিক নয় যে দেবী এইসময় অশুচি বা অস্পৃশ্যা হয়ে যান ।       অনেকে এই সময় মায়ের নিত্যসেবাও বন্ধ করে দেন , যা একেবারেই অনুচিত । এই দিনগুলিতে আমাদের কর্তব্য দেবীকে বিশেষভাবে যত্নে রাখা।  উপরন্তু যথাসম্ভব একান্ত পরিবেশে নির্জন বাসের ব্যবস্থা করা উচিত । কোনভাবেই আমাদের কোন আচরণে মায়ের বিরক্তির উদ্রেক যেন না হয় সেদিকে সর্বদাই খেয়াল রাখতে হবে । সংকল্প বিহীন নিত্য পূজাপাঠ ও আচার অনুষ্ঠান যথাসম্ভব অনাড়ম্বর ভাবে পালন করা উচিত । কিন্তু এই সময় বেশী করে জপ-ধ্যান ইত্যাদি করা উচিত , এই কালে জপ করলে বহুগুণ ফল লাভ হয় । ভূমি কর্ষণ বা ভূমিতে কোনরকম আঘাত করা এবং ক্ষৌরকর্ম ইত্যাদি এই তিন দিন নিষিদ্ধ । সকল সাধক ও ভক্তগণেরই এই সময় সংযত জীবনযাপন করা একান্ত কর্তব্য ।


        🌺 ।। কালী কালী দূর্গা দূর্গা ।। 🌺




Beginning of the yearly menstruation cycle of Mother Godesses ( Known as Ambuvachi ) . 

This form of mother is known as Mula Shakti , every individual will emerge from her and will disappear into her in the end of the time .  

(সংগৃহীত)